তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন পর্ব ১৭ #জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

0
56

#তুমি_ছুঁয়ে_দিলে_এ_মন

পর্ব ১৭

#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

ত্রিশা বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে চলে এসেছে শুনে ত্রিশার চার বান্ধবী রাত্রি, ত্রিনা, ঊষা ও স্নিগ্ধা কলেজে ক্লাশ শেষ করেই ত্রিশার রুমে চলে এলো। আহনাফ স্যারই ওদের হোস্টেলের ঠিকানা দিয়ে দেখা করে আসতে বলেছিলো। আহনাফ স্যার ওদেরকে ত্রিশার খবরাখবর জানাচ্ছে শুনে ওরা সবাই তাজ্জব বনে গিয়েছে।
হোস্টেলে এসেই চারজনই একসাথে ত্রিশার প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুললো, কেনো সে তাদের বিগত কয়েকদিন ঘটে যাওয়া সব ঘটনা সে জানায়নি? আর কেনোইবা বাড়ি ছেড়ে তাদের বাড়িতে এসে উঠেনি? আর কেনোইবা ঐ স’ন্ত্রাসী রোমেললের কাহিনি শুনায়নি?

রাত্রি বড় একটা শাসানি দিয়ে বললো,

” তুই আমাদের মোটেও আপন ভাবিস না, ত্রিশা! আমার বাড়িতে তুই একটানা ছয়মাস থাকলেও কেউ কিছু বলার নেই। সবাইকে তো তুই চিনিস জানিস ই। আর সেই তুই কিনা সারা দিন নদীর ধারে ঘুরে ঘুরে অজ্ঞান হয়ে গেলি?”

সাথে স্নিগ্ধা, ঊষা ও ত্রিনাও বলে উঠলো,

” আমাদের এখানেও উঠতে পারতি, সবাই তোর অবস্থা জানে, সবাই রাজী হতো।”

ত্রিশা বুঝিয়ে বললো,
” দেখ, আমি তোদের বাসায় ছয়মাস থাকতে পারতাম, এটা সত্য, তবে এই ছয় মাস পর তো ঠিকই নিজের একটা পথ নিজেকেই করে নিতে হতো। হোস্টেলে উঠেছি, আহনাফ স্যারের বরাতে কয়েকটা টিউশন ও পেয়ে গেছি, আশা করি, কিছু একটা হবেই। ”

স্নিগ্ধা বলে উঠলো,

বাসায় তোর বিয়ে ঠিক করেছে, সেটাও তো আমাদের জানাসনি, ব্যাপার কি?

ত্রিশার কন্ঠে অনুনয়,

” দোস্ত রে! আমার নিজের মুখেই এটা উচ্চারন করতে কষ্ট হচ্ছিলো যে, শুধুমাত্র স্বার্থের সন্ধানে এক প্রতিবন্ধির সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলো আমারই মা। কাউকে বলার কোনো পথ পাচ্ছিলাম না, না ছিলো এই বিয়ে ভাঙ্গারও কোনো উপায়।

ঊষা বললো,

” অনেক ভালো কাজ করেছিস রে! ঐ বাড়ি থেকে তোর বহু আগেই বের হয়ে আসা উচিত ছিলো। জহির শেখ আর তার মা ববিতা শেখ তো তোকে উঠতে বসতেই মা’রতো। তোর মা সব কাজ না করলে, তোকেও কাজকর্ম করাতো। শুধু প্রতিবেশি আর এলাকার লোকজনের কাছে ভালো সাজার জন্য তোকে এটুকু পড়াশোনা শিখিয়েছে, নইলে তোকেও অশিক্ষিত বানিয়ে রাখতো! ”

ত্রিশা নিরবে চোখের পানি ফেললো, ত্রিনা বলে উঠলো,

” কাঁদিস না। এই চোখের পানিকে তোর শক্তিতে পরিনত কর, তবে বেশি টিউশনি করলে, নিজের পড়া করার সময় পাবি না, সামনেই তো ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা, আর এই কয়েকটা মাস সময় হলো, জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং টাইম। তুই বরাবরই আমাদের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করিস। তোর স্থান যেনো বুয়েটেই হয়, আমরা সেটাই চাই।

রাত্রি এবার সবার উদ্দ্যেশ্যে বললো,

” চল, আমরা সবাই ত্রিশার পড়াশোনার জন্য একটা ফান্ড গঠন করি, এতে কলেজের যারা উচ্চবিত্ত আছে সবাই অর্থ জমা দিবে আর আমরা তা ত্রিশার পড়াশোনা মানে বই খাতা ও খাওয়া বাদব খরচ করবো”

এবার ত্রিশা বলে উঠলো,

” আচ্ছা করিস, কিন্তু আহনাফ স্যার আমাকে কলেজে ফুল ফ্রি পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে”

চার বান্ধবী একযোগেই বলে উঠলো,
” ব্যাপার কি? আহনাফ স্যার আগ বাড়িয়ে তোর এত দেখভাল করছে, ব্যাপার কি? আহনাফ স্যার কি তোর প্রেমে টেমে পড়েছে নাকি রে?”

ত্রিশা দারুন দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো। বান্ধবীদের কিভাবে মিথ্যে বলে? তাই সত্যটা সে বলেই দিলো। সাথে এ ও বললো,

” আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে আমি কারো সাথে কোনোভাবেই প্রেমের সম্পর্কে জড়াবোনা রে!”

রাত্রি বলে উঠলো,
” আহনাফ স্যার বলতে গেলে গোটা কলেজের ক্রাশ, আর তুই তার ক্রাশ! আর তাকেই রিজেক্ট করেছিস?

ত্রিশা বলে উঠলো,

” আহনাফ স্যার একজন মহান মানুষ, তিনি আমার ভালোবাসা পরে আগে শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য; পরম পূজনীয়, যদি তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন, তবে আমি একেবারে একটা হালাল সম্পর্কে আমাদের পরিনতি দিতে চাই। ”

ত্রিনা বলে উঠলো,

” মানে? সে অপেক্ষা করতে পারলে, তুই উনাকে বিয়ে করবি?”

ত্রিশা সলজ্জিত হেসে বললো,

” হুউম”

শুনে ত্রিশার সব বান্ধবীরা একযোগে উল্লাস করে উঠলো।

ত্রিশা সবাইকে থামিয়ে বললো,

” আহনাফ স্যার আমাকে কোনোদিন আর তার ভালোবাসা প্রকাশ করবে না, তা সে আমাকে কথা দিয়েছে। অথবা সে কোনোদিন আমাকে ইমপ্রেস করারো চেষ্ঠা করবে না।

সবাই একযোগে স্বমসুরে একথা শুনে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
” নাটক কম করো পিও…”
ত্রিনা বকে উঠলো,
.বাস্তবসম্মত কথা বলো, ত্রিশা, ভালোবাসা হলো পা’দের মতো, মনে মনে গোপনে গোপনে করে রাখলেও সবাই কিন্তু ব্যপারটা ভালো করেই বুঝে .”

সবাই একযোগে হেসে উঠলো।

তারপর সবাই ত্রিশাকে রোমেলের কাহিনী শুনাতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। রোমেল আসলে এক বড় সন্ত্রাসী ছিলো। বছরখানেক পলাতক ছিলো। কিন্তু হটাৎ ই কোন এক রাজনৈতিক নেতার সাহায্যে ওর মামলা টা মিটে যায় আর সে এখন খোলা আম সন্ত্রাসী কার্য করে বেড়াচ্ছে। এই ছেলের নামে যেনো ত্রিশা থানায় একটা জিডি করে রাখে সেজন্য বান্ধবীরা ওকে পরামর্শ দিলো।

.
.

জহির বাড়ি এসে ত্রিশাকে না পেয়ে সব ভাংচুর শুরু করলো। কনকচাপাকে প্রহার করতে শুরু করলো। এমনকি র’ক্তাক্তও করে দিলো। কনকচাপা নিশ্চুপ। মেয়ে হারোনোর শোকে মূহ্যমান, তাই জহিরের প্রহারও যেনো গায়ে লাগছে না তার।
জহির চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে নিলো,
” হা*রামজাদী,, ওরে যেতে দিয়েছিস ক্যন? আমার মিলিয়ন ডলারের বিজনেস তুই শেষ করে দিলি! তোরে আমি কা’ইটা কুটিকুটি কইরা নদীতে ভাসায়া দিমু, যদি ও বাড়িতে না ফেরে! ”

ববিতাকেউ ছেড়ে কথা বললো না জহির,
” ওরে কেনো যেতে দিয়েছো? তুমি জানোনা, কত বড় বিজনেস ডিল ওরা সাইন করতো, শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে পারলে..?”

ববিতা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে উঠলো,

” তুই চিন্তা করিস না খোকা, ও আর কোথায় যাবে? ওর নানা বাড়িতে গেলেও, ওরা আবার ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আবার দুই দিন পর এখানেই ফিরে আসবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত”

“ওকে এখনি প্রয়োজন মা, পাসপোর্ট আর ভিসা তৈরির জন্য ওকে এখনি প্রয়োজন। আচ্ছা, ওর কোনো প্রেমিক টেমিক নাই তো আবার?”

” না, কি যে বলিস খোকা? ওকে কোনোদিন কোনো ছেলের সাথে দেখা যায় নাই, গেলে তো খবর আমার কানে আসতোই”

” তুমি জানো না মা, আজকালকার মেয়েরা কিরকম চালু! ”

” ওসব আর ভাবিস না, আমি পইপই করে বলে রাখছি, ও আসবেই আসবে, আর না আসলেও এমন চাল চালবো যে, আসতে বাধ্য!”

বলেই একটা কূট হাসি হাসলো ববিতা।

.
.
কলেজে ক্লাশ শেষ করে আহনাফ ত্রিশাকে দেখা করতে বললো।

কারন, পড়া বাদ দেওয়া যাবে না কোনো ক্রমেই।

ত্রিশা ক্লাশ শেষ করে এলেই আহনাফের কাছে ম্যাথ করে চললো টিউশনি করতে। দুটো জমজ ছেলেমেয়ে দুজনই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে তাদের কে পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ত্রিশাকে।

ভালো একটা এমাউন্ট ওকে বেতন দেওয়া হবে সে নিশ্চয়তাও দিলো তারা। আহনাফ স্যারের রেফারেন্সে সে এসেছে, এখানে কোনো রকম সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

ত্রিশার যেনো আর খারাপ না লাগে সেজন্য আহনাফ ত্রিশার সাথে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষকসুলভ ভাবেই কথা বলছে। কিন্তু ত্রিশাই একটু ক্লোজ হয়ে স্যারের শরীরের খোঁজ খবর নেয়।

এভাবেই ত্রিশার একটা মাস কেটে গেলো হোস্টেলে। মা থেকে দূরে। যে পরিমান রা’গ মায়ের প্রতি পুষে রেখেছিলো, মায়ের জন্য খারাপ লাগবে তা ভাবেনি।
তবে একদিন পড়াশুনা করতে করতে রাত যখন গভীর তখন হটাৎ ই মায়ের জন্য অজানা ব্যথায় বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। এক অশরীরী বাণী ত্রিশা শুনতে পেলো যে, ওর মা বড় বিপদে আছে।
নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে অস্ফূট স্বর বেরিয়ে এলো মা!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here