আশিয়ানা #পর্ব_১৮ #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

0
64

#আশিয়ানা
#পর্ব_১৮
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
গাড়ির দরজার সামনে বছর ত্রিশের, সুঠামদেহি, ফর্সা গড়নের অতি সুদর্শন সুপুরুষ ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা রঙের শার্ট, ও কালো রঙের ফরমাল প্যান্ট। মুখটা মলিন। উমাইয়ার দেখা পেতে ঠোঁটে লেপ্টে নিল মৃদু হাসি। উমাইয়া মাথা নিচু করে সাদাফের সামনে এসে দাঁড়াল। গাড়ির কালো গ্লাস ভেদ করে ভেতরে এক পলক দৃষ্টি ফেলল। বিশ্বাসই হচ্ছে না সাদাফের, উমাইয়া তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গলা উঁচু করে বার কয়েক কেশে নিল সে। শুক্ল গলা পরিস্কার করে নিয়ে বলল,

‘ গাড়িতে উঠিন উমা।’

সাদাফের কণ্ঠস্বর জুবিয়ার শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতে চোখ বড়বড় করে ফেলল জুবিয়া। অস্ফুটে বলল, ‘ উমা?’

উমাইয়া অসহায় দৃষ্টিতে সাদাফের অভিমুখে তাকাল। জবাব দিল, ‘ গাড়িতে কেনো?’

সাদাফ মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘ জি। অনেকক্ষণ হয় অপেক্ষা করছি। আপনি গাড়িতে উঠুন।’

সাদাফের গাড়ির চারটা সিট। গাড়ির সামনে ড্রাইভিং সিট, ফ্রন্ট সিট এবং পিছনে দুটো সিট। উমাইয়া ও সাদাফ দুজন একসাথে পিছনে বসবে ভেবে জুবিয়া ফ্রন্ট সিটেই বসল। উমাইয়া স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।

সাদাফ উমাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আগামীকাল, শুক্রবার। কাল আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন? অল্প একটু সময় নেব বেশি না। এই ধরুন কোনো এক রেস্ট্রন্টে গিয়ে বসল। তারপর কয়েকটা কথা বলব।’

উমাইয়া ইতস্তত বোধ করছে। সাদাফ খেয়াল করে মৃদু কণ্ঠে বলল,

‘ সমস্যা নেই। আপনি যদি চান আপনার বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসবেন। আমার আপত্তি নেই।’

জুবিয়া সন্দেহী কণ্ঠে বলল,
‘ আপনাদের ফ্যানডম বিশাল বড়। দেশ-বিদেশে হাজারো মেয়ে আছে যারা আপনাদের পছন্দ করে ভালোবাসে। তাহলে আমার বান্ধবী-ই কেন?’

সাদাফ আকর্ণ হাসল। স্পষ্ট স্বরে বলল,

‘ তাদের সবাইকে আমার আমার লাগেনি। এটা ঠিক তাদের জন্য আমরা আজ আমরা হতে পারছি। আমাদের সাফল্যের পেছনে যেমন আমাদের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে তেমন তাদের ভালোবাসা ও আছে। তারাই টাকা খরচ করে আমাদের টিকেট কিনেছে কনসার্টে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের জন্য আমাদের মনে সব সময় ভালোবাসা রয়েছে। তারা আমাদের মনের এক অংশে সব সময় থাকবে। তাই বলে তাদের সবাইকে আমরা বিয়ে করতে পারব না। আমরা এমন একজন কেই বিয়ে করব যে আমাদের পুরো মন জুড়ে থাকবে। এবং আমার মন জুড়ে শুধুই উমা।’

বলে থামল সাদাফ। তারপর একটু ঘুরে উমাইয়ার দিকে তাকাল। মৃদুস্বরে বলল, ‘ উমা যদি আমাকে গ্রহণ না করে তবুও আমি তার পিছু ছাড়ব না। আমি তাকেই ভালোবাসব।’

জুবিয়া মাথা নিচু করে তৃপ্তিময় হাসি হাসল। এরপর গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাল। কালো রঙের গ্লাস তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। সাদাফ লক্ষ্য করল জুবিয়াকে। সে নরম গলায় বলল,

‘ দরজার সাথে দেখুন একটা বাটন আছে। ওখানে হালকা ভাবে চাপুন গ্লাস নিচে নেমে আসবে।’

সাদাফের কথা শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতে পিছু তাকাল জুবিয়া। নিরব ভঙ্গিমায় একপলক সাদাফকে দেখে তারপর দরজার বাটন খুঁজতে লাগল। এক দমকা শীতল বাতাস হঠাৎ এসে জুবিয়ার শরীর স্পর্শ করে গেল। সিটের সাথে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল সে। শরীর ক্লান্ত চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমে তলিয়ে গেল জুবিয়া।

সাদাফ মলিন কণ্ঠে বলল,

‘ উমা কাল আপনি আসবেন তো? আমরা পরশু সিরাজগঞ্জ যাব।’

উমাইয়া সন্দিহান কণ্ঠে বলল,

‘ সিরাজগঞ্জ কেন?’

উমাইয়া চমকেছে দেখে সাদাফ বলল,

‘ সেহরিশের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। বলেছিলাম গতকাল।’

উমাইয়া গোপনে ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। এরপর বলল,

‘ চেষ্টা করব।’

গাড়ির দরজা খুলে মিনিট দুয়েক ধরে দাঁড়িয়ে আছে উমাইয়া। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন জুবিয়া বার কয়েক ডাকার পরও তার ঘুম ভাঙছে না। হতাশাজনক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদাফের মুখের দিকে তাকাল উমা। সাদাফ ঠোঁট উল্টিয়ে উমাইয়ার দিকে তাকিয়ে।

হঠাৎ পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে চমকে ওঠল উমা।

‘ আমি কোনো সাহায্য করব?’

তূর্ণ এসে উমাইয়ার ঠিক সামনে দাঁড়াল। ঘুমন্ত জুবিয়ার ওপর একপলক দেখে ফের বলল,

‘ তোমরা ভেতরে যাও। আমি এই স্লিপিং বিউটিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেবো।’

ড্রাইভার গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। তূর্ণর আদেশে সে চলে যায়। জুবিয়ার থেকে কিছুটা দূরত্বে রয়েছে তূর্ণ। খানিক ঝুঁকে পড়ে জুবিয়ার কাছাকাছি। জুবিয়ার চোখেমুখে লেপ্টে থাকা চুলগুলো তর্জনী আঙুলে সরিয়ে দিল। কানের কাছে মুখ দিয়ে ফিসফিসিয়ে ডাকল। আচমকা চোখ খুললো জুবিয়া। সহসা তূর্ণকে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠল।

তূর্ণ শান্ত ভঙ্গিতে হুট করে বলে ওঠল,
‘ মানুষ ভূত দেখেও এভাবে চিৎকার করে না।’
জুবিয়া নড়েচড়ে বসে। গাড়ির ভেতর সে ছাড়া কেউ নেই। ভাবতে অগ্নীহায়ক দৃষ্টিতে তূর্ণর দিকে তাকাল। রাগে ফুঁসে ওঠে বলল, ‘ মরার শখ হয়েছে?’
তূর্ণ হেয়ালি করে বলল,
‘ সুন্দরী মেয়েদের হাতে মরার খুব শখ।’
জুবিয়া ওঠে দাঁড়াল। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। টলমল করে হাঁটতে লাগল। তূর্ণ হঠাৎ বলল, ‘ সামলে। পরে যাবে।’
তূর্ণর কথার পিঠে জবাব দিল না জুবিয়া।
তূর্ণ পূণরায় বলল, ‘ ধরব নাকি?’
জুবিয়া অবাক হয়ে শুধাল, ‘কি?’
‘ আপনাকে।’

____________

ঝকঝকে নীলাকাশে শুভ্র মেঘের ছুটাছুটি, বাগানের প্রতিটি গাছে ফুলের সমারোহ। নিশ্চল বাতাসে খোলা চুলে মৃদু ঢেউ খেলে। ক্লান্তি ভরা দৃষ্টিতে গাছের মগডালে বসা জোড়া শালিকের দিকে তাকিয়ে রোদেলা। সহসা কয়েকটা মর্মরে পাতা ডাল থেকে খসে পড়ে। রোদের তীব্র আলোয় ধু-ধু করছে চারিপাশ। ধুপধাপ পা ফেলে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে গেল জুবিয়া। তাগিদে দিয়ে বলল,

‘ তোর হলো? রেডি কখন হবি তুই? এখনি এত দেরি করলে সময় মতো বের হতে পারব?’
রোদেলা বিস্মিত কণ্ঠে বলল, ‘ আমি না যাই?’

রোদেলার পাশে বসলো জুবিয়া। তারপর ওঁর একহাত রোদেলার কাঁধে রেখে নির্মূল কণ্ঠে শুধাল,
‘ কি হয়েছে? শরীর তো একদম ঠিক আছে। জ্বরও নাই।’
‘ আমার কিছু হয়নি। জোজোর জন্য মন খারাপ। ওঁ এইখানে আসার পর শুধু একবারই বাহিরে গেছে। আমরা সবাই চলে যাওয়ার পর জোজো বাড়িতে একা হয়ে পড়বে।’
জুবিয়া রোদেলাকপ আস্থা দিয়ে বলল,
‘ জোজোকে সাথে নিয়ে চল। ওঁ সেখানে খালি জায়গা পাবে৷ দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে ওরই সুবিধা হবে।’
রোদেলা জুবিয়ার অভিমুখে তাকাল। বলল,
‘ তাদের সমস্যা হবে না?’

জুবিয়া হঠাৎই রোদেলার মাথায় হাত বুলাতে লাগল। তারপর বলল, ‘ এই পৃথিবীর মানুষ গুলো খুবই বিচিত্র। তারা শুধু নিজেদের ভালমন্দ টাই বুঝে। এজন্য অন্যের কথা চিন্তা না করে নিজের কথা ভাব। নিজেকে নিয়ে ভাব। তুই অন্যদের জন্য যতটা করবি ততটা মূল্যায়ন তাদের থেকে পাবি না। তারা তোর প্রাপ্ত মূল্যটুকু দিবে না উল্টো তাচ্ছিল্য করবে। তাই এখন শুধু জোজোর কথা ভাব। আমরা যাচ্ছি উমাইয়ার জন্য, সেখানে যদি কারো জোজোর জন্য সমস্যা হয়। তখন আমরা বাহিরে হাঁটাহাঁটি করব।’

সাদাফ এবং তূর্ণ গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে। উমাইয়া কে দেখামাত্র এগিয়ে এলো সাদাফ। তূর্ণ তার ওষ্ঠাধরে অট্টহাসি ফুটিয়ে জুবিয়ার উদ্দেশ্য বলল,
‘ মিস চিড়িয়াখানা, আপনাদের আমার গাড়ি দিয়ে যেতে হবে৷’
জুবিয়া শুধাল,
‘কেন? এই গাড়িতে কি সমস্যা?’
তূর্ণ বলল,
‘ সাদাফের গাড়িতে ওদের দুজনকে যেতে দিন। আপনারা আমার গাড়িতে আসুন।’
‘ পিছনে আমরা বসবো। আপনি সামনে বসবেন।’ বলল জুবিয়া। তারপর হঠাৎ এদিকওদিক তাকাল। সম্ভবত কাউকে খুঁজছে।

তূর্ণ জানতে চায়।
‘ কাউকে খুঁজছেন মিস?’

জুবিয়া বলল,
‘ আজ আপনাদের বডিগার্ডদের কোথাও দেখছি না।’
তূর্ণ মলিন হাসল।
‘ রাস্তা ছোটো। একসাথে অতোগুলো গাড়ি পার্ক করে রাখা হলে লোকজন হাঁটাচলা করবে কিভাবে? আমাদের অপেক্ষায় মেইন রোডে গার্ড এবং গাড়িগুলো রয়েছে।’

চারপাশে বিল ভর্তি পানি তার মাঝখানে একটা দ্বীপ। কয়েক মাস পূর্বে নির্মাণ হয়েছে। লোকজনের প্রচুর ভীড়৷ মানুষ বলতে শৌখিন। শখের টানে দ্বীপ ঘুরতে আসে বহুজন। প্রকৃতির বুক চিঁড়ে বয়ে গেছে মসৃণ রাস্তা। এখান থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। গাড়ি একপাশে সাইড করে রাস্তা ধরে হেঁটে গেল। সাদাফ এবং তূর্ণকে দেখে লোকজন ঠেলাঠেলি করে এগিয়ে এলো। ছবি তোলার জন্য উতলা হয়ে গেছে তারা। কয়েকজনের সঙ্গে ছবি তুলে এগিয়ে গেল তারা। দ্বীপের পূর্ব দিকটা পুরো দিনের জন্য বুকিং করেছে সাদাফ। তারা যতক্ষণ এখানে রবে ততক্ষণ লোকজন এদিকটায় আসতে পারবে না। বডিগার্ডরা কড়া পাহারায় দাঁড়িয়ে গেল।

সাদাফ এবং উমাইয়াকে একা কথা বলার জন্য স্পেস দিয়ে ওঠে অন্য দিকে হাঁটতে লাগল তূর্ণ। জুবিয়া ঠিক তার পাশেই হাঁটছে। জুবিয়া হঠাৎ রেগে গেল। রাগান্বিত হয়ে বলল,

‘ আমার পাশাপাশি হাঁটছেন কেনো? চার ফুট দূরত্ব রেখে হাঁটুন।’

তূর্ণ কাচুমাচু করে বলল,
‘ চলো কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করে ফেলি।’

জুবিয়া আপাদমস্তকে তূর্ণকে পরক্ষ করে নিল। হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে। হঠাৎ বলল,
‘ বিয়ে কেন?’

তূর্ণ দু-পা এগিয়ে এলো। জুবিয়ার থেকে এক ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ এত দূরত্ব আমার সহ্য হবে না। আমি কাছাকাছি থাকতে চাই।’
জুবিয়া শীর্ণ গলায় বলল,
‘ কাছাকাছি থাকার জন্য বিয়ে করতে হবে?’
‘ অবশ্যই। বিয়ে না করে, হাত ধরব দিবে?’
‘ কখনোই না।’ বলে হাঁটতে লাগল জুবিয়া। তূর্ণ তার পিছু পিছু ছুটে গেল। মৃদু আওয়াজে বলল,
‘ এজন্যই তো বিয়ে করা প্রয়োজন।’

মিনিট দশেক পরপর সেহরিশের গাড়ি অপরিচিত জায়গায় এসে থামল। সেহরিশ গাড়ি থেকে নেমেই চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে পরিবেশ দেখে নিল। তার ম্যানেজার বাসাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ ঠিক মতো চেক করেছ? সাদাফ এই এড্রেস টাই সেন্ট করেছিল?’
বাসাদ বলল,
‘ জি স্যার। ভেতরে চলুন। তারা ভেতরেই বসে আছে।’

সেহরিশের প্রবেশে চারিদিক হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেল। লোকজনদের আঁটকে রাখা দুষ্কর হয়ে গেছে। কোনো রকম সেহরিশ দ্বীপের উত্তর দিকে এসে থামল। সেহরিশকে দেখতে পেয়ে ওঠে দাঁড়াল সাদাফ। এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,

‘ তোর আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?’

সেহরিশ চেয়ার টেনে বসল। একপলক দু’পলকে সাদাফ আর উমাইয়া কে পাশাপাশি দেখল। সেহরিশ উমাইয়াকে জিজ্ঞেস করে সে কেমন আছে। এরইমাঝে উমাইয়াকে চেয়ারে বসতে বলে সাদাফ। উমাইয়া প্রথমে চেয়ার টেনে বসল এরপর সেহরিশের প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগল। আচমকা জোজো ছুটে এলো। সেহরিশের পায়ের সঙ্গে তার শরীর ঘেঁষতে লাগল। সেহরিশ আঁতকে ওঠে চেঁচিয়ে ওঠে। দু’জন বডিগার্ড দ্রুত এগিয়ে আসে।

জোজোর জন্য বিস্কুট এবং রুটি নিচ্ছিল রোদেলা। তারপর ঘুরে দেখল জোজো তার পাশে নেই। হঠাৎ চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে এদিকটায় দৌঁড়ে আসলো সে। রোদেলা জোজোর গলার ফিতাটা ধরে টেনে এক প্রকার সেহরিশের থেকে দূরে নিয়ে গেল। সেহরিশ হাঁপাতে হাঁপাতে সাদাফের জন্য বলল,
‘ এখানে কুকুর কি করছে? এই কুকুরগুলো আমার মাঝে কি পাইছে? সব জায়গায় চলে আসছে।’

সাদাফ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রোদেলা বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল। তারপর সেহরিশের দিকে তাকিয়ে অপরাধীর মতো বলল,
‘ আমাকে ক্ষমা করবেন। ওঁ কখনোই এমন করে না। সব সময় লক্ষী হয়ে থাকে। হঠাৎ এমন কেন করল? বুঝতে পারছি না।’

জুবিয়া এগিয়ে এলো। ঘটনা বুঝার চেষ্টা করে একজন গার্ডকে জিজ্ঞেস করে। তূর্ণ সাদাফের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সেহরিশের রেগে লাল হওয়া মুখশ্রী দেখে ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলল তূর্ণ। সেহরিশ আচমকা তার চোখজোড়া ছোটো-ছোটো করে ফেলল। ভ্রুযুগল দ্বিগুণ কুঁচকে গেল তার। রোদেলার মুখপানে একবার তাকাল আরেকবার তাকাল জোজোর মুখের দিকে। তারপর ভারী নিঃশ্বাস ফেলল সে। ডান হাতের তর্জনী আঙুল কুকুরটার দিকে তাক করে গর্জে ওঠা কণ্ঠে বলল,

‘ এই সেই কুকুরটা। যেটা সিরাজগঞ্জে আমার ওপর হামলা করেছিল। দিন দুপুরে আমার ব্রেড ছিনতাই করে।’ বলে থামল সেহরিশ। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল রোদেলার ওপর। শুধাল, ‘ এই কুকুর তোমার?’

সেদিন কয়েক পলকের জন্য সেহরিশের মুখ দেখেছিল রোদেলা। এজন্য সেদিন রেস্ট্রন্টের টিভিতে সেহরিশ কে দেখে তার চেনা মনে হয়েছিল। রোদেলা ভয়কাতুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেহরিশের দিকে। লোকটার সাথে এমন পরিস্থিতিতে দেখা হবে সে কল্পনা করেনি। ভেবে ছিল আবার দেখা হলে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু আজ পরিস্থিতি আরও বিগড়ে গিয়েছে। রোদেলার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো।

জুবিয়া রোদেলার হাত ধরে বলে উঠল,
‘ আপনি ভুল করছেন। জোজো এমন কিছু করতেই পারে না।’

জুবিয়া তাকাল উমাইয়ার দিকে। চোখ দিয়ে ইশারা করে এখুনি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাবে সে। রোদেলার হাত ধরে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। সাদাফ ভারী নিঃশ্বাস ফেলল।

সেহরিশের উদ্দেশ্য বলল,
‘ তোর হয়তো ভুল হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ থেকে একটা কুকুর গাজীপুর কিভাবে আসবে?’

সেহরিশ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ শুধু কুকুর আসেনি সঙ্গে মালিক নিজেও আসছে।’

কথাটি বলে সেহরিশ তার ম্যানেজার বাসাদের দিকে তাকাল। রুদ্ধ গলায় বলল,

‘ দুই ঘন্টার ভেতর এই মেয়েটির সমস্ত ডিটেইলস আমার চাই।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here