একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ২৬।

0
155

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৬।

বসার ঘরে সোফাটায় ধপ করে বসল শশী। মন মেজাজ ঠিক নেই তার। তাকে দেখা মাত্রই উৎফুল্ল চিত্তে ছুটে এল তার মা জিনিয়া বেগম। মেয়ের পাশে বসে আহ্লাদের সহিত বললেন,

‘কেমন আছিস, মা?’

শশী ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘এতদিন ভালোই ছিলাম। তবে এখন নেই।’

জিনিয়া বেগমের হাসিটা মিইয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলেন,

‘কেন, কী হয়েছে, মা?’

‘আসার পথে তোমার আদরের ভাতিজার নার্সিংহোমে গিয়েছিলাম, ও এমন ভাবে আবাকে অবজ্ঞা করে চলে যেতে বলল যেন আমাকে ও চেনেই না। ওর সহকারী আমার উপর হাসছিল, মা। রাগে আমার শরীর জ্বলছে এখন। আমাকে কেন তুমি এখানে আসতে বললে বলো তো?

জিনিয়া বেগম মুখ কালো করলেন। তপ্ত স্বরে বললেন,

‘না আসলে তো খেলা হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আগামী মাসেই মাহিরের সাথে ঐ অন্বিতার বিয়ে। তারপর বুঝতে পারছিস কী হবে? মাহির আর মাহিরের সম্পত্তি দুটোই তোর হাত ছাড়া হবে।’

অমর্ষ গলায় শশী উত্তর দিল,

‘লাগবে না আমার। না মাহিরকে, আর না ওর সম্পত্তিকে।’

জিনিয়া বেগম আঁতকে উঠে বলললেন,

‘এসব কী বলছিস? তুই না মাহিরকে পছন্দ করিস?’

‘সেজন্য ওকে কম কনভিন্স করার চেষ্টা করেনি। সে প্রথম থেকেই ঐ অন্বিতাকে নিয়েই পড়েছিল। আমাকে পাত্তা দেয়নি কখনও। তাই বিদেশ গিয়ে আমি অন্য একটা সম্পর্কে জড়িয়েছি।’

জিনিয়া বেগম কপাল কুঁচকে বললেন,

‘বিদেশে ওসব বিলাতিদের দিয়ে সংসার হয় না। ওসব বাদ দিয়ে, মাহিরকে কীভাবে বশে নিবি সেটা ভাব। এত রূপ যৌবন দিয়ে কী হবে, যদি না একটা ছেলেকে প্রেমে ফেলতে পারিস।’

শশী সোফায় মাথা এলাল। ক্লান্ত স্বরে বলল,

‘পরে ভাবব সব। খুব খিদে পেয়েছে। তুমি ডাইনিং-এ খাবার দাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

‘ঠিক আছে, যা।’

________________

রুম জুড়ে পায়চারি করছে অন্বিতা। শশী আসবে শোনার পর থেকেই অস্থিরতা বেড়েছে তার। প্রথম যেদিন শশীকে দেখেছিল, সেদিন’ই শশী নানা কায়দা’ই ছোট করেছিল অন্বিতাকে। ঝামেলা হবে বিধায় অন্বিতা কোনো জবাব দেয়নি। তারপথ ঐ ঘটনার পর সবার সামনে শশী তাকে চরিত্রহীন বলেছিল। সেসব সে কোনোদিন ভুলবে না। তবে এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার সকল দুশ্চিন্তা কেবল মাহিরকে ঘিরে। যদিও তার মাহিরের উপর অগাধ বিশ্বাস, তাও শয়তানের চাল তো বোঝা মুশকিল।

সে এই দুশ্চিন্তার ভার সইতে না পেরে মাহিরকে কল দেয়। দুইবারের মাথায় কল রিসিভ হয়।

‘হ্যালো!’

‘হ্যাঁ, বলো অন্বি।’

‘কোথায় তুমি?’

‘গাড়িতে। বাসায় যাচ্ছি।’

‘ওহ আচ্ছা, যাও।’

‘কী করছো তুমি? মন ভালো হয়েছে?’

অন্বিতা ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে। আর মন ভালো! উল্টো দুশ্চিন্তা বেড়েছে যেন। তাও মাহিরকে আশ্বস্ত করতে বলল,

‘হ্যাঁ।’

‘ঠিক আছে, আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কল দিব।’

‘আচ্ছা।’

অন্বিতা ফোন কেটে বিছানায় বসল। মাহির তাকে শশীর কথা বলল না কেন? শশী যে এসেছে, সেটা কি সে জানে না? অবশ্যই জানে। তার গাড়ি গিয়ে যেহেতু শশীকে এনেছে তারমানে সে জানে সব। তাহলে তাকে কেন কিছু বলল না? অন্বিতা নাক মুখ কুঁচকে ফেলল। এসব অযাচিত দুশ্চিন্তায় সে বিরক্ত হচ্ছে এখন।

রাতে খেয়ে দেয়ে বিছানায় শোয়া মাত্রই মাহিরকে কল দিল অন্বিতা। কল রিসিভ হলো। প্রশ্ন ছুড়ল অন্বিতা,

‘কল দিবে বলেও আর কল দাওনি কেন?’

মাহির কিঞ্চিৎ হেসে বলে,

‘অপেক্ষা করছিলে না-কি?’

‘হ্যাঁ।’

‘স্যরি, দাদু এসেছিলেন। উনার সাথে কথা বলতে গিয়ে আর খেয়াল ছিল না।’

‘শুধু দাদু’ই এসেছেন? আর কেউ আসেনি?’

‘আর কে আসবে?’

‘কিছু জানো না তুমি?’

আচনক প্রশ্ন করায় মাহির কিছু ঠাহর করতে পারল না। জিজ্ঞেস করল,

‘কী জানব?’

‘শশী যে এসেছে, সেটা জানো না?’

মাহিরের এতক্ষণে টনক নড়ে। পরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘হ্যাঁ, জানি তো। কিন্তু তুমি কী করে জানলে?’

‘তুমি যেমন আমার ব্যাপারে সব খবরা-খবর আগে থেকে পেয়ে যাও, তেমনি আমিও পাই।’

মাহির হাসল। বলল,

‘বাহ! আমার পিছে গোয়েন্দা লাগিয়েছ?’

‘কেন, ভয় হচ্ছে?’

‘ভয় তারা পায়, যাদের মাঝে মিথ্যা আছে। আমার মাঝে কোনো মিথ্যা নেই, ভয় কেন পাব?’

‘যাক, তা হলে তো ভালোই। তবে শশী হঠাৎ কেন এল বলো তো?’

‘আমি শিওর জানি না কিছু। হয়তো আমাদের বিয়ে উপলক্ষে এসেছে।’

‘বিয়ের আরো দুই সপ্তাহ বাকি।’

‘হ্যাঁ, এই দুই সপ্তাহ আমার কাছে দুই যুগ লাগছে।’

অন্বিতা সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,

‘শশী কোথায় এখন?’

মাহির হাসল ঠোঁট চেপে। মেয়েটা ভারী জ্বলছে। তাকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য মিথ্যে বলল সে।

‘এই তো আমাদের বাড়িতেই।’

অন্বিতা চট করে শোয়া থেকে উঠে বসল। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘তোমাদের বাড়িতে কেন? ওর বাড়ি নেই?’

‘এটা কেমন কথা? এটাও তো ওর বাড়ি।’

অন্বিতার রাগ হয়। সে নাক মুখ কুঁচকে বলল,

‘ঠিক আছে তবে, ওকেই ঐ বাড়িতে রাখো। আমার আর ঐ বাড়িতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রাখছি।’

‘আরে শুনো, রাগছো কেন?’

‘না, রাগব কেন? এই শশী ফশীর জন্য আমি মোটেও রাগব না। আমার ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাব এখন। রাখো।’

‘এই রাতেও খালা বোধ হয় চুলায় কিছু বসিয়েছেন। আমি যেন কেমন পোড়া পোড়া একটা গন্ধ পাচ্ছি।’

এই বলে শব্দ করে হেসে ফেলে মাহির। অন্বিতা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে,

‘তুমি ভীষণ অসভ্য, মাহির। আমি সারাদিন কত দুশ্চিন্তা করেছি, জানো?’

হাসি থামাল মাহিল। ক্ষীণ সুরে শুধাল,

‘কেন? আমার উপর বিশ্বাস নেই?’

‘আছে।’

‘তাহলে কীসের দুশ্চিন্তা? তুমি আমায় বলেছিলেন না, আমার অনুপস্থিতে যেখানে তোমার মনে কেউ জায়গা করতে পারেনি সেখানে আমার উপস্থিতিতে সেটা অসম্ভব। আমার ক্ষেত্রেও তো তাই। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে আর আমার ভালোবাসাকে যেখানে টলাতে পারেনি সেখানে এখন সেটা একেবারেই অসম্ভব। এইটুকু বিশ্বাস আমার উপর করতেই পারো।’

অন্বিতা মন খারাপ করে বলে,

‘তোমাকে তো বিশ্বাস করি। তবে ঐ শশীর উপর আমার একটুও বিশ্বাস নেই। ও ভীষণ চতুর মেয়ে, ওর থেকে তুমি দূরে দূরে থাকবে।’

‘এত এত চিন্তা থেকে বাঁচার এখন একটা’ই উপায় আছে।’

‘কী?’

‘চলো, কাল’ই বিয়ে করে ফেলি। আমার আর ধৈর্য্যে কুলোচ্ছে না।’

অন্বিতা হাসে। বলে,

‘ধৈর্য্য ধরো। ধৈর্য্যের ফল মিষ্টি হয়।’

‘আমার মিষ্টি ফল লাগবে না, তিতা হলেও চলবে।’

অন্বিতা মাথা চাপড়ে বলল,

‘আমি কাকে কী বোঝায়? আচ্ছা, শুয়ে পড়ো। কাল দেখা হচ্ছে। শুভ রাত্রি।’

‘শুভ রাত্রি।’

ফোন সাইড টেবিলে শুয়ে পড়ল অন্বিতা। মাহিরের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছে সে। এখনও সে ঠিক আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। দুষ্ট, অসভ্য আর অভদ্র একটা ছেলে। বয়স কী কম হলো, অথচ আচার আচরণ এখনও সেই কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের মতোই।

_____________

সকাল সকাল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল অন্বিতা। সেখানে পৌঁছেই রিসেপশনে গিয়ে দেখল, অমিতকে। তাকে দেখে মিষ্টি হেসে এগিয়ে এল সে। জিজ্ঞেস করল,

‘কেমন আছেন?’

তাকে দেখে চমৎকার হাসল অমিত। বলল,

‘ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

‘আলহামদুলিল্লাহ। চেকআপের জন্য এসেছেন?’

‘জি।’

‘ওহ আচ্ছা। চেকআপ করান তবে, আমি আমার ডেস্কে যাই।’

‘ঠিক আছে।’

অন্বিতা চলে যেতেই অয়ন একটা টোকেন নিয়ে এল। অমিতের হাতে দিয়ে বলল,

‘তোর সিরিয়াল নাম্বার।’

অমিত সেটা হাতে নিতে নিতে হেসে বলল,

‘অন্বিতার সাথে দেখা হয়েছে।’

পাশের সিটে বসল অয়ন। ঘড়িতে টাইম দেখতে দেখতে বলল,

‘নাচ।’

‘নাচব কেন?’

‘অন্বিতার সাথে দেখা হয়েছে সেই খুশিতে।’

অমিত হেসে বলল,

‘তা ভালো বলেছিস। এই খুশিতে নাচা’ই যায়।’

অয়ন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলল,

‘তুই আর মানুষ হলি না।’

‘আর যাই হই, তোর মতো রোবট তো আর হয়নি।’

অমিতের কথার বিপরীতে কিঞ্চিৎ হাসে অয়ন। বলে,

‘রোবট’ই ভালো। অন্তত, মানুষের মতো কষ্ট তো আর পেতে হবে না।’

অমিত কিছু বলার আগেই তাদের ডাক পড়ে। কথাটুকু গিলে উঠে দাঁড়ায় সে। অয়নকে সাথে নিয়ে ভেতরে যায় অতঃপর।

চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here