#তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন
পর্ব ১৯
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা
(সম্পুর্ন উন্মুক্ত ও প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)
” একটা পরিবার কতোটা স্বার্থান্বেষী হলে গোটা পরিবার মিলে একটা মেয়েকে, শুধু একটা মেয়েকে ধ্বং’স করার জন্য উঠে পড়ে লাগে? আপনাদের মোটিভ টা কি বলুন তো? শুধুই অর্থলোভ? শেইম অন ইউ!”
পাভেল আর নয়নের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে চেয়ে এসব বাক্য ছুঁড়ে দিয়ে যেনো জ্বলে উঠলো কলেজের সবচেয়ে জুনিয়র শিক্ষক আহনাফ সিদ্দিক।
” আপনারা দুজনই দু’ মাস আগেও মেয়েটার গার্ডিয়ান হয়ে এই কলেজের গার্ডিয়ান মিটিং এ আসতেন, তা আমার এখনো মনে আছে। আপনারা দুজনেই মেয়েটার পিতৃসম আর আপনারাই ওকে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন? ছি:! আর গত একটা মাস যাবত তো মেয়েটা হোস্টেলেই উঠেছে, আপনাদের সাথে না আছে কোনো সম্পর্ক আর না আছে কোনো যোগাযোগ! আপনারা আগে কোথায় ছিলেন? আর এখন মেয়েটার ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র তিন মাস বাকি, তখন এসেছেন আমাদের কাছে মেয়েটার বিরুদ্ধে ক্যারেক্টার কমপ্লেইন করতে? আপনাদের কে ও কত শ্রদ্ধা করতো? আর আপনারা লেগেছেন যেনো মেয়েটার চরিত্রে একটা “খারাপ মেয়ে’ সিলমোহর লাগাতে পারেন সেজন্য? মেয়েটা যেনো সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হয়, তার পড়াশোনা যেনো বরবাদ হয়ে যায়? কেনো, কেনো? একটা সহজ, সরল, এতিম মেয়ের প্রতিই আপনাদের এতো আক্রোশ কেনো? কেনো?আপনাদের দেখে আমার ঘৃণায় থুথু মা’রতে ইচ্ছে হচ্ছে! ”
পাভেল আর নয়ন মাথা নত করে চুপ করে রইলো, আহনাফের এহেন মন্তব্যে।
জহির রা’গে দাঁত কটমট করতে করতে গর্জে আ’ক্রমনাত্মক ভাবে আহনাফকে বলা শুরু করলো,
“এই, এই! অংক টিচার, আপনার অনেক মায়া দেখছি, মাইয়ার প্রতি? পিরীত দেখি উগরাইয়া পড়ে ওর উপর! আমি টাকা খরচ করে বড় করছি, খাওয়াইছি, পড়াইছি, আর এই মাইয়ার প্রতি দেখি আপনার দরদ উপচাইয়া পড়ে! নাকি আপনারেও বিনা টাকায় ওরে ভো’ গ করার দিছিলো নাকি? ”
এই কথায় আহনাফের মাথায় যেনো র’ক্ত চড়ে গেলো। সে এক ঝটকায় জহিরের শার্টের কলার টেনে ধরে তাকে ফ্লোরে শুইয়ে মা’রতে উদ্যত হলো, দ্বীগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে আহনাফ বজ্রকন্ঠে গর্জে উঠলো,
” এই হা*রামজাদা! তোর নিজের ক্যারেক্টারেরি ঠিক নাই, লু’চ্চা একটা, একশটা দে’হরক্ষী তোর, টু’নটুনি জহির নাম কামাইছিস আর তুই ক্যারেক্টারলেস আবার আমার দিকে আঙ্গুল তুলিস? ”
আহনাফ জহিরের কলার টেনে ধরে এসব বলে চিৎকার করে উঠলো।
উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকেরা তাকে জোর করে থামালো।
” প্লিজ, আহনাফ স্যার, গায়ে হাত তুলে নিজের স্ক্যান্ডাল করবেন না, আমরা জানি এই জহির শেখ কোন ধরনের লোক, আপনি প্লিজ মেজাজ হারাবেন নাহ!”
এসব বলে সমস্ত কলিগরা আহনাফকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামালো।
কলেজের মধ্যে ঘটনাটা ঘটছে বলে আহনাফ নিজেকে সামলে নিলো, নয়তো তার মাথায় খু’ন চেপে গিয়েছিলো জহিরের এ ধরনের কথাবার্তায়।
গোটা ঘটনা কনকচাপা দেখছিলো মুখে কুলুপ এঁটে, চোখের পানি ফেলে।
আহনাফ কনকচাপার দিকে তাকিয়ে বি’ষবাক্য ছুঁড়ে মা’রলো,
” কুম্ভিরাশ্রু ফেলবেন না, মিসেস জহির! আপনার মতো মা, মা জাতীর ক’লংক! ”
কনকচাপা চুপ থাকলেও ববিতা ও জহির দাঁত কটমট করতে লাগলো ক্রোধে।
ববিতা জহিরকে চোখ উলটে বললো,
” এই জহির, এই মাস্টারকে দেখে নিবি, কইলাম, বড্ড সাহস এর!”
জহিরও তাকে মাকে অভয় দিলো, ” তুমি ভাইবো না, এই মাস্টারের খবর আছে মা, সত্যিই খবর আছে”
এবার প্রিন্সিপাল বলে উঠলো,
” মিস্টার জহির! আপনি ও আপনার পরিবার অপ্রাসঙ্গিক ও উন্মাদের ন্যয় কথাবার্তা বলে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন, আপনি যা যা প্রমাণ এই মেয়ের বিরুদ্ধে দেখিয়েছেন, সবই মিথ্যা বলেই বোধ হচ্ছে। আমরা ত্রিশাকে এসবের জন্য কোনো শাস্তি দেবো না। এবং ওকে পরীক্ষা দেওয়া থেকেও বিরতও করবো না। ”
এতক্ষণ চুপ করে থাকার পর ববিতা এবার কথা বলে উঠলো।
” প্রিন্সিপাল সাহেব, আপনি তো জানেনই আমি আর আমার ছেলে দুজনেই এই কলেজের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, আপনার মতো করে এর আগে কেউ আমাদের অসম্মান করতে পারেন নাই। তবে এই মেয়ের এই সব ছবি ও ভিডিও এখন এই শহরে ছড়ায়ে গেছে। দেখেন আপনে এরে এইখানে রাখতে চাইলেও রাখতে পারবেন না।
আহনাফ এবার গর্জে উঠলো, ববিতার উপর তার পুরোনো ক্ষোভ টা যেনো সে এবার উগরে দেবে।
” এই মহিলা, আপনি হলেন রিয়েল কালপ্রিট, আপনাকে যদি আগেই পুলিশে দেওয়া যেতো, তাহলে ভালো হতো”
এতক্ষণে ত্রিশাকে ডাকিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে আনা হয়েছে। কাঁন্নারত অবস্থায় ত্রিশা রুমে প্রবেশ করলো, কাঁদতে কাঁদতে যেনো মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম সে।
প্রিন্সিপাল ত্রিশার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
ত্রিশা, তোমার পরিবারই তোমার নামে স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে। যারা অসত্য ও ভুঁয়া বিভিন্ন প্রমাণও দাঁড় করিয়েছে। যদিও আমরা ওগুলো বিশ্বাস করিনি। এমতাবস্থায় আমরা তোমাকে যতটা সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব দিয়েছি, আর বাকিটা আমাদের হাতে নেই। তুমি প্লিজ তাদের সাথে এটা ডিল করো যে, তারা কি চায়?
ইতিমধ্যে কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী টুং টাং ঘন্টা বাজালো। সবার ক্লাশের সময় হয়ে গিয়েছে।
তারপর জহির ও ববিতার দিকে মোড়ে প্রিন্সিপাল বললেন,
” প্লিজ মিসেস ববিতা শেখ, নাউ লিভ আস, দয়া করে এই মুহূর্তে এই জায়গা হতে চলে যান, টিচাররা যে যার ক্লাশে ঢুকে যাবে। ”
ববিতা রাগে গরগর করতে করতে জহির, তাদের দলবল ও কনকচাপা সহ সেই স্থান ত্যাগ করলো।
সাথে বের হয়ে এলো ত্রিশাও।
আহনাফ যেহেতু কলেজে এসেছে তাকেও ক্লাশে চলে যেতে হবে। আহনাফ তবুও অন্য এক ম্যাথ টিচারকে তার ক্লাশটা নিতে বললো, কিন্তু সে ও নিজের ক্লাশ বাদ দিয়ে অন্যের ক্লাশ নিতে রাজী হলো না। আহনাফ শুধু ত্রিশাকে একবার আহনাফ বলে উঠলো,
” ত্রিশা, শোনো প্লিজ কেঁদো না, শক্ত হও, তোমার বিরুদ্ধে যেসকল কমপ্লেইন করা হয়েছে, তা কেউ বিশ্বাস করেনি, ওসব বিশ্বাস অযোগ্য, আমার একটা ক্লাশ আছে যাস্ট পঁয়তাল্লিশ মিনিট, আমি এসে তোমার সাথে কথা বলছি, প্লিজ.. তুমি চাইলে আমি ওদের নামে আইসিটি সহ মানহানী মা’মলা করবো আর তুমি যা চাইবে ওদের সেই শাস্তিই দেবো আমি, তুমি প্লিজ মাথা ঠান্ডা রেখো, কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিও না! আমি যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার সাথে আছি! কথা দিলাম। দুনিয়ার একটা মানুষও যদি তোমার পক্ষে না থাকে আমি আছি৷ থাকবো..”
আহনাফ ত্রিশার কাছে করজোড়ে অনুনয় করলো।
কিন্তু ত্রিশার গোটা দুনিয়াটাই অসহ্য মনে হচ্ছিলো।
ত্রিশা অফিস কক্ষ থেকে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
এসিকে গোটা কলেজের সব ছাত্র ছাত্রীদের নজর যেনো এবার ত্রিশাকে গি’লে খাচ্ছিলো।
একদল ছাত্র আরেকদল কে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ” ঐ মামা, লিংক দে, লিংক, ঐ মাইয়ার লিংক নাকি ছাড়ছে?”
ত্রিশা হাত হতভম্ভ!
সবাইকে বড় একটা মাইক্রোবাসে করে পাঠিয়ে দিলেও জহির সেখানেই রয়েছে। ত্রিশার কাছে এসে ই’বলিশ শয়তানের মতো একটা হাসি হেসে বললো,
” চইলা গেছিলি না আমার বাড়ি থেকে? কিরকম খ্যাল দেখাইলাম? দেখলি? এরকম খেল শুধু তোরই না, তোর পিও মায়েরও দেখাইতে পারি, তোর পিও নয়ন আর পাভেল আংকেলেরো দেখাইতে পারি আমি! তোর মায়ের ভিডিও ছাড়লে এহন সব মানুষই কইবো তিন বাচ্চার মায়ের এত চুলকানি, হা! হা! হা! এখনো ভালো ভালো আছে, সব বন্ধ কইরা দিমু আমি, ঐ পোলা আর তার পরিবার দেশে আইছে, ওরে বিয়া কইরা নে, সব ঠিক কইরা দিমু আমি, সব ছবি, ভিডিও, লিংক এক মুহূর্তের মধ্যেই ডিলিট মাইরা দিমু আমি”
ত্রিশা দরদর করে ঘামছে। দুনিয়াটা ওর কাছে ঘোর অপবিত্র আর কলুষিত লাগছে। এই দুনিয়ার বুকে ওর আর থাকতে মন চাইছে না। শুধু ঐ জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্যই সারা দুনিয়ার কাছে ক’লুষিত করে দিচ্ছে তাকে এই জহির শেখ?
জহির শেখ আবার বলতে লাগলো,
” এই শোন মেয়ে, আজ যা দেখাইলাম, তা যাস্ট একটা ডেমো। এর পর যা দেখামু তা হইলো আসল। এরপর তোর মায়ের লিংক ভাইরাল হইবো, এখন তুই ক, তুই যাবি নাকি যাবি না, ঐখানে গিয়া তুই হাসিমুখে ঐ প্রতিবন্ধি পোলারেই বিয়া করবি, করবি করবি, বল, নইলে আমি সবাইরে মা’ইরা ফালাইমু, তোরে, তোর মায়েরে আর তোর নয়ন, পাভেল আংকেলরে, হা হা হা!”
ত্রিশা নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালো। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ওর দুর্বল শরীর। জহির ওকে আড়কোলা করে টেনে টেনে প্রাইভেট কারে ঢুকিয়ে নিলো।
গাড়ি ছুটে চললো রেইনবো টাওয়ারে।
(চলবে)
(পাঠকদের কাছে আমার অনুরোধ, দয়া করে গল্পকে গল্পের মতোই নেবেন, এত রিয়েলিটির সাথে মেলাতে যাবেন না, তাহলে শুধুশুধু দ্বন্দই বাড়বে, ওভার অল হ্যাপি রিডিং)