#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৫)
________________________
ফের বলতে লাগলেন,”শুনো মিঠি,আজ যা সুন্দর পরশু তা অসুন্দরে পরিণত হতে পারে! এটাই জগতের নিয়ম! যেমন দুর্ঘটনায় কোনো সুদর্শন নারী কিংবা পুরুষের একটা হাত কিংবা পা নষ্ট হয়ে যেতে পারে! তেমনি অসম্ভব সুন্দর পরীর মতোন দেখতে কোনো রূপসীর মুখের ব্রুণ কোনদিন ভালো না-ও হতে পারে! পারফেক্ট ছেলেটার চাকুরিটা দুর্নীতির দায়ে চলে যেতে পারে! কিংবা বাড়ি-গাড়ি ধনদৌলতে পরিপূর্ণ দেখে যে ছেলেটিকে সবাই পছন্দ করেছিলো পাত্র হিসেবে,সেই ছেলেটির বাবা হওয়ার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে! যে মেয়েটির সৌন্দর্যে পৃথিবীর সকল পুরুষ দিশেহারা-দিওয়ানা,সংসার জীবনে সে বন্ধ্যা হতে পারে! কিংবা তার স্বামী পর-নারী,মদ গাঁজা,ইয়াবা অথবা জুয়ারিতে আসক্ত হতে পারে! তখনও কি জীবন সুন্দরই থাকবে? কখনো না। শোনো,যে সৌন্দর্য নিয়ে মানুষ অহংকার করে কিংবা বেটার অপশন বলে একজনকে ছেড়ে অন্যজনকে কাছে টেনে নিলো তার মধ্যেও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে! কিংবা এখন ত্রুটি না-ই থাকতে পারে,কিন্তু কখনো যে ত্রুটি ঘটতে পারে না এমনটা-ও কিন্তু নয়। সুতরাং কখনো উঁচু-নিচু,সুন্দর-অসুন্দর,পারফেক্ট-আনপারফেক্ট এইসব নিয়ে ভেদাভেদ করো না। কারো দূর্বলতায় আঘাত করে কাউকে কষ্ট দিয়ো না! কারো দীর্ঘশ্বাসের কারণ হওয়ার চেষ্টা করো না। কারো সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি করো না। যতটুকু পারো,মানুষকে ভালোবাসো,সম্মান করো। তুমি যদি কাউকে সম্মান করো কেবল তখনই তুমি সম্মানিত হবে। মানুষের আচরণেই তার প্রতি সম্মান আনে! কারণ মানুষ অন্তর থেকে সম্মান তাকেই করে যে সম্মান পাবার যোগ্য! জানোই তো এই সমাজে অযোগ্য মানুষও সম্মান পায় কিন্তু সেটা অন্তর থেকে নয়,পিছন ফিরেই তার দিকে উক্ত মানুষটি থুথু ছিটায়! জানো,পৃথিবীর সবচেয়ে দামী উপহার হলো সম্মান। সবচেয়ে সুন্দর মানসিকতা এবং ভালোবাসা অন্যকে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমেই ফুটে উঠে। কথায়,ব্যবহারে,বোঝাপড়ায়,বন্ধুত্বে,ভালোবাসায় সর্বক্ষেত্রে পরস্পরকে সম্মান করতে পারাটা ভীষণরকম জরুরি। কাউকে সম্মান করতে হলে পরিবার থেকে সেই শিক্ষাটা পেতে হয়। যেটা অনেকের মাঝেই থাকে না। আগে অন্যকে সম্মান করতে শিখো। তাকে বুঝতে শিখো। দেখবে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটার কাছ থেকেও তুমি সম্মান পাবে। আর যদি সম্মান না পাও তাতেও কিছু যায় আসে না। তুমি মানুষকে সম্মান করতে পারো এটাই তোমার সবচেয়ে সুন্দর যোগ্যতা! তুমি তোমার বিবেকের কাছে অনেস্ট ছিলে এটাই অনেক।”
একনাগাড়ে সব বলে থামলেন। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ফের বলতে লাগলেন,”নারীরা মনে করে তাদের প্রচুর অপশন রয়েছে। কারণ প্রচুর পুরুষ তাদের চেক-আউট করে,ইনবক্সে নক করে,ট্রাই করে,হিট অন করে। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে,এই অ্যাটেনশান-গিভার গ্রুপের অলমোস্ট নিরানব্বই শতাংশই সিম্প। এরা জাস্ট নারীসঙ্গই চায়। তোমার দায়িত্ব নেয়ার জন্য কেউ তোমার পিছু পিছু ঘুরে না। তুমি কোনো একটা ইনবক্স নকের রিপ্লাই দিয়ে দেখে বলো,তোমাকে পেতে হলে বাবার সাথে কথা বলে,মোহরানা দিয়ে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হবে,সিম্পিং ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। আর বাকি রইলো,যারা জানে-জিগার দিওয়ানা-মাস্তানা গ্রুপ। এদের সিংহভাগই জানে না তারা আসলে কী করছে। তাই অধিকাংশ প্রেমের সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রূপ নেয় না। এক্সেপশন আছে,কিন্তু সেটা এক্সাম্পল হতে পারে না। এরা চায় দায়িত্ব নিতে,তবে এখনই না,এখন এনজয় করি,পরে বিয়ে করবো। আবার যারা দায়িত্ব নেবে বলে দাবি করে,তারা দায়িত্বের পরিসীমাটাই জানে না। দায়িত্বের বাস্তবতা বুঝতে বুঝতে অনেকে দেবদাস হয়,আর পার্বতী অন্য কারো হয়ে যায়। যৌবনের পুরো সময়টা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য খরচ করা উচিত! অথবা যৌবনের শুরুতেই বিয়ে করে আগে আবেগ দমন করা উচিত! আবেগের দাস হয়ে দায়িত্বহীন সিম্পিং করে বেড়ানো নিতান্তই ব্যক্তিত্বহীনতা।”
বলেই থামলেন। সবশুনে মেজো মামী বললেন,”প্রতিটা কথা সত্য বলেছো ভাবী। দায়িত্ব নিতে চাওয়া আর মাথা পেতে দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য কয়েকশ আলোকবর্ষ। কিন্তু আমরা মেয়েরা বেশিরভাগই ভুল জায়গায় ভুল মানুষের জন্য সময় ব্যয় করি,এক্সপেকটেশন রাখি। ফলাফল একটা সময় জীবন থমকে যায়,এই সুন্দর পৃথিবীটা বিষাক্ত মনে হয়।”
“হ্যাঁ ঠিক। আমরা সঠিক মানুষকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিই,আর ভুল মানুষকে সঠিক ভেবে কাছে টানি। অবশেষে একুল-ওকুল দুই কুলই হারিয়ে ফেলি! আর এটাই মিঠিকে বুঝাতে চাই,তার মায়ের বিপরীতে তাকে পারিবারিক শিক্ষা দিতে চাই এগুলো বুঝ দিয়ে। এতে যদি সে বুঝতে পারে,পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষাটা পায়। আর সদয় হয় সম্পর্কটার প্রতি।”
“তোমার কথাগুলোয় আমিও একমত ভাবী।”
“একজন অচেনা অজানা,অপরিচিত মানুষের সাথে বিয়ে-সংসার,সারা জীবন এর মাঝে হাজারো মতভেদ,মান অভিমানের অনুবোধ আবার কোন সে মোহে একই আবহে পথ চলা! উপরওয়ালা প্রদত্ত সম্পর্কের লুকায়িত রসায়ন বৈ এ নেহাতই অসম্ভব। নিশ্চইয় যিনি কারিগর তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী!
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা যেন সুন্দরতম জটিল সমীকরণ।একটা নিয়ম অথবা চুক্তির কাগজ,কতক সাক্ষী,সুন্দর সামাজিক অনুষ্ঠান যদি সম্পর্ক টিকাতে পারতো,তাহলে দুনিয়াতে ডিভোর্স বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব থাকতো না৷ কাবিননামা বলে যে কাগজটা বিয়ের সময়ে আমরা করি,তা ডিঙিয়ে কেউ কোনোদিন বিবাহ-বিচ্ছেদের কথা ভাবতেও পারতো না৷ কাগজের বোধহয় অতোটাও জোর নেই।”
“আসলেই সত্য।”
“নিয়ম আর চুক্তি কখনোই সম্পর্ক টেকায় না মেজো। স্বামী আর স্ত্রী কতোগুলো সময় একটা ছাঁদের নিচে,কতো নিবিড়,কতো কাছাকাছি থাকে। এতো কাছাকাছি,শ্বাস-প্রশ্বাসেরও নিকটে থাকার পরেও কি সম্পর্ক ভাঙে না?কোন নিয়মের দোহাই,কোন চুক্তির শর্ত কি পারে সেই ভাঙন ঠেকাতে? প্রায়শই এতো আদরের সন্তানরাও কি পারে সম্পর্ক টেকাতে?”
“কখনো না।”
“বস্তুত সম্পর্ক টেকায় পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি,শ্রদ্ধা-সম্মান,দয়া-মায়া আর ভালোবাসায়। সম্পর্ক টেকায় পরস্পর পরস্পরের জন্য করা সেক্রিফাইস। সম্পর্ক টেকায় পরস্পর পরস্পরের প্রতি নেওয়া যত্নগুলো। এই সুন্দরতম নিবিড় সম্পর্ক একচেটিয়া কোন দায়িত্ব কর্তব্যবোধের নয় বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সহনশীলতা,মানিয়ে নেওয়ার সুন্দরতম মানসিকতা আদর্শ সম্পর্কের অন্যতম নিয়ামক। সম্পর্কে অবশ্যই যত্ন আর পরিচর্যার প্রয়োজন। চারাগাছের মতোই সম্পর্কগুলো পানি,সার আর পরিচর্যা না পেলে আস্তে আস্তে তা একদিন ম’রে যাবেই।”
“হ্যাঁ ঠিক।”
“পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছে একই ছাদের তলায় জনম পার করে দেয় কিন্তু ভালোবাসা হয়ে ওঠে না,অথচ এই একই সম্পর্কে অন্যদের জীবন ভরে উঠে পূর্ণতায় অভাব বোধহয় মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ায়! তবে শুধু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে দিয়ে ভালো-মন্দ হয় না। বরং আচরণ এবং মানসিকতাও ভালো-মন্দের প্রমাণ বহন করে। যে মানুষ একজন আরেকজনের সমস্যাগুলো বুঝতে চায় না,তার থেকে কী রূপ ভালো আশা করা যায়? কিছুই না! সংসার জিনিসটি বোঝাপড়ার বিষয়। এখানে একে-অন্যের সমস্যা,ভালো লাগা,খারাপ লাগা সবকিছু বুঝতে হবে যদি সুন্দর ভবিষ্যৎ ও চমৎকার একটি সংসার চায় তবে। আর মিঠিকে একটাই কথা বলবো,শোনো মিঠি,এই দুনিয়াতে অপূর্ণতা থাকে অনেক। আমার মতে থাকাও ভালো। কারণ এই অপূর্ণতা কাউকে সিজদা করতে শেখায়! আর কাউকে গুনাহ করতে শেখায়। তাই আমি মনে করবো তুমি সবসময়ই ফাস্ট অপশনটা বেছে নিও। ভুলেও দ্বিতীয় অপশন নয়। আর প্রতিটি মানুষই পরীক্ষার মধ্যে আছে। হয় নেয়ামতের পরীক্ষা,যেটা দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে ব্যক্তি কতোটা কৃতজ্ঞ,অথবা দুঃখ-দুর্দশার পরীক্ষা! যেটা দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে ব্যক্তি কতোটা ধৈর্য্যশীল। সবশেষে একটা কথাই বলবো,দিনশেষে ব্যতিক্রম কিছু হওয়ার চেষ্টা করো মিঠি। এখন যে মানুষটা আছে কিংবা রাতে ঘরে ফেরা মানুষটার হৃদয় প্রশান্তিকারীনি হওয়ার চেষ্টা করো। বিচ্ছেদের এই যুগে কারো চক্ষুশীতলকারীনি হয়ে আজীবন পাশে থাকার চেষ্টা করো। একটা বিশ্বস্ত কাঁধ রাখার চেষ্টা করো,সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে ঘরে ফেরা মানুষটার জন্য। বিশ্বস্ত দু’টো হাত রাখার চেষ্টা করো জীবনটা একসাথে কাটিয়ে দেবার জন্য। এমনই একজন বিশ্বস্ত ভরসা যোগ্য মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো যে অপর পাশের মানুষটার সকল অস্থিরতা,হতাশা কিংবা মন খারাপে সবার আগে তোমার কাছে ছুটে আসবে স্বস্তির জন্য,একটুকরো সুকুন পাওয়ার জন্য। আমি যতটুকু পারলাম তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছে।”
কথাগুলো বলা শেষে উনারা মিঠিকে খাইয়ে-দাইয়ে জ্বর এবং স্লিপিং মেডিসিন ও খাইয়ে দিলেন। এর কিছুক্ষণ পর মিঠি ঘুমিয়ে পড়লো। মিঠিকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিয়ে উনারা যাবার সময় শেহজাদকে বললেন,”কিছু মনে করো না শেহজাদ। একদম ছোট্ট মেয়ে। গায়ে গতরে বড় হলেও বয়সে বড় হয়নি। আর মা ম’রা মেয়ে,বাবা-মামাদের খুব আদরে বড় হয়েছে তো তাই একটু বেশিই আহ্লাদী আর রাগী। এখনো ম্যাচিউর হয়নি। বয়স কত! এখনও আঠারো হয়নি,সামনে হবে। আস্তে আস্তে মানিয়ে নাও। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। ছোটো মানুষ তো ভুল করলে মাঝেমধ্যে শাসন করবে,আবার আদরও করবে। আর বেশি পাগলামি করলে আমাকে ফোন করবে। দেখেশুনে রাখিও। ছোটো মানুষ,রাগের বশবর্তী হয়ে ভুলভাল কাজ করে বসবে। আর যেহেতু শবনমের কথা শুনলে ক্ষেপে যাচ্ছে,তাই আপাতত বলার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও একটা কথা না বললেই নয়,মেয়েদের না মানে হ্যাঁ আর হ্যাঁ মানে না। আবার অনেক সময় হ্যাঁ মানে হ্যাঁ,না মানে না। মেয়েরা যেটা করতে বারণ করবে ওটা ভুলেও করা যাবে না। আবার অনেক সময় ওটাই বেশি বেশি করতে হবে। মেয়েরা চলে যেতে বললে থেকে যেতে হয়। আবার অনেক সময় যেতে বললে কথা না বাড়িয়ে চলে যাওয়াই ভালো। মেয়েরা একা থাকতে চাইলে তাদের সঙ্গ দিতে হয়। আবার অনেক সময় একা থাকতে চাইলে তাদের একা ছেড়ে দিতে হয়। এ বিষয়গুলো বুঝতে পারে না বলেই অনেক ছেলে প্রিয় হয়ে উঠতে পারে না মেয়েদের কাছে। আর শোনো,পুরুষ মানুষের টাকায় এবং সৌন্দর্যে নারী আঁটকায় না নারী আঁটকায় পুরুষের দায়িত্বে,তার প্রতি যত্নে,মায়া ও ভালোবাসায়। আর মেয়েটা তার পরিবার ছেড়ে এসেছে কেবল তোমার ভরসায়। আর একজন নারীর স্বামী ঠিক থাকলে মেয়েরা সকল দুঃখ হাসি মুখে মেনে নিতে পারে।”
ফের বলতে লাগলেন,”তাই বলবো আপাতত সব ঠিক হওয়া অব্ধি মিঠি যা শুনতে পারছে না তা বলো না। বরং দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ না দেখিয়ে মায়া করো,ভালোবাসতে শুরু করো। আরেকটা কথা হলো,শবনম এখন তোমার অতীত। তাকে ভুলে যাওয়াটা তোমার জন্য মঙ্গল বলে আমি মনে করি। কারণ সে-তো আর ফিরবে না,ফেরার চান্সও নেই। তাই মিঠিকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো। নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখো। নিজের ঝুলিতে কিছু না থাক শুধু আত্মসম্মানটুকু বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। আর মানুষের জীবনে একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে ফিরে আসা কঠিন। শবনম শুধু তোমাকে ছেড়ে যায়নি বরং একেবারেই ডিভোর্স দিয়ে গেছে। তাই তার ফেরার আশা করাটা বোকামি বৈ কিছু না। তাই বলবো,কষ্ট হলেও ভুলে যাও। আর না হয় তোমার মনের মধ্যে কি আছে তা শুধু তুমিই জানো। এটা অন্যকে জানতে দিও না। এটা বোকামি হবে। আর শোনো,মানুষের জীবনে বিয়ে একবার,বিশেষ প্রয়োজনে দুইবার আর না হয় তিনবার। ভাগ্য করে মিঠির মতো মেয়েকে পেয়েছো,আদর,যত্ন,ভালোবাসা আর টুকটাক শাসন করে মানিয়ে নাও। দেখবে ভালো থাকবে। মিঠি এখন কাঁদা মাটির মতো নরম,যেমন করবে তেমন রূপ ধারণ করবে। তাই যেভাবে করলে ভালো হবে সেটাই করো। নিশ্চয়ই তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। আরো একটা কথা,একটা সত্যি কথা কি জানো,একজন পুরুষ মানুষ চাইলেই একটা সংসার টেকাতে পারে। পুরুষ মানুষ চাইলেই একটা রিলেশন শেষ পর্যন্ত বিয়ে অব্ধি নিয়ে যেতে পারে! কিছু আলাদা ব্যপার থাকে,কিন্তু দিনশেষে এটাই সত্যি যে,ছেলেরা চাইলেই সম্পর্ক ঠিক থাকে,বিয়ের সম্পর্ক সুন্দর হয়! আর ছেলেরা ঘাড়ত্যাড়ামি করলে,অবুঝ এর মতো আচরণ করলেই যতো ঝামেলা বাড়ে,ইগো দেখাতে থাকলেই সম্পর্ক দিন দিন নষ্ট হয়ে যায়। আমি আমার মতোই থাকবো বলে বসে থাকলেই শেষ,অথচ তারা যদি নিজের ইগো একসাইডে রেখে মেয়েটাকে বুঝে,কেয়ার করে,তাইলে মেয়েটা তাকে আরো বেশি দিবে। ছেলেদের দায়িত্ব অনেক,ভালোবাসা ও বেশি দেওয়া দরকার।”
নীরবে সব শুনলো শেহজাদ। তবে প্রতিত্তোর করলো না। ফোন নাম্বার দিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনারা।
১৪.
বেশকিছুক্ষণ পর উঠে এলো শেহজাদ। মিঠি ঘুমাচ্ছে,চোখের কোন বেয়ে পানি পড়ছে! কেনো যেনো খুব মায়া লাগলো। সে-তো ইচ্ছে করে মেয়েটার সাথে জড়ায়নি! তার মা-মামাদের চক্রান্তের শিকার সে। ভেবেছিলো মিঠিকে ডিভোর্স দিবে। কিন্তু কিভাবে? মিঠিকে ডিভোর্স দেওয়া শেহজাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পাঁচলাখ-দশলাখ দেনমোহর করেনি। মিঠির দালাল মামাগুলো ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহর করেছে। তাই তো রেগেমেগে কবুল বলে বেরিয়ে এসেছে। পাঁচ-দশ লাখ টাকা দেনমোহর মানা যায়,উপরন্তু না হয় পনের লাখ ; কিন্তু তাই বলে ত্রিশ লাখ! নেহাৎই এটা জুলুম,অন্যায়,অত্যাচার! আর এটা দেওয়া শেহজাদের পক্ষে অসম্ভব। সে কোনো ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান নয়। সে গ্রামের খুব সাধারণ এক পরিবারের সন্তান। তার একার রোজগারে তার পুরো পরিবার চলে,নিজের সংসার চলে এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কয়েকজনকে বাধ্য হয়ে হেল্প করতে হয় তাকে। অর্থাৎ তার উপর নির্ভরশীল বেশ কয়েকটা পরিবার। সেখানে এখন মিঠিকে ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহর কোথা থেকে দিবে? মিঠি হয়তো দেনমোহর নিতে চাইবে না,কিন্তু তার মামারা কি এই দেনমোহরের টাকা সহজে ছাড় দিবে? জীবনেও না। আর ইসলাম ধর্মে দেনমোহর এক টাকা হোক কিংবা দশ কোটি টাকা হোক পরিশোধ করতে হবেই। কারণ এটা স্ত্রীর হক,প্রাপ্য এবং পাওনা। এবার ডিভোর্স যে কারো পক্ষ থেকেই হোক না কেনো,স্বামীকে পরিশোধ করতেই হবে মাস্ট! ইসলাম ধর্মে দেনমোহরের টাকা নিয়ে কোনো এসপার-উসপার নেই। সকল পুরুষ তার স্ত্রীকে এটা দিতে বাধ্য! একশোবার বাধ্য! দীর্ঘশ্বাস ফেললো শেহজাদ। মেয়েটাকে মুক্তি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। ডিভোর্সের কথা জানতে পারলেই তো ওর দালাল মামাগুলো খুব আনন্দ পাবে। মিঠির সংসার ভাঙার জন্য খারাপ লাগবে না বরং টাকার জন্য প্রেসার ক্রিয়েট করবে তাকে। কিন্তু এতো টাকা একসঙ্গে শেহজাদ কোথায় থেকে দিবে? তার এতো টাকা নেই। খুব সাধারণ এক মানুষ সে আর ঢাকার মাল্টি ন্যাশনাল একটা কোম্পানিতে জব করে সে। তবে সেই মাইনে দিয়ে তাদের সুন্দর মতো হয়ে যায়। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মিঠিকে ডিভোর্স দেওয়া যায়,কিন্তু সব টাকা পরিশোধ করার আগে যদি তার মৃত্যু হয় তাহলে কে বহন করবে তার এতো টাকার ঋণ? আর তার কি ফিউচার বলতে কিছুই নেই? সারাজীবন মিঠির দেনমোহরের টাকাই শোধ করবে! এই টাকা হয়তো কারো কাছে কিছু না,কিন্তু তার কাছে অনেক কিছু! চিন্তায় অস্থির হলো শেহজাদ। শেহজাদ বুঝতে পারলো সে জঘন্য এক চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে ইচ্ছে করেই এমন ফাঁদে ফেলেছে। সে ভদ্র তবে বোকা নয়! সবই বুঝতে পারে কে কেমন। শেহজাদ সিদ্ধান্ত নিলো দেনমোহর তো একদিন না হয় একদিন পরিশোধ করতেই হবে,আর এখানে তার আত্মসম্মানবোধ বলেও কথা আছে। তাই ভাবলো গোপনে মিঠির নামে একটা একাউন্ট খুলে আস্তে আস্তে সব টাকা সেখানে জমা করে রেখে দিবে। তবুও ওর মামাদের হাতে ক্যাশ কোনো টাকা দিবে না। মিঠির প্রাপ্য হক থেকে কখনো তাকে বঞ্চিত করবে না।
_____________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।