যাতনা_আমার #সানজিদা_ইসলাম_সূচনা #পর্ব: ৮

0
52

#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ৮

(কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ)

বিশাল বড়ো আলিশান বাড়ির মূল ফটকের সামনে গাড়ি থামায় সুরেশ। তার হাতে থাকা রিমোট টিপতেই কালো রঙের দরজা দু ভাগ হয়ে রাস্তা দেয় তাদের। গাড়িটা ভেতরে নিতেই আবারো নিজেদের জায়গায় ফিরে যায় সেটা। ইনায়া অবাক হয় প্রচুর। এটাকে বিশাল দেহির বডিগার্ডের থেকে কম মনে হচ্ছে না। সুরেশ নেমে এসে ইনায়ারর সাইডের দরজা খুলে দেয়। ইনায়া নেমে দাঁড়াতেই তার চোখ পরে বিশাল বড়ো আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িটার দিকে। সাদা রঙের বিশাল বাড়িটা কে নেহাৎ প্রাসাদ বললেও ভুল হবে মনে হয়। মূল ফটক হতে বাড়ির সদর দরজা অবধি রাস্তায় মার্বেল পাথরের টাইলস বসানো। সাথে রাস্তার দুই সাইডে বিভিন্ন নাম না জানা গাছ সাড়ি বদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ইনায়া দেখতে পায়। বাড়িটির এক পাশে খুব সুন্দর ফুলের বাগান। সুরেশ ইনায়া কে দাঁড়াতে বলে ভিতরে যায়। ইনায়া হাঁটতে হাঁটতে বাগানের ভিতর যায়। হঠাৎ একটা শোরগোলের আওয়াজ কানে আসতেই চমকে সামনে তাকায় ইনায়া। বাগানের পাশেই বড় একটা খোলা জায়গা। সেখানেই সাত-আট জন মিলে একটা লোককে বেদম ভাবে মারছে। আর পাশেই একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে ইচ্ছে মতো সিগারেট টানছে সুঠাম দেহের বলিষ্ঠ এক পুরুষ। কালো রঙের পাঞ্জাবিটা শরীরে এটে আছে। পায়ের উপর পা তুলে দিব্যি আনন্দের সহিত দেখছে ওই লোকের মার খাওয়া। ইনায়া হকচকিয়ে যায় কিছুটা, ভীতি ভাবে সামনে এগোয়। লোকটাকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলেছে প্রায়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সবুজ ঘাসের মাটির উপর। তবুও লোকগুলোর থামবার কোনো লক্ষন নেই। হঠাৎ করেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় সেই পুরুষ। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট রেখেই, হাতে একটা হকি স্টিক নিয়ে লোকটাকে মারতে শুরু করে। চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে তার। গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে লোকটা। এইবার স্টিকটা লোকটার মুখে ঢুকিয়ে দেয় সে। মুখ থেকে সিগারেট ফেলে বিশ্রী একটা গালি দিয়ে বসে,

-” বা***পো** আমার খবর লিক করস তুই । কতো বড় কলিজা তোর রানা? আমি দেখব আজ সেটা। আমার সাথে থেকে আমার পিছনে ছুরি মারিস শালা। ”

লোকটার প্রান প্রদীপ নিভু প্রায়। তবু কিছু বলার জন্য গোঙাতে থাকে। মুখ থেকে স্টিকটা বের করে আবারও মারতে থাকে লোকটা। ফর্সা সুন্দর মুখশ্রী আগুনের মতো লাল হয়ে আছে। দলের লোক গুলো এখন তার ভয়ে সিটিয়ে আছে। মার খাওয়া রানা এবার অস্পষ্ট ভাবে বুলি আওরায়,

-” জায়ান ভাই মাফ কইরা দেন। আর জীবনেও এমন ভুল করুম না। আর একটা সুযোগ দেন ভাই।”

-” সুযোগ তোকে? যাতে করে পরের বার জায়গা মতো বাঁশ দিতে পারিস?

-” না ভাই, আর জীবনে আপনার সাথে দুই নাম্বারি করুম না। সুযোগ দেন আমারে। ”

-” বেশ, একটা শর্তে দিতে পারি। ”

বলেই ঠোট বাঁকিয়ে ভয়ংকর রকম হাসি দেয় জায়ান করিম। দলের একজন কে চোখ দিয়ে কি যেন ইশারা করে জায়ান। জায়ানের হাসি দেখে রানার কলিজাটা শুকিয়ে গেছে প্রায়। সে বুঝতে পেরেছে তার সাথে কি হতে চলেছে। একটা ছেলে বড় একটা ধারালো ছুরি নিয়ে এলো জায়ানের কাছে। রানা ছটফট করতে শুরু করলো সেটা দেখে। জায়ান মুখে আরেকটা সিগারেট গুজে দিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন ধরালো। রানার দিকে ঘাড় বাঁকা করে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসলো সে,

-” শুধু তোর একটা হাত আর জিভ কেটে ফেলবো। এতেই আমার চলবে। তারপর তোর ভুল মাফ। ”

বলেই রানা দিকে ঝুকে পড়ে জায়ান।
ইনায়া এতোক্ষণ দুরে দাঁড়িয়ে দেখছিল এই পাষণ্ড পুরুষ টি কে। এতোটা নির্দয় কি করে হতে পারে মানুষ। ইনায়ার প্রথম কিছুটা ভয় করলেও এখন প্রচন্ড রাগ লাগছে। এতো গুলো মানুষ একটাও লোকটাকে হেল্প করেছে না। থামাচ্ছে না কেউ ওই নির্দয়া লোকটাকে। ইনায়া মনের মধ্যে কিছুটা সাহস সঞ্চয় এগিয়ে যায় জায়ানের দিকে। রানার উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে দেয় জায়ান কে। কিন্তু বিধিবাম, ইনায়া মতো এমন চুনোপুঁটির শরীর, বিশাল দেহের জায়ানকে নড়াতে পারলো না একটুও। আচমকা মৃদু ধাক্কা খেয়ে সামনে তাকায় জায়ান। তার থেকে এক হাত দুরে সাদা সেলোয়ার স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। মায়াবী কোমল মুখশ্রীতে রাগের আভাস। ঠোঁট কামড়ে ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আপাদমস্তক ইনায়া কে উপর নিচ দেখে নেয় জায়ান। কতো হবে বয়স?এই পুচকে মেয়েটা তাকে ধাক্কা মেরেছে বিষয় টা মাথায় আসতেই রেগে গেলো জায়ান। নাক ফুলিয়ে ইনায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। ঠোঁটের ভাজে রাখা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ফেলে দেয় সেটা। অতঃপর ইনায়ার মুখে ছাড়ে মুখ ভর্তি বিষাক্ত নিকোটিনের ধোয়া। তারপর অত্যন্ত গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-” সাহস তো মন্দ নয় মেয়ে, জায়ান করিমের গায়ে হাত? তো কি চাই তোমার?

ইনায়া চোখমুখ কুচকে কিছুটা পিছিয়ে যায়। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়াটা ভিতরে গেছে কিছুটা। গায়ের ওড়না দিয়ে নাক মুখ চেপে ধরে সে। তারপর সামনে রাগান্বিত হয়ে তাকায় জায়ানের দিকে,

-কেউ কাউকে এমন জঘন্য ভাবে মারতে কি করে পারে? আপনি কি মানুষ?

ভ্রু কুঁচকায় জায়ান,

-” কেন? আমাকে কি মানুষের মতো মনে হচ্ছে না?

-” আমারতো মনে হচ্ছে না। আস্ত জানোয়ার একটা।”

ক্রোধিত নয়নে তাকিয়ে গমগমে গলায় বলল উঠে ইনায়া। জায়ান এবার পেছনে তাকিয়ে তার লোকদের কে ডেকে আনে। সুর সুর করে সবকটা সামনে আসতেই জায়ান বলে ওঠে,

-” অ্যাই, আমাকে কি দেখতে মানুষের মত লাগে না?
আমার হাত পা সব ঠিক আছে? না মানে এক্সট্রা বেশি কিছু নাই তো?

-” না ভাই আপনি একদম ঠিক আছেন। ওই ছেমরি ভুলভাল বকতাছে। ”

সব কয়টা এক সুরে বলে উঠে। ইনায়া প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলে,

-” শুধু হাত পা ঠিক থাকলেই মানুষ হওয়া যায়না। তার জন্য মনুষ্যত্ব লাগে। যার ছিটাফোঁটাও আপনার মাঝে আমি দেখছিনা। ”

জায়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে ইনায়ার দিকে তাকায়। তারপর বুকের ভিতর হাত দিয়ে কষ্ট পাবার ভান করে,

-” আপনার মানুষের জন্য খুব দরদ। অন্যের সমস্যা দেখলে এগিয়ে আসেন। আপনি তো দেখছি খুব সাহসি। তাই-না? ”

-” হা তাই। আপনাদের মতো মনুষ্যত্বহীন নই আমি।যে মানুষ পিটিয়ে তক্তা বানাবো। ”

জায়ান আচমকা তার মুখের আদল পরিবর্তন করে ফেলে। খানিকক্ষণ আগের হাস্যজ্বল মুখটা ভয়ংকর করে তুলে। চোখ দুটো তার ভিষন ভাবে ক্রোধের আগুনে জলজল করছে। হাতটা পিছনে দিয়ে কোমড়ে গোজা রিভলবার বের করে আনে। হঠাৎ করে রিভলবার দেখে ইনায়ার সাহস পাখি ফুড়ুৎ করে উড়ে পালায়। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকে সে। যত যাই হোক অস্ত্রের আঘাত খেতে চায় না ইনায়া। আর সে যে ভয় পাচ্ছে সেটাও বুঝতে দিবে না। জায়ান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে, রিভলবার দিয়ে কপালের ডান পাশটা চুলকোয়। ইনায়ার সাহস ধরে রাখার প্রয়াস দেখে হাসে একটু। মুহূর্তেই হাতের রিভলবার দিয়ে মাটিতে পরে থাকা রানার বা পায়ের গোড়ালিতে গুলি করে সে। হঠাৎ গুলির বিকট শব্দ আর রানার আর্তচিৎকারে, ভয় পেয়ে কানে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরে ইনায়া। বুকটা তার ধরফর করছে। মৃদু ভাবে চোরা চোখে একবার সামনে তাকায় ইনায়া। সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ইনায়ার এবার হাত পা কাঁপতে শুরু করে। শেষমেশ সন্ত্রাসীর সামনে এসে পড়লো। আর তাকেই এতোক্ষণ জ্ঞান দিচ্ছিল। পাশেই রানা গোঙাচ্ছে। ইনায়ার খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।

-” তা সাহসী নারী আপনার সাহস কই?”

কথাটা শুনেই সামনে জায়ানের দিকে তাকায় ইনায়া। বিরবির করে কিছু বলতে গেলেই সেখানে সুরেশের আগমন হয়। সাথে একটা সুন্দরী মহিলা। ইনায়া কে এভাবে বসে থাকতে দেখে সুরেশ হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-” কি হলো ইনায়া? কিছু হয়েছে তোমার? এভাবে রইছো কেন? ”

-” কাকা এই জ্ঞানী সাহসী নারীকে কই থেকে পাইলেন আপনি। এর তালাশই তো আমি এতোদিন করতে ছিলাম। ”

জায়ানের কথায় ভ্রু কুঁচকে রানার দিকে তাকাল সুরেশ। ঘটনা বুঝতে তার বেশি দেরি হলো না। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে কথা বলে ওঠে অজ্ঞাত মহিলা,

-” এসব কি জায়ান? আর রানার এই অবস্থা কেনো? কি করেছো ওকে? নিজের ছেলেদের কেনো মারছো? ”

জায়ান কিছুটা শান্ত হয়ে তার মায়ের দিকে তাকাল। তার মা মিনারা বেগম এই মারামারি একদম পছন্দ করেন না। জায়ান বাকি ছেলেদের বলল রানা কে নিয়ে হসপিটাল যেতে। রানা অজ্ঞান প্রায়। ছেলেগুলো যেতেই জায়ান ইনায়ার দিকে একবার তাকিয়ে মাকে ব’লে,

-” এটা রাজনৈতিক কৌশল। এটা তুমি বুঝবে না।”

বলেই জায়গা প্রস্থান করে সে। মিনারা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনায়ার দিকে এগিয়ে যায়। যার মুখ এখন ভয়ে চুপসে আছে অনেকটা। মিনারা ইনায়া কে ধাতস্থ করতে বলে ওঠে,

-” তুমি বুঝি ইনায়া? সুরেশ বলেছেন তোমার কথা আমাকে। আমি সম্পর্কে তোমার মামি হই। ”

ইনায়া তাকাল মিনারা বেগমের দিকে। অত্যন্ত সুন্দর আভিজাত্যপূর্ণ নারী মিনারা শরীরে তাই প্রকাশ পাচ্ছে। ইনায়া কোনো কথা বলতে পারলো না। কন্ঠ কাপছে তার। মিনারা খানিক্ষন তাকাল ইনায়ার দিকে। একদম মায়ের মতোই হয়েছে ইনায়া। তিনি ইনায়া কে বসা থেকে দাঁড় করালেন। তারপর শান্ত স্বরে বললেন,

-” এখানে অন্য কোনো মানুষ আসা নিষেধ। এমনকি আমিও এর আওতায়। ভয় পেয়ো না চলো আমার সাথে। ”

ইনায়া মাথা নেড়ে মিনারা বেগমের সাথে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। তার চোখে এখনো ভাসছে ওই সন্ত্রাসীর চেহারা। বাড়ির ভিতর ডুকতেই চোখ উলটালো ইনায়া। বাড়ির ভিতরটা আভিজাত্যে ভরপুর। যেন কোনো একটা বিশাল বড়ো মহলে প্রবেশ করেছে সে। বাড়ি ভেতরের দেয়াল, ফার্নিচার, টাইলস সম্পুর্ন সোনালী রঙের। যেন স্বর্ন খচিত সবখানে। ইনায়া এই বাড়িতে আসার পর থেকে খালি অবাকই হচ্ছে। এর শেষ খুজে পাচ্ছে না সে। মিনারা তাকে সোফায় বসিয়ে চলে গেলো কিচেনে। ইনায়া শান্ত ভাবে বসে থাকে। কিছুক্ষণ যেতেই মিনারা হাতে ট্রে ভর্তি খাবার এনে তার সামনে রাখে। ইনায়া মিনারার দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে,

-” মামা কই? তাকে একটু ডাকেন। ওনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। ”

মিনারা বেগম একটু হেসে ইনায়ার পাশে বসলেন। তারপর ইনায়ার হাতে পায়েসের বাটি ধরিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,

-” তোমার মামা কে খবর দিয়েছি। তিনি হয়ত এক্ষুনি নিচে নামবেন। তা বলো তোমার নতুন সংসার চলছে কেমন? ”

মিনারার কথায় মলিন মুখে তার দিকে তাকায় ইনায়া। সংসার? যেখানে স্বামীর দেখা পেলো না সংসার তো বহু দূর। মিনারা ইনায়ার মলিন মুখটা লক্ষ্য করলো। তারপর মিহি কন্ঠে শুধালো,

-” তুমি ভালো আছো তো ইনায়া? কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো। ”

ইনায়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিনারা কে কিছু বলতে যাবে। তখনই দোতলার সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে দুজন লোক।

চলবে…… ………..

( গল্পটা পরে লাইক কমেন্ট করবেন প্লীজ। এতে আমাকে পরবর্তী পর্বের জন্য উৎসাহিত করে প্রচুর।
আর অনেকেই অনুমতি না নিয়ে কপি পোস্ট করেছেন। পারলে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here