তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১২)

0
50

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১২)
________________________

মলিন গলায় জিজ্ঞেস করলো,”কোথায় যাচ্ছেন?”

“বাসা খুঁজতে।”

“এখানে কী হয়েছে?”

“সবকিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না।”

“গরম দেখাচ্ছেন আমাকে?”

“মোটেও না।”

“তাহলে বাসা কেনো লাগবে?এই বাসায় কী হয়েছে?”

“সামনে তোমার এইচএসসি পরীক্ষা। আমার কারণে তোমার পড়াশোনায় ব্যঘাত সৃষ্টি হতে পারে! ইভেন হচ্ছে ও। সো,আমি চাইছি না এখানে থাকতে। আর তোমার মামার কথা ধরে এখানে আসাটা মোটেও উচিত হয়নি আমার। আমার নিজেকে আত্মসম্মানহীন এবং ব্যক্তিত্বহীন বলে মনে হচ্ছে। আর আমার জন্যেই কাল রাতে তুমি এগ্রেসিভ হয়ে উঠেছিলে। শোনো,সবেই বিয়ে হয়েছে আমাদের। আমরা পূর্বপরিচিত ও না। আমাদের কোনো রিলেশনও ছিলো না এবং আমরা বিয়ের পূর্বে কেউ কাউকে দেখিনি ও। তাই তোমাকে মানিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া প্রয়োজন। আপাতত তুমি পড়াশোনায় মন দাও,ফোকাস করো। আমি বাসা দেখে ওখান থেকেই বাসায় ফিরে যাবো। আরেকটা কথা হচ্ছে,এইচএসসি পরীক্ষার আগে কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয় সেটা একমাত্র স্টুডেন্টরাই জানে। তবে এই কষ্ট এখানে শেষ হয়ে গেলেই হয়তো ভালো হতো। তারপর শুরু হয় রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা,কষ্ট। এটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয় এডমিশনের টেনশন। সো আমি বলবো তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো,প্রিপারেশন নাও।”

“ও এখানে থাকলে শবনমের সাথে যোগাযোগ করতে সমস্যা হবে তাই না?”

“ফাউ কথা বলবে না। আর কথায় কথায় ওকে আমাদের মধ্যকার বিষয়ে টেনে আনবে না। শবনম আমার ফাস্ট। তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”

“চেনা আছে আপনাকে। আসতে না আসতেই অনন্যার সাথে ও গলাগলি শুরু করে দিয়েছেন।”

“আজেবাজে কথা বলতে মুখে বাজে না তোমার? ছিঃ!”

“সত্যি কথা বললেই তো দোষ!”

“কোনটা সত্যি বলেছো?”

“এখন নিশ্চয়ই শবনমের সাথে দেখা করতে যাবেন,তাই সাহেবের মতো শার্ট-প্যান্ট পরে রেডি হয়েছেন। মিস করছেন বুঝি ওই পরকীয়ার রানী শবনম শাঁকচুন্নিকে?”

“বার-বার এক কথা বলে রাগ উঠিও না। আমি এমনিতেই রেগে আছি তোমার বিহেভিয়ারে।”

“একশোবার বলবো,হাজার বার বলবো,কোটিবার বলবো।”

“ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিও না।”

“একশো বার নিবো।”

“এতো জেলাশ কিসের জন্য?”

“কোথায় জেলাশ করলাম?”

“আমাকে পছন্দ করছো না,আবার আমার সাথে থাকতে ও চাও না! সংসারও করতে চাও না! ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতে বললে তাও শুনছো না! কাউকে আমার আশেপাশে সহ্য ও করতে পারছো না! উল্টো তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছো! শবনমের নামও শুনতে পারছো না,ওকে ও জেলাশ করছো! পথও ছাড়ছো,না আবার খালিও করছো না,দখলও করছো না! আগলেও নিচ্ছো না! আবার থেকে যেতে বললেও শুনছো না! ব্যপারটা কী?এইসব করার মানে কী?এন্সার দাও।”

“স্টেইট ফরওয়ার্ড,আপনি আমার সতীত্ব কেঁড়ে নিয়েছেন। আর সেটা যেভাবেই হোক! একজন নারীর সতীত্ব তার গর্ব,অহংকার! আপনি সেটাই নিয়ে গেছেন। তাহলে আপনাকে ছাড়ার প্রশ্ন আসে কোথা থেকে? আপনাকে আমি শান্তিতে থাকতে দেবো না। আপনাকে আমি মাফ করবো না। আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবো।”

“এটার জন্যই কী তুমি এগ্রেসিভ?”

“হ্যাঁ। সর্বপ্রথম আমার সতীত্ব! দ্বিতীয় আপনার প্রথম স্ত্রী এবং তৃতীয়ত আপনি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। আর সবকিছু বাদ।”

“শোনো,এই পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব এক্সিডেন্টলি।”

“কাল রাতেরটা?”

“তোমারও ইচ্ছে ছিলো।”

“সে যাইহোক কিন্তু একটা বিষয়ে আমার খুব কষ্ট হয়!”

“কী সেটা?”

শেহজাদের মুখোমুখি দাঁড়ায়। ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,”আমার খারাপটা কোথায় লাগে জানেন?এই ঠোঁট অন্য নারীকেও ছুঁয়েছে!”

কিছু বলতে পারলো না শেহজাদ।

“সবকিছুর জন্য স্যরি সুনেত্রা!”

হঠাৎ শেহজাদের মনে পড়লো কিছু একটা। পকেট থেকে ঔষধ বের করলো। গ্লাসে পানি ঢেলে বলল,”এটা খাও।”

“কী এটা?”

“ঔষধ।”

“কীসের ঔষধ?”

“খেতে বলেছি খাও,প্রশ্ন করো না।”

“পিল?”

“হ্যাঁ।”

“খাবো না।”

“জিদ করছো?”

শেহজাদ নিজেই গালের মধ্যে ঔষধ ঢুকিয়ে দিয়ে পানি মুখে দিয়ে বলল,”নাও গিলো।”

খেয়ে বলল,”এইসব করে কী বুঝাতে চান? মানে আপনি সন্তান জন্ম দিতে পারবেন এটাই তাই না?”

“কিছু না।”

“বাহ! ভালোই অভিনয় জানেন দেখছি!”

“আসছি।”

“বাসায় বাজার লাগবে,নিয়ে আসুন। স্বামীর দায়িত্ব পালন করুন। আর এখানেই থাকছেন। শবনমের আশেপাশে ঘুরঘুর করেছেন তো আপনার পায়ের নলি থেঁতলে দিবো। আর ওই শাঁকচুন্নিটাকে একবার পাই! ওর সবগুলো চুল তুলে ফেলবো!”

নিজেকে ধাতস্থ করলো শেহজাদ। আচমকা মিঠির দিকে এগিয়ে গেলো। ভড়কে গিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো মিঠি। মৃদু হাসলো শেহজাদ। মিঠির মুখটা ভয়ার্ত। সুন্দর চোখজোড়ার প্রলম্বিত পাপড়িদ্বয় কী সুন্দর করে কাঁপছে! চিকন পাতলা গোলাপি ঠোঁটজোড়াও তির তির করে কাঁপছে! কি সুন্দর মোহনীয় মনোমুগ্ধকর একটা দৃশ্য! ঘোর লেগে গেলো শেহজাদের। মেয়েটার চোখগুলো হরিণ টানা আর মারাত্মক সুন্দর! আচমকা মিঠিকে কাছে টেনে আনলো। চমকে গেলো মিঠি। চোখ মেলতেই চোখে চোখ রাখলো শেহজাদ।

“সুনেত্রা!”

থমকে গেলো মিঠি। আচমকা কাঁপন ধরলো হৃদয় অলিন্দে। চোখ বুজে ফেললো হঠাৎ। শেহজাদ এমন করে ডাকবে ভাবতে পারেনি কস্মিনকালেও। ঘোর লাগা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”আমার উপর অধিকার খাটাচ্ছ সুনেত্রা?”

ফের থমকে যায়। হৃদয় অলিন্দে আবারও ঝড় বইতে শুরু করলো। কম্পিত গলায় প্রতিত্তোর করলো,”ত..তো কে খাটাবে?”

“আমাকে তো পছন্দ করছো না! তাহলে কেনো অধিকার খাটাও?”

“জানি না। ছাড়ুন।”

ছাড়লো না শেহজাদ। মিঠির মুখে ফুঁ দিয়ে বেরিয়ে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। মানুষটার শরীর থেকে পুরুষালী একটা বুনো সুবাস আসতেই অনার্য ইচ্ছেয় শিহরিত হলো মিঠি। শেহজাদ ছাড়লো না। উল্টো ড্রেসিং টেবিলের সামনের দিকে এগিয়ে মিঠিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জামার ভেতর থেকেই হাত রাখলো তলপেটের উপর। কেঁপে উঠলো মিঠি। মুখ গুঁজলো কাঁধে। সেখানে গাঢ় চুমু খেলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো মিঠি। খুব আস্তে করে কানের পাশে মুখ ডুবিয়ে বলল,”তুমি স্বীকার করো আর না করো,কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো সুনেত্রা! আ’ম হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিউর।”

ফের সুনেত্রা বলায় থমকে যায় মিঠি। আর কথাটায় যেনো কিছু একটা মিশ্রিত ছিলো! যা শ্রবণেন্দ্রিয়তে পৌঁছাতেই হৃদালিন্দ কম্পিত হয়ে একরাশ হীম শীতল শিহরণ বয়ে গেলো শিরদাঁড়া বেয়ে। কম্পিত গলায় বলল,”এ..একদম না।”

“তোমার অহংকারী সত্ত্বা হয়তো স্বীকার করছে না,কিন্তু এটা সত্য যে তুমি আমাকে মনে-প্রাণে ভালোবেসে ফেলেছো সুনেত্রা! আর তা তোমার মনের অজান্তেই। তবে সেটা এখনও উপলব্ধি করতে পারছো না,তোমার মনে দাম্ভিকতা থাকায়। ভালোবাসবে না বাসবে না বলে তুমি বোধহয় ভালোবেসেই ফেলেছো! আসলেই এটা ঐশ্বরিক! সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত! স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে তিনিই এই প্রেম সৃষ্টি করেন।”

নীরব রইলো মিঠি। আসলেই কি সত্যি!

“এটা কিভাবে সম্ভব?”

“আমাকে সহ্য করতে পারছো না,কিন্তু ঠিকই আমার ছোঁয়াগুলো তুমি উপভোগ করো। যখন তোমাকে কাছে আসার আহ্বান করি নির্লিপ্তে তুমি সায় দাও। আমাকে পছন্দ করতে না পারলেও আমার প্রতিটি ছোঁয়া,আদর,যত্নগুলো তুমি খুব করে চাও,উপভোগ করো। কাউকে আমার সাথে সহ্য করতে পারছো না। ভালো না বাসলে এইসব কী করে সম্ভব?”

কিছু বলতে পারলো না মিঠি। দোটানায় পড়লো সে। আসলেই কী সে মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছে এতো তাড়াতাড়ি? কিন্তু মিঠি তো কিছুই টের পাচ্ছে না!

“আমার আগে তুমি আমার প্রেমে পড়ে গেছো সুনেত্রা। ভাবতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি!”

“অসম্ভব! মিথ্যা কথা।”

“একদম না। কাল রাতে বলেছো,আমাকে খুব মায়া লাগাবে,ভুলতে দিবে না। এখন কী মনে হচ্ছে জানো?”

“কী?”

“আমি তোমার প্রেমে এখনও পড়িনি,ভালোবাসিনি।”

মিঠির কেমন যেনো লাগলো কথাটা শুনতে। মুখটা মলিন হয়ে গেলো। ভালোবাসেনি মানে?

“কিন্তু তুমি আমার মায়ায় খুব বাজেভাবে ফেঁসে গেছো সুনেত্রা। তুমি আমার প্রেমে পড়ে,ভালোবাসতে শুরু করেছো। তাই কাউকেই আমার আশেপাশে সহ্য করতে পারছো না। জেলাশফিল করছো! অধিকার খাটাচ্ছো। রাগ,জেদ,অভিমান,অভিযোগ সব দেখাচ্ছো,করছো। মানুষ যাকে ভালোবাসে তার সাথে তো এইসব আচরণ করে।”

নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরে শেহজাদের দিকে তাকালো মিঠি।

“এখন তো মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ভুলতে পারবে না। কারণ আমি যদি তোমার প্রথম প্রেম হই তাহলে তুমি আজীবন আমাকে স্মরণে রাখতে বাধ্য! শুনেছি মেয়েরা নাকি প্রথম প্রেম আর প্রথম স্পর্শ ভুলতে পারে না আর সেই মানুষটাকেও না।”

কেঁপে উঠলো মিঠির বুকটা। মৃদু হাসলো শেহজাদ।

“তুমি ভুল করে কাউকে ভালোবাসতে পারবে ঠিকই! কিন্তু ভুল করে ভালোবাসার মানুষটিকে কখনোই ভুলে থাকতে পারবে না সুনেত্রা!”

কনফিউজড মুখ করে শেহজাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মিঠি।

“জানো,আমিও পণ করেছি।”

“কী?”

মিঠির কানে কানে বলল,”যতো যাই হয়ে যাক না কেনো,তবু আমারে দেবো না ভুলিতে।”

স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো মিঠি।

কিন্তু এটা তো তার করার কথা! কিন্তু মানুষটা একি বলছে!

“তুমি ফেঁসে গেছো সুনেত্রা! একদম বাজেভাবে ফেঁসে গেছো! নিজের দম্ভ,আত্মঅহমিকার কাছে হেরে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো।”

“একদম না!”

“তোমার এই দাম্ভিক মনটা স্বীকার করবে না জানি। কিন্তু এটা তো শিউর যে ভালোবেসে ফেলেছো। এখন ভালোবাসি বলো।”

“কখনো না।”

“আমি অপেক্ষা করবো।”

“যা ইচ্ছে তাই করুন।”

মিঠির শরীরে কম্পন ছড়িয়ে গেছে বিদ্যুৎস্পস্টের ন্যায়। আচমকা মিঠির কপালে,গালে,কানে,গলায় চুমু খেলো। এরপর সময় নিয়ে ঠোঁটে গভীর চুমু খেলো। কিন্তু মিঠি সরলো না। সরিয়েও দিলো না। চোখ বন্ধ করে উষ্ণ স্পর্শগুলো ফীল করলো। মৃদু হাসলো শেহজাদ। তাকে অপছন্দ করলে সরিয়ে দেয় না কেনো?

“ভালো না বাসলে আমার ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসাগুলো কেনো নিচ্ছো? সরিয়ে দাও না কেনো?”

হঠাৎ দেখলো অনন্যা ডোরের ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। ভীষণ জিদ হলো মিঠির। উঁকি দেওয়ার ও তো একটা সময় আছে,লিমিট আছে। এখনই কেনো দিতে হলো?শেহজাদকে সরিয়ে দিয়ে বলল,”যান বাজার করে নিয়ে আসুন।”

বলেই নিজের শরীরের জামাকাপড় ঠিক করতে লাগলো। অনন্যাকে দেখতেই স্বাভাবিক হলো শেহজাদ,তবে অস্বস্তি হলো। অনন্যার এই বাড়াবাড়ি কিংবা বেহায়াপনাটা ঠিক লাগলো না। নিউ কাপলদের রুমে আসার আগে নক করতে হয়,এই কমনসেন্সটাও কি নেই?

“অনন্যা,কিছু বলবি?”

রুমে ঢুকে বলল,”আজ তো শুক্রবার। শ্রুতি,শ্রেয়াশা,গোপিকা,গায়ত্রী ওরা আসবে।”

“ওহ। ফোন করেছিস?”

“হ্যাঁ। তোর বিয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছি।”

এই জিনিসটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হলো মিঠির।

“জানানোর আগে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতি।”

“ধূৎ! জিজ্ঞেস করার কী আছে?”

অসন্তুষ্ট হলো মিঠি।

“কী রান্না করবি আজ?”

“ওরা তো গরু খাবে না।”

“আচ্ছা মাটন আনতে বলছি। তুই খালাকে বল রান্নার সব আয়োজন রেডি করতে।”

“আচ্ছা।”

অনন্যা চলে গেলো। শেহজাদ-মিঠির ওই রোমান্টিক দৃশ্যটা অনন্যার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করলো।

“মিঠি,আমার মনে হচ্ছে এখানে থাকাটা আমার ঠিক নয়।”

“কেনো?”

“তা তুমি জানো।”

“সমস্যা নেই। আপনি আমার সাথেই থাকবেন। বাসা ভাড়া করলে মাসে মাসে অনেক টাকা দিতে হবে। তার চেয়ে আমার সাথে থাকুন। বাসা ভাড়ায় যা খরচা করবেন সেই টাকায় না হয় আমরা এখানে টোনাটুনির সংসার পাতবো কেমন!”

মৃদু হাসলো শেহজাদ। কত কিছু বুঝে মেয়েটা! অথচ সে বেকারই ছোট বলে।

“তবে তোমার বাসায় থাকতে আমার নিজেকে ছোট লাগছে এবং লাগবেও।”

“আপনার বাসায় থাকতে তো আমার ছোট লাগে না।”

“সেটা ভিন্ন কথা। স্বামীর বাসায় অবশ্যই স্ত্রী থাকবে,সেটা শোভনীয়। কিন্তু স্ত্রীর বাসায় স্বামীর থাকাটা অশোভনীয়।”

“এই বাসাটা আব্বু কিনেছেন আমার জন্য। কারণ মতিঝিল থেকে উত্তরা আসতে খুব দেরী হয়ে যায় কলেজে। মেট্রোরেল তো চালু হয়েছে কিছুদিন পূর্বে। তার আগে থেকেই আমি এখানে থাকি। আর আসা-যাওয়ায় তারপর জ্যামে পড়লে তো হয়েছেই। আর আমি মেয়ে মানুষ,একা আসা-যাওয়াটা রিস্কের খুবই রিস্ক এর। এছাড়াও আব্বু একটি বেসরকারী ব্যাংকের ম্যানেজার। এই বয়সে এসেও জব করছেন আমার দিকে তাকিয়ে। বাড়ি ভাড়া আব্বুকে দেয় না মামারা,জোর করেই ভোগ করেন উনারা। তাই জব করতে হয়। আমার পড়াশোনা আব্বু এবং আমার আপন মামার টাকায় চলে। আর প্রতিদিন আমাকে কলেজে নিয়ে আসতে পারেন না। তাই এই বাসাটা কিনেই ফেলেছেন। আজ দুই বছরের কম আমি এখানে অনন্যাকে নিয়ে থাকি। মাঝেমধ্যে আমার অন্য গার্লফ্রেন্ডরাও এসে থাকে। আমাকে সময় দেয়। নিজের বাসায় থাকি না কারণ আমার সৎ মা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন না। কথায় আছে না,“যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।” আমার সবকিছুই তেমনিই মনে হয় উনার কাছে। ভালো হয়ে চললেও উনার মন পাওয়া সম্ভব হয়নি। উনি আমার ভালো মা হয়ে উঠতে পারেননি কখনো। সবসময়ই মনের মধ্যে হিংসা,বিদ্বেষ পুষে রেখেছিলেন। তবে উনি যা পারেননি আমার সৎ মামীরা তা পেরেছেন। উনারা আমায় নিজের মেয়ের মতো আদর করেব। আমার মায়ের বাসায় থাকে,খায়-দায়,রাজত্ব করে ; প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার ভাড়া তুলে নিজের ভাইয়েরা খায়। আর সেই আমাকেই সহ্য করতে পারেন না তিনি,আমার মাকেও সহ্য করতে পারেন না। উনি সারাক্ষণ আমার পেছনে লেগেই থাকেন। এতো এতো দোষ উনি ধরতে পারেন সে আর নাই-বা বললাম। ওই যে প্রথমেই তো একটা প্রবাদ বলে দিলাম। আর উনার জন্য বাসায় আমার পড়াশোনা হয় না বললেই হয়। আর আমার সৎ মা-মামারা চায় না আমি যেনো পড়াশোনা করি। বেশি পড়াশোনা করলে হয়তো এই বাড়ি,সম্পত্তির সবকিছু বুঝে যাবো তাই। এমন নয় যে আমি বোকা,আমি সব বুঝি! তবে চুপ থাকি। এছাড়াও বাসায় থাকতে উনি হয়তো আমার পিছনে লাগবেন,নয়তো কোনো বুয়ার পেছনে,না হয় বাসার হ্যাল্পিংহ্যান্ডকে বকাবকি কিংবা মা’র’ধ’র করবেন। অথবা অহেতুক কারণ দেখিয়ে বাসার কেয়ারটেকার,ড্রাইভার আর হয় বাসার যেকোনো ভাড়াটিয়ার সাথে লাগবেন। যদি তা না পায় তো মামীদের দোষ খুঁজে উনাদের পেছনে লাগবেন। তিন মামীর সাথে উনি খুব দাপট দেখায়। মিল নেই বললেই হয়। সেখানে তো আমি আবার উনার সতীনের মেয়ে। আর আব্বুর সাথে তো প্রতিদিন ঝগড়া লাগবেই মাস্ট। ওখানে আমার পড়াশোনা হয়ই না বললেই হয়। ঠিকমতো ঘুমাতেই পারি না! সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ঠুসঠাস আওয়াজ শুরু করবে,হ্যাল্পিং হ্যান্ডকে শিখিয়ে দেবে সোফাগুলো জোরে জোরে শলার মুঠো দিয়ে ঝাড়তে। তো মেয়েটাও বাধ্য হয়ে ঠাস ঠাস করে ঝাড়বে,এইসব শব্দ আমার মস্তিষ্কে ঢুকে যায়। এরপর ব্লেন্ডার চালু করবে,উচ্চস্বরে টিভি ছেড়ে রাখবে,শিল-পাটায় বুয়াকে দিয়ে ওটা-সেটা বাটাবে,চেয়ার-টেবিল টেনে একেক বার একেক দিবে নিবে গুছিয়ে রাখার নাম করে। মানে,শব্দ করতে তিনি ভীষণ পছন্দ করেন। আর হাঁড়ি-পাতিলের উপর অত্যাচার তো আছেই! এইসব উনি বেশি করে সকালবেলায় কিংবা একটু ঘুমালে আর বেশি করে পড়তে বসলে। সেইসব আর বললাম না। তবে তিনি একবার একেকজনের পেছনে পড়বে আর চিৎকার চেঁচামেচি করতেই থাকবে। এজন্যই ক্লাস সিক্স থেকে আমি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়তাম। ওখানের হোস্টেলে উঠেছিলাম সেই ছোট্ট বয়সে। আমার আপন মামাই হোস্টেলে রাখতেন আমার সৎ মায়ের এইসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে। সেই ছোট্টকাল থেকেই আমি মাকে পেলাম না,বাবা থাকতেও বাবার স্নেহ-মমতা পেয়েছি তবে খুব কম!”
_____________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here