বর্ষণমুখর মেঘের বিচরণ সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে, চতুর্দিক ঘন অন্ধকার, তীব্র বাতাস, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎচমক। মুহূর্তের মধ্যে কালো মেঘে ঢেকে গেল সারা আকাশ। আলোর ঝিকিমিকি দিয়ে অন্ধকারে বিদ্যুৎ চমকালো, তার পরে বিকট শব্দে বজ্রপাত হলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই নাবালক হঠাৎ বজ্রের গর্জনে কানে আঙুল ঢুকিয়ে চোখ বন্ধ করে। ব্যস্ত রাস্তায় বিভিন্ন গাড়ি ছুটছিল এমন সময় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামল ছেলে দুটি থেকে একটু দূরে। সেহরিশ ফাতিন চৌধুরী থাকেন ইতালির একটি বিখ্যাত শহরে। সে বাঙালি।
শৈশব থেকেই সেহরিশ পড়াশোনায় খুব বুদ্ধিমান। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে সেহরিশের চাচা সেহরিশকে সঙ্গে করে ইতালি নিয়ে আসেন। সময়ের বদলে তিনি হয়ে গেলেন এ দেশের একজন বিখ্যাত গায়ক। সেহরিশ, ইতালীয় সঙ্গীতশিল্পী, বর্তমানে BM ব্যান্ডের লিডার। তার খ্যাতি ও গানের মুগ্ধতা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ, সবার পছন্দের তালিকায় তার নাম রয়েছে। BM গ্রুপ তাদের গান এবং নাচের জন্য দ্রুত খ্যাতি অর্জন করে।
সেহরিশ সবেমাত্র কনসার্ট শেষ করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে। আকাশের করুণ অবস্থা দেখে গাড়ি ব্রেক করে সে। কয়েক সেকেন্ড থেমে মেঘলা আকাশ দেখার পর সেহরিশ গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করল। তখন সে দেখল দুই ছেলে হিমশীতল বাতাসে কাঁপছে। সেহরিশ এক পলক, দুই পলক দেখে ওদের দিকে গাড়িটা একটু এগিয়ে গেল। দুই ছেলে ইতালীর স্থানীয়। ফুটপাতে একা দাঁড়িয়ে, রাস্তার আশেপাশে অভিভাবক না দেখে সেহরিশ তাদের উদ্দেশ্য ইতালির ভাষায় জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা দুজন কে? এত খারাপ আবহাওয়ায় একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
দুজনার কেউ সেহরিশের প্রশ্নের উত্তর দিল না। সেহরিশ গাড়ির ভেতরে বসে দরজার দিকে একটু এগিয়ে গেল। তার বাম চোখের ভ্রু তুলে, তারপর তাদের দিকে তীব্র, অকল্পনীয় দৃষ্টি স্থির করে, সেহরিশ একই প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করল। দুই যমজ ভাই, দুই ছেলের চেহারায় একটু মিল পেয়েছে সেহরিশ। দুজনে একসাথে সেহরিশের দিকে তাকাল, অপরিচিত ব্যক্তির পরনে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা এবং একটি বড় টুপি। ক্যাপ ও মাস্কে পুরো মুখ ঢাকা সেহরিশকে তারা চিনতে পারেনি। প্রথমজন নির্বিকার কন্ঠে বলল, ‘আমি ইভান!’ বলে থেমে গেল। তারপর পাশে দাঁড়ানো দ্বিতীয় ছেলেটিকে ইশারা করে বলল, ‘এটা আমার ভাই ইফান। আমরা এখানে দাদির জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি এসে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন।’
সেহরিশ তার ঘড়ির দিকে তাকাল। 9:15 p.m. এই ঝড়ো আবহাওয়া উপেক্ষা করে মিনিটে মিনিটে দ্রুত গতিতে চলছে গাড়ি। সেহরিশ দুই ছেলেকে বিপদে ফেলে যেতে চাচ্ছে না। সে সাবধানে রাস্তার চারপাশে তাকাল এবং তারপর মৃদু স্বরে বলল, ‘আমি তোমার দাদীকে আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি না। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তিনি সম্ভবত কোথাও আটকে আছেন। তোমার বাড়ির ঠিকানা বলো আমি তোমাদের পৌঁছে দেব।’
ইভানের মনে পড়ে যে তার মা তাদের, অপরিচিতদের কাছ থেকে খাবার এবং ওদের সাথে একা যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন। ইভান ইফানের হাত শক্ত করে ধরে দু পা পিছিয়ে গেল। এরপর ডানে-বামে মাথা নেড়ে বলল, ওরা যাবে না। সেহরিশ তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ ব্রেক কষে। গাড়ির ভেতরের লুকিং মিররে দুটো ছেলেকে আরেকবার দেখে নিল সে। কেন যেন মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে আর ছেলে দুজনে ভিজে যাবে। তারপর হঠাৎ তাদের জ্বর আসবে। ঝড়ো বাতাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত হল এবং সেই শব্দে ইফান ভয় পেল। বড় ভাই ইভান তাড়াতাড়ি ইফানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সেহরিশ গাড়ির ভিতর বসে এই দৃশ্য দেখল তারপর কী ভাবল। একটু পর গাড়িটা আবার ওদের সামনে নিয়ে এসে থামাল।
সেহরিশ তার সিট বেল্ট খুলে, বাম দিকে একটু ঝুঁকে, জানালার কাঁচ গলিয়ে মাথাটা একটু বের করে। এরপর ইভানের দিকে ছাতা বাড়িয়ে দিল। তারপর বলল, ‘এই ছাতাটা নাও। নইলে বৃষ্টি তোমাদের সত্যিই ভিজিয়ে দেবে। তোমার দাদী না আসা পর্যন্ত ছাতার নিচে থেকো।’
ইফান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকাল এরপর ছাতা নেওয়ার জন্য গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। সেহরিশ এতক্ষণ তাদের সঙ্গে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলছিল। ইফান ছাতাটা নিয়ে অবশেষে মৃদুস্বরে বলল, ‘ধন্যবাদ।’
এখন প্রায় মধ্যরাত। আকাশ তখনও ঝুম ধরে আছে। এত প্রবল বাতাস সত্ত্বেও বৃষ্টি আসেনি। আকাশে কালো মেঘ ভাসছে, হালকা হাওয়ায় উড়ছে। গাড়ির ভেতরে বসে সেহরিশ একবার বাইরে তাকাল। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, নির্জনতায় বসে আছে বৃষ্টির প্রত্যাশায়। এখন পর্যন্ত একটি গাড়িও এই পথে আসেনি। সামনে একটা বিশাল ব্রিজ আছে। সেহরিশের কেমন অদ্ভুত লাগতে লাগলো।
মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফাঁকা। শরীর খুব দুর্বল লাগছে। সেহরিশ তার মোবাইল গিয়ার স্টিকের পাশের খালি জায়গায় রাখে। সহসা ফোন বেজে উঠল। সে রিসিভ করল না। তিন-চারবার ফোন করার পর অপর প্রান্তের লোকটি বিরক্ত হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারে এই লোকটিকে ফোন করে পাওয়া যাবে না। তারপর সংক্ষেপে একটি মেসেজ পাঠালো। BM গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্য সাদাফ ক্যাসানো লিখেছে, ‘আমাদের টেনশন হচ্ছে তুই কোথায়?’
সেহরিশ নোটিফিকেশন বার থেকে মেসেজ পড়ে। এরপর মেরুদণ্ড শক্ত করে বসল। সে লিখল-
‘আমি পন্টে সান্ট’অ্যাঞ্জেলো ব্রিজের সামনে আছি।’
মেসেজ পড়ার সাথে সাথে সাদাফ ওপাশ থেকে উত্তর দিল, ‘দাঁড়া। আমরা আসছি।’
সেহরিশ মেসেজ পড়ে আর কিছু লেখেনি। কিছুক্ষণ পর সেহরিশের গাড়ি থেকে একটু দূরে একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে থামল। সাদাফ বসে আছে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে। BM গ্রুপের তৃতীয় সদস্য মাহাবুব তূর্ণ সামনের সিটে বসে আছে, সেহরিশের ওপর তার খুব রাগ। সে দ্রুত গাড়ির সিটবেল্ট খুলে সেহরিশের কাছে ছুটে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে তূর্ণ। তারপর বলল, ‘ফোন বন্ধ করার জিনিস? আমরা তোকে কত কল করেছি? তোর এভাবে উধাও হওয়ার পর আমরা কতটা টেনশনে থাকি তার কোনো ধারণা আছে? আমাদের টেনশনে ফেলে মেরেই দম নিবি।’
তুর্ণ দাঁতে দাঁত চেপে রুদ্ধশ্বাস ফেলল। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। তূর্ণর চোখ ভয়ানক লাল। সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে চুপচাপ হেঁটে সেহরিশের গাড়ির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল। হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘তুই গার্ড ছাড়া একা বের হওয়া বন্ধ করবি কবে? সেহরিশ তোর এতটা নির্লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। পথে হঠাৎ বিপদ হলে কি হবে?’
সাদাফ অকপটে প্রশ্ন করে নিঃশ্বাস ফেলল। ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে সেহরিশ। সেহরিশ বলল, ‘আমি কোনো সুরক্ষা ছাড়াই বাইরে যাই কেউ জানবে কী করে?’
তূর্ণ দৃঢ় ও রাগান্বিত কন্ঠে বলল, ‘ভুলে গেছিস? গত মাসেই তোকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’
সেহরিশ বলল, ‘তোর কি মনে হয় কেউ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেবে আর আমি চার দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ভয় পাব? অসম্ভব।’
সেহরিশের চিন্তাহীন মনোভাব দেখে তূর্ণ খুব রেগে গেল। শান্ত মানুষ যখন রেগে যায় তখন খুব ভয়ানক রূপ নেয়। সেহরিশ তূর্ণকে আর রাগাতে চাইল না তাই চুপচাপ গাড়িতে উঠতে নিল। এ সময় তাদের পেছনে বেশ কয়েকটি গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠে। সেহরিশ তার কৌতূহল মেটানোর জন্য পিছনে ফিরে তাকাল। চারিদিকে অন্ধকারের মাঝে একগুচ্ছ আলো, ভ্রু জোড়া স্থির রাখল সে। একের পর এক গাড়ির হেডলাইট নিভে গেল। কিছুক্ষণ পর জোহান রেঞ্জ গাড়ি থেকে নামল। তিনি ইতালির বাসিন্দা। ইতালির একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সিইওর ছোট ছেলে। সে তার পিতার সম্পদ বিলাসিতা করে ব্যয় করে। জোহান হেঁটে সেহরিশের সামনে দাঁড়াল। অবাক হয়ে তাকায় সাদাফ স্পষ্ট ইতালীয় ভাষায় জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি আমাদের অনুসরণ করছ?’
জোহানের হাসি চওড়া হয়ে গেল। তারপর বলল, ‘না, তুমি ভুল ভাবছ! আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তোমাদের লক্ষ্য করি, তাই এসেছি। যাই হোক, আজ তোমাদের রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারে একটি কনসার্ট আছে। কিন্তু তোমরা তিনজনই পন্টে সান্ট’অ্যাঞ্জেলো ব্রিজের সামনে। কেন?’
তুর্ণ জোহানকে দুদণ্ড সহ্য করতে পারে না। তুর্ণ ভালো করেই জানে যে জোহান সেহরিশকে পছন্দ করে না, জোহানের উদ্দেশ্য মোটেও ভালো নয়, সে প্রতিবার সেহরিশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং প্রতিবারই হেরে যায়। তূর্ণ অতীতের কথা ভেবে রাগে ফেটে পড়ে; সে জোহানকে কিছু কড়া কথা বলার জন্য প্রস্তুত হল। সাদাফ খেয়াল করে সাথে সাথে তূর্ণর হাতটা চেপে ধরল। এরপর সাদাফ মৃদু কণ্ঠে জোহানকে বলল, ‘আমাদের লাইভ পারফরম্যান্স প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে। আমরা এখানে সেহরিশের জন্য এসেছি।’
জোহান আকর্ণ হেসে বললেন, ‘আকাশ অনুকূল নয়, বৃষ্টি হবে বলে রাস্তা একেবারে ফাঁকা। আমি বলতে চাচ্ছি যে প্রকৃতি আমাদের সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছে।’
তূর্ণা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘কি বলতে চাও? ভান না করে সোজা কথা বল।’
জোহান বলল, ‘কার প্রতিযোগিতায় হবে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ থাকবে। পরাজিত দল এক বছরের জন্য বিজয়ী দলের সকল কথা মানতে বাধ্য থাকবে। কি বলো রাজি?’
জোহানকে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে দেখে তুর্ণ মনে মনে হাসল। তারপর সেহরিশকে বলল, ‘গাড়িতে উঠ। অনেক রাত হয়েছে, যেতে হবে।’
জোহান হেসে ফেলল। তারপর বলল, ‘সেহরিশ, প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই পরাজয়ের ভয়ে পিঠ চাপড়ে পালাচ্ছো। তোমার নামের সঙ্গে পালানো বেমানান।’
সেহরিশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সে রাগে, ক্ষোভে জোহানের উদ্দেশ্য জোরালো ও গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘পরে আফসোস করিস না যেন।’
‘আমি আজ জিতব।’ পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল জোহান।
সাদাফ একটু এগিয়ে গেল। হঠাৎ, তূর্ণর হাত ধরে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গেল। তারপর নিচু স্বরে বলল, ‘স্টেজে পারফর্ম করতে গিয়ে পিঠে ও পায়ে ব্যথা পেয়েছি। এখন খুব ব্যথা করছে। সেহরিশ জোহানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। গাড়ি চালানোর সময় সেহরিশ কতটা বেপরোয়া হয়ে যায় সেটা তো জানিস। এই মেঘের রাতে হঠাৎ যদি তার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে জনগণের সামনে তার নাম খারাপ হবে। আমার কথা মন দিয়ে শোন, আজকে তুই আমার পরিবর্তে সেহরিশের সাথে তার গাড়িতে থাকবি। সেহরিশকে বেপরোয়া হতে দেখলে তাকে সতর্ক করবি।’
তূর্ণ আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল, ‘সেহরিশ যে গতিতে গাড়ি চালায় তাতে আমার ভয় লাগে। তুই আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিস, পরে দেখবি আমার হাত-পা রাস্তায় পড়ে আছে।’
সাদাফ জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। আজকের পারফরম্যান্সে ড্যান্স স্টেপ করতে গিয়ে হঠাৎ ব্যথা পায় সে। তবুও পারফরম্যান্স সম্পূর্ণ করে। এখন ব্যথায় দাঁড়ানোও কঠিন হয়ে পড়ছে তার জন্য। তূর্ণ সাদাফের সুক্ষ্ম ও ম্লান চোখ মুখ দেখে ফ্যাকাশে গলায় বলল, ‘ঠিক আছে! আমি যাব।’
জোহান আর সেহরিশের গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বিশ মিনিট সময়ে। যার গাড়ি পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছাবে। সে আজকের বিজয়ী। এবং শর্ত অনুসারে পরাজিত ব্যক্তিকে এক বছরের জন্য দাসত্বে রাখা হবে। সাদাফ একটা ছোট কাপড় হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাওয়ায় কাপড় উড়িয়ে দিতেই গাড়ি দুটি দ্রুত গতিতে চলে যায়। দুজনের মধ্যে সমান উত্তেজনা। কার গাড়ি আগে যাবে?
সেহরিশ খুব স্পিডে ড্রাইভ করছে। তূর্ণ ভয়ে সিট আঁকড়ে ধরে। সেহরিশ রাস্তার মোড়ে এসে হঠাৎ গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে গেল। তূর্ণর বুক ধুকধুক করছে । স্বেদজল কপাল বেয়ে স্রোতের মতো বয়ে নিচে নেমে গেল। কিছুক্ষণ পর লুকিং মিররে তাকিয়ে জোহানের গাড়ি না দেখে তূর্ণ বলল, ‘জোহানের গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। আজও তুই জিতবি। এখন অন্তত একটু ধীরে চালা। ভয়ে আমার আত্মা প্রায় বেরিয়ে গেল।’
সেহরিশ একটা বাঁকা হাসি দিল। একটা তীব্র, দুর্বোধ্য দৃষ্টি তূর্ণর মুখে ফেলল। তারপর অধর কিছুটা নির্লিপ্ততার সাথে নরম গলায় বলল, ‘সেহরিশ ফাতিন চৌধুরীকে হারানো অসম্ভব। আর আস্তে চালানো তো প্রশ্নই আসে না। শত্রুকে দুর্বল ভাবা পরাজয়ের প্রতীক।’
ফিনিশিং লাইনে পার্ক করা গাড়ির বাম্পারে বসে আছে সেহরিশ। প্রতিযোগিতার বিশ মিনিট, আরও পনেরো মিনিট কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত জোহান ফিরে আসেনি। সেহরিশের গিটার তার গাড়ির ভেতরে। গিটার বের করল তূর্ণ। সেহরিশ গুনগুন করে গান ধরল। একটু পরেই জোহানের গাড়ি তাদের বিপরীত দিকে এসে থামে। জোহানের বন্ধুরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জোহান গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে সেহরিশ গিটার বাজানো বন্ধ করে দিল।
তূর্ণ আর সাদাফের ঠোঁটে জয়ী হাসি দেখে জোহান রাগে ফুঁসছে। শরীর কাঁপছে। বলা বাহুল্য, সেহরিশ আর জোহান পরিচিত। তারা হাই স্কুলে একসাথে পড়াশুনা করেছে। আর সেহরিশ তার ছোটবেলার বন্ধু নয়। সেহরিশ সে স্কুলের টপার ছিল। জোহানের শৈশব কেটেছে বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডা এবং খেলাধুলায়, পড়াশোনায় মোটেও মনোযোগী ছিল না। সে সবসময় স্কুলে সবার শেষে আসত। শিক্ষকরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ক্লাস থেকে বের করে দিতেন। বাবার অনেক টাকা থাকায় শিক্ষক তাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে পারেননি। সে সময় সেহরিশ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত, তাকে সবসময় বই নিয়ে বসে থাকতে দেখা যেত। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ভালো ছিল। খুব সুদর্শন বলে মেয়েরা তাকে ভালবাসত। অন্যরা সেহরিশের প্রশংসা করলে তা জোহান পছন্দ করত না। সে সবসময় সেহরিশের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকতে চায়। তবে সে ইচ্ছায় সে কখনই সফল হয়নি। সেহরিশের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ একসময় ঘৃণাতে পরিনত হয়েছে। জোহান স্থির দাঁড়িয়ে রইল।
ওকে লজ্জা দিতে সেহরিশ ওর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে গম্ভীর সুরে বলল, ‘তুমি যদি মনে কর আমাকে হারাবে। তবে এটি তোমার চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখো। আমাকে হারানো তোমার ক্ষমতার বাইরে।’
রাত প্রায় চারটা বাজে। সেহরিশ তার গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেহরিশ চলে যাওয়ার পর, জোহান পথের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সে রাগে ছটফট করতে লাগল। গাড়ির সামনে থেকে জোহানের ইতালীয় বন্ধু হেরান এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল। তারপর জোহানের হাত ধরে নিচু গলায় বলল, ‘নিজেকে শান্ত কর জোহান। সেহরিশ কোন সাধারণ মানুষ নয়। তার সাথে ঝামেলা করলে সকাল জেলে হবে।’
জোহান একটা গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। তারপর হঠাৎ গাড়ির টায়ারে লাথি মারল। গর্জে ওঠা কন্ঠে বলল, ‘আমি তাকে ধ্বংস করব। আমি তার জীবন ধ্বংস করে দেব।’
চলবে…
#আশিয়ানা
শারমিন আক্তার বর্ষা
(১)
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সবাই রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন।]
📌📌 আমার গল্পগুলি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করার জন্য এই গ্রুপটি – সবাইকে জয়েন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে এবং গ্রুপে পোস্ট করে গল্পটি পড়ার পরে আপনার কেমন লেগেছে তা শেয়ার করুন।
গ্রুপ লিংক—
https://facebook.com/groups/1796088627595261