#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#সারপ্রাইজ_পর্ব
#লেখনীতে_suraiya_rafa
🚫(কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য)
🚫( আজকের পার্ট সবার জন্য নয়, যাদের পসেসিভ রোম্যান্স কিংবা ডমিনেটিং লাভ পছন্দ নয়, তারা আজকের পার্টটা এরিয়ে যাবেন দয়াকরে)
বাইরে হালকা হালকা তুষার পাত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই রোদের দেখা নেই,চোখের সামনে কাঁচের দেওয়াল গলিয়ে পেজা তুলোর মেঘের মতোন ঝরে পড়ছে শুভ্র বরফ কনা, বরফের আস্তরণে পুরো শহরতলী শুভ্রতায় ছেয়ে গিয়েছে, দেখলেই কেমন প্রান জুড়িয়ে আসে।
গেইটের সামনে চেরিব্লোসম গাছ দু’টো ন্যাড়া হয়ে পরে আছে,রঙিন ফুল তো দূরে থাক, তরতাজা সবুজ পাতার ছিটেফোঁটাও নেই তাতে, যতদূর চোখ যায় শুধু বরফের আস্তরণ।
ক্রীতিকের মাস্টার বেডরুমের বিশালাকৃতির জানালাটার পর্দা সরিয়ে বাইরের ফ্রন্ট ইয়ার্ডটায় একঝলক চোখ বুলিয়ে নিলো অরু, অতঃপর হাতে এক কাপ কফি নিয়ে, ফায়ারপ্লেসের পাস ঘেঁষে বসে পরলো গিয়ে জানালার মুখোমুখি হয়ে।
আজ সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে ক্রীতিক, কি নাকি ক্লায়েন্ট ফ্লায়েন্ট এর সাথে দরকারি মিটিং রয়েছে, না গেলেই নয়।নয়তো অরুর বাবু পেটে আসার পর থেকে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া স্ব’শরীরে অফিসে যায়না সে। বাড়িতে বসেই নিজ দ্বায়িত্ব গুলো বেশ নৈপুণ্যতার সহিত সামলে নেয়। যদি কখনো প্রয়োজন পরে তো প্রত্যয়ই বাড়ি বয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সারাজীবন একা থাকতে পছন্দ করা ক্রীতিক গত দু’মাস ধরে দু’জন সার্ভেন্ট ও রেখেছে বাড়িতে, অরুর আন্ডার এইজ প্রেগন্যান্সি, ডক্টর বলেছে খুব সাবধানে থাকতে, মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা ও প্রকট, তাই রান্না বান্না থেকে ঘরের যাবতীয় কাজ, সবকিছু সার্ভেন্ট দ্বারাই করানো হয়। অনুর মিসক্যারেজের কথা চিন্তা করে অরু নিজেও বেশ ভয়ে থাকে এসব নিয়ে, তাই মন চাইলেও খুব বেশি একটা ধকল দেয় না নিজের শরীরকে। অবশ্য এই ক্রুটিপূর্ণ প্রেগন্যান্সির পেছনে মোক্ষম কারন রয়েছে। কারণটা আর কেউ নয় , স্বয়ং মাথা গরম, রগ চটা, বেপরোয়া ক্রীতিক নিজেই।
ক্রুটিপূর্ণ প্রেগন্যান্সির কথা ভাবতে গিয়েই ছয়মাস ধরে বেড়ে ওঠা নিজের ছোট্ট উদরে আলতো হাত ছোঁয়ালো অরু। মনে মনে ভাবতে লাগলো সেদিন সকালের কথা,
সেবার নেদারল্যান্ডের টিউলিপ গার্ডেনে ঘুরতে যেয়ে ভ্যাকেশনটা বেশ ভালোই কেটেছিল ওদের সবার।সায়র নীলিমা, অর্ণব এলিসা সহ মোট তিন জোড়া কাপল একসাথে যাওয়ায় টিউলিপ গার্ডেনের পাশেই একটা মস্তবড় ভিলা রেন্ট করেছিল ওরা, যেই ভিলাতে দু’তলার প্রত্যেকটা বারান্দা থেকে টিউলিপের বাগান স্পষ্ট দেখা যেত।
নেদারল্যান্ডস পৌঁছানোর পরে তিন চারটা দিন সবাই একসাথে ঘুরে ফিরে, হইহুল্লোর করে ভালোই আনন্দে কেটেছিল ওদের সবার। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পাঁচ দিনের মাথায়, সেদিন হঠাৎ করেই ঘুম থেকে উঠে অরুকে পাশে পেলোনা ক্রীতিক। এমনটা সাধারনত কখনো হয়না,কারণ আড়মোড়া ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও, ওই শক্ত চওড়া বুকের মধ্যে ঢুকে খানিকটা সময় ধরে ওম না নিলে, মোটেই ভালো লাগেনা অরুর। অথচ আজ সে সকাল সকাল গায়েব।
আগের রাতে অনেক বেশি দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ার দরুন ক্রীতিক ভেবেছিল হয়তো ওর নিজেরই ঘুম থেকে উঠতে বেলা হয়ে গিয়েছে, তাই অরু হয়তো আছে লিভিং রুমে কিংবা অন্য কোথাও। কিন্তু কিসের কি? পুরো ভিলাতে কোথাও অরু নেই।
শেষমেশ না পেরে দরজায় নক করে করে ওদের সবার ঘুম ভাঙিয়েছে ক্রীতিক। তবে ওরাও কোনো হদিস দিতে পারলো না অরুর। এমন একটা অচেনা দেশে, অচেনা যায়গায় এসে হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো মেয়েটা? কোনো বিপদ আপদ হলোনা তো আবার? এক আকাশ পরিমান হিজিবিজি ভাবতে ভাবতেই একহাত দিয়ে নিজের চুল নিজেই খাঁমচে ধরলো ক্রীতিক। ওকে এভাবে উদ্বিগ্ন হতে দেখে এলিসা মানানোর স্বরে বলে,
— শান্ত হ জেকে,ঠান্ডা মাথায় ঠিক করে ভাব কোথায় যেতে পারে মেয়েটা? আচ্ছা ফোন করেছিলি নিশ্চয়ই?
এলিসার কথায় দাঁত দাঁত চাপে ক্রীতিক, অতঃপর বিরক্তির সুরে বলে,
— ফোনটা নিয়ে গেলে তো করবো? ইডিয়েট একটা, আজ ওকে খুঁজে পেলে খবর আছে, আমি যে ওর কি হাল করবো নিজেও জানিনা।
ক্রীতিকের কথার মাঝে ওকে থামিয়ে দিয়ে, ওর দিকে টিস্যু বক্স এগিয়ে দিতে দিতে সায়র বললো,
—- তোর নোজ ব্লেডিং শুরু হয়েছে আবার।
ক্রীতিক এক টুকরো টিস্যু হাতে নিয়ে, সেটা দ্বারা নাক মুছতে মুছতে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,
—- এই মেয়েটা আর আমাকে শান্তি দিলোনা। আমার জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে ওকে খুঁজে বের করতে করতে।
কথা শেষ করে টি টেবিল থেকে গাড়ির চাবিটা কুড়িয়ে নিয়ে বাইরের দিকে হাটা ধরে ক্রীতিক, ওকে চলে যেতে দেখে অর্ণব উদ্বিগ্ন গলায় বলে ওঠে,
— কোথায় যাচ্ছিস তুই একা একা? আমরা আসবো?
ক্রীতিক যেতে যেতে জবাব দেয়,
—- দরকার নেই, আসেপাশের টুরিস্ট এরিয়া গুলো একটু খুজে দেখে আসছি আমি, তারপরেও যদি না পাই, তো পুলিশের কমপ্লেইন করা ছাড়া আর উপায় দেখছি না।
ক্রীতিকের কথার পাছে অর্ণব পুনরায় বলে,
—- কিন্তু তোর তো নোজ ব্লেডিং হচ্ছে, কার ড্রাইভ করতে পারবি তো?
ক্রীতিক আর দাঁড়ায় না, ইতিমধ্যে ওর বুকের মধ্যে দাউদাউ করে অস্থিরতার আ’গুর ধরিয়ে দিয়েছে, এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে ও আর নিজেকে সামলাতে পারবে না, নির্ঘাত বুকের ব্যথায় দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাবে। তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে তপ্তস্বরে জবাব দিলো ক্রীতিক,
—- পারবো।
*********************************************
সারাটা দিন হন্যে হয়ে এদিক সেদিক খুঁজেও লাভ হলোনা কোনো। ক্রীতিক ধারণা করেছিল অরু হয়তো বা পাকামি করে একা একাই কোনো টিউলিপ গার্ডেনে ঢুকে পরেছে, কিন্তু তেমন কিছুই নয়। অবশেষে উপায়ন্তর না পেয়ে একরাশ বিষন্নতা আর ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পুনরায় ভিলাতে ফিরে এলো ক্রীতিক, উদ্দেশ্য ফোন করে পুলিশ কে জানানো, তারা যদি কোনো সোর্স এর মাধ্যমে খুঁজে দিতে পারে ওর হৃদস্পদন কে।
তখন তাড়াহুড়োয় ফোনটাও নিয়ে বের হতে পারেনি,তাই আবারও ভিলাতেই ফিরতে হলো ক্রীতিক কে। ক্রীতিক যখন চোখ বন্ধ করে ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘরের দুয়ারে পা রাখে, ভেতরে গিয়ে সবার একেক করে নানান প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, সেই ভেবে যখন ওর বক্ষপিঞ্জর ব্যথায় টনটন করে ওঠে, ঠিক তখনই ভেতর থেকে ভেসে আসে এলিসার ধমকা ধমকির আওয়াজ, কাউকে উদ্দেশ্য করে একটু রাগান্বিত স্বরেই এলিসা বলছে,
—- কোথায় গিয়েছিলে তুমি? সারাটা দিন একটা খোঁজ নেই খবর নেই, জেকে টা উদভ্রান্তের মতো খুঁজে বেরিয়েছে তোমায়, কি জানি হয়তো পুলিশেও কল করে দিয়েছে এতোক্ষণে, আজ ও ভিলাতে ফিরলে তোমার সাথে কি হবে ভাবতে পারছো?
এতোটুকু শোনা মাত্রই ক্রীতিকের কৌশলী মস্তিষ্কটা সচল হয়ে উঠলো, কারও উপর ভীষণ ক্রোধান্বিত হয়ে চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেলো মূহুর্তেই, মাথার মধ্যে ভলভলিয়ে বেড়ে ওঠা তীব্র ক্রোধটাকে ক্রীতিক সামলালো না মোটেই, বরং দু’হাত মুঠি বদ্ধ করে হনহনিয়ে ভেতরে গিয়ে বাজপাখির মতো ছো মে’রে শক্ত হাতে চেপে ধরলো অরুর চোয়াল, ক্রীতিকের হাতের বাঁধন এতোটাই শক্ত যে অরুর মনে হচ্ছিল এক্ষুনি গালের হাড় হাড্ডি সব গুড়ো গুড়ো হয়ে ভেঙে যাবে।
— আমাকে না জানিয়ে কোথায় গিয়েছিলি বল?
দাঁতে দাঁত পিষে অরুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোড়ে ক্রীতিক।
ক্রীতিকের এমন ক্ষ্যাপাটে সিংহের মতো আচরনে ভড়কে যায় সবাই , নীলিমা ভয়ে সিটিয়ে গিয়ে সায়রের শার্ট খামচে ধরে হিসহিসিয়ে বললো,
—- ভাইয়াকে থামাও, অরুকে তো মে’রেই ফেলবে আজ।
সায়র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো, অতঃপর নীলিমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড়ালো,
—- কিছুই করবে না।
ক্রীতিক চক্ষু গরম করে অরুকে ভস্ম করে দিতে চাইলো, সেভাবেই ক্ষুদ্ধ কন্ঠে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় গিয়েছিলি জবাব দে?তোকে না পেলে আমি যে কুত্তার মতো তোকে খোঁজার জন্য পুরো শহর চষে বেড়াবো সেই হুঁশ ছিলনা তোর ব্রেইনে? আন্সার মি!
গর্জে উঠলো ক্রীতিক, ওর এহেন কঠোর ধমকে কম্পিত হয়ে উঠলো অরু, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো ,
— আআমি তো একটু বড় টিউলিপ গার্ডেন দেখতে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম চলে আসবো তাড়াতাড়ি, কিন্তু গাড়ি পাইনি একটাও।
— এইইই! কাকে মিথ্যে গল্প শোনাচ্ছিস তুই? শহরের এমন কোন টিউলিপ গার্ডেন নেই যেখানে আমি তোকে পাগ’লের মতো খুঁজিনি, আর তুই এখানে আমাকে বানিয়ে বানিয়ে উপন্যাসের ডায়লগ শোনাচ্ছিস? কলিজায় ভয় নেই?
এই পর্যায়ে গর্জে উঠে অরুর বুকের কাছের জামাটা খামচে ধরে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো ক্রীতিক।
অরুর মিথ্যে জবাবে ক্রীতিকের রাগের পারদ দিগুণ তালে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, এবার এলিসা এগিয়ে এসে ক্রীতিকের হাতটা টেনে হিঁচড়ে ছাড়ালো অরুর থেকে। অতঃপর ক্রন্দনরত অরুকে নিজের বাহুতে টেনে নিয়ে বললো,
— অনেক হয়েছে জেকে, আজকের মতো ছেড়ে দে মেয়েটাকে, কাল না হয় ঠান্ডা মাথায় শুনিস সবকিছু।
ক্রীতিক ক্রুদ্ধস্বরে বললো,
— ওকে সাফসাফ উত্তর দিতে বল এলিসা,ও সারাদিন কোথায় গিয়েছিল, নয়তো আজ আর ওকে ছাড়াছাড়ি নেই, আমি ওর সাথে যা ইচ্ছে হয় তাই করবো আজ।
এলিসা আর অরু কে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো না ক্রীতিকের সম্মুখে , বরং তাড়াহুড়ো করে অরু সমেত চলে গেলো নিজের বেডরুমে।
*
তখন গভীর রাত, সন্ধ্যা রাতে অরু ক্রীতিকের ঝামেলার দরুন, পুরো ভিলা এখন শুনশান নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে, অন্য কোনো দিন হলে হয়তো এখনো সবাই লিভিং এ বসে আড্ডা আনন্দে মেতে থাকতো। কিন্তু আজ সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতি, খানিক বাদে বাদেই রাতের আঁধারকে সঙ্গ দিতে লেকের পার থেকে ভেসে আসছে কোলাব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ আওয়াজ। সেই সাথে টিউলিপের বাগান থেকে ধেয়ে আসা রাতজাগা পাখিদের ডানা ঝাপ্টানোর শব্দে গভীর ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে সকলে। ঠিক এমন সময় অর্ণবের গভীর আরামদায়ক ঘুমের ইস্তফা দিয়ে ওর মুঠোফোনটা বেজে উঠল তার স্বরে।
এতো রাতে এই ফোনের আওয়াজ বড্ড বিরক্ত ঠেকলো অর্ণবের কানে, অগত্যাই ফোনটা কেটে দিয়ে পাশ ঘুরে শুয়ে পরলো অর্ণব। কিন্তু ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির বোধ হয় এই প্রত্যখ্যান সহ্য হলোনা মোটেই, যার দরুন আবারও ঝনঝনিয়ে বেজে উঠল মোবাইলটা। এবার আর উপায়ন্তর না পেয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে মোবাইল রিসিভ করে কানে ধরলো অর্ণব, তবে এপাশ থেকে কিছু বলার ফুরসত না দিয়ে ওপাশ থেকে বিরক্তির স্বর ভেসে এলো ক্রীতিকের, সে দাঁত কটমটিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলো ,
— শালা ফোন তুলছিস না কেন? ম’রে গেছিস?
অর্ণব চোখ কচলাতে কচলাতে হাই তুলে বললো,
—- ম’রিনি, তবে তুই কেন অন্য রুম থেকে বারবার কল দিয়ে আমার হা’র্টঅ্যাটাকের বন্দোবস্ত করছিস সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না?
ক্রীতিক ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর গলায় বললো,
—- আমার বউ কই?
— লাইক সিরিয়াসলি জেকে? তোর বউ কই সেটা জানার জন্য তুই আমায় মাঝরাতে কল দিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিস?
ক্রীতিক দমলো না, নতুন উদ্যমে গম্ভীর গলায় বললো,
— তোর বউ তখন আমার বউকে বগলদাবা করে রুমে নিয়ে গিয়েছে, এখন দিয়ে যেতে বল, বউ ছাড়া আমার ঘুম আসেনা।
অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অসহায় সুরে ক্রীতিককে মানানোর চেষ্টা করে বললো,
—- ভাই বিশ্বাস কর, এতো রাতে এলির ঘুম ভাঙালে ও নির্ঘাত আমায় উষ্ঠা মে’রে ইউ এস এ পাঠিয়ে দেবে।
—- তাহলে ট্রিক্স খাটা।
ক্রীতিকের কথায় অর্ণব ভ্রু কুঞ্চিত করে শুধালো,
—- ট্রিক্স খাটাবো মানে?
ক্রীতিক নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
— মানে আবার কি? তুই এই মূহুর্তে এলিসাকে কল করে বলবি, তোর প্রচন্ড পেট ব্যথা করছে, ঘরে বাইরে শুরু হয়ে গিয়েছে, এক্ষুনি হসপিটালে না গেলে বাইরে যাওয়ার আর উপায় থাকবে না,ঘরেই শুরু করতে হবে।
ক্রীতিকের কথায় অর্ণব নাকটা সিকোয় তুলে বলে ওঠে,
— ইউউ, এসব বলবো? ভাই এসব আমি বলতে পারবো না, তুই প্লিজ আজকে রাতটা একটু নিজেকে সামলা, কাল ভোর হলেই তোর বউকে আমি নিজে তোর হাতে তুলে দিয়ে আসবো।প্লিজ ভাই।
অর্ণবের কন্ঠে ভীষণ আকুতি, অথচ ক্রীতিক তাতে দু’পয়াসার আবেগ না ঢেলেই কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো,
—- যা বলেছি চুপচাপ তাই কর, নয়তো কাল এলিসা নয় আমি নিজেই তোকে কিক মে’রে ইউ এস এ পাঠিয়ে দেবো।
এরপর অর্ণব আর কিছু বলতে গিয়েও পারলো না, কারণ কথা বলার আগেই পিক পিক আওয়াজ করে লাইন কেটে দেয় ক্রীতিক।
অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তে উপায়ন্তর না পেয়ে বুকে মাথায় ক্রুশ একে এলিসার নাম্বারে কলটা করেই ফেললো অর্ণব।
*************************************************
গভীর রাত, ঘুমে তলিয়ে আছে পুরো শহর,অত্যাধুনিক ভিলার প্রত্যেকটা জানালা হাট করে খুলে রাখা হয়েছে, সেখান থেকেই বইতে থাকা ঝিরিঝিরি হিমেল হাওয়ায় ঘুমটা গাঢ় হয়ে উঠেছে অরুর, ঠিক এমন হয় তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতেই ধীরে ধীরে কিছুটা তন্দ্রা কেটে গেলো ওর। ঘুমের মাঝেই মনে হতে লাগলো ও হাওয়ায় ভাসছে।
প্রচন্ড হাওয়ার তোড়ে লম্বা চুল উড়ে এসে আঁচড়ে পরছে চোখে মুখে। কিন্তু ঘুমের মাঝে এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়ার কারণ টা কি? এটা কি স্বপ্ন? কথাগুলো মস্তিষ্কে ক্যাচ করতেই অকস্মাৎ চোখ খুলে ধরফরিয়ে উঠলো অরু।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে লাফিয়ে ওঠায় কোথাও একটা থেকে পরে যেতে গিয়েও পরলো না ও, কারণ কেউ একজন দৃঢ় হাতে সামলে রেখেছে ওকে। ঘুমটা পুরোপুরি ছুটে গেলো এবার, অরু চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ওকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ক্রীতিক। অন্ধকারের মাঝেও ক্রীতিকের উপস্থিতি টের পাওয়ার মতো ক্ষমতা অরুর আছে, কিন্তু এভাবে ঘুমের মধ্যে অ’পহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়ার মানেটা কি? কেন যেন বিরক্তিতে শরীরটা চিড়বিড়িয়ে উঠলো অরুর, ক্রীতিক সবসময় বাড়াবাড়ি করে। তাই অরু এবার ধাতস্থ হয়ে ক্রীতিককে কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু তার আগেই ওকে রুমে এনে বিছানায় ছু’ড়ে মা’রে ক্রীতিক। অরুকে বিছানায় রেখে এগিয়ে গিয়ে দরজা জানালা গুলো লাগিয়ে দিতে দিতে কঠিন স্বরে বলে,
— কোথায় ছিলি সারাদিন সত্যি করে বল অরু।
ব্যাস, এক বলেই ছক্কা হাঁকালো ক্রীতিক, যার ফলসরূপ অরুর সব হাওয়া ফুঁসস। অরু ভেবেছিল ক্রীতিক হয়তো ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছে এতোক্ষণে, এখন হয়তো একান্তে অরুর সঙ্গ চায় বলেই এভাবে তুলে নিয়ে এসেছে ওকে। কিন্তু না, এটা তো জায়ান ক্রীতিক, ওভার পসেসিভ, ওভার রিয়েক্টিভ। তার কাছ থেকে ছাড় পাওয়া কি এতোই সহজ?
অরু ভাবছে দেখে ক্রীতিক আবারও এগিয়ে এসে অরুর মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়, অতঃপর রাশভারি আওয়াজে শুধায়,
—- কি হলো, এই ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে এতো সময় লাগছে কেন? আমি কি খুব কঠিন প্রশ্ন করেছি?
অরু ভড়কালো, সামান্য তোতলানোর সুরে বললো,
— দদেখুন প্রত্যেকেরই তো এইটুকুনি প্রাইভেসির প্রয়োজন তাই না? তাছাড়া আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি।
অরুর কথায় সন্তুষ্ট হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ক্রীতিকের দৃষ্টিতে অগ্নিস্ফুলিং ফুটে উঠলো মূহুর্তেই। তীক্ষ্ণ চোয়ালটা শক্ত হয়ে ব্লেডের মতো ধারালো হয়ে উঠলো যেন, সে এগিয়ে গিয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা চকচকে হ্যা’ন্ডকাফ্ বের করতে করতে বললো,
—- তোর মাঝে এমন কি আছে? যা আমার অজানা অরু?কি এমন প্রাইভেসি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, যা আমি উন্মুক্ত করিনি? চল দেখবো আজ।
ক্রীতিকের গতিবিধি পরখ করে অরু এবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠলো, কাঁদতে কাঁদতে ক্রীতিককে মানানোর চেষ্টা করে কিছুটা আত’ঙ্কিত সুরে বললো,
—- এমনটা করোনা প্লিজ, এটা মোটেই উচিত হবে না, খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে।
অরুর তুলতুলে নরম গালে পরম আবেশে হাত বুলিয়ে, হাস্কিস্বরে ক্রীতিক বলে,
—- আই হ্যাভ প্রোপার রাইট টু মেকিং লাভ উইথ ইউ বেইবি, এখানে অন্যায় কোথায় দেখলি? আমাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা ভুলেও করিস না।
ক্রীতিকের কথার টোনে হু’মকি সুস্পষ্ট, কিন্তু অরু তাও বাঁধা দিচ্ছে ওকে। বারবার বলছে,
—- প্লিজ এভাবে না, এটা ঠিক হচ্ছে না।
ক্রীতিক সেসবের তোয়াক্কা না করে অরুর হাতদুটো আটকে ফেললো হ্যা’ন্ডকাফ্, অতঃপর ওর কান্না থামাতে মুখে লাগিয়ে দেয় এক টুকরো ডাকট্ টেপ। এবার অরু পুরোপুরি ক্রীতিকের বশে, ব্যাপারটা উপলব্ধি করতেই অরুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ক্রীতিক হিসহিসিয়ে বললো,
— তোর ভালোর জন্য বেঁধেছি, কারণ আজকে যতক্ষণ না সত্যিটা বলবি, ততক্ষণে আমার হাত থেকে তোর নিস্তার নেই । বি রেডি ফর ইওর হার্ড পা’নিশমেন্ট বেইবি।
অরুর মুখ বাঁধা, তাই ও কাঁদতে কাঁদতে এদিক ওদিক মাথা নাড়ালো শুধু, যার অর্থ,
— এটা করবেন না প্লিজ।
তবে ক্রীতিক আর অপেক্ষা করে না, নিজের সবটুকু আকর্ষন, উন্মাদনা অরুর মাঝে বিলিয়ে দিয়ে ডুবে যায় ভালোবাসার অতল গহ্বরে।
*
অবশেষে ক্রীতিকের দেওয়া অতিরিক্ত ভালোবাসাময় য’ন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে শেষ রাতে অকস্মাৎ নিস্তেজ হয়ে পরলো অরু। অরু জ্ঞান হারিয়েছে ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই ক্রীতিকের যেন ভ্রম কেটে যায়। নিজের মাঝের পৈচাশিক আর ডমিনেটিং ভাব উবে গিয়ে মূহুর্তেই চোখে মুখে ঝরঝরিয়ে নেমে আসে একরাশ কাতরতা। সেই কাতর স্বরেই অরুর গালটা আলতো ঝাঁকিয়ে ডেকে ওঠে ক্রীতিক,
—- বেইবি, আর ইউ ওকে না? খুব বেশি ব্যথা দিয়েছি?
অরু জবাব দেয় না, তা দেখে ক্রীতিকের পিলে চমকে গেলো, এমনটা তো কখনো হয়না, ক্রীতিকের বরাবরই ওয়াইল্ড লাভ, লাভ ট’র্চার এসব বেশ পছন্দ। ব্যাপারগুলো ক্রীতিকের নিকট রোমাঞ্চকর বলে অরুও মুখ বুঝে সহ্য করে নেয় সবটা। কিন্তু এমনটা তো কখনো হয়না। এর আগেও বহুবার এভাবে মিলিত হয়েছে তারা,কিন্তু অরু আজ প্রথম বারই জ্ঞান হারালো, কিন্তু কেন?
হাজারও অযথা চিন্তাদের বহর একসাথে ঘীরে ধরেছে ক্রীতিকের মন মস্তিষ্ক, কিন্তু এখন চিন্তা করার সময় নয়, যত দ্রুত সম্ভব অরুর জ্ঞান ফেরাতে হবে, সেই ভেবে ক্রীতিক নিজেদের মাঝের বস্রটুকু ঠিকঠাক করে তাড়াহুড়ো পায়ে উঠে গিয়ে অরুর হাত মুখ সব খুলে দিলো। এরপর অরুকে ছোট বাচ্চার মতো করে কোলের মধ্যে নিয়ে ঠান্ডা পানির ছাট দিতে লাগলো ওর চোখে মুখে।
খুব বেশিক্ষণ নয়, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাবধানেই অরুর চেতনা ফিরে এলো, অরু চোখ খুলেছে দেখে ওকে বুকের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে, চোখ দু’টো বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো ক্রীতিক। ওদিকে চেতনা ফিরতেই প্রচন্ড ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ক্রীতিকের থেকে ছিটকে দূরে সরে যায় অরু। অরু এভাবে দূরে সরে গিয়েছে দেখে, ক্রীতিক অপ’রাধী গলায় বললো,
— বেইবি আস্তে, তুই উইক।
অরু নাক টেনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো এবার, কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আপনি একটা জা’নোয়ার, আপনার জন্যই আমি উইক, এখন আবার দরদ দেখাচ্ছেন কোন মুখে?
অরুর আপসোসের কান্নায় হৃদয় ছিড়ে যাচ্ছে ক্রীতিকের, ও এগিয়ে গিয়ে অরুর মুখোমুখি হয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পরে বললো,
—- আ’ম সরি হার্টবিট, আমি বুঝতে পারিনি তুই এভাবে হঠাৎ করেই জ্ঞান হারাবি, তোর শরীরটা দূর্বল জানলে আমি কখনোই এমনটা করতাম না, আর হুট করে ব্লেডিং….
ক্রীতিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো অরু, কাঁদতে কাঁদতে দু’হাতে ক্রীতিকের চুল খামচে ধরে বললো,
—- আমার বাচ্চার কিছু হয়ে গেলে, আমি তোকে ছাড়বো না জায়ান।
অরুর কথা শুনে ক্রীতিকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো, এসবের মাঝে বাচ্চা আবার কোথা থেকে এলো? অরুর পানে একটা আহত চাহনি নিক্ষেপ করে, ক্রীতিক বলে ওঠে,
— বাচ্চা মানে?
অরু কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— বেশ কয়েকবার টেস্ট করেও বারবার পজিটিভ রেজাল্ট আসছিল, তাই পুরোপুরি সিওর হতে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম।
অরুর কথায় ক্রীতিকের চোখ কপালে উঠে গেলো, অরু প্রেগন্যান্ট তার মানে বাচ্চাটা ওর নিজের, এটা ভাবতেই, অরুর দু’বাহু ঝাঁকিয়ে ক্রীতিক দাঁত খিঁচিয়ে বলে ওঠে,
—- তো আমাকে বললি না কেন ইডিয়েট? সারাদিন তোকে পা’গলের মতো খুঁজেছি আমি, এই অচেনা শহরে এমন কোনো টুরিস্ট এরিয়া নেই যেখানে আমি তোকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাইনি। আর তুই কিনা ডক্টরের ক্লিনিকে ছিলি?
জবাবে কাঁদতে কাঁদতে অরু বলে,
—- আপনি বাচ্চা চাচ্ছিলেন না কিছুতেই , কিন্তু এটা এসে গিয়েছিল কোনোভাবে, ভয় করছিল যদি আপনি এ্যাবরশন করার জন্য জোর করেন, তাহলে আমার বাচ্চাটার কি হতো? তাই চুপি চুপি গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি চলেও আসবো কিন্তু, কি জানি কেন, আসার পথে একটাও গাড়ি পাচ্ছিলাম না।
অরুর এতোসব কথা শুনে নিজের চুল নিজেই টেনে ধরলো ক্রীতিক,অরুর উপর চরম বিরক্ত হয়ে ক্রীতিক রাশভারী গলায় বললো,
— তুই কি পা’গল অরু? নিজের অনাগত বাচ্চাকে কেন আমি নষ্ট করতে বলবো? হোয়াই? এটা তুই ভাবলি কি করে, সেটা আমায় বল? আচ্ছা সত্যি করে বলতো তোর ব্রেইন কোথায় থাকে?
— তাহলে কেন করলেন এটা বলুন?
অরুর প্রশ্নের জবাবে ক্রীতিক রেগেমেগে বলে,
—- আমি কি জানতাম ইডিয়েট?
ক্রীতিকের কথায় ঝাঁজিয়ে ওঠে অরু, কাঁদতে কাঁদতে আহত সুরে বললো,
—- বাচ্চাটা মনে হয়না আর টিকবে।
— টিকবে না মানে? এক্ষুনি ডক্টরের কাছে যাবো আমরা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি, জাস্ট ফাইব মিনিটস বেইবি।
অরু হকচকিয়ে উঠে বললো,
— কিন্তু এখনো তো সকাল হয়নি, এই সময় ডক্টর কোথায়?
অরুর বাক্যটুকু শেষ হওয়ার আগেই ক্রীতিক ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,
—- সেটা তোর না ভাবলেও চলবে।
*************************************************
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আজ সবার প্রথমে ডাইনিং এ হাজির হয় সায়র আর নীলিমা। সায়র আগে আগে ছিল আর নীলিমা পেছনে। ও যখন হাই তুলতে তুলতে ডাইনিং এর দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই নজরে পরে ক্রীতিক আর অরুকে। সাধারণত ভ্যাকেশনে আসার পর থেকে ক্রীতিক আর অরুই একমাত্র জুটি যারা সবার শেষে ডাইনিং এ হাজির হতো। ক্রীতিক নিজে বেলা করে ঘুমাতো দেখে, অরুকেও জোরজবরদস্তি করে নিজের কাছে আটকে রাখতো। অথচ আজ সূর্য একেবারে পশ্চিম আকাশে উদয় হওয়ার মতোই অরু ক্রীতিক সবার আগে ডাইনিং এ। শুধু ডাইনিং এ বললে ভুল হবে, অরুকে পাশে বসিয়ে রেখে ক্রীতিক নিজ হাতে ফ্রুটস খাওয়াচ্ছে ওকে, ব্যাপারটা পুরোপুরি সন্দেহজনক। তাই ডাইনিং এ এসে বসতে বসতে সায়র শুধালো ,
—- সূর্য আজ কোন আকাশে উদয় হলো জেকে? কাল রাতেই দেখলাম বউ কে ধমকাচ্ছিস, আর এখন পাশে বসিয়ে ফ্রুটস খাওয়াচ্ছিস? বাহ বাহ।
সায়রের কথার বিপরীতে ওর দিকে গরম চাহনি নিক্ষেপ করে, ক্রীতিক ক্ষুব্ধ গলায় বলে,
— শাট আপ, শী ইজ প্রেগন্যান্ট উইথ মাই বেইবি, ইডিয়েট।
ক্রীতিকের কথায় শুনশান নীরবতায় ছেয়ে গেলো পুরো লিভিং রুম, কারও মুখে কোনো রা নেই, কেবলই চামচ নাড়ার টুংটাং আওয়াজ। এমতাবস্থায় ফট করেই অরুর নিকট এগিয়ে গিয়ে নীলিমা বেকুবের মতো বলে ওঠে ,
—- কিরে অরু, তুই না বলেছিলি ক্রীতিক ভাইয়া বাচ্চা নিতে মোটেই ইচ্ছুক নয় তাহলে হলো টা কি করে?
অরু গাল ভর্তি ফ্রুটস চিবুতে চিবুতে জবাব দিলো,
— ভুল করে।
অরু কথাটা বলতেই ঠোঁট টিপে কৌতুক মিশ্রিত হাসি হাসলো সায়র, হাসতে হাসতে ক্রীতিককে উদ্দেশ্য করে সায়র বললো,
— তুই আজকাল এসবেও ভুল করিস ভাই?
ক্রীতিক জবাব দিলো না, উল্টো নিজের মাথামোটা বউটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অরু পাপ্পি আইস করে তাকিয়ে আছে ক্রীতিকের পানে, যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা সে। সায়র ক্রীতিককে খোঁচা মে’রে আরও দু’একটা কথা শোনাবে, তার আগেই ওদের মাঝে আগমন ঘটে অর্ণব আর এলিসার।
এলিসার কাঁধে ভর করে মুমূর্ষু রোগীর মতো হাটছে অর্ণব, ওকে এভাবে হাটতে দেখে সায়র উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে ওঠে,
—- কি হয়েছে তোর অর্ণব?
অর্ণব কিছু বললো না, এলিসা জবাব দিলো,
— কি জানি কি স্ট্রিট ফুড খেয়ে, ডিসিন্ট্রি বাঁধিয়েছে, কাল থেকে কতবার গিয়েছে তার হিসেব নেই, তাই রাতেই হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ে সায়র বলে,
— কি বলিস , আমাদের কেন জানালি না? রাস্তা ঘাটে কোথাও কাজ সারেনি তো আবার?
অর্ণব দাঁত কটমটিয়ে সায়রের পানে অগ্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
—- শালা বেশি কথা বলিস তুই।
অর্ণবের ঝাড়ি খেয়ে থামলো সায়র, এবার অর্ণবের চোখ গেলো ক্রীতিক আর অরুর দিকে, ওদের পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা মাত্রই এলিসার কাঁধ ছেড়ে দিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো অর্ণব, ওকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে এলিসা ঠোঁট উল্টে শুধালো,
— কি ব্যাপার এতোক্ষণ তো হাঁটতেই পারছিলি না, এখন ওমন টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে পরলি যে, ক্লান্ত লাগছে না?
কাঁধ ঝেড়ে এগিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে অর্ণব বললো,
— নাহ এখন ঠিক আছি, আয় জান তুই ও আমার পাশে এসে বস, কাল থেকে বড্ড খাটুনি গিয়েছে তোর।
সায়র খেতে খেতে অবাক দৃষ্টিতে অর্ণবকে পরখ করে বললো,
—- কি অদ্ভুত ডিসিন্ট্রি রে বাবা, এইটুকুর মধ্যে সেরে গেলো?
সায়রের কথার জবাবে অর্ণব কথা ছুড়বে, তার আগেই অরুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো ক্রীতিক।
সায়র ঘাড় ঘুরিয়ে ক্রীতিকের পানে চেয়ে শুধালো,
— তুই আবার বউ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
সায়রের কথার জবাব না দিয়ে, ক্রীতিক ওদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— আমরা আগামী কাল তোদের সাথে ইউ এস এ ফিরছি না, ডক্টর অরুকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে বলেছে, এই মূহুর্তে জার্নি করা পসিবল নয়। তাই আমরা আর কিছুদিন পরে ফিরবো।
কথা শেষ করে অরু সমেত রুমের দিকে পা বাড়ায় ক্রীতিক।
এদিকে সায়রের সব খটকা থেকেই যায়, ও খাবার চিবুতে চিবুতে একা একাই বিড়বিড়ায়,
— অদ্ভুত তো, আমার বউকে তো ডক্টর বেড রেস্টে থাকতে বললো না,অথচ ওর বউকে বললো। কালকেই গিয়ে ডক্টর ব্যাটাকে ধরতে হবে।
*******************************
বিগত দিন গুলোর কথা ভেবে আরও একবার প্রানোচ্ছ্বল হাসি হাসলো অরু। ঠিক সেসময় দরজার পাসওয়ার্ড খোলার পিক পিক আওয়াজ হলো নিচ তলা থেকে, বোধ হয় ক্রীতিক এসেছে,সেই ভেবে তাড়াহুড়ো করে আবারও কম্ফোর্টারের নিচে গিয়ে ঘুমের ভান ধরে পরে রইলো অরু।
উদ্দেশ্য একটাই, তার শক্ত চওড়া উষ্ণ বুকে মুখ লুকিয়ে একটু খানি আবেশিত ওম গ্রহন করা। তার মাতাল মাতাল স্যান্ডাল উড পারফিউমের গন্ধটা নিজের সর্বাঙ্গে ধারণ করা। এই ছোট্ট জীবনে প্রাপ্তির ঝুড়ি পরিপূর্ণ, আর কিইবা চাই?
” সমাপ্ত”