প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ১৮

0
75

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৮

দুপুর হলেও বৃষ্টির উৎপাৎ থামে নি। তৌসিফের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদে এসেছে পৌষ। লোকটা এখনও হাউকাউ করছে ফোনে। বৃষ্টি’র ফোঁটা ক্রমশ বাড়ছে বৈ কমছে না। পৌষ আজ এই প্রথম তালুকদার বাড়ীর ছাদে এসেছে। বিশাল বড় এক ছাদ। সম্মুখেই মেইন রোড দেখা যাচ্ছে। ছোট বড় অসংখ্য চারা গাছে ভরপুর ছাদটা। মাঝখানে বিশাল বড় এক দোলনা। পৌষ’র মুখটা উজ্জ্বল হলো। ছাদে পা রাখতেই ঠান্ডা পানির বিন্দু গুলো সিক্ত করে তুললো ওর দেহ, মন। ছুটন্ত পা ওর চললো ও মধ্যখানে। দোলনায় বসতেই ভিজে চুপচুপা হয়ে গেল ও। এত ভারী দোলনা ও নড়াতে পারলো না। কাপল দোলনা এটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। এতটাই বড় যে তৌসিফ তালুকদারের দাদা চার বউ নিয়ে উঠে দোল খেতে পারবে।
মাথায় আজগুবি সকল ধারণা হানা দিলো পৌষ’কে। দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো ও। এদিক ওদিক ছুটতে ছুটতে ভিজে একাকার হলো।
.
বেশ সময় পর তৌসিফ ডাক দিলো পৌষ’কে। ওর পেছনে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই যেই না হাত বাড়াবে তখনই ওর নজর যায়। সোহা দাঁড়িয়ে। বিরক্ত বোধ করলো তৌসিফ। মাত্র ই তো হাত ধরে টেনে কাছে নিতো। তখন ধমকে দেয়াতে মুখটা চুপসে ছিলো। ওর চটপটির মতো চটপটা বউটার ওমন মুখ বুঝি মানায়? উহু। মোটেও না। সোহা’কে দেখেই তৌসিফ যেই না উঠে দাঁড়ালো ওমনিই সোহা বলে উঠলো,

— একটু কথা ছিলো।

— বলো।

— আমি বিয়েটা করতে চাই না।

— কারণ?

— আমি চাইছি না এটাই কি যথেষ্ট নয়?

— না।

সোহা ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবলো। অতঃপর কিছু বলতে উদ্যোত হতেই তৌসিফ বলে উঠলো,

— তোমার নিজে চলার যথেষ্ট মাধ্যম আছে। আরো প্রয়োজন হলে আমি আছি। দিব। কিন্তু যদি বিয়ে না করো তাহলে আমার বাসায় আর থাকা সম্ভব হবে না তোমার। পৌষরাত পছন্দ করে না তোমাকে। এন্ড ইউ নো……

— জানি। তবে এটা আমার বাবা’র বাসা…..

চোখ গরম করে তাকায় তৌসিফ। সোহা সহসা মাথা নামিয়ে নিলো। তৌসিফ তিরস্কার করে বললো,

— তোমার বাবা’র বাসা? হাসালে সোহা। আমাকে খারাপ রুপে দেখতে চেয়ো না। যা দিয়েছি তাতেই শুকরিয়া করো। পৌষরাত থেকে দূরে থাকো। আর হ্যাঁ যদি ওর কানে উল্টো পাল্টা কিছু ভরেছো তখন তুমি দেখবে আমার বিশ্রী রুপ।

সোহা দাঁড়ালো না আর এক সেকেন্ড ও। পা ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলেই তৌসিফ বলে উঠলো,

— অর্ণব আসলেই তোমার সাথে দেখা করবে। হয় সোজা ইজ্জত সহিত শশুর বাড়ী যাবে নাহয় এই বাড়ী ছাড়বে আজীবনের জন্য।

সোহা আর দাঁড়ালো না। তৌসিফ গা ছাড়া ভাব নিয়ে রুমে গেলো। নাহ্। ওর খাট্টামিঠা বউটা নেই। ওয়াশরুম ও খালি। কিচেনে বুয়াকে জিজ্ঞেস করলেও সে জানালো তখন ধমক খেয়েই পৌষ রুমে ঢুকেছিলো। তাহলে কোথায় গেলো তৌসিফের বউ? এদিক ওদিক কোণা কোণা খুঁজলো তৌসিফ। বাইরে যে বৃষ্টি নীচে তো যাওয়ার কথা না। ফোনটা হাতে নিয়ে সিসিটিভিতে এক নজর দিতেই দেখলো চোরের মতো বেরিয়েছে পৌষ। উঠেছে সিঁড়ি দিয়ে উপরে।
বউ খুঁজে পেয়ে শান্তি পেলো ও। নিজেও ছুটলো ছাদের দিকে। যাওয়া হয় না অনেকদিন।

ছাদের গেট টা বিশাল বড়। সাইড দিয়ে ঢুকতে নিলেই তৌসিফ আটকে গেলো। বড়সড় দুটো ফাঁকা ঢোক গিললো। তৌসিফ নিজেই পৌষ’র জন্য কাপড় চোপড় এনেছিলো। মেয়েটা অভিযোগ করে নি এই পর্যন্ত। ওর পরণে এখন ও পাকিস্তানী ঢোলা এক কামিজ। গায়ের সাথে সেটে আছে ওরনাটা। দুই হাত মেলে চঞ্চলা মেয়েটা এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছে। ওর শরীরের দিকে তাকিয়ে এই প্রথম বোধহয় তৌসিফের আকাঙ্খা জাগ্রত হলো। মেয়েটার জন্য ওর ভালোবাসার অঙ্কুরোদগম শুরু করলো বুঝি। সারা শরীর অবস হতে চাইলো। তরতাজা পুরুষ মন যেন হঠাৎ ই যুবকে পরিণত হলো। তৌসিফের ভীষণ মন চাইলো প্রেম করতে। এই মেয়েটার প্রেমে পরতে। এর প্রেমের সুধা পান করার তীব্র বাসনা জেগে উঠলো হৃদপিণ্ডে।

কখন যে পা চলা শুরু করলো আর কখন যে ও পৌষ’র কাছে এলো তা টের পেলো না কেউ। একদম ওর পিছনে এসে দাঁড়ালো তৌসিফ। ওর শক্তপোক্ত হাতটা ধীরে ধীরে ছুঁয়ে দিলো পৌষর মেদহীন কোমড়। আচমকা স্পর্শে আগুনের মতো জ্বলে উঠলো পৌষ। পিছনে না ঘুরেই ধাক্কা মা’রলো তৌসিফকে। পিচ্ছিল হওয়াতে তৌসিফ পরতে পরতে যেই না পৌষ’কে ধরলো ওমনিই দু’জন একসাথে পরলো। জমা পানিতে দু’জন একসাথে পরাতে ঝপাৎ করে শব্দ হলো। পৌষ খ্যাঁক করে উঠলো,

— লুচ্চামি করার জায়গা পান না? কোথা থেকে উদয় হলেন আপনি? জান গলায় এসে পরেছিলো।

বলেই হা করে দেখালো। তৌসিফ মুগ্ধ নয়নে মুখের ভিতর উঁকি দিলো। দেখার চেষ্টা করলো পৌষ’র জান। তবে আফসোস দেখা গেলো না। পৌষ’র উঠার তাগাদা দেখা দিলো না। এদিকে তৌসিফ ও ওকে নিজের উপর থেকে সরালো না। তৌসিফের দেহের উপর উঠে আছে ও। তৌসিফ হঠাৎ ই জিজ্ঞেস করলো,

— রেগে আছো?

— না তো।

— বৃষ্টিতে ভিজছো যে?

— মন খারাপ থাকলেই কি মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে?

— জানি না তো।

— উঠবেন না?

— মন চাইছে না।

ঠান্ডা ক্রমশ বাড়ছে। বৃষ্টি ও পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো। পৌষ’র ও যেন কিছু হলো। ও মাথা এলিয়ে দিলো। তৌসিফ দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
এই তীব্র বর্ষণ উপেক্ষা করে দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ ছন্দে বিমোহিত হচ্ছে। মনে জাগ্রত কামনা বা বাসনা কোনটাই প্রকাশে তারা ব্যার্থ।

অল্প অল্প বিদুৎ চমকাতেই পৌষ উঠতে চাইলো তবে তৌসিফ ছাড়বে না। ও দুই হাতের বেষ্টনী আরো দৃঢ় করলো। পৌষ এবার মুচড়া মুচড়ি জুড়ে দিলো। তৌসিফ নরম সুরেই বললো,

— আরেকটু থাকো না পৌষরাত।

পৌষ বুঝি মানার মেয়ে? নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আগেই ওর মুখ ছুটলো রেলের গতিতে,

— আপনি তো মিয়া বহু ঢিলা। এই ছাদে টাংকির পিছনে প্রেম পিরিতি করতেন নিশ্চিত আগে। তাই না? কি ভেবেছেন আমি বুঝব না?

তৌসিফ ওকে ছেড়ে দিতেই উঠে দাঁড়ালো পৌষ। এক হাত বাড়িয়ে দিলো তৌসিফের দিকে অথচ দু’জন ই জানে পৌষ ইহকালে টেনে ওকে তুলতে পারবে না। তৌসিফ অবশ্য হাতটা ধরলো। নিজে উঠে দাঁড়িয়ে পৌষ’র গাল দুটো ধরে বললো,

— টাংকির পিছনে যাওয়া আমার অভ্যাস না। আমি যা করি খোলামেলা ই করি। মুক্ত গগনতলে।

বলতে বলতে পৌষ’র থুতনিতে চুমু দিলো। কাজ অবশ্য হলো। মাথাটা নিচু করে নিলো পৌষ।
তৌসিফ বেশ উপভোগ করে এই মুহুর্তটা। পৌষ সরে গেলো ওর সামনে থেকে। পৌষ’কে দোলনায় বসতে দেখে তৌসিফ ও ওই দিকে পা বাড়ালো। দোলনা পেছন থেকে দুই হাতে ঠেলে দিলো। মুখে হাসি ফুটলো পৌষ’র। উচ্ছসিত গলায় শুধু বললো,

— আরো জোরে দিন।

___________________

বৃষ্টি আজ না কমার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেও মন ভরে নি পৌষ’র। অবশেষে না চাইতেও ধমকে নিয়ে এসেছে তৌসিফ। সেই থেকে মুখ পেঁচার মতো করে রেখেছে ও। আপাতত ওয়াশরুমে ঢুকে আর বের হচ্ছে না। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম এবার। ওয়াশরুম যদিও আরো আছে তবুও দরজায় নক করলো ও,

— পৌষরাত? হানি? হলো তোমার?

— হয়েছে তো সেই কখন।

— আশ্চর্য তাহলে বের হচ্ছো না কেন?

— জামা কাপড় আনার সুযোগ দিয়েছিলেন আপনি? খেউ খেউ করে ভেতরে ঠেলে দিলেন।

তৌসিফ নিজের কপালেই আলতো চাপড় মা’রলো। জীবন পার হয়ে যাবে পৌষ’র ভাষা ঠিক করতে করতে। এই মেয়ে কবে সুধরাবে?
ওকে অপেক্ষা করতে বলে তৌসিফ আলমারি খুলে এক সেট কাপড় নিয়ে দরজায় টোকা দিলো,

— হানি খুলো।

— কেন?

— ড্রেস নাও।

দরজা খুলে একটু ফাঁক করলো পৌষ। এক চোখ দিয়ে উঁকি দিয়ে ছিনিয়ে নিলো কাপড়। ঝাঁঝালো কণ্ঠে একটু পরই পৌষ চিল্লিয়ে উঠলো। তৌসিফ দরজায় নক করলো পুণরায়। পৌষ না খুলেই দাঁত কটমট করে বললো,

— আমি বলেছি এসব ধরে দিতে?

— কিসব?

— ন্যাকা সাজলে একদম মুখের উপর ফেঁকে মা’রব।

তৌসিফ হঠাৎ বুঝলো। স্বাভাবিক গলায় ই বললো,

— ওহ। আরে তোমার তো লাগবেই তাই না?

— চেয়েছি আমি? ব্যাটা খাটাস! নিলজ্জ! মেয়েদের জিনিস হাতাহাতি করতে মন চায় তাই না? আন্ডার গার্মেন্টস এর ফ্যাক্টরী খুলে নিন তাহলেই তো হয়।

তৌসিফ বেয়াক্কেল বনে গেলো। দরজা খুলে বের হলো পৌষ। তৌসিফ’কে দেখে ও না দেখার মতো করে চলে গেল সাইড কেটে। তৌসিফ ওয়াশরুমে ঢুকেই দেখলো একদম গোছানো ওয়াশরুম। মেয়েলী ঘ্রাণে ভরপুর। এমনিতে এলোমেলো পৌষ ওয়াশরুমের ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। রোজ পরিষ্কার করাতে হবেই হবে।
.
খেতে বসা মাত্র ই তৌসিফে’র জন্য আলাদা ভাত আনা হলো। কপাল কুঁচকে তৌসিফ বললো,

— পৌষরাত না খিচুড়ি করেছে।

–জ্বি মামা কিন্তু আপনার জন্য ভাত করতে বললো।

— খিচুড়ি ই খাব।

পৌষ ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে এলো। ওর হাতে একটা বাটি। খেতে বসতেই তৌসিফ বললো,

— আমাকে বেড়ে দাও।

এমন আবদার তার মুখে আজ এই প্রথম। একদম ই নতুন। নিজের টা নিজেই নিয়ে খায় ও। পৌষ অবশ্য ভাত দিতে নিলেই তৌসিফ বললো,

— খিচুড়ি দাও হানি।

পৌষ’র মুখে হাসি ফুটলো৷ নিজ হাতে বেড়ে দিলো৷ পৌষ নিজেরটা নিয়ে বসতেই তৌসিফ জিজ্ঞেস করলো,

— বাটিতে কি?

— খাবেন?

— কি সেটা তো বলো।

— শুকনো মরিচ এর ভর্তা। একদম ফটাফট করে এনেছি।

ভর্তা’র ঘ্রাণেই মুখে পানি এলো ওর। কাঁচা পেঁয়াজ, ধনিয়াপাতা আর ভাজা শুকনো মরিচ লবন আর সরিষার তেল দিয়ে মেখে দুই মিনিটে বানিয়ে এনেছে পৌষ। তৌফিক একটু মুখে দিতেই নাক,কান জ্বলে উঠলো ওর। পৌষ’র দিকে তাকাতেই দেখলো দিব্যি খেয়ে যাচ্ছে ও। এই মেয়ে যে একটা ঝাল খোড় তা এতদিনে জানলো তৌসিফ। মনে মনে বললো,”আমিও তো বলি এত তেঁজ আসে কোথা থেকে”।

#চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here