আশিয়ানা শারমিন আক্তার বর্ষা (৫৬)

0
320

#আশিয়ানা
শারমিন আক্তার বর্ষা
(৫৬)
প্রত্যেকটি মেয়ের জন্য তার বিয়ের দিন অবশ্যই অনেক বড় একটি দিন। তাদের এই বিশেষ দিনের জন্য অনেক কিছু আয়োজন করা হয়। ২৮ বছর বয়সী তূর্ণ তার বিয়ে অনেক ধুমধাম করে করবে বলে সেরকম আয়োজন করেছে। জুবিয়া ও তূর্ণর বিয়ের ড্রেস ইতালি থেকে এসেছে। তূর্ণকে ওঁর ডিজাইনার রেডি করিয়ে দিল এবং তার পার্সোনাল মেক-আপ আর্টিস্ট মেক-আপ করছে। চোখের সামনে মিররে চোখ বুলিয়ে তূর্ণ বলল, ‘আমাকে বর বর লাগছে তো?’
সাদাফ বলল, ‘কিছুক্ষণ পর কবুল বলে একজন মেয়েকে বিয়ে করবি। তার সারা জীবনের দায়িত্ব নিবি, এসব বাচ্চামো বন্ধ করে এখন অন্তত একটু দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা কর।’
সেহরিশ রুমে এলো। সে কালো রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। তাদের সব পোশাক ইতালির বিখ্যাত ডিজাইনার তৈরি করেছেন। সেহরিশ বলল, ‘ওঁর হয়েছে?’
মেক-আপ আর্টিস্ট ইংরেজিতে বললেন, ‘চুল বাকি আছে স্যার। আর অল্প সময় দিন।’
সেহরিশ সাদাফের দিকে তাকিয়ে বিখ্যাত গায়ক দের নাম নিয়ে বলল, ‘ওঁরা চলে আসছে। আমি সেদিকে সব কিছু সেট করে আসছি। ওদের সাথে মোটামুটি কথা শেষ হয়েছে। বর কনে যখন সামনা-সামনি বসবে তখন ওঁরা গান ধরবে।’
সাদাফ বলল, ‘অতিথি সব চলে আসছেন?’
‘হ্যাঁ। বাহির থেকে যাদের আসার দরকার ছিল ওঁরা গতকালই আসছে আর দেশের অতিথিগণ আজ এসেছে।’
সাদাফ বলল, ‘বিয়ের কনের মেক-আপ কমপ্লিট হয়েছে?’
সেহরিশ ভ্রু কুঞ্চিত করল। বলল, ‘মেয়েদের খবর আমার রাখার কথা? সব খবর আমি রাখব? এখানে তোর কাজ দায়িত্ব কী?’
তূর্ণ বলল, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষের আজ বিয়ে ওঁ দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে দেখে ধন্য হচ্ছে।’
সাদাফ চোখ ছোটছোট করে বলল, ‘তুই হ্যান্ডসাম? তাহলে আমরা কী?’
‘ সব কিছু আমার সাথে কম্পেয়ার না করলে তোর হয় না?’
তূর্ণ লম্বা হাই তুলে বলল, ‘নাহ।’
তূর্ণ ওঁর ফোন খুঁজতে খুঁজতে বলল, ‘আমার ফোন কোথায়?’
‘এখন ফোনে কি কাজ?’
‘বউকে দেখব। কেমন সাজলো দেখতে হবে না।’
‘কিছুক্ষণ পর সামনে থেকেই দেখতে পাবি।’
‘কিছুক্ষণ পর যদি না বাঁচি? তাই সাধ এখনই মিটাবে হবে।’
‘তূর্ণ।’ ধমকের স্বরে বলল সেহরিশ। হঠাৎ হঠাৎ মরে যাবো কথাটা শুনতে পছন্দ করে না সেহরিশ। আপন ও কাছের কাউকে সে হারাতে চায় না। তূর্ণর স্বভাব সে অকপটে বার বার ‘যদি না বাঁচি, যদি মরে যাই’ মৃত্যুর কথা বলে। এটা তার স্বভাব। সেহরিশ শব্দ করে দরজা বন্ধ করে চলে গেল। রাগের জন্য কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

রেজিস্ট্রার করে বিয়ে হল, একজন ইমাম ছিলেন যিনি ইসলাম শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে পরিয়েছেন। এক একটা টেবিল ঘিরে মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দৃষ্টি স্টেজের উপর বর ও কনের ওপর। পাশে মিউজিক বাজছে। বিদেশি ড্রিংকসের ব্যবস্থা আছে বাহিরের অতিথিদের জন্য। সেহরিশ ওদের পাশে দাঁড়িয়ে একটা গ্লাস নিল। সহসা ওঁর দৃষ্টি গিয়ে পড়ল রোদেলার ওপর। সাদা রঙের একটা লেহেঙ্গা পরেছে রোদেলা। সেহরিশের পার্সোনাল মেক-আপ আর্টিস্ট ভীষণ ভালো মেক-আপ করে। সে মেয়েটি রোদেলা সাজিয়েছে। সেহরিশ ঠোঁট কামড়ে ধরল। হাতের গ্লাসটা টেবিলের রেখে রোদেলার কাজ লক্ষ্য করছে। রোদেলা একবার উমাইয়ার কাছে যাচ্ছে, তারপর সেখান থেকে স্টেজে উঠে জুবিয়ার সাথে ছবি তুললো। নামার পর হঠাৎ সেহরিশের মা ফারিয়া বেগম ডাকলেন, পরিবারের সবাই তাকে অনেক আপন করে নিয়েছেন। তাকে সবার বেশ পছন্দ হয়েছে। শফিকুল চৌধুরী বললেন, ‘এত ছুটাছুটি করছ তুমি কিছু খেয়েছ?’
‘না বাবা। আপনারা খেয়েছেন?’
‘কই মা, এখন তো মাত্র বিয়েটা হল, আরও কত নাচ গান বাকি আছে।’
‘আপনার ক্ষুধা লাগছে?’
‘মিথ্যা বলবো না। হ্যাঁ, অল্প অল্প লাগছে।’
রোদেলা খিলখিল করে হেসে উঠল। তারপর বলল,
‘আপনি অপেক্ষা করুন বাবা। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, এটা কিন্তু টপ সিক্রেট থাকবে। কাউকে বলবেন না।’
শফিকুল কুটিল হাসলেন। মেয়েটা তার চিন্তা ধারণার চেয়ে ভীষণ মিষ্টি ও ভালো। কথায় আছে, মেয়েদের শুধু রূপ থাকলে চলে না, রূপের সাথে গুনও থাকতে হয়।’

তূর্ণর মা ছেলে ও বউয়ের পাশে বসে অনেকগুলো ছবি তুলেছেন। এত এত বোঝানোর পর অবশেষে তার ছেলেটা বিয়ে করল। কয়েক বছরের মধ্যে একটা নাতি-নাতনি হলেই ওনার পরিবার পরিপূর্ণ হবে।

রোদেলা ফারিয়া বেগমের সাথে বসে কথা বলছে আর মাঝেমধ্যে হাসছে। বোঝা যাচ্ছে দুজনের মধ্যে খুব ভাব হয়েছে। সেহরিশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল দেখা যেন শেষ হচ্ছে না। রোদেলা ডান হাত দিয়ে চোখে আসা চুল কানের পেছনে গুঁজে রাখল। তারপর সোজা হয়ে বসতে দেখল সেহরিশ ওঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সহসা রোদেলা তটস্থ গলায় বলল, ‘মা, আমি যাই।’
‘কোথায় যাবে?’
‘উমাইয়া কোথায় আছে দেখে আসি।’
চাপেলো ইংরেজিতে বলল, ‘সেহরিশ, তোমরা দারুণ গান করো। তোমার আর সাদাফের একটা গান হওয়া উচিত।’
সেহরিশ তার কথা শুনতে পেল না। ওঁর দৃষ্টি এখনও রোদেলার দিকে। চাপেলো হঠাৎ সেহরিশের হাত ধরে বলল, ‘তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না?’
সেহরিশ নড়েচড়ে উঠল। বলল, ‘কিছু বলেছ? আসলে গানের জন্য শুনতে পাইনি।’
‘তোমরা একটা গান করো।’
‘সেটা তো সম্ভব হবে চাপেলো। আজ সারারাত ইনভাইট করা গায়কেরা গান করবে। আমরা না হয় ইতালি ফিরে একটা ইভেন্ট করব।’
‘তোমার যেমন ইচ্ছে, সেহরিশ শোন আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি।’
‘ওকে। যাও।’

সেহরিশ ওঁর স্থান পরিবর্তন করে। সহসা রোদেলার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল, ‘পালাচ্ছ কেনো?’
রোদেলা চোখ বড়বড় করে বলল, ‘হুম?’
সেহরিশ খুব কোমলভাবে রোদেলার হাতটা ধরল। তারপর ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘চলো।’
‘কোথায়?’
‘একটা প্ল্যান আছে।’
‘কি প্ল্যান?’
‘এখন বলতে পারছি না।’

রাত দুইটা বাজে। গান বাজনা শেষ করে কনে কে ওদের বাসর ঘরটার দিকে নিয়ে যায়। রোদেলা ও ইমাইয়া ধরাধরি করে জুবিয়াকে বিছানায় বসিয়ে ওঁরা রুম থেকে বের হল। সেহরিশ একটু পর তূর্ণকে নিয়ে এলো। রুমটার সামনে মানুষের ভিড় দেখে তূর্ণ সেহরিশের দিকে তাকাল। সেহরিশ বলল, ‘ওদের দাবি পূরণ করলে এমনিতে সরে যাবে।’
ওঁরা যা ডিমান্ড করেছে, তূর্ণ সেটা পূরণ করে রুমে ঢুকল। দরজা বন্ধ করার আগে সেহরিশ তূর্ণর কানে ফিসফিস করে বলল, ‘মনে আছে তো কি করতে হবে?’
তূর্ণ লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
‘হ্যাঁ। মনে আছে।’

তূর্ণ ওঁর মাথা থেকে টোপরটা খুলে রাখল। রুমের ভেতরটা বেশ সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। তূর্ণ বুক ভরে শ্বাস নিল। এরপর খাটের দিকে এগিয়ে গেল। ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানার উপর জুবিয়া ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। তূর্ণ ঠোঁট টিপে হাসল। সে কি বলবে? বুঝতে পারছে না। প্রথম বার বাসর করবে ভাবতে লজ্জা লাগছে। তূর্ণ একগাল হেসে খাটে বসল। এরপর জুবিয়ার উদ্দেশ্য বলল, ‘তুমি জানো তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিন কিন্তু তোমার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস জন্মায়নি। জন্মেছে ধীরেধীরে, সাদাফের ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর তোমার সাথে রোজ দেখা হত। আমি চিড়িয়াখানা বললে তুমি কেমন রেগে যেতে। সে থেকে ভালোলাগা শুরু হল। আমি সহজে বিয়ে করতে চাইনি। আমি বিয়ে করেছি শুনলে মেয়ে ভক্তরা যদি কষ্টে মারা যায় তাই। ওদের ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এজন্য নিজে সিঙ্গেল থেকে কষ্ট করতে রাজি ছিলাম। যখন বুঝলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকেই আমার চাই। তখন থেকে বিয়ের জন্য উতলা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার দুই ভাই আমাকে রেখে ওদের লাইন আগে ক্লিয়ার করে নিয়েছে। আমি যদি তাড়া না দিতাম তাহলে বোধহয় ৩৪ বা ৩৫ বছরেও আমার বিয়ে হত না। জুবিয়া তুমি জানো তো বাসর রাতে কি হয়?’

ঘোমটার আড়ালে জুবিয়া উপর নিচ মাথা নাড়াল। তূর্ণ আবার হাসল। এরপর আহ্লাদিত কণ্ঠে বলল,’ তাহলে এসো তোমার একটা চুমু খাই।’
তূর্ণ হাত বাড়িয়ে জুবিয়ার মাথার ঘোমটা সরিয়ে দিল। সহসা তার মুখশ্রী উন্মোচিত হল, তূর্ণ চোখ গোলগাল করে তাকিয়ে হঠাৎ বিছানা থেকে উঠতে নিয়ে উল্টে পড়ে যায়। সহসা চিৎকার করে উঠল, ‘আহহ।’
সম্পূর্ণ ঘোমটা সরিয়ে বিছানায় বসল সাদাফ। এরপর শব্দ করে হাসতে লাগল। মূহুর্তে ঘরটিতে অট্টহাসির শব্দে ভরে গেল। বারান্দা থেকে বধূসাজে জুবিয়া বেরিয়ে এলো। সে মন খুলপ হাসছে। সাদাফ বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দিল। সেহরিশ, রোদেলা ও উমাইয়া ঘরে এলো। তূর্ণর ভয় কাতুরে মূখটা দেখে সেহরিশ ঠোঁট টিপেটিপে হাসছে।
সাদাফ বিছানায় বসল। তারপর বলল,
‘বেচারা। এখন কোমায় আছে।’
তূর্ণ ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলল। ‘ছোটো ভাইয়ের সাথে ইয়ার্কি।’
সাদাফ একহাত মুখের সামনে ধরে হাসতে লাগল। তূর্ণ এবার জুবিয়ার দিকে তাকাল। করুণ কণ্ঠে বলল, ‘তুমিও।’
জুবিয়া হাসি থামিয়ে বলল,
‘এইসব বড় ভাইয়ার প্ল্যান।’
তূর্ণ ঠোঁট কামড়ে ধরল। এরপর ঘুরে সেহরিশের মুখপানে তাকাল। আচমকা সেহরিশ চোখ টিপ দিল। তূর্ণ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘অন্যায়, বড় অন্যায়, আমার উপর অবিচার করা হয়েছে। আমি বিচার চাই। আজ আমার বাসর রাত।’

চলবে…

বিঃদ্রঃ রিচেইক দেওয়া হয়নি।
❝নোট: যারা এখনও পেইজটি ফলো করোনি তাদের বলছি, জলদি জলদি ফলো করো, নয়তো তোমাদের কিন্তু বিয়ে হবে না। হুহহ….❞🤧

পেইজ লিংক- https://www.facebook.com/profile.php?id=61563673981826

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here