একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ১২।

0
60

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১২।

অন্বিতার কপালে ভাঁজ পড়েছে। চোখের দৃষ্টি হয়েছে তীক্ষ্ণ। কেন লোকটা এমন লুকোচুরি খেলছে? কেন ধরা দিচ্ছে না স্পষ্টতার সাথে?

অন্বিতা একটু কাছাকাছি এগিয়ে গেল। তার বারান্দা থেকে অপর পাশের বারান্দার খুব একটা দূরত্ব নয়। তিন ফুটের মতো। সেই অজ্ঞাত ছেলেটি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে। সন্ধ্যার আবছায়া বাতাবরণে বোঝার জো নেই সে কী দেখছে। কপালের ভাঁজ সোজা করল অন্বিতা। নিজেকে ধাতস্ত করল কিছুটা। গলার স্বর খানিকটা চওড়া করে বলল,

‘আপনি কি আমাকে দেখছেন?’

উত্তর এল না কোনো। অন্বিতা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হলো। চলে আসার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই বাতাসে ভেসে এল এক পুরুষালী ভারী স্বর,

‘আপনার কেন মনে হলো যে, আমি আপনাকে দেখছি?’

ঘুরে তাকাল অন্বিতা। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল। বলল,

‘আপনার ভাবমূর্তি দেখে আমার মনে হচ্ছে যে, আপনি আমাকেই দেখছেন।’

‘আপনার মনে হওয়া সঠিক নাও হতে পারে?’

‘তবে কী দেখছেন?’

‘এই যে, সন্ধ্যার প্রকৃতি।’

‘আপনার বারান্দা থেকে আমার বারান্দা ব্যতিত আর কিছুই দেখা যাওয়ার কথা না, অযথা মিথ্যে বলবেন না।’

ছেলেটা হাসল। বলল,

‘বাহ, আপনার আন্দাজ তো দারুণ।’

‘এবার বলুন কেন দেখছিলেন?’

‘আপনার বারান্দাই দেখছিলাম, আপনি এসে আমার দৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন।’

অন্বিতা বিরক্তির সুরে বলল,

‘আমার বারান্দাতে দেখার মতো কিছু নেই। বাই দ্য ওয়ে, আজ গান করবেন না?’

‘আপনি শুনতে চাইলে করতে পারি।’

‘আপনি কি রোজ আমাকে শোনানোর জন্য গান করেন?’

‘বলতে পারেন, তেমন কিছুই।’

অন্বিতা কপাল কুঁচকাল। বলল,

‘কেন? আমাকে শুনিয়ে ইমপ্রেস করতে চান?’

ছেলেটা হাসল ফের। বলল,

‘আপনাকে ইমপ্রেস করে আমার লাভ? আপনি তো আর আমাকে বিয়ে করবেন না।’

হতভম্ব হলো অন্বিতা। ছেলেটা তো ভারী অসভ্য। প্রথম কথোপকথনে কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলে না-কি?

‘আমাকে অসভ্য ভাবছেন?’

‘তারমানে আপনি ইচ্ছে করে অসভ্যতামো করছেন?’

‘না, আসলে আমি এমনই।’

‘বিকেলে বোর্ডের লেখাটা আপনি লিখেছিলেন?’

‘কোন লেখাটা?’

‘না বোঝার ভান করবেন না।’

‘জি, আমিই লিখেছি। তবে আপনাকে না।’

‘আরো একটা মিথ্যে বললেন।’

‘মিথ্যে কেন হবে?’

‘তবে কাকে লিখেছেন?’

‘আপনার কি বিয়ে হতে চলছে?’

‘জি।’

ছেলেটা হেসে রগড় সুরে বলল,

‘তো আপনার যে বিয়ে, সেটা আমি কী করে জানব?’

‘আপনি ইচ্ছে করে করছেন সব।’

‘কী করছি?’

‘এই যে আমাকে ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলছেন? আপনি দিনের বেলায় বারান্দায় কেন আসেন না?’

‘আসি তো।’

‘এত মিথ্যে কেউ কী করে বলে? আমি আপনাকে একদিনও দেখিনি।’

‘আপনি দেখেন না মানে এই নয় যে, আমি বারান্দায় আসি না। আমি যখন বারান্দায় আসি আপনি তখন বারান্দায় আসেন না, তাই দেখতেও পান না।’

‘ঠিক আছে, এখন আলো জ্বালান। আমি আপনাকে দেখব।’

‘বিয়ের আগে নিজের হবু স্বামী ব্যতিত অন্য কাউকে দেখতে নেই।’

‘মজা করবেন না একদম। আমার এসব পছন্দ হচ্ছে না। আপনি এসব ধোঁয়াশা মিটিয়ে আমার সামনে আসুন, প্লিজ।’

‘কিছু মানুষ আঁড়ালে থাকাই শ্রেয়। হয়তো সামনে এলে আর তাকাতে ইচ্ছে করবে না।’

খানিকটা রেগে গেল অন্বিতা। বলল,

‘বেশ তবে, আর বারান্দায় আসবেন না। গান গাইবেন না একদম।’

‘সেকি, তাহলে আপনি আপনার কফি উপভোগ করবেন কী করে?’

অন্বিতা বিরক্ত হয়ে বলল,

‘দরকার পড়লে কফি খাওয়া বন্ধ করে দিব।’

ছেলেটা হেসে বলল,

‘আপনি ভীষণ রাগী, আপনার হবু স্বামীর কপাল পুড়েছে বোধ হয়।’

‘আমার হবু স্বামীকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।’

অন্বিতা রাগ দেখিয়ে চলে আসতে নেয়। তখনই এক সুর গানে আসে তার,

“সুন্দরী গো দোহাই দোহাই
মান করো না..
আজ নিশিথে কাছে থাকো
না বলো না…
সুন্দরী গো দোহাই দোহাই
মান করো না”

চোয়াল শক্ত করে পেছন ফিরে চাইল অন্বিতা। ছেলেটা শব্দ করে হাসল। বলল,

‘চিন্তা করবেন না, আপনার জন্য গাইনি।’

দাঁতে দাঁত চেপে অন্বিতা বলল,

‘আমি কিন্তু আপনার ফ্ল্যাটের মালিককে বিচার দিব।’

‘আহা, এত নরম সুরে বললে কেউ ভয় পাবে, বলুন?’

জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সংযত করল অন্বিতা। ছেলেটার উপর অযথাই খুব রাগ হচ্ছে তার। বলল,

‘আজ ওয়ার্নিং দিচ্ছি। পরেরবার ডিরেক্ট কমপ্লেইন করব।’

‘ঠিক আছে, আমি আপনার কমপ্লেইনের অপেক্ষায় রইলাম।’

অন্বিতা রুমে চলে আসে। এই ছেলেটা মারাত্মক অসভ্য, কয়েক মুহুর্তের ভেতরেই তার মাথা গরম করে দিয়েছে। নিশ্চিয় সদ্য ভার্সিটিতে উঠা কোনো চটপটে যুবক। কথা শুনেই বোঝা যায়, কতটা অপরিপক্ক।

পরদিন সকাল সকাল’ই নার্সিংহোমে চলে আসে অন্বিতা। নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। আজ মাহির এখনো আসেনি। সকালে আসায় খুব একটা চাপও নেই তার। তাই ভাবল, বসে না থেকে নার্সিংহোমটা একটু ঘুরে দেখা যাক।

এই ভেবেই হাঁটা ধরল সে। “অপরাজিতা নার্সিংহোম” এই নামটা অন্বিতাই পছন্দ করেছিল। তখন মাহির সবেই তার ইন্টার্ন শেষ করেছে। তার আগ থেকেই চলছিল তার এই নার্সিংহোমের কাজ। বলেছিল, উদ্বোধনের দিন ফিতাটা তাকে দিয়েই কাটাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। তার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব।

অন্বিতা করিডোর পার হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। নার্সিংহোমের প্রতিটা করিডোরে নয়নতারা গাছের উপস্থিত লক্ষণীয়। নয়নতারা অন্বিতার প্রিয় ফুল। সে বারান্দা থেকে দেখল, মাহিরের গাড়িটা আসছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফিরে এল নিজের ডেস্কে আবার।

কিছুক্ষণ বাদে মাহিরের সহকারী এল। বলল,

‘স্যার, ডাকছে আপনাকে?’

অন্বিতা না তাকিয়েই উঠে দাঁড়াতেই সহকারী বলল,

‘আপনাকে না, ম্যাডাম। উনাকে।’

অন্বিতা দেখল, তমা নামের মেয়েটা। তার রংচটা ঠোঁটে চওড়া হাসি। বসে পড়ল অন্বিতা। মেয়েটার এত খুশি দেখে বিরক্ত হলো সে।

তমা ফিরে এসেছে। তবে যাওয়ার সময়ের সেই চওড়া হাসিটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। বরং আষাঢ়ী মেঘে যেন ছেয়ে গেছে মুখটা। অন্বিতা তার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কী হয়েছে?’

‘ঐ লোকটা ভীষণ খারাপ। দেখতে একেবারে চকলেট তো কী হয়েছে, মুখটা একদম করলার মতো তিতা।’

ঠোঁট চেপে হাসি আটকাল অন্বিতা। বলল,

‘কেন, বকেছে তোমায়?’

‘হ্যাঁ, আমি কালকে রক্ত নেওয়ার সময় রগ খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে তিন চারবার ভুল জায়গায় সুঁই দিয়ে ফেলেছি; সেটার খবরও উনার কাছে চলে গিয়েছে কী করে বুঝিনা। এখন সেইজন্যই বকেছেন।’

‘থাক কষ্ট পেও না। ভুল করলে সিনিয়র’রা বকবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর আমরা তো উনার আন্ডারেই কাজ করছি, তাই না?’

‘হু।’

মন খারাপ করে ডেস্কে বসল তমা। তার এই হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং ডাক্তারকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন ভেঙে গেল আজকে একটু বকা শুনেই।

একজন ডাক্তার এসে অন্বিতাকে ডেকে নিয়ে তার ডেস্কে বসাল। বলল,

‘আপনি এই দিকটা আধ ঘন্টার জন্য সামলান, আমার বাসায় যাওয়াটা এখন খুব জরুরি।’

অন্বিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ডাক্তার দ্রুত চলে গেল সেখান থেকে। অন্বিতা পড়েছে বিপদে। ইন্টার্ন ডাক্তার সে, হুট করেই একটা দায়িত্ব দিয়ে দিলেই তো আর করতে পারবে না। সংকোচ নিয়ে তাও বসে রইল সে। এরই মাঝে সেই কেবিনে ছুটে এল দুজন মহিলা। তার মধ্যে একজন প্রেগন্যান্ট। যিনি প্রেগন্যান্ট তিনি চিৎকার করে কাঁদছেন। পাশের মহিলা অস্থির সুরে বলতে লাগলেন,

‘ম্যাডাম, ম্যাডাম, আমার মাইডারে দেখেন। ওর তো ডেইট আরো পরে, কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যথায় চিৎকার দেওয়া শুরু করছে। আপনি কিছু একটা করেন ম্যাডাম।’

অন্বিতা দ্রুত উঠে দাঁড়াল। বলল,

‘উনাকে বেডে শুইয়ে দিন। আমি ডাক্তার আনছি।’

‘ম্যাডাম, আপনিও তো ডাক্তার; আপনি দেখেন না।’

‘আমি গাইনি ডিপার্টমেন্টের না। আপনি উনাকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করুন, আমি এক্ষুনি আসছি।’

এই বলে অন্বিতা দ্রুত সেই কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এল। এখন গাইনি ডিপার্টমেন্ট কোনটা সেটাই বুঝতে পারছে না সে। তাই দ্রুত মাহিরের কেবিনে যায়। মাহির তখন পেশেন্ট দেখায় ব্যস্ত। আচমকা কেবিনে ঢুকে পড়ায় মাহির ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পেশেন্ট সামনে বলে খানিকটা রাগি গলায় বলে,

‘এভাবে হুট করে ঢুকে পড়া কোন ধরনের অভদ্রতা?’

অন্বিতা থতমত খেল। উদ্বিগ্ন সুরে বলল,

‘স্যার, একজন গাইনোকোলজিস্ট দরকার। এগারো নাম্বার কেবিনে একজন পেশেন্ট এসেছেন।’

‘এগারো নাম্বার কেবিনের ডাক্তার কোথায়? উনিও তো গাইনোকোলজিস্ট।’

অন্বিতা পড়ল বিপাকে। এবার সে কী করে বলবে যে, তাকে কেবিনে বসিয়ে ডাক্তার তার বাসায় গিয়েছে।

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here