চৈত্র_শেষে #নাজমুন_বৃষ্টি #পর্ব ১৬

0
112

#চৈত্র_শেষে
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব ১৬

গ্রামের মাঝারি আকারের রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজন। দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। মুখে কোনো কথা না থাকলেও মনের ভেতর যেন হাজারো নিখুঁত নিস্তব্ধ বহিঃপ্রকাশ।
অনু আপনমনে হাঁটছে। রাস্তার দুধারে সারি সারি সবুজ ঘাস। আর ঘাসের মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে সাদা গোলাপির মিশ্রিত এক ছোট ফুল। গাছগুলোকে ধরলেই যেন লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। লজ্জাবতী গাছ।
হাওয়া বইছে এলোমেলোভাবে। ঠান্ডা শীতল ভোরের হাওয়া। যে হওয়াতে মাতাল হওয়ার উপক্রম। অনুর এসব অভ্যাস আছে বিধায় সে ভালোই উপভোগ করছে। প্রতিদিন বাবার সাথেই বসে এই সময়টা উপভোগ করা হয়।
তারা হাঁটছে অনেকক্ষন যাবৎ। সকাল হয়ে যাচ্ছে। দুয়েকজন মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। অদূরে বটগাছের নিচে চায়ের দোকান চোখে পড়ছে।
অনু পা ফেরাতে চাইলো।
“বাসায় চলেন সাহিল ভাই।”

“চা খাবে?” অনুর কথার জবাব না দিয়ে সাহিল শুধালো।

“আমি চা খাই না।” অনুর স্বীকারক্তি শুনে সাহিল জোর করলো না। সে এগিয়ে গেল দোকানের দিকে।

“ঠিক আছে। আমি খাবো। এখন তোমাকে দিয়ে আসতে পারবো না। আমি চা খাওয়া শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”

অনু তাকালো। মানুষটা এখনো আগের মতোই গা ছাড়া রয়ে গেল। একবার জোরও করলো না।

“আমি একাই চলে যেতে পারবো।” বলেই অনু পা বাড়ালো।

“অনেক দূর এগিয়ে এসেছো। এটা গ্রামের নির্জন রাস্তা। কিছু হলে দায়বার আমি নিবো না।”

“কী হবে?”
“তুমি ভেবে নিও।”
বলেই চায়ের দোকানদারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লো,
“এই মামা এক কাপ লেবু রঙ চা দিও তো।”
সাহিল ততক্ষনে দোকানের সামনে থাকা বটগাছের সাথে লাগোয়া বেঞ্চটাতে পা দুলিয়ে বসলো। এগুলোকে গ্রামে বাঁশের মাচা বলে। অনুর ইচ্ছে করলো সেও পা দুলিয়ে বসুক। কিন্তু ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখলো।
অনু সাহিলের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। সাহিলের কথা শুনে এই নির্জন রাস্তা দিয়ে তার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হলো না। কিন্তু পা ব্যথা করছে ভীষণ।

“ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে এখানে এসে বসো।”
অনু ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
সাহিল হাঁক ছাড়লো।
“মামা আরেক কাপ চা দিও।”

অনু এগিয়ে গেল। আগ বাড়িয়ে জানালো,
“কড়া লিকারের দিও মামা।”

“এতক্ষন তো খাবে না বললে। তাহলে আগ বাড়িয়ে বলতে যাচ্ছ কেন?” সাহিলের কথায় অনুর অপমানবোধ হলো।

“আপনিই তো আগ বাড়িয়ে আরেক কাপ চায়ের কথা বললেন।”

“ওটা তো আমার জন্যই বলেছিলাম। আশ্চর্য! তুমি নিজের করে ভেবে নিয়েছো?”

সাহিলের কথায় অনুর চরম অপমান বোধ হলো। সে এগিয়ে গিয়ে শুধালো,
“আপনি তো এক কাপ বলেছেন। আমি থাকবো ভেবে বলেছিলেন নিশ্চই। এখন কথা ঘুরাচ্ছেন।”

“অবশ্যই না। আমার পরিবেশটা ভালো লেগেছে বিধায় বেশ কিছুক্ষন উপভোগ করার জন্যই তো আরেকটা চা বললাম।”

“চায়ের খোঁটা দিচ্ছেন?”

“ওমা কই খোঁটা দিলাম! তুমি তো খাবে না জানালে তাই তো বললাম।”

“ঠিক আছে খাবো না।”

দোকানদার সাহিলের সামনে মাচাতে দুইকাপ চা রেখে গেল।
অনু বটগাছের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
সামনে যতটুকু চোখ পড়ছে বিস্তীর্ণ মাঠ চোখে পড়ছে। দূর দুরান্তে সবুজ ঘাসে ছেয়ে গেছে।
অনুর চোখের সামনে চায়ের কাপ আসতেই সে পাশ ফিরে তাকালো।
সাহিল কাপ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
“আমি খাবো না।”
“তাহলে খাবে কে?”

“আপনি।”

“এই ঘন চা আমি খাই না।”

“অভ্যাস বদলালেন কবে? আগে তো এমন ঘন চাই খেতেন।”

সাহিল চায়ের কাপে চুমুক দিল। সামনে মাঠের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে শুধালো,
“সময়ের সাথে সাথে অনেক অভ্যাসই বদলাতে হয়। আফটার অল আমরাও মানুষ। বদলাবোই।”

অনু হাসলো। সেও তো বদলিয়েছে। মাঝের অভ্যাস সব হারিয়েছে। আগের অভ্যাসগুলো ফিরিয়ে এনেছে। তাহলে অন্যরা কেন বদলাবে না!

চা খাওয়া শেষ হতেই সাহিল টাকা মিটিয়ে হাঁটা ধরলো। অনুও পিছু পিছু পা বাড়ালো। নিজেরই অজান্তে সে পাশে হাঁটা ওই মানুষটার সাথে পা মিলিয়ে কদম বাড়ালো। ভোরের গ্রামের নির্জন অদ্ভুত সুন্দর রাস্তা। এমন একটা সময়ই তো অনু আগে স্বপ্নে দেখতো। কিন্তু এখন সব হলেও মাঝখানে হাজার বারণ!

———-

বেলা বাড়ার সাথে সাথে আছিয়া বেগম কয়েকবার ছেলের রুমের দিকে উঁকি দিলেন। রিহির নাম ধরে বার কয়েক ডাকলেন। কিন্তু প্রতিবারই রিহি বিরক্তিসূচক আওয়াজ করে পাশ ফিরে গেল।
এইবার আছিয়া বেগমের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। কয়েকদিন ধরে শরীরটা অসুস্থ লাগছে। দুর্বল লাগছে। এদিকে ডাক্তারের সিরিয়ালের সময় চলে যাচ্ছে। আর মেয়েটা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
আছিয়া বেগম রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। গিয়ে হাঁক ছাড়লেন,

“রিহি উঠো। বেলা কতদূর হয়েছে খেয়াল আছে?”

আছিয়া বেগমের চেঁচামেচিতে রিহি উঠে বসলো। উঠেই বিরক্তের সহিত শুধালো,
“কী হয়েছে? এভাবে বিরক্ত কেন করছো?”

“আমরা বিরক্ত করছি? কোনো বাড়ির বউ এতো বেলা অব্দি ঘুমাতে দেখেছো?”
আছিয়া বেগমের এহেন কথায় রিহি আরো বিরক্ত হলো। সে সমান তালে চেঁচিয়ে প্রতিত্তর করলো,
“তাতে আমার কী করার আছে? আমার অভ্যাস তো তোমরা জানতেই। জেনে বুঝেই তো এনেছো।”

“আমার ছেলেটা অফিসে খালি পেটে গেল।”

রিহি পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গিতে খাট ছেড়ে উঠতে উঠতে জবাব দিল,
“তোমার ছেলে খালি পেটে যাবে কী ভরা পেটে যাবে এটার দায়িত্ব কী আমার? তোমার ছেলে তুমি রাখো খেয়াল।”

“তুমি বউ না?”

“না আমি ওই আদর্শ বউ এর দায়িত্ব পালন করতে পারবো না। তোমরা আগে থেকে সব জেনে আমাকে এনেছো কেন?”

আছিয়া বেগম আর জবাব দিলেন না । এখন তিনি জবাব দিলে হিতে বিপরীত হবে। কথার পিঠে কথা বাড়বে। তাই তিনি নরম সুরে শুধালেন,
“আমি ডাক্তারের কাছে যাবো। কয়েকদিন ধরে শরীরটা খারাপ লাগছে মা।”

“তো যাও না। কেউ তো বারণ করেনি।”

“চুলায় রান্না বসিয়েছি। সব করে ফেলেছি। এটা একটু দেখিও।”

“পারবো না। আমার ঐসব চুলার আশেপাশে যাওয়া সম্ভব না।”

“সব তো শেষ। এটা নামানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গেলে আমি সিরিয়াল পাবো না।”

“সেটা দেখার বিষয় আমার না। আর শরীর দুর্বল হলেই যে ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে এটা কে বলল? কাজ পড়ছে তাই বাহানা দিচ্ছ?”

আছিয়া বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,
“রিহি।”

“আমার সাথে গলা উঁচু করবে না। আমি এগুলো পছন্দ করি না।” বলেই রিহি ওয়াশরুম ঢুকে গেল। আর আছিয়া বেগম ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। এ কী সর্বনা’শ ডেকে আনলো সে! অতি লোভে ছেলের জীবনটা শেষ করে ফেলল না তো!

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। পাশাপাশি আমাদের বন্যার্ত আপনজন গুলোর জন্য দোয়া রইল। আল্লাহ রক্ষা করুক।)
Anonymous artist আমার ছোটোখাটো আর্ট এর পেজটিতে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইল 💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here