#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৮
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
মিরা পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো। তাশফীক হয়তো বারান্দায়। মিরা এক হাতে কাপড় নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুমে থেকে বের হতেই টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে কিছুর সাথে ধাক্কা খেল।ভেজা পা ছিল বলে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেল।
-“আল্লাহ আমার কোমড় শেষ আজকে।না জানি কোন হাতির সাথে ধাক্কা খেলাম গো মা। ও মা,,,আমার কোমড় শেষ!”
তাশফীক মিরার বলা কোনো কথা শুনলো না। তাশফীক মিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে রইলো।চুলগুলো খোলা,চোখে সামনে কিছু চুল পড়ে আছে।জোড়া ভ্রু দেখতে ভালো লাগছে।গলায় বিন্দু বিন্দু পানির কোনো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
মিরা কোনো রকম উঠে দাড়ালো। কোথায় তাশফীক নিজের হাত বাড়িয়ে দিবে। তা না করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। অসভ্য লোক একটা।বউ পড়ে গিয়েছে,, আর তিনি হাসছেন। উফ অসহ্য।
তাশফীক বেডে বসতে বসতে বলল,,
-“মিরা দেখে হাঁটতে পরো না?মন কোথায় থাকে?
-“দেখেই হাটি। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছছিলাম বলে এমন হলো।আর মন কোথাও যায় নি।নিজের যায় গায় আছে।”
তাশফীক আয়েশ ভঙ্গিতে বসে বলল,,
-“বুঝেছি।এখন বুঝেছি তোমার বার বার পড়ে যাওয়ার আসল কাহিনী।”
মিরা টাওয়াল বারান্দায় দিতে যাবে।কিন্তু গেলো না। ভ্রু কুচকে বলল,,
-“মানে? মানে কি বলছেন?কি বুঝাতে চাচ্ছেন?”
-“মানে এই যে তুমি বার বার আমার সামনেই পড়ে যাও।আমার সাথেই তোমার ধাক্কা লাগে। এর মানে কি ?আমি ভালোই বুঝেছি এমন কেনো হচ্ছে।”
-“সোজাসুজি বলুন। জিলাপির মতো কথা কেনো পেচাচ্ছেন?”
-“মানে সোজা।তুমি বার বার আমার সাথেও ধাক্কা খাও মনে,,,তুমি চাও আমি তোমায় আগলে নেই। টিভি সিরিয়ালের নায়কদের মতো ফিল্মি স্টাইলে তোমাকে জড়িয়ে ধরি। তাই না।”
-“মোটেও না।আপনি এক লাইন বেশি বুঝছেন।”
-“তাহলে তুমি বুঝিয়ে বলো,,তোমার এই বার বার পড়ে যাওয়া,,আমার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় সায়েন্স!”
মিরা ফুসে উঠে। তাশফীকের দিকে তাকিয়ে বির বির করলো,,
-“আপনি কমার্স এর স্টুডেন্ট।আপনার মাথায় সায়েন্স ডুকবে না।”
বলেই মিরা আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে বের গিয়ে গেলো। তারমিনের রুমে চলে গেলো। তাশফীক হতবম্ব হলো। ফোন হাতে নিয়ে এফবি স্ক্রল করলো।
________
তারমিনের রুমে বসে রেডি হতে শুরু করলো দুজনে। সায়মা বেগম এর মাঝে দু বার ডাক দিয়েছেন।এই নিয়ে তৃতীয় বার ডাক দিতে রুমে এলেন।বলেন,,
-“তোদের কি আজকে হবে না?”
-“আর একটু মামনি।”
-“দ্রুত কর।”
দুজনেই রেডি হয়ে বসার ঘরে এলো।।তিনজন মিলে বের হয়ে যায় শপিং করতে। শপিং করতে এসে সায়মা বেগম মিরার জন্য ড্রেস পছন্দ করে চেঞ্জিং রূমে পাঠিয়ে দেন। তারমিন নিজের মতো ড্রেস পছন্দ করতে থাকে।হঠাৎ তার চোখে পড়ে এক ব্যাক্তির ওয়ালেট পেন্টে রাখতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। তারমিন তা হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় সেই
ব্যাক্তির দিকে।
-“এক্সকিউজ মই।আপনার ওয়ালেট।”
বলে কয়েক বার চেঁচাতেই সেই ব্যক্তি পিছন ঘুরে তাকায়।সাদা রঙের গোল ড্রেস করা এক মেয়ে।চুল সামনে দিকে একটু বের করে বেনি করা।মুখে কোনো প্রসাধনী নেই।তবুও সিগ্ধ লাগছে।
-“আপনার ওয়ালেট পড়ে গিয়েছে।ধরুন!
তারমিন বলে।
-“থ্যাংক ইউ ফর দিস।থ্যাংক’স এ লট।”
তারমিন ওয়ালেট দিয়েই হাটা ধরে। পেছন থেকে শুনতে পায়,,
-“আপনার নাম টা জানতে পারি?”
-“তারমিন শেখ।”
-“বিউটিফুল।”
বলেই ব্যাক্তি চলে গেলো। তারমিন সেই লোকের দিকে তাকিয়ে রইলো।বেশ কিছুক্ষন পর নিজের জন্য ড্রেস পছন্দ করে প্যাক করে নিলো।
একটা চেঞ্জিং রুম থেকে শাড়ি পড়ে বের হয় মিরা।ডার্ক মেরুন কালারের জামদানি।খুব সুন্দর লাগছে এই জামদানি শাড়িতে মিরাকে।কেউ কেউ তো দৃষ্টি ফেরাতেই পারছে না। শোরুমের স্টাফ গুলো ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে মিরার দিকে। মিরার বেশি অসস্তি লাগছে। তবুও ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,,
-“মামনি কেমন লাগছে আমায়?”
-“খুব সুন্দর।”
তারমিন মিরার হাত ধরে বড় মিররের সামনে নিয়ে গেলো।আসলেই মিরাকে খুব সুন্দর লাগছে। তারমিন ফটাফট মিরার কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। তাশফীকের ফোন ওহাটসঅ্যাপ করলো
পুরো শোরুম থেকে আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনলো।মিরার ফোন বেজে উঠলো।মিরা ফোন কানে ধরেই শুনতে পেলো,,
-“চেঞ্জ দিস শাড়ি রাইট নাও।গো অ্যান্ড ওয়ার এ সালেওয়ার সুট। গো, ফাস্ট। বিফোর ইউ সি মাই ওয়ার্সট ফেস।”
লোকটাকে মিরা বুঝে না।তাকে আদেশ করলো নাকি থ্রেট দিলো।সে শাড়ি পরলে এই লোকের কি?লোকটা একটু বেশি বারা বারি করছে।নাহ শাড়ি সে পাল্টাবে না।তার ইচ্ছা তার যা মন চায় পড়বে।এই লোক তাকে কেনো কথা শুনবে?
শপিং শেষ করে রাতের খাবার বাইরে সেরে নিলো তারা।মাঝে মাঝে এভাবে বাইরে ডিনার করতে ভালোই লাগে।
-“থ্যাংক ইউ মামণি।অনেক বেশি মজা করেছি আজ। ড্রেস গুলো খুব ভালো লেগেছে।”(মিরা)
-“হুম আম্মু আজ ভীষণ ভালো লেগেছে।ভালো হয়েছে ভাই নেই তা না হলে কতো গুলা কথা শুনতে হতো।”
-“হুম তোর ভাই তো একটা রোবট মনে হয় আমার।তিনি আসলে আমাদের ঘুরো ঘুরি ঠিক ভাবে হতো না।”
তারমিন ও মিরার কথা শুনে সায়মা বেগম হেসে দেন। হেসে বললেন,
-“তোরা থাম।আমার মাসুম বাচ্চা টার সাথে এমন করিস কেনো?
-“তোমার বাচ্চা না ছাই মামনি।উঠতে বসতে শুধু ধমকের উপর রাখে আমাকে। জানো তখন ফোন দিয়ে কি বলেছে?আমাকে বলেছে শাড়ি চেঞ্জ করতে।আমিও তো কম না। কেনো তার কথা মতো শাড়ি চেঞ্জ করবো?যতো সব আজাইরা কথা।”
মিরার কথা শুনে সায়মা বেগম হেসে দিলেন। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। মিরা ও তারমিন আগেই চলে এলো।সায়মা বেগম পিছন চলে এলেন।বসার ঘরে ধুপ করে বসে পড়লো দুজনেই।বেশ ক্লান্ত তারা।
তারমিনের বাবা এগিয়ে এসে দুজনের মাথায় হাত রাখলেন,
-“আমার মেয়ে গুলো কি আজ বেশি ক্লান্ত?দেখে তো মনে হচ্ছে পুরো মার্কেট উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।”
তারমিন বাবার কথা শুনে হেসে দিল,,
-“পাপা আজ বেশ শপিং করেছি।তোমার যা টাকা আছে মনে করতে পারো আজ তার অর্ধেক শেষ।”
তারমিনের বাবা হসে উঠলেন। মিরা বলল,,
-“আঙ্কেল আপনাকে খুব মিস করেছি।আপনি থাকলে কিন্তু ভীষণ মজা হতো।”
-“সমস্যা নেই নেক্সট টাইম জয়েন করবো আমি।”
-“মিরা যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।আজ অনেক ধকল গিয়েছে।”
সায়মা বেগমের কথা শুনে মিরা মাথা উপর নিচ করে রুমের দিকে হাটা ধরলো।আল্লাহ জানে এই লোক কি ঘুমিয়ে গেছে নাকি ?ঘুমিয়ে গেলে তার জন্যই ভালো।অযথা এই লোকের সাথে লাগতে চায় না মিরা।তবে মনের মধ্যে ভয় ও কাজ করছে যদি আবার রেগে চর টর দিয়ে দেয়। উহু দিলে আজ মিরা ছেড়ে দিবে না।একদম ধুয়ে দিবে।”
রুমে ঢুকে দেখল তাশফীক বেডের উপর আধ শোয়া অবস্থায় বসে চোখে চশমা দিয়ে বই পড়ছে।এই রাতের বেলা কে বই পরে?এই লোকের কোনো কাজ মিরার মাথায় ঢুকে না।আজব মানুষ।কখন কি করে কিছু মাথায় ঢুকে না।
দরজার আওয়াজ হতেই সে দিক লক্ষ করলো তাশফীক।ছবি থেকে বাস্তবে বেশ সুন্দর লাগছে মিরাকে। ডার্ক মেরুন রঙের শাড়ি বেশ মানিয়েছে। চুল গুলো খোঁপা করে রেখেছে।দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। তাশফীক চোখ সরিয়ে নিলো।নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হলো।
চলবে??
(আসসালা মুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আপনাদের রেসপন্স পাচ্ছি।ধন্যবাদ সবাইকে।পাশে থাকবেন।ভালোবাসা নিবেন ❤️❤️)