#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৭
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
মেকি হাসি দিয়ে লেবুর শরবত নিয়ে রুমে এগিয়ে গেলো মিরা।এইবার এই লোককে মজা বুঝাবে। ।সব সময় রাগী লুক নিয়ে থাকতে হবে কেনো?সব সময় ঝাড়াঝাড়ি।একটু মিষ্টি করে কথা বললে কি হয়?।জীবন তো একটাই,,তাই হাসতে হবে। চিল করতে হবে।এটা এবার কেমন রোবটের মতো জীবন ।শুধু কাজ আর কাজ।।এই লোক আজকে একই দিনে শুধূ তাকে দুই দুই বার ঝাড়ি দিলো। একটু সুন্দর ভাবেই তো কথা বলতে পারে।না তা করবে কেনো? মুখ দিয়ে শুধু করলার মতো কথা বের হয়।যেচে বসে তাকে কথা শুনায়।
মিরা পা টিপে টিপে শরবতের গ্লাস তাশফীকের সামনে রেখে গেল।ল্যাপটপে এতোটাই মগ্ন ছিল যে সে, মিরার দিকে তাকালো না পর্যন্ত । মিরা মনে মনে ভাবলো যাহ বাবা এখন এই জায়গা থেকে কেটে পরী।কিন্তু ঠিক তখন পেছন গম্ভীর কন্ঠে শুনতে পেলো,,
-”মিরা দাড়াও ।”
কথায় আছে ,,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।মিরার ক্ষেত্রেও তাই হলো।মিরা নিজেকে সামলে নিয়ে একটা হাসি দিল।ঠোঁট হাসির রেখা তুলে বলল,,
-”জি বলুন।”
-”লেবুর শরবত আমি রুবিকে আনতে বলেছিলাম তুমি কেনো নিয়ে এলে?”
-”নিজের দায়িত্ব পালন করলাম।”
-”মানে?”
-”আসলে রুবি আপু কাজ করছিল।আর তাছাড়া আমি আপনার বউ।আপনার অর্ধাঙ্গিনী আমার দায়িত্ব আপনার কাজ গুলো নিজ হতে করে দেয়া।।তাই তো সুন্দর করে নিজ হাতে আপনার জন্য লেবুর শরবত করে করে এনেছি।”
মিরার কথায় বাকা হাসি দিল তাশফীক।নিজের লেপটপ সেইডে রেখে এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো মিরার দিকে। তা দেখে একটা ঢোক গিললো মিরা।
-”তোমাকে এতো দায়িত্ব পালন করতে হবে না।বেশি বউ গিরি করতে হবে না।তখন দেখা যাবে আমি জামাই গিরি শুরু করলে তার লোড তুমি নিতে পড়বে না।”
মিরার কোমর পেচিয়ে নিজের সাথে ধরলো তাশফীক। মিরা হকচকিয়ে গেল।মিরার দেহ খানা তাশফীকের বাহুতে আবদ্ধ হলো।দুজনের মাঝে দুরত্ব আরো একটু কমে গেল।কথা গুলো একদম কাছ কাছে থেকে বলল তাশফীক।মিরার মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রাণ পাখি চলে যাবে।বুকের ভেতর ধক ধক শব্দ দ্বিগুণ হলো।
-”ছাড়ুন আমায়।আমি নিচে যাবো।”
-”আরে ছাড়বো কেনো?আর স্বামী ঘরে থাকলে যে বউদের ঘরে থাকতে হয় তা কি তুমি জানো না?আর তুমি এত সুন্দর করে কষ্ট করে আমার জন্য শরবত করে নিয়ে এলে তাই আমার ও তো কিছু দায়িত্ব আছে তাই না?আমিও আমার স্বামী হওয়ার দায়িত্ব পালন করবো।”
মিরা কিছু বলল না। তাশফীক কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিস ফিস করে বলল,,
-”করবো? দায়িত্ব পালন? বললে না যে?”
তাশফীক বাকা হাসি দেয়। মিরার কানের কাছে ফু দিয়ে দিলো। মিরার দেহ জুড়ে শিহরন হলো। মিরা দু চোখ বন্ধ করে নিলো।বেশ কিছুক্ষন পর মনে হলো সব কিছু নিস্তব্ধ।সামনে কোনো মানুষের অবস্থান বুঝা গেলো না।কারো স্পর্শ শরীরে অনুভব হলো। মিরা চোখ খুলে দেখতে পেলো তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে তাশফীক
মিরার অবস্থা দেখতে পেয়ে হেসে দিল তাশফীক। ইস্ কি সুন্দর হাসি। কি সিগ্ধ সেই হাসি।এই হাসি দেখেই তো বছর খানের আগে কারো মনে অনুভুতি তৈরি করেছিল। হাসিতে তো মিরার বুকে তাশফীকের নাম লিখেছিল সে।এই হাসিতে মিরা আজীবন তাকিয়ে থাকতে পারবে।লোকটার হাসি এতো সুন্দর যা মিরার ছোট মনকে নাড়িয়ে তোলে।মিরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিক অপ্রস্তুত হলো তাশফীক।নিজেকে সামলে নিলো।।হঠাৎ হাঁচি আশায় মিরা নিজের মাঝে ফিরলো।এদিক সেদিক চেয়ে থেকে বলল,,
-”আমি যাই। আপনি শরবত খান।”
বলেই পা বাড়াতে বুকে হাত গুঁজে পিছন থেকে তাশফীক বলল,,
-”এই মিরা,,,
মিরা পিছন ঘুরলো।বলল,,
-“হুম।”
-“আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?তুমি এতো কষ্ট করে আমার জন্য শরবত নিয়ে এলে তাই আমি চাচ্ছি তুমি আগে টেস্ট করবে।আমি এতো টাও নিষ্ঠুর নই যে তোমাকে একা রেখে শরবত খাবো।”
বলেই মিরার দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিল তাশফীক।মিরা মিন মিন করে বলল,
-“আমি খেলে এটো হয়ে যাবে।আপনি খেয়ে নিন আমি পড়ে খাবো।”
-“আরে স্বামী স্ত্রী একজন অন্যজনের এটো খেলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।বুঝ না কেন তুমি?
মিরা এবার কি বলবে ভেবে পেলো না। মিরাকে চুপ থাকতে দেখে তাশফীক ধমক দিয়ে বলল
-”আমি তোমাকে খেতে বলেছি। কুইক।তাড়াতাড়ি খাও।”
মিরা ইনিয়ে বিনিয়ে এক চুমুক খেলো।পুরো মিঠা হয়ে আছে। হবেই বা না কেন,,এতো চিনি দিয়েছে। ইস কি বিশ্রী স্বাদ।মনে হচ্ছে এক খুনি সব কিছু পেটের থেকে দলা পাকিয়ে বের হয়ে যাবে।নিজেকে একশো একটা বকা দিল মিরা।কেনো যে এমন করতে গেলো?কোনো মতো এক চুমুক খেয়ে মগ রাখতে গেলেই তাশফীক বলে,,
-”অর্ধেক শেষ করো। না হলে কিন্তু খারাপ হবে।”
তাশফীকে ভয়ে আরো এক চুমুক খেলো মিরা।না আর সহ্য হচ্ছে না। মগ টা কোনরকম বেড সাইদ টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে দৌড় লাগলো মিরা।গল গল করে সব কিছু পেট থেকে বের হলো।ইস্ কি বিশ্রী অবস্থা।নিজের কাজে নিজের মায়া হলো।মুখ মুছতে মুছতে বের হলো।
তাশফীক মিরার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে।মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝা যাচ্ছে না যে রেগে আছে নাকি মজা পাচ্ছে।কেমন করে তাকিয়ে আছে।মিরা মুখ মুছে তাশফীককে পাশে রেখে রুম থেকে বের হতে হলে তাশফীক মিরার হাত ধরলো। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল,,
-”কেনো এমন করলে? মাথা থেকে দুষ্ট বুদ্ধি বের হয় না বুঝি?এতো কেনো দুষ্টুমি করো?ভেবেছো কি যে আমি বুঝবো না?।তোমার কি আমাকে পাগল মনে হয়?”
তাশফীকের ঝাড়ি খেয়ে মিরার তো কেঁদে দেয়ার মত অবস্থা। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল,,,,
-”দেখুন হয়তো কোনো,,,,,
-”এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি কোনো ভুল করো নি।তুমি নির্দোষ।”
মিরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে,, ঠোঁট উল্টে বলল,,
– “আমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করছি না।আমি যখন জানি,, তাহলে কেনো নিজেকে নির্দোষ দাবি করবো?আমি দুষী।’আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি আমি নিরদুষ? আমার তখন আবেগ কাজ করছে,,আমার বিবেগ কাজ করে নি। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত মানুষের বিবেগ। তখন যদি আমার বিবেগ টা কাজ করতো তাহলে আমি এতো বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যেতাম না।(শুধু মজার জন্য লিখেছি,,ভালো না লাগলে স্কিপ করবেন)
মিরার কথায় তাশফীক কি বলবে তা ভেবে পায় না।কি সব বলছে এই মেয়ে?মাথা কি গেল নাকি?কেমন উল্টা পাল্টা কথা বলছে।কোনো কিছু কি ভেবে বলছে?
।কি একটা অবস্থা!চোখ মুখ কুচকে ফেলে তাশফীক।কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়মা বেগমের ডাক শোনা গেলো। মিরা হাত ছাড়িয়ে দিলো এক ভো দৌড়। তাশফীক মিরার কথায় পুরাই বোকা বনে গেল।
__________
মিরা এক দৌড়ে বসার রূমে চলে আসে। হাঁপাতে বসলো সোফায় বসে। তারমিন এগিয়ে এসে বলে,
-“কি ব্যাপার ভাবি জান এতো ফাপাচ্ছেন কেনো?”
মিরা বলল,
-“এমনি ।তেমন কিছু না।”
-“তেমন কিছু না বলতে কেমন কিছু না?”
-“আরে বললাম তো কিছু না।”
তাদের কথার মাঝে উপস্থিত হলেন সায়মা বেগম।তাদের তারা দিয়ে বললেন,,
-“।তোমরা তৈরি হয়ে নাও।আমরা এক সাথে শিপিং করতে যাবো। যাও দ্রুত রেডি হয়ে নাও।
শপিং এর কথা শুনে মন খুশি হয়ে গেলো তাদের।কিন্তু মিরা ভাবলো অন্য কিছু।এখন রেডি হতে গেলে তো ওই বদ লোকের মুখ মুখী হতে হবে না জানি আবার কতো গুলো কথা শুনতে হয়।
চলবে,…….
(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই?ধন্যবাদ আমাকে এতো সপোর্ট করার জন্য।আমাকে এতো ভালোবাসা দেয়ার জন্য।এভাবেই ভালোবেসে যাবেন। গল্প ভালো লেগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ পাঠকগণ।খুব বেশি ভালোবাসা আপনাদের জন্য।”)