তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১৪)

0
112

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১৪)
________________________

গম্ভীর হলো মিঠি। হঠাৎ বলতে শুরু করলো,”জানিস,এই সমাজটা আক্ষরিক অর্থে চরম বর্ণবাদমুখী। বাসার কাজের বুয়া থেকে শুরু করে ঘরের বউ পর্যন্ত সব জায়গায় সাদা চামড়ার জয়জয়কার। যে ছেলেটার দাঁত ছাড়া বাকি সবটাই কালো,সেও বিয়ের সময় সাদার নেশায় ডুবে থাকে। আবার যে মেয়েটা দেখতে কুচকুচে কালো সেও চামড়াটাকে আরেকটু সাদা হিসেবে উপস্থাপন করতে মরিয়া হয়ে লাক্স,ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী সহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দারস্ত হয়। অথচ সাদা অথবা কালো সবই হয়েছে উপরওয়ালার ইচ্ছায়। যেহেতু চামড়া নয় বরং তাক্বওয়ার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ সুবহানাহু তাআ’লা তাঁর বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন তাই চামড়ার রঙটা আল্লাহর কাছে মুল্যহীন,যদিও আমাদের কাছে তা অমুল্য সম্পদ। আমাদের সমাজে বিবাহগুলির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই,ছেলে কিংবা মেয়ে কেউই ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেয় না বরং তাদের কাছে চামড়ার প্রলেপটাই আসল! কেননা আমাদের সমাজ,সমাজপতি ও আমাদের অভিভাবকরা আমাদেরকে শিখিয়েছে সাদা মানেই সুন্দর। যদি কেউ ধার্মিকতা দেখে কোন কালো মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে,তাহলে ওই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন থেকে শুরু করে পাড়া-পড়শীর কত যে তিরিস্কার শোনা লাগে তা ভুক্তভোগীরাই ভালো বলতে পারবে। আচ্ছা,আমরা বাঁচবো কয় কাল? শুধু দেহের উপরের সাদা প্রলেপটাকেই কেন এত প্রাধান্য দিচ্ছি? আমরা যদি সাদাকে প্রায়োরিটি দিই তাহলে তা হয়তো পেয়ে যাবো,কিন্তু তাক্বওয়াবান পাবো কিনা সন্দেহ আছে! আর যদি তাক্বওয়াকে প্রায়োরিটি দিই তাহলে সাদা না পেলেও দ্বাীনদারিত্ব পেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। দুনিয়ার বহু কালো মানুষ তাক্বওয়া দিয়ে ভূবণ আলোকিত করেছেন পক্ষান্তরে,তাক্বওয়াহীন বহু সাদা মানুষ হারিয়ে গেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন কূপে। সুতরাং বাহ্যিক সৌন্দর্য কখনোই অন্তরের সৌন্দর্য্যের প্রতীক হতে পারে না। যেহেতু পরকালে সৎকর্মশীল মুমিনদের চেহারা হবে উজ্জল যদিও দুনিয়াতে হাবসী (কালো) ছিল। আর পাপীদের চেহারা হবে বীভৎস,কালো। যদিও দুনিয়াতে তাঁর সাদা চামড়ার ঝলকানির প্রশংসায় লোকেরা পঞ্চমুখ ছিল। তাই এসকল ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হলেও গায়রুল্লাহ’র সন্তুষ্টি ছেড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে যে,কালো উপর সাদার কিংবা অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তাই তো প্রিয়নবী রাসূল (সা.) বলেছেন,“অনারবদের উপর আরবদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই,আরবদের উপরেও অনারবদের শ্রেষ্ঠত্ব নেই; নেই সাদার উপর কালোদের শ্রেষ্ঠত্ব অথবা কালোর উপর সাদাদের। শ্রেষ্ঠত্ব শুধু তাক্বওয়াতে।”(মুসনাদ আহমাদ : ৫/৪১১)

কোরআনে কারীমে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে কাউকে নিয়ে উপহাস করতে শক্তভাবে নিষেধ করেছেন।
عسى ان يكونوا خيرا منهم

“হতে পারে যাদেরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তারা (আল্লাহর নিকট) তোমাদের থেকে উত্তম।”

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, ولا نساء من نساء

“অনুরূপ কোনো মহিলা অপর মহিলাকে তাচ্ছিল্য করবে না।” عسى ان يكن خيرا منهن “হতে পারে তাচ্ছিল্যকৃত মহিলা তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নিকট উত্তম।”

এই আয়াতে মহিলাদেরকে বিশেষভাবে দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়েছে,যদিও আয়াতের প্রথম অংশের দ্বারাই মহিলা-পুরুষ সকলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরও মহিলাদের ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আল্লাহ তা’আলাই বেশি জানেন।

অতঃপর আরো কিছু কথা না বললেই নয়,সাদা-কালো আল্লাহর সৃষ্টি! মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব। মানুষকে ঘৃণা করা সঠিক নয়। যদি কাউকে বলা হয় তুমি একজন কালো মানুষ সৃষ্টি করে দাও তুমি পারবে না। তাই মানুষকে ঘৃণা করা উচিত না। মানুষের দাম সৌন্দর্য আর টাকাপয়সা দিয়ে নয়,মানুষের দাম আকিদা,এখলাস,চরিত্র দিয়ে। উনি কালো হলেও উনার ফেইস কাটিং সুন্দর,মায়াবী। আর শঙ্খের মতো শুভ্র উনার দাঁতগুলোও অনেক সুন্দর! উনার হাসি ও অসাধারণ! বেশির ভাগ কালো মানুষের মন ভালো হয়। আল্লাহর সৃষ্টি কালো হোক কিংবা সাদা হোক সবাইকে সমান চোখে দেখা উচিত। কালো তো আমাদের পবিত্র কোরআনের আয়াত ও। অথচ আমরা তো কোরআনকে বুকে রাখি। আমার কাছে উনার সম্মান ও ঠিক তেমন। কালোজাতীকে আমি পছন্দ করি! কারণ হযরত বেলাল (রা.)-এর বংশধর। মন সুন্দর হলে সবকিছুই সুন্দর! উনি হচ্ছেন হীরা,বাকিরা সব কয়লা! হীরা কয়লা কী কখনো একসাথে মিশতে পারে?মোটেও না! ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইজ ভেরি এক্সপেন্সিভ। আই লাইক হিম।”

শ্রেয়াশা বলল,”ব্ল্যাক ডায়মন্ড!?”

“হুম। তিনি আমার ব্ল্যাক ডায়মন্ড! কালোচাঁদ! কালোমানিক!”

সত্যি বলতে,যুক্তি দিয়ে এতোগুলো কথা বলায় ওরা হাসার বদলে মুগ্ধ হলো। এতোদিন কালো মানুষকে ঘৃণা করলেও আজ সত্যি সেটা মন থেকে চলে গিয়েছে। কোমল হলো সবাই।

“জানিস,সবার আগে আমরা হলাম মানুষ। তারচেয়েও বড় কথা আমরা হলাম এক আল্লাহর বান্দা। মহান আল্লাহ যাকে যেই রকমভাবে পছন্দ করেছেন তাকে সেইরকম ভাবেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষ চাইলেই কিন্তু কোনো মানুষ বানাতে পারবে না। তাই কাউকে ছোট করে না সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিত। মানুষের অবয়ব দেখে সৌন্দর্য বিচার না করে,আচার-আচরণ দেখে সৌন্দর্য বিচার করা উচিত।”

ওরা সবাই একসাথে বলে উঠলো,”ঠিক বলেছিস মিঠি। এতোদিন আমরা চোখ আর বিবেক থাকতেও অন্ধ ছিলাম,কালো মানুষকে ঘৃণা করতাম,কিন্তু আজ সত্যি তুই আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিস! থাঙ্কিউ সো মাচ।”

মৃদু হাসলো মিঠি। হঠাৎ শেহজাদ বাসায় ঢুকলো। ডোর ভেড়ানো ছিলো। শ্রেয়াশা উঠে গিয়ে বলল,”দুলাভাই এসেছেন?”

মৃদু হাসলো শেহজাদ।

“হ্যাঁ।”

“আমার কাছে দিন দুলাভাই। আমি আইসক্রিমগুলো ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি।”

শ্রেয়াশার হাতে দিতেই রেখে দিলো। মিঠির বলা সব কথা শুনেছে শেহজাদ। মন থেকে অজান্তেই সম্মান চলে এলো। মিঠি খারাপ মেয়ে নয়,তবে একটু রাগী! এটাই। টুম্পা বলল,”দুলাভাই,আসুন গল্প করি। পরিচয় হই।”

মিঠির দিকে তাকালো শেহজাদ। বউটা তো আবার বেলুনের মতো ফুলে যাবে। ইশারা দিলো মিঠি। মৃদু হেসে সোফায় বসলো। ওরা শেহজাদকে ঘিরে বসলো। টুম্পা বলল,”দুলাভাই,একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“বলো।”

“মিঠির সাথে আপনার কিভাবে প্রেম হয়েছে? প্লিজ আমাদেরকে আপনাদের লাভ স্টোরিটা একটু শোনান।”

শেহজাদ পড়লো মহাবিপদে। এখন বানিয়ে বানিয়ে সে কিভাবে কী বলবে? হঠাৎ আইডিয়া করলো,এমন একটা কাজ করবে যাতে,সাপও ম’র’বে লাঠিও ভাঙ্গবে না। গলা পরিষ্কার করে মিষ্টি হেসে মিঠিকে শুনিয়ে শুনিয়ে জোরে বলতে লাগলো,”সেই অনেক বছর আগের কথা। তখন আমার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। আমি ঢাকায় পড়াশোনা করেছিলাম। এরপর একটা জব পাই। হঠাৎ একদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের পাশ দিয়ে যেতেই মিঠিকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলাম। তখন বোধহয় মিঠি ক্লাস সিক্সে পড়ে। মিঠি খুব সুন্দর তো তাই নজর আঁটকে গেলো। তারপর ওর চোখ দেখতেই সেদিনই আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! এরপর থেকে আমি দিন-রাত ভাবতাম না জানি ও আয়না দেখে কিভাবে! তারপর সময় পেলেই রোজ নিয়ম করে লুকিয়ে লুকিয়ে মিঠিকে দেখতে আসতাম। কিন্তু মিঠি জানতো না। তবে আমি কখনো ওর সামনে আসিনি। আসিনি এই ভয়ে কারণ আমি তখন প্রাপ্তবয়স্ক আর কালোও। আর এতো সুন্দর মেয়ে নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ করবে না। আর মিঠিও তখন বয়সে খুব ছোট্ট ছিলো কিভাবে প্রপোজ করি! এইটুকুন মেয়ে তো আর প্রেমের প ও বুঝবে না। আর নিজের বিবেকেও বাঁধছিলো। সেই চিন্তায় আমি খেতে পারতাম না,ঘুমাতে পারতাম না! একপর্যায়ে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। এরপর ভাবলাম,আড়ালে থেকেই ভালোবেসে যাবো। কখনো জানতে দেবো না। সব ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায় না। মিঠিও আস্তে আস্তে বড় হয়। আমি তখনও রোজ ওকে দেখতে যেতাম। আমার চোখের সামনেই হুট করে মিঠি বড় হয়ে যায়। এরপর এসএসসি পাস করে,এরপর ইন্টারে ভর্তি হয়। আমিও হতাশা নিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করি! ভাবলাম জীবনেও বিয়ে করবো না। মিঠিকে ভালোবেসে কুমার থেকে যাবো। এরপর মিঠিকে দেখার জন্য ওদের বাসায় উঠি ভাড়াটিয়া সেজে। কিন্তু মিঠি কিছুই জানতো না। যদিও সে বাসায় থাকতো না। কিন্তু মনে এই ভেবে শান্তি পেতাম যে,মিঠি নেই কিন্তু মিঠিদের বাড়িতে তো আছি এটাই অনেক। এরপর মিঠির স্কুলের কাছে জব নিই। দূর থেকে মিঠিকে দেখি। সেদিন মিঠি বাসায় যায় বেড়াতে,আমি হুট করে ওকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে যাই এবং আমার ভালোবাসার কথা বলে দিই। অতঃপর লাজলজ্জা ভুলে প্রপোজ করে ফেলি। কিন্তু ও আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেয়। আমি তো না চাইতেই বামুন হয়ে হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম। আবেগে,দুঃখে মিঠিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। সব শুনে মিঠি সেদিন রাতেই আমাকে বিয়ের অফার করে। আমিও আর দেরী করিনি সাথে সাথেই বাসার সবাইকে মানিয়ে বিয়ে করে ফেলি। এই হচ্ছে আমাদের লাভ স্টোরি।”

সবাই হাঁ হয়ে শেহজাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ভাবতে লাগলো,আহ! কতো বছরের ভালোবাসা! একেই বলে নিঃস্বার্থ প্রেম। মিঠি অন্যদিকে দাঁড়িয়ে শসার খোঁসা ছাড়াচ্ছে। কিন্তু কান শেহজাদের দিকে। শেহজাদ এমনভাবে বললো যে,মিঠির মনে হচ্ছে সত্যিই এটা রিয়েল ঘটনা। তোলপাড় সৃষ্টি হলো মিঠির মনে। সত্যিই কি শেহজাদ তাকে ভালোবাসতো? মিঠির মনে হচ্ছে শেহজাদ মিথ্যে বলেনি। হয়তো মিথ্যার ছলে সত্যি বলেছে,তাকে বলতে না পেরে। আজ তার বান্ধবীরা না এলে জানতেই পারতো না। ছলছল করে উঠলো মিঠির সুন্দর নয়নজোড়া। সব শুনে আবেগে সবার চোখে পানি চলে এলো। অনন্যার চোখ দিয়ে পানির স্রোত বইতে লাগলো। শ্রেয়াশা বলল,”দুলাভাই আপনার বয়স এখন কত জানি?”

“পুরুষ মানুষের বয়স আর মাইনে জিজ্ঞেস করতে নেই শ্যালিকা।”

প্রিয়া বলল,”আহা! বলুন না দুলাভাই প্লিজ।”

“সামনের মাসে ৩৭ শে পড়বে।”

“ওহ।”

গোপিকা বলল,”দুলাভাই না ডেকে ভাইয়া বললেই তো পারিস।”

টুম্পা বলল,”একদম না। উনি আমাদের ক্রাশগার্লের স্বামী অর্থাৎ জাতীর দুলাভাই। তাই উনাকে দুলাভাই বলেই ডাকবো।”

এরপর সবাই আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলো। তবে দূর থেকে বার-বার তীর্যক চোখে তাকালো মিঠি। ভালো লাগলো না তার বান্ধবীদের সাথে শেহজাদের এতো আন্তরিকতা। কথা বলার ফাঁকে সবাইকে আইসক্রিম,কেক,ফলমূল,জুস সব দিয়ে গেলো। খেতে খেতে নানান রকমের কথাবার্তা বললো। শেহজাদ খুব সহজে ওদের সাথে মিশে গেলো। তবে সবাই এটা বুঝতে পারলো যে শেহজাদ কথাবার্তায় যথেষ্ট স্মার্ট এবং বুদ্ধিমান। প্রতিটি কথা খুব সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে শান্ত গলায় বলে। কালো বলে সবার মনের ভেতরে হীনমন্যতা থাকলেও সেটা শেহজাদের আচার-আচরণ,কথাবার্তায় এবং ব্যক্তিত্বে দূর হয়ে গেলো। অনন্যার মতো মুগ্ধ হলো সবাই। সত্যি কালো মানুষের মন সুন্দর মানুষের মনের থেকেও হাজার গুণ সুন্দর!

৪৯.
অতঃপর রান্না শেষ হলে সবাই একসাথে বসে কথা বলতে বলতে খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়া-দাওয়া শেষে মিঠিকে ওর রুমে পাঠিয়ে সবাই শেহজাদের সাথে কিছু একটা পরামর্শ করলো। দূর থেকে সেটা দেখতেই মিঠির ভীষণ জেলাশফিল হলো। শেহজাদ আর তার বান্ধবীদের বিড়বিড় করে ইচ্ছেমতো বকাবকি করলো।শেহজাদ বুঝতে পারলেও না বুঝার ভান করে রইলো। আসলেই হিংসুটে মেয়েটাকে একটু জেলাশফিল করানোর দরকার,সাথে একটা শিক্ষা দেওয়ারও দরকার। মনের দুঃখে মিঠি নিজের বাবার রুমে গিয়ে ডোর আঁটকে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর দেখলো ওরা শেহজাদকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো। এই অনন্যা ফাজিল মেয়েটাও ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে গেলো। যাওয়ার সময় তাকে একটু সাধলো না। মিঠির খুব কান্না পেলো। শেহজাদকে অকাট্য ভাষায় বকতে লাগলো,সাথে তার বান্ধবীদের ইজ্জত রফাদফা করতে লাগলো। যাওয়ার সময় ওরা মিঠি যেইরুমে ছিলো সেই রুমের বাইরে দিয়ে ছিঁটকানি আঁটকে চলে গেলো।

৫০.
অতঃপর রাত দশটার দিকে বাসায় ফিরলো সবাই। রুমের ছিটকানি খুলতেই দেখলো মিঠি শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। চোখ-মুখ ফুলে ঢোল। টুম্পা বলল,”মিঠি,তুই কাঁদছিস কেন?”

“কিছু না। তোরা কোথায় গেলি?”

“আর বলিস না! তোর ওই হাবাগোবা জামাইটা এত্তো হাড়কিপটে!”

“কী করেছে?”

প্রিয়া বলল,”বারে! আমাদের ক্রাশ গার্ল খ্যাত মিঠি রানীকে পটিয়ে বিয়ে করেছে,অথচ আমাদেরকে ট্রিট দিবে না; তা কী করে হয়?”

“এখন কী হয়েছে?”

পার্সা বলল,”চাইনিজ খেতে নিয়ে গেছি! তারপর ফুচকা খেয়েছি! তারপর হালিম,চটপটি মানে যা আছে পছন্দের সব খেয়ে ছেড়েছি আজ! আর একদম সব টাকা ফিনিশ করে ফকির বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।”

“উনি এখন কোথায়?”

গোপিকা বলল,”কোথায় মানে! তুই এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো?”

“বলছি উনি কোথায়?”

শ্রুতি বলল,”শ্লা,হাড়কিপটে! বিল দিতে না পেরে পালিয়ে গেছে।”

“আজেবাজে কথা বলবি না।”

টুম্পা বলল,”তোকে ডিভোর্স দিয়ে পালিয়ে গেছে।”

“মানে!?”

“মানে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে। আর যাওয়ার সময় তোকে ডিভোর্স দিয়ে গেছে।”

কারো কথা বিশ্বাস করলো না মিঠি। শেহজাদ এমন নয়। মিঠির বিশ্বাস শেহজাদ এমনটা করতেই পারে না। ভেজা গলায় ঢোক গিললো।

শ্রেয়াশা বলল,”নে তুই ও সাইন করে দে। তোকে আমরা ভালো একটা বর দেখে বিয়ে দেবো।”

“মানে?”

প্রিয়া বলল,”বেশি কথা না বলে সাইনটা কর। তোর স্বামী অনন্যাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।”

“মিথ্যা কথা।”

ওরা সবাই মিঠিকে ধরে জোর করে সাইন করালো। সাথে সাথে মিঠি সেন্স হারিয়ে ফেললো।

শ্রুতি বলল,”এটা কী হলো?”

পার্সা বলল,”এতো দেখছি পুরাই সিরিয়াস।”

শ্রেয়াশা বলল,”সেটাই তো দেখতে পাচ্ছি!”

“গায়েত্রী বলল,”আমার মনে হচ্ছে ওরা সত্যিই লাভ ম্যারিজ করেছে। এতে সন্দেহ নেই। আমরা আরো উল্টা সন্দেহ করেছি।”

“টুম্পা বলল,”কথা সত্য।”

৫১.
সেন্স ফিরলো মিঠির। নিভু নিভু চোখে তাকাতেই আবিষ্কার করলো সে শুয়ে আছে বিছানায়। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখতে পেলো ফুলে ফুলে সজ্জিত বেডে শুয়ে আছে। মিঠির মাথা কাজ করছে না। আচমকা দেখতে পেলো ওর সামনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। নীরব রইলো মিঠি। তার শরীর ভীষণ দূর্বল লাগছে। হঠাৎ উঠে বসলো। সম্পূর্ণ চেতনা ফিরতেই আবিষ্কার করলো সে নিজের রুমেই রয়েছে,তবে বধূ সজ্জিত অবস্থায়।

টুম্পা বলল,”কেমন হয়েছে রুমটা সাজানো?”

“হঠাৎ এইসব?”

“তোকে বিয়ে দিয়ে দিলাম আমাদের কলেজের প্রখ্যাত ঝালমুড়িওয়ালার সাথে। অর্থাৎ যেটা আমাদের কলেজ গেটে বসে ঝালমুড়ি বিক্রি করতো।”

“মানে!?”

“হ্যাঁ সত্যি।”

শ্রুতি বলল,”একটু পরে আসবে,বাসর করতে রেডি থাক।”

সব মাথার উপর দিয়ে গেলো। লাইট অফ করে ওরা বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর অন্ধকারের মধ্যে দেখলো সত্যিই একটা মানুষ ঢুকছে। ঘাবড়ে গেলো মিঠি। মানুষটা ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর দিকে ঝুঁকতেই আচমকা গলা চেপে ধরলো মিঠি। একপর্যায়ে বেডের উপর ফেলে বালিশ চাপা দিলো মুখে। কিছুক্ষণ পর লাইট অন করে বালিশটা সরালো। দেখলো শেহজাদ তাকিয়ে রয়েছে। তার মানে তাকে চিনতে পেরে ইচ্ছেই করেই মিঠি এমনটা করেছে। মিঠির চোখে-মুখে স্পষ্টত রাগ দৃশ্যমান। বেড থেকে নেমে যেতে নেয়। শেহজাদ হ্যাঁচকা টান দেয়।

“এতো রেগে আছো কেনো?”

“বর সাজার ইচ্ছে হয়েছে?”

“ওই একটু।”

রাগে কাঁপতে লাগলো মিঠি।

“ফুচকা খান গিয়ে।”

“আর ইউ জেলাশ?”

“আপনার দাদা জেলাশ।”

“আমার দাদা বেঁচে নেই,তবে থাকলে বোধহয় এতো সুন্দর বউটাকে দেখলে জেলাশ হতো।”

“হাত ছাড়ুন।”

“আসো বাসরটা সেরে ফেলি।”

“লজ্জা করে না?”

“লজ্জা গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছি ফুচকার সাথে।”
__________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here