#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৫
#মেঘকন্যা
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিলো মিরা।বিকাল দিকে উঠে বসার ঘরে চলে গেলো।সায়মা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বায়না করলো তার হাতে ভাত খাবে।সায়মা বেগম মিরাকে ভাত খাইয়ে দিলেন। মিরার মনে হচ্ছে কতো দিন পর মায়ের হাতে কিছু খেলো। সায়মা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।তাদের মাঝে উপস্থিত হলো তানজিম শেখ।তার হাতে তারমিন এর জন্য তার পছন্দের আইস ক্রিম,, সায়মা বেগমের জন্য তেঁতুলের আচার। ও মিরার জন্য তার পছন্দের শন পাপড়ি। তানজিম যার যার জন্য বরাদ্দ খাবার তাদের হাতে দিলেন।
মিরার যে বাবা নেই তা সে কখনও বুঝে নি কারণ এই যে তার বর্তমান শশুর তিনি তাকে ছোট বেলা থেকে এতো ভালোবাসা দিয়েছেন যা বলার বাইরে। তারমিন ও মিরার মধ্যে কোনো ফারাক করেন নি।সে যখন খালার বাসায় আসতো তখন তানজিম শেখ তারমিনের জন্য যা যা নিয়ে আসতেন ,,ঠিক মিরার জন্য তার পছন্দের খাবার নিয়ে আসতেন।আবার যখন মিরাদের বাসায় যেতেন তখন ও মিরার পছন্দের খবর নিয়ে যেতেন।বাবা হারা এই মেয়ে কে খুব আদর করতেন তিনি।
মিরা তানজিম শেখের হাত ধরে ফেললো।তার হাত ধরে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।চোখ তার ছল ছল করছে।যতবার মিরার কোনো পছন্দের খবর তিনি নিয়ে আসেন,যতবার মিরার মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে দেন ততবার মিরা খুশিতে কেঁদে উঠে।এক ও তার ব্যতিক্রম নয়। মিরা হেসে বলল,,
-“আপনি আমার পছন্দের খাবার নিয়ে এলেন।এতো ভালোবাসেন আপনি আমায়?”
-“বাবাদের মুখ্য কাজ হলো তার মেয়েদের ভালোবাসা। ”
তানজিম শেখ হেসে উত্তর দিলেন। বরাবর তার অভ্যাস কাজ থেকে ফেরার পথে বউ, সন্তানের জন্য তাদের পছন্দ মতো খাবার কিনে নিয়ে যাওয়া।আজ ও নিয়ে এসেছেন।তিনি মিরাকে ছোট থেকেই খুব আদর করেন।একদম নিজের মেয়ের চোখে দেখেন।কিন্তু যে এই পাগলী মেয়ে কিছু হলেও তার চোখ ছল ছল করে।
মিরা ঠোঁট উল্টে বলল,,
-“ইউ আর দি বেস্ট,, আঙ্কেল।”
সায়মা বেগম মিরার কথা কথা শুনে হেসে দিল। তানজীম শেখ হেসে দিয়ে চলে গেলেন। বসার ঘরে বসে মিরা, সায়মা বেগম, ও তারমিন নিজেদের পছন্দের খাবার নিয়ে এলেন। তারমিন মিরার শন পাপড়ির দিকে হাত বাড়ালে মিরা তারমিনের হাতে চিমটি করলো। তারমিন মুখ গোমড়া করলো।মিরা ফিচেল হেসে তারমিনের দিকে শন পাপড়ি ধরলো। দুজনই টিভি অন করে সোফায় আয়েশ করে বসলো।
***********
সন্ধায় পর তাশফীক বাসায় এসেই মাথা গরম হয়ে গেলো।এমনি আজ অফিসে মাথা গরম ছিল। অফিসে ম্যানেজারের উপর চেঁচিয়ে এসেছে।এখন আবার রুমের এই অবস্থা।পুরো রূমে কাপড়ের নিয়ে নাস্তা নাবুত অবস্থা। পুরো রুম জুড়ে মিরার কাপড়।
তাশফীক রূমে ঢুকতেই চোখে পড়ল একটা ফ্রেম ভেঙে কাচ গুলো চুরমার হয়ে আছে। আসলে মিরা আলমারী থেকে নিজের কাপড় গুলো নামিয়ে একটু গুছিয়ে নিচ্ছিল।কিন্তু ভুল বশত আলমারির ভেতরে থাকা এক ছবির ফ্রেম তার হাত থেকে পড়ে যায়।মিরা নিজেও ভয় পেয়ে যায়।
তাশফীক দ্রুত ফ্রেমের কাছে এসে হাঁটু ভেঙে বসে ফ্রেম তুলে। ফ্রেম টা ভেঙে অবস্থা খারাপ। ফ্রেমে তার ও নানা ভাইয়ের ছবি।খুব পুরোনো একটা ফ্রেম।খুব শখ করে নানা ভাই তার ও নানার ছবি দিয়ে এই ফ্রেম বানিয়ে দিয়েছিল। এতো বছর খুব যত্ন রেখেছিল সে এটা।আজ মিরার জন্য ভেঙে গেলো।তাশফীক রেগে ফেটে পড়ে।মাথা কাজ করছে না তার।এতো যত্নে রাখা একটা জিনিসের এই অবস্থা দেখে মাথার রক্ত গরম হলো।মিরার বাহু শক্ত করে ধরে বলল,,
-“এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমার পার্সোনাল জিনিস টাচ করার?। আর কাপড় এভাবে ফেলানো কেনো? রূমে এই অবস্থা কেনো?
চেঁচিয়ে বলে তাশফীক।মিরা কেঁপে উঠে।সেই সাথে ব্যথায় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। হুম এটা ঠিক মিরার কারণে ছবির ফ্রেম ভেঙেছে।তাই বলে এমন করবে?মিরা কাপা কণ্ঠে বলল,,
-“ছাড়ুন তাশফীক ভাই। ব্যাথা পাচ্ছি।ছাড়ুন!”
তাশফীক মিরাকে ছেড়ে দিলো। তাশফীক ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,,
-“তোমাকে বার বার বলি আমার জিনিস থেকে দুরে থাকবে।তাও তুমি তোমার মন মর্জি করো। কেনো?”
মিরা কাদতে কাদতে বলল,,
– “আমি ইচ্ছা করে করি নি।হাত থেকে ফসকে পড়ে গেছে।আমি সরি তাশফীক ভাই। বিশ্বাস করুন,,আমি ইচ্ছা করে করি নি।”
-“তোমাকে কতো বার বলেছি যে আমি এবং আমার জিনিস থেকে দশ হাত দূরে থাকবে। আবার বলছি আমার জিনিস ধরবে না।”
তাশফীক দু আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করলো। সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে নিলো।মিরা একটা ঢোক গিলে।চোখের পানি মুছে নিলো।বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে তাশফকের সামনে ধরলো। তাশফীক বারণ করলো। মিরা যেহুতু ভুল করেছে তাই সে নিজের জায়গা থেকে নড়লো না। পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,,
-“পানি টা খেয়ে নিন তাশফীক ভাই।আমি সরি বলছি। প্লিজ!”
এবার পানি নিবে না বলে তাশফীক হাত সরিয়ে দিলে ভুল বশত গ্লাস ইকরার হাত থেকে পড়ে যায়। কাচ ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। গ্লাসের টুকরো মিরার পায়ে বিধে যায়। তাশফীক উঠে এগিয়ে এলো মিরার দিকে। মিরাকে বেডে বসিয়ে দিলো। দ্রুত বেড সাইড টেবিল থেকে তুলা, স্যাভলন করলো।মিরার পায়ে কাছে গিয়ে বিধে যাওয়া কাচ বের করলো।মিরা চোখ মুখ কুচকে ফেললো।ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। তাশফীক অতি যত্নে বান্ডেট লাগিয়ে দিলো।মিহি কণ্ঠে বলল,,
– “সেটা আমার খুব প্রিয় একটা ফ্রেম।আর তুমি জানো আমার মেজাজ খারাপ থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না।তাই তখন এমন ভাবে রিয়েক্ট করেছি।
আমি নিচে যেয়ে রুবিকে পাঠাচ্ছি।সে রুম পরিষ্কার করে দিবে।”
***********
পর দিন সকাল সকাল রেডি হচ্ছে মিরা। সিমরান এবং মিরা এক সাথে ভার্সিটি যাবে। তাশফীক বলে দিয়েছে আজ ভার্সিটি নিয়ে যেতে পারবে না।অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে তার যেনো তাড়াতাড়ি যেতে হবে। মিরা রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। বাসে উঠে পড়ল দুজনে।বসে জানলার পাশে মিরা,পাশে সাইট বসেছে সিমরান।এক ছেলে বাসে জুস খেয়ে খেয়ে উঠছিল।বাস ব্রেক করায় জুসের বোতল থেকে জুস গিয়ে পড়ে সিমরানের গায়ে। সিমরান ফুসে উঠে। বলে,,
-“আপনি কি বাচ্চা নাকি ?আপনার জন্য আমার ড্রেস পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
সেই ছেলেটি বলল,
-“দেখুন মিস আমার কোনো দোষ নেই।গাড়ি ব্রেক করায় এমন হয়েছে। ”
বলেই লোকটি সিটে বসতে পা বাড়ালো
সিমরান বলল,,
-“আরে বাবা,, কেমন লোক সরি পর্যন্ত বলে না।
আজিব আমার পুরো ড্রেস আপনার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো।”
-“আমি তো বললাম যে,, আমি ইচ্ছা করে করি নি তাও আপনি গলায় এসে ঝগড়া করেই যাচ্ছেন।বেয়াদব কোথাকার।”
-“আমি গলায় পড়ে ঝগড়া করছি?আমি বেয়াদব?আপনি কি সাধু?একে তো ড্রেস জুস ফেলে দিলেন আবার বড় বড় কথা।”
ছেলেটা মুখ বাকিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে সিমরানের হাতে দিয়ে বলল,,
-“এই নিন টাকা রাখুন তাও আমার সাথে ঝগড়া করবেন না।”
সিমরান রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল,,
-“আপনার কি মনে হয় আমি গরীব?আপনার টাকা নিবো আমি?টাকার গরম দেখান আপনি আমায়?
বলেই সিমরান ছেলের হাতে টাকা ধরিয়ে দিলো।
ইকরা এতক্ষণ যাবৎ তাদের ঝগড়া দেখছিলো।কি এর করার।অবশেষে মুখ খুলল
-“সিমরান চুপ কর।ভাইয়া আপনি নিজের সাইট বসুন
ছেলেটি এক পলক মিরার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
**************
ভার্সিটির গেট দিয়ে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করছিলো মিরা ও সিমরান।মূলত তখনকার ঘটনার জন্য সিমরানকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলছিলো মিরা।তাদের কথার মাঝে মিরার গায়ে রঙের পানি ভর্তি বেলুন ছুঁড়ে মারে পাশ থেকে।সিমরনের গয়েও পানির ছিটা লেগে যায়। মিরা চোখ তুলে পাশে তাকায়।পাশে তাকাতেই আবার বেলুন ছুঁড়ে মারে।
-“কি কেমন লাগলো মিস মিরা?”
বলেই হাসতে লাগলো তন্ময়।
-“এটা তোমার প্রাপ্য ছিল মিস মিরা। বায় দা ওয়ে আজ কিছু বলছো না যে মুখে কি তালা দিয়ে এসেছ নাকি ভয় পেয়ে গেছো?”(সারিকা)
– “নাহ মিরা মিসের তো অনেক সাহস।তিনি অনেক প্রতিবাদী।” (রিমা)
বলেই হাসতে লাগলো রিমা। মিরা রাগে ফেটে পরলো। পুরুষালি কণ্ঠে শুনতে পেলো
চলবে……?
(আসসালা মুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য।আপনাদের কি গল্প ভালো লাগছে না? আপনাদের মন মত গল্প লিখতে পারছি না আমি? সবাই একটু সাপোর্ট করবেন।পাশে থাকবেন।ভালোবাসা নিবেন পাঠকগণ ❤️❤️)