#চৈত্র_শেষে
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব ৯
অনু ছাদে একা বসে রইল। আনিস মিয়া প্রস্থান করেছে অনেকক্ষন হলো।
রোদের তেজ বেড়ে গেছে অনেকটা। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে যে কিরণগুলো আসছে সেগুলো গা জ্ব’লে যাওয়ার মতো অবস্থা।
আনিস মিয়া যাওয়ার আগে বলে গিয়েছেন, “বেশিক্ষন না থাকতে। রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে।”
কিন্তু অনু গেল না। এতক্ষনে উনি হয়ত অফিসেও চলে গিয়েছে। অনু ঠায় বসে রইল।
“আপু?”
অনুর খেয়াল নেই। তিথি এসে অনুর গায়ে হাত রাখতেই অনু চমকে তাকালো।
দেখতে পেল, সূর্য এখন গাছ থেকে অনেক উপরে। তার মানে বেলা অনেক গড়িয়েছে ।
“তুই কবে এলি?”
“এই তো এখন এলাম। তুই এই বেলায় এখানে বসে আছিস কেন? গরম লাগছে না। গরমে আমাদের অবস্থা ঘরের ভেতর কাহিল। আর তুই রোদের ভেতর বসে আছিস।”
অনু খেয়াল করলো। হ্যাঁ তার শরীর বেয়ে ঘাম চুকচুক করে পড়ছে কিন্তু রোদ গুলো গায়ে লাগলে ভালোই লাগছে। যখন মনের অবস্থায় ঠিক থাকে না তখন শারীরিক অবস্থারও হুঁশ থাকে না। মনের জ্ব’লনের কাছে শরীরের এই সামান্য জ্ব’লন কিছুই না।
“বাবা চলে গেছে?”
“হ্যাঁ, সে তো অনেক আগেই বেরিয়েছে। যাওয়ার আগে আমাকে আদেশ করেছিল তোর যেন খেয়াল রাখি। হু? দেখলি আমি এখন বড়ো হয়ে গিয়েছি। খেয়াল রাখতে পারি।”বলেই সে অনুর দিকে তাকালো। তিথি শেষ কথাটা অনু হাসার জন্যই বলেছিল কিন্তু সেদিকে অনুর কোনো ভ্রূক্ষেপ না দেখে সে শুধালো,
“তুই ঠিক আছিস আপু?”
অনু বোনের দিকে তাকালো। দুই মায়ের মেয়ে ওরা। অথচ সেই র’ক্তের টান ঠিকই আছে তিথির। কারোর প্রতি কারোর হিংসা বা বিদ্বেষ নেই। না তিথি মায়ের মতোও হয়নি। তবে দুজন দুরকম। অনু হলো বেশ শান্ত আর তিথি চঞ্চল।
অনু উঠে দাঁড়িয়ে জানালো, “আমি ঠিক আছি। তুই এগিয়ে যা। আমি আসছি।”
“না, আই। মা আবার কী না কী বকে তোকে।” বলেই সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।
অনু পা বাড়াতেই তিথিও পা বাড়ালো।
অনু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই রাহেলা বেগমের সামনে পড়লো।
রাহেলা বেগম অনুর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে শাসালেন,
“এতো বেলা অব্দি ওখানে গিয়ে বসে আছিস কেন? রান্নাটা কে করবে শুনি? আমি করতাম? করে করে ফ্রি তে খাওয়াতাম?”
“আমি করে দিবো মা। তুমি চিন্তা করো না।” অনুর শান্ত স্বর পেয়ে রাহেলা বেগম দমে গেলেন।
“উফফ মা! তোমার মন মানসিকতা কী ঠিক হবে না? আপুর এই অবস্থা আর তুমি রান্না করতে বলছো?”
তিথির কথা শুনে রাহেলা বেগম চেঁচিয়ে কিছু বি’শ্রী শব্দ প্রয়োগ করতেই অনু তিথির হাত ধরে অনুনয়ের দৃষ্টিতে তাকালো যাতে কিছু না বলে।
রাহেলা বেগম তবু দমে যাননি। তার নিজের পেটের মেয়ে সতীনের মেয়ের জন্য টানে সে সেটা সহ্য করতে পারে না।
এইবার তিনি তিথিকে সরানোর জন্য দ্বিতীয়ধাপ শুরু করলো,
“এতক্ষন বাসায় কেন তুই? স্কুল নাই? তা না করে ডং ডং করে ঘুরে বেরিয়ে দরদ দেখাচ্ছ? একই পথে হাঁটতে চাইছো না কি? সুশিক্ষা ছেড়ে কুশিক্ষাগুলো নিতে চাইছো?”
অনু এবার চুপ থাকতে পারলো না। সে বেশ শাসানোর সুরে জবাব দিল,
“ছোট মা? এসব কী ধরণের কথা! তুমি ডাইরেক্টলি আমাকে অপমান করছো। আমি কেন ওকে কুশিক্ষা দিতে যাব? ও আমার বোন। আমার সাথে মিশতেই পারে।”
“মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।”
অনু আর কোনো জবাব দিলো না। কথায় কথা বাড়বে। সে তিথির উদ্দেশ্যে শুধালো,
“তিথি যা, স্কুলে যা। তৈরী হয়ে নেয়।” বলেই সে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে জানালো,
“রান্না আমি করে দিচ্ছি। তবুও কোনো অশান্তি করিও না।” বলেই সে প্রস্থান করলো।
আর রাহেলা বেগম হিং’স্র চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন।
——-
দুইদিন কেটে গেল। আজ আনিস মিয়া উৎফুল্ল খুবই। কারণটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
আনিস মিয়া ঘুম থেকে উঠে বের হতে নিতেই দেখলো অনু চা বানাচ্ছে।
আনিস মিয়া সরাসরি ছাদে চলে গেলেন।
অনু চা নিয়ে আসতেই আনিস মিয়া শুধালেন,
“আজ আমি খুশি অনেক।”
অনু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আনিস মিয়া বেশ হৈহৈ করে জবাব দিলেন,
“আজ তোমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। আজ থেকে তোমার আরেকটা লক্ষ্য যোগ হবে। কিছুক্ষন বাদেই গিয়ে তৈরী হয়ে নিবে। আজ তোমার ভর্তি।”
অনু এতক্ষনে বুঝতে পারলো। তার বাবার এতো খুশির কারণ তাহলে তার পড়া! অনু তাকিয়ে রইল। যে মানুষটা তার এমন জীবনের পরে সম্পূর্ণ আরেকটা জীবন গুছিয়ে দিচ্ছে তাকে সে নারাজ করবে না কিছুতেই।
আনিস মিয়া ভারী খুশি। সব যদি ঠিকঠাক ভাবে আবার হয়ে যায় তাহলেই ভালো। তার মেয়েটাও এগিয়ে যেতে পারবে।
ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে করতে দুপুর পেরোলো। অনুর খটকা লাগে, এতো দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শেষ করা যায় তা তার আগে জানা ছিল না। কিন্তু সে কোনো প্রশ্ন করলো না। চুপচাপ ছিল। বাড়ি থেকে একটু দূরে হওয়ায় বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকাল গড়ালো।
গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে অনু হাঁটতে লাগলো। সামনে মোড়ের চায়ের দোকান। দুনিয়ায় কী হয় না হয় সব খবর এই দোকানে পাওয়া যায়। বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তের খবর পর্যন্ত এদের কাছে থাকে। ঘটনাগুলোকে আরো রসকস মিশিয়ে তেল মসলা মিশিয়ে মজা তো আছেই। মাঝখানে থাকবে ধোয়া উঠা চায়ের কাপ।
অনু এই জিনিসগুলোকে ভয় পায় ইদানিং। এক,এই চায়ের দোকান। আরেক,পাড়ার আশেপাশে মহিলাদের আড্ডা।
ইদানিং এসবের সামনে সে পড়তে চায় না কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে সে পড়ে গিয়েছে।
অনু বাবার জন্য দাঁড়িয়ে রইল। আনিস মিয়া গাড়ি ভাড়া মিটাচ্ছে। তিনি এগিয়ে আসতেই অনু বাবার সাথে পা বাড়ালো।
দোকান পেরিয়ে যেতেই একজন ডেকে উঠলেন,
“কী আনিস মিয়া? বড়ো মেয়ে না কি?”
“হ্যাঁ, তাতো দেখতেই পাচ্ছেন!”
“শুনলাম। ও না কি একেবারের জন্য চলে আসছে। তালাক হই গেল না কি?”
“শুনেছেন যখন জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
“না, এমনি যাচাই বাছাই করে নিচ্ছি আর কী! ওই যে আমেনার মা এসে কইলো।”
আনিস মিয়া আর অনুর আর কিছু বুঝতে বাকী রইলো না। রাহেলা বেগমই তাহলে যেচে যেচে গিয়ে সবাইকে বলে এসেছে। নাহয় অনু আসার পরে থেকে বাড়ি থেকে একবারের জন্যও বের হয়নি। তবুও এই আসার খবর ঠিকই পাচার হয়ে গিয়েছে। এতে অবশ্য অনু মায়ের দোষ দিচ্ছে না। কারণ এটা সমাজ। এখানে থাকতে হলে সব খবর বাইরে যাবেই। ওই যে কথায় আছে না! দেয়ালেরও কান আছে!
“শুনলাম, জামাই বাবাজি নাকি আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করেছে! জানো কিছু?”বলেই তিনি অনুর দিকে তাকিয়ে শুধালেন,
“কী মা? আগে থেকে ফ’স্টিনঃষ্টি ছিলো না কি? এজন্যই তোমার বাবারে কইছিলাম। আমি একটা পাত্র আনছিলাম। হীরার মতো। হাজার গ্রাম ঘুরলেও এরম পাত্র পাওয়া মুশকিল। কিন্তু শেষমেষ নিজের পছন্দে কী হইলো? ঠকাইলো তো?” আনিস মিয়া তার হাত ধরে ফেলল।
অনুর আর কোনো কথা কান দিয়ে ঢুকলো না। তার কানে শুধু একটা কথায় ভাসছে যে জামাইবাবাজি বিয়ে করেছে। তার আদিত্য বিয়ে করেছে! কই সে তো কিছুই জানে না! তার মানে আদিত্য সত্যিই ছেড়ে দিল তাকে! অনু বাকী পথ আর বাবার জন্য অপেক্ষা করলো না। সে দৌড়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে এলো।
এসেই দরজা বন্ধ করে দিল। আনিস মিয়া ভয় পেলেন। তিনি মেয়েকে ডাকতে ডাকতে মেয়ের পিছু পিছু দৌড়ে আসলেন। রাহেলা বেগম আর তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কী হলো এদের!
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। রেসপন্স করবেন প্লিজ। রিচ কমে যাচ্ছে।)