উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব৪ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
58

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

ফুলেরদের রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক জীবন্ত ফুল। দূর থেকে কেউ একজন নয়ন জুড়িয়ে দেখছে সেই ফুলের চঞ্চলতা। হৃদয়ে জুড়ে তার বসন্তের ছোঁয়া। শক্ত খোলসে আবৃত হৃদয় অবশেষে ফুল ফুটলো। চারপাশ ছেয়ে আছে প্রেমের সুবাসে। চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে যুবক। চক্ষে তাহার সমুদ্র সমান তৃষ্ণা।

আরো কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছি। হটাৎ চোখ পড়লো গলায়। সেখানে চক চক করছে পারপেল কালারের স্টোন বসানো একটা লকেট । লকেটটা দেখতে খুবই সুন্দর। এক দেখায় যে কারো পছন্দ হবে। এই লকেট আমার গলায় এলো কোথা থেকে? কালকে রাতেও তো গলা খালি ছিলো। মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তবে উত্তর নেই। হবে কেউ একজন যে পড়িয়ে দিয়ে গেছে । মাথা থেকে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনোযোগ দিলাম চুল বাঁধায়। চুল বেঁধে একদম পরিপাটি হয়ে টেবিলের কাছে এলাম ব্যাগ নিতে। ব্যাগ কাঁধে নিতেই চোখে পড়লো একটা বক্স সাথে একটা চিরকুট। চিরকুট মেলতেই চোখের সামনে গোটা গোটা অক্ষরে ভেসে এলো,
“লকেটটা কেমন লেগেছে? পছন্দ হয়েছে? জানাস। বক্সে কিছু জিনিস আছে তোর জন্য। সাথে তোর পছন্দের কিছু চকলেট”

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। এটা যে ইভান ভাইয়ার কাজ বুঝতে বেগ পেতে হলো না। তিনি তাহলে আমার জন্য গিফট এনেছিলেন। খামোখা লোকটাকে বকলাম। লাট সাহেব বজ্জাত হলেও খারাপ না। বক্স খুলে দেখলাম তার মধ্যে সুন্দর একটা ড্রেস, একটা ঘড়ি আর অনেক গুলো চকলেট। ড্রেস ঘড়ি দুটোই অনেক সুন্দর। লাট সাহেবের দেওয়া জিনিস তার মতোই সুন্দর। ড্রেস আর ঘড়ি যত্নে কাবার্ডে রেখে দিলাম।

নিচে নামতে নামতে দেখলাম সোফায় বসে ইভান ভাই ফোন চালাচ্ছে। নেভি ব্লু টিশার্ট সাথে কালো জিন্স, হাতে কালো ঘড়ি। দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। বজ্জাত মানুষটাকে এতো সুন্দর লাগতে হবে কেন? তাকে দেখে বেচারা মন আমার মুহূর্তে মুহূর্তে ক্রাশ খায়। এখন আমার বেচারা মনের কি হবে? আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে চোখ তুলে তাকালেন। দুজনের চোখাচোখি হলো। চোখেচখি হতেই ইভান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলাম। মনটা এখন ফুরফুরে। কালকে ওনার ওপর প্রচন্ড রেগে থাকলেও এখন রাগের বিন্দু মাত্র রেশ নেই। টেবিলে গিয়ে বসতেই আম্মু খাবার দিয়ে গেল। খাবার খাচ্ছি এমন সময় মনে হলো পাশের চেয়ারে কেউ বসলো। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই। আমি নিজের মতো এক মনে খেয়ে চলেছি।

“পছন্দ হয়েছে?”

কানে ফিসফিস স্বরে আওয়াজ এলো। তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই আগ্রহের সহিত তাকিয়ে আছে আমার পানে। মাথা নেড়ে সায় জানালাম। ইভান ভাই পুনরায় ফিসফিস করে বললেন,
“লকেটটা সব সময় পরে থাকবি। আমি যেন এটা খুলতে না দেখি”

উনি কি আমায় অর্ডার করছে? এই রোদকে অর্ডার করছে। আমি কেন তার কথা মানবো? কিন্তু লকেটটা যে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তার কথা না শুনলেও নিজের জন্য হলেও লকেটটা আমি সব সময় পরে থাকবো। মাথা নেড়ে তার কথায় সায় জানালাম। এতো সুন্দর একটা লকেট দেওয়ার জন্য ওনাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমিও তার মতো ফিসফিস করে বললাম,
“থ্যাংক ইউ”

ইভান ভাই ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“হটাৎ থ্যাংক ইউ কোনো?”

“এতো সুন্দর একটা লকেট দেওয়ার জন্য”

“থ্যাংক ইউ তে তো চলবে না”

“কোনো?”

“জানিস না গিফটের পরিবর্তে গিফট দিতে হয়”

আমি ভাবুক হয়ে বললাম,
“কিন্তু আমার কাছে তো কোনো গিফট নেই”

“তুই যদি চাস তাহলে কিসমিস দিতে পারিস আমি মাইন্ড করবো না”

“আপনি বসুন আমি রান্না ঘর থেকে কিসমিস নিয়ে আসছি”

আমার কথায় ইভান ভাই শব্দ করে হেসে দিলেন। উঠে যেতে যেতে বললেন,
“এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি”

আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। বেকুবের মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
———
ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ভিতরে ঢুকছি । পা আর চলছে না। ড্রয়িং রুম থেকে ভেসে আছে হাসির শব্দ। বাড়িতে কেউ এলো নাকি? ইভাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“বাড়িতে কি কেউ এসেছে? এতো হাসির শব্দ?”

“আমি কিভাবে বলবো? তুই যেখানে আমিও সেখানে”

“চল গিয়ে দেখি”

ভিতরে ঢুকতেই নজরে এলো ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা ঈশিতা আপু, রুদ্র ভাই, ইফাজ ভাই, ইভান ভাই, আদ্র ভাই। তারা কিছু নিয়ে প্রচন্ড হাসাহাসি করছে। একেবারে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম ইভান ভাইকে এভাবেই হাসতে দেখে। লাট সাহেবের মুখে হাসি? কিন্তু যাই হোক লাট সাহেবকে হাসলে ভারী সুন্দর লাগে। কিন্তু সারাদিন মুখটা রাম গরুরের ছানার মতো করে যে কোনো রাখে আল্লাহ মালুম। সব সময় এভাবে হাসলেই তো পারে।
“তোমরা এভাবে হাসছো কোনো?”

আমার কথায় সবাই আমার দিকে তাকালো। আদ্র ভাই উঠে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছিস রোদ?হাতের কি অবস্থা?”

আদ্র ভাই উল্টোপাল্টে আমার হাত দেখলেন।
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমরা কখন এলে? তোমরা আসবে আগে বলনি কোনো? আগে বললে আজকে কলেজই যেতাম না”

“বারোটা নাগাদ এসেছি। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই জানায়নি”

পাশ থেকে রুদ্র ভাই খোঁচা মেরে বলল,
“ভালোই হয়েছে বলিসনি। ফাঁকিবাজ শুধু ফাঁকিবাজি করার ধান্দা খুঁজে”

“তুমি চুপ থাকো। তুমি না কক্সবাজার গিয়েছিলে? সেখানে থেকে গেলেই পারতে বাড়ি এলে কেনো?”

“আমার ভাই এসেছে আর আমি এখনো কক্সবাজার বসে থাকবো সেটা কখনো হয়?”

পিছন থেকে ইভা মুখ ভার করে বলল,
“আমি বোধ হয় ভিন গ্রহের প্রাণী। কারো আমাকে চোখেই পড়ছে না”

ইভার কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিলো। আদ্র ভাই ইভার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ভিন গ্রহের প্রাণী না এলিয়েন হবে”

“আদ্র ভাই তুমি এভাবে বলতে পারলে?”

“থাক আর বলবো না”

আমাদের কথার মাঝে ফুপ্পিমনি এলো হাতে শরবতের ট্রে নিয়ে।
“ঝগড়া বাদ দিয়ে রোদ আর ইভা ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত খেয়ে নে। ক্লান্তি কিছুটা কম লাগবে। এরপর যা ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর সবাই একসাথে আড্ডা দিস”

শরবত খেয়ে রুমে চলে এলাম। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে রেখে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম।
———-
গোধূলি বিকেলে আকাশে স্বল্প মেঘেদের আনাগোনা। নির্মল বাতাস বইছে। আমাদের সকল ভাই বোনেরদের আড্ডা বসেছে। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি। তবে আড্ডার মাঝে একজন মানুষ অনুপস্থিত। সে আর কেউ না আমাদের শুভ ভাই। মানুষটা বরাবরই এমন। সবার সাথে খুবই কম মিশে। তাকে কোনো আড্ডায় খুব একটা পাওয়া যায় না। জোর করে টেনে নিয়ে আসলে মিনিট দশ বসবে তারপর আবার উধাও। রুমে ঢুকে বই নিয়ে বসে পরবে। মানুষটা একপ্রকার বই পোকা। ভবিষ্যত ডক্টর বলে কথা। ইভান ভাইয়ের দুই বছরের বড় শুভ ভাই। শুভ ভাই এবার মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। সারাদিন এই বই ওই বই নিয়েই পরে থাকে। একটা মানুষ সারাদিন এতো বই কিভাবে পড়ে কে জানে? আমি তো বই নিয়ে বসলে ঘুমে চোখে দেখি না। সবাই মিলের দায়িত্ব দিলো তাকে নিয়ে আসার। আমিও চললাম দায়িত্ব পালনে। দরজা খুলতেই দেখি শুভ ভাই টেবিলে বসা। খাতায় কি যেন লিখছে। আমি নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য ভাইয়ার লেখা দেখা। উঁকি দিয়ে কিছু দেখবো তার আগেই শুভ ভাই খাতাটা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর তার গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো,
“পাখি এখানে কি করছিস? তাও আবার এভাবে চোরের মতো?”

ভাইয়ার কথায় থতমত খেয়ে গেলাম। এভাবে যে ধরা পরে যাবে বুঝতে পারিনি। এবার কি বলবো?
“আসলে..”

শুভ ভাই আমার দিকে ফিরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আসলে কি?”

“ছাদে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। তোমাকেও ডাকছে”

“আমি পড়ছি, আমার সময় নেই। তোরা গল্প কর”

আমি আবদারের সুরে বললাম,
“তুমিও চলো না। অনেক মজা হবে”

“ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি”

“থ্যাংকু”

বলে হাসতে হাসতে চলে এলাম। পিছন থেকে শুভ ভাই বলে উঠলো,
“পা*গলী মেয়ে”

শুভ ভাই মানুষটা গম্ভীর হলেও আমার সাথে তার গম্ভীরতা চলে না। আমাকে অনেক বেশিই আদর করে। ইভাকে মাঝে মাঝে দুই একটা বোকা দিলেও আমাকে কখনো দেয়নি। বাড়ির বড়রা ছাড়া সবার কথা অমান্য করলেও আমার কথা অমান্য করেন না। আর আমি এতটাই নাছোড় বান্দা শেষমেষ তাকে আমার কথা মানতেই হয়। তাই জন্য সবাই আমাকেই পাঠায় তার কাছে।

ছাদে এসে দেখি সবাই সবার মতো গল্প করছে। আমি গিয়ে রুদ্র ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
“আমার জিনিস কই?”

“কিসের কথা বলছিস?”

“তোমাকে যে আনতে বলেছিলাম”

রুদ্র ভাই সাথে সাথে জিভে কামড় দিলো।
“সরি বনু আমার মনে ছিলো না। ইভানের আসার কথা শুনে তাড়াহুড়া করে চলে এসেছি। পরের বার গেলে নিয়ে আসবো”

“তোমার সরির ডিম ভাজি করে তুমিই খাও। তোমার সাথে আমি কথাই বলবো না”

রাগ করে চলে আসলাম এক কোনায়। মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্র ভাই এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।
“আমার কাছে তোর জন্য একটা গিফট আছে”

আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে চোখ চক চক করে উঠলো। লাফিয়ে উঠে বললাম,
“সত্যিই? কোথায় দেখাও?”

আদ্র ভাই পকেট থেকে একটা বক্স বের করলেন। বক্সটা খুলে আমার সামনে ধরতেই মন খুশিতে নেচে উঠলো। নুপুর! আমার ভালোবাসা। আমি নুপুর গুলো নিয়ে সাথে সাথে পায়ে পড়লাম। নুপুর বরাবরই আমার দুর্বলতা। নুপুর দেখলে আমার তর সয় না। নুপুরের রিনঝিন শব্দ আমার বড্ড ভালো লাগে। আমি নুপুরগুলোর দিকে মুগদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি। আর আদ্র ভাই তাকিয়ে আছে আমার খুশিতে ভরপুর মুখশ্রীতে। একটু দূরে চোখ যেতেই তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম,
“থ্যাংক ইউ আদ্র ভাই”

“থ্যাংক ইউয়ের দরকার নেই। তোর ঠোঁটের কোনের হাসিটাই যথেষ্ট আমার জন্য”

আমি মুচকি হেসে তাকালাম আদ্র ভাইয়ের দিকে। ইভান ভাই তীক্ষ্ণ চক্ষে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে। হটাৎ ইভান ভাই গটগট পায়ে ছাদ থেকে চলে গেলেন। এর আবার কি হলো?

#চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। দীর্ঘদিন পড়ে আপনাদের অনুরোধে গল্প নিয়ে আসলাম। প্রথম পর্বে পরিচয় অংশে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। কষ্ট করে চেক করবেন। হটাৎ পরিবর্তন করার জন্য দুঃখিত। আর যারা গল্পটা শেয়ার করেছেন তারা পারলে কষ্ট করে এডিট করে নিয়েন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here