একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ২৮।

0
144

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৮।

অমিত অয়নকে ফের জোর করে চেয়ারে বসাল। অয়ন চোখ রাঙিয়ে ছাড়তে বলছে তাকে। কিন্তু সেসবে পাত্তা দেওয়ার পাত্র অমিত নয়। বরং সে বসল পাশের চেয়ারটায়। দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,

‘বন্ধু আমার একদম নিজের খেয়াল রাখে না। বুকে ব্যথা কিন্তু অনেক আগ থেকে। কত বলেছি, ডাক্তার দেখা। কিন্তু শুনলে তো।’

অন্বিতা এক পল ভেবে বলল,

‘একটা ইসিজি করান। তারপর রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে, ব্যথার কারণ।’

তপ্ত শ্বাস ছাড়ল অয়ন। বলল,

‘এই ব্যথার কারণ ইসিজি’তেও ধরা পড়বে না।’

অন্বিতা কুঞ্চিত কপালে চাইল। বলল,

‘কেন? ধরা পড়বে না কেন?’

‘কারণ আমারও জানা নেই। মনে হলো তাই বললাম।’

‘এক কাজ করুন, মাহির স্যারকে গিয়ে দেখিয়ে আসুন। উনি এর ঠিক একটা সমাধান বের করতে পারবেন।’

অয়ন বিরস মুখে বলল,

‘অন্য কোনো দিন। আজ উঠি।’

অয়ন উঠতেই অন্বিতা বলল,

‘সব ব্যাপারে খাম খেয়ালি করবেন না। সময় থাকতে সচেতন হোন, নয়তো পরে আফসোস করতে হবে।’

অয়ন নিরুত্তাপ, নির্বাক চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর কাষ্ঠ হেসে বলল,

‘ঠিক আছে।’

অমিতকে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। হাসপাতাল থেকে বের হতেই অমিত অয়নের বাহুতে চাপড় মেরে বলল,

‘তোর মতো আহাম্মক আমি দু’টো দেখিনি।’

অয়ন সরোষে বলল,

‘তোর মতো নিমকহারামও আমি দু’টো দেখিনি।’

অমিত অন্যদিকে চেয়ে বলল,

‘এইজন্যই কাউকে সাহায্য করতে নেই। আজকাল তো ভালো মানুষের দাম’ই নেই।’

‘ভাল লাগছে না। চল চা খেয়ে আসি।’

______________

মাহির বাড়ি ফিরে দেখল জিনিয়া বেগম আর শশী তাদের বাড়িতে। হেসে এগিয়ে এল মাহির। বলল,

‘তোমরা কখন এলে?’

জিনিয়া বেগম প্রসন্ন গলায় বললেন,

‘এই তো কিছুক্ষণ আগে।’

‘আচ্ছা, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে কথা বলছি।’

সে রুমের দিকে পা চালাল। শশী মা’র দিকে চেয়ে সন্তপ্ত গলায় বলল,

‘আগে বলবে ওর ঐ সহকারীকে কাজ থেকে ছাড়াতে। ঐ লোকটা আস্ত একটা বেয়াদব।’

‘ঠিক আছে, বলব আমি।’

খেতে বসেছে মাহির। জিনিয়া বেগম তাকে বেড়ে খাওয়াচ্ছেন। মাহির জিজ্ঞেস করল,

‘দাদু খেয়েছেন?’

‘হ্যাঁ, খেয়েছে।’

‘তোমরা খেয়েছ?’

‘হ্যাঁ বাবা, খেয়েছি।’

শশী বসার ঘরের সোফায় বসা। ডাইনিং’টা মুখোমুখি। সে মায়ের দিকে চেয়ে ইশারায় তাকে কথাখানা উগলাতে বলল। জিনিয়া বেগম চোখ বুজে আশ্বাস দিল তাকে। অতঃপর নরম গলায় বলল,

‘মাহির বাবা, নার্সিংহোমে তোমার একজন সহকারী আছে না?’

মাহির এক পলক চেয়ে বলল,

‘হ্যাঁ, কেন?’

‘ঐ ছেলেটা না কিন্তু ভীষণ অভদ্র। শশীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।’

মাহির খাওয়া থামাল। একবার ফিরে চাইল সোফায় বসা শশীর দিকে। শশী আলাভোলা মুখ করে বসে আছে। মাহির ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘তাইভিদ শশীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?’

শশী এবার এগিয়ে আসে। অসহায় সুরে বলে,

‘হ্যাঁ, তাই তো বলছি। কালও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, আজও। আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, আমি যেন আর নার্সিংহোমে না যাই।’

মাহিরের কপালের ভাঁজ দৃঢ় হয়। এই নার্সিংহোমে আসার পর থেকেই এই তাইভিদ তার সহকারী। যথেষ্ট নম্র, ভদ্র, লক্ষী টাইপ ছেলে। তার আদেশ নিষেধ মাথা পেতে গ্রহণ করেছে সব। সে শশীর সাথে এমন আচরণ করেছে, সেটা বিশ্বাসে ঠেকছে না। সে শশীর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘তুই সত্যি বলছিস, তাইভিদ তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?’

শশী মাথা নুইয়ে অসহায় সুরে বলল,

‘তোমার কি আমার কথা বিশ্বাস হয় না? তোমাকে মিথ্যে বলে আমার কী লাভ? ঐ ছেলেটার তাকানোও আমার কাছে সুবিধার লাগেনি। কেমন অদ্ভুত যেন।’

মাহির চিন্তায় পড়ল। এতদিন চেনে ছেলেটাকে। হাসপাতালের সবাই তাকে পছন্দ করে। কেউ কোনোদিন কোনো অভিযোগ তুলেনি। আর আজ হুট করেই শশী ছেলেটার দিকে এভাবে আঙ্গুল তুলছে। মাহির তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

‘বেশ, আমি কালকে ওর সাথে কথা বলব।’

‘উনাকে একদম আর তোমার কাজে রাখবে না। আজকে আমার সাথে করেছে কালকে অন্য মেয়ের সাথেও করবে। আর অন্বিতাও তো সেখানে কাজ করে। তাই আমার মনে হয়, তোমার আগ থেকেই সাবধান হওয়া উচিত।’

শশী জানে কোন পয়েন্টে কথা বললে মাহিরকে আটকানো যাবে। সেইজন্যই সে অন্বিতার প্রসঙ্গ এনেছে। মাহির ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘চিন্তা করিস না, আমি ব্যবস্থা নিব।’

শশী হেসে বলল,

‘থ্যাঙ্কস।’

________________

পরদিন মাহির তৈরি হয়ে বাইরে আসতেই শশী সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে এল। মাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘আমিও যাব।’

মাহির কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করে,

‘কোথায় যাবি?’

‘তোমার সাথে নার্সিংহোমে।’

‘কেন?’

‘ঐ ছেলেটাকে কেমন জব্দ করো, দেখতে হবে না। তাছাড়া ও যদি কিছু স্বীকার করতে না চায়, তখন তো আমাকেই বলতে হবে সব।’

মাহির সোফায় বসে জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল,

‘প্রয়োজন নেই। আমি যাচ্ছি তো কথা বলতে।’

‘তাও। যাই না, প্লিজ। আমার সামনে অন্তত ভয়ে সে কিছু লুকাতে পারবে না।’

জিনিয়া বেগম তখন সেখানে এসে বললেন,

‘হ্যাঁ মাহির, আমারও মনে হয় শশীকে নিয়ে যাওয়া উচিত। ও সামনে থাকলে ছেলেটা সব সত্যি বলতে বাধ্য হবে।’

ফুপির মুখের উপর আর বারণ করতে পারল না মাহির। খানিকটা বিরক্ত প্রকাশ করে বলল,

‘ঠিক আছে, গাড়িতে গিয়ে উঠ।’

শশী ছুটে গিয়ে গাড়িতে চড়ে বসল। তার পাশের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল মাহির।

মাহির আর শশী গাড়ি থেকে নামতেই দেখে অন্য একটা গাড়ি থেকে অন্বিতা নামছে। তাকে এত দামি গাড়ি থেকে নামতে দেখে অবাক হয় শশী। ভাবে, এই মেয়ে হঠাৎ এত বড়োলোক হলো কী করে। ততক্ষণাৎ গাড়িটা ভালো ভাবে পরখ করে দেখল, এটা তো মাহিরের’ই গাড়ি। মুখটা ক্রোধে লাল হলো তার। বিয়ের আগেই বউকে গাড়ি দিয়ে বসে আছে, অসহ্য!

অন্বিতা তাদের খেয়াল না করেই চলে যাচ্ছিল। শশী গিয়ে তার পথ আটকায়। হেসে বলে,

‘গুড মর্নিং, অন্বিতা।’

আজও তাকে এখানে দেখে মেজাজ হারাল অন্বিতা। কিন্তু তা চেপে গিয়ে প্রসন্ন হেসে বলল,

‘গুড মর্নিং। কোনো প্রয়োজনে এসেছিলেন?’

শশী হেসে বলে,

‘হ্যাঁ, মাহির নিয়ে এসেছে।’

অন্বিতা সামনে চেয়েই দেখে মাহির আসছে। অন্বিতা আর শশীকে একসাথে দেখে মাহির জোরপূর্বক হাসে। অন্বিতা কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে বলে,

‘ওহ আচ্ছা, যান তবে। আমিও যাই।’

এই বলে হাঁটা ধরে সে। মাহিরের আর বুঝতে বাকি রইল না, মহারাণী চটেছেন। সে তার কেবিনে গিয়ে বসে। শশী তার পেছন পেছন আসে। দূর থেকে কফী হাতে সেই দৃশ্য দেখে তাইভিদ। কপাল গুটাল সে। এই মেয়ে প্রতিদিন এখানে কেন আসে। গরম কফিটুকু ধুমধাম গিলে অন্বিতার কাছে যায়। সরাসরি তার ডেস্কে গিয়ে বলে,

‘ম্যাডাম, কিছু মনে করবেন না। তবে ঐ শশী মেয়েটাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।’

অন্বিতা হেসে ড্রয়ার খুলে কলম খুঁজতে খুঁজতে বলল,

‘আপনার আমার সুবিধা অসুবিধা দিয়ে কি কারোর কিছু যায় আসবে? আসবে না তো। তাই এসব মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই।’

তাইভিদ হতভম্ব হয়ে বলে,

‘কী বলছেন? মেয়ে হয়ে আপনার হিংসে হচ্ছে না?’

অন্বিতা মৃদু হেসে বলল,

‘হিংসার চেয়েও আপনার স্যারের আমার প্রতি বিশ্বাসের মাত্রাটা বেশি। আমি জানি, এমন হাজারও শশী এসেও আমার জায়গা কখনও নিতে পারবে না।’

তাইভিদের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। সে প্রসন্ন গলায় বলে,

‘চমৎকার। স্যারের সৌভাগ্য যে উনি আপনাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন।’

অন্বিতা হেসে বলল,

‘আমারও।’

তাইভিদ পুনরায় কিছু বলার আগেই একজন ওয়ার্ড বয় এসে তাকে বলল,

‘স্যার, আপনাকে মাহির স্যার উনার কেবিনে ডাকছেন।’

‘তুমি যাও, আমি আসছি।’

তারপথ সে অন্বিতার দিকে চেয়ে বলে,

‘আসছি, ম্যাডাম।’

চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here