#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ১৬
( কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ।)
কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। ইনায়ার জীবন স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। তিথি ইনায়ার কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছে সেদিনই। ইনায়া আর তিথি খুব মিলে মিশেই থাকছে। এইকয়দিনেই তিথি অনেকটা ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠেছে ইনায়ার সাথে। সকাল হয়েছে অনেক আগেই। ইনায়া মাত্র ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা নিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়েছে। আজ ভার্সিটিতে ক্লাস নেই। তাই ইনায়া ভেবেছে বাইরে বের হবে। দুটো টিউশনি নিয়েছে ইনায়া। মিজানুল আর সোহানার টাকা সে নিতে চায় না আর। নিজেকে গড়তে হবে আগে। তিথি সকাল সকাল গোসল শেষে ইনায়ার পাশে দাঁড়ায়।
-” আজকের দিনে প্ল্যান কি তোমার? ”
ইনায়া পাশে দাঁড়ানো তিথির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ব’লে,
-” আজ একবার ওই বাড়িতে যাব। তারপর বিকালের দিকে টিউশন শেষে ফিরব। ”
-” টিউশনের কি দরকার? বাবা ভাইয়া শুনলে ভিষণ রাগ করবে। ”
ইনায়া হাসল তিথির কথায়। টেবিলের উপর কাপটা রেখে ঘুরে তিথির দিকে তাকিয়ে, আলতো হাসে।
-” কতকাল আর অন্যের ভরসায় থাকব? নিজেকে নিজের কাছেই ছোট মনে হয়। এবার নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে যে। ”
তিথির মন আবারও বিষাদে ছেয়ে যায় ইনায়ার জন্য। এই মেয়েটার জীবনটা আসলেই অস্থিরময়। কিন্তু ইনায়া বড্ড শান্ত নিরুত্তর। তিথি আর কিছু বলে না। তিথি আর ইনায়া রেডি হয়ে বের হয় নিজ নিজ গন্তব্যে।
আলিশান বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে জায়ান। মেজাজ বিগড়ে রয়েছে তার। কাঁধের ঘা টা শুকানোর পথে। এইভাবে রোগী হয়ে বাড়িতে বসে থাকাটা তার মোটেও ভাল লাগছেনা। বাবার কড়া আদেশ বাড়ির বাইরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দিবে। যাতে করে আর রাজনীতির নাম মুখে যেন না আসে। ফাহাদের অভিব্যক্তি ও একই রকম। সাথে তো মিনারা বেগমের ফেচফেচ আছেই। সব মিলিয়ে অতিষ্ঠ হলেও মনের ভেতর আরও একটা জিনিস পোড়াচ্ছে তাকে। দরজায় নক হওয়ায় ধ্যান ভাঙে জায়ানের। একই ভাবে শুয়ে মানুষটিকে আসতে বলে। ফাহাদ ঘরে ঢুকে জায়ানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পরনে কমোড়ে সাদা টাওয়াল আর উদাম শরীর। কাঁধের ক্ষতটা ব্যান্ডেজ করা জায়ানের। ফাহাদ পাশে বসে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” এমন নেকেড হয়ে আছিস কেনো? বউ তো নাই যে সিডিউস করবি? ”
জায়ান শান্ত চোখে ফাহাদের দিকে তাকায়। শুয়া থেকে উঠে বসে। দু’হাতে খাটের কার্নিশে ভর করে ঘাড় বাঁকায়। অতঃপর গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” খলিলের কি খবর? ”
-” আর বলিস না। শালা বড্ড বার বেড়েছে। আজ বিকালে সাইন রোডে সমাবেশ ডেকেছে। ইলেকশন ও সামনে আর মাত্র কিছুদিন। এবার আটঘাট বেঁধেই নেমেছে। আমাকে নাকি দাঁড়াতেই দেবেনা। আমাদের লোকগুলো কেও হায়ার করার চেষ্টা করছে। তোকে গুলি করে নাকি আমাদের শাসিয়ে তার পাওয়ার দেখিয়ে গেছে। ”
‘ শালা কুত্তা ‘ বিরবির করে বলে উঠে জায়ান। সেদিন ইনায়া পাশে থাকায় কিছু করতে পারেনি সে। না হলে বুঝিয়ে দিত জায়ান করিমকে এতো সহজে নেভানো যায়না। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে সে কুটিল হেসে বলে,
-” ও আজ বিকালের সমাবেশে ঢুকতেই পারবেনা। তার আগেই ওর হাড় ভেঙ্গে আমি নল্লি বানাবো। আর ওর ছেলেগুলো কে নল্লি চিবাতে দিবো। ”
-” মানে তুই কি ওর সাথে মারামারি করতে যাবি? ”
আঁতকে উঠল ফাহাদ। জায়ান রহস্যময় একটা হাসি দেয়ে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-” শোন জায়ান একে-তো তুই অসুস্থ। তার উপর আবার বাবা। দাদা থাকতে আমাদের কি বলেছিল মনে নেই? বলেছিল, রাজনীতি ঢুকলে কতো কুত্তা এসে পায়ে কামড়ে ধরবে। আমরাও যদি উলটে সেই কুত্তার পায়ে কামড়ে ধরি, তাদের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কি রইল। আমারা সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো। কোনো হাতাহাতি মারামারি তে যাব না ব্যাস। ”
ফাহাদের কথায় হাসি পায় জায়ানের। সে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
-” এতোদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছো? রাজনীতিতে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন না করলে গদিতে টিকে থাকা অসম্ভব। আমি বাবা করো কাছে ঋণী হয়ে থাকতে চাই না। খলিলের পাওনা ওকে ঠিক বুঝিয়ে দেবো। সেদিন ইনায়া না থাকলে ওর বারোটা বাজাতাম। ”
ফাহাদ হতাশ হয়ে যায়। সমাবেশের খবরটা জায়ান কে দেওয়া তার উচিত হয়নি। কিছুতেই জায়ানকে বাড়ির বাইরে যেতে দেবে না ফাহাদ। তাকে দমাতে বিপক্ষের লোক তার ভাইকে টার্গেট করেছে। তার পরিবারকে সেভলি রাখতে হবে ভাবছে ফাহাদ। হুড়মুড়িয়ে হঠাৎ করে ঘরে ঢুকে পরে তিথি। ফাহাদ আর জায়ান এক যোগে সেদিকে তিথির দিকে তাকায়। তিথি জায়ানের পাশে বসে পরে।
-” আজকে ক্লাস নেই। তাই তোমাকে দেখতে চলে এলাম। ”
-” এমন হুটহাট রাস্তায় চলাচল কম করবি এখন থেকে। মিসু আর দিবার সাথে হুটহাট এখানে সেখানে চলে যাসনা। ”
ফাহাদের কথায় হাসে জায়ান। তিথি বোকার মতো ফাহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ‘ কেন ‘ অকপটে জানতে চাইল তিথি। ফাহাদ মিনমিনে স্বরে বলে,
-” আর বলিস না অপজিট পার্টি তেতে উঠেছে। না জানি কখন কি হয়। ”
তিথি একটু হাসে। মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
-” তুমি চিন্তা করোনা। আমি এখন ইনায়ার সাথে বেশীরভাগ হলের রুমেই থাকি। ”
ইনায়ার নাম শুনে জায়ান নড়েচড়ে বসে। মুখ গম্ভীর করে নিধি কে জিজ্ঞেস করে,
-” কেমন আছে সে? ”
-” আছে একরকম। বিষাদে দিনগুলো কাটাচ্ছে মেয়েটা। তারপরও মুখে হাসি বজায় রাখে। গত কয়দিন যাবত টিউশনিও করছে। নিজের পায়ে নাকি দাড়াতে হবে। তাই নিজ খরচটাও সে চালাতে চায়। ”
তিথির কথায় দুই ভাই নাখোশ হয়ে যায়। ইনায়া কেন টিউশন করবে? তাদের কি কম আছে নাকি? ফাহাদ উচ্চ স্বরে বলে,
-” এটা আবার কেমন বোকামি? আমরা আছি কি করতে? ইনায়া এখন পড়াশোনায় ফোকাস করুক না। চাকরি না হয় পড়াশোনা শেষ করে করবে। তুই ওকে নিষেধ করিস নি? ”
-“করেছি তো ভাইয়া। তার কথা ঘুরেফিরে একটাই।”
তিথি মলিন মুখে বলে। জায়ান বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে,
– ” মেয়েটা অত্যন্ত ঘাড়ত্যাড়া। দেখনা আমাকে এই দশ দিনে এসে একবারও দেখে গেলো না। অন্যদিকে টিউশনি নিয়ে পরেছে। ”
জায়ানের কথায় তিথি আর ফাহাদ উভয় মাথা নাড়ায়। ফাহাদ মুচকি হেসে বলে ওঠে,
-” কেনো ভাই? তোকে দেখতে আসা কি তার দায়িত্ব ছিল না কর্তব্য ছিল? ”
জায়ান শান্ত গলায় বলল,
-” কোনোটাই না। মানবিক দিক থেকেও তো পারতো? যেখানে সে নিজেই আমাকে হসপিটাল অবধি নিয়ে গেছিল। ”
ফাহাদ তিথি কে চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতেই সে হেসে উঠে। তারপর জায়ান কে ধরে জিজ্ঞেস করে,
-” তুমি ইনায়ার কথা একটু বেশী ভাবছো না ?”
জায়ান জবাব দেয় না। মুখটা গম্ভীর করে রেখে দেয়। ফাহাদ আর তিথি একটু বেশিই বুঝে সব বিষয়ে সেটা জায়ানের ধারণা।
-” তোরা আমার রুম থেকে বের হো। আমি কাপড় পরবো। ”
জায়ানের কথায় তারা উঠতে নিলেই মিনারা বেগম আসেন কফি নিয়ে। তিথি ঝটপট গরম কফি নিয়ে বসে পরে আবার ফাহাদও তাই। জায়ানের হাতে কফির কাপ দিতে দিতে মিনারা শান্ত গলায় বলে,
-” ইনায়া কে নিয়ে তার ডিভোর্স নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবে না। তার জন্য তোমার বাবা আর ভাই আছেন। তুমি নিজের কাজে ফোকাস করো ঠিক মতন। ”
কথাটা বলে মিনারা বেগম চলে গেলেন। তিন ভাই বোন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। জায়ান মুচকি হেসে কফি থেকে স্লিপ নিয়ে বিরবির করে বলে,
-” আমি আমার নিজে কাজেই তো ফোকাস করছি মা। সেটা তুমি বুঝবে না। ”
মির্জা বাড়িতে ইনায়া এসেছে অনেক্ক্ষণ যাবত। সবার সাথেই কথা হয়েছে। কিন্তু একবারের জন্যও সোহানা মির্জার সাথে কথা হয়নি তার। নিপা গিয়ে দুবার ডেকেও এসেছেন। কিন্তু তিনি আসেনি। নিপার থেকে ইনায়া জানতে পারে, সোহানা আর নাহিদ মির্জার সম্পর্ক সেই আগের মতোই রয়েছে। ইনায়া আয়েশা মির্জা আর নিধির সঙ্গে কথা বলছিল। হঠাৎ সে উঠে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে অগ্রসর হয়। সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ইনায়ার বুক ভেঙে আসে। এই বাড়িটাকে তো নিজের বাড়ি করে ফেলেছিল সে। এখন সে এখান কার কেউ নয়। সোহান রুমে ঢুকে ইনায়া। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন তিনি। ইনায়া তার পাশে বসে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” আমার সাথে কথা বলবেনা মামনি? ”
সোহানা মির্জা তাকায় ইনায়ার দিকে। মলিন মুখে হেসে উঠে তৎক্ষণাৎ। শরীরটা তার নেতিয়ে রয়েছে অনেকটা।
-” তোকে দেখলো যে অপরাধের বোঝাটা আরও বেড়ে যায় মা। ”
ইনায়া মলিন হাসে। সোহানা মির্জার হাতটা নিজের সাথে হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
-” বাবাইয়ের সাথে কেন সম্পর্ক খারাপ করছো তুমি। উনার একটা ভুলের জন্য দুজন দুজনকে ছাড়বে কেনো। ”
সোহানা শান্ত চোখগুলোতে অশ্রুপাত ঘটে।
-” যার জন্য নিজের জীবনে এতো কিছু ত্যাগ করলাম। নাভানের জন্য সুখ কুড়াতে গিয়ে আমি নিজেই তাকে অতল গহ্বরে তলিয়ে দিয়েছি। এই বোঝা নিয়ে আমি এই বাড়িতে থাকি কি করে? ”
-” নাভান ভুল মামনি। ছোট বেলার ক্ষোভটা কে বড় করে সে ভিষণ ভুল করেছে। তুমি তার ভালোর জন্যই তোমার থেকে পরিবার থেকে আলাদা করেছিলে। যেটা উনার বুঝতে ভুল হয়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে নয় বরং তাকে তুমি স্মার্ট শিক্ষিত করতে চেয়েছিলে। বাবাইয়েরও বোঝার ভুল বাদ দাও। ”
ইনায়ার কথায় হাসে সোহানা। তখনই হঠাৎ নাহিদ মির্জা ঘরে ঢুকে। ইনায়ার সামনেই সোহানার হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠেন,
-” আমি না বুঝেই সেদিন এইসব বলেছিলাম। তাই বলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। নাভানের এমন হওয়ার জন্য তুমি দায়ী নও। সে নিজেই পশ্চিমা সংস্কৃতি নিজের করে নিয়েছিল। আমার বুঝারই ভুল হয়েছে। ”
সোহানা নিরুত্তর রইল। যদি কিছু না করেও বুকের ভিতর কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মন তার এতো হাহাকার করে? তাহলে দূরদেশে তার ছেলে কি করে আছে। কি হতো ছেলে শান্ত ভাবে আদুরে কথায় বুঝালে? একাকিত্ব তার ছেলেকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে ঢেকে ফেলেছে। আজ হয়তো সবই ঠিক থাকতো? যদি নাভান কে সে মাতৃত্বের আদরে মানাতো। নানা নানু মারা যাওয়ার পরে নাভান কে একা না রাখলেই আজ এতো কিছু হতো। সোহানার কেনো যানি মনে হচ্ছে সে আসলেই মা হতে পারেনি। নাহিদ মির্জার হাতটা শক্ত করে ধরে সোহানা। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
-” চল আজকে তোকে আমি নিজ হাতে রেঁধে খাওয়াবো। সময় দিতে পারবি তো? ”
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়। সোহানাকে একটু হাসতে দেখে নাহিদ মির্জা আর ইনায়ার উভয়ের ভালো লাগে।
সাইন রোডের দিকেই ছিল খলিলের দলীয় সমাবেশ। বিকাল চারটা বাজতে শুরু হবে সেটা। মাঝখানে সড়ক দু’পাশে বিশাল ভূমি। তাতেই সমাবেশের আয়োজন করবে করে ভেবেছিল খলিল। গাড়ি তে করে দলবল নিয়ে সেদিকে যেতেই বাধে বিপত্তি। হঠাৎ করেই কালো রঙের চারটে গাড়ি এসে তাদের মাঝখানে ফেলে গোলগোল করে ঘুরতে থাকে। খলিল কিছুটা ঘাবড়ে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পায়। তাদের সামনে রাখা বড় মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের গাড়ীতে এক পা উপরে রেখে বসে আছে জায়ান। পরনে কালো প্যান্ট আর শরীরে এঁটে রয়েছে কালো শার্ট। শার্টের হাতার উপর দিয়ে বিশাল পেশি গুলো বিদ্যমান। একহাতে সিগারেট টানছে। এক হাত গাড়িতে উঠানো পায়ের হাঁটুর উপর। সেই হাতেই সিগারেট ধরা। খলিল কে বেরোতে দেখে দাঁত বার করে হাসে জায়ান। খলিল ভেতরে একটু ভয় পেলেও প্রকাশ করে না। ভয়ংকর ভাবে রেগে জায়ান কে জিজ্ঞেস করে,
-” এইসব কি জায়ান? অভদ্রের ন্যায় ছেলেপুলে নিয়ে রাস্তা কেনো আটকালে? ”
-” স্যরি কাকু, একটু সহ্য নিন। আপনার ভাতিজারা সভ্যের হতে পারেনি। কি আর করবেন?
ঘাড় বাকিয়ে বলে জায়ান। মধ্য বয়সী খলিল এবার চটলেন। ঠিক সময় বিয়ে করলে জায়ানের মতো ছেলে থাকত তার। আর সেই হাঁটু বয়সী ছেলেরা এখন তার সাথে লাগতে আসে? রাগে গজগজ করতে করতে শুধালেন,
-” বেয়াদব হয়েছ সবগুলো। সামনে থেকে সড়ে দাঁড়াও বলছি। ”
জায়ান এবার বসা থেকে নেমে দাড়ায়। সিধে হয়ে দাড়াতে পারেনা। তবুও মুখে হাসি বজায় রেখে খলিলের সামনে দাড়ায়।
-” এজন্যই আপনার সাথে আমার খেলা সব জায়গায় ভাল চলে। বুঝলেন কাকু? ”
জায়ানের ছেলে গুলো এবার হেসে উঠে। জায়ান ঘাড় বাঁকিয়ে সবকটাকে চুপ করায়।
-” তোরা কি অন্য কিছু মিন করেছিস? খবরদার এটা ভুলেও মনে আনিস না। আমি তো মাঠে ঘাটের খেলার কথা বলছি। ”
সবকটার হাসি আগের থেকে চওড়া হয়ে যায়। জায়ানও গা দুলিয়ে হেসে উঠে। ইগল চোখে খলিলের দিকে তাকিয়ে আছে জায়ান। খলিলের চোখেমুখে ভয়ের আভাস। বাজে ভাবেই আজকে সে জায়ানের হাতে পরেছে। তার সঙ্গে লোকজনও খুবই কম।
-” কি চাইছো তুমি? আমায় বিকাল চারটার আগে সমাবেশে যেতে হবে। তোমার সাথে হিসাব আমি পরে করবো। ”
জায়ান খলিলের কথা শুনে হাসি থামায়। পাশে তাকিয়ে তার দলের সোহেল নামের একটা ছেলেকে ডেকে ওঠে। সোহেল এগিয়ে আসতেই জায়ান মুখটা মলিন করে সুধায়,
-” কিরে? তোরা এমন জড়ো হয়ে কাকু কে যেতে বাধা দিচ্ছিস কেনো? আবদার আছে কোনো? ”
সোহেল খুশীতে গদগদ করে বলে উঠে,
-” আমরা কাকুর কোলে উঠতে চাই। ”
-” এতটুকুই? নে উঠে পর। ”
জায়ান কথাটা বলতেই আরো দুজন ছেলে এসে খলিল কে চেপে ধরে। আকস্মিক ঘটনায় খলিল বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জায়ানের পানে।
-” এইসব কি হচ্ছে জায়ান? ”
জায়ান বাকা হাসে। খালিলের লোক গুলোকে জায়ানের লোকেরা ধরে রেখেছে। জায়ান একটা হকি স্টিক হাতে নিয়ে সেটা অন্য হাতে নাড়াতে নাড়াতে বলে,
-” ওদের আপনার কোলে উঠার সখ হয়েছে। কি করবো বলেন? মাঝেমধ্যে ছেলেপেলের আবদার মিটাতে হয়। আমি আপনার সাথে দশ দিন আগের হিসাব চুকাতে এসেছি কাকু। আপনি পরে হিসেব করলে তো আর আমার পুষবে না। আমি আবার কারো কাছে ধার রাখিনা। ”
কথাটা বলেই জায়ান খিলিল কে পেটাতে শুরু করে। মারতেই থাকে জায়ান ধামেনা আর। খলিলের লোক গুলোকে পিটিয়ে চলছে জায়ানের লোকেরা। খলিল মার খেয়ে আধমরা প্রায়। সে আবেগের বসে বিষাক্ত সাপের লেজে কোপ মেরেছে। এবার সাপের কামড় তো তার শরীরে পরবেই। খোলামেলা জায়গায় আশেপাশের মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছে। পাশ দিয়ে দু’একটা গাড়ি যাতায়াত করছে তখনও। ইনায়া মির্জা বাড়ি থেকে ফিরে একটা বাচ্চাকে পড়াতে যাচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তায় মানুষের ভীড় দেখে রিকশা থেমে যায়। ইনায়া ভাড়া মিটিয়ে ভীড় ঠেলে ভিতরে যেতেই তার চক্ষু কপালে। জায়ান বেদম ভাবে একটা লোককে মারছে। কয়দিনে আগেও তো মরার মতো অবস্থা হয়েছিল। এখন ঠিকই গায়ে জোর চলে এসেছে। এই সন্ত্রাসী আর ভাল হবে না। আগে তো নিজের বাগান ছিল। এবার জনসম্মুখে গুন্ডামী করছে? ভাবছে ইনায়া। জায়ানের চোখ হঠাৎ মানুষের ভীড়ের মধ্যে অচেনা মুখের পাশে চেনা মুখের দেখা পেলো। হাতের স্টিক টা ফেলে দেয় তৎক্ষনাৎ। ঘামে জবজবে অবস্থা জায়ানের। খানিকক্ষণ আগের পরিপাটি চুলগুলো কপালে বিছিয়ে পরে রয়েছে। একপা দু পা করে ইনায়ার দিকে এগোই জায়ান ইনায়া ও তাই। জায়ান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দেয়।
-” এখানে কি করো বোকা হরিণি? ”
-” আপনার গুন্ডামী দেখতে এসেছি। ”
-” ওফ্ফ, এতো গুলো দর্শকের মাঝে তুমিই একজন। যে আমাকে সার্থক করে দিয়েছে। ”
ইনায়া মুখ বাঁকায়। জায়ান হাসে গা দুলিয়ে। ইনায়া এবার আশেপাশে তাকিয়ে মুখ গম্ভীর করে ব’লে,
-” আপনি সন্ত্রাসী আর ভালো হলেন কই? ঠিক মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। আর গুন্ডামী করতে রাস্তায় চলে এসেছেন? এক সাপ্তাহ আগেও তো বিছানায় উপুড় হয়ে পরে ছিলেন। এখন ঠিকই শরীরে জোর চলে এসেছে? ”
জায়ান হাসি থামিয়ে ইনায়ার দিকে তাকায়। শান্ত হয়ে জবাব দেয়,
-” আপনার মনে আছে আমি আহত হয়েছিলাম? ”
-” মনে থাকবে না কেন? সেদিনকার পরিস্থিতিতে আমারা দুজনেই ছিলাম। ”
-” এই জন্যই তো আমি আছি নাকি গেছি তা আপনি এবারো খোজ করেন নি। ”
ইনায়া থমকায়, আসলেই সে জায়ানের কোনো খোঁজ নেয়নি। আর নেবেই বা কেনো? জায়ান তার কে হয়? ইনায়ার মন আবার ঘুরে। মামাতো ভাই হিসাবেও খবর নিতে পারতো।
-” তা এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে। ”
জায়ানের গম্ভীর স্বরে তার দিকে তাকায় ইনায়া। নিজেকে ধাতস্থ করে অপকটে বলে,
-” টিউশনি ছিল একটা। সেখানেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনার মতো সন্ত্রাসী জন্য তা হলো না। এতো গুলো মানুষকে ছেলেপেলে নিয়ে পেটাচ্ছেন । ”
-” মানুষ পেটাতে ভাল লাগে আমার। তাই পেটাচ্ছি। আর ওই শেয়াল টাই আমাকে গুলি করে ছিল। আর এখন যদি আমি বাঘ হয়ে তার বিচার না করতে পারি, আমার বাঘ না হয়ে বিড়াল সেজে বসে থাকা দরকার। ”
জায়ান গম্ভীর স্বরে বলে ইনায়া কে। ইনায়া অবাক হয়। নিশ্চয়ই এই ছেলে গুলি খেয়ে পাগল হয়ে গেছ। চোখে মুখে হাসি তবুও কি ভয়ংকর অভিব্যক্তি জায়ানের। জায়ান পিছন ফরে সোহেল কে ডাকে। সোহেল আসতেই সে গম্ভীর গলায় বলে,
-” খলিলের লোক যেকোনো সময় এখানে আসতে পারে। তুই ইনায়াকে হলের গেইটে নামিয়ে দিয়ে আয়। আমি এই ফাকে একটু কাকুর খেদমত করি।”
এবার ইনায়ার দিকে তাকিয়ে জায়ান গম্ভীর স্বর আরো গম্ভীর করে,
-” আর লিসেন, তুমি এখন ঘাউড়ামি না করে সোহেলের সাথে যাও। আজ সাইন রোডে মারামারি হবে। পরে বাসায় ফিরতে পারবে না। ”
ইনায়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। সে এই ঝামেলায় থাকতে চায় না। জায়ান ঘুরে চলে যেতে নিলেই, ইনায়া পিছন থেকে ডেকে ওঠে। জায়ান ফিরে ইনায়ার দিকে তাকাতেই ইনায়া ঠোঁট নাড়িয়ে আস্তে করে বলে,
-” শেয়াল আর বাঘ যে মামা ভাগিনা তা জানেন নিশ্চয়ই? শেয়ালের বুদ্ধি কিন্তু বাঘের শক্তির চাইতেও বেশী। তাই বলছি, বেশী বল প্রয়োগ না করে বুদ্ধি দিয়ে ভাবুন। না হলে শেয়ালের চতুর বুদ্ধির কবলে পরবেন বাঘ মামা। ”
কথাটা বলে চোখের ইশারা করে ইনায়া চলে যায়। জায়ান বোকার মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইনায়া শেষমেশ তাকে মামা উপাধি প্রদান করলো।
চলবে……
( আজকের পর্ব অনেক বড় করে দিয়েছি। একটা লাইকও তো দিতে পারবা। 🙁🙁🙁🙁)