প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ১৯

0
190

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৯

— আপনার আওতা বোন আপনাকে ভাই ডাকে না কেন?

“আওতা” শব্দটা কেমন শুনালো? তৌসিফ ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে বললো,

— আওতা বোন?

— সোহা। কেন ভাই ডাকে না আপনাকে?

তৌসিফ উত্তর দিলো না। দুটো মেইল পাঠাতে হবে তার। একটু দরকারি। মেইল পাঠাতে পাঠাতে পৌষ’র জহুরী চোখ ও দৃষ্টি কাড়লো ওর। পৌষ চোখ দুটো একদম ছোট ছোট তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তৌসিফ দ্রুত আঙুল চালালো কিবোর্ডে। এই মেয়ে প্রশ্ন যেহেতু তুলেছে উত্তর ও তার চাই।
পৌষ আধ শোয়া হয়ে বসা কাউচে। একটা ছোট বোলে করে কাজু খাচ্ছে সে। তৌসিফ কাজের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে একবার একটা তুলে মুখে দিলো। মজাই লাগলো। সল্টি একটা টেস্ট। মেইল সেন্ড করে ল্যাপটপটা পাশে রেখে বাটিতে আবার হাত দিতেই পৌষ বাটি সরিয়ে নিলো। তৌসিফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বললো,

— খেতে মন চাইলে নিয়ে আসুন। আমারটা কেন খাচ্ছেন? ছোঁচা।

— কে ছোঁচা?

— কে আবার? আপনি।

বলেই মুখ ভেঙালো পৌষ। তৌসিফ জোর করে বাটি থেকে দুটো কাজু নিয়ে মুখে দিতেই বিজয়ের হাসি হাসলো। পৌষ মুখ ঝামটা দিতেই তৌসিফ ও ভেঙানোর মতো মুখ করলো। পৌষ দুই হাত কানে দিয়ে আঙুল নাড়িয়ে বললো,

— ভেঙালে ব্যাঙ খায়, ম’রা গরুর ঠ্যাং খায়।

পৌষ’র এহেন কথায় তৌসিফের মুখটা ছোট হয়ে এলো। এসব আজগুবি সকল বাক্য কোথা থেকে শিখেছে এই মেয়ে?
তৌসিফ হঠাৎ ই খেয়াল করলো বউ ওর দিকে এগিয়ে আসছে। হাবভাব মোটেও ভালো ঠেকলো না। কাছে আসা ভালোবাসার বউ তো তার না। তাহলে এই আলগা পিরিত কেন দেখানো হচ্ছে তাকে। ডালে যে কালো আছে বুঝে গেলো তৌসিফ। এক ইঞ্চি ফাঁকা রেখে বসলো পৌষ। তৌসিফ নিজের সকল ভাবনা দমন করে প্রশ্ন করলো,

— কিছু বলবে হানি?

— হ্যাঁ ক্লোজ আপের এড দিব।

— না, এত আদর লাগাচ্ছো যে।

কটমট করে তাকিয়ে পৌষ বলে উঠলো,

— কোথায় আদর লাগালাম আমি হ্যাঁ? দুই চারটা চুমু দিয়েছি নাকি রাস্তার মোড়ে থালা হাতে বসে তৌসিফ তৌসিফ করেছি? মিথ্যা কেন বলেন?মিথ্যুক লোক? চাপা মা’রার জায়গা পায় না।

যতটুকু ও কাছে এসেছিলো তার থেকে তিন হাত দূরে গিয়ে বসলো পৌষ। তৌসিফ দিনে রাতে আর কত চমকাবে? আর কত অবাক হবে? তার এই অবাক হওয়ার দিন কি আদৌ শেষ হবে? কবেই বা শেষ হবে? যাকে আশেপাশে র সকলে ভয় পায়, যার সামনে মুখ তুলে সত্যি টা অবদি বলে না তাকে যে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায় এই এতটুকু পৌষ তা কি কেউ জানে? জনগন কি আদৌ মানবে এ কথা? লাগামটা ও হাত ছাড়া করে না। অন্য কেউ হলে তৌসিফ হয়তো হাত তুলে ফেলতো এতক্ষণে তবে কেন জানি পৌষ’কে তার ধমকটাও দিতে কষ্ট হয়। এই মায়াবী মুখটা ধমকের উপযুক্ত না। এই মুখে শুধু আদর মানায়।

নিজেকে বেহায়া উপাধি দিয়ে আগ বাড়িয়ে পৌষ”র কাছে গেলো তৌসিফ। বাটি থেকে দুটো কাজু নিতে নিতে আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো পৌষ’র গাল। ডাকলো মিষ্টি কণ্ঠে,

— পৌষরাত?

পৌষ মৌন রইলো। তার উত্তর চাই। তৌসিফ জানে, বুঝে তাই বললো,

— যাকে তুমি ভাই মানো না তাকে কেন ডাকবে?

চকিত দৃষ্টি ফেলে চাইলো পৌষ। তৌসিফ একটু হেসে বললো,

— সোহা কোনদিন ই আমাকে ভাই বলে ডাকে নি। এর হয়তো কারণ আছে বা হয়তো নেই। সম্পর্কে ভাই-বোন হলেও তা আদৌ কতটুকু আছে জানি না। সে ডাকে না। আমি জোর করব কেন? আমার আপন ভাই আছে। বোন আছে। এমনটা কিন্তু নয় সোহা জানে না বাইরের লোক ওকে কাজের মেয়ে ভাবে। ও জানে কিন্তু ভাবীদের সাথে তর্কে গেলেই ভাইরা কেউ চুপ থাকবে না। মূল কথা হলো আশ্রয় কেউ ছাড়তে চায় না। ও এখানে আশ্রয় পেয়েছে তাই ছাড়তে চায় না।

— তাই বলে নোংরা অপবাদ শুনবে.?

পৌষ’র কথার প্রেক্ষিতে আর কথা বললো না তৌসিফ। পৌষ তাকিয়ে রইলো ড্যাবড্যাব করে। বুঝার চেষ্টা করলো তৌসিফের মনোভাব। কিছুতেই সক্ষম হলো না ও। এই লোকের মন আর মস্তিষ্ক আদৌ এক ভাবে কি না কে জানে।
উঠে যেতে যেতে কিছু কাজু তৌসিফ’কে দিয়ে বললো,

— কাল আবার আনবেন কাজু।

— কাজের লোক কাউকে বললেই হবে। এনে রাখবে?

পৌষ’র মনটা কিন্তু ভালোই ছিলো কিন্তু ওর মাথা খারাপ করে দিলো। খটখটে মেজাজে পৌষ বললো,

— আমি কি কাজের লোককে বিয়ে করেছি? বিয়ে করেছেন আপনি। চুমু খান আপনি তাহলে আমি কেন কাজের লোককে বলবো আমাকে বাদাম এনে দিতে? এখন কি যাব কাজের লোকের কাছে?

বলতে বলতে উঠে গেলো পৌষ। তৌসিফ হকচকিয়ে গিয়ে তারাতাড়ি টেনে ধরলো ওকে। একদম কোলে বসিয়ে কোমড়টা চেপে ধরতেই বাইন মাছের মতো তিড়িং বিড়িং শুরু করলো পৌষ। ঝাঁঝালো গলায় বললো,

— এক নাম্বারের লুইচ্চা আপনি। বিয়ের দিন ও আমার কোমড়ে চেপে ধরেছেন। ছাড়ুন বলছি। একদম কামড়ে ধরব বলে দিলাম।

বলতে বলতে তৌসিফের বাহুতে সত্যি ই কামড়ে ধরলো পৌষ। তৌসিফ আচমকা হামলায় হাতটা আলগা করতেই দুই লাফে সরে গেলো পৌষ। দরজার কাছে যেতে যেতে বললো,

— কাজের লোক ডেকে তার কোলে উঠব এখন।

বলে সত্যিই বেরিয়ে গেলো পৌষ। তৌসিফের বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে। যেই ছ্যাড়াব্যাড়া বউ ওর বলা তো যায় না সত্যি যদি কারো কোলে উঠে বসে? হায় আল্লাহ! এই মেয়ে এমন কেন? লাই পেয়ে এখন তৌসিফের কাঁধে উঠে নাচছে। তৌসিফ তারাতাড়ি দৌড়ে বের হলো। পৌষ সত্যি ই মেইন দরজার দিকে যাচ্ছে। পিছন থেকে গিয়ে ওর বাহু টেনে ধরতেই পৌষ দাঁত কেলিয়ে হাসলো। তৌসিফ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললো,

— ভালো কি তুমি হবেই না?

— আপনি হতে দিলে তো।

পৌষ পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে নবাবের মতো বললো,

— টিভির রিমোট টা দিন।

তৌসিফ গিয়ে রিমোট দিতেই টিভি অন করলো পৌষ। কার্টুন চ্যানেল ছেড়ে দেখতে দেখতে পা নাচাচ্ছে ও। তৌসিফ বসলো একদম ওর পায়ের কাছে। পৌষ একটু ভদ্রতা দেখালো। পা নামিয়ে নিলো। বয়সে হলেও বড়। চাপা যথেষ্ট নাড়ালেও পা তুলে বসাটা একটু ভিন্ন দেখায়। ও পা নামাতেই আচমকা তৌসিফ ওর পা ধরলো। পৌষ’র শ্বাস আটকে গেলো। স্নায়ু বুঝে উঠার আগেই যেন ও পা সরাতে চাইলো তবে পারলো না। তৌসিফ ছাড়ে নি। নিজের কোলের উপরে পা রেখে বললো,

— থাকুক।

— না। ছাড়ুন।

বলতে বলতে পৌষ উঠে বসার চেষ্টা করলো। তৌসিফ সত্যি ই পা ছাড়লো না। ফর্সা পা দুটো নিজের হাত দিয়ে কোলে ধরে রাখলো। পৌষ’র দম আটকে যাবে যাবে ভাব। তৌসিফে’র পুরুষ হাত দু’টোর বিচরণ ওর পায়ে। পায়ের তালুতে ছোঁয়া দিতেই শিরশির করে উঠলো ওর বদন। একে একে প্রতিটা আঙুল নেড়ে চেড়ে দেখলো তৌসিফ। নরম তুলতুলে পা দুটো। পৌষ’র পা দুটো অত্যধিক ফর্সা। চোহারা থেকে হাত পা বেশি ফর্সা মেয়েটার। ন্যাচারাল সৌন্দর্য হয়তো এটাই। হাত পা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই মেয়ে মুখের যত্ন নেয় না। পৌষ কাতর গলায় বলে উঠলো,

— প্লিজ পা ছাড়ুন।

— বাট হোয়াই হানি?

— প্লিইইজ।

তৌসিফ তবুও ছাড়লো না। ওকে তো কম জ্বালায় না। তৌসিফ ও বদলা নিবে তবে ভিন্ন উপায়ে।
হঠাৎ ওর দিকে একটু এগিয়ে এসে তৌসিফ শুধালো,

— ক্যান আই টেস্ট হানি?

পৌষ’র চোখ মুখ শুকিয়ে এলো। গলাটা পানির অভাবে খা খা করছে। মন চাইছে তৌসিফের মাথাটাই চিবিয়ে নিতে। একবার তো এমন হলো ও। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জিনিস কামড়াতে মনে চাইতো পৌষ’র। চাচি তো বলতো পৌষ’র দাঁত নাকি ইঁদুরের দাঁত। কিছু কাটতে না পারলে শিরশির করে তাই সারাক্ষণ দাঁতের ব্যবহার করে এরা। পৌষ সারাক্ষণ ই নখ কাটতো। একবার তো হেমু ভাই এনে দিলো নতুন স্ট্রবেরি সোপ। হায় কি সুন্দর নাক জুড়ানো ঘ্রাণ। সইতে পারলো না পৌষ। বসিয়ে দিলো এক কামড়। ইনি,মিনি ছিলো ওর সামনে। হাত পেতে চাইলো একটু। পৌষ দেয় নি দেখে সেদিন লুকিয়ে দুই বোন এক কামড় করে সাবান খেয়েছিলো যদিও গিলার আগেই চৈত্র দেখেছিলো। হেমন্ত সেদিন কতটাই না ধমকালো ওকে। ভাবীর জন্য বেঁচে গিয়েছিলো পৌষ।

তৌসিফ কখন যে ওর ভাবনার মাঝেই পৌষ’র কাছাকাছি এলো তা টের পায় নি পৌষ। একদম ওর মুখের সামনে এসে বললো,

— কি হলো?

— আপনার মুখে গন্ধ তাই নো টেসটিং।

একদম ঝামা ঘঁষার মতো মুখটা হলো তৌসিফের। পৌষ উঠে দৌড়ে পালালো রুমে। মুখে গালি দিলো,

— ব’দমাইশ ব্যাটা। আমার সাথে বদ’মাইশি করতে আসে। একদম টয়লেট ধোঁয়ার ব্রাশে হারপিক লাগিয়ে দাঁত মেজে দিব।

সবটাই শুনলো তৌসিফ। প্রতিনিয়ত দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা হয় দামি টুথপেষ্ট দিয়ে। মাউথ ক্লিনার দিয়েও ক্লিন করা হয়। এই যে এখনও মুখে ফ্রেশ গন্ধ অথচ পৌষ কি জঘন্য অপবাদ টা ই না দিলো।
তবুও একবার হা হা করে দেখলো তৌসিফ। কই নাই তো গন্ধ। এই মেয়ে এত বজ্জাত কেন?

#চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here