একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা #সূচনা_পর্ব

0
311

‘বাহ! হবু স্বামীর নার্সিংহোমে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পেয়েছিস, আর কী লাগে তোর।’

অন্বিতা ফাইলটা বন্ধ করে কপাল গুটাল। সন্দিহান সুরে বলল,

‘মনে হচ্ছে আমার থেকেও তুই বেশি খুশি হচ্ছিস?’

আভার মুখে দাঁত কেলানো হাসি ছিল। তার ফকফকা হাসিটা গায়েব হয়ে গেল মুহূর্তেই। বলল,

‘তুই কি আমাকে সন্দেহ করছিস?’

অন্বিতা হেসে বলল,

‘করতেই পারি, আজকাল কাউকেই ঠিক বিশ্বাস করা যায় না; নিজের বেস্টফ্রেন্ডকেও না।’

আভার মনে দুঃখ এল। বন্ধুত্ব তাদের এক যুগ, এতদিনে এইটুকু বিশ্বাস পাওয়ার যোগ্যতাও বুঝি তার হয়নি? সে বিষন্ন সুরে বলল,

‘এটা শোনার জন্যই বেঁচে ছিলাম আমি?’

অন্বিতা ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘স্যারের কাছ থেকে একটা সাইন নিয়ে আয়।’

নাক ফুলাল আভা। বলল,

‘আমি কেন যাব?’

অন্বিতা চেয়ারে হেলান দিয়ে দু হাত বুকের উপর ভাঁজ করে বলল,

‘কারণ ফাইলটা তোমার, আমার না।’

টনক নড়ল আভার। হ্যাঁ, এই ফাইলটা তো তার’ই। সে দ্রুত চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল,

‘তা আগে বলবি না, আমার তো খেয়ালেই ছিল না।’

‘এখন দ্রুত যাও, নয়তো আজকের দিনটাও মিস যাবে।’

আভা আর সময় না খুইয়ে ছুট লাগাল প্রফেসরের কক্ষের দিকে। অন্বিতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নিল। সময় দেখল, দুইটা ত্রিশ। বাসায় ফেরা উচিত। কাল থেকে আবার ডিউটি শুরু, তাও আবার ঐ অসভ্য, অভদ্র লোকটার নার্সিংহোমে। এই ভেবেই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল তার;
যদি পারত, এই বিয়েটা কখনোই করত না সে।

অন্বিতা তার মেডিকেল কলেজের বাইরে দাঁড়ান। আভার জন্য অপেক্ষা তার। তখনই খেয়াল করে একটা কালো রঙের গাড়ি সবেই গেইট পার হয়ে ভেতরে এসেছে। অন্বিতার চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয় ততক্ষণাৎ। গাড়িটা পরিচিত তার। সে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে, ভেতরে কে আছে। কিন্তু অতদূর থেকে বোঝা দায়। কিছুটা সামনে এসে থামে গাড়িটা। অন্বিতা একটু আঁড়াল হয়ে দাঁড়ায়। দেখার চেষ্টা করে, গাড়ি থেকে কে নামে। এক পল বাদেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে, পেটানো শরীরের এক সুদর্শন পুরুষ। তাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকায় অন্বিতা। মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলে, “এই লোকটা আবার এখানে কী করছে?”

চোখের চশমা নামিয়ে ডক্টর মাহির আশহাব আশপাশটা দেখল একবার। তারপর ইশারায় গাড়ির ড্রাইভারকে বলল, গাড়িটা সাইড করে রাখার জন্য। এপ্রোনটা ডান হাতের উপর ফেলে স্টেথোস্কোপটা গলায় ঝুলিয়ে নিল অতঃপর। তারপর পা বাড়াল সামনের দিকে। চট করে আঁড়াল হয়ে দাঁড়াল অন্বিতা। মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ চলছে কয়েকখানা জরুরি প্রশ্ন তার। এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠল অযথা। অন্বিতা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বলল,

‘তোর জ্বালা একটু শান্তিতে কিছু ভাবতেও পারি না, হয়েছে তোর?’

‘হ্যাঁ, শেষ। তুই কই?’

‘জাহান্নামে।’

অন্বিতা ক্ষুব্ধ সুরে বলল। আভা বলল,

‘এই সময় জাহান্নামে কী করিস? আর তোকে না ভাইয়া একা কোথাও যেতে বারণ করেছেন?’

ক্রোধের অনলে ঘি পড়ল বুঝি, চট করে জ্বলে উঠল অন্বিতা।

‘বেশি ভাই ভাই করলে, একেবারে ধরে ভাইয়ের গলাতে ঝুলিয়ে দিব।’

‘আচ্ছা আচ্ছা, না রেগে এবার বল কোথায় আছিস?’

‘বাইরের গেইটের সামনে, দুই মিনিটের মধ্যে আয়।’

‘ওকে, আসছি।’

অন্বিতা ফোন কাটল। তারপর চারপাশটা একবার দেখে নিল সতর্ক দৃষ্টিতে। ঐ লোকটা কলেজ বিল্ডিং এর দিকে কেন গেল? তাকে আবার খুঁজতে যায়নি তো। অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা ভাবনায় মন অস্থির। এর মাঝেই আভা এসে দাঁড়াল তার পাশে। বলল,

‘চল, বাড়ি যাওয়া যাক।’

অন্বিতা সতর্কতার সহিত বলল,

‘ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা হাঁটবি, কেউ ডাকলে ভুলেও পেছন ফিরে তাকাবি না।’

আভা তার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কেন কেন? আমরা কি কোনো হরর মুভির শুট করছি?’

অন্বিতা ধমক দিয়ে উঠে বলল,

‘বাজে কথা না বলে যেটা বলেছি সেটা কর। চল।’

আভার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এল অন্বিতা। আভা কিছু একটা বলতে গিয়েও চমকে থামল। বলল,

‘ঐটা মাহির ভাইয়ার গাড়ি না?’

অন্বিতা মাথা নুইয়ে সমানে হেঁটে চলছে। আভাকে রীতিমতো টানছে সে। আভার দৃষ্টি সেই গাড়ির দিকে। আচমকা এক কন্ঠস্বর পথরোধ করল তাদের।

‘আরেহ ভাবি, আপনি?’

না চাইতেও তার চলন্ত পদযুগলে একটা কঠিন ব্রেক কষল অন্বিতা। চোখ মুখ খিঁচে চাইল লোকটির দিকে। লোকটির মুখে চমৎকার হাসি। সামনের সব কপাটি দাঁত সেই হাসিতে জ্বলজ্বল করছে। অন্বিতা কোনোরকমে হাসল। বলল,

‘জি, এটা আমার কলেজ। আর আমার কলেছে আমি থাকব, এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনার এখানে থাকাটা বড্ড অস্বাভাবিক ঠেকছে। কেন এসেছেন?’

লোকটার হাসি মজল না। বরং বাড়ল বোধ হয়। দাঁত দেখে মনে হচ্ছে ম্যাজিক পাউডারের এর মাজন। সে বলল,

‘ভাইয়ের সাথে আসছি।’

উৎসাহ নিয়ে আভা বলল,

‘বলেন কী, মাহির ভাই এসেছেন? কোথায় তিনি?’

‘কলেজের ভেতরে।’

‘যান যান, ডেকে আনুন গিয়ে। উনার বউকে এসে দেখে যেতে বলুন।’

অন্বিতা আভার হাতে চিমটি কাটল জোরে। আচমকা চিমটিতে “উঁহ” করে শব্দ করে উঠল আভা। অন্বিতা কর্কশ স্বরে বলল,

‘সবসময় আগ বাড়িয়ে তুই এত কথা বলিস কেন?’

তারপর সে মাহিরের ড্রাইভারের দিকে চেয়ে বলল,

‘ভাই শুনুন, আপনার এখন কাউকে ডাকতে হবে না। আর উনি বোধ হয় কোনো কাজে এখানে এসেছেন, ডাকলে আবার রেগে যেতে পারেন। তাই অযথা দরকার নেই এসবের। আমরা বরং যাই।’

‘না না, ভাবি, ভাই তো আপনার সাথেই দেখা করতে আসছেন। আর আপনাকে খুঁজতেই ভেতরে গেছেন।’

ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে যায় অন্বিতার মুখখানা। অথচ দ্বিগুণ উৎসাহে ঝলমলিয়ে উঠে আভার মুখ। সে বলল,

‘দেখেছিস, ভাইয়ার তোর প্রতি কী টান! কালকে ভাইয়ার নার্সিংহোমে জয়েন করছিস, তাও উনার তোকে দেখার কত তাড়া।’

অন্বিতা কটমট করে আভার দিকে তাকায়। আভা ঠোঁট চেপে হাসে। এই মেয়েকে রাগাতে বেশ লাগে তার।

নিজেকে সংযত করে অন্বিতা বলল,

‘বাসায় আমার আজ অনেক কাজ, ভাইয়া। আপনার ভাইকে বলবেন, আমার সাথে দেখা করার খুব প্রয়োজন হলে উনি যেন আমার বাসায় চলে যান, কেমন? আসছি, আল্লাহ হাফেজ।’

________

আসিয়া বেগম দরজা খুলতেই ক্লান্ত ভঙিতে নিজের রুমের দিকে চলে যায় অন্বিতা। আসিয়া বেগম দরজাটা আটকে দিয়ে তার জন্য খাবার বাড়তে যান। রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করেন,

‘কলেজের সব কাজ শেষ হয়েছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা বেশ, গোসল করে আয় তবে।’

আলমারি খুলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গেল অন্বিতা। ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইল অবাক চোখে। তার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুখ। চোখের নিচের গর্তটা স্পষ্ট। মুখেও ব্রণের দাগের কমতি নেই। কী এলোমেলো শুষ্ক চুল, যেন একখানা পাখির বাসা। অন্বিতা হেসে ফেলল। তাকে যে কুৎসিত লাগছে খুব। অথচ একসময় সেও ছিল একেবারে গোছানো, পরিপাটি একটা মেয়ে। চুলটা কখনো এদিক থেকে ওদিক হতো না। ঠোঁটটা খালি থাকতো না কখনো। কত যে কাজলে চোখ রাঙিয়েছে, সেসব তো আজকাল ভুলেই বসেছে। অথচ সেই সুন্দর মেয়েটিকে এত এত অবজ্ঞা, অপমান করে সে আজ এই কুৎসিত মেয়েটার পেছনে পড়েছে। কী অদ্ভুত! অন্বিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অতঃপর শাওয়ার ছেড়ে ভিজতে আরম্ভ করল সে।

গোসল সেরে বেরিয়ে আসতেই ফোনটা তার টুং করে উঠল। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতেই ফোনটা হাতি নিল সে। আনসেইভ অথচ পরিচিত নাম্বার থেকে একটা মেসেছ, “আমি তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছি জানার পরেও তুমি আমাকে উপেক্ষা করে চলে এলে কী করে? সিনিয়রের সাথে এত বড়ো বেয়াদবি করার সাহস হয় কী করে তোমার?”

চলবে….

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
#সূচনা_পর্ব

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here