আশিয়ানা #পর্ব_১৯ #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

0
61

#আশিয়ানা
#পর্ব_১৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
গতিশীল বাসে জানালার ফাঁক গলে সাত সকালে তেরছাভাবে আসছে রোদ। সূর্যের কাঠখোট্টা ভাব দূর করতে চারপাশের বড়বড় দালানের জুড়ি নেই। বাসের হেলপার ছেলেটা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল। বাস থামার দুই মিনিট আগেই গলা তুলে সকলকে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে। বাস ভাওয়াল কলেজের সামনে থামল। চটজলদি গাড়ি থেকে নামতে নিল জুবিয়া। সহসা পা হুঁচট খেয়ে সবার সামনে পরে যায়। রোদেলা দ্রুত তার হাত ধরে টেনে তুলল। উমাইয়া কিঞ্চিৎ রোমন্থন করে বলল,

‘ আজকের দিনে তোর উঁচু জুতো পরার কি দরকার ছিল?’

রোদেলা ক্ষীণ গলায় বলল,
‘ বেশি ব্যথা লাগল কি? হাঁটতে পারবি?’

জুবিয়া বার কয়েক চোখের পলক ফেলে। গাড়ি থেকে নামতে কিঞ্চিৎ অসুবিধে হয় তার। শান-বাঁধানো ফুটপাতে পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করল সে। কড়ুই গাছের নিচে বসে হাঁসপাঁস করতে লাগল। রোদের আলো জুবিয়ার গায়ে পরে শরীর অঙ্কার করে ফেলছে। ভীষণ বিরক্তিকর কণ্ঠে জুবিয়া বলল,

‘ আমি ক্যাম্পাসে যাব। নিয়ে চল।’

উমাইয়া বলল,
‘ রোদু, তুই ক্লাসে যা। ব্যাগগুলো রেখে আয়।’

রোদেলা দ্রুত পায়ে ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে গেল। একটু পরই ফিরে এলো সে। হঠাৎই দেখতে পেল চারজন সুঠামদেহি পুরুষ লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে। রোদেলা চোখ তুললো, তাদের পোশাক আশাক দেখে ভয়ে কুঁচকে গেল সে। চারজন ব্যক্তির মধ্য হতে এসপি মাহির তার আইডি কার্ডটা রোদেলার অভিমুখে ধরে। দৃঢ় গলায় বললেন,

‘ আমি গাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত এসপি মাহির তালুকদার। আপনাকে এখুনি আমাদের সঙ্গে গাজীপুর থানায় যেতে হবে।’

রোদেলা অবাক চোখে তাকাল। আঁতকে ওঠা কণ্ঠে বলল,
‘ আমি আপনাদের সঙ্গে কেনো যাব? আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমি এখানের তেমন কিছু চিনিও না। আপনারা ভুল করছেন।’

এসপি মাহির তীক্ষ্ণ কণ্ঠে রোদেলার পরিচয় গরগর করে বলে গেলেন। রোদেলা হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মাহির একজন মহিলা পুলিশকে বললেন,

‘ ওনাকে গাড়িতে তুলুন।’

রোদেলা বুঝে উঠতে পারছে না। আজ তার সঙ্গে এমন অদ্ভুত কাণ্ড কেন হলো? গাড়িতে ওঠে বসার পর মহিলা পুলিশ রোদেলাকে জানালো,

‘ থানায় আপনার নামে এফআইআর করা হয়েছে। আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতেই হবে।”

শীর্ণ বাতাসে থরথর করে কেঁপে ওঠে রোদেলা। ভয়ে চোখের কার্নিশ ভিজে এলো। কি করবে? বোধগম্য হচ্ছে না তার। উমাইয়া কিংবা জুবিয়াকে কল দিবে সেটাও সম্ভব নয়। ফোন সাথে নেই। মাথা নিচু করে বসে ফুঁপে কেঁদে উঠল।

থানার সামনে গাড়ি থামল। মহিলা পুলিশ গাড়ি থেকে নামার পর রোদেলাকে নামতে বলে। গাড়ি থেকে নামার পরপর বিস্মিত চোখে চারদিকে দেখল রোদেলা। থানার সামনে লোকজনের বিশাল ভীড়। পা রাখার জায়গা হচ্ছে না। লোকজন থানার ভেতর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে। মাহির তালুকদার রোদেলার সঙ্গে থানার ভেতর প্রবেশ করেন। কালো পোশাক পরা পাঁচজন পুরুষ লোক সটানভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের মাঝখানে একজন পুরুষ পায়ের ওপর পা তুলে চেয়ারে বসে আছেন। মহিলা পুলিশ খানিক এগিয়ে এলেন। রোদেলার কানে ফিসফিস করে বললেন,

‘ উনিই আপনার নামে এফআইআর করেছেন।’

রোদেলা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সেহরিশের মুখশ্রী নজরে আসতেই জড়সড়ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। এসপি মাহির তালুকদার ওনার চেয়ারে বসলেন। সেহরিশের মুখের দিকে একপলক দেখে তিনি রোদেলার উদ্দেশ্য বললেন,

‘ সেহরিশ ফাতিন চৌধুরী একজন স্টার। তিনি আপনার নামে এফআইআর দারিজ করেছেন। আপনার কুকুর ওনার ওপর দুবার অ্যাটাক করেছে।’

রোদেলা হকচকিয়ে গেল। অস্ফুটে বলল,

‘ সামান্য রুটির জন্য মামলা কে করে?’

সেহরিশ ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টি ফেলল রোদেলার ওপর। ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,
‘ আপনার কুকুর সামান্য রুটি ছিনতাই করেনি। বরং আমার প্যান্ট নষ্ট করেছে। আমি তার ক্ষতিপূরণ চাই।’

রোদেলা বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
‘ কি ক্ষতিপূরণ চান? আমি দিতে প্রস্তুত।’

মাহির বললেন,
‘ সেহরিশ ফাতিন চৌধুরীর পোশাক এর দাম প্রায় ১,৬৪০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকার প্রায় ২লাখ টাকা। আপনার কুকুর ওনার প্যান্ট কামড়ে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলছে। আপনার ওনাকে ১লাখ টাকা দিতে হবে প্যান্টের ক্ষতিপূরণ হিসেবে।’

রোদেলা অবাক চোখে তাকাল।

‘ ১লাখ টাকা? আমি কোথায় পাব?’

মাহির বললেন,
‘ আপনাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। না হলে উনি আপনার বিপক্ষে লিগাল অ্যাকশন নিবেন।’

সেহরিশ ওষ্ঠাধর বাঁকা করে মলিন হাসল। এরপর হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল সে। রোদেলার উদ্দেশ্য বলল,

‘ টাকা ছাড়াও একটা অপশন রয়েছে। আপনি চাইলে আমি শোনাতে পারি।’

রোদেলা আসক্তিহীন দৃষ্টিতে তাকাল সেহরিশের দিকে। শুধাল,

‘ কি অপশন?’

সেহরিশ সোজা হয়ে মেরুদণ্ড টানটান করে দাঁড়াল। প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে বিরসমুখে বলল,

‘ আপনার কুকুর টিকে দুই দিনের জন্য আমাকে সঁপে দিবেন। দুদিন পর কুকুর আপনার কাছে পৌঁছে যাবে।’

সেহরিশের অধরবাঁকা হাসি দেখে রোদেলার বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে উঠল। রোদেলা নিস্তব্ধ। এক ফোঁটা অশ্রুজল তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল। অসহায় দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকাল সে।

মাহির বললেন,
‘ দুদিনের ব্যাপার উনি যা বলছেন মেনে নিন। আর না হয় ১লাখ টাকা নিয়ে আসুন।’

ভার্সিটির ভেতরে একজন মেয়েকে পুলিশ তাদের সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে পরে আয়ান। রোদেলার মুখ স্পষ্ট হতে সে উমাইয়া আর জুবিয়ার কাছে ছুটে যায়। জুবিয়ার পায়ের মোচ একটু কমেছে। ঠিকঠাক মতো হাঁটতে পারছে সে। আয়ান ছুটে এলো। রোদেলার কথা তাদের জানানোর পরপর দুজন ওঠে দাঁড়াল। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেল তারা। থানার সামনে আসতেই দেখতে পেল রোদেলা ভেতর থেকে বের হচ্ছে। উমা ত্বরিতগতিতে গিয়ে রোদেলার হাত ধরে শুধাল,

‘ কি হয়েছিল? পুলিশ তোকে নিয়ে আসছে কেন?’

রোদেলা বলল,

‘ বাড়ি চল। জোজোকে দুজন লোক নিতে আসবেন।’

জুবিয়া সন্দেহী কণ্ঠে শুধাল,
‘ জোজোকে নিতে কে আসবে?’

এই প্রশ্নের জবাবে রোদেলা কিছু বলল না। হেঁটে কিছুটা এগিয়ে গেল। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। সেসময় আয়ান বলে উঠল,

‘ আমার গাড়িতে উঠ। তোদের বাসায় নামিয়ে দেবো।’

জুবিয়া বা উমাইয়া আপত্তি করল না। গাড়ির ভেতর বসে হাজারও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো রোদেলাকে। সে সব উপেক্ষা করে যায়, কারো প্রশ্নের উত্তর দিল না। উমাইয়া সাদাফকে পছন্দ করে এটা উমাইয়া নিজ মুখেই স্বীকার করেছে। এবং তূর্ণ জুবিয়াকে ভালোবাসে। সবই রোদেলার জানা। সেখানে সেহরিশের এমন আচরণ তার বন্ধুদের মন বিষিয়ে দিতে পারে। সেহরিশের আচরণের জন্য তার বন্ধুদের ভালোবাসা নষ্ট হোক সে চায় না। বাড়িতে ঢোকামাত্র রুমে চলে গেল রোদেলা। দরজা বন্ধ করে বসে রইল। একটু পরই কলিংবেল বেজে ওঠে। রোদেলার হৃৎস্পন্দন তীব্র ভাবে বাড়তে থাকল। বালিশে মুখ চাপা দিয়ে হাহাকার জুড়ে কান্না শুরু করে।

দুজন পুরুষ লোক ড্রয়িংরুমের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আছেন। জুবিয়ার থেকে জোজোর থাকার জায়গা জানতে চাইল। একজন সেদিকে এগিয়ে গেলেন। জোজোকে ধরে নিয়ে যেতে লাগল। জোজো উচ্চ স্বরে ভো ভো করে উঠল। জোজোর ডাক কান পর্যন্ত আসায় রোদেলার কান্না আরও বাড়লো।

____________

রাত ১০:২০ মিনিট। দিন গড়িয়ে রাত হলো। আকাশে কালো করে মেঘ জমেছে। স্বচ্ছ মিষ্টি চাঁদটা কালো মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছে। রোদেলা এখনো দরজা খুলে বাহিরে বের হয়নি। উমাইয়া অনেক ডাকাডাকি করে ক্লান্ত হয়ে ছাঁদে এসে দাঁড়াল। হিমশীতল বাতাস আচ্ছা করে শরীর ঠান্ডা করে দিচ্ছে তার। কারো পায়ের ধ্বনি শুনে পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল উমাইয়া। অন্ধকার চিঁড়ে একটি আওয়াজ উমাইয়ার শ্রবণাঙ্গে প্রবেশ করল। সহসা স্তব্ধ হয়ে গেল সে।

‘ উমা?’

আওয়াজটা যেন উমাইয়ার বুকে গিয়ে আঘাত করল। উমাইয়া জবাব নিল বেশ কিছুক্ষণ পর,

‘ আপনি যান নি? সেদিন বলেছিলেন, আজ সকালে সিরাজগঞ্জ যাবেন।’

সাদাফ উমাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে। নির্মূল কণ্ঠে বলল,

‘ যাওয়ার কথা ছিল। সেহরিশ বলল সে দুদিন পর যাবে। এখানে তার কি একটা কাজ রয়েছে। আর তূর্ণ সেও নেই।’

অন্ধকারের জন্য উমাইয়ার ঠোঁটের ঝলকানি দেখতে পেল না সাদাফ। সাদাফ সিরাজগঞ্জে তার সাথে উমাইয়ার বহুদিন সাক্ষাৎ হবে না। ভেবে মন খারাপ নিয়ে ছাঁদে এসেছিল উমাইয়া। হঠাৎ সাদাফের কণ্ঠস্বর শুনে সে ঠোঁট টিপে হাসল। সাদাফ রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল। বেশ কিছুক্ষণ পর উমাইয়ার উদ্দেশ্য উদাসীন কণ্ঠে বলল,

‘ একা প্রশ্ন করি?’

‘ জি।’

‘ উমা, বর হিসেবে আপনি কেমন ছেলে চান?’

উমাইয়া রেলিং থেকে একটু দূরে সরে গেল। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল,

‘ আমি যেমনই চাই না কেন, যার বাম পাঁজরের হাড় দিয়ে আমাকে বানানো হয়েছে। আমার কপালে সেই আসবে।’

সাদাফ ধাতস্থ হয়ে বলল,

‘ পৃথিবীর সব নারীকে তার স্বামীর বা-পাঁজরের হাড় দিয়ে বানানো হয়নি উমা।’

কথাটি বলে থামল সাদাফ। অন্ধকারেই সাদাফের মুখপানে তাকাল উমাইয়া। সাদাফ কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে বলল,

‘ আল্লাহ তায়া’লা মাটি থেকে প্রথম সৃষ্টি করে ছিলেন হযরত আদম (আঃ) কে, আদম (আঃ) যখন একাকীত্ব অনুভব করলেন এবং আল্লাহর কাছে একজন সঙ্গী চাইলেন, তখন ওনার বাম পাঁজরের হাড় দিয়ে হযরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়। পৃথিবীর সকল নারীদের কে যদি তাদের স্বামীর হাড় দিয়ে বানানো হয় তাহলে তাদের ডিভোর্স কেন হয়? এবং সে সব নারী যাদের একবারের বেশি, দুবার কিংবা তিনবার বিয়ে হয়৷ তাদের জন্য কি বলবেন উমা? নারীদের কি তাদের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্বামীর হাড়ের সংমিশ্রণে বানানো হয়েছে?’

উমাইয়া চুপ হয়ে গেল। সাদাফের কথার পরিপাকে কথা খুঁজে পেল না সে। সাদাফের কথার যথার্থ যুক্তি রয়েছে। আসলেই সে এভাবে কোনোদিন ভেবে দেখেনি। উমাইয়া চুপ হয়ে গেছে, সাদাফ গলা খাঁকারি দিয়ে উঠল। শুধাল,

‘ উত্তর দিলে না উমা।’

উমাইয়া জিজ্ঞেস করল,

‘ কিসের উত্তর?’

‘ বর হিসেবে কেমন ছেলে চান?’

উমাইয়া মলিন হাসল। বলল,

‘ এমন একজন যে আমার ছোট্ট ছোট্ট খুশি গুলোকে সে গুরুত্ব দিবে। আমাকে বুঝবে, আমার খেয়াল রাখবে। আমার সঙ্গে দুনিয়া ঘুরবে। একসাথে বাহিরে খেতে যাবে। সব চেয়ে ইমপোর্টেন্ট যে আমাকে ভালোবাসবে।’

সাদাফ খানিকক্ষণ নিশ্চুপ রইল। হুট করে বলে ওঠল,
‘ ভালো তো আমিও আপনাকে বাসি উমা।’

উমাইয়া ইতস্তত বোধ করল। সাদাফ নিরর্থক প্রশ্ন করল,

‘ আপনার বয়স কত উমা?’

উমাইয়া মলিন কণ্ঠে বলল,
‘ কেনো?’

‘ আগে বলুন, কত?’

‘ বিশ চলছে।’

সাদাফ নড়েচড়ে দাঁড়াল। তারপর বা-হাতে শার্টের কলারের দুটো বোতাল খুলে ফেলল। কিঞ্চিৎ রোমন্থন গলায় বলল,

‘ বিশ বছর হয়েছে, এখনো কোথাও ঘুরতে যান নি? মজা করছেন?’

উমাইয়া চুপ হয়ে গেল। হঠাৎ বলল,

‘ না। আম্মা কখনো ঘুরতে যেতে দেননি।’

‘কেন দেয়নি?’

উমাইয়া কাচুমাচু করে বলল,

‘ কখনো ঘুরতে যেতে চাইলে আম্মা বলতেন, বিয়ের পর বরের সাথে যেও।’ বলে খানিক থামল উমাইয়া। তারপর আবারও বলল, ‘ আমার সব ইচ্ছা গুলো ডায়েরিতে লিখে রাখছি। কোনো একদিন বর পূরণ করবে।’

সাদাফ গম্ভীরচিত্তে তার বা’হাতের উল্টোপিঠে থুতনি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো তার। ঘাড় ফিরিয়ে একবার উমাইয়াকে দেখে নিল সে। তারপর বলল,

‘ ডায়েরিটা আমি পেতে পারি?’

রোদেলা হিচকি তুলে কান্না করছে। জুবিয়া হতবাক দৃষ্টিতে রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কিয়ৎক্ষণ চেঁচামেচি করে বলল,

‘ এই কথা তুই আমাদের সকালে বলতে পারলি না?’

রোদেলা ভারী নিঃশ্বাস ফেলল।

‘ আমি চাইনি জোজোর জন্য সাদাফ ভাইয়ার সঙ্গে উমার সম্পর্ক ভেঙে যাক।’

জুবিয়া ভারী গলায় বলল,

‘ সেহরিশ চৌধুরী যখন গাজীপুরে আছেন। তাহলে সাদাফ ভাইয়া ও এখানেই আছেন। ভাইয়ার ফ্ল্যাটে চল।’

বার কয়েক কলিং বেল বাজানোর পরও কেউ দরজা খুললো না। ত্যক্ত এবং বিরক্ত হয়ে জুবিয়া রোদেলাকে নিয়ে ছাঁদে এলো উমাইয়ার কাছে। রোদেলার কান্নার আওয়াজ শুনে সাদাফ জিজ্ঞেস করল,

‘ কি হয়েছে? ওনি কান্না করছেন কেন?’

জুবিয়া আস্তেধীরে সাদাফকে সবটা জানালো। সব শুনে সাদাফ ঠোঁট উল্টিয়ে নির্বাক চেয়ে থাকল। রোদেলার বারবার মনে হচ্ছে, সেহরিশ তার জোজোকে কষ্ট দিচ্ছে। খেতে দিচ্ছে না, চাবুক দিয়ে মারধর করছে। ভাবনায় রোদেলা জোরে জোরে কান্না শুরু করে।

রোদেলার কান্না থামানোর জন্য সাদাফ চাপা স্বরে বলল,

‘ আপনারা আমার সঙ্গে সেহরিশের বাড়িতে চলুন। সেহরিশ এমন কেন করল সেটা জানা প্রয়োজন।’

অল্প বয়সী রোদেলা চিন্তা এবং কান্নায় ধীরে ধীরে ব্যথায় কাতর হয়ে উঠল। উমাইয়া সাদাফের দিকে এগিয়ে গেল বলল,

‘ জোজোকে নিয়ে আসার ব্যাপারে আপনি কিছু করতে পারবেন না?’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here