আশিয়ানা #পর্ব_২০ #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

0
213

#আশিয়ানা
#পর্ব_২০
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
কোনমতে গাড়িতে উঠে ফ্রন্টসিটে বসল সাদাফ। উমাইয়ার সাহায্যে গাড়িতে উঠলো রোদেলা। জুবিয়া অস্থির হয়ে বলল,
‘ গাড়ি কে চালাবে?’

সাদাফ ওকে শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ড্রাইভার আছে। উনিই চালাবেন।’

জোজোর জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে রোদেলা। সিটে বসে হাসফাস করছে। রোদেলা হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রইল।

উমাইয়া চাপা স্বরে শুধাল,
‘ এটা আগের সে গাড়িটা নয়।’

সাদাফ শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
‘ ওই গাড়িতে তিনটের বেশি সিট নেই। এজন্য ড্রাইভারকে বলেছিলাম এই গাড়ি নিয়ে আসার জন্য।’

জুবিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ এই পথঘাট পেরুতে কতক্ষণ লাগবে?

‘ এই তো অল্প কিছুক্ষণ।’

রাত তখন এগারোটা বাজে। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে শোয়ারঘর থেকে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেল সেহরিশ। আকাশী রঙোর ঢোলা শার্ট গায়ে জড়ানো। দরজার ফোকায় একপলক দেখে নিল। সাদাফ দাঁড়িয়ে রয়েছে। দরজা খুললো সেহরিশ।
জুবিয়া হঠাৎ রোদেলার হাত ধরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। সেহরিশ চোখ বড়বড় করে সাদাফের দিকে তাকাল। সাদাফ এগোল। সেহরিশের একহাত ধরে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যেতে বলল,

‘ একটা বিষয় ক্লিয়ার কর ভাই। তুই কুকুর পছন্দ করিস না। তবুও রোদেলার কুকুরকে নিয়ে আসছিস কেন?’

সেহরিশ গম্ভীর গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

‘ এতরাতে তিনজন মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসার সাহস কিভাবে হলো তোর?’

‘ রোদেলা চিৎকার করে কান্না করছিল আর তুই জানিস আমি কারো কান্না সহ্য করতে পারি না।’

নিচ তলার সবকটা রুম খুঁজে জোজোকে পেল না৷ রোদেলা দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। জুবিয়া তেড়েফুঁড়ে এলো সেহরিশের দিকে। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে ওঠল,

‘ জোজো কোথায়?’

সেহরিশ ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল,

‘ আমার সাথে উচ্চকণ্ঠে কথা বলার সাহস কোথায় পেয়েছ?’

সাদাফ হঠাৎই সেহরিশের হাত ধরে ফেলল। বলল,

‘ মেয়ে মানুষ। ওদের সাথে এমন চেচামেচি করিস না।’

জুবিয়ার সঙ্গে তর্ক বির্তকের এক পর্যায়ে সেহরিশ তার ফোন হাতে তুলে নিল। অকপটে বলল,

‘ এখুনি পুলিশকে কল দিচ্ছি।’

রোদেলা হাঁটুতে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠে। সেহরিশ ফোন হাতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হঠাৎ ফোন প্যান্টের পকেটে রাখে। রোদেলার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ আমার সঙ্গে চলুন।’

রোদেলা মাথা তুলে তাকাল। চোখদুটো লাল হয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। সেহরিশ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে উদ্যত হলো।

দ্বিতীয় তলার একটি ঘরের কোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে জোজো। ঘরের ভেতর আলোয় চারিদিক স্পষ্ট হলো।

পশ্চিম দিকে এক মিনিট এগিয়ে যেতে এক বিশাল রুম। রুমের ভেতর লাইট জ্বলছে। দরজা হালকা ভাবে ফাঁক করে ভেতরে প্রবেশ করে সেহরিশ। তার ঠিক পিছু পিছু ঢোকলো রোদেলা। রুমের এককোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে জোজো। তার সামনে খাবারের ভাণ্ড রাখা রয়েছে। জোজোর নাম ধরে ডেকে উঠলো রোদেলা। এগিয়ে গেল সে। জোজো কান খাঁড়া করে ওঠে ছুটে এলো রোদেলার কাছে। জোজোর চোখ ভেজা। রোদেলার বিরহে সে কান্না করেছে। সাদাফ এসে সেহরিশের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ কি দেখছিস?’

সেহরিশ অবাক কণ্ঠে বলল,

‘ এক কুকুরের মানুষের প্রতি ভালবাসা।’

সাদাফ মলিন হেসে বলল,

‘ জোজো রোদেলার বন্ধুর মতো। এমন বিচ্ছেদ ওদের জন্য কষ্ট দায়ক৷ তুই বরং জোজোকে যেতে দে। তোকে নতুন স্যুট আমি নিয়ে দেবো।’

সেহরিশ সন্দেহী চোখে তাকাল। তারপর বলল,

‘ বাহ। গার্লফ্রেন্ড পাওয়ার পর খুব বদলে গেছিস দেখছি।’

সাদাফ শ্লেষের স্বরে বলল,
‘ রোদেলা, আপনি জোজোকে সাথে নিয়ে যান। উমা এবং জুবিয়া ড্রয়িংরুমে বসে আছে।’

রোদেলা কিছু বলল না। জোজোর সঙ্গে এক পা দু পা হেঁটে সেহরিশকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিল। হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে সেহরিশ বলল,

‘ আপনি কি ভাবছিলেন? আপনার জোজোকে আমি অত্যাচার করছি?’

রোদেলা একপলক তাকালো সেহরিশের মুখপানে তারপর আবার তাকাল রুমের ভেতর। জোজোর প্রয়োজনীয় সব জিনিস, খাবার সব কিছুই রাখা হয়েছে। রোদেলা এতটুকু বলতে পারে জোজোর এখানে কোনো কষ্ট হয়নি। রোদেলা নিশ্চুপে সেহরিশকে এড়িয়ে গেল।

সেহরিশ ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। খানিক পর বলে ওঠল, ‘ আগামীকাল সকালে গ্রামে যাব। তুই বরং এখানে থাক। তূর্ণ যখন ওর বাসা থেকে আসবে৷ তখন ওর সঙ্গে তুই চলে যাবি।’

সাদাফ মাথা নেড়ে বলল, ‘ ওকে। সাবধানে যাস। পৌঁছে কল করিস।’

সেহরিশ ছোট্ট করে বলল,
‘ আচ্ছা।’

__________

শহর থেকে ত্রিশ মিনিট দূর কয়েকটি অঞ্চল মিলে এক গ্রাম। আকর্ষণীয় এবং সবচেয়ে বড় দালান জহির আহমেদ এর। গ্রামের ভেতর এমন দালান দু’টো নেই। শহরেরও খুঁজে হাতে গোনা কয়েকটা পাওয়া যাবে। কারেন্ট গিয়েছে ঘন্টা দুয়েক। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন জহির আহমেদ। স্ত্রী সায়েদাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ আমি দিঘির পাড় যাইতাছি। বাড়ির দরজা আটকাইয়া দাও।’

আইপিএস নষ্ট। হুট করে নষ্ট হওয়ায় ঠিক করার সময় টুকুও পাননি। সহসা ভেতর রুম থেকে হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠল তূর্ণ,

‘ আম্মা এইখানে এত কারেন্ট যায় কেন?’

সায়েদা মোমবাতি হাতে নিয়ে এগিয়ে এলেন। তূর্ণর উদ্দেশ্য বললেন,

‘ গ্রাম এলাকা বাবা। কারেন্ট যাইবো আবার আইবো। তোমার কি বেশি গরম লাগতাছে?’

তূর্ণ টিস্যু দিয়ে কপাল আর গলার ঘাম মুছে ফেলতে ফেলতে বলল,

‘ মনে হচ্ছে পানি শরীর থেকে কেচে ফেলছি।’

সায়েদা বললেন,

‘ তোমার আব্বা, দিঘিরপাড় গেছে। ওইখানে একটা বটগাছ। গাছের নিচে সুন্দর কইরা মাচা বানানো আছে। তুমিও যাও। ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর ঠাণ্ডা হইয়া যাইব।’

তূর্ণ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,

‘ আমি কাল সকালেই শহরে ফিরে যাব। আমি এই গরম সহ্য করে এখানে থাকতে পারব না।’

সায়েদা ক্ষীণ গলায় বললেন,
‘ মাত্রই তো বিকালে আসছল এরমাঝেই চলে যেতে চাও। তোমাকে ঠিক মতো কিছু খাওয়াই তেও পারি নাই।’

তূর্ণ একহাতে লুঙ্গি সামলে ধরলো এরপর সায়েদার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আম্মা, যাবো একা। দুজন ফিরে আসার ব্যবস্থা করেই তোমাদের নিতে আসবো।’

সায়েদা ছেলের কথার অর্থ বুঝলেন। কথা বাড়ালেন না। তিনি মুচকি হেসে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হলেন।

তূর্ণ সিঁড়ি ভেঙে গেইটের সামনে এসে দাঁড়াল। দারওয়ান, তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। সালাম দিয়ে বললেন,

‘ আসসালামু আলাইকুম বাবা। কোই যাইতাছ বাবা?’

তূর্ণ বলল,

‘ ওয়া-আলাইকুমুস সালাম চাচা। আমি বাবার কাছে যাচ্ছিলাম। আম্মার শুনেছি বাবা দিঘিরপাড়ে মাচাই গিয়ে বসেছেন।’

দারওয়ান আন্তরিকতা দেখিয়ে বললেন,
‘ তুমি একলা চিন্তে পারবা বাবা? আমি আসমু তোমার সাথে?’

তূর্ণ বাঁধা দিল। বলল, ‘ না না। তার দরকার নেই চাচা। আমি যেতে পারব।’

একটু সময় নিয়ে স্নান করে বাথরুম থেকে বের হলো জুবিয়া। তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল গুলো পেঁচিয়ে সোজা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সেহরিশের বাড়ি থেকে আসার পর শরীরটা অবশ লাগছে। খেতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। এভাবেই ঘুমানোর জন্য চোখ বুজল সে। হঠাৎ ওর ফোনটি বেজে উঠল। ভাগ্যক্রমে ফোনটা বিছানার ওপর হাতের নাগালেই ছিল। হাত বাড়িয়ে ফোনটা তুললো জুবিয়া। আননোন নাম্বার। রাত বারোটা বাজে। এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে দেখে জুবিয়ার ভ্রু কুঁচকে গেল। কল রিসিভ করে ফোনটা কানে লাগাল জিবিয়া।

খাটের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে তূর্ণ। ফোন রিসিভ করেছে দেখামাত্র সে সটানভাবে বিছানার ওপর শুয়ে পড়ল।

জুবিয়া বার কয়েক ‘ হ্যালো হ্যালো!’ করল। এরপর জিজ্ঞেস করল, ‘ কে আপনি? কথা বলছেন না কেন?’

তূর্ণ কুটিল হেসে বলল,

‘ মিস চিড়িয়াখানা…’

সহসা শোয়া থেকে ওঠে বসল জুবিয়া। মাত্রই আকাশ থেকে পরেছে এমন ভাব করে শুধাল,

‘ আপনি? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?’

তূর্ণ অট্টহাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

‘ ২০১৭ সাল। এই সময় কারো নাম্বার বের করা কঠিন ব্যাপার নাকি?’

জুবিয়া কিঞ্চিৎ রাগী গলায় বলল,

‘ হেয়ালি করবেন না। সোজাসাপ্টা উত্তর দিন। নাম্বার কোথায় পেলেন?’

তূর্ণ ওঠে বসল। বিছানার ওপর রাখা একটা বালিশ টেনে নিল কাছে। দুইহাতে বাহুর সাথে চেপে ধরে মোহিত কণ্ঠে বলল,

‘ আমার অটোগ্রাফের বিনিময়ে সে আপনার নাম্বার ঘুষ দিয়েছে।’

জুবিয়া কপোলদ্বয়ের চামড়া ভাজ ফেলে। চিন্তান্বিত স্বরে শুধাল, ‘ কে সে? নাম কী?’

তূর্ণ হুট করে বলে ওঠল,
‘ উঁহু, নাম বলা বারণ।’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here