উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #সূচনা_পর্ব #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
73

“আপু জানিস তোর ক্রাশ আসছে, ইভান ভাইয়া আসছে। দীর্ঘ ৬ বছর পর সে ফিরে আসছে। তুই তো অনেক খুশি তাই না? তোর ক্রাশ আসছে বলে কথা”

দোলনায় বসে খোলা চুলে এক রমণী। মনোযোগ তার প্রকৃতি বিলাসে। দোলনায় বসে এক ধ্যান বিশাল আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। কি যেন ভাবছে এক মনে। পিছন থেকে কারো উচ্ছাস ভেসে আসা কণ্ঠ শুনে ধ্যান ভাঙলো। কথা গুলোর মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলাম । লাজুক স্বরে রোশনিকে জিজ্ঞেস করলাম,
“সত্যি ইভান ভাই আসছে?”

“হ্যাঁ রে আপু সত্যি। বড় আব্বু আর মেঝ আব্বু গেছে ভাইয়াকে আনতে। তোর ক্রাশ এলো বলে”

দোলনা থেকে উঠে রোশনির পিঠে ধাম করে কিল বসিয়ে দিলাম।
“ক্রাশ কিরে? ভাইয়া হয় ভাইয়া”

“ছোটো বেলায় কে যেনো বলেছিলো, শোন রোশনি ইভান ভাই হচ্ছে আমার ক্রাশ তার দিকে একটুও নজর দিবি না। তার দিকে নজর দিলে আমি কিন্তু গুলি মেরে তোর খুলি উড়িয়ে দিবো”

কথা শেষ করে রোশনি হেসে দিলো ওর সাথে হেসে দিলাম আমিও। একসময় আমি এগুলো বলেছিলাম ভাবতেই হাসি পায়, মাঝে মাঝে লজ্জাও লাগে।
“তখন ছোটো ছিলাম এতো কিছু বুঝতাম নাকি? এখন সে আমার ভাই, ভাই মানে ভাই”

“ভাই মানে ভবিষ্যত জামাই”

রোশনি ছুটে দৌড়। এক দৌড়ে ধরা ছোয়ার বাহিরে। উঠে ওকে তারা করতে গিয়েও ফিরে এলাম । মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে আসছে, অবশেষে তার আগমন হলো। ছোটো বেলায় কোন দুঃখে যে বলতে গিয়েছিলাম ইভান ভাই আমার ক্রাশ । এখন সবাই সুযোগ পেলেই খেপায়। তবে এই কথা সত্যিই যে মানুষটা দেখতে ক্রাশ মতোই। যেমন দেখতে সুন্দর, তেমন জিম করা বডি। মন্ত্র মুগদ্ধ করা তার প্রখর ব্যক্তিত্ব। ইভান ভাই দেশের বাহিরে যাওয়ার পর আমি একবারও তার সাথে কথা বলিনি। সবাই ভিডিও কলে কথা বললেও আমি এটা ওটা বলে এড়িয়ে যেতাম ।কারণ ভিডিও কলে কথা বলতে আমার খুব লজ্জা লাগতো। কেমন অস্বস্তি হতো । আরো কিছুক্ষন বসে রইল দোলনায়।

নিচে নেমে চলে আসলাম নিজের রুমে। রুমে একা একা একটুও ভালো লাগছে না যাই গিয়ে দেখে আসি ইভা কি করছে। আমার ঘুমের বালাই নেই আর ইভা মহারানী পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে? এটা তো হতে দাওয়া যায় না। কি করা যায়? মাথায় কিছু একটা আসতেই দুস্টু হেসে এগিয়ে গেলাম। বিছানার পাশে রাখা গ্লাসে এক গ্লাস পানি নিয়ে ছুড়ে দিলাম ইভার গাঁয়ে। ধড়ফড় করে উঠে বসলো ইভা। চিল্লিয়ে বড় মাকে ডাকতে ডাকতে বলল,
“আম্মু দেখো আমার ঘরের ছাদ ফুটো হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির পানি এসে আমার মুখে পড়ছে, আম্মু! কোথায় তুমি?”

ইভার কাণ্ডে পেট ফেটে হাসি আসছে। বোকা মেয়ে ছাদ নাকি ফুটা হয়ে গেছে এটাও সম্ভব। হাসি থামাতে না পেরে উচ্চস্বরে হেসে দিলাম । ইভা তাকিয়ে আমার হাতে গ্লাস দেখে ঘটনা বুঝে গেল। তেড়ে এলো আমার দিকে। আমাকে আর পায় কে। কোনো রকম গ্লাসটা রেখে দিলাম এক দৌড়। আমি আগে আর ইভা ওর পিছনে। দুজন দৌড়তে দৌঁড়াতে ড্রয়িং রুমে এলাম । সামনে বড় মাকে দেখে তার পিছনে লুকিয়ে পড়লাম।
“বড় আম্মু আমাকে বাঁচাও। তোমার পাগল মেয়ে খেপেছে। যখন তখন আমাকে মেরে দিতে পারে”

“আম্মু জানো তোমার আদরের রোদ সোনা কি করেছে? আমার মুখে পানি ছুড়ে মেরেছে”

আমি মুখটা ইনোসেন্ট করে বললাম,
“বড় আম্মু ও এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলো। আমি ডেকেছিল ওঠেনি তাই পানি ছুড়ে মেরেছি। বলো আমি ভুল কিছু করেছি?”

বড় আম্মু বললেন,
“না মা তুই ভুল কিছুই করিসনি। তুই ভুল করতেই পারিস না”

“আম্মু!”

“ম্যা ম্যা করবি না। এতো বেলা অবধি কেউ ঘুমায়? এখন দুজন মারামারি বাদ দিয়ে খেতে আয়। আজ আমার অনেক কাজ। তাড়াতাড়ি আয়”

আমি ভদ্র মেয়ের মতো টেবিলে বসে পড়লাম । ইভা চলে গেল ফ্রেশ হতে। যাওয়ার আগে আমাকে চোখ রাঙিয়ে গিয়েছে। আমিও কম যাই নাকি।মুখ বাকিয়ে ভেংচি কেটে দিয়েছি ওকে।

বিকেল বেলা আমি, ইভা আর রোশনি মিলে গল্প করছি । নিচ থেকে গাড়ির আওয়াজ পেয়ে তিনজন ঝুঁকলাম দেখার জন্য। বড় আব্বু আর মেঝ আব্বুকে দেখে বুঝে গেলাম কে এসেছে। ইভা আর রোশনি দিয়েছে এক দৌড়ে। আমি দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি । সবার শেষে গাড়ি থেকে নামলো এক সুদর্শন পুরুষ। চোখে তার কালো চশমা। শরীর আবৃত কালো কোর্ট প্যান্টে। কোর্ট খুলে হাতে রাখা।সাফেড রঙা শার্ট ফর্সা শরীরে দারুন লাগছে। ইভান ভাইকে দেখতে একদম হিরোর মতো। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা দিলো বাড়ির ভিতরে। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি । হটাৎ কি মনে করে ইভান ভাই হাঁটা থামিয়ে দাড়িয়ে গেল। আমার ভ্রু কুঁচকে এলো। তবে কি ইভান ভাই বুঝে গেল আমি তাকে দেখছি। পুরো প্রস্তুতি নিলাম লুকানোর। তবে ইভান ভাই এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে সোজা বাড়ির ভিতরে চলে গেল।আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম।

ড্রয়িং রুমে ভীড় জমেছে। এতদিন পড়ে বাড়ির বড় ছেলে এসেছে বলে কথা। বড় আম্মু ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। ওপর পাশ থেকে জড়িয়ে রেখেছে ইভা। ইভান ভাই কাকে থামাবে বুঝতে পারছে না। অনেক কষ্টে দুজনকে থামিয়েছে। সবাই একে একে ইভান ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। আমি একপাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি । ঈশিতা আপু পাশে এসে বলল,
“কিরে রোদ এখানে দাড়িয়ে আছিস কোনো? যা ভাইয়ার সাথে কথা বল”

আমার অস্বস্তি হচ্ছে। এতদিন যার সাথে কথা বলিনি হটাৎ তার সাথে কিভাবে কথা বলবো? হাত মুচড়ে ইতস্তত করে বললাম,
“সবাই কথা বলছে বলুক আমি পড়ে কথা বলে নিবো”

ঈশিতা আপু আমার কোনো কথা শুনলো না। হাত ধরে নিয়ে গেল ইভান ভাইয়ার কাছে।
“ইভান ভাইয়া দেখো কে এসেছে তোমার সাথে কথা বলতে”

ইভান কথা বলা থামিয়ে আমাদের দিকে তাকালো। ওনার তাকানোতে আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। আমি সাধারণত হুটহাট অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে পারিনা। কোনো রকমে জিজ্ঞেস করলাম,
“কেমন আছেন ভাইয়া?”

ইভান ভাই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো”

ইভান ভাই পুনরায় কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। এখানে যে রোদ নামের কেউ আছে তো বিন্দু মাত্র পাত্তাই দিলো না। রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলাম তার সামনে থেকে ।
“লাট সাহেবের ঢং দেখলে বাঁচি না। এমন ভাব করছে যেন কোথাকার মহারাজ এসেছে। যাবো না আমি তার সাথে কথা বলতে,হুহ”

আমি সোজা উপরে নিজের রুমে চলে এলাম । ধাম করে দরজা লাগিয়ে দিলাম ।

————-
আমার নাম রোদ। পুরো নাম রুদ্রিতা খানম রোদ ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ছাত্রী । আমার বাবারা চার ভাই, এক বোন । বড় আব্বুর তিন ছেলে এক মেয়ে(অভ্র, শুভ, ইভান আর ইভা)। মেঝ আব্বুর দুই ছেলে,এক মেয়ে (ইয়াদ, ইফাজ, ঈশিতা)। ফুপ্পির এক ছেলে এক মেয়ে (আদ্র, আরু )। আমার আব্বু দুই ছেলে এক মেয়ে (রুদ্র, রিসাব, রুদ্রিতা)। ছোটো আব্বুর এক ছেলে এক মেয়ে (রৌশন, রোশনিতা)। আমাদের যৌথ পরিবার। আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আছে। বড় আব্বু আর আমার আব্বু মিলে বিজনেস দেখা শোন করে। মেঝ আব্বু ডিআইজি। আর ছোটো আব্বু কর্নেল। চাকরির সূত্রে দুজনই বাড়ি বাহিরে থাকেন। ছুটিতে বাড়িতে আসেন।

এতক্ষন যার কথা শুনলেন আমাদের লাট সাহেব ইভান ভাই। তার পুরো নাম ইফরান খান ইভান। পুরো গুষ্টির মধ্যে উনিই একপিস। যেমন ঘাড় তেরা, তেমন রাগী। এক নাম্বারের ইগোওয়ালা লোক। দীর্ঘ ৬ বছর পর দেশে ফিরলেন। ইভান ভাইয়ার খালামনিরা লন্ডনে থাকেন। ইভান ভাইয়া তাঁদের কাছে থেকেই পড়াশোনা করছেন। বড় আম্মুর কান্না কাটিতে টিকতে না পেরে অবশেষে ৬ বছর পর তিনি দেশের মাটিতে পা রাখলেন। ওনার ইচ্ছে ছিলো একেবারে পড়াশোনা কমপ্লিট করে আসার। তবে বড় আম্মুর জন্য তা আর হলো কই। অগত্যা তাকে দেশে আসতে হলো।
————-

রাতে খাবার খেতে ডাকা হলে বাবার পাশে বসে কোনোমতে খেয়ে উঠে গেলাম । কারো দিকে তাকানোর ইচ্ছে নেই। সবাই থাকুক তাঁদের ইগো নিয়ে। তাকাবো না কারো দিকে। খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে দরজা দিলাম।

গভীর রাত সবাই ঘুমিয়ে কাদা। আমিও গভীর ঘুমে মগ্ন। ঘুমের মাঝে অনুভব করছি কেউ আমার ওপর ঝুঁকে আছে। তার নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পড়ছে। মানুষটা বিরবির করে কিছু বলছে। আমি স্পষ্ট তার কথা শুনতে পারছি না তবে এটা বুঝতে পারছি কেউ কিছু বলছে। আমার গভীর ঘুম হাল্কা হয়ে গেল।লাফ দিয়ে উঠে বলাম। আশেপাশে তাকিয়ে খুজলাম কিন্ত কেউ নেই। তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? কে জানে । পাশের টেবিলে রাখা পানি ঢকঢক করে খেয়ে গ্লাসটা রেখে দিলাম । ঘুম পাচ্ছে খুব। সুন্দর মতো গায়ে চাদর জড়িয়ে পাশে রাখা পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

#চলবে?

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#সূচনা_পর্ব
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

(নতুন গল্প নিয়ে চলে এলাম। কেমন লেগেছে জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here