#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৪
#মেঘকন্যা
ভার্সিটি থেকে এসেই বেডে গা এলিয়ে দিলো মিরা। তাশফীক ফ্রেশ হতে গিয়েছে।মিরা কিচেনে গেলো ঠান্ডা পানি খেতে। পানি পান করে রুমে এসে দেখলো তাশফীক ফ্রেশ হয়ে গিয়েছে।মিরা ড্রেস নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে ভেজা টাওয়াল টা বেডের উপর রেখে দিলো। তাশফীক ব্রু কুচকে ফেলল ।মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,,
-“মিরা কি করলে এটা?”
মিরা ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,
-“কি করেছি?”
-“ভেজা টাওয়াল বারান্দায় দিয়ে এসো।”
মিরা বেডে বসতে বসতে বলল,,
-“পড়ে দেই? শরীর চলছে না।”
তাশফীক কিছু বলল না।নিজে উঠে ভেজা টাইয়াল বারান্দায় দিয়ে এলো।পা চালিয়ে খাবার নিতে নিচে গেলো। রুবি কে বলল তাদের খবর রুমে দিয়ে যেতে।মিরা ততক্ষণে বেডে ঘুমিয়ে গেলো। তাসফীক রূমে এসে দেখলো মিরা ঘুমিয়ে গেছে।সে নিজেও সোফায় গা এলিয়ে দিলো।
_______
রাত বারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।মিরার ঘুম আসছে না। তাশফীক ঘুমিয়ে গেছে।মিরা এপাশ ওপাশ করলো।কেমন যেন লাগছে। উফ,ওই যে দুপুরে ঘুমিয়েছিল বলেই এখন ঘুম আসছে না।
মিরা উঠে বসলো।বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেলো।কিছুতেই ঘুম আসছে না।কিছু একটা ভেবে আলমারির কাছে গেলো।আলমারি খুলে ড্রয়ারের ভেতর থেকে একটা ডায়রি বের করলো।হুম এটা মিরার পার্সোনাল ডায়রি।এই ডায়েরিতে মিরা বিশেষ কিছু লিখে।।মিরার একান্ত বিশেষ কিছু।
মিরা ডায়রি হাতে নিয়ে সোজা বারান্দায় গেলো।বারান্দায় ডিভানের উপর পা দুটো তুলে আয়েশ করে বসে পড়লো। আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে। চাদ নেই বলে চার পাশ অন্ধকার।কিছু কিছু ফ্ল্যাটে লাইট জ্বলছে।আবার কিছু কিছু ফ্ল্যাটের লাইট অফ।মিরা আকাশের পানে তাকিয়ে আনমনে বলল,,
-“এই রাত হয়তো করো কাছে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যাওয়ার জন্য,,আবার কারো কারো জন্য বিষন্নতায় ডুবে থাকার একদম কাঙ্খিত মুহূর্ত।”
মিরা ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।চুল গুলো হাত খোপা করলো। ডায়রি টা খুলে নিলো।
লাল রঙের ভেলভেটের কাপড়ের মলাট দিয়ে তৈরি এক ডায়রি। মলাটে গোল্ডেন গ্লিটার দিয়ে সুন্দর করে লিখা –
“ মিরা”স হিডেন ফিলিং”
মিরার মুখে হাসি ফুটে।এই ডায়রি মিরা এক পেজ থেকে বিশেষ ভাবে কাস্টোমাইজ করে বানিয়ে নিয়েছে। বিশেষ মানুষকে ঘিড়ে তার অনুভূতি লিখবে তাই বিশেষ ভাবে তৈরি করিয়েছিল এই ডায়রি।মিরা ডায়রি খুলে দেখলো প্রথম পেজে লিখা,,
-““আমার প্রথম অনুভুতি আপনার প্রতি লিখলাম এই ডায়েরিতে।এই যেনো এক সুপ্ত অনুভুতি।যে অনুভুতি আপনাকে ঘিরে।যে অনুভূতির নেই কোনো নাম,নেই কোনো বাধা,যে অনুভুতি দিন দিন বেড়েই চলছে।যে অনুভূতি বর্ণনা করা বেশ কঠিন।তবুও আমার এই জমানো অনুভূতি ডায়েরিতে অতি যত্নে লিখে আবদ্ধ করলাম।””
দ্বিতীয় পাতা উল্টো মিরা।মুখে হাসি এখনো লেপ্টে আছে। দ্বিতীয় পাতায় লিখা,,
-””এতো কেনো টানেন আপনি আমায়? কি আছে আপনার মাঝে তাশফীক ভাই? কেনো বার বার আপনাকে দেখলে ভেতর কেপে উঠে আমার? কেনো আমার ছোট সত্ত্বা আপনাকে চায়? আপনাকে ছুঁয়ে দিতে চায়?কি এক যন্ত্রণা বলুন তো তাশফীক ভাই?””
মিরা এই লিখা হাত বুলালো।এই লিখাট সেই দিন লিখেছিল যে দিন তারমিনের বার্থডে ছিল। সেদিন ব্ল্যাক ক্যালার এক শার্ট পড়েছিল তাশফীক।মিরার চোখ আটকে গিয়েছিল সেদিন তাশফীকের উপর।লোকটার খোচা খোচা দাড়ি।লোকটার চোখে এতো মায়া।সেদিন মিরার বার বার মনে হচ্ছিল সে যদি একবার লোকটার গালে হাত বুলিয়ে দিতে পারতো। লোকটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারতো।কিন্তু না তা সম্ভব ছিল না।সেদিন মিরা বাসায় ফিরেই এই লিখা লিখে ছিল।যখন লিখা গুলো লিখছিল ঠিক হাত কাপছিল মিরার।মুখের মধ্যে অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হয়েছিল।
মিরা দ্বিতীয় পাতা উল্টিয়ে তৃতীয় পাতায় যায়।সে পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,,
-“”””অনুভবে আপনি,, শূন্য মস্তিষ্কে আপনি।
বেখেয়ালি পনায় আপনি,, প্রতি নিঃশ্বাসেও আপনি
আমার সবটা জুড়ে আপনি,,সব কিছুর ঊর্ধ্বে আপনি!””””
মিরা লজ্জা পেলো।আসলেও তার সব কিছু জুড়ে তাশফীক ভাই।মিরা তৃতীয় পাতা উল্টিয়ে চতুর্থ পাতায় গেলো,,,নাহ আর পড়া হলো না মিরার।বেশ রাত হয়েছে। এখন ঘুমোতে হবে তা না হলে পরে মাথা ব্যথা করবে।মিরা ডায়রি টা যত্ন করে হাতে নিলো।আকাশের পানে তাকিয়ে বলল,,
-“সে শুধু আমার।”
বলেই নিজে নিজেই হেসে উঠলো মিরা।উফ কি পাগলামি করছে সে।মনে হচ্ছে সে টিনেজ ।হা হা।মিরা পা চালিয়ে রুমে চলে এলো। ডায়রি অতি যত্নে আলমারিতে রাখলো।বেডে বসলো। তাশফীকের পানে তাকালো।হাত বাড়িয়ে তার প্রিয় পুরুষের গালে হাত রাখলো।বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো। মিরার অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করলো।হাত যেনো কাপতে লাগলো।তাশফীক নড়ে চড়ে উঠলে মিরা হাত সরিয়ে দিলো।মিরা যে হাতে তাশফীকের গাল ছুঁয়ে দিয়েছিল সেই হাতে চু”মু খেল।একবার নয় বার কয়েক চু”মু খেল।মনে মনে বলল,, উফ মিরা তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। ফের কিছু একটা ভেবে বলল,, তাশফীক ভাইয়ের প্রেমে পাগল মিরা।মিরা হেসে উঠলো। এভাবেই গভীর ঘুমের তলিয়ে গেলো মিরা
“”””””””””””””””””
কেটে গেছে আর দু দিন।আজ ভার্সিটিতে নবীন বরণ, নবীন দের বরন করা হবে।পুরো ভার্সিটি সাঁজানো হলো। মিরা ও সিমরান যখন ফার্স্ট ইয়ারে ছিল তখন ও তাঁরা শাড়ি পড়েছিল নবীন বরনের দিন। সময় কত তাড়াতাড়ি চলে যায়।তারাও কত তাড়াতাড়ি সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলো।তাই আজ আবার স্মৃতি সতেজ করতে ঠিক করা হলো সিমরান ও মিরা শাড়ি পড়বে ,তাই তো সায়মা বেগম থেকে একটা লাল রঙের শাড়ি সুন্দর করে পরে নিলো সাথে একটু সেজে নিলো মিরা ।,মিরা সাজতে পছন্দ করে।,যদিও আজ চোখে একটু কাজল ,ঠোঁটে লিস্টিক আর কপালে টিপ, ব্যাস এটুকুই দিলো ।সাজা শেষে আয়নার সামনে নিজেকে পরখ করলো মিরা , দেখতে বেশ ভালোই লাগছে, কোমর পর্যন্ত হালকা ঢেউ খেলানো চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে এলো।সায়মা বেগম বসার ঘিরে বসে চা খাচ্ছিলেন।মিরা এগিয়ে এসে বলল,,
-”দেখো মামনি তোমার মেয়ে যে কেমন লাগছে ?”
-”খুব সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে ।”
তাদের কথার মাঝে উপস্থিত হলো তাশফীক,এক পলক মিরার দিকে তাকালো বলল,,
-”এতো সাজার কি প্রয়োজন ?”
-“কেনো ?ভালো লাগছে না?”
মিরা সোজা সাপটা প্রশ্ন। তাশফীক আর চোখে তাঁকিয়ে বলল,,
-“ভালো।”
সিমরান উপস্থিত হলো সেখানে।মিরা বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলো। সায়মা বেগম গাড়ি নিতে বললেন।কিন্তু মিরা বারণ করলো।দুই বান্ধবী রিকশা করে ভার্সিটি উদ্যেশ্যে রওনা দিলো।
“””””””””””””””””
ভার্সিটি ঢুকতে ঢুকতে সিমরান বলল,,
-“আহা,, মিরা তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে,উফফ না জানি কত গুলো ছেলের চোখ আটকে গেছে তোর ওপর ।”
-“হয়েছে হয়েছে রাখতো পাম দেয়া , চল ভিতরে।”
-“আমি এতো সুন্দর করে তোর প্রশংসা করলাম এর তুই কিছু বললি না , হূহ!
-“তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে,এটাকি আমার মুখে বলতে হবে নাকি ?”
“”””””””””””
-“ভাই মেয়ে টা চলে এসেছে।”(আকাশ )
– “আমিও দেখলাম।”(তন্ময় )
– “কিরে তুই কি মেয়ে টাকে এভাবেই ছেড়ে দিবি?”(রিমা)
– “আরহানের মনে হয় মাইয়া টা রে চোখে ধরসে,,তাই না ?”(তন্ময়)
– “আহা থাম তো তোরা ,চোখে ধরে নাই রে মনে ধরসে মনে ,তাই না আরহান ?”(সারিকা )
বলেই হাসতে লাগলো সকলে মিলে ।এত ক্ষন মিলে সকলের কথা শুনছিল আরহান। আরহান,আকাশ , তন্ময় ,রিমা, ,সারিকা এই পাঁচ জনের গ্রুপ,তারা ভার্সিটির সিনিয়র ব্যাচ আর তাদের মূল কাজ হলো ফ্রেশার্সদের রগিং দেয়া ।
-“তার কর্মের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে ।বায় হুক ওর বায় কুক ।”
বলেই হাসতে লাগলো আরহান।
পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্ট মিরাকে দেখে হাসতে লাগলো , আর হাসবেই বা না কেনো ,পুরো শরীর কাদা মাটি দিয়ে লেপ্টে আছে মিরার শরীর ,কি থেকে কি হয়ে গেলো। সকলে তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে ,এর কেউ কেউ তো বলছে , সাত সকালে ভালোই মজা পাওয়া গেলো ,।
মিরা আর সিমরান মাঠের এক কোণে দাড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখছিলো, সিমরান পানির তেষ্টা মেটাতে,, সে চলে যায় কমন রুমে আর মিরা একা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।তার পাশেই ছিল কাদা মাটি ,রাতে বেশ করে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় কাদা মাটি হয়ে আছে আর সেই কাদা মাটিতে কেউ ধাক্কা দেয়া হয় মিরাকে, যদিও চারপাশ মানুষের ভিড় ছিল বলে মিরা ফেস দেখতে পায় নি তবে ,সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছে, কারণ ধাক্কা না দেয়া হলে পরে যাওয়ার কোনো কথা না।
চলবে…….
(আসসালা মুআলাইকুম কেমন আছেন সবাই? ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য।আপনাদের কাছে গল্প কেনো লাগছে তা জানাবেন।আপনারা প্লিজ নিজেদের মতামত দিবেন।সবাই একটু শেয়ার করে দিবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।ভালোবাসা নিবেন ❤️❤️)