#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ১৬
#মেঘকন্যা
সিমরান এসেছে তার কাজিনের সাথে মার্কেটে।আজ সিমরানের মন মেজাজ দুটোই ভালো। বহু দিন পর মার্কেটে এসেছে কিন্তু তার এই মেজাজ বেশিক্ষণ ভালো রইলো না।মার্কেটে চলতি পথে ঠাস করে কারো সাথে ধাক্কা খায় সে।হাতের থেকে ব্যাগ গুলো পড়ে যায়। সিমরানের বেশ রাগ লাগে।চোখ নাই নাকি?দেখে শুনে হাঁটতে পারে না। কী সব মানুষ রে বাবা।সিমরান সামনের ব্যক্তির দিকে না তাকিয়ে ব্যাগ গুলো উঠালো।মুখে বলল,,
-”কি ভাই দেখে হাঁটতে পারেন না? আল্লাহ কি চোখ দেয় নি? নাকি চোখ দিয়ে শুধু মেয়ে দেখছিলেন?
যত আজব মানুষ।চোখ আসমানে রেখে জমিনে অন্ধ হয়ে ঘুরে।”
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে চুপ হলো সিমরান।সামনের ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে মুখ আপনা আপনি বড় হয়ে গেলো। এটা তো সেই লোক যে কিনা বাসে তার উপর জুস ফেলে দিয়েছে।আজ আবার এই লোক। উফ অসহ্য! সিমরান ফোস করে শ্বাস টেনে বলল,,
-”আপনি?আপনি এখানে কি করছেন?”
সেই ব্যক্তি সিমরানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,,
-”কি ভাষা আপনার। একদম বিশ্রী।আপনাকে কে বলল যে চোখ দিয়ে মেয়ে দেখছিলাম?মানুষের নামে আন্দাজে কথা বলতে ভালোই লাগে তাই না?আর আমি এখানে কি করছি সে প্রশ্নের উত্তর আপনাকে কেনো দিবো? এবং মার্কেটে যে কেউ আসতে পারে।
এখন মার্কেটে আসতে হলেও কি আপনার পারমিশন লাগবে নাকি?
বায় দা ওয়ে ভুল আপনার ছিল।”
সিমরান ফুঁসে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
-”একদম বেশি কথা বলবেন না।ভুল আপনার ছিল।
ধাক্কা আপনি দিয়েছেন।আমি দেখেছি।”
সেই ব্যক্তি বলল,,
-”যখন দেখেছেন যে আমি আপনাকে ধাক্কা দিচ্ছি
বা দিতে যাবো তাহলে নিজেকে চাপিয়ে কেনো নিলেন না?
আর শুনুন আমার বয়েই গেছে আপনাকে ধাক্কা দেয়ার জন্য।”
-”নিজের ভুল স্বীকার করুন!”
-”ভুল হলে স্বীকার করতাম।যেহুতু করি নি তাই কিছু বলতে পারছি না।আর শুনুন ধাক্কা কেউ কাউকে ইচ্ছা করে দেয় নি।চলতি পথে তাই লেগে গেছে ।কিন্তু সেটা তো আপনার মত মানুষের মাথায় ঢুকবে না। হুহ।”
সিমরান এবার আরো ফুঁসে উঠলো।বলল,,
-”আপনি?আমার মতো মানুষ বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?”
সেই ব্যক্তি ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,
-”আপনি যা বুঝতে পারছেন।”
-”আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন।’
-”আপনি বুঝি কম কম করছেন?”
-”আপনি কিন্তু মাথা গরম করে দিচ্ছেন।”
-”তো কি এখন ঠান্ডা পানি ঢালবো?”
পাশ থেকে কেউ দৌড়াতে দৌড়াতে এগিয়ে এলো সেই ব্যক্তির দিকে।বলল,,
-”পিয়াস তুই এখানে কি করছিস? তোকে আমি সেই কখন থেকে খুঁজেই যাচ্ছি।”
সিমরান বুঝতে পারলো সেই ব্যক্তির নাম পিয়াস।পিয়াস সিমরানের দিকে তাকিয়ে বলল,,
-”ভুল জায়গায় সময় নষ্ট করছিলাম অবশ্য সময় নষ্ট হচ্ছিলো।”
সিমরানের রাগ হলো।রাগী চাহনি দিয়ে হাটা ধরলো
পিয়াস বলল,,
-”নট ব্যাড ।এভাবে তাকালে ভালোই লাগে। কিন্তু খুব ঝগড়াটে।”
__________
-“আমি মোটেও পালাতে চাচ্ছি না।”
তাশফীককে উদ্যেশ্য করে বলল মিরা।তাশফীককে ছেড়ে নিজেকে সামলে নিলো মিরা। তাশফীক বাকা হেসে বলল,,
-”তাহলে যে উত্তর দিলে না।”
-”এর উত্তর দেয়ার মতো আমি কিছু দেখছি না।”
-”তাহলে ধরে নিবো তুমি আমাকে পছন্দ করো না।”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,,
-”আমি একথা কখন বলেছি?”
-”তাহলে তুমি কি বলতে চাচ্ছো? পছন্দ করো আমায়?”
মিরা পড়লো এবার বিপাকে।কি বলবে সে?মিরা এদিক সেদিক চেয়ে পা চালিয়ে বারান্দা থেকে বের হতে নিলেই পেছন থেকে তাশফীক মিরার হাত টেনে ধরলো।মিরার বুকের ধুকুকানি বেড়ে গেলো। মিরা পিছন ফিরে তাকালো না পর্যন্ত। তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মিরা পেছন থেকে শুনতে পেলো,,
-“”””আজ আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি মিসেস তাশফীক শেখ।
আজ আপনি পার পেয়ে যাচ্ছেন।নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন। বলা তো যায় না কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনি আমার কাছে আটকে পরেন।সব সময় তো আর ছেড়ে দিবো না।যখন জাপটে ধরবো তখন চেয়েও পালাতে পারবেন না।একেবারে জন্য আটকে যাবেন এই তাশফীক শেখের বহুডোরে।””””
বলেই মিরার হাত ছেড়ে দিলো তাশফীক।মিরা লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
রাতে খাবার টেবিল সেজে উঠেছে বিভিন্ন খাবার দিয়ে।কি রান্না করেন নি নূপুর বেগম।একদম জামাই খাবার তৈরি করেছেন।বিয়েতে জামাইকে যেভাবে দেয়া হয় ঠিক সেরকম না হলেও তার কোনো অংশে কম নয়।
এতো এতো খাবার দেখে অবাক হলো তাশফীক।কি করেছে তার শাশুরি।একা হাতে কিভাবে করলো এতো কিছু? তাশফীক একবার মিরার দিকে তাকালো।মিরা মায়ের কাণ্ড দেখছে ও হাসছে।
তাশফীক টেবিলে বসলো।নূপুর বেগম একের পর এক খাবার দিতেই থাকলেন। তাশফীক পড়লো এক বিপদে।সে এতো খাবার খাবে কি করে?খাবার খাওয়ার ও তো একটা লিমিট আছে।আজ তাশফীক শেষ।আজ তাশফীকের কোনো রেহাই নেই।কিভাবে খাবে এতো খাবার তাশফীক?
তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিরা ঠোঁট চেপে হাসছে। তাশফীকের অবস্থা দেখে মিরার জোরে হাসতে মন চাইলো কিন্তু মায়ের জন্য সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না।মিরার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করলো।সে তাসফিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,
-”আপনি গরুর মাংস নিবেন সেটা মাকে বললেই হতো।আমাকে এতো ইশারা করছেন কেনো?এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো?নিজের বাড়ি মনে করেন।”
তাশফীক বোকা বনে গেলো।এই মেয়ে কি আজ তাকে মে*রে ফেলবে নাকি?মিরা চোখ টিপুনি দিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
-”উনার তোমার হাতের মাংস অনেক পছন্দ।তুমি আর একটু বাড়িয়ে দাও না মা।।”
নূপুর বেগম খুশিতে গদ গদ হলেন। চামচ ভর্তি করে মাংস তাশফীকের প্লেটে দিলেন। তাশফীক বহুবার না করলো।কিন্তু নূপুর বেগমের একটাই কথা সব খেতে হবে কোনো কিছু রাখা যাবে না।একদম মন মতো খাওয়াবেন তাশফীক কে। তাশফীক হেসে বলল,,
-’এতো নিবো না খালামণি। তুমি এতো দিও না।আমি খেতে পারবো না। নষ্ট হবে”
-”এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?কোনো কথা নয়।সব খেতে হবে।খেতে পারবি তুই।”
তাশফীক কি করবে ভেবে পেলো না। হাস ফাঁস করতে লাগলো।কোনো উপায় দেখলো না।শেষ মেষ খুব কষ্ট করে খাবার খেলো। তাশফীকের খবর শেষে মিরা ও মিরার মা খেতে বসলো।নূপুর বেগম মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন।মিরা বলল,,
-“মায়ের হাতে খাবারের স্বাদ যেনো আরো বেড়ে যায়।উফ মা আমি তোমাকে খুব মিস করি।তোমার মতো করে কারো কাছে বায়না করতে পারি নি।মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলাম।”
নুপুর বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
-”মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়।আর বিয়ে হলে তো কথাই নেই।এক বাড়ির মেয়ে অন্য বাড়ির বউ হয়ে কি সুন্দর সব কিছু আগলে নেয়।”
মিরা মাথা দোলালো।হেসে বলল,,
-“তবে মা আমার নিজেকে খুব বেশি লাকি মনে হয়।এই যে মামনি আমাকে কি সুন্দর আগলে রাখে।বাবার আদর তো তানজিম আঙ্কেল ই দিয়েছেন। তারমিন বোনের মতো ভালোবাসে শ্রদ্ধা করে।আর কি চাই বলো?”
-“আর তাশফীক?”
-“হঠাৎ করে এমন এক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছি আমরা।সে তার দিক থেকে বেস্ট দেয়ার চেষ্টা করছে।আমিও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।”
মিরার মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,,
-”দোয়া করি যেন তোরা নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করতে পারিস।একজন অন্যজন কে আগলে রাখতে পারিস।”
চলবে???????
(আসসালা মুআলাইকুম। ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।আমাকে এতো ভালোবাসা দেয়ার জন্য।ভালোবাসা নিবেন পাঠকগণ ❤️❤️)