তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন পর্ব ২ #জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

0
118

#তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন

পর্ব ২

#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

ত্রিশা কাঁদতে কাঁদতে কোনোরকমে নতুন ড্রেসটা গায়ে জড়িয়ে বাইরে আসতেই দেখে- সেখানে পায়চারি করছে আহনাফ!
ভয় আর লজ্জায় একত্রভাবে মেয়েটাকে যেনো মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। আজ প্রথম কোনো মানুষ তাকে কাপড় ছাড়াই দেখে ফেলেছে। এ এক বিশ্রি ফিলিংস!
ওদিকে এক হাতের মুষ্টি দিয়ে আরেক হাতে ক্রমাগত আঘাত করছে আহনাফ। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা সবাই নিচে বলে আহনাফ বাথরুমের সামনেই দাঁড়িয়েছে। প্রচন্ড রাগ তার চোখে মুখে যেনো উগ্রে উঠেছে। তার মুখভঙ্গিটাও আক্রমনাত্মক। অন্য একটা হলুদ রঙ্গের পাঞ্জাবী পড়ে সে দাঁড়িয়ে ছিলো। দেখতে অসাধারণ স্মার্ট লাগছে তাকে। চোখের রিমলেস চশমার নিচেও তার ক্রোধান্বিত চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে। ত্রিশা ভাবলো মুষ্টিবদ্ধ হাতে ঐরকম একটা ঘুষি তাকেও মারবে নাকি সে? ভয়ে গলা মুখ শুকিয়ে এলো ত্রিশার। ত্রিশাকে দেখে সে কাছে ডাকলো।

রুক্ষ স্বরে আদেশ করে বললো, ” এই মেয়ে এদিকে আসো, হারি আপ!”

ত্রিশা তখনো নিরবে কেঁদেই চলছে। কাছে এসেই কেঁদে কেঁদে বললো,

” স্যরি স্যার, আমাকে ক্ষমা করুন, আমার বাবাকে এসব বলবেন না প্লিজ, তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে, আপনি যে শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো”

আফনান একটা ধমক দিয়ে দাঁত কটমট করতে করতে বললো,
” এই মেয়ে চুপ করবা? একদম ন্যাকা সাজবা না, একদম না। ঐ পাজি মেয়েদের দলটাই তোমাকে পাঠিয়েছে না? সাফ সাফ ওদের প্রত্যেকের নাম বলো, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দিবো। তাছাড়া সবার সামনে তোমাকে এমন অপমান করবো যে কেঁদে কূল পাবা না। ”

ত্রিশা তার স্যারের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না। তাই উত্তরে বললো,

” স্যার, আপনি কোন মেয়েদের কথা বলছেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না স্যার!”

আহনাফ দ্বিগুণ অগ্নীশর্মা হয়ে সুধালো,

” ন্যাকামি করো? আবার বলো চেনো না? কয়েক মাস যাবত আমাকে টানা হয়রানি করে আসছে সেই মেয়েগুলা, আমি যেখানে যাই সেখানেই যায়। সিসি ক্যামেরার মতো এরা আমার নজরদারি করে। ফোনে, সোশাল মিডিয়ায়, হোয়াটসঅ্যাপে এরা টানা মেসেজ পাঠিয়েই যাচ্ছে। আজ এদের অত্যাচার চরমে পৌঁছে গেলো৷ আমি যে ওয়াশ রুমে চেইঞ্জ করছি সেখানে পর্যন্ত ন্যাকেড হয়ে ঢুকে পড়েছে! ছি: বেহায়াপনার চরম সীমা অতিক্রম করেছে এরা! ”

স্যারের মুখে এই কথা শুনে ত্রিশা লজ্জায় যেনো মাটির মধ্যে ঢুকে পড়লো। এ কোন বিপদে পড়লো বেচারি ত্রিশা। জীবনে কোনোদিন কারো সাথে দুষ্টামি, ঠাট্টামি করার সাহস পায়নি সে, আর স্যার কিনা তাকে এত বড় অপবাদ দিলো?

ব্যথাগ্রস্ত মুখে কেঁদে কেঁদে বললো,

” স্যার আপনি কি বলছেন এসব? বিশ্বাস করুন স্যার আমি এসবের মধ্যে নেই….”

একথা বলতেই পাশ দিয়ে কয়েকজন মহিলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। এদিকে কেউ আসছে বুঝতে পেরে আহনাফ ত্রিশাকে বললো,

” যদি ভালো চাও তাহলে এখনি এই বাড়ির ছাদে আসো, নইলে শুধু বাপের কাছে বিচার যাবে না, বাপ মা সহ চৌদ্দ গুষ্ঠির নাম আমি ভুলায়া দিবো। আমাকে আজকেই এর একটা বিহিত করতেই হবে”

বলেই হনহন করে বেরিয়ে পড়লো আহনাফ।

রাত্রিদের বাড়িটা চার তলা। তিনতলায় গোটা ইউনিট জুড়ে ওরা থাকে আর বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া। বাড়ির সামনেই এক বিশাল মাঠের ন্যায় জায়গা আছে, সেখানেই বিয়ের স্টেজ সাজানো হয়েছে, প্যান্ডেল টাঙ্গানো হয়েছে ও লাইটিং করা হয়েছে। পুরো ছাদে বাগান ও পাখি পালন করা হয় বলে সেখানে লোকজনের কোনো পদচিহ্ন নেই।
ত্রিশা খানিক বাদেই চোখ মুছতে মুছতে ছাদে এসে হাজির হলো। হাত, পা, শরীর সবই কাঁপছে তার। মনের মধ্যে এক পৃথিবী ভয় ও আতঙ্ক।

বিশাল বড় ছাদে আহনাফ একা দাঁড়িয়ে। লোকজনের প্রবেশ নিষেধ, তাই কেউ সচরাচর আসে না। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে আবছা চাঁদের আলোয় একপাশে বড় ছাদবাগান ও আরেকপাশে অনেকগুলো কবুতরের খোপ দেখা যাচ্ছে৷ ছাদের মৃদুমন্দ বাতাসে আহনাফের চুলগুলো উড়ছে। তৃষারও বিশাল লম্বা চুল ও পরনের লেহেঙ্গা টাও উড়ছে।
এমন আবছা চাঁদের আলোয় একটা লাল রঙ্গা লেহেঙ্গায় ওকে লাল পরীদের মতোই মোহনীয় লাগছিলো।

“স্যার৷ আমি এসেছি ”
বলতেই আহনাফ সেদিকে তাকালো। জীবনে বহু মেয়ে দেখলেও তৃষাকে এই ছাদে দেখে প্রথম বারের মতো আহনাফ চোখ ফেরাতে পারছিলো না। রাগ যেনো সব মিলিয়ে যাচ্ছিলো। আহনাফ ভাবলো, আহা! দুধে আলতা গায়ের রং মেয়েটার! আবছা আলোতেই মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মনে মনে বললো,
” মেয়ে তুমি যত সুন্দরীই হওনা কেনো, আজ তোমাদের একটা বিহিত আমি করবোই করবো”

আবার সুদীর্ঘ চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়ে আরো নিচে নেমে গেছে দেখে ভাবলো,
” মেয়েদের দলটাকে বেশ চালাক দেখছি, ওরা জানে যে লম্বা চুল আমার পছন্দ, তাই লম্বা চুল ওয়ালা মেয়ে পাঠিয়েছে, যেনো আমি কিছুই না বলতে পারি! ”

আহনাফ এসব ভাবতেই আছে এর মধ্যে তৃষা আবার বললো,
” স্যার আমি এসেছি…”

আহনাফ তখনো চুপচাপ মেয়েটাকে দেখছেই।

তৃষা এবারে কয়েক কদম সামনে অগ্রসর হতেই চারাগাছে দেওয়ার জন্য পানির ট্যাপের পাশে পড়ে থাকা পানিতে বিশাল বড় করে আছাড় খেলো। পিছলে একেবারে আহনাফের গায়ের উপর ঢলে পড়লো সে। আহনাফ এক হাতে তৃ্ষার চিকন কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আরেক হাত তৃষার কোঁকড়া কোঁকড়া লম্বা চুলে জড়িয়ে গেলো। তৃষাও তার দু হাত দিয়ে আহনাফকে ধরে ফেললো। শরীর থেকে ওড়না উড়ে গেলো তৃষার। তাই উন্মুক্ত বুকের দিকটা সরাসরি চোখে পড়লো আহনাফের। ভীষণ লোভনীয় সে দিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আহনাফ তৃষার চুলের জটা হতে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে তৃষা চুলের ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। ওর চুলের একটা অংশ আহনাফের পাঞ্জাবির বোতামে আটকে গেছে। মিনিট পাঁচেক সময় ধরে প্রাণপণে চেষ্ঠা করে তৃষার চুলের বাঁধন হতে আহনাফ মুক্ত হলো।
ততক্ষণে আহনাফের কতগুলো গরম নি:স্বাস তৃষার ঘাড়,কান ও গাল ছুঁয়ে গেছে। তবে কিশোরি তৃষা সেসবের কোনো মানে বুঝে নি।

আহনাফ ত্রিশার প্রতি নিজের এ ধরনের অনুভূতির জন্য নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো। মেয়েটার অগোচরে ওর প্রতি এ ধরনের অনুভূতি আনা ঠিক হয়নি। আহনাফ হালকা একটা গলা খাঁখারি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ওকে নম্রভাবেই জিজ্ঞেস করলো,

” তোমাদের গ্রুপে আর কে কে আছো, নাম বলো?”

তৃষা আবারো সেই ফোঁপানি শুরু করে বললো,

” বিশ্বাস করেন স্যার, আমার কোনো গ্রুপ নেই”

” গ্রুপ নেই মানে? তুমি একাই এসব করছো তাহলে? কি উদ্দ্যেশ্য তোমার?শুনি?”

তৃষা বললো,
” বিশ্বাস করুন স্যার, আমার কোনো উদ্দ্যেশ্যই নেই স্যার! আর আমি কিছুই করিনি স্যার”

তৃষার কথা শুনে আহনাফের এখন আর রাগ হচ্ছে না, বরং ওর কথা শুনতে ভালো লাগছে। সে ভাবলো, মেয়েটার মুখটা কতটা মায়াবী, এ মিথ্যে কথা বলার মতো মেয়ে না, তা বুঝাই যাচ্ছে। তাছাড়া ভীষণ ভয়ও পেয়েছে সে! মেয়েটাকে ভয় পেলে তো দারুন দেখায়! কাঁদলেও তাই, আর কন্ঠস্বরও কি মিষ্টি! তাই কথা বাড়ানোর উদ্দ্যেশ্যে সে বলেই চললো,

” তাহলে প্রতিদিন আমার নাম্বারে রাত বিরেতে আননোন নাম্বার থেকে যে কল আসতো? ”

” স্যার আমার কোনো ফোনই নেই, আমি কিভাবে কল দিবো?”

” আর ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন আইডি থেকে যে মেসেজ আসতো?”

” সেগুলোর সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই স্যার!”

আহনাফকে চিন্তিত দেখালো, সে শুধু বললো,
” উঁহু! ”

তারপর ক্ষাণিকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
” তাহলে যে ওয়াশরুমে আমি ঢুকেছিলাম, সেখানে তুমি ঢুকে কাপড় চেইঞ্জ করছিলে কেনো? ”

তৃষা আমতা আমতা করে বললো,
” স্যার আপনিই তো…, দরজা না লাগিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়েছিলেন”

একথা শুনে আহনাফই ভীষণ লজ্জিত হলো।

তাই তো! সে ই তো ভুলে বাথরুমের দরজা না লাগিয়েই ভিতরে ঢুকে কাপড় পরিবর্তন করছিলো। বেচারি মেয়েটার কোনই দোষ নেই।

এমন সময় ছাদে কার যেনো পায়ের শব্দ পাওয়া গেলো। তাই আহনাফ তৃষার একহাত খপ করে ধরে ওকে নিয়েই কবুতরের খোপের একপার্শ্বে লুকিয়ে গেলো। ঘটনাক্রমে এবারো জায়গা স্বল্পতার কারনে তৃষা একেবারে আহনাফের ঠিক বুকে এসে পড়লো। তৃষাকে এত কাছে পেয়ে আহনাফের বুকের ভিতরে এক অজানা অনুভূতি নাড়া দিলো। বুকের ভীতর এতদিন যে আবেগের সে মাটিচাপা দিয়েছিলো আজ তা তৃষার স্পর্শ পেয়ে জাগরিত হলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here