উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব২ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
61

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

স্নিগ্ধ সকালে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া। পরিবেশে নেই কোনো উত্তপ্ততা। ঘুমের বিভোর আমি। পাশে থেকে বিকট শব্দে বেজে উঠল এর্লাম। হাতড়িয়ে ঘড়ি খুঁজছি তবে নাগাল পাচ্ছি না। তাই কোনো উপায় না পেয়ে বালিশ কানের ওপর ধরলাম। তবে আমার ঘুমের শেষ রক্ষা আর হলো না।
“রোদ! এই রোদ! এই মেয়ে। এখনো ঘুমাচ্ছিস? কলেজ যাবিনা”

ঘুমুঘুমু কণ্ঠে বললাম,
“আজকে না গেলে হয়না আম্মু ? খুব ঘুম পাচ্ছে”

“উঠবি নাকি আমি হাত চালাবো। প্রতিদিন এক বাহানা। তাড়াতাড়ি উঠে নিচে আয়। আমাকে যদি আবার আসতে হয় তাহলে তোর কপালে শনি আছে”

আম্মু চলে গেল। কি আর করার সাধের ঘুমাকে টাটা বায় বায় করে উঠে পড়লাম। ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছি আয়নার সামনে দাড়িয়ে। এমন সময় ইভা লাফাতে লাফাতে রুমে এলো।
“কিরে এভাবে লাফাচ্ছিস কোনো? মনে রং লেগেছে ? নাকি তোর বিয়ে ঠিক হলো সেই খুশিতে নাচ্ছিস”

ইভা মন খারাপ করে বলল,
“ভাই বিয়ে ঠিক হলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। এই পড়াশোনা আর ভাল্লাগে না। বড় ভাই গুলোর জন্য আব্বুকে মুখ ফুটে বলতেও পারিনা, আব্বু আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও পড়াশোনা আর ভাল্লাগে না”

“বিয়ে ঠিক না হলে ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কোনো?”

“আমার বিয়ে না হোক অন্য কারো তো হতে পারে”

আমি রেডি হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“মানে?”

“অভ্র ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে খুব শীঘ্রই। মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ে ফাইনাল। অবশেষে গুষ্টিতে বিয়ের ধুম লাগলো বলে”

“ইয়াহু! কি খবর শুনালি বনু ইচ্ছে করছে তোকে শক্ত করে একটা চুমু খাই। তবে তোর কপাল খারাপ কারণ আমি আমার সব চুমু আমার জামাইয়ের জন্য জমিয়ে রেখেছি। একটাও খরচ করা যাবে না”

ইভা মন খারাপ করে বলল,
“তাহলে কি আমি কিছুই পাবো না?”

“নো টেনশন বনু। তোকে আজকে ফুচকা ট্রিট দিবো”

“ঠিক আছে চল”

আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম। নাহ সব ঠিকঠাকই আছে। এর মাঝেই নিচ থেকে ডাক পড়লো। দুজন হেলে দুলে নিচে নামলাম। টেবিলে শুভ ভাই, অভ্র ভাই বসে আছে। শুভ ভাইয়ের পাশে বসতে বসতে বললাম,
“কি খবর অভ্র ভাই? এতো সক্কাল সক্কাল কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

“অফিসের কিছু কাজে যাচ্ছি। তুই এতো কিছুতে মাথা না ঘামিয়ে খেয়ে কলেজে যা। তুই গেলে বাড়িটাও শান্তি পাবে”

“বেশি বোকো না তো”

এর মাঝেই আম্মু খাবার দিয়ে গেল। কেমন আলসেমি লাগছে। নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না। কেউ খাইয়ে দিলে ভালো হয়।
“আম্মু খাইয়ে দাও না”

“আমার হাতে অনেক কাজ। এতো বড় ধিঙি মেয়ে তাকে নাকি খাইয়ে দিতে হবে। খেলে খা না খেলে নাই”

অপমান! হুহ খাবো না। মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম। মুখের সামনে কেউ খাবার ধরলো। তাকিয়ে দেখি শুভ ভাই মুখের সমানে খাবার ধরে আছে। আমি তাকাতেই খেতে ইশারা করলো। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিলাম।
“আমার ভাই আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে না। কি নির্দয় একটা ভাই পেয়েছি”

শুভ ভাই রাশভারী কণ্ঠে বললেন,
“চুপচাপ খা। খাবার সময় এতো কথা কিসের”

ইভা আর কিছু বললো না। খাওয়া শেষে আমি আর ইভা কলেজে চলে এলাম। আমরা দুজন একই কলেজে একই ক্লাসে পড়ি। দুজনের মাঝে কাজিনের থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি। দুজনের মাঝে সারাদিন খুনসুটি লেগেই থাকে।

কলেজ শেষে ক্লান্ত বদনে বাড়ি ফিরলাম শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই। ব্যাগটা কোনো মতে বিছানায় রেখে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম। মুহূর্তের মাঝেই পারি দিলাম ঘুমের দেশে। আম্মুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। বেরিয়ে দেখি আম্মু বিছানা গুচ্চাচ্ছে আর বিরবির করে কিছু বলছে। টাওয়াল টা ব্যালকনিতে রেখে এসে বিছানায় বসবো তার আগেই আম্মুর কণ্ঠ,
“নিচে খাবার খেতে যা। কতো বেলা হয়েছে সে খেয়াল আছে?”

অগত্যা খাবার খেতে চলে এলাম। খাওয়া শেষ একটু ঢু মারলাম দাদুমনির রুমে। দাদুমনি বসে বসে তসবি পড়ছে।
“কি করো দাদুমনি?”

“এইতো তসবি পড়ছি।আয় কাছে আয়”

কাছে গিয়ে দাদুমনির কলে শুয়ে পড়লাম। দাদুমনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“তুমি আমাকে ভুলে গেছো। তোমার ইভান জান কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো তোমার সাথে কথা নাই”

আমার কথায় দাদুমনি হেসে দিলো। হাসি থামিয়ে বলল,
“ধুর বোকা। তুই তো কাল বিকেল থেকে দরজা দিয়ে বসেছিলিস”

কথা বাড়ালাম না। কথা বাড়ালে দোষ আমার ঘাড়েই পড়বে। কিছুক্ষন দাদুমনির সাথে গল্প করে রুমে এলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি এমন সময় রুমে রোশনি এলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি মেডাম নতুন জামা পরে সেজেগুঁজে ফুলটুসি হয়ে আছে।
“নতুন জামা পরে পে*ত্নী সেজে কার ঘাড় মোটাকাতে যাচ্ছিস শুনি?”

“একদম বাজে কথা বলবি না আপু। এটা আমায় ইভান ভাই দিয়েছে। সুন্দর না বল? আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে”

রোশনির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেল। ভ্রু কুঞ্চিত রেখেই জিজ্ঞেস করলাম,
“হটাৎ ইভান ভাই তোকে ড্রেস দিলো কোনো?”

“শুধু আমাকে না সবাইকেই দিয়েছে। আমাদের জন্য আসার সময় নিয়ে এসেছে। তোকে দেয়নি?”

ওর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। লাট সাহেব সবাইকে গিফট দিয়েছে আমায় দেয়নি। লাগবে আমার তার গিফট।
“না”

“তুই ঘুমিয়েছিলি তাই হয়তো দেয় নি। মন খারাপ করিস না তোকেও দিবে”

“মন খারাপ কিরে? আমার মন এতটাও সস্তা না যে একটুতেই খারাপ হয়ে যাবে”

রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য ইভার রুম। ওমা ও দেখি নতুন জামা পরে পরি সেজে বসে আছে।
“কিরে নতুন জামা পড়লি যে? কার সাথে ট্যাংকি মারতে যাচ্ছিস”

“কোথাও যাচ্ছি না শাক*চুন্নি। ভাইয়া নতুন জামা দিয়েছে তাই পরে দেখছি কেমন লাগছে। বনু বলতো আমাকে কেমন লাগছে?”

“শাকচুন্নির মতোই লাগছে। ড্রেস টা খুলে ফেল। তোকে একটুও মানাচ্ছে না। ড্রেসটা দেখতে খুবই বাজে”

বলে চলে এলাম। মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে। ইচ্ছে করছে ইভান ভাইকে হাতের কাছে পেলে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে ফেলি। বজ্জাত লোক সবাইকে দিয়েছে আমার বেলায় ফাঁকা। আমি কি তার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি নাকি? আমার মতো কিউট একটা মেয়ের সাথে তার কিসের শত্রুতা? এক নাম্বারের খবিস লোক। লাগবে না আমার তার গিফট। কথাই বলবো না লাট সাহেবের সাথে। বিরবির করতে করতে ছাদে চলে এলাম। কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে ইভান ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে ফেলি। দোলনায় দোল খাচ্ছি আর এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। এই বিশাল আকাশের মাঝে আমিও যদি ঘুড়ির মতো উড়ে বেড়াতে পারতাম। তাহলে কতই না ভালো হতো। মুক্ত পাখির মতো এদিক থেকে ওদিক উড়ে বেড়াতাম। বাঁধা দেওয়ার কেউ থাকতো না। নিজের ভাবনায় নিজেই হাসলাম। যতো সব আজগুবি ভাবনা। আমি মত্ত আকাশ কুসুম ভাবনায়।
“ভরসন্ধ্যা বেলা ছাদে কি করছিস?”

ভাবনায় ছেদ ঘটলো কারো গম্ভীর কণ্ঠে। পিছনে তাকিয়ে দেখি দ্যা গ্রেট ইভান ভাই দাড়িয়ে আছে ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে। তার কথা শুনেও না শুনার ভান করলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আকাশ পানে।
“কথার উত্তর দিচ্ছিস না কোনো? কথা কানে যায় না?”

ধমকের স্বরে কথাগুলো বলে উঠলেন ইভান ভাই। তার ধমকে কিছুটা ভয় পেলেও উত্তর করলাম না। উঠে হাঁটা দিলাম নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ইভান ভাইকে ক্রস করে যাবে এমন সময় হাত ধরে আটকে দিলেন। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? ঢং দেখাচ্ছিস কাকে? এই ইভান কে?”

“আমার ঢং আছে আমি দেখাবো। আপনার দেখতে না মন চাইলে চোখ বুঝে থাকেন”

“বাহ্! মুখে বুলি ফুটেছে দেখছি”

এমনিই মেজাজ খারাপ। তার ওপর এই লোকের কথা সহ্য হচ্ছে না। কেনোমতে তার থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে এলাম। ইভান ভাই পিছন থেকে ডাকছে পাত্তা দিলাম না। গট গট পায়ে নিজের রুমে চলে এলাম। কিছুক্ষন পায়চারি করলাম। মাথা ব্যাথা করছে। বেরিয়ে নিচে চলে এলাম। রান্না ঘরে কেউ নেই। অগত্যা নিজেই কফি বানাচ্ছি আর ইভান ভাইকে বকছি। আনমনে কফি ঢালতে গিয়ে হাত ফোঁসকে গেল। গগন বাদী চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে
জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here