প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২০

0
74

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২০

[পর্বটা রোম্যান্টিক। চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

সবে মাত্র ই দাঁত ব্রাশ করলো তৌসিফ। ওয়াশরুম থেকেই জোরে জোরে ডাকতে লাগলো পৌষ’কে,

— পৌষরাত? পৌষরাত?

অলস পৌষ তখন খাটে পা ঝুলিয়ে ফোন টিপছে। শুনেও না শুনার মতো করে পরে রইলো ও। এখন উঠতে মন চাইছে না। ওয়াশরুম থেকে কেন ওকে ডাকতে হবে? তৌসিফ সাড়া শব্দ না পেয়ে নিজেই উঁকি দিলো রুমে। পৌষ’কে আরামে থাকতে দেখেই এবার নরম গলায় ডাকলো,

— হানি? একটু শুনে যাও না।

পৌষ আড় চোখে তাকালো। তৌসিফ চোখের ইশারায় ডাকলো। মুখে “চ্যাহ” শব্দ করলো পৌষ। উঠে পরণে থাকা জামাটা টেনেটুনে ঠিক করে আসতে আসতে বললো,

— কি চাই? কি দিব?

— তোমাকে চাই। এখানে এসো তারাতাড়ি।

পৌষ ভ্রু সামান্য কিঞ্চিত করে এগিয়ে যেতেই ভেতরে ডাকলো তৌসিফ। দুই পা পিছিয়ে গেলো পৌষ। চোখ কপালে তুলে বললো,

— লুচ্চামি আর কতকাল করবেন? স্বৈরাচার পালালো অথচ আপনি ভালো হলেন না। দিন দাহারে আমাকে ওয়াশরুমে ডাকেন কেন?

তৌসিফ অসহায় চোখে তাকিয়ে নিজেই বেরিয়ে এলো। পৌষ’র চোখের সামনে ই করে দুই পাটি দাঁত বের করে বললো,

— দেখ তো কোথায় ময়লা? দুই বার ব্রাশ করলাম। মাউথ ওয়াশ দিয়ে গার্গল করলাম। দেখো টাং ও ক্লিন।

মুখ খুলে দেখালো তৌসিফ। উঁকিঝুঁকি দিয়ে পৌষ দেখলো একটু। হ্যাঁ সত্যি ই দাঁত গুলো চমলোক্ক দেখাচ্ছে। কথা বলাতে ফ্রেশ ঘ্রাণ আসছে।
পৌষ অভিজ্ঞ স্বরে বললো,

— হু। পরিষ্কার দেখাচ্ছে কিন্তু আমাকে দেখাচ্ছেন কে…..

মুখে আসা প্রশ্নটা আর করা হলো না ওর। তৌসিফ শুনেছে পৌষ বলেছে ওর দাঁত পরিষ্কার। একটু আগেও এই মেয়ে ওকে অপমান করেছে। বলেছে তৌসিফের নাকি মুখে গন্ধ। কি লজ্জা! কি লজ্জা! এখন যেহেতু মুখে স্বীকার করেছেই তাহলে আর বসে থাকবে কেন তৌসিফ। প্রথমেই পৌষ’কে টেনে ওর থুতনিতে এক চুমু দিলো। এতেই বাক হারা পৌষ কিন্তু তাকে সুযোগ না দিয়েই আবার অধরে চুমু খেলো তৌসিফ। একটা, দুটো পরপর কয়েকটা। এভাবে ছাড়া ছাড়া স্পর্শ পেয়ে পৌষ’র শরীর শিউরে উঠলো। তৌসিফের বুকের দিকে টিশার্ট টা খামচে ধরলো ও। তৌসিফ দুই হাতে পৌষ’র গাল চেপে ধরা তখনও। কপালে কপাল ঠেকিয়ে প্রশ্ন করলো,

— কেমন লাগলো?

পৌষ মৌন৷ কথা বলে না। তৌসিফ ওর নাকে ছোট এক চুমু দিলো। বললো,

— কথা বলো হানি।

— জা..জানি না।

— আমার তোতাপাখি তোতলাচ্ছে কেন?

পৌষ থমকে আছে। তৌসিফের এসব স্পর্শ ওকে নাড়িয়ে দেয়। ওর দেহ মন চনমন করে উঠে। না চাইতেও পৌষ স্বীকার করতে বাধ্য সে হেরে যায়। তৌসিফ এভাবে কাছে এলেই সে হেরে যায়। এতদিন যা ও একটু রোক ঠোক ছিলো। চরিত্র নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন ছিলো কিন্তু তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। যদিও সোহা’কে নিয়ে তার মনে প্রশ্ন অনেক। কিন্তু বর্তমানে সে তৌসিফের বউ। পিয়াসা তার অতীত যাকে তৌসিফ মনে রাখে নি। পৌষ রাত বিরাতেও চমকে উঠে। তৌসিফ’কে নিজের কাছাকাছি দেখলেই সে এলোমেলো হয়ে যায়। চাপা হাজার নাড়িয়ে হয়তো সাময়িক কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু যখন তৌসিফ এভাবে তার দিকে কাতর দৃষ্টি ফেলে, চোখে চোখে আবদার ধরে তখন বেসামাল হয়ে উঠে পৌষ। ওর হাত পা সমান তালে ঝিম ঝিম করে। মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফাঁকা।

তৌসিফ দেখলো। বুঝলো। মুগ্ধ চোখে আলতো হাতে আদর দিলো পৌষ’র মুখে যা একদম ই সহ্য করতে অক্ষম পৌষ। ও নড়ে উঠতেই তৌসিফ এবার ওর ওষ্ঠাধর আঁকড়ে ধরলো। পান করলো প্রেমসুধা। পৌষ ছটফট করে উঠতেই আচমকা ওকে কোলে তুলে নিলো তৌসিফ। গলা জড়িয়ে ধরে পৌষ। চোখে চোখ মিলাতে ব্যার্থ ও। তৌসিফ ওকে নরম বিছানায় রেখে ঝট করে দরজা লক করে লাইন গুলো অফ করে দিলো। পৌষ’র কাছে চলে এলো অতি শিঘ্রই। নিজের কাছে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে অসহায় চোখে তাকিয়ে বিনিত গলায় বললো,

— মে আই হানি?

পৌষ’র বুক লাগাম ছাড়া ঘোড়ার মতো ছুটছে। বুকে বাজছে ড্রাম। চারদিকে যেন বেসুরা সিতারা বাজছে। মাঝখানে পৌষ। তৌসিফ ওর গলায় থাকা চিকন ওরনাটা সরাতেই হাত পরলো বুকে। তাগড়া এক পুরুষ তৌসিফ যে পূর্বে ও নারী স্পর্শে এসেছিলো। বহুবার মেতেছিলো তাতে। আজ এত বছর পর পৌষ’কে টানছে সে। কেন জানি মনটা বেশিই টানছে। তৌসিফ ভুলে গেলো দিন ক্ষণ। আচমকা কান্নায় ও থেমে গেলো। পৌষ সত্যি ই কাঁদছে। স্বাভাবিক কোন কান্না না। ও ছাড়া চাইছে তৌসিফ থেকে। কান্নার ধরণ ঠিক এমন যেন তৌসিফ তাকে নোংরা স্পর্শ দিচ্ছে। তবুও তৌসিফ ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বললো,

— হা..হানি আমি…

— প্লিজ না। ন…না প্লিজ না৷

অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ পুরুষ তৌসিফ। নারীর অনিহা সে বুঝে।তড়িৎ বেগে ওকে ছেড়ে দিলো তৌসিফ। ওর টিশার্ট তখন ফ্লোরে। তা তুলেই সেকেন্ডের ব্যবধানে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো তৌসিফ। বেয়াক্কেল বনে গেলো পৌষ। ওর কেন কান্না এলো তা ও নিজেও জানে না। ও তো জোয়ারে ভাসছিলো। একটুর জন্য তৌসিফ’কে নিজেকে বিলিয়ে ও দিতো কিন্তু হঠাৎ ই কেন জানি ওর সহ্য হলো না৷ সহজ হতে পারলো না পৌষ তাই তো কান্না চলে এলো। একদম ই অভিজ্ঞ না পৌষ। ও জানে না৷ বুঝে না৷ হয়তো বয়সের তাড়না বা আবেগে গা ভেসে যায় কিন্তু হুট করে যে তৌসিফ তাকে কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া চাইবে তা কে জানতো? পৌষ নিজেকে সময় বা প্রস্তুতি কোনটাই দিতে বা নিতে পারে নি।

ওভাবেই বিছানায় পরে রইলো পৌষ। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। গোসল করছে তৌসিফ। তৌসিফকে আচমকাই ভয় লাগলো পৌষ’র। লোকটার সাথে হাজার বেয়াদবি করুক কিন্তু তার সাথে আজ এই মুহুর্তে এমন কাজ করাটা যে ঠিক হলো না তা পৌষ বুঝে। সে কি পৌষ’কে আবার মা’রবে? ভয়ে কোণায় গুটিসুটি মে’রে শুয়ে পরলো পৌষ। গায়ে ভালোমতো কাঁথা টেনে একদম মাথা সহ পেঁচিয়ে নিলো। কখন যে ঘুমালো তা ও নিজেও জানে না।

দীর্ঘ ঘন্টা খানিক পরে তৌসিফ টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো। এক পলক পৌষ’কে দেখে আলমারি থেকে একটা টাউজার নিয়ে পরেই বারান্দায় চলে গেলো। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের ভাজে গুজে আগুন ধরালো তাতে। বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে উড়ালো অলস ভঙ্গিতে। একদিকে বিষাক্ত ধোঁয়া অন্যদিকে বিষাক্ত অনুভূতি। আজ বহু দিন পর নারী চাইছিলো ও। বললে অবশ্য ভুল। পৌষ’কে চাইছিলো। এই চঞ্চল মেয়েটাকে তার ইদানীং ভালো লাগে। এটা যদিও ভালোবাসা কি না তা বুঝতে অক্ষম তৌসিফ অথবা স্বীকার করতে চায় না। একবার কি ভালোটাই না বাসলো। সেই ভালোবাসা তাকে ভরা মাঠে মুখে কালি মেখে দিয়েছে। ভালো বাসতেও যেন ভয় লাগে। ইজ্জতহানীর ভয়।
উদাম শরীরে ঠান্ডা লাগলো। বাতাস বইছে। বৃষ্টি শুরু হলো আবার তবে ঝিরিঝিরি। গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি পরতেই ভেতরে চলে গেল ও। খাটের একদম কোণায় ঘুমিয়ে পৌষ। অপর পাশে শুয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করলো তৌসিফ। অতঃপর কাঁথা সহ পৌষ’কে টেনে একদম নিজের কাছে শুয়ে পরলো। একবার চাইলো নিজেও কাঁথার নিচে ঢুকে বুকে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু পরক্ষণেই কি মনে করে আর ধরলো না। ঘুমিয়ে গেলো। রয়ে গেলো বুকে কিছু যন্ত্রণা যা অতি কাছে শুয়ে থাকা মানুষটির অজানা।

_________________

সকাল সকাল বমি হচ্ছে শ্রেয়ার। হেমন্তের চোখে মুখে চিন্তা। ভোররাত থেকে বমি করেই যাচ্ছে শ্রেয়া। করতে করতে এবার কেঁদেই দিলো। বড্ড আদুরে কি না। হেমন্ত ওর মুখ ধুয়িয়ে দিলো। রুমে নিয়ে খাটে বসিয়ে ছুটলো পৌষ’র রুমে। বারান্দায় লেবুর চারা লাগানো। পৌষ অনেক কিছুই লাগিয়ে রেখেছে। সেবার ওর কলেজ থেকে লেবুর ছোট্ট এক চারা এনে লাগিয়েছিলো। বছর হলো তবে গাছ ঠ্যাটা এটা। একদম পৌষ’র মতো। গাট হয়ে আছে। তাই আর মাটিতে লাগানো হয় নি। টবেই আছে। দুটো পাতা ছিড়ে নিলো হেমন্ত। রুমে এসে পাতা ছিড়ে শ্রেয়া’কে দিতেই নাকে ধরে লম্বা শ্বাস নিলো ও। একদম সতেজ ঘ্রাণ। হেমন্ত সস্তির শ্বাস ফেললো। মর্নিং সিকনেস হচ্ছে ইদানীং শ্রেয়ার। নরম স্বভাবের বউটার বড়ই কষ্ট হচ্ছে। হেমন্ত মানতে পারছে না। চিরুনী দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো অতি যত্ন করে আঁচড়ে এক করে বেঁধে দিলো। ক্লান্ত শ্রেয়া দূর্বল কণ্ঠে বললো,

— ক্ষুধা লেগেছে।

চট করে দাঁড়িয়ে গেলো হেমন্ত। শ্রেয়াকে তুলে বারান্দায় খোলা বাতাসে বসিয়ে বললো,

— দুই মিনিট জান৷ এখনই আসছি।

বের হতে হতেই দেখলো চৈত্র স্যুপের বাটি নিয়ে এদিকেই আসছে। হেসে ওর হাত থেকে বাটি নিলো হেমন্ত। বললো,

— এত সকালে উঠলি যে?

— ফজরের পর ঘুম এলো না তাই পড়ছিলাম ভাই। ভাবীর কথা শুনলাম তাই ভাবলাম কিছু খাবে কি না।

একটু লজ্জা ই পাচ্ছে চৈত্র। হেমন্ত ওর পিঠ চাপড়ে চলে গেল। ওর অনুপস্থিততে ওর ভাই-বোন গুলোই যথেষ্ট। টাইম টু টাইম ধরে বেঁধে খাওয়াবে শ্রেয়াকে। পৌষ’র পর ওদের পেটের কথা শুনার মানুষ ই তো শ্রেয়া।
স্যুপ পুরোটাই খেলো শ্রেয়া। খেতে খেতেই বললো,

— আজ না বললেন পৌষ’কে আনবেন।

— হ..হু?

একটু আনমনা ছিলো হেমন্ত। শ্রেয়া ওর গালে হাত দিয়ে বললো,

— কি হয়েছে?

— কিছু না শ্রেয়ু।

বলেই হাসলো হেমন্ত। শ্রেয়া তাকিয়ে রইলো। লোকটা হাসলে তার বুকে শান্তি লাগে। হেমন্ত ওর গাল টেনে দিলো। আদুরে গলায় বললো,

— আমার বাবুটার আম্মু দিন দিন এত সুন্দর হচ্ছে কেন?

— বাবুর আব্বু ও সুন্দর হচ্ছে।

— তাই?

— হু।

— এই সুন্দর বাবুর আব্বু আদর করে দিলে রাগ হবে না তো?

লজ্জা পেয়ে বসলো শ্রেয়া। তাতেই সম্মতি ভেবে ওকে কোলে তুলে রুমে নিলো হেমন্ত। পৌষ’র কথা আরেকবার জিজ্ঞেস করলেও উত্তর এলো না। শ্রেয়া ও তখন স্বামীর বুকে পরম শান্তিতে শুয়ে আছে। তার একমাত্র ভালো লাগার স্থান এটা।

___________________

সকাল সকাল মিনুকে চোখের সামনে ঘুরঘুর করতে দেখেই চোখ উল্টে তাকালো পৌষ। মিনু মিনমিন করে বললো,

— ছোট ভাবী আপনাকে ডাকে।

ভ্রু কুঁচকে পৌষ জিজ্ঞেস করলো,

— কে?

— বড় মামা।

পৌষ মনে করার চেষ্টা করলো বড় মামাটা কে৷ পরক্ষণেই মনে হলো তৌফিক তালুকদার। পৌষ পরটা উল্টে জিজ্ঞেস করলো,

— কেন ডাকবে আমাকে? আমার সাথে কি কাজ?

— জানি না তো কিন্তু ডাকে।

তখনই উচ্চ স্বরে কথা শুনলো পৌষ। তৌসিফের গলা ও শুনা যাচ্ছে। দরজার সামনে থেকেই কথা আসছে। পৌষ উঁকি দিতেই দেখলো তৌসিফ’কে টেনে সাইডে নিলো তায়েফা। উচ্চ স্বরে তখন ধমকাচ্ছে তৌফিক। তৌসিফ ও কম না৷ তৌফিকের গলা কানে এলো পৌষ’র,

— ডাক তোর বউ’কে। দেখি কতবড় সাহস ওর!

পৌষ ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ ই যেন ঝড়ের বেগে ওর গালে থাপ্পড় পরলো। এত জোরে থাপ্পড় শেষ কবে খেয়েছে ওর মনে নেই। মাথাটা পাক্কা এক মিনিট ঝিম ধরে রইলো। মুখে নোনতা স্বাদ পেতেই পৌষ বুঝলো গাল কেটেছে। হুঙ্কার ছেড়ে তৌফিকে ডাকলো তৌসিফ। এদিকে হু হু করে কেঁদে উঠলো পৌষ। ওকে কেন মা’রলো? কি করেছে পৌষ?

#চলবে…..

[অনেক দিন পর লেখায় ব্যাক করলাম। সময় লাগছে গুছিয়ে লিখতে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here