প্রহর_শেষে_তুমি_আমার #পর্ব ১৫ #মেঘকন্যা

0
57

#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ১৫
#মেঘকন্যা

মাত্র বসার ঘরে এক গ্লাস পানি পান করে গ্লাস টা টেবিলে রাখতে যাবে তখন অতি পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে ভেসে উঠে।মিরা চোখ তুলে তাকায়। তাশফীক পাঞ্জাবির হাটা ফোল্ড করতে করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে

উফ লোকটা এতো সুন্দর কেনো?কালো রঙের পাঞ্জাবি যেনো তার জন্যই তৈরি। চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা।ফরসা গালে খোচা খোচা দাড়ি।মাত্র গোসল করেছে বলে আরো বেশি স্নিগ্ধ লাগছে।এতো সুন্দর কি ভাবে হয় মানুষ।নাহ ছেলে মানুষের এতো সুন্দর হওয়া অন্যায়। ঘোর অন্যায়।মিরা আনমনে বলে উঠলো,,

-”এতো স্নিগ্ধ কেনো আপনি তাশফীক ভাই? যতবার তাকাই ততবার মনের কোণে অদ্ভুত অনুভুতি জাগে।যেই অনুভূতির শুরু ও শেষ আপনার মাঝেই।”

মিরা নিজের খেয়ালে ফির পেলো।দেখলো তাশফীক তোর পছন্দ করা পাঞ্জাবি পড়েছে।মিরার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।এই প্রেমিক পুরুষের দিকে তাকিয়ে সে এতো টাই বিভর ছিল যে, তাশফীক যে তার পছন্দ করা পাঞ্জাবি পড়েছে তাও মিরা খেয়াল করে নি।মিরা তাশফীকের দিকে অপলক তাকিয়ে আবার বির বির করে বলল,,

-”কালো রং যেনো আপনার মাঝে নিজের পূর্ণতা লাভ করেছে তাশফীক ভাই।”

তারমিন নিজের কনুই দিয়ে মিরাকে গুতা দিলো। তারমিন মিট মিট করে হাসছে।মিরা লজ্জা পেলো।
উফ কি যে হচ্ছে না।আর ভালো লাগে না। তাশফীক মিরাকে তারা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।মিরা সায়মা বেগম থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

“””””””””
গাড়ি চালানোর মাঝেই রাস্তার এক পাশে গাড়ি পার্ক করলো তাশফীক। দুজনই রাস্তা পার হয়ে বেকারীর সামনে গেলো।।দুজনেই বেকারীর ভেতর ঢুকলো। তাশফীক দই, মিষ্টি আরো কিছু খাবার নিলো। মিরাকে বলল তার পছন্দ মতো কিছু নিতে।মিরা তার পছন্দের আইস ক্রিম নিলো।বিল পে করে দুজনেই বেকারীর থেকে বের হলো।মিরা আগে হাঁটছে। তাসফীক হাতে থাকা ওয়ালেট পাঞ্জাবির পকেটে পুড়ে নিচ্ছে।

-“এই মিরা মন কোথায় থাকে তোমার?”

মিরা হকচকালো।নিজের বুকে ফু দিলো। আইস ক্রিম খেতে খেতে মিরার শাড়িতে একটু আইস ক্রাইম পড়ে যায়।টিস্যু দিয়ে আইস ক্রাইম মুছতে মুছতে কখন যে সামনে দিয়ে রিকশা আসছিল টা আর খেয়াল করে নি মিরা।ভাগ্যিস তাশফীক হাত টান মেরেছে তা না হলে ব্যথা পেয়ে হাত পা ছুলে যেতো।মিরা জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,

-“আমি খেয়াল করি নি ।”

তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে মিরার হাতের মুঠো নিজের হাতে নিলো।মিরা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।একবার তাশফীকের দিকে তাকালো তো একবার হাতের দিকে। খুশী তে মনের মধ্যে ময়ূর গুলো বাক বাকুম করে নেচে উঠলো। ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।বেশ অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো মনের মাঝে।মিরা নিজেও তাশফীকের হাত শক্ত করে ধরলো। তাশফীকের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো।মিরা যখন তাশফীকের দিকে তাকিয়ে তখন তাশফীক বলে উঠলো,,

-“দৃষ্টি সামনে রেখে পা চালাও। বাসায় যেয়ে আমায় দেখে নিও।”

মিরা বুঝতে পারলো কেনো তাশফীক এই কথা বলেছে।মিরা আইস ক্রিম খেতে খেতে হাটায় মন দিলো।
,,,,,,,,,
অনেক ক্ষণ আগে মিরাদের বাসায় এসে পৌঁছেছে দুজনে।মিরার মা তো সেই ব্যাস্ত।মেয়ের জামাই বিয়ের পর প্রথম এসেছে বলে কথা।নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আপ্যায়ন করবেন তিনি।তাই নিজের মতো কাজে লেগে পড়লেন।রান্না ঘরে কাজ করতে করতে পাশে তাকিয়ে দেখলেন মিরা দাড়িয়ে আছে।মিরা মায়ের দিকে এগিয়ে বলল,,

-“এতো ব্যাস্ত হয়ে যাচ্ছ কেনো মা?”

নূপুর বেগম ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলেন
-‘আরে তোর বিয়ের পর তাশফীক আজ প্রথম এসেছে।তাই একটু আদর যত্ন না করলে কি হয়?”

-“সে তো আগেও এসেছে।”

-“আগের কথা আলাদা।এখন সে এই বাড়ির জামাই।তাই যত্ন ও আদর একটু বেশি হবে।”

-“কোথায় আমি ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলবো।সময় কাটাবো।কিন্তু তুমি দেখি আরেক কাজ শুরু করেছ।”

-“বেশি কাজ নেই।হাতের কাজ শেষ করি তারপর তোর সাথে কথা বলবো।আচ্ছা বলতো মা,, তোদের মাঝে সব ঠিক আছে তো?”

-“হুম আমি।সব ঠিক আছে।আমিও বেশ ভালো আছি।তবে,,,,

নূপুর বেগম হাতের কাজ রেখে চিন্তিত গলায় বলেন,
-“তবে কি?”

মিরা ঠোঁটে। হাসি ফুটিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে এলো।মায়ের গলা জড়িয়ে বলল,,
-“তবে তোমায় মিস করি আমি।”

নূপুর বেগম মিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

-“পাগলী একটা।”

“””””””

তাশফীক মিরার রুমে এসেছে কিছুক্ষন হলো।এই রূমে তাশফীকের আগে দু একবার আশা হয়েছে।কিন্তু রুম টা ভালো করে দেখা হয় নি। তাশফীক রূমে বেডের উপর আধ শোয়া অবস্থায় ছিল।তখন রুমে প্রবেশ করলো মিরা।মিরা একটা সুন্দর হাসি দিল।মিরা বারান্দায় চলে গেলো। তাশফীক ও মিরার পেছন পেছন বারান্দায় গেলো।

সন্ধ্যা নামবে এই বুঝি।আকাশে লাল আভা দেখা দিচ্ছে।মাগরিবের আযান দিতে আর বেশি ক্ষণ সময় নেই। মৃদু বাতাস বইছে চার দিকে।এই বাতাস মন ভালো করে দেয়।বাতাসে আছে এক শান্তি। তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো মিরা ফুলে পানি দিচ্ছে।মিরার বারান্দার এক পাশ পুরোটাই বাগান বিলাস দিয়ে ছেয়ে আছে।

তাশফীক মিরাকে লক্ষ্য করলো।বাতাসে মিরার চুল গুলো দুলছে।কিছু চুপ কপালের উপর এসে পড়েছে যা মিরা বার বার কানের পিছন গুজে দিচ্ছে।মিরার ঠোঁটে হাসি লেপ্টে আছে।হাসলে মেয়েটাকে খারাপ লাগে না।হাসলে যেনো মিরার চোখ গুলো হাসে।মিরার হাসিটা তাশফীকের মনে একটু নাড়া দিলো।কই আগে তো মিরার হাসি ভালো লাগে নি।নাকি সে মন দিয়ে খেয়াল ই করে নি।খেয়াল করবে কীভাবে?আগে তো ঠিক মত কথাই হতো না।যেখানে কথা হতো না সেখানে কি করে হাসি দেখবে বা হাসি ভালো লাগবে?।আজব ব্যাপার! তাশফীক দেয়ালে পিঠ ঠেস দিয়ে বুকে হাত গুজে মিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।চোখ যেনো সরতে চাইছে না।মিরাকে দেখতে মন্দ লাগছে না।মনের মধ্যে এক ধরনের অনুভূতি কাজ করছে। দু চোখ যেনো আজ মিরার মায়ায় পড়েছে। তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে আনমনে বির বির করে বলল,,

-“””””””””গোধূলির লগ্নে তোমার ওই হাসি
কেড়েছে আমার মন!
মেয়ে তুমি কি জানো?
চাইছি আমি কেটে যাক তোমার সান্নিধ্যে বহুক্ষণ!”””””

এক দমকা হওয়া বয়ে গেলো।দুজনকে ছুঁয়ে গেলো।দমকা হাওয়ায় বারান্দার দরজা ঠাস করে লেগে গেলো। তাশফীক নিজের মধ্যে ফিরে এলো।দমকা হাওয়ায় মিরার গায়ের ওড়নায় ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো।মিরা অপ্রস্তুত হলো।

মিরা লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। তাশফীক মিরার ওড়না উঠিয়ে তার দিকে এগিয়ে ধরলো।মিরা হাস ফাঁস করতে করতে ওড়না গায়ে নিলো।লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তার মুখ খানা।কোনো রকম ওড়না জোরালো। তাশফীক তার অবস্থা বুঝতে তার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে বলল,,

-“মিরা,,

মিরা তড়াক করে চোখ তুলে তাকালো।দুজনের চোখ চোখি হলো। তাশফীক বলল,,

-“তোমার কি বাগান বিলাস পছন্দ?”

মিরা বাগান বিলাসে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
-“ভীষণ।”

তাশফীক বলল,
-“সবার পছন্দ গোলাপ ,বেলী।তোমার ভিন্ন কেনো?”

মিরা হাসি দিয়ে বলল,,
-“কারণ আমি সব দিক দিয়ে আলাদা।যেটা মানুষের পছন্দ সেটা আমার পছন্দ নয়।আর যেটা অন্যের পছন্দ নও সেটা আমার খুব বেশি পছন্দ।”

তাশফীক ঠোঁট গোল করে বলল,
-“ওহ!”

-“হুম”

তাশফীক আবার মিরার নাম ধরে ডাক দিলো,
-“মিরা….

-“জি”

-“আমাকে তো সবাই পছন্দ করে।তবে কি তুমি…..

মিরা থমকালো। তাশফীক নিজের করা প্রশ্নে নিজেই ভরকে গেলো।উফ কি হচ্ছে তার?কেনো এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করলো সে? তাশফীক আজ কোথায় হারিয়েছে যে জানে?কি সব হচ্ছে তার?না জানি মিরা এখন কি ভাববে?।মিরা মুখে কিছু বলল না।মনে মনে বলল,,

-“””””আপনি আমার পছন্দ নয় তাশফীক ভাই।আপনি,,,আপনি আমার ভালোবাসা। আমার প্রথম ভালোবাসা।
যাকে আমি অতি যত্নে,, মনের কোণে এতো বছর পুষে রেখেছি।
যাকে ঘিরে রয়েছে আমার ডায়েরির
প্রতি পাতার,, প্রতি অক্ষর জুড়ে,,,
যার অবস্থান আমার এই ছোট্ট সত্ত্বা জুড়ে।
যার বসবাস আমার এই ভাবনা জুড়ে।
আপনি আমার খুব কাছের একজন মানুষ,,
যাকে আমি খুব ,,খুব ,,,খুব করে ভালোবাসি।””””””””

কিন্তু না মিরা মুখে কিছু বলতে পারলো না। গায়ের ওড়না টা একটু টেনে দ্রুত পায়ে বারান্দা থেকে বের হতে নিলেই ওড়না পায়ে বেজে পড়ে যেতে নিলেই তাশফীক তার কোমর পেচিয়ে ধরলো।মিরা তাশফীকের শার্ট খামচে ধরলো।মিরার হার্ট দ্রুত বিট করতে লাগলো।বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম শব্দ হলো।

তাশফীকের কি হলো কে জানে।সে মিরার মুখে তাকিয়ে রইলো। তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,,,

-“কি হলো পালাতে চেয়ে?সেই তো ফিরে আমার কাছেই এলে।”

চলবে????

(আসসালামুআলাইকুম কেমন আছেন সবাই?
আজকের পর্ব কেমন লেগেছে তা কিন্তু সবাই জানাবেন। নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করবেন।ভালোবাসা নিবেন ❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here