#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১০।
আসিয়া বেগম কপাল গুটালেন। বললেন,
‘না কেন?’
অন্বিতা জবাব পেল না যুতসই। চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল। আসিয়া বেগম ভেবে নিলেন, দুজনের মধ্যে হয়তো মনোমালিন্য হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে আবার। কিন্তু তিনি তো আর জানেন না, এই মনোমালিন্য ঠিক হবার নয়।
গোসল সেরে বেরিয়ে এসে দেখে বিছানার উপর একটা শাড়ি রাখা। অন্বিতা মা’কে ডাকল,
‘মা, মা।’
ভেতরে এলেন আসিয়া বেগম। জিজ্ঞেস করলেন,
‘কী হয়েছে, ডাকছিস কেন?’
‘এই শাড়িটা এখানে কেন?’
‘পরার জন্য। এই শাড়িটা পরেই তুই মাহিরের দাদার সামনে যাবি।’
অন্বিতা ক্ষীণ সুরে বলল,
‘শাড়ি পরেই যেতে হবে? কামিজ পরে যাওয়া যাবে না?’
‘আহা, মাহিরের দাদার সামনে যাবি, ওর একমাত্র অভিভাবক, শাড়ি পরে গেলে দেখতে ভালো দেখাবে।’
অন্বিতা কথা বাড়াল না। ইচ্ছে করছে না। মাথা হেলিয়ে বলল,
‘বেশ, তুমি যা বলবে তাই হবে।’
আসিয়া বেগম খুশি হয়ে বললেন,
‘এই তো আমার লক্ষী মেয়ে। এবার তৈরি হয়ে নে তবে, ওরা কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবে।’
আসিয়া বেগম চলে এলেন সেখান থেকে। দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে শাড়ি পরতে আরম্ভ করল অন্বিতা। প্রতিটা শাড়ির ভাঁজে তার পুরোনো স্মৃতি তাজা হয়ে উঠতে লাগল। মাহিরের জন্য প্রথম শাড়ি পরেছিল তার জন্মদিনে। অন্বিতাকে সেদিন শাড়িতে দেখে সে যেন হুঁশ খুইয়ে বসেছিল। নিজেকে আয়ত্তে রেখেছিল ভীষণ জোর করে। কতবার যে বলেছিল, ভালোবাসি। আজ সেসব পুরোনো। অন্বিতার আজ আর লজ্জা লাগছে না। প্রথম দিনের মতো আনন্দ হচ্ছে না। একই মানুষের জন্য দ্বিতীয়বার শাড়ি পরছে সে, তাও কেন এত হতাশা, এত বিষন্নতা, এত নিস্তব্ধতা? কেন?
শাড়ি পরা শেষ। আয়নায় দেখল নিজেকে। সুন্দর লাগছে। চুলের পানি পড়ছে এখনো। চোখ মুখ শুকনো, নিস্তেজ। কী ভেবে যেন চোখের নিচে একটু কাজল পরে নিল। কপালে কি একটা টিপ দেওয়া উচিত? অন্বিতা ভাবল। পরক্ষণেই মনে হলো, টিপ মাহির প্রিয়, তাই দিবে না। এরই মাঝে দরজায় পড়ল করাঘাত। অন্বিতা দরজা খুলে দিল গিয়ে। আসিয়া বেগম খানিকটা অস্থিরতা দেখিয়ে বললেন,
‘উনারা চলে এসেছেন। আমি বসার ঘরে বসিয়েছি, তুই কি তৈরি?’
অন্বিতা ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলল। বলল,
‘হ্যাঁ।’
আসিয়া বেগম তার আপাদমস্তক পরখ করে বললেন,
‘সেকি, ঠোঁট ফাঁকা কেন? একটু লিপস্টিক দে।’
‘থাক না, মা।’
‘না, কেমন মরা মরা লাগছে। অল্প করে দে।’
অন্বিতা মায়ের মন রাখতে লিপস্টিক লাগাল। আসিয়া বেগম এসে শাড়ির আঁচল টেনে অন্বিতার মাথায় দিলেন। বললেন,
‘ভেতরে যাওয়ার পর সালাম দিবি।’
‘এগুলো আমি জানি, মা।’
‘তাও মনে করিয়ে দিচ্ছি।’
বসার ঘরে গেল অন্বিতা। আসিয়া বেগম তার পাশেই। অন্বিতা সালাম দিল। সালামের জবাব দিলেন একজন মহিলা। দাদা আসার কথা ছিল, তাই মহিলার কন্ঠস্বর শুনে অবাক হয় অন্বিতা। সে কে দেখার জন্য চোখ তুলতেই অন্বিতার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। মহিলাটি হেসে এগিয়ে আসেন। অন্বিতাকে ধরে বলেন,
‘এসো মা, আমার পাশে এসে বসো।’
অন্বিতা বসল। হাত চেপে ধরে নিজেকে শান্ত রাখার যথেষ্ট চেষ্টা চালাল। মাহিরের বৃদ্ধ দাদা হেসে বললেন,
‘মেয়ে তো আমাদের আগেই পছন্দ। এখন তো কেবল ডেইট ফিক্সড করার পালা।’
মহিলাটি সায় দিয়ে বললেন,
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, বাবা, তুমি আর আপা মিলে পছন্দ মতো একটা ডেইট ফিক্সড করে ফেল। আর এই সুযোগে ছেলে মেয়ে দুজনও একটু কথা বলে নিক।’
আসিয়া বেগম প্রসন্ন সুরে বললেন,
‘হ্যাঁ, সেটাই ভালো। অন্বিতা মা, মাহিরকে নিয়ে তুমি বরং তোমার রুমে গিয়ে কথা বলো। আমরা এইদিকে বড়োরা কথা বলছি।’
অন্বিতা দ্বিমত পোষণ না করে নিজের রুমে চলে এল। তার পেছন পেছন এল মাহিরও। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল অন্বিতা। মাহিরও এসে উপস্থিত। অন্বিতার রুমে এই প্রথম আগমন তার। বারান্দার এক কোণায় ফেলে রাখা নয়নতারার গাছটা দেখে হাসল মাহির। বলল,
‘এটাকে এখনো ফেলনি দেখছি?’
অন্বিতা সেদিকে চেয়ে বলল,
‘গাছের মালিক বেইমানি করেছিল, গাছ তো আর বেইমানি করেনি।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মাহির। অন্বিতার দিকে চেয়ে বলল,
‘একবার কি ক্ষমা করা যায় না?’
অন্বিতার নিরেট শূন্য চোখ। বক্ষস্থলে চলছে এক বিষন্ন বিক্ষোভ। নিজেকে ধাতস্ত করার মিথ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে বলল,
‘মাহির, আজ যদি আমি বলি, আমি তোমায় কখনো ক্ষমা করব না, তবে তুমি কষ্ট পাবে। সেই কষ্ট একদিন থাকবে, একমাস থাকবে, এক বছর অথবা এক যুগ, আর তারপর ভুলে যাবে তুমি; অভিমানে হোক, ক্ষোভে হোক, কোনো না কোনো ভাবে ঠিকই আমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু আমি, আমি তোমায় কখনো ভুলতে পারব না।’
মাহিরের হৃদকম্পনের বেগ বাড়ল। অস্থির দেখাল তাকে। বলল,
‘এভাবে বলো না। তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব, তাও আমায় ছেড়ে যেও না।’
অন্বিতা হাসল। শুষ্ক, নিস্তেজ সেই হাসি। বলল,
‘মনে আছে তিন বছর আগের কথা? আমিও ঠিক এভাবেই বলেছিলাম, আমাকে ছেড়ে যেও না। থেকেছিলে তুমি?’
‘তাই বলে প্রতিশোধ নিবে?’
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল অন্বিতা। বলল,
‘এত ক্ষমতা কি আমার আছে?’
তারপর সে এগিয়ে গেল মাহিরের দিকে। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে মাহিরের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘আমি যে তোমার মতো নির্দয় না।’
মাহির তার হাতটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,
‘ক্ষমা করে দাও, অন্বি। আমি তোমার এই উপেক্ষা আর সহ্য করতে পারছি না। এখানটায় যে বড্ড যন্ত্রণা হয়।’
অন্বিতা আরেকটু এগিয়ে গেল। মাহিরের চোখে চোখ রেখে বলল,
‘সেই তিন বছর আগ থেকে আজ অবধি, এমন এক রাতও যায়নি যেই রাতে তোমার জন্য আমার বুকে যন্ত্রণা করেনি। আর সেই যন্ত্রণার জন্য শুধু তুমি দায়ী। আমি বার বার বলেছিলাম, কেঁদেছিলাম, তাও তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। হাজারবার বলেছি, আমি কিছু করেনি, হাজারবার বলেছি, আমি নির্দোষ; কিন্তু তুমি তোমার কাজিনের কথা শুনে একবাক্যে সব বিশ্বাস করে নিলে। নিদারুণ ভাবে ভুলে গেলে আমাদের দুই বছরের সম্পর্ক। অন্যসবার মতো তুমিও আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললে, অথচ একটাবারের জন্যও খুঁটিয়ে দেখলে না সব। আমার ভালোবাসা, আমার বিশ্বাসের কোনো মূল্য দিলে না।’
মাহিরের উদ্বিগ্ন সুর। বলল,
‘পরে সবটা আমি জানতে পেরেছিলাম, কীভাবে নিতু আর তুরান মিলে এই জঘন্য কাজটা করেছিল। আমি ওদের নামে মামলা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ফুপির জন্য পারিনি।’
অন্বিতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘তোমার ফুপিও সেদিন আমাকে কম অপমান করেনি, তাও তুমি আজ তাঁকে নিয়েই এখানে এলে।’
‘দাদাভাই কিছু জানেন না। ফুপিকে দাদাভাই’ই সাথে এনেছেন। আ’ম স্যরি, অন্বি। আই লাভ ইউ।’
অন্বিতা ক্ষুব্ধ সুরে বলল,
‘আই হেইট ইউ।’
‘আই নো, আই লাভ ইউ টু।’
অন্বিতা সরে এল। রাগ দেখিয়ে বলল,
‘মজা করবে না একদম। আমি একদম মজার মুডে নেই।’
চলবে….
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/