প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ২৪

1
90

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৪

সুস্থ একটা মানুষ’কে অসুস্থ করে হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। সামান্য জ্বর’কে কেন্দ্র করে টেস্ট করাতে এসে হসপিটালে এডমিট হওয়ার ঘটনা বিরল। একদম ই বিরল। সেই বিরল কাজ টা ই করে দেখালো তৌসিফ। ওর সামনেই বেডে শুয়ে আছে পৌষ অথচ ওর মধ্যে ছিটাফোঁটা ও অনুতাপ নেই। শোক নেই। এখনও দুটো টেস্ট বাকি। এই যে পৌষ এত করে বলছে ও করাবে না কিন্তু তৌসিফে’র সাথে পেরে উঠছে না। না মানে না ই। তৌসিফের অনেক রুপ, ছদ্মবেশ দেখা শেষ পৌষ’র কিন্তু এই রুপ ত্যাড়া যে তৌসিফ যা জানা ছিলো না। ওর কথা থেকে টলানো গেলেই না। পৌষ এবার নেতিয়ে পরলো। জেদ, রাগ, কান্না সবই করলো ও তবে লাভের লাভ কিছুই হলো না। ফলাফল শূন্য’র কোঠায়। যাই বলুক ফলাফল ঋণাত্মক। নিজেকে এবার ইলেকট্রন মনে হলো পৌষ’র। এত কিছু করলো ধনাত্মক জীবনে হলো না৷ মাথার উপর ঋণাত্মক চিহ্ন নিয়ে ই আজীবন ঘুরতে হবে ওর৷ এই তৌসিফ ওকে ছাড়বে না আর না ই পৌষ ছাড়তে দিবে। তবে এই মুহুর্তে বড়ই অসহ্য লাগছে তৌসিফ’কে। মুখটা কেমন ব্যথা ব্যথা করে রেখেছে। কেন রে শালা? তোর কিসের ব্যথা? ব্যথা তো পৌষ’র। অবস্থা খান এমন যে, সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ লাগাবো কোথায়?
তৌসিফ’কে দেখেই পৌষ’র বলতে মন চাইলো,
“তোমার কোন কোন জায়গায় ব্যথা গো বান্ধবী লোলিতা?”
শরীরটা দূর্বল হওয়াতে এই প্রশ্নটা করা হলো না। রাগে, দুঃখে কোন কথাই বললো না পৌষ। এতেও শান্ত নেই তৌসিফ। সোফা ছেড়ে উঠে এলো পৌষ’র কাছে। বেডে অসুস্থ হয়ে চিৎ হয়ে স্যালাইন খাচ্ছে পৌষ। একদম চুপ করে থাকায় তৌসিফ এসেই ঝুঁকে পরলো ওর দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে জিজ্ঞেস করলো,

— কথা বলো।

মুখ ঘুরালো পৌষ। শা’লা! বলে কি না কথা বলো। কেন রে পৌষ কেন কথা বলবে? তোর দাদা’র কেনা জমি পৌষ’র মুখ যে বললেই কথা বলবে? টু শব্দ ও করবে না পৌষ। তুই যদি এখানে ডিগবাজি জায়েদ খান সেজে দুটো পল্টি ও মা’রস তবুও পৌষ কথা বলবে না। তৌসিফ আরেকটু ঝুঁকে গেলো পৌষ’র কাছে। ওর শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো পৌষ। একদম পৌষ’র মুখে এসে পরছে তপ্ত নিঃশ্বাস। তৌসিফ ওভাবে থেকেই বললো,

— কথা বলবে না?

পৌষ বুঝি উত্তর দেয়? তৌসিফ বুঝলো তাই তো কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,

— টেস্ট বাকিগুলো ও করানো হবে। যতই ভঙ দেখাও না কেন।

সাথে সাথে মাথা ঘুরে তাকালো পৌষ। টলমলে চোখ জোরা নিয়ে ই ভাঙা গলায় ঝগরা শুরু করলো,

— আপনি একটা জঘন্য লোক। খারাপ লোক। নিশ্চিত কোথা থেকে কালো টাকা কামিয়েছে তাই আমার মতো ভোলাভালা বাচ্চা দেখে সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। কি ভেবেছেন এতে টাকা শুদ্ধ হয়ে যাবে? জঘন্য লোক আমার চোখের সামনে থেকে দূর হন। যান এখান থেকে। পৌষ কখনো কথা বলবে না আপনার সাথে। আপনি আমার ব্যথা কখনো বুঝবেন না।

আর বলতে পারলো না পৌষ। বরাবরের মতো থুতনিতে বরাদ্দকৃত চুমুটা পরলো সেখানে। তৌসিফ অতি নরম স্বরে বললো,

— আমার চিন্তা বুঝলে শেষের কথাটা বলতে না হানি।

— আপনার হানি,রস, চিনি, দই সব আপনি খান। আমাকে মাফ করুন। আপনার মতো মামাতো ভাই আল্লাহ কাউকে না দিক। আমিন।

তৌসিফ কথা হারালো। কাকে বুঝাবে? কি বুঝাবে? বুঝার মেয়ে এটা? তৌসিফ শক্ত রইলো। এখন নরম হয়ে কথা বললেই তৌসিফে’র ঘাড়ে উঠে ওর ঘাড়ই মটকাবে। এই পৌষ হচ্ছে এক বাদর যাকে আদর দিলেই গাছে উঠে। উঠে তো উঠে, হাত পা ধরে টেনে ও নামানো যায় না। নার্স আসতেই তৌসিফ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। নার্সটির মিটমিট করে হাসা দেখেই গা পিত্তি জ্বলে উঠলো পৌষ’র। নিজের ভালোর জন্য চুপ রইলো। অল্প হেসে নার্স বললো,

— স্যার ম্যামকে নিতে হবে।

তৌসিফ কপাল কুঁচকালো। বললো,

— এখানেই করাতে বলেছি আমি।

— একটা এখানেই করবে স্যার। বাকি দু’টোর জন্য একটু কষ্ট করতে হবে ম্যাম’কে।

পৌষ নিজে নিজেই উঠে বসলো। তৌসিফ প্রথমে খেয়াল না করলেও হঠাৎ দেখলো নিজে নিজে স্যালাইন খুলছে। তৌসিফ ধমকে উঠলো তখনই,

— এই মেয়ে! কি করছো? এক চড় মা’রব।

তারাতাড়ি ওটা ছেড়ে দিলো পৌষ। নার্স এসে খুলে দিতেই পৌষ বললো,

— আপু আমাকে একটু ধরে তুলবেন?

— শিওর ম্যাম।

তৌসিফ ও এগিয়ে এসেছে ততক্ষণে ধরার জন্য কিন্তু পৌষ ধরলো না ওকে। নার্স’কে ধরে ই বেরিয়ে এলো। তৌসিফ অল্প আহত হলো।
টেস্ট করানো শেষ হতেই পৌষ হাপ ছেড়ে বাঁচলো। নার্সটা তখন তৌসিফ’কে কিছু বলছে তা দেখেই তেঁতে উঠলো পৌষ’র ভেতরে থাকা বউ আত্মা। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ডেকে উঠলো,

— এই মেয়ে এখানে আসো।

নার্স সহ তৌসিফ তাকালো। পৌষ যেন এতে আরো চেঁতে গেলো। শরীরে নেই শক্তি। যা আছে তা নিয়ে ই ঠেলেঠুলে উঠলো ও। পাশে থাকা চেয়ারে ভর দিয়ে এগিয়ে এসেই দাঁড়ালো দু’জনের মাঝখানে। ঝাঁঝালে গলায় বলে উঠলো,

— এত কি কথা?

নার্স থতমত খেতেই পৌষ বলে উঠলো,

— জুয়ান পুরুষ দেখলেই ছুঁকছুঁক করতে মন চায় না? এত যেহেতু ভালো লাগছে তাহলে রেখে যাই এখানে। কি বলো? এক মিনিট তুমি কি জানো এই দামড়া ব্যাটা দুই বিবাহ করেছে। তার বাপ করেছে দুই বিবাহ। দাদা করেছে চৌদ্দ বিবাহ। পর দাদা করেছে……

পেছন থেকে মুখ চেপে ধরলো তৌসিফ। ছাড়া পেতে ছটফট করলো পৌষ। নার্স হতবাক। হতবিহ্বল। পৌষ’কে টেনে কোলে তুলে নিলো তৌসিফ অতঃপর সোজা হাঁটা দিলো বাইরে। বউয়ের এই পা’গলামি মানতে ও বাধ্য। এতক্ষণ হাজার বউ’কে ধমকে ধামকে রাখুক তাকে নিয়ে বউ এর সেনসিটিভি সে মাথা পেতে নিবে। শুধু এটা কেন বউ সুস্থ থাকার জন্য সে একটু কঠোর নাহলে তো সারাক্ষণ ই এই পা’গলের ইশারায় নাচতে রাজি তৌসিফ।

সোজা গাড়িতে বসালো ওকে তৌসিফ। ড্রাইভার’কে আদেশ করলো,

— চলুন।

পৌষ’র জন্য ঔষধ গুলো আর নেয়া হলো না। রিপোর্ট দিবে কাল পরশু। পেছনের সিটে বসে পৌষ’র মাথাটা নিজের বুকে নিলো ও। শক্তি পৌষ’র আজ কম তাই তো ততটা নড়াচড়া করলো না। পরে রইলো বুকে। বুকের কাছটা থেকে ঘ্রাণ এলো পৌষ’র নাকে। চোরের মতো ঘ্রাণ নিলো পৌষ। রইলো সেভাবেই।

______________________

বাসায় ঢুকতেই বুয়ারা একে একে দেখে গেলো পৌষ’কে। দরজা ধরে দাঁড়ানো মিনু। ভেতরে ঢুকার সাহস পেলো না। পৌষ দেখে ডাকলো,

— মিনু? কি চাই?

ডাক শুনেই মিনু ঢুকলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— শরীর ভালা আপনের ছোট ভাবী?

— হু।

মিনু আর কথা খুঁজে পেলো না তাই মাথা নিচু করে চলে গেল। পৌষ ও ঘাটলো না। চুপ করে রইলো। তৌসিফ বের হয়েছে আধ ঘন্টা হবে। ব্যাটা আজ ভালোই ভঙ দেখাচ্ছে। কোলে তুলে ভেতরে এনেছে ওকে। পৌষ তখন বাঁকা বাঁকা দুটো কথা শুনিয়েছি।লাভ অবশ্য হয় নি তাতে। পৌষ’কে রুমে রেখে চেঞ্জ করিয়ে ভেগেছে হুরতার করে।
চোখ বুজে নিলো পৌষ। একটু ঘুমানো দরকার।

আচমকা কথার শব্দে কানে এলো। ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে কেউ শরীরে বেয়ে বেয়ে উঠছে। একটা না দুটো মানুষ। হঠাৎ ই মনে হলো কেউ বা কারা পৌষ’র গলা চেপে ধরেছে। ঝট করে চোখ মেললো পৌষ। ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। চোখ খুলা মাত্র ই একদম লাল হয়ে উঠলো চোখ দুটো। কাঁচা ঘুমটা ভেঙেছে তাই তো ঝট করে মাথা ধরে গেলো। ইনি,মিনি’কে দেখেই পৌষ চমকালো। খুব করে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

— কোথা থেকে টপকালি দুটো?

ইনি,মিনি ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

— আম্মুর পেত থেতে আপা।

পৌষ দুই বোনকে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের কপালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কার সাথে এলি?

— হেমু বাই আনলো আপা।

— হু। ঘুমা এখন।

এতদিন পরে বোনের আদেশ অমান্য করলো না ওরা। বোনের গলা ধরেই ঘুমিয়ে গেলো। তৌসিফ এসে অবাক ই হলো বটে। এসব বোনগুলো কি একই পদের? একটাকে জাগাতে এসে বাকি দুটো ও ঘুমিয়ে গেলো। বাইরে হেমন্ত বসা। তৌসিফ ডাকলো না পৌষ’কে। ঘুমাক একটু। হেমন্ত তৌসিফ’কে ফেরত আসতে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,

— পৌষ এলো না?

— ঘুমাচ্ছে।

— ইনি,মিনি?

— ওরা ও ঘুম।

হেমন্ত নিরাশ হলো। তৌসিফের সাথে কথা হলো গতকাল। বলেছিলো পৌষ’কে বাসায় নিতে চায় তৌসিফ সুন্দর ভাবে কথা কাটালো। বউ বুঝি হাত ছাড়া করার মানুষ তৌসিফ? যেই বউ তার, পুরাই ঝাকানাকা। না জানি কোথায় চলে যায় তাই তো তৌসিফ ছাড়ে না। কফিতে চুমুক দিলো তৌসিফ। বললো,

— শরীর অসুস্থ এখন যেতে দিব না আমি।

একদম মুখের উপর না করে দিলো তৌসিফ। হেমন্ত আহত হলো। ছোট্ট পৌষ’টাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে এখন কি না শুনতে হচ্ছে তাকে নেয়া যাবে না। তবুও অনুরোধ করে উঠলো হেমন্ত,

— আমার ই বোন সে। খেয়াল রাখবে সবাই। মা-বাবা থেকে চাচা-চাচি সবাই দেখতে চাইছে। পিহা,জৈষ্ঠ্য, চৈত্র সবাই অপেক্ষায় আছে। শ্রেয়া প্রেগন্যান্ট, ও আসতে পারছে না৷ পৌষ’র সাথে ওর এটাচমেন্ট বেশি। একটা সপ্তাহের জন্য অনুমতি দিন।

তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— ও যাবে না হেমন্ত।

তীব্র ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও হেমন্ত চুপ রইলো। উঠে দাঁড়ালো সে। শুধু বললো,

— দেখা যাবে? জাগাব না৷ শুধু দেখব যদি অনুমতি দিতেন।

— এভাবে অনুমতি নেয়ার কি আছে হেমন্ত। তোমার ই বোন।

আকাশ থেকে পরলো হেমন্ত। এই তৌসিফ কোন ক্ষেতের মুলা? কথার মার প্যাঁচে ফেলা কেউ এর থেকে শিখুক। বোন দেয় না এখন বলে তোমার ই বোন। অসহায় চোখে তাকিয়ে হেমন্ত ভেতরে গেলো। তৌসিফ সেসব গায়ে মাখে না৷ বউ ছাড়া সে বাঁচবে না। একদম দেবদাস হয়ে নেশায় বুদ হয়ে ম’রবে।
হেমন্ত ঘুমন্ত ইনি,মিনিকে নিজের কোলে নিয়ে বের হলো। দুটো দুই কাঁধে। প্রচুর বায়না ধরে কেঁদে কেটে এসেছে। তৌসিফ ই বলেছিলো আসতে। এখন ঘুম দেখে সে ডাকতে পর্যন্ত দিলো না। হেমন্ত খুশি ও হলো আবার বিরক্ত ও হলো। ওকে দেখেই দাঁড়ালো তৌসিফ। বললো,

— ওদের রেখে যাও। থাকুক। পৌষ’র ভালো লাগবে।

— বাড়ী গেলেও ওর ভালো লাগতো।

তৌসিফ হেমন্ত’র সাথে নিচ পর্যন্ত নামলো। গাড়িতে উঠার পর তৌসিফ হাসি মুখে শুধু বললো,

— নিয়ে যাব আমি। চিন্তা করো না। ভালো রাখব আমি।

— ভরসা না থাকলে বোন দিতাম না।

হেমন্তের গাড়ি চলে গেলো। ততটাও দূরের পথ না। ভেবেছিলো পৌষ’কে নিয়ে যাবে তাই তো গাড়ি নিয়ে এলো। এখন বাড়ী গিয়ে কি জবাব দিবে সবাই’কে?
.
পৌষ’র ঘুম ভাঙতেই ও এদিক ওদিক তাকালো। তা দেখেই তৌসিফ বললো,

— কি খুঁজো হানি?

— আমার মাথা।

বলেই বাইরে গেলো। ফেরত এসেই বললো,

— ইনি, মিনি না এসেছিলো?

— চলে গিয়েছে।

মাথায় বাজ পরার মতো চমকালো পৌষ। বললো,

— থাকতে বলবেন না? কার সাথে এলো? কখন এলো? কখন গেলো?

তৌসিফ ভাবশালীন ভাবেই বললো,

— বললাম তো ওদের রেখে যেতে।

রাগে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো পৌষ’র। নাক, মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলো,

— কেন রেখে যাবে? ওদের মা-বাপ নেই? আমার যাওয়ার কথা ছিলো ওখানে। আপনার দোষ সব। এখনই যাব আমি৷ সরুন। সামনে আসবেন না একদম।

ভয়ে আত্মা গলায় চলে এলো তৌসিফের। বউ যাবে? কেন যাবে? তৌসিফ থাকবে কিভাবে? পৌষ ততক্ষণে উঠে এলোমেলো ভাবেই রাগে কাঁপতে কাঁপতে রুম থেকে বের হচ্ছে। টেনেটুনে বউকে নিজের কাছে নিলো তৌসিফ। পৌষ বুঝি মানে? সে সমান তালে লাত্থি, উস্টা দিয়েই যাচ্ছে।

#চলবে….
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here