তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১৬)

0
38

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১৬)
_________________________

তাকিয়ে রইলো মিঠি।

“এইভাবে তাকিয়ে থেকো না সুনেত্রা।”

“কেনো?”

“তোমার চোখের ভাষা উচ্চ মাধ্যমিকের ক্যালকুলাসের চেয়েও জটিল।”

আনমনা হলো মিঠি।

“তাতে কী হয়?”

“সর্বনাশ!”

“একদিন আব্বু বলেছিলেন,যেখানে নিজে ভালো থাকবি,সেটাই ভালোবাসা।”

“হ্যাঁ। সেটাও ভালোবাসা।”

“হ্যাঁ।”

“আমি তোমায় ভালোবেসে ভালো রাখতে চাই সুনেত্রা।”

মলিন হাসলো মিঠি।

“তবে আমি দোয়া করি,শেষ পর্যন্ত তোমাকে যে পাবে,সে যেনো তোমাকে হিরের মতো নয়,মুক্তোর মতো খোলসে আবৃত করে যত্নে রাখে। অর্থাৎ যে তোমারে পাইলো,সে যেনো তোমারে যত্নে রাখে।”

“খুব যত্নে থাকতে চেয়েছিলাম শেহজাদ। একটা সুন্দর পরিবার ও চেয়েছিলাম। আরো চেয়েছিলাম ঠিক আমার মতোই দেখতে এবং গুলুমুলু,ফোলা ফোলা গালের অধিকারী,কিউট,মিষ্টি,দুটো কন্যা সন্তান হবে। আমি তাদের অনেক ভালোবাসবো। আমি মায়ের আদর-ভালোবাসা পাইনি। তাই তাদের অনেক ভালোবাসবো আমার মা মনে করে। আর তাদের নাম দেবো,কুম কুম আর ঝুম ঝুম।”

“এতো চিন্তা করো না সুনেত্রা। যিনি জীবন দিয়েছেন তিনিই সবকিছু ভেবে রেখেছেন। রিযিকের মালিক কেবল আল্লাহ। তাই খারাপ সময় পেরিয়ে ভালো সময় আসবেই,ইনশাআল্লাহ!”

“মানতে গিয়েও আপনাকে মানতে পারি না শেহজাদ। আপনি ইচ্ছে করে আমাকে মায়া লাগাচ্ছেন।”

আচমকা ইমোশনাল হয়ে পড়লো মিঠি।

“মিঠি,তোমার হাতটা একটু দেবে?”

ছলছল নয়নে জিজ্ঞেসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।

“তোমার হাতের রেখায় আমার নাম লিখে দিই!”

“তাতে কী হবে?”

“তাহলে তুমি তোমার ভাগ্যকে নিয়ে আর হীনমন্যতায় ভুগবে না।”

“কেনো?”

“আমি তোমার হাতের রেখায় থাকতে চাই! তোমার ভাগ্যে শেষ অব্ধি থাকতে চাই। বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে দু’জনে একসাথে বৃদ্ধ হতে চাই।”

“কিন্তু বিধাতার কাছে আমার ভাগ্যকে নিয়ে এক আকাশ সমান অভিযোগ।”

“আর করো না। অসন্তুষ্ট হবেন বিধাতা। ক্ষমা চেয়ে নিও। নিশ্চয়ই তিনি যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন।”

“হয়তো!”

আনমনা হলো মিঠি।

“আচ্ছা,আমি কী কখনো মা হতে পারবো না?”

বলেই শেহজাদের চোখের অভ্যন্তরে চোখ রাখলো। মলিন হাসলো শেহজাদ।

“জানো,আল্লাহ কাউকে কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন,কাউকে সচ্ছলতা দিয়ে,কাউকে সুস্থতা দিয়ে,কাউকে অসুস্থতা দিয়ে,কাউকে সম্পদ দিয়ে,কাউকে সফলতা দিয়ে,কাউকে ব্যর্থতা দিয়ে,কাউকে সন্তান দিয়ে! আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারাই,যারা অবিচল,ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ থাকে! সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা ও বিশ্বাস করে! আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন! তুমি যেই প্রশ্নটা করেছো,সে-তো একমাত্র স্বয়ং আল্লাহই ভালো জানেন! কারণ তিনি সর্বজ্ঞানের অধিকারী! আল্লাহ তায়ালা সন্তান দিলে তোমার মাঝেই দিতে পারেন,আবার নাও দিতে পারেন কিংবা অন্যকারো মাধ্যমেও দিতে পারেন। তাই বলবো,এতো হতাশ হচ্ছো কেন,যেখানে আল্লাহ নিজেই বলেছেন,তোমার ভবিষ্যৎ তোমার অতীতের চেয়েও সুন্দর হবে! জানো,বেশ কিছুদিন পূর্বে আমি কোথাও পড়েছিলাম,“আল্লাহ দিতে দেরী করেন না,আবার তাড়াতাড়িও করেন না। আল্লাহ সঠিক সময়ে দেন।” অনেক সময় অনেক কিছু খুব করে চেয়েও যখন পাই না,তখন এই কথাটা আমাকে প্রচণ্ড অনুপ্রেরণা দেয় সুনেত্রা। আমার বিশ্বাস আমি যা চাই,আল্লাহ হয়তো একদিন আমায় সব দিবেন এবং সঠিক সময়ে দিবেন। ইনশাআল্লাহ!”

একনাগাড়ে বলে থামলো শেহজাদ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”তবে তুমি চাইলে ভালো কাউকে খুঁজে বিয়ে করে নিতে পারো। অর্থাৎ আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো। জীবন তো একটাই,আর জীবনটা কেবল তোমার। সুখে থাকার অধিকার সবারই আছে। আমিও চাই তুমি সুখী হও।”

“লাগবে না কিছু! আল্লাহ নাকি ম’রা গাছেও ফুল ফোঁটানোর সক্ষমতা রাখেন,মরুভূমিতে বন্যা বইয়ে দিতে পারেন। সব ক্ষমতা তিনিই এক আল্লাহ রাখেন। তিনি চাইলে সব সম্ভব! যদি তিনি রহম করেন তাহলে তিনি আপনার মাঝেই আমাকে সন্তান ও দান করতে পারেন কিংবা দিবেন,রহমত এবং রিযিক ও দিবেন। আমার অন্য কাউকে খোঁজা লাগবে না।”

প্রসন্ন হাসলো শেহজাদ।

“হয়তো।”

মাথা নাড়ালো মিঠি।

“কিছু কিছু ভালোবাসা খুব সুন্দর সুনেত্রা।”

“হয়তো।”

“তবে আমি ব্যতীত তোমার শরীর অন্য কেউ ছোঁয়ার আগে,তোমার দীর্ঘশ্বাসে অন্য কারোর বুক কেঁপে উঠার আগে আমার মৃত্যু হোক সুনেত্রা!”

“এমন কথা কেনো বললেন?”

“জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছুই হারিয়ে যায় সুনেত্রা! কিন্তু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে গেলে জীবনকে কেমন যেন অগোছালো মনে হয়! জানো,আত্মার সাথে মিশে যাওয়া সম্পর্কের বিচ্ছিন্ন হলে,মানুষ বেঁচে থেকেও জীবন্ত লা’শে পরিণত হয়। কাউকে পেয়ে হারানোর মতো তীব্র ব্যথা সহ্য করার মতো নয়। জানো,আমি ভীষণ রকমের ভঙ্গুর হয়ে আছি! এই বিশ্বাস,মায়া ভালোবাসা ভেঙে গেলে আমি গুঁড়িয়ে যাবো,এলোমেলো হয়ে যাবো। তাই বলছি,যেতে চাইলে মায়া আর ভালোবাসা জন্মানোর আগে চলে যেও। তবুও এলোমেলো করে যেও না। আমি আর সইতে পারবো না। জন্ম থেকেই কপাল পোড়া,তুমি এসে বুকটাও পোড়ানোর চেষ্টা করো না প্লিজ। তুমি আমাকে রোজ নিয়ম করে দুঃখ দিও,তবুও ছেড়ে যেও না। যদি থাকার মতো থাকো,তাহলে হাত ধরো,এমন শক্ত করে ধরো,যেমন করে শক্ত করে ধরে থাকে যুগের পর যুগ কংক্রিট দালানকোঠা।”

আচমকা মায়ের কথা মনে পড়তেই খুব ইমোশনাল হয়ে পড়লো মিঠি। বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো শেহজাদ।

“মিঠি শান্ত হও।”

নিজেকে সামলে নিলো মিঠি। চোখের জল মুছে বলল,”একটা কথা বলি?”

“বলো।”

“আপনি তখন লাভ স্টোরি বলেছিলেন,ওটা কী সত্যি?”

মৌন রইলো শেহজাদ।

“বলুন?”

“কিছুটা।”

“আর?”

“কিছু সাজানো।”

আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না মিঠি।

“আপনার সকল সমস্যা জানার পর আমি আপনাকে মেনে নিলাম শেহজাদ। তবে একটা কথা বলি,আমি নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েছি এই বুঝ দিয়ে যে,সবসময় নিজের অপছন্দ করা মানুষটি যে ভুল হবে এমনটাও নয় শেহজাদ। আপনি শবনমকে ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু সে ছিল একটা ভুল মানুষ। সব ভুলে আপনি এখন নতুন করে সবটা আবার শুরু করতে চাইছেন আমাকে ভালোবাসে। তাই আমি আপনাকে সঙ্গ দিবো। অনেক সময় সবকিছু শুরু থেকে শেষ হয় না শেহজাদ,অনেক সময় শেষ থেকেও নতুন কিছুর শুরু হয়। আমরা তো এইও জানি ভুল থেকেই মানুষ শিখে,আমরা না হয় শেষ থেকে শুরু করবো। আর কখনো কোনো অভিযোগ করবো না আপনার কোনো খুঁত নিয়ে। তবে এইটুকুই বলবো আপনাকে,যে অতীতে সবকিছু হারিয়েছেন! মনে রাখবেন,আপনি হয়তো সবচেয়ে উত্তম কিছু জেতার জন্যই হারিয়েছেন। আর আমার ভাগ্যকে আমি মেনে নিতে শুরু করলাম শেহজাদ। ভাগ্যে যা আছে,তাই হবে। মানুষ তো নিজের ভাগ্যের লিখন নিজে খণ্ডাতে পারে না। কথায়ই তো আছে,“বিধাতার লিখন যায় না খণ্ডান।” ঠিক তেমনি।”

মলিন হাসলো শেহজাদ। মিঠি এই ম্যাচিউর; আবার এই কতক্ষণ ইমম্যাচিউর। তবে ভালো লাগে। এছাড়াও সত্যি বলতে,যেসব মেয়েরা ভীষণ রাগী,জেদী এদের মন খুব নরম এবং ভালো হয়। এরা মানুষকে হুটহাট করে আঘাত করে বসে ঠিকই,কিন্তু শেষে নিজেই কষ্ট পায়। আর এরা সাংঘাতিক রকমের ভালোবাসতে পারে। কথায় আছে,যার মস্তিষ্কে রাগের পাহাড়,তার মস্তিষ্কই ভালোবাসার শৃঙ্গ। মিঠির কথাগুলো শুনতেই মনের অজান্তেই সম্মান চলে এলো।

“আপনার সাথে অনেক খারাপ বিহেভিয়ার করেছি! তার জন্য স্যরি। ফরগিভ মি।”

মৃদু হাসলো শেহজাদ।

“একটা কথা বলি?”

“বলো।”

“মানুষ নাকি তাকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়,যার মধ্যে সে নিজেকে দেখতে পায়।”

“হয়তো।”

“কিন্তু আমি তো আপনার মধ্যে আমার বাবা-মাকে দেখতে পাই শেহজাদ।”

মৃদু হাসলো শেহজাদ।

“বিয়ের প্রথম রাতে স্পষ্ট আমি আপনার মধ্যে আমার বাবা-মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি। তখন থেকেই আপনার উপর কেমন যেনো একটা মায়া কাজ করছিলো।”

কিছু বলতে পারলো না শেহজাদ। শুধু মলিন হাসলো।

“মিঠি!”

“হুম।”

“তুমি নয়তারার মতো হও। রোদে হাসবে,বৃষ্টিতে কাঁদবে! কিন্তু কথা দাও ভেঙ্গে পড়বে না। যখন কেউ আঙুল তুলে বলতে চাইবে,তুমি কিছু নও; সামান্য ফুল ছাড়া! তখন তাদের উত্তর দেবে,তুমিও না হয় বরং ফুল হয়ে দেখাও। কারো বুকপকেটে জায়গা করে নাও,কারো খোঁপার সৌন্দর্য বাড়াও,কারো বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রও। তুমিও বরং আমার মতো স্বার্থহীন নয়নতারা হও।”

“কথা দিলাম,আমিও স্বার্থহীন নয়নতারা হবো।”

“মিঠি তুমি,অন্য কারো হাতে তোমার সুখ আমানত দিও না,কারন সে হারিয়ে গেলে তোমার সুখকে আর তুমি খুঁজে পাবে না। পরে আমার মতোই হবে।”

“দেবো না,সঠিক মানুষটা ছাড়া। তবে যদি আল্লাহ আমার জন্য সুখ লিখে থাকেন,তাহলে পৃথিবীর কেউ আমার কাছ থেকে এটি ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আর যদি আল্লাহ আমার জন্য কষ্ট লিখে থাকেন,তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ এর প্রতিকার করতে পারবে না।”

“হ্যাঁ।”

হঠাৎ পকেট থেকে ছোট্ট ছোট্ট তিনটি বক্স বের করলো। মিঠির হাত টেনে অনামিকায় একটি ফিঙ্গার রিং পরিয়ে দিলো। তাকিয়ে রইলো মিঠি। কি সুন্দর! মুগ্ধ হলো সে।

“দেখো তো,তোমার পছন্দ হয়েছে সুনেত্রা?”

“খুবউ!”

মিঠির ফর্সা ভরা ভরা লতানো পুতুল পুতুল টাইপ আঙুলে রিংটির উপর সময় নিয়ে চুমু খায় শেহজাদ।

“সুনেত্রা।”

মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো মিঠি।

“বিয়ের আংটি বাম হাতের চতুর্থ আঙ্গুলে অর্থাৎ অনামিকায় কেন পড়ানো হয় জানো?”

“না।”

“এর কারণ এটি একমাত্র আঙ্গুল যার স্নায়ু সরাসরি আমাদের হৃদয় অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। মূলত,নারী-পুরুষের হৃদয়ের সাথে থাকে। যাতে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনই দু’জনার হৃদয়ের সাথে আঁটকে থাকে। সঙ্গত কিছু কারণে মনে করা হয় বাঁ-হাতের চতুর্থ আঙ্গুল,অর্থাৎ অনামিকা আঙ্গুলটি সরাসরি হৃদপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। যার কারণে এর নাম দেওয়া হয়,’ভেনা আমোরিস’ কিংবা ভালোবাসার ধমনি। অর্থাৎ প্রেম ভালোবাসার শিরা অনামিকা হতে হৃদপিণ্ডে পৌঁছেছে। আর অনামিকা হলো আংটি পরার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আঙ্গুল। এই কারণে একে রিং ফিঙ্গার ও বলা হয়ে থাকে।”

“ওহ! জানতাম না।”

“তবে জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদরা মনে করেন,এই আঙ্গুলের উপর সূর্য ও মঙ্গলের প্রভাব থাকে। যদিও এইসব জ্যোতিষ শাস্ত্র আমি বিশ্বাস করি না।”

মৃদু হাসলো মিঠি। ফের হাতে চুমু খায়।

“তোমাকে কিছু দিতে পারিনি। তাই আজ একসঙ্গে নিয়ে নিলাম।”

“এতো কিছুর প্রয়োজন ছিলো না। অল্পতেই আমি খুশি!”

“জীবনে বিয়ে একবার। প্রয়োজনে দু-বার। আমারটা না হয় ভিন্ন। বিয়েতে সবারই কম-বেশ স্বপ্ন থাকে। আমি চাই না তোমার স্বপ্নগুলো অপূর্ণ থাকুক! তোমার জন্য আমার যতটুকু সার্মথ্য ছিলো আমি ততটুকু করেছি মিঠি। তবে সব স্বপ্ন,ইচ্ছে হয়তো পূর্ণ করতে পারিনি। তার জন্য ক্ষমা করে দিও। আমি ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান নই। খুবই নিম্নবিত্ত। তোমাকে হয়তো নামী-দামী জিনিস এবং বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো না,কিন্তু অসীম ভালোবাসতে পারবো।”

“আপনার কী আছে তা আমি কখনো চাইনি শেহজাদ। তবে জানেন,আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে চাকুরীজীবি নয়,চাকরি প্রার্থী চেয়েছিলাম। কারণ আমি তার সফলতা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম এবং সেখানে কিছু অবদান রাখতে চেয়েছিলাম। এটা আদিখ্যেতা নয়। এটা সত্যি। আর আমি এও জানি,পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের চাহিদা কন্ট্রোলে রাখতে পারলেই জীবনটা ভয়াবহ সুন্দর!”

মুগ্ধ হলো শেহজাদ। মিঠির ভাবনাচিন্তা দেখে। আসলেই মিঠির ভাবনাগুলো বিচিত্র। যাতে অনেক সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। একটা বক্স খুলে মিঠিকে একটা লকেট পরিয়ে দিলো।

“তোমার জন্য পছন্দ হয়েছিলো। এটা সবসময়ই তোমার সাথে রেখো। কখনো খুলতে পারবে না।”

হাত দিয়ে ধরে দেখলো মিঠি। লাভ শেইপের ডায়মন্ড লকেট কি সুন্দর! দু’হাতে দুটো গোল্ড এবং ডায়মন্ড এবং সংমিশ্রণে গড়া গোলাপ বালা পড়িয়ে দিলো।

“বিয়ের পর নাকি মেয়েদের হাত খালি রাখতে নেই। যদিও আমি এইসব কুসংস্কার মনে করি। তবুও তোমার জন্য একজোড়া গোলাপ বালা কিনতে ভুললাম না। আমি চাই এই বালাজোড়া তুমি মাঝেমধ্যে পরিও,যখন খুব ভালো লাগবে।”

বালাগুলোর উপর তর্জনী বুলালো মিঠি। কি সুন্দর! পুরো বালাতে যেনো আস্ত জীবন্ত গোলাপ ফুটে রয়েছে,আর ডায়মন্ডগুলো যেনো ফুটন্ত ফুলের উপর পড়ে থাকা শিশির।

“আপনার পছন্দ অনেক সুন্দর শেহজাদ।”

“ধন্যবাদ। একটা কাজ করলে রাগ করবে না তো সুনেত্রা?”

“নাহ!”

মৃদু হেসে মিঠির কপাল থেকে সোনার টিকলিটা সরিয়ে নিলো। আরেক পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো। বক্স খুলতেই দেখলো একটা সিম্পল ডিজাইনের টিকলি। মিঠির কপালে পরিয়ে দিলো।

“তুমি বলেছিলে,শবনমকে যা করেছি,তোমাকে তা করতে না। কিন্তু শবনমকে আমি বিয়ের রাতে সব দিলেও টিকলি দিইনি। তাই তোমাকে স্পেশাল একটা টিকলি পরিয়ে দিলাম। মাঝেমধ্যে বাসায় একটু সেজেগুজে আমার সামনে এই টিকলিটা পরিও। অনাদরে ফেলে রেখো না। সবসময়ই যাতে ক্যারি করতে পারো মূলত,এইজন্যই বেশি গর্জিয়াস নিইনি,সিম্পল একটা ডিজাইনের নিয়েছি।”

কিছু বললো না মিঠি। তবে ভীষণ খুশি হলো এবং তার খুব ভালো লাগছে সময়টা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। স্পেশাল গিফট হিসেবে বিয়ের রাতে শবনমকে একজোড়া নুপুর দিয়েছিলো শেহজাদ,আর মিঠিকে টিকলি। তবে মিঠিকেও কোন একসময় একজোড়া সোনার নুপুর গড়িয়ে দেবে। আর চাইলে আজ দিতে পারতো,কিন্তু দেয়নি। শবনমের সাথে ভিন্নতা রেখেছিলো। একটা ছোট্ট বক্স মিঠির হাতে তুলে দিলো।

“এটা কী?”

“খুলে দেখো।”

দেখলো একটা একুশ স্টোন বিশিষ্ট ডায়মন্ড এর নোজপিন।

“তুমি তো নাক ফোঁড়াওনি,নয়তো নিজের হাতে পরিয়ে দিতাম। যখন ফোঁড়াবে তখন এটা পরে নিও। আমাদের গ্রামে কথিত,বিয়ের পর নাকি নাকফুল পড়তে হয়। খালি নাকে থাকলে নাকি স্বামীর অমঙ্গল হয়। যদিও এইসব কখনো বিশ্বাস করিনি। আমি কুসংস্কার মনে করি। তবে সৌন্দর্যের জন্য দিয়েছি। পড়িও। শবনমও সবসময়ই পরে থাকতো। তবে মন্দ লাগতো না।”

মাথা নাড়ালো মিঠি।

“আপনি আমাকে এতকিছু গিফট করছেন,কিন্তু আমি তো কিছুই দিতে পারলাম না।”

মাখনের ন্যায় মিঠির নরম,তুলতুলে গালে হাত রাখলো শেহজাদ।

“আমার জীবনের সবচেয়ে দামী উপহার তুমি,যেটা আমি টাকা দিয়ে নয় ভাগ্য করে পেয়েছি! তুমি আমার জন্য আস্ত একটা উপহার! তুমি আজীবন পাশে থাকলেই হবে,আর কিছু চাই না সুনেত্রা।”

মৃদু হাসলো মিঠি।

“সুনেত্রা,চোখ বন্ধ করো।”

চোখ বন্ধ করলো মিঠি। হঠাৎ নরম কিছুর ছোঁয়া পেলো মেদুর গালে। মিঠি তাকায়। দেখলো একগুচ্ছ গোলাপ থেকে একটা গোলাপ শেহজাদের হাতে। নিশ্চয়ই এটার ছোঁয়া পেয়েছে!

“ফুল নিবে না সুনেত্রা?”

মাথা নাড়ালো মিঠি।

“আগে বলো,ফুল নেবে নাকি ভালোবাসা নিবে?”

“ফুল হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক! ফুল ছাড়া ভালোবাসা কী করে হয়?”

“বাহ! অনেক জানো দেখছি! প্রেমে পড়েছো কারো?”

মাথা নাড়ালো মিঠি। চোখ কপালে তুলে বলল,”কার?”

“একজন কালো মানিকের।”

এই মুহূর্তে সত্যি শেহজাদের হাসি পেলো।

“কালো মানিকটা কী আমিই?”

লাজুক হাসলো মিঠি। হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়লো শেহজাদের।

“সুনেত্রা,বাইরে আকাশের দিকে তাকাও।”

মিঠি তাকালো।

“ওই দেখো চাঁদ!”

বলে পাশ ফিরতেই দেখলো মিঠি একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। হকচকালো শেহজাদ।

“চাঁদ না দেখে তুমি আমার দিকে তাকিয়ে রইলে যে সুনেত্রা?”

“আমি তো চাঁদ দেখছি!”

“কোথায়?”

“আমার সামনে।”

“আমি!?”

“আপনি আমার কালো চাঁদ।”

আচমকা শেহজাদের উষ্ণ মরুর বালুকার ন্যায় হৃদয়ে ঝড় বইলো।

“একথা তুমি আমাকে বলছো সুনেত্রা?”

“সন্দেহ আছে?”

“কনফিউজড!”

মৃদু হাসলো মিঠি।

“ফুল নাও।”

সবগুলো ফুল একসাথে মিঠির হাতে তুলে দিলো শেহজাদ।
____________

চলবে~
কপি নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here