#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৭)
________________________
সব গুছিয়ে রুমে যেতেই দেখলো মিঠি বসে আছে। মেডিসিন খাইয়ে দিলো। চোখ পড়লো মিঠির চুলের দিকে। ঠিক পিঠের মাঝ বরাবর লম্বা মিঠির চুলগুলো। ঝটলা পাকিয়ে আছে। কেন যেনো শেহজাদের ইচ্ছে করলো চুলগুলো আঁচড়ে দিতে। অবশ্য শবনমকেও আঁচড়ে দিতো। এটা শেহজাদের অভ্যাস। শবনমের কথা মনে পড়তেই খারাপ লাগলো। নিজেকে ধাতস্থ করে একটা চিরুনি নিয়ে মিঠির কাছে গেলো।
“মিঠি,আসো তো! তোমার চুলগুলো একটু আঁচড়ে দিই।”
চট করে অবিশ্বাস্য নয়নে শেহজাদের দিকে তাকালো মিঠি।
“আপনি চুল আঁচড়াতে পারেন!?”
ফের হ্যাঁ বলতে গিয়ে বলল,”আরেহ না না। তবে তোমার ঝটলা পাকানো চুলগুলো দেখে একটু আঁচড়াতে ইচ্ছে করছে কেনো জানি। আসো একটু আঁচড়ে দিই।”
“চিরুনিটা কার?”
“আমার।”
“শবনমের না তো?”
“আরেহ না। ওরটা কেনো নেবো।”
বারণ করলো না মিঠি। শেহজাদ খুব সুন্দর করে সময় নিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো। একটুও ব্যথা পেলো না মিঠি। মিঠির মনে হলো শেহজাদ মেয়েদের চুল আঁচড়ানোতে অভিজ্ঞ। মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”শবনমকে ও এইভাবে চুল আঁচড়ে দিতেন তাই না?”
“আরে না। ওর চুলগুলো অনেক লম্বা। আমার এতো ধৈর্য্য নেই লম্বা চুল আঁচড়ানোর।”
“আজকে স্টেইট ফরওয়ার্ড বলে দিচ্ছি,শবনমকে যা করতেন আমাকে একদম তা করতে পারবেন না।”
“আচ্ছা করবো না।”
মেয়েটা আবারো ক্ষেপে উঠেছে।
“ওই শবনমকে আমি জেলাশফিল করছি।”
মৃদু হাসলো শেহজাদ। কি সরল সিকারোক্তি। মিঠি এখনো ম্যাচিউরড হয়নি। তাই এমন ছেলেমানুষী করছে। নিজের জেলাশফিল করার কথাটাও বলে দিলো অবলীলায়।
“তোমার চুলগুলো ভীষণ সুন্দর মিঠি। একদম ঘন-কালো সিল্কি।”
নীরব রইলো মিঠি। সত্যি মিঠির চুলগুলো ঘন কালো,তারের মতো শক্ত এবং মোটা আর ঝলমলে। আরাম পেয়ে মিঠির চোখজোড়া মুদে এলো। কেমন দুলছে।
“আচ্ছা শুয়ে পড়ো। আমি পাশের রুমে আছি। কিছুর প্রয়োজন হলে ডাক দিও। ভয় পেওনা।”
মিঠি শুয়ে পড়লো। শেহজাদ লাইট অফ করে ডোর ভিড়িয়ে চলে গেলো। তার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে! সারা শরীরে ব্যথা। মিঠিকে এইবেলায় কোনোরকম হ্যান্ডেল করেছে,বাকি দিনগুলোতে কি হবে শেহজাদ ভেবে পেলো না। তবে বুঝতে পারলো অনেক নাটক আর মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। সোফার উপর শুয়ে পড়তেই ঘুম চলে এলো।
২০.
মাঝরাতের দিকে ঠাস করে কিছু পড়ার শব্দে আচমকা ঘুম ভেঙে গেলো মিঠির। পিট পিট করে তাকাতেই দেখলো ইয়া বড় সাদা কি একটা তার দিকে আসছে। হঠাৎ তার গায়ে ঝাঁপ দিলো। ভয় পেয়ে আচমকা চিৎকার করে উঠলো মিঠি। পাশের রুম থেকে মিঠির চিৎকার শুনতেই ঘুম ভেঙে গেলো শেহজাদের। একপ্রকার ছুটে এলো। লাইট অন করতেই দেখলো সাত তলার বিড়ালটা মিঠির গায়ের উপর। ভয়ে মিঠি চিৎকার করছে। বিড়ালটাকে সরাতে চাইছে! শেহজাদ বিড়ালটাকে ধরে বাসার বাইরে পাঠিয়ে দিলো। দ্রুত হাত ধুয়ে মিঠির কাছে এলো। ভয়ে মিঠি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। মিঠির চোখে-মুখে পানি ছিটাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর নিভু নিভু চোখে তাকালো মিঠি। শেহজাদকে দেখতেই কিছু বলতে নিবে তার আগেই বলল,”ভয় পেওনা। এটা বিড়াল।”
“বিড়াল!?”
“হ্যাঁ।”
“এত্তো বড়! কোথা থেকে এসেছে?”
“হ্যাঁ অনেক বড়। এটা পালা বিড়াল। আর এটা সাত তলার ফ্ল্যাট থেকে এসেছে।”
“তো পাঁচ তলায় কিভাবে এলো?মেইন ডোর তো বন্ধ।”
“ডোর বন্ধ হলেও ওরা আসতে পারে। লাফ দিয়ে গ্রিল বেয়ে খুব সুন্দর করে নিচ থেকে উপরে কিংবা উপর থেকে নিচে আসতে পারে। আর ব্যালকনি দিয়েই এসে রুমে ঢুকেছে। এই রুমের ডোর খোলা। আর পাশেই দেখো না ব্যালকনি রয়েছে।”
“এটা কিভাবে সম্ভব?”
“আমিও বিশ্বাস করিনি। পরে নিজের চোখেই দেখেছিলাম। ব্যালকনির ডোর খোলা রাখলেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে রাতে বেশি করে এমনটা। দেখি তোমার কোথায় ব্যথা দিয়েছে?”
“হাঁটু,উরু জ্বলছে!”
“ওখানে খামচে দিয়েছে?”
“মনে হচ্ছে।”
“দেখি!”
সালোয়ার তুলতেই দেখলো মিঠির ফর্সা হাঁটুর চামড়া ছিলে রক্ত বের হচ্ছে।
“ইশ! কি করেছে! আমি কাল আবারও কম্প্লিং করবো। এই নিয়ে অনেকবার করা হয়েছে তবুও রাতের বেলা বিড়ালগুলো ছেড়ে রাখে। কতবার নিষেধ করেছি এমনটা করতে না।”
শেহজাদ দেখলো মিঠির চোখে পানি।
“ব্যথা হচ্ছে?”
মাথা নাড়ালো। হচ্ছে! মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”ভয় পেওনা। বিড়ালগুলোকে রেবিস ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবুও সকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে। চিন্তা করো না।”
কাটা-ছেঁড়ার মলম লাগিয়ে দিলো।
“শুয়ে পড়ো। ভয় নেই। আমি ডোর আঁটকে দিয়েছি। আর আসবে না।”
লাইট অফ করে শেহজাদ চলে গেলো। ভয়ে মিঠি আর ঘুমাতে পারলো না। কোন কারণবশত ভয় পেলে মিঠির শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। এমনিতেই জ্বর। এবার আবারও পুরো শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো।
২১.
মিঠির চিন্তায় ঘুমাতে পারলো না শেহজাদ। মিঠির গোঙানির শব্দ পেলো। শেহজাদ উঠে এলো। দেখলো মিঠি কাঁপছে! বিড়বিড় করছে। চোখে পানি,কাঁদছেও। মায়া হলো শেহজাদের। বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে খুব। শেহজাদ মাথায় পানি ঢালতে লাগলো। দাঁতে দাঁত লেগে এলো মিঠির। ঠকঠক করে কাঁপছে মেয়েটা। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। জেনারেটরের সুইচ অন করে দেখলো জেনারেটর ও নেই। হতাশ শ্বাস ফেললো শেহজাদ। একটা মোমবাতি ধরালো। মিঠির ভেজা চুলগুলো মুছে হাত-পা,মুখ এবং শরীরের খোলা অংশগুলোও মুছে দিলো যতটুকু পারলো। উঠিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো। হঠাৎ মিঠি বলল,”আমার মাথা ব্যথা করছে!”
“আচ্ছা ম্যাসাজ করে দিচ্ছি।”
“হাত-পা ও ব্যথা করছে! কোমড় ব্যথা করছে! সারা শরীর ব্যথা করছে! আমার কেমন লাগছে!”
খুব খারাপ লাগলো শেহজাদের। বিড়ালটার জন্য এখন মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাগ হলো বিড়ালের প্রতি। কিন্তু অবুঝ প্রাণীকে তো কিছু করা যাবে না। সম্পূর্ণ দোষ মালিকের। কাল কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে আসবে। শবনমকেও কয়েকবার এমন করেছে। অভিযোগ করার পর থেকে আসতো না। এখন আজ আবার শুরু হয়েছে। তপ্তশ্বাস ফেললো শেহজাদ। মিঠির মাথা ম্যাসাজ করে হাতে-পায়ে,কোমড়ে মলম লাগিয়ে ম্যাসাজ করে দিলো,তবে সংকোচবোধ করলো না। মিঠি এখন তার বউ,লজ্জা-শরম আর সংকোচবোধ করে লাভ কি! তাদের মধ্যে তো সব হয়েই গেছে। শেহজাদ ভণিতা করতে পছন্দ করে না। কিছু কিছু জিনিস আছে জোর করে হলেও আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়,নয়তো ছেড়ে চলে যায়। তেমনি প্রিয় মানুষও এমন। দূরে দূরে,খাপছাড়াভাবে কিংবা ইগো দেখিয়ে থাকলে যেকোনো মানুষ হোক কিংবা প্রাণী চলে যাবে। শেহজাদ চায় মিঠি তার কাছে আজীবনের জন্য থেকে যাক! যদিও এটা কেবল তার একপাক্ষিক চাওয়া আর স্বপ্নই বটে! দীর্ঘশ্বাস ফেললো শেহজাদ।
২২.
আরাম পেতেই আবেশে চোখ মুদে ফেললো মিঠি। হঠাৎ নিভু নিভু চোখে তাকালো। দেখলো মোমবাতির কমলাভ আলোয় শেহজাদকে খুব মায়াবী লাগছে! মোমবাতির মৃদু তাপে কৃষ্ণবর্ণের মানুষটা ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। মিঠির কাছে কি সুন্দর লাগছে! মিঠি তাকিয়ে রইলো। কালো মানুষ ও এতো সুন্দর হয়!?শেহজাদকে না দেখলে মিঠি জানতোই না। দেখলো শেহজাদের নাক ঘামিয়েছে। নাকের ডগায় মুক্তো দানার মতো বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। মোমবাতির কমলাভ আলো পড়তেই ঘামের কণাগুলো চিকচিক করছে হীরকচূর্ণ পাথরের মতো। ঘোর লেগে গেলো মিঠির। আচমকা উঁচু হয়ে শেহজাদের ঘাড়ে হাত রেখে নিচু করে নাকের ডগায় চুমু খেলো। হতভম্ব হলো শেহজাদ। হঠাৎ তার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই মিঠি নিজের মধ্যে নেই। নয়তো এমন কাজ ভুলেও করবে না মেয়েটা। শেহজাদের চোখে চোখ রাখলো মিঠি। জড়ানো গলায় বলল,”আপনি খুব সুন্দর শেহজাদ! খুবউ!”
শেহজাদের বিশ্বাস হলো না এই কথা। তবে তার কানে প্রতিধ্বনি হয়ে বাজতে লাগলো কথাটা। হঠাৎ শরীরটাও কেমন গরম হয়ে গেলো। আরো ঘামাতে লাগলো। অদ্ভুত আবেশ অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরলো।
“আপনি ভীষণ সুন্দর শেহজাদ! কালো মানুষ এতো সুন্দর হয় আপনাকে না দেখলে জানতাম না! এতো সুন্দর না হলেও পারতেন।”
শেহজাদ বুঝতে পারলো মিঠি অচেতন। হুট করে আবার কি থেকে কি হয়ে যায় শেহজাদ ভয় পেতে লাগলো। এমনিতেই তার সারা শরীর উষ্ণ হয়ে গেছে মিঠির চুমু খাওয়ায় আর কথাগুলো বলায়। যতো যা-ই হোক সে একজন পুরুষ।
“মি..মিঠি ঘুমাও।”
কম্পিত গলায় বললো শেহজাদ। মিঠি শুনলো না। ফের বলল,”আপনি চাঁদের মতো সুন্দর না! কিন্তু তাঁরার মতো সুন্দর! আলোকিত!”
শ্বাস আঁটকে রইলো শেহজাদ। এমন কথা এর পূর্বে কেউ কখনো বলেনি তাকে। শবনম ও না। কিন্তু মিঠির মুখ থেকে শুনতেই শেহজাদের কেমন অনুভূতি হচ্ছে তা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। শেহজাদের সারা শরীরের কম্পন ছড়িয়ে গেলো। মোমবাতির কমলাভ আলোয় শেহজাদকে চমৎকার দেখাচ্ছে মিঠির কাছে। কেমন লোভ লাগছে ঘেমে যাওয়া ওই নাকের ডগাটা! মুক্তো দানার মতো বিন্দু বিন্দু ঘামের কণাগুলো টইটম্বুর হয়ে আছে পুরো নাক জুড়ে! আচমকা উঁচু হয়ে শেহজাদের ঠোঁটজোড়ায় নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো মিঠি। ঠিক আগের রাতে যেমনভাবে শেহজাদ করেছে,তেমন ভাবেই। চোখ বুজতেই আচমকা দৃশ্যগুলো মিঠির চোখে ভাসতে লাগলো। মিঠির ছোঁয়ায় বিদ্যুৎ খেলে গেলো শেহজাদের পুরুষালী সর্বাঙ্গে। একরাশ হীম শীতল শিহরণ বয়ে গেলো শিরদাঁড়া বেয়ে। শেহজাদ বুঝতে পারলো পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মিঠি তাকে চাইছে! খুব করে চাইছে! সায় দিতে হবে! আচমকা এক ঝাপটা বাতাস বইতেই হুট করে মোমবাতি নিভে গেলো। একে অপরকে আঁকড়ে ধরে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো।
২৩.
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে অন্যরকম অবস্থায় আবিষ্কার করলো মিঠি। খালি গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে শেহজাদ। মিঠি তার বুকের নিচে। হঠাৎ চোখ বুজলো। রাতের বেশকিছু দৃশ্য মনে পড়লো। লজ্জায় ফর্সা গালগুলো রক্তিম আভায় ছেয়ে গেলো। শেহজাদের দিকে তাকাতে পারলো না। শেহজাদকে সরাবোর চেষ্টা করতেই জেগে গেলো। উঠে জামাকাপড় ঠিক করে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। দেখলো চোখ বুজে রয়েছে মিঠি। তবে মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসানো। শেহজাদ একটু ঘাবড়ে আছে। মিঠি আবার কখন কি শুরু করে দেয়। এই মেয়ের তো আবার সেধে সেধে ঝামেলা করার অভ্যাস রয়েছে। ছোটো মেয়ে বিয়ে করে বেচারা মহা-ফ্যাসাদে আছে। আজ কিন্তু তার দোষ নেই। মিঠি নিজেই তাকে কাছে টেনেছে। সে একজন পুরুষ। জৈবিক চাহিদা কমবেশ সবারই থাকে,তারও ছিলো। চোখ বন্ধ করে মিঠি শুয়ে রইলো। কেমন অস্বস্তি লাগছে তার! বুঝতে পারলো শেহজাদ। তাই মিঠিকে স্বাভাবিক করার জন্য বলল,”মিঠি উঠো। বুয়া এসেছে,বিছানা পরিষ্কার করে রুম ঝাড়ু দেবে।”
উঠে বসলো মিঠি। শরীরে তেমন একটা জ্বর নেই। তবে কম। শেহজাদ লক্ষ্য করলো মিঠির শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখ-মুখ কেমন মলিন দেখাচ্ছে!
“মিঠি,চলো শাওয়ার নিবে। ব্রেকফাস্ট করে ডক্টরের কাছে যাবে।”
শেহজাদ স্থির করলো মিঠির সাথে সুন্দর,স্বাভাবিকভাবে এবং ভালো ব্যবহার করবে। আর প্রয়োজনে শক্ত কথার আশ্রয় নিবে। তাহলে মিঠি কিছুটা লাইনে এসে যাবে। এই যে গোটা একদিনে অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। এজন্যই আমাদের নবীও বলেছেন,শত্রুর সাথে সদব্যবহার করতে। মিঠির শরীরে কাপড় জড়িয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। জামাকাপড় আর টাওয়াল দিলো।
“একা শাওয়ার নিতে পারবে?”
মৌন রইলো মিঠি।
“মাথা ঘুরে পড়ে যাবে না তো?”
“আপনি যান। আমি পারবো।”
“শোনো,ডোর ভিড়িয়ে রাখো। লক করো না। এদিকে কেউ আসবে না।”
মিঠি সায় দিলো। শেহজাদ ভয় পাচ্ছে,ঠাণ্ডা মাথায় মিঠি আবার সু’ই’সা’ই’ড এটেম্প করবে না তো! মেয়েটাকে ঠিক বুঝা যায় না। এই হুট ঝড়-বৃষ্টি-রোদের মতো মেয়েটার একেকবার একেক রূপ!
“গিজার অন করে দিয়েছি। তুমি শাওয়ার নাও। আমি আছি। ঠাণ্ডা লাগিয়ো না।”
শেহজাদ বেরিয়ে এলো। মিঠির ভালো লাগছে যে শেহজাদ তার খুব খেয়াল রাখছে,তাকে কেয়ার করছে,সব দেখিয়ে-শুনিয়ে দিচ্ছে। শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষণ পর মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো মিঠি। মিঠির দিকে চোখ পড়তেই মুগ্ধ হলো শেহজাদ। এতো সুন্দর,স্নিগ্ধ,সতেজ আর মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে। চোখ সরিয়ে নিলো শেহজাদ। ততক্ষণে বুয়া সব গুছিয়ে পরিপাটি করে নাস্তাও বানিয়ে টেবিলে দিলো।
“ব্রেকফাস্ট করবে আসো।”
নীরবে শেহজাদের পিছু গেলো মিঠি। ব্রেকফাস্ট শেষে বলল,”ডক্টরের কাছে যাবে।”
মিঠি সায় দিলো। লিফট থেকে বেরুতেই বাড়ির একেকজন একেক দিক থেকে সিসি ক্যামেরার মতো তাকিয়ে রইলো। মিঠি বিব্রতবোধ করলেও শেহজাদ গুরুত্ব না দিয়ে দ্রুত একটা সিএনজি ডেকে উঠে পড়লো। মানুষের কাজই তো সিসি ক্যামেরার মতো নজরদারি করা। কার কি হয়েছে না হয়েছে এইসব দোষত্রুটি খোঁজা। তাছাড়া সে কোনো অনৈতিক কাজ করেনি। শরীয়ত অনুযায়ী বিয়ে করেছে।
২৪.
ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো মিঠিকে। চেক-আপ করে ডক্টর জানালেন,মিঠির রক্তশূণ্যতা। আর্জেন্ট ব্লাড স্যালাইন দিতে হবে। সাথে সাথে মিঠিকে অ্যাডমিট করে ব্লাড স্যালাইন দিলো। মিঠি ঘুমিয়ে পড়তেই নার্সের তত্বাবধানে রেখে শেহজাদ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো। মিঠির জন্য শপিং করা লাগবে। তাই এই সুযোগটুকু হাতছাড়া করতে চাইলো না। শপিংয়ে গিয়ে শপিং করায় মন দিলো। হঠাৎ দূর থেকে শেহজাদকে দেখে ফেললো শবনম। সেও শপিং করতে এসেছে। এই শপিংমলটা তাদের দু’জনেরই খুব প্রিয়। সবসময়ই এখান থেকেই তারা শপিং করতো। তাই দু’জনে এখানেই এলো। তবে কাকতালীয়ভাবে শেহজাদের সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি শবনম। সন্দিহান হয়ে এগিয়ে এলো। আচমকা জিজ্ঞেস করলো,কার জন্য শপিং করছো?”
শবনমের স্বর শুনতেই ভড়কে গেলো শেহজাদ। তবে স্থির রইলো। কোনো প্রতিত্তোর করলো না। শেহজাদের একটাই কথা,শবনম পরকীয়া করে,স্বইচ্ছায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। তার ভালোবাসার মূল্যায়ন করেনি। এখন তার একাকিত্বের জীবনে হুট করে মিঠি এসেছে! আর সেটা যেভাবেই হোক এসেছে। আল্লাহ-ই হয়তো পাঠিয়েছে কোন ইস্যু করে। এখন সে মিঠিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় শেষ পর্যন্ত। শবনমকে আর মনে করে শুকনো ক্ষত তাজা করতে চায় না। শবনম এবার অধিকারের সহিত শেহজাদের বাহু ঝাঁকিয়ে বলল,”কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়? শুনতে পাও না?”
“তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”
“ইগনোর করছো?”
“হ্যাঁ।”
“বেশ! শপিং করছো কার জন্য সেটা জানতে চাই?”
“বলতে ইচ্ছুক নই।”
“তুমি আমার সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারো না শেহজাদ।”
“তুমি যেতে পারো। বিরক্ত করো না।”
“বিয়ে করে নিয়েছো?”
“আমার ব্যপারে এতো জানার আগ্রহ কেনো তোমার?”
“এই তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা?”
তাচ্ছিল্য করলো শবনম। মৌন রইলো শেহজাদ। বিয়ের কথা শুনলে শবনম সহ্য করতে পারবে না। তাই বললো না।
“উত্তর দাও শেহজাদ?”
“বিরক্ত করো না শবনম।”
“আমাকে তোমার কবে থেকে বিরক্ত বলে মনে হচ্ছে?”
“শোনো,তুমি আমাকে স্বইচ্ছায় ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছো। বেশ সুখেই আছো বুঝা যাচ্ছে। আর শোনো,সুখে আছো আমাকেও থাকতে দাও। সুখে থাকার অধিকার সবার আছে। আমার জীবন নিয়ে আর ইন্টারফেয়ার করো না। কারণ সেই রাইট এখন আর তোমার নেই। তুমি এখন আমার জন্য পরনারী। অনাধিকার চর্চা করো না।”
“সপ্তাহ না পেরুতেই পরনারী হয়ে গেছি?”
“অফকোর্স।”
ফুঁসে উঠলো শবনম। গুরুত্ব দিলো না শেহজাদ।
“কার জন্য শপিং করছো বলো শেহজাদ?”
“বললাম তো কেউ একজনের জন্য।”
“সেই কেউ একজন কে?”
“সী ইজ অ্যা স্পেশ্যাল ওয়ান।”
ধক করে উঠলো শবনমের বুকটা।
“তোমার গার্লফ্রেন্ড?এফেয়ার আছে তোমার?”
“হবে একজন।”
“ও তো আন্ডারগার্মেন্টস কিনবে না?”
“কিনবো না কেনো! অবশ্যই কিনবো! মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থাংকস। ভুলেই গেলাম।”
দাঁতে দাঁত চাপলো শবনম। শেহজাদ শবনমের সামনেই মেয়েদের আন্ডারগার্মেন্টের কর্ণারে ঢুকে গেলো। শবনমকে দেখিয়েই কয়েকটা প্যাক করতে বললো। সারা শরীর জ্বলতে লাগলো শবনমের। সে ব্যতীত অন্য কোনো নারীর জন্য শেহজাদ আন্ডারগার্মেন্ট কিনছে! শবনমের সহ্য হলো না।
“এইসবের মানে কী শেহজাদ?”
“জাস্ট বিরক্ত করো না।”
ফুঁসতে লাগলো শবনম। এইসব কার জন্য কিনছে! সে ডিভোর্স না দিতেই লোকটা আবার কাকে জুটিয়েছে! অশান্তি লাগছে শবনমের।
“আমি তোমায় বিরক্ত করছি?”
“তা নয়তো কী?”
____________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।