আশিয়ানা #পর্ব_১২ #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

0
212

#আশিয়ানা
#পর্ব_১২
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
জনমানবহীন ফাঁকা ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে সেহরিশ। কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, সম্ভবত কিছু ভাবছে। কোনো জল্পনা কল্পনা করার সুযোগ পেল না সে। তার আগে ছাঁদের দরজা দিয়ে এগিয়ে এলো সাদাফ। সেহরিশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কোনো খবর?’

সেহরিশ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল না। খানিক নির্বাক চেয়ে রইল। পাশে সাদাফের উপর দৃষ্টি স্থির রেখে বলল,
‘ হুম।’
সেহরিশ প্যান্টের পকেট থেকে দুটো হাত বের করল। এরপর পাশে রাখা চেয়ারে বসে পড়ল। সাদাফ পূনরায় জিজ্ঞেস করল,
‘ আর্জেন্ট কিছু?’
সেহরিশ আনমনে হয়ে বলল,
‘ না।’
সাদাফ তখন হুট করেই বলে ফেলল,
‘ আবার সেই স্বপ্ন?’

সেহরিশ উঠে দাঁড়াল। ছাঁদ থেকে চলে যেতে বলল,
‘ গ্রামে যেতে হবে।’
‘ কেনো?’
‘ আরুকে দেখতে আসবে। বাবা কল দিয়েছেন, বললেন আমাকে যাওয়ার জন্য।’
‘ তুই যাবি?’
‘ বাবা চান৷ আমি যেন যাই।’
‘ তোর যাওয়া উচিৎ। প্রয়োজন হলে আমরাও যাব।’

সেহরিশ সঙ্গে সঙ্গে সাদাফের মুখপানে তাকাল। নিরর্থক প্রশ্ন করল,
‘ তোরা যাবি?’
সাদাফ হালকা হাসলো। বলল,
‘ হ্যাঁ। তোর বোন আমাদেরও বোন। প্রয়োজন হলে অবশ্যই যাব। ছেলে কে দেখেছিস? খোঁজ খবর নিয়েছিস?’
‘ শুনেছি। বাবার বন্ধুর ছেলে। তেমন কিছু জানি না।’
‘ তোর খোঁজ খবর নেওয়া উচিৎ। তুই বড় ভাই৷ কর্তব্য পালনে একদম পিছিয়ে আছিস।’

সেহরিশ গম্ভীর মুখে সাদাফের দিকে তাকাল। সাদাফ মলিন হাসল। তারপর প্রসঙ্গে পালটে বলল,
‘ আমি একজনকে পছন্দ করি।’
‘ তার জন্যই ওই ফ্ল্যাট কিনেছিস?’
সাদাফ চমকিত কণ্ঠে বলল,
‘ তুই কিভাবে জানিস?’
‘ এত বছরের বন্ধুত্ব। তোকে বোঝার ক্ষমতা আমার রয়েছে।’

_____________

‘ রোদেলা কোথায়?’
উমাইয়ার প্রশ্নে চকিত তাকিয়ে জুবিয়া বলল,
‘ বাজার গিয়েছে।’
‘ একা?’
‘ হুম।’
‘ তোর মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই? রোদেলা এখানের কিছু চিনে? কিভাবে একা যেতে দিলি? যদি হারিয়ে যায়।’
জুবিয়া রুক্ষ গলায় বলল,
‘ হারাবে না। দুদিনে সবই চিনিয়ে দিছি।’

উমাইয়া ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়াল। আচমকা কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সাদাফ স্মিথ হেসে বলল,
‘ সময় হবে?’
উমাইয়া হঠাৎ পিছন দিকে তাকাল। জুবিয়া আসছে কি না দেখে নিয়ে সে বের হলো। দরজা বাহির থেকে হালকা চাপিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কিছু বলবেন?’

সাদাফ তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে হঠাৎ প্রশ্ন করল,
‘ কিছু ভেবেছেন?’
‘ কোন ব্যাপারে?’
‘ আমাকে কবে বিয়ে করবেন সেই ব্যাপারে?’
উমাইয়া চোখ বড়বড় করে তাকাল। অস্ফুটে বলল,
‘ একদিনে কেউ কিভাবে ভাবতে পারে?’
‘ আরও সময় প্রয়োজন? আচ্ছা ঠিক আছে। যতদিন ইচ্ছে সময় নিন কিন্তু এক ঘন্টার বেশি না।’

সাদাফ তার ফ্ল্যাটে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে একপলকে সেদিকে তাকিয়ে রইল উমাইয়া। সহসা জুবিয়া আওয়াজ দিল,
‘ উমাইয়া? আমার হলুদ টপস পাচ্ছি না।’

উমাইয়া সুপ্ত শ্বাস ফেলে রুমে এলো। আলমারির জামা কাপড়গুলোর ভেতর থেকে জুবিয়ার হলুদ রঙের টপসটা বের করে দিয়ে শুধাল,
‘ কোথাও যাচ্ছিস?’
‘ হুহ।’
‘ কোথায়?’
‘ তোর কথাশুনে আমারও টেনশন হচ্ছে। রোদেলা সে কখন জোজোর জন্য খাবার কিনতে গেছে। এখনও আসছে না। আমি একবার গিয়ে দেখে আসি।’

উমাইয়া বিছানায় বসে পড়ল। শুধাল,
‘ তোর কাছে টাকা আছে?’
‘ হ্যাঁ। মোটামুটি চলার মতো আছে।’

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক-দুই মিনিট অপেক্ষা করলেই রিকশা পাওয়া যায়। রিকশার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে জুবিয়া। সহসা আঁড় দৃষ্টিতে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের উপর দৃষ্টি গেল তার। কালো পোশাক, কালো জুতো, কালো চশমা, একই রকম পোশাক পরা পাঁচজন পুরুষ লোক গেইটের একপাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সকলকে দেখে কপাল কুঁচকে ফেলল জুবিয়া।

বিরবির করে বলল,
‘ এদের আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। এভাবে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কোনো মাফিয়া নয় তো? পোশাকে তো তেমনই লাগছে।’

জুবিয়া চিন্তা থামিয়ে আবারও আঁড়চোখে তাকাল। হঠাৎ পিছন থেকে পুরুষদ্বয়ের কণ্ঠ কানে আসামাত্র নিজেকে ধাতস্থ করল জুবিয়া।

তূর্ণ জুবিয়াকে আগাগোড়া নিরক্ষণ করে অনুচ্চ কণ্ঠে বলল,
‘ ওয়, চিড়িয়াখানা।’

জুবিয়া ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল। প্রতিবাদ করে বলল,
‘ কে চিড়িয়াখানা? কাকে ডাকছেন এভাবে?’

তূর্ণ সহজসরল কণ্ঠে বলল,
‘কে প্রত্যুত্তর করল তাকে।’

জুবিয়া তূর্ণর মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। গলা উঁচিয়ে বলল,
‘ আমাকে কোনদিক থেকে চিড়িয়াখানার প্রাণী মনে হচ্ছে?’

তূর্ণ চমৎকার ভাবে হেসে বলল,
‘ চিড়িয়াখানার প্রাণী বলিনি। চিড়িয়াখানা বলেছি। কারণ আপনি আস্ত এক চিড়িয়াখানা।’

জুবিয়া ঝাঁঝালো গলায় বলল,
‘ আমি কিভাবে চিড়িয়াখানা?’

তূর্ণ ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,
‘ আপনার নাম জুড়েই রয়েছে চিড়িয়াখানা। জুবিয়ার, জু। জু মানে চিড়িয়াখানা।’

জুবিয়া হতভম্ব হয়ে গেল। এমন বেহুদা মজা তার এরপূর্বে সঙ্গে কেউ করেনি। জুবিয়া কিছু বলার আগে তূর্ণ এক গাড়িতে উঠে গেল। রাগে ফুঁসে ওঠে এক রিক্সাওয়ালাকে ডাকল সে। ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,

‘ এই চাচা৷ যাবেন?’

‘ কোথায় যাইবেন আপা?’

‘ বাজারে যাবো।’

‘ হো যামু। ভাড়া কিন্তু বিশ টাকা।’

জুবিয়া প্রচণ্ড রাগী গলায় বলল,
‘ প্রতিদিন তো দশ টাকায় যাই। আজ বিশ টাকা কেন?’

‘ দশ টাকা বাড়ছে আপা।’

‘ দশ টাকায় যাইবেন?’

‘ না।’

উমাইয়া উচ্চকিত গলায় বলল,
‘ দশ টাকার জন্য রিক্সাওয়ালার সাথে ঝগড়া করছিস?’

বাড়িতে একা থাকবে ভাবতেই উমাইয়ার শরীর শিউরে উঠে। প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর সাদাফ এসে জিজ্ঞেস করছে, সে বিয়ে নিয়ে কি ভাবছে? সাদাফের মুখোমুখি হবে না বলে, উমাইয়া জুবিয়ার সঙ্গে যাবে বলে বেরিয়ে এলো। রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগল জুবিয়া। কিঞ্চিৎ কর্কশভাবে বলল,
‘ দশ টাকার ভাড়া বিশ টাকা চাচ্ছে। পাইছে কি তারা? আমরা কি এখানে নতুন নাকি?’

উমাইয়া বলল,
‘ হয়েছে এখন থাম।’

জুবিয়া, উমাইয়া ফুটপাতের একটা দোকানের সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। মেয়েদের হাতব্যাগ এর দোকান। বেশ উন্নত ও সুন্দর ডিজাইনের ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। জুবিয়া এগিয়ে এলো। একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল।

উমাইয়া দোকানীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এই ব্যাগটার দাম কত?’

দোকানী বলল,
‘ দুইশো টাকা আপা।’

জুবিয়া অবাক চোখে লোকটার দিকে তাকাল,
‘ কিহ? এই ব্যাগের দাম দুইশো টাকা মজা করছেন? একদাম বলুন।’

দোকানী বলল,
‘ আপা, এই ব্যাগ মার্কেটে নতুন আসছে। সব গুলাই বেঁচা শেষ। এই একটাই আছে, আপনার লাইগা দশ টাকা কম রাখতে পারমু।’

উমাইয়া বলল,
‘ এক দাম দেড়শো টাকা।’

দোকানী বলল,
‘ আপা, দেড়শো টাকা কম হইয়া যায়। একশো আঁশি টাকা দিয়েন।’

জুবিয়া শক্ত ও গম্ভীর গলায় বলল,
‘ দেড়শো টাকা দিলে দেন, না দিলে চলে যাই।’

দোকানী ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। ত্রস্তকণ্ঠে বলল,
‘ আচ্ছা নিয়া যান।’

গাড়ির ভেতর তূর্ণ অকস্মাৎ কাশতে লাগল। ড্রাইভার পানির বোতল তূর্ণর দিকে এগিয়ে দিয়ে বসে রইলেন। সাদাফ হতভম্ব চোখে উমাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রাস্তার পাশেই দোকান তেমন কোলাহল নেই। ওদের কথা স্পষ্ট গাড়িতে বসেই তূর্ণ, সাদাফ শুনতে পেয়েছে। নিজ শ্রবণ কেন্দ্রকে সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

তূর্ণর কাশি থেমে গেল। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ওখানে কি হচ্ছে? সত্যিই কী ওরা দেড়শো টাকার জন্য দোকানীর সাথে ঝগড়া করল?’

বলে খানিক থামল তূর্ণ। তারপর আবারও বলল,
‘ আমাকে বলুক, পুরো শপিংমল কিনে দিব। তা না সামান্য ব্যাগের জন্য কেমন করে, দেখো, কেমন করে ঝগড়াঝাটি করছে।’

সাদাফ স্মিথ হাসল। বলল,
‘ ওরা সাধারণ মানুষ তূর্ণ। ওদের কাছে দেড়শো টাকা অনেক টাকা হয়।’

তূর্ণ ফিসফিস করে বলল,
‘ যাবি?’

সাদাফ চমকালো। জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায়?’

তূর্ণ সাদাফের কানে ফিসফিস করে বলল,
‘ একটা প্ল্যান আছে শোন।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here