#আশিয়ানা
#পর্ব_৫১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
____________
( কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!)
আকাশে মেঘ ডাকছে। বৃষ্টি নামার আগের মেঘের ডাক, লক্ষণ ভাল না। ঝুম বৃষ্টির পূর্বাভাস। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে। ঘড়িতে সময় দুপুর ১২:২০মিনিট। সেহরিশ বাড়ির গেট পর্যন্ত আসতেই ঝুম বর্ষণ শুরু হল। সেহরিশ বাড়িতে ঢুকল। তার সঙ্গে আছে দু’জন ফ্যাশন ডিজাইনার ও তাদের ডিজাইন করা ড্রেস। ড্রয়িংরুমের মাঝখানে রাখা দুটি স্তরের ধাতব পাইপ জামাকাপড়ের রাক, সব ধরনের আধুনিক শাড়ি রাখা আছে র্যাকে। সেহরিশ ডিজাইনারের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করল। ইশারার অর্থ বসুন।
তূর্ণ সকাল ন’টা নাগাদ সাদাফকে কল করে। রোদেলা আর সেহরিশের জোরজবরদস্তি পূর্বক বিয়ে হয়েছে শুনে তারা তখন-ই সেহরিশের বাড়ি চলে আসে। রোদেলাকে দেড় মাস যাবত দেখছে সাদাফ। রোদেলার কোনো খারাপ স্বভাব চোখে পড়েনি, সে অতন্ত্য নম্র, ভদ্র ও সুশীল। এগুলোছাড়া রোদেলা বোকাসোকা মেয়ে অল্পতেই কান্না করে বসে। সেহরিশের সঙ্গে বেশ মানানসই সে। সেহরিশের বিয়ে খবরটায় সাদাফ মনে মনে ভীষণ খুশি হল। তবে তা প্রকাশ করল না। রোদেলা প্রায় এক ঘণ্টা জুবিয়া ও উমাইয়ার সঙ্গে রুমে দরজা বন্ধ করে কথা বলে। জুবিয়া আজ পুরো দিন বাড়িতে কাটাবে এজন্য রেস্তোরাঁ থেকে ছুটি নেওয়ার উদ্দেশ্য আগে চলে যায়। সাদাফ আর উমাইয়া ঘণ্টা দুয়েক পর চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার সময় সেহরিশ একবার রোদেলার চোখের দিকে খেয়াল করে। চোখ দু’টো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে তার। নিজের মধ্যে চেপে রাখা কষ্টটা অনেক বেশি হাওয়ার কারণে বান্ধবীর সামনে চোখ দিয়ে উপচে পরে বয়ে গেছে। রোদেলার মনের অবস্থা ভাল নয়। এজন্য এক মিনিটও একা ছাড়তে চাচ্ছে না সে। সেহরিশ গম্ভীর ভঙ্গিতে রোদেলার দায়িত্ব তূর্ণর ওপর দিয়ে কোথাও চলল। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে দুজন ডিজাইনার নিয়ে এলো। সেহরিশ তাদের বসতে বলে সে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠছে। তূর্ণ তখন ধাপে ধাপে নিচে নামছে। তূর্ণ সেহরিশের থেকে দু’টো সিঁড়ি উপরে আছে। সেহরিশ তাকে দেখে চমকে উঠল। তূর্ণর বাবরি চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়িয়ে হাতের ডানপাশে ফেলে রাখা। এই স্টাইলে তূর্ণকে আরও সুদর্শন লাগছে। চোখে সানগ্লাস। ধবধবে সাদা টি-শার্ট ইন করে পরেছে। প্যান্টের রং কালো। পায়ের জুতা চকচক করছে যেন। শরীর থেকে পারফিউমের সুগন্ধী ছড়াচ্ছে।
সেহরিশ ঠাণ্ডা গলায় বলল,
‘ ঘরে বসে এত তৈরি হয়েছিস। কেন? কোথাও যাচ্ছিস?’
তূর্ণ উদাস গলায় বলল,
‘ যাব। প্ল্যান করছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি সব কেঁচাল পাকিয়ে দিল।’
সেহরিশ ভেবেচিন্তে বলল,
‘ কোথায় যাবার প্রস্তুতি চলছিল?’
তূর্ণ হাই তুলতে তুলতে বলল,
‘ ইট’স সিক্রেট।’
সেহরিশ কথা বাড়াল না। রোদেলার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল সে। বিছানার পাশে ফলের স্তূপ। রুম ফাঁকা। রোদেলার রুমে অনেকক্ষণ হলো সেহরিশ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর হেঁটে এলো বারান্দায়। ঝুম বর্ষণে চারিপাশ ঘন অন্ধকার হওয়ার কথা। তেমন কিছুই হয়নি। চারপাশ স্বচ্ছ দেখা গেল। রোদেলা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। মেয়েরা হয় কোমল হৃদয়ের তারা একটু ফুল ও বৃষ্টি প্রেমী হয়। রোদেলার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে সেহরিশ গলার স্বর মধুর করে বলল,
‘ রোদ! আমার সঙ্গে এসো।’
ক্ষণে ক্ষণে মেঘ ডাকছে। বৃষ্টি পড়ার শব্দ। সমস্যা হচ্ছে সেহরিশের ডাক রোদেলা শোনেনি। শব্দের কারণে বোধহয় মাথা দিয়ে ঢুকল না। সেহরিশ যথাসম্ভব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় চুপ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।
সেহরিশ বলল,
‘ তোমার স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি। আমার ডাক কানে তুলছো না। কেন?’
রোদেলা পুরো শরীরে ঘুরে দাঁড়াল। সেহরিশ আসছে ওঁ টের পায়নি। কোমল স্বরে বলল,
‘ আ’ম স্যরি! আপনি আসছেন। আমাকে ডেকেছেন আমি শুনতে পাইনি।’
সেহরিশ আওড়াল,
‘ কানের ডাক্তারও দেখাতে হবে দেখছি।’
রোদেলা দৃষ্টি ফেলল সেহরিশের ওপর। তার কথা শুনতে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। রোদেলা বিস্মিত কণ্ঠে শুধাল,
‘ কিছু বলেছেন?’
সেহরিশ স্বভাবিক গলায় বলল,
‘ কিছু না। আমার সঙ্গে এসো।’
রোদেলা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করল না। কোথায় যাবে? সেহরিশের আদেশ মান্য করে সে মেঝের দিকে তাকিয়ে পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। সেহরিশ ড্রয়িংরুমে আসার পর দুজন ডিজাইনার তাদের ড্রেস দেখাতে লাগল। তূর্ণ শাড়িগুলোর মধ্যে একটা পছন্দ করেছে।
তূর্ণ বলল,
‘ এটা আমি নেবো?’
প্রশ্নটা সেহরিশের উদ্দেশ্য করা হয়েছে বলে সে উত্তর দিল,
‘ তুই আজকাল শাড়ি পরিস?’
তূর্ণর মুখ লালচে হয়ে গেল। সে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। গলা নামিয়ে বলল,
‘ গিফট করব।’
সেহরিশ ভ্রু কুঞ্চিত করে ল্যাপটপ দেখছে। তূর্ণর দিকে না তাকিয়ে সে শাড়িটি নেওয়ার অনুমতি দিল। আধুনিক ডিজাইনের শাড়ি অবশ্যই সে তার মা-কে উপহার দিবে না। দেওয়ার মতন একজনই আছে জুবিয়া। সেহরিশের হাতের ডানপাশে দাঁড়ানো রোদেলা। এইখানে তার কাজ কী সে বুঝতে পারছে না। সাহস করে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। বেজায় আবার না ধমক খেয়ে বসে।
সেহরিশ বলল,
‘ বাংলাদেশের বিখ্যাত দুজন ডিজাইনের বানানো ড্রেস ও শাড়ি ওই রাকগুলোতে ঝুলানো আছে। তোমার যতগুলো ইচ্ছে নিয়ে নাও।’
রোদেলা বলল,
‘ আমার কিছু লাগবে না।’
সেহরিশ ল্যাপটপ বন্ধ করল। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রোদেলাকে আপাদমস্তকে দেখে ভারী ভারী কণ্ঠে বলল,
‘ গতকাল থেকে একই জামা পরে আছ। আর কতদিন পরে থাকার ইচ্ছে? মুখে মুখে তর্ক না করে যেটা করতে বলছি ওটা করো। যাও।’
দুজন লোক কিছুটা পিছনে চলে যান। রোদেলা দুটো রাকের সামনে দাঁড়ানো। সবগুলো শাড়ি একটার চেয়ে অন্যটা দ্বিগুণ সুন্দর। রোদেলা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তূর্ণ এগিয়ে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,
‘ আমি রুমে যাচ্ছি। শাড়িটি প্যাক করে রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।’
সেহরিশ গম্ভীর ভঙ্গিতে রোদেলার দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ বসা থেকে উঠে সে রোদেলার দিকে এগিয়ে গেল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ একটা শাড়ি চয়েস করতে এত সময় লাগে?’
প্রশ্নের জবাবে চুপ থাকল রোদেলা। সেহরিশ কয়েকটি শাড়ি উল্টেপাল্টে দেখল এরপর তার পছন্দ মতো একটা শাড়ি বাছাই করে রোদেলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এখন শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা পরো। শরীরের ক্লান্ত ভাবটা দূর হয়ে যাবে।’
দুই একটা বাদে প্রায় সবগুলো শাড়ি সেহরিশের ভাল লাগছে। সে এমাউন্ট দিয়ে দুজন লোককে বিদেয় করল। ল্যাপটপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাচ্ছে। একবার তূর্ণর রুমে উঁকি দিল সে, বিছানার ওপর বসে জুবিয়ার জন্য নেওয়া শাড়িটি দেখছে আর একগাল হেসে উঠল তূর্ণ। সেহরিশ বিড়বিড় করে বলল,
‘ বাচ্চামোগুলো আর গেল না।’
রুমের দরজা হালকা চাপিয়ে দেওয়া। ভেতর থেকে বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে রোদেলা। সে জানে না এই ডিজিটাল ধরনের দরজা কিভাবে বন্ধ করা লাগে। দেশটা সত্যি আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফোনের রিং বাজল। প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিল সেহরিশ। ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছে। তার কথা বলা শেষ হলে সেহরিশ বলতে শুরু করে। বাঁ হাতে ল্যাপটপ ধরা তবুও বাঁ-হাতে ঠেলা দিয়ে দরজা খুললো। হলুদ রঙের শাড়ি পরে রোদেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেজা চুলগুলো সামনের দিকে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছতে লাগল সে। রোদেলার ধবধবে ফর্সা পিঠে একটা কালো রঙের তিল আছে। ব্লাউজ পরা তবুও সে তিলটা দেখতে পেয়ে সেহরিশ স্তম্ভ হয়ে গেল। শরীর থেকে ঘাম ছুটলো যেন। সেহরিশ শুঁকনো ঢোক গিলে নড়েচড়ে উঠল। এত কাছ থেকে রোদেলাকে এভাবে কখনও দেখেনি ওঁ। রোদেলার রূপ দেখে সেহরিশের হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা দু’লাইন মনে পড়ল। মেয়েদের এরূপ সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা করতেই তিনি বোধহয় লিখেছিলেন,
‘ মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে
বাজিল বুকে সুখের মতো ব্যথা।’
সেহরিশ মুগ্ধ চোখে রোদেলার দিকে তাকিয়ে। সময়ের কোনো খেয়াল নাই। চুলের পানি মুছে নিয়ে চুলগুলো পিঠে বিছিয়ে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল রোদেলা। আর সঙ্গে সঙ্গে সেহরিশের চোখে চোখ পড়ল তার। বিস্মিত সেহরিশ চোখ নামিয়ে ফেলল।
রোদেলা শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আপনি?’
‘ হ্যাঁ! ফোন নিতে এসেছি।’
রোদেলা নির্নিমেষ চোখে তাকাল সেহরিশের হাতের দিকে। এরপর হতাশ গলায় বলল,
‘ আপনি তো ফোনটা কানে ধরে আছেন।’
সেহরিশ চকিত তাকিয়ে। চোখ দু’টো বন্ধ করে মাথা ঝারা দিয়ে উঠল। লজ্জিত ভাব মুখে ফুটে উঠেছে। আস্তে আস্তে কান থেকে হাত নামিয়ে নিল। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল বোধগম্য হচ্ছে না। ফোনের ওপাশের ব্যক্তি কোনো জবাব না পেয়ে আগেই কল কেটে দিছেন। সেহরিশ ফোন আড়াল করে বলল,
‘ বের হব। চেঞ্জ করতে এসেছি।’
.
.
.
অতি বিস্তৃত অরণ্য। অরণ্যেরমধ্যে খোলামেলা এক পার্ক। চারপাশ নিবিড় একেবারে নিস্তব্ধ। বৃষ্টি হয়েছে এজন্য মানুষের ভীড় নাই। তূর্ণর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে জুবিয়া। একজন তরুণ জুবিয়ার কাছে আসলো। অতি বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি নিবেন ম্যাম?’
জুবিয়া মৃদু হেসে বলল,
‘ আমার সঙ্গে আরও একজন আছে। সে পথেই আছে। উনি আসলে পরে অর্ডার দিবো।’
‘ ওকে ম্যাম।’
তরুণ ছেলেটি চলে গেল। ক্ষীণ সময় পর একসঙ্গে পাঁচটা গাড়ি দেখা গেল। গাড়িগুলো এক সারিতে থামল। দুইটা গাড়ি থেকে মানুষ নেমে মাঝখানের তৃতীয় গাড়ির দরজার দিকে ছুটে এসে দরজা খুললো। জুবিয়ার মনে হল এটা তূর্ণ! সেলেব্রিটিরা নিজেদের সেফটি বজায় রেখে এভাবে চলাচল করে। এখানে আসার পথে জুবিয়ার জন্য ফুল নিয়ে আসে তূর্ণ। এক তোড়া ফুল জুবিয়ার দিকে বাড়িয়ে নিয়ে সে একটা চেয়ারে বসল। জুবিয়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। এত দেরি হলো কেন?’
তূর্ণ বলল,
‘ দেরি হয়েছে কারণ সেহরিশের সঙ্গে থানায় যেতে হয়েছিল।’
‘ থানায় কেন?’
তূর্ণ এপর্যায়ে হালকা জুবিয়ার দিকে ঝুঁকে এলো। তারপর কথা গুছিয়ে বলল,
‘ সিরাজগঞ্জে একবার সেহরিশের ওপর অ্যাটাক হয়। সিরাজগঞ্জের এসপি কালিয়াকৈর থানায় আসছেন। ওনার সঙ্গে কথা বলতেই যাওয়া। অ্যাটাক কারা করেছিল? তারা এখনও বের করতে পারেননি।’
জুবিয়া মৃদু গলায় বলল,
‘ সেহরিশ ভাইয়ের সঙ্গে এমন আগেও হয়েছে?’
‘ হ্যাঁ।’
‘ তাহলে উনি এভাবে একা চলাফেরা করেন কেন? তার উচিত আপনার মতো বডিগার্ড রাখা।’
তূর্ণ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ আমার প্রসংশা করছ নাকি খোঁটা দিলে?’
জুবিয়া ঠোঁট মিইয়ে হাসল। তূর্ণ বাহিরের খাবার খায় না। জুবিয়া সঙ্গে থাকলে ওঁর মন রাখার জন্য অল্প খাওয়া হয়। প্রিয় মানুষের খুশির সামনে সব কষ্ট যেন হার মানে। জুবিয়া ফুলের তোড়াটা আবার হাতে নিল প্রাণভরে ঘ্রাণ নিয়ে বলল,
‘ রোদেলা কেমন আছে? ওখানে ঠিকঠাক মতো মানিয়ে নিয়েছে। তো? সেহরিশ ভাইয়ের আচরণ কেমন ওর সঙ্গে?’
তূর্ণ তৃপ্তির হাসি হাসলো।
‘ ভালো আছে।’
রাস্তার দু’ধারে খাল-বিল ভরা পানি। ঢেউয়ে সড়কে পানি উঠে আসছে। আচমকা জুবিয়া ও তূর্ণর পা ভিজিয়ে দিয়ে গেল। জুবিয়া ছোট্ট কিশোরীর মতন খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। তূর্ণ ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে হেসে জুবিয়ার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। এরপর শত জড়তা-সংকোচ ভেঙে তার হাতখানা ধরে বলল,
‘ উইল ইউ ম্যারি মি?’
‘ নাহ।’
‘ না। মানে?’
জুবিয়া তূর্ণর হাতখানা ধরে সরিয়ে দিল। সামনে একটু হেঁটে এসে বলল,
‘ এখন না।’
‘ এখন না। কখন?’
‘ পরে।’
‘ আর কত পরে? সবাই বিয়ে করে ফেলছে। শুধু আমারই বিয়ে হচ্ছে না।’
‘ এত কিসের তাড়া?’
তূর্ণ হেঁটে জুবিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। শুক্ল গলা পরিস্কার করে হাসি হাসি মুখে বলল,
‘ আমি কিন্তু ভয়ংকর রোমান্টিক। যদি তুমি থাকো রাজি বছর ঘুরতেই ডাউনলোড করব বেবি!’
জুবিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল। সহসা অস্ফুটস্বরে বলল,
‘ অসভ্য।’
হুট করে জুবিয়ার দু-গালে হাত রাখে সে। এরপর দুষ্টু হাসি হেসে তূর্ণ বলল,
‘ তুমি আমার সাপ,
আমি দুধ কলা দিয়ে তোমাকে পুষবো!’
জুবিয়া হঠাৎ তূর্ণর চিবুকে হাত রাখল। সহসা ধাক্কা দিয়ে তাকে নিজের সামনে থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিল। জুবিয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি সাপ? আপনার কখনো বিয়ে হবে না।’
তূর্ণ আহত হওয়ার নাটক করে হাত দু-খানা বুকে চাপ দিয়ে ধরে তারপর ঠাট্টা করে বলল,
‘ তুমি এই কথা মুখেও এনো না জুবিয়া। আমি যদি সিঙ্গেল মারা যাই, আমার অনাগত বাচ্চারা আমাকে অভিশাপ দিবে তো।’
চলবে….