#আশিয়ানা
#পর্ব_১৭
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
আয়েশি ধাঁচের মৃদু রৌদ জানালা ভেদ করে রোদের আলোকরশ্মি ও তাপ রোদেলার মুখমণ্ডলের পৃষ্ঠে এসে পৌছায়। রোদেলা চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাল। বিছানার পাশে ছোটো টেবিলের ওপর রাখা অ্যালার্ম ঘড়িটা হঠাৎ শব্দ করে বাজতে লাগল। রোদেলা তার ডান হাতখানা মুখশ্রীর ওপর রেখে জুবিয়ার উদ্দেশ্য কোমল স্বরে বলল,
‘ জানালার পর্দা সরিয়েছিস কেন?’
জুবিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। অগোছালো চুলগুলোয় চিরুনি করছে। রোদেলার ঘুমকাতুরে কণ্ঠ শুনে আয়নাতে দৃষ্টি স্থির রেখে রোদেলাকে দেখল জুবিয়া। পলকহীন চোখে তাকিয়ে। নিরর্থক গলায় বলল,
‘ ভোর থেকে বলছিস শরীর খারাপ। এভাবে শুয়ে থাকলে কি শরীর ভাল হবে? একটু হাঁটাহাঁটি কর। তাছাড়া আমাদের রেস্ট্রন্টে যেতে হবে। তুই তো শরীর খারাপ বলে বেঁচে গেলি।’
মেঝেতে পা ফেলার আগে বিছানার কাছে রাখা পাপোশে পা ফেলুন। আগে থেকেই রেখে দিতে পারেন চপ্পল জোড়াও, তাহলে ঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটতে হবে না।
বিছানার কাছে রাখা পাপোষে পা রাখল। পাপোষ থেকে খানিক দূরে থালা চপ্পল পরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রোদেলা। জুবিয়া বিছানা গুছিয়ে নিল ঝটপট। গতরাতে হঠাৎ রোদেলার শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। এখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও জ্বরের রেশ রয়েই গেছে। রোদেলার শরীর প্রচণ্ড দূর্বল। সে তবুও শক্তি দেখিয়ে জানালার বাকি পর্দাগুলো সরিয়ে দিল।
শব্দ শুনে জুবিয়া হুট করে বলল,
‘ সম্ভব হলে ঘরের বাইরে যা। বারান্দায় গিয়ে সকালের মিষ্টি রোদের পরশ নিয়ে নে।’
বারান্দায় এসে দাঁড়ানোর পরপর প্রকৃতির হিমশীতল বাতাসে রোদেলার গা কাঁপতে লাগল। রোদেলা তার ওড়নাটা শরীরের সাথে পেঁচিয়ে নিল। এরপর রুমে এসে বাথরুমের দিকে গেল। সকাল সকাল ব্রাশ করা ছাড়া বেশিক্ষণ থাকা যায় না। পানি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠল রোদেলা।
‘ আহহ। এত ঠান্ডা কেন?
রোদেলার আওয়াজ শুনে পাশের রুম থেকে উমাইয়া ছুটে এলো। বাথরুমে উঁকি দিয়ে। শুধাল,
‘ কি হলো? চেঁচালি কেন?’
রোদেলা উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
‘ আরেহ! পানি অনেক ঠান্ডা। এই পানি স্পর্শ করলে আমি জমে বরফ হয়ে যাব।’
জুবিয়া পিছন থেকে বলল,
‘ গরম পানি আমি মাত্র গোসল করলাম। তুই ঠান্ডা কোথায় পেলি?’
উমাইয়া কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কেটে বলল,
‘ জুবিয়া, রোদের জ্বর আসছে। তাই ওর কাছে পানি ঠান্ডা লাগছে। তুই বুঝিস কম, কথা বলিস বেশি।’
উমাইয়া রোদেলার দিকে তাকাল। নির্মূল কণ্ঠে আবারও বলল,
‘ তোকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে নিতে হবে না। একটু অপেক্ষা কর তোর জন্য কুসুম গরম পানি নিয়ে আসছি।’
মিনিটখানেক পর এক পাতিল কুসুম গরম পানি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল উমাইয়া। পানি ভর্তি বালতিটায় অর্ধেক পানি ঢেলে দিল বাকি অর্ধেক পাতিলে রেখে বলল,
‘ যতটা প্রয়োজন ততটা দিয়ে হাত-মুখ দিয়ে ফেল।’
কুসুম গরম পানিতে গোসল শুরু করে শেষে খানিকটা ঠান্ডা পানি ঢেলে নিল রোদেলা। ভেজা চুলে রুমে এসে দাঁড়াল। টপটপ করে পানি পড়ছে। তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো পেঁচিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। জুবিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সহসা উমাইয়া শুধাল,
‘ এত তারা কিসের? আমার জন্য অপেক্ষা কর।’
জুবিয়া অস্ফুটে কেবল বলল,
‘ তারাতাড়ি যেতে হবে সময় নেই।’
উমাইয়া জিজ্ঞেস করল,
‘ এখনো এক ঘন্টা বাকি আছে। সময় নেই কিভাবে?’
জুবিয়া হেঁটে এসে উমাইয়ার সামনে দাঁড়াল। শ্লেষের সুরে বলল,
‘ ফোন কিনব।’
রোদেলা এসে উমাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে গেল। জানতে চেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ তোর তো মোবাইল আছে৷ তাহলে আবার কিনবি কেন? নাকি হারিয়ে ফেলছি?’
জুবিয়া দৃঢ় গলায় বলল,
‘ হারাইনি। আছে।’
উমাইয়া অবাক কণ্ঠে শুধাল,
‘ তাহলে আবার কিনবি কেন?’
জুবিয়া অকস্মাৎ কপোলদ্বয়ে খানিক ভাজ ফেলল। নির্বাক চেয়ে থেকে হঠাৎ রাশভারী গলায় বলল,
‘ স্মার্ট ফোন কিনব। এই এক স্মার্ট ফোন নেই বলে আমরা এখনো জাহিল যুগে বসবাস করছি। দেশ বিদেশের কোনো খবর জানি না। বড় বড় সিঙ্গার নাকের ডগায় এসে বসে থাকে তবুও চিনি না। যত টাকা লাগবে লাগুক তবুও স্মার্ট ফোন কিনেই ছাড়ব।’
উমাইয়া ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলল।
‘ আমার জন্য একটু দাঁড়া। আমিও যাও।’
উমাইয়া রোদেলার মুখোমুখি দাঁড়াল। তার হাতের উল্টোপিঠ রোদেলার কপালে ছুঁয়ে জ্বর মেপে নিল। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
‘ টেবিলের ওপর তোর জন্য খাবার ঢেকে রাখছি। খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবি। আর জোজোর খাবার বাটিতে ওর জন্য খাবার দিয়ে গেছি আমি। তুই সারাদিন রেস্ট নিবি। জ্বর যেন না বাড়ে। নিয়ম করে ঔষধ খাস কিন্তু। যদি রাতে এসে শুনি তুই একবেলা ঔষধ মিস করেছিস। খুব খারাপ হবে।’
_____________
জুবিয়া আর উমাইয়া মোবাইলের শো-রুমে এসে দাঁড়াল। এক ছেলে ওদের দেখামাত্র উঠে দাঁড়ায়। গ্লাসের ভেতর একেক মডেলের ছবি দেখিয়ে বলে,
‘ কোন মোবাইলটা দেখবেন ম্যাম?’
জুবিয়া উমাইয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বুদ্ধি পরামর্শ করল। তারপর একটা ফোন দেখিয়ে বলল,
‘ ওই ফোনটা দেখান।’
ছেলেটা ফোনটা নামিয়ে নিয়ে এলো। জুবিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ দাম কত?’
ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ পনেরো হাজার।’
বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকাল জুবিয়া। বার কয়েক চোখের পলক ফেলে ফোনটার দিকে তাকাল। শুঁকনো ঢোক গিলল সে। জিনিসপত্রের দামাদামি করার ক্ষেত্রে সে প্রচুর পটু। একসাথে এত দামি কোনো জিনিস সে আগে কিনেনি। দোকানদার কোনো জিনিসের দাম ছয়শো বললে সে তিনশো বলেছে। এভাবে দামাদামি করে জিনিসপত্র কিনেছে সে। এবার একটু ভিন্ন হলো। জুবিয়া হাত থেকে ফোনটা রেখে দিল। মলিন কণ্ঠে বলল,
‘ সব থেকে কম দামি ফোন দেখান।’
ছেলেটা বলল,
‘ দুঃখিত ম্যাম। স্মার্ট ফোন পনেরোর নিচে নেই। আপনার জন্য আমরা পাঁচশো কম রাখতে পারব। এর নিচে সম্ভব হবে না। আপনি এইদামে ফোন কোথাও পাবেন না।’
জুবিয়া উসখুস করে বলল,
‘ এত টাকা তো আমার তিন মাসের বেতন।’
ছেলেটা বলল,
‘ কমের মধ্যে বাটন ফোন নিতে পারবেন।’
উমাইয়া বলল, ‘ বাটন ফোন আছে। লাগবে না।’ বলে থামল সে। এরপর জুবিয়ার উদ্দেশ্য বলল, ‘ স্মার্ট ফোন কিনতে হবে না। চল কাজে যাই।’
জুবিয়া উমাইয়ার কথার ঘোর বিরোধিতা করে বলল,
‘ নাহ। আমি আজ স্মার্ট ফোন কিনেই যাব।’
তারপর কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে টাকাগুলো বের করল। এরপর গুনে দেখল আট হাজার টাকা আছে। জুবিয়া ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। ছেলেটার উদ্দেশ্য বলল,
‘ আমার ফোন কেনা হলো না ভাই। আপনি ফোনটা তুলে রাখেন।’
দোকানের মালিক নাস্তা খেতে শো-রুমের পাশের হোটেলে গিয়েছিল। ফিরে এসে দোকানের ছেলে ও জুবিয়ার কথোপকথন খানিক শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ তোমার কাছে কত টাকা আছে মা?’
জুবিয়া লোকটার মুখের দিকে তাকাল। মধ্যবয়স্ক লোক চুল ও দাঁড়িতে পাঁক ধরেছে। জুবিয়া বনিতা করে বলল,
‘ আট হাজার চাচা।’
লোকটা চেয়ারে বসলেন। এরপর বললেন,
‘ আট হাজারে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল পাইবা। নিবা? নিলে দেখতে পারো।’
জুবিয়া হাসি হাসি মুখে বলল,
‘ জি। দেখান চাচা।’
ফোন হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল জুবিয়া। কোনো দাগ নেই। একদম নতুনের মতো। ভদ্রলোক আবারও বলে উঠলেন, ‘ একটা ছেলে ইমার্জেন্সি টাকার জন্য ফোনটা বিক্রি করছিল। নতুন-ই আছে।’
নতুন ফোন কিনে।্ খুশিতে কিঞ্চিত লাফিয়ে হাঁটাচলা করছে জুবিয়া। মাঝেমধ্যে আমদ করে চর্কির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। উমাইয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে জুবিয়ার কাণ্ড কারখানা পর্যবেক্ষণ করে হঠাৎ শুধাল,
‘ তুই টাকা কোথায় পেলি?’
জুবিয়া হঠাৎ বলে উঠল,
‘ প্রতিমাসে একটু একটু করে জমিয়ে ছিলাম।’
উমাইয়া বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল,
‘ তোর কাছে টাকা ছিল। তবুও তুই রোজ আমার থেকে দশ টাকা বিশ টাকা গাড়ি ভাড়া নিতিস।’
জুবিয়া বিগলিত হাসি দিয়ে বলল,
‘ তোর টাকাগুলো ও সাথে জমিয়েছি।’
রেস্ট্রন্টে আজ ভিড় নেই। ফাঁকা টেবিলে বসে রয়েছে জুবিয়া ওর পাশের চেয়ারে বসে আছে উমাইয়া। দুজনের কারো জানা নেই স্মার্ট ফোন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। জুবিয়া হতাশায় নিমজ্জিত চোখে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ টেবিলের উপরে থাকা বাটন ফোনটি বেজে ওঠে। আয়ান কল দিয়েছে দেখে কল রিসিভ করল জুবিয়া। জুবিয়ার ভরাট কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে আয়ান হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চায়,
‘ কি হয়েছে তোর? কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?’
জুবিয়া হাঁসপাঁস করে বলল,
‘ আমি মোবাইল কিনছি। কিন্তু চালাতে পারছি না। এটা কিভাবে চালায়?’
আয়ান শুধাল,
‘ কি মোবাইল?’
‘ ওই যে তোর মতো মোবাইল। আঙুল দিয়ে চালাতে হয়।’ বলল জুবিয়া।
জুবিয়ার বিশ্লেষণ শুনে আকর্ণ হাসল আয়ান। পরোক্ষণে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি দমিয়ে নিল সে। সরু গলায় বলল,
‘ কোথায় তুই?’
‘ তোর রেস্ট্রন্টে।’
‘ আচ্ছা। আমি বাহিরেই আছি। দুই মিনিট অপেক্ষা কর আসতেছি। তোকে আমি সব বুঝিয়ে দেব।’
আয়ান কল কাটলো। দরজা ঠেলে ভেতরে এসে চারিদিকে নজর বুলালো। একদম কর্নারের টেবিলে জুবিয়াকে দেখে এগোল সে। চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
‘ এই ফোন আঙুল দিয়ে চালাতে হয়। তোর তর্জনী আঙুলটা এদিকে নিয়ে আয় তো দেখি।’
____________
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বিদ্যুৎ নেই। চারদিকে ঘন অন্ধকার। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় চমকে ওঠে রোদেলা। ফাঁকা বাড়ি কেউ নেই। সকাল সাতটা নাগাদ উমাইয়া আর জুবিয়া রেস্ট্রন্টে গিয়েছে। এখন রাত ন’টা বাজে। তারা এখনো ফিরে আসেনি। রোদেলার শরীর গতরাত থেকে খারাপ করছিল তাই সে আজ কাজে যায়নি। রোদেলা পা টিপেটিপে ড্রয়িংরুমে এলো। রোদেলা মোমবাতি জ্বালাল। এরপর ভেতর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল সে। বিছানার ওপর রাখা উপন্যাসের বই হাতে নিয়ে মোমবাতির আলোয় পড়তে লাগল৷ পড়ার ভেতর সে পুরো ডুবে ছিল। পুরো শেষ করতে পারল না। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেল। রোদেলা দ্রুত বই পড়া বন্ধ করে মোমবাতি হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে এলো। দরজা খুলে স্তব্ধ হয়ে যায় রোদেলা। মোমবাতির পিটপিট আলোয় এক পুরুষ লোকের অভয়ব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। রোদেলা চৌকাঠে দাঁড়িয়ে শুধাল,
‘ আপনি কে? কাকে চাই?’
সহসা মেয়েলি কণ্ঠস্বর কানে আসামাত্র পুরুষ লোক হিমশীতল অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
‘ সেহরিশ ফাতিন চৌধুরী। আ’ম স্যরি। আমি ভুলবশত অন্য ফ্ল্যাটের বেল বাজালাম। আপনি কি আমায় বলতে পারবেন সাদাফ কাসানোর ফ্ল্যাট কোনটি?’
এই নামটি রোদেলা রেস্ট্রন্টের টিভিতে শুনেছে। রোদেলা অন্ধকারে মোমবাতি খানিক এগিয়ে নিয়ে এলো। আবছা
আলোয় সাদাফের ফ্ল্যাটের দিকে ইশারা করে বলল,
‘ সামনের ফ্ল্যাটটি।’
সেহরিশ বলল,
‘ ভুলবশত বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।’
অন্ধকার চিঁড়ে হঠাৎ জোজো ঘেউঘেউ ডাক শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাল সেহরিশের। সেহরিশ মলিন কাতর কণ্ঠে বলল,
‘ থ্যাংক ইয়্যু।’
রোদেলা দরজা বন্ধ করে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে জোজোর কাছে এসে দাঁড়াল। জোজোর খাবার পাত্র শূন্য পড়ে আছে। রোদেলা কিঞ্চিৎ অবাক হলো ভরাট কণ্ঠে বলল,
‘ বই পড়তে পড়তে গিয়ে তোর খাবারের কথা বেমালুম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল। আমি এখুনি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।’
তূর্ণ তার অগোছালো চুলগুলো বাম হাতে নাড়াতে লাগল। এরপর লম্বা হাই তুলে দরজা খুলে দিল সে। অন্ধকার থেকে এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
‘ ফোন বন্ধ কেনো?’
তূর্ণ ঘাবড়ে গেল। জড়তা নিয়ে বলল,
‘ কারেন্ট নাই৷ ফোনের শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।’
সেহরিশ আগের চেয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
‘ ফোনের কি শেষ?’
তূর্ণ আমতাআমতা করে বলল,
‘ চার্জ। চার্জ শেষ।’
সেহরিশ নির্বিকার চূড়ান্তে বলল,
‘ সাদাফ কোথায়? আমার কল কেন তুলছে না?’
তূর্ণ নম্রকণ্ঠে বলল,
‘ বাহিরে গেছে।’
সেহরিশ অবাক কণ্ঠে বলল,
‘ এই বৃষ্টিতে?’
ল্যাম্পপোস্টের নিচে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে জুবিয়া। উমাইয়া রেস্ট্রন্ট থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে এসে জুবিয়ার ছাতার নিচে ঢুকে গেল। বৃষ্টির ছিটেফোঁটায় একটু ভিজে গেছে ওরা। কয়েক কদম এগোতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল।
জুবিয়া বলল,
‘ তোর আর কষ্ট করে আমার ছাতার নিচে যেতে হবে না।’
অন্ধকারেই জুবিয়ার মুখের দিকে তাকাল উমাইয়া। বলল, ‘ কেনো?’
রাস্তার পাশে দোকানপাটের ভেতর জ্বলা লাইটের আলো গিয়ে পরছে সাদাফের গাড়ির ওপর। গাড়ি থেকে বেরিয়ে ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ। ওদের থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়ানো সাদাফকে দেখিয়ে জুবিয়া বলল,
‘ কেউ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।’
চলবে….