০১.
অফিস থেকে বেরুতেই তাচ্ছিল্য হেসে শেহজাদের হাতে ডিভোর্স লেটার ধরিয়ে দিলো শবনম। দীর্ঘ পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনের সকল সম্পর্কের বিচ্ছেদ এক মুহূর্তে ঘটিয়ে বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে চলে গেলো। হতভম্ব নয়নে শবনমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো শেহজাদ। ব্যপারটা ঠিক কি বুঝে উঠতে পারলো না সে। যতক্ষণ দেখা গেলো ততক্ষণ অনিমিষনেত্রে তাকিয়েই রইলো। ওরা মিলিয়ে যেতেই ছলছল নয়নে হাতের মধ্যে থাকা ডিভোর্স লেটারের দিকে তাকালো শেহজাদ। আকস্মিক এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূর্বল পায়ে রওনা দিলো বাসার পথে।
০২.
বাসায় ফিরে রুমের লাইট অন করতেই বুকটা খা খা করে উঠলো। আকস্মিক ক্লান্ত শরীরটা অসাড় হয়ে এলো। কেমন দমবন্ধকর একটা মুহূর্ত তৈরী হলো। সংসারটা তাদের দু’জনেরই ছিলো। শবনম বাড়তি মানুষ পছন্দ করে না বিধায় তাকে নিয়ে শহরে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতো শেহজাদ। কতো মায়া,কতো মমতা আর কতো স্মৃতি এই ছোট্ট সংসারকে ঘিরে। সবকিছুতেই শবনমের ছোঁয়া লেগে আছে। সবকিছুই শবনমের পছন্দের! আর সেই সবকিছুর মায়াকে উপেক্ষা করে তাকে একা করে চলে গেলো শবনম! অবশ্য শবনমের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। দোষটা তো কেবল তারই। কী আছে তার? কিছুই নেই,না আছে রূপ আর না আছে কোনো গুণ! আর না টাকাপয়সা,ধনসম্পত্তি কিছুই না! অজপাড়া গাঁয়ের খুব সাধারণ এক পরিবারের সন্তান সে। আর তার মতো অকেজো,অপদার্থ একটা মানুষের সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছর ছিলো শবনম এটাই তো অনেক বেশি! এর চেয়ে আর কি আশা করা যায়? বুকের বাঁ-পাশটায় হঠাৎ চিন চিন করে ব্যথা করে উঠলো। বুক চেপে ধরে শুয়ে পড়লো শেহজাদ। বাবা-মায়ের পছন্দে নিজের আপন ফুপাতো বোন শবনমকে বিয়ে করে সে। পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে এতো এতো সুখের মাঝেও সুখ থেকেও যেনো ছিলো না তাদের মধ্যে। শুধু একটা শূন্যতায়! সবজায়গা দিয়ে শবনমকে সুখী করতে পারলেও কেবল মাত্র একটা জায়গা দিয়ে অপূর্ণ রেখেছিলো শেহজাদ। তাই পূর্ণতার খোঁজে পা বাড়ালো পরপুরুষের হাত ধরে। যদিও পূর্ব থেকে সবটাই টের পেয়েছিলো শেহজাদ। তবে শবনমের মনের বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস হয়ে উঠেনি তার।
০৩.
সকালে ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম শবনমকে মিস করলো শেহজাদ। পুরো সংসার কেমন ফাঁকা ফাঁকা আর নিস্তব্ধায় ঘেরা। দমবন্ধ হয়ে আসছে তার। দ্রুত রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো। এরপর এই পুরো একটা সপ্তাহ শবনম-বিহীন বিষাদময় পার হলো শেহজাদের। বাসায় ঢুকলেই শবনমকে মনে পড়ে। যা-ই দেখে শবনমের স্মৃতি মনে পড়ে। অনেক মায়া রেখে গেছে শবনব। শবনমের শূন্যতায় অসুস্থ হয়ে ডিপ্রেশনে চলে গেলো শেহজাদ। সিদ্ধান্ত নিলো দ্রুত এই বাসা ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাবে। এই বাসার ব্যালকনি থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে সহ প্রতিটি জায়গায় শবনমের ছোঁয়া! তাই অনুভব করে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলো শেহজাদ। পরশু বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ করলো বাড়িওয়ালাকে। বলে দিলো সে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাবে।
০৪.
তখন রাত বাজে প্রায় সাড়ে বারোটা। কিছুতেই ঘুম আসছিলো না শেহজাদের। ছটফট করছিলো বিছানায় শুয়ে। তার বাহুডোর এখন শূন্য! এই তো সপ্তাহখানেক পূর্বেও তার নিঃসঙ্গতায় তার বাহুডোর আঁকড়ে পড়ে থাকতো মেয়েটা। তার বাহুডোরে মাথা গুঁজে কতো কান্না করেছিলো তার ঠিক নেই! কিন্তু এখন শূন্য বাহুডোর! শবনম নেই! চলে গেছে তার বাহুডোর ফাঁকা করে। শবনমের শূন্যতায় অস্থির অস্থির লাগছে শেহজাদের। কেমন দমবন্ধকর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। নিঃসঙ্গতা যেনো গলা চেপে ধরলো। দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। কস্মিনকালেও সিগারেট মুখে তুলেনি শেহজাদ। শবনম একদমই পছন্দ করতো না। কিন্তু এখন এই ধূমায়িত শলাকা তার নিত্যদিনের সঙ্গী। বর্ষাকাল বিধায় হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামলো। মুষলধারে সমানে বৃষ্টি হচ্ছে। হুট করে মনে পড়লো শবনমের কথা। বৃষ্টি খুব পছন্দ করে শবনম। দিনে কিংবা রাতে যখনি বৃষ্টি হতো না কেনো শবনম তাকে নিয়ে ছাঁদে চলে যেতো আর বৃষ্টিবিলাস করতো। আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! শবনম নেই। থাকলে এতোক্ষণে তাকে টেনে নিয়ে যেতো ছাঁদে। আর বলতো,”শেহজাদ আসো,ছাঁদে গিয়ে দু’জনে বৃষ্টিবিলাস করি!”
তাচ্ছিল্য হাসলো শেহজাদ। নারী বড়ই মায়াবী আবার নারী বড়ই ছলনাময়ী। সিগারেটে আরেকটা লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া উড়িয়ে দিলো। একটা তপ্তশ্বাস ফেললো। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে ছাঁদে চলে গেলো। কেনো যেনো ছাঁদে যেতে ইচ্ছে করছিলো। ছাঁদের কার্নিশ ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রোডের মধ্যে চলা যানবাহনের দিকে। বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো শেহজাদ। ভারী বর্ষণ হচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। ছাঁদের অপরপাশের ট্যাঙ্কির পাশে সাদা কিছু একটা দেখতে পেলো সেই আলোয়। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলো শেহজাদ। কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ গুন-গুন করে কান্নার শব্দ শুনতে পেলো। ভড়কে গেলো শেহজাদ। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতেই দেখলো একটি মেয়ে বৃষ্টির মধ্যে বসে কাঁদছে! কৌতুহলী হলো সে। এতো রাতে ছাঁদে একা একটা মেয়ে বসে কাঁদছে! ব্যপারটা খুবই অদ্ভুত! মেয়েটি কে হতে পারে শেহজাদের জানা নেই। লম্বা লম্বা চুলগুলো দিয়ে পুরো পিঠ-মুখ সব ঢাকা। ছাঁদের ফ্লোরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চুলগুলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো শেহজাদ। সাহস করে এগিয়ে গেলো। রাশভারী গম্বীর কন্ঠে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠলো,”এই মেয়ে,কে তুমি?এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে বসে কাঁদছো কেনো?এনি প্রবলেম?”
এতোরাতে ছাঁদে হঠাৎ কোনো পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনতেই ভড়কে গেলো মেয়েটি। শেহজাদকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে আচমকা চিৎকার করে উঠে সেন্সলেস হয়ে ছাঁদের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়তে নিতেই ধরে ফেললো শেহজাদ। হতভম্ব হলো সে। অন্তত এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না। ঠিক কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেলো শেহজাদের। নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো মেয়েটি। বৃষ্টির কারণে পুরো ছাঁদে পানি ভরে গেছে। চিকন পাইপ দিয়ে যেতে পারছে না বোধহয়। তাই নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো মেয়েটিকে।
০৫.
সারা বাসা তন্নতন্ন করে মিঠিকে খুঁজছে মোশাররফ সাহেব। মা ম’রা মেয়ে। ঘরে সৎমা। তাই মেয়েটাকে নিয়ে তিনি একটু বেশিই চিন্তায় থাকেন। এই তো ঘন্টা খানেক পূর্বে কিছু একটা নিয়ে মা-মেয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হলো। মিঠিকে খুব বকাবকি করলো তার সৎমা। মিঠি প্রতিবাদ করতেই একপর্যায়ে গায়ে হাত তুলতেও নিয়েছিলেন তিনি। সেই মোশাররফ সাহেব স্ত্রীকে থামালেন। নয়তো আজ সত্যি সত্যি মেয়ের গায়ে হাত তুলতো। আর সেই রাগে,দুঃখে,ক্ষোভে,কেঁদেকেটে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো মিঠি। মা গত হওয়ার পর থেকে মেয়েটা খুব জেদী হয়ে গেছে। মোশাররফ সাহেব মানসম্মানের ভয়ে লাজলজ্জা ভুলে এই বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাটে মেয়েকে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। ভাবলেন ছাঁদে গিয়ে একবার দেখে আসবেন। উনার পিছু পিছু এলেন উনার দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরা বেগম ও। দুনিয়ার যত গালমন্দ আছে সব করছে মিঠিকে। পারেন না শুধু গলা টিপে মে’রে ফেলতে। একমাত্র এই মেয়েটাই এখন পথেরকাঁটা ওনার। মোশাররফ সাহেব নীরব রয়েছেন মেয়ের চিন্তায়। প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে কখন কি হয়ে যায় ঠিক নেই। আরো যে খারাপ যুগ এসেছে। আতঙ্কে থাকেন তিনি।
০৬.
মিঠিকে একা ছেড়ে চলে যেতে পারলো না শেহজাদ। বিবেকে বাঁধছিলো। এই বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে রেখে যাবে?কোনো বিবেকবান মানুষের দ্বারা এটা সম্ভব নয়। তাই সাহস করে মিঠিকে পাঁজাকোলে তুলে যেই না ছাঁদ থেকে সিঁড়িতে এক পা ফেলবে আকস্মিক মুখোমুখি হলো মোশাররফ সাহেব এবং মনিরা খাতুনের। হকচকিয়ে উঠলো শেহজাদ। তবে স্থির রইলো। শেহজাদের কোলে মিঠিকে দেখতেই আচমকা চিৎকার চেঁচামেচি করে উঠলেন মনিরা খাতুন। যেনো তিনি এমন কিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিলেন কিংবা প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন। ভদ্রমহিলার হঠাৎ এমন রিয়েক্টে ঘাবড়ে গেলো শেহজাদ।
“এই ছেলে,আমার মেয়ে তোমার কোলে কেনো?”
“ও আপনাদের মেয়ে?”
মোশাররফ সাহেব বললেন,”হ্যাঁ। ও আমার মেয়ে মিঠি।”
“আমাকে দেখে হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে পড়েছে আঙ্কেল। ভয় পেয়েছে বোধহয়!”
মনিরা খাতুন বললেন,”এই ছেলে,মিথ্যা কথা বলছো কেনো? সত্যি করে বলো,তুমি আমার মেয়ের সাথে কী করেছো?”
শেহজাদ শান্ত গলায় বলল,”কিছু করিনি আন্টি। আমাকে দেখতেই ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। এরবেশি কিছুই না।”
“মিথ্যা কথা। বিশ্বাস করি না আমি। নিশ্চয়ই তুমি আমার মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করেছো। নয়তো আমার মেয়ে সেন্সলেস হবে কেনো?”
“এইসব কী বলছেন আন্টি?”
“বুঝতে পারছো না কী বলছি? কী করেছো সেটা বলো। নয়তো পুলিশে দেবো তোমাকে। তুমি চেনো আমি কে?”
“সে আপনি যেই হোন না কেনো! আমি সত্যি কথাই বলছি আন্টি।”
“এই ছেলে থ্রেট দিচ্ছো?”
বিরক্ত হলেন মোশাররফ সাহেব। শেহজাদকে তিনি চেনেন। মাস দুই-তিনেক হলো তারা এই বাসায় ভাড়ায় উঠেছে।
“চুপ করো মনিরা। মেয়েটাকে পেয়েছি,এটাই অনেক। শেহজাদ তুমি মিঠিকে বাসায় নিয়ে চলো। মনিরার কথায় কান দিও না।”
“বাসায় নিয়ে যাবে মানে? আপনার মেয়ে,এতো রাতে ছাঁদে এসে এই ছেলেটার সাথে এতোক্ষণ ফষ্টিনষ্টি করেছে! এই মেয়েকে তো আমি বাসায় এক পাও তুলবো না।”
জিদ চাপলো মোশাররফ সাহেবের মাথায়। ঠাস করে জীবনে এই প্রথম একটা থাপ্পড় বসালেন স্ত্রীর গালে। হতভম্ব হয়ে গেলেন মনিরা খাতুন। রেগেমেগে উঠে আরো জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করে বাসার সব ফ্ল্যাটের মানুষজন জড়ো করে ফেলেন। ভদ্রমহিলার কর্মকাণ্ডে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো মোশাররফ সাহেব এবং শেহজাদ। শেহজাদের পাশের ফ্ল্যাটের একজন পুরুষ বলল,”এখানে কী হয়েছে?”
“এই ছেলেটার ডিভোর্স হয়েছে সপ্তাহ পেরোয়নি। এখন আমাদের মেয়ের দিকে কুনজর দিয়েছে। এর একটা বিচার করুন সবাই। এর ভদ্র মুখোশটা ফাঁস করে দিন।”
স্তব্ধ হয়ে গেলো শেহজাদ। তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো যেনো। এতো নোংরা মন-মানসিকতা ভদ্রমহিলার ইতিপূর্বে জানা ছিলো না শেহজাদের। জানলে এই বাসায় ভাড়াই থাকতো না সে। মিঠিকে সেন্সলেস অবস্থায় শেহজাদের কোলে দেখতেই একেকজন একেকরকম নানান আজেবাজে মন্তব্য এবং কানাঘুঁষা করতে লাগলো। কেউ কেউ তো বাঁকা চোখে চেয়ে শুনিয়ে শুনিয়ে কটু কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করলো না। লজ্জায় অপমানে থরথর করে কাঁপছে শেহজাদের শরীরটা। কারো মুখ ধরে রাখার সাধ্য নেই তার। দোষ তো তারই। সে কোনো এতো রাতে ছাঁদে এলো আর মানবতা দেখাতে গেলো?চোয়াল শক্ত করে কথা না বাড়িয়ে মিঠিকে তাদের বাসার সোফার উপর রেখে বেরিয়ে আসতে নিতেই মনিরা বেগমের ভাইরা পেছন থেকে কলার চেপে ধরলো শেহজাদের। আত্মসম্মানে লাগলো তার। চোয়াল শক্ত করে কলার ছাড়িয়ে নিলো। শক্ত গলায় বলল,”এটা কেমন অভদ্রতা?
মিঠির সৎ বড় মামা বললেন,”আমাদের মেয়ের সাথে নষ্টামি করে এখন সাধু সাজছো?”
“মানে!?”
“তোমাকে ভদ্রলোক ভাবতাম। কিন্তু তার প্রমাণ আজ এভাবে দিয়েছো তুমি। ভাবতেই অবাক লাগছে! ছিঃ! ছিঃ!”
“না জেনে,না শুনে একদম আজেবাজে মন্তব্য করবেন না। অনেক সময় চোখে দেখা জিনিস কিংবা কানে শোনা কথাও ভুল হয়। আর শুনুন,কি করেছি না করেছি সেটা আপনাদের মেয়ের জ্ঞান ফিরলেই জিজ্ঞেস করবেন। তখন সত্যিটা জানতে পারবেন আসছি।”
বেরিয়ে যেতে নেয় শেহজাদ। মনিরা খাতুনের ভাইরা কিছুতেই বেরুতে দিলো না তাকে। উল্টো এতোরাতে কাজীকে ফোন করে আসতে বললো। চেঁচামেচির শব্দে মিঠির সৎ মামীরাও উঠে এলো তাদের বাসায়। ঘটনা শুনে মিঠির চোখে-মুখে পানি ছিটাতেই পিটপিট করে তাকালো। কাজী আসতেই জোরপূর্বক বিয়ে পড়িয়ে দিলো শেহজাদ-মিঠির। শেহজাদ আর দাঁড়ালো না,কবুল বলেই বেরিয়ে গেলো। পেছন থেকে মনিরা খাতুন অকথ্য ভাষায় বকাবকি করতে লাগলেন শেহজাদকে।
মনিরা খাতুনের তিনভাই। এলাকায় বেশ নাম-ডাক রয়েছে। তিনটা ভাই-ই দালাল টাইপের। এলাকায় এদের জন্য কথা বলতে পারে না কেউ,গলা চেপে ধরে। তিনজনই রাজনীতির সাথে সংযুক্ত। কিন্তু তিনটা ভাই-ই থাকেন উনার এতো বড় বাড়িতে। তিন ভাই তিনটা ফ্ল্যাট দখল করেছে রেখেছে। অথচ বাড়িটা মিঠির মায়ের,মিঠির নানার দেওয়া। মোশাররফ সাহেব কিছু বলতে পারেন না। বললেই উনাকে নানারকম শায়েস্তা করেন মনিরা খাতুনের ভাইরা। আর ভাইদের লেলিয়ে দিয়েছেন তিনিই। কিছুক্ষণ পর মিঠির মামীরা তার জামাকাপড় চেঞ্জ করে দিয়ে জোর করে ধরে শেহজাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলো।
০৭.
রাগে ফুঁসছে শেহজাদ। ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে সব। ভেজা টি-শার্ট খুলতেই হঠাৎ ডোরে নক পড়লো। আরেকটা গায়ে দিতেই আরো কয়েকবার নক পড়লো। বিরক্ত হয়ে ডোর খুলতেই দেখলো মিঠিকে নিয়ে ওর মামীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিছু বলতে ইচ্ছে করলো শেহজাদের,কিন্তু মিঠির মুখের দিকে তাকিয়ে রাগ দমন করে কিছু বললো না। সেন্স ফেরার পর থেকে মেয়েটা সেই একইভাবে রয়েছে। একটাবারের জন্যও মাথা তুলেনি। মিঠির বড় মামী বাঁকা গলায় বললেন,”কবুল বলে চলে এলে যে?তোমার কী কাণ্ড-জ্ঞান নেই? আমাদের মেয়েকে সস্তা বলে মনে হয় তোমার? সাহস কতো!”
“তো কী করবো?”
চেঁচিয়ে উঠলো শেহজাদ।
“এই ছেলে একদম চুপ! চেঁচাবে না। উঁচু গলায় কথা বলবে না। ফষ্টিনষ্টি করার সময় মনে ছিলো না,কার মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছো?”
“ভদ্রভাবে কথা বলুন।”
“এজন্যই তোমার বউ টিকে না। ডিভোর্স পাও।”
কথাটা বলতেই চট করে মাথা তুলে মামীর দিকে তাকালো মিঠি। ডিভোর্স মানে? বলতে চাইলো মিঠি কিন্তু জিজ্ঞেস করলো না। দাঁতে দাঁত চাপলো শেহজাদ। সবগুলো মহিলা এক। মিচকি শয়তানের হাড্ডি!
“সাবধান বলে দিচ্ছি! মেয়েকে ঘরে তোলো। মেয়ের সাথে কিছু করলে তোমার হাড়গোড় সব ভেঙ্গে ফেলবে ওর মামারা।”
মিঠিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে ঢুকলেন ওর মামীরা। শেহজাদ দাঁড়িয়ে রইলো। মিঠিকে বুঝিয়ে-সুনিয়ে চলে গেলো ওর মামীরা। মনিরা খাতুন ভীষণ খুশি হলেন। একে-তো সংসার থেকে তাঁড়াতে পারলেন। দ্বিতীয়ত,ডিভোর্সি,মধ্যবিত্ত টাইপ একটা ছেলের কাছে বিয়ে দিলেন। মেয়ের অহংকার একদম চূর্ণবিচূর্ণ করে দিলেন। আর কখনো বড়মুখ করতে পারবে না। এইজন্য মূলত,চিৎকার চেঁচামেচি করে নাটক করলেন। আর উনাকে থাপ্পড় খাওয়ানোর প্রতিশোধ ও নিলেন।
০৮.
শেহজাদের বেডের উপর বসে রইলো মিঠি। পরনে নতুন জামাকাপড়। ভেজা ড্রেসগুলো চেঞ্জ করেছে বোধহয়। একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো শেহজাদ। মাস তিনেক ধরে শবনমকে নিয়ে মিঠিদের বাড়িতে ভাড়া থাকে সে। কিন্তু মিঠিকে এই প্রথম দেখেছে সে। মেয়েটা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে শেহজাদ যতটুকু কোন একভাবে জানতে পেরেছে। মিঠি তাকে এখনো লক্ষ্য করেনি বোধহয়! তাকে দেখলে মিঠির রিয়েক্ট কেমন হবে সেটাই ভাবছে শেহজাদ। নিজের জন্য চিন্তা না করে মিঠির জন্য চিন্তা করতে লাগলো। পরীর মতো কি সুন্দর একটা মেয়ে। নামের মতোই মেয়েটা দেখতে খুবই মিষ্টি আর গোলুমুলু! লম্বায় পাঁচ ফুট দুই-তিন ইঞ্চি হবে মেইবি। শেহজাদের মনে হচ্ছে মিঠির নামটা সার্থক! মিষ্টি মেয়ে মিঠি! অথচ অনাকাঙ্ক্ষিত একটা দূর্ঘটনায় তার জীবনের সাথে জুড়ে গেলো নিরপরাধ নিষ্পাপ মিষ্টি মেয়েটা।
_____________________
#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০১)
#চলবে
❌গল্প কপি করবেন না। গল্পে ভুলক্রটি হলে সংশোধন করার দায়িত্ব কেবলমাত্র লেখিকারই! তাই কপি করা নিষেধ।
নোটিশ: গল্পটি বাস্তব বিবর্জিত এবং কাল্পনিক। যাদের ভালো লাগবে কেবল তারাই পড়ুন। বাকিরা ইগনোর করুন। আর যারা নতুন পাঠক তারা পেইজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন। তাহলে পরের পর্বগুলো দেওয়ার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন।
এই লিংকে ক্লিক করলেই সবগুলো পর্ব পেয়ে যাবেন।