#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১৩)
________________________
মিঠির এই কথায় বিষাদ আর হতাশা ছিলো। খুব খারাপ লাগলো শেহজাদের।
“মামাকেও তেমন একটা কাছে পাইনি। দূর দেশে থাকেন তিনি। সেই থেকেই আমি একাকিত্বে এবং ডিপ্রেশনে ভুগে কিছুটা জেদী হয়েছি। সবার বাবা-মা সবাইকে কতো আদর করতো। মিলেমিশে স্কুলে নিয়ে আসতো। আর আমাকেই একা পথ চলতে হতো। আমার জীবন এবং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনেক স্ট্রাগল করেছি। জানেন,পারিবারিক সুখশান্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারে থাকা কিছু নিচু মানসিকসম্পন্ন সদস্যের কারণেই নষ্ট হয়। তেমনটা আমাদেরও হয়েছিলো। পারিবারিক যন্ত্রণা অশান্তি,দিন দিন একটি মানুষকে ভিতর থেকে মে’রে ফেলে। তেমনটা আমাকেও। তবে জানেন,একটা নির্দিষ্ট বয়সে আসার পর বুঝতে পারলাম কিংবা বুঝা যায় মা ছাড়া আসলেই দুনিয়াতে কেউই আপন নয়। আমার কাছে মনে হয় যে মা ছাড়া কোথাও কেউ নেই।”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফের বলতে লাগলো,”এরপর সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট করার পর ভাবলাম বাসা থেকে পড়াশোনা করবো। আর বাবার কাছ থেকে দূরে থাকবো না। অনেক তো থাকলাম। ভাবলাম,মতিঝিলের কোনো ভালো একটা কলেজে ভর্তি হবো। কিন্তু মায়ের জন্য বাসায় থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। মা আরো বেশি আমার উপর চওড়া হয়। শেষে আমার আপন মামা আমাকে উত্তরা রাজউক মডেল কলেজে ভর্তি করান। মামা আমাকে হলে থাকতে দেননি। কারণ হলের মেয়েরা একেকজন একেক মানসিকতার। আরো আমি যেহেতু জেদী। তাই ভয় পেতেন। ভাবতেন বনিবনা হবে না। আচ্ছা যাক,বললে সে অনেক কথা। আর বিস্তারিত নাই বা বললাম। যারা হলে থেকে পড়াশোনা করেছে কেবল তারাই বুঝবে। এবার কলেজ বন্ধ হওয়ায় এবং সামনে যেহেতু ফাইনাল এক্সাম তাই ভাবলাম বাসা থেকে ঘুরে আসি। এক্সামের চক্করে পড়লে তো আর আসা সম্ভব না। তাই ভাবলাম দু-দিন থেকে চলে যাবো। কিন্তু আমার থাকাটা মায়ের পছন্দ হচ্ছিলো না। রাতে কিছু একটা নিয়ে আব্বুর সাথে ঝগড়া লেগে হ্যাল্পিংহ্যান্ডকে মা’র’ধ’র করতে লাগলেন। আমি গিয়ে ছুটানোর চেষ্টা করলাম। তাকে রেখে এবার মা আমার গায়ে হাত তুলতে নেয়। তখন বাবা ধরে ফেলেন। এরপর শুরু হয় আরেক ধাপ ঝগড়া। মায়ের অকথ্য ভাষায় বকাবকি আর আমার গায়ে হাত তুলতে নেওয়ার বিষয়টি আমাকে খুব পীঁড়া দেয়। তাই আমি রাগ করে বৃষ্টির মধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে যাই এবং ওখানে প্রায় ঘন্টা দুয়েক বৃষ্টিতে ভিজে আমার নিজের মায়ের শূন্যতায় কান্নাকাটি করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর আপনি এসে আমার সামনে দাঁড়ান। কিছু জিজ্ঞেস করতেই আমি ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যাই এবং অসতর্কতাবশত সেন্সলেস হয়ে পড়ি। তারপরেও ঘটনাগুলো তো আপনার জানা।”
বলে আবারও থামলো। দম নিলো একটু। ফের বলতে লাগলো,”যা বলার জন্য এতোকিছু বললাম তা হলো,এই বাসাটা মামার চাপে পড়ে আব্বু কিনেন। এখানে মামা আর আব্বুর টাকা দিয়ে কেনা। আমি একা থাকি এখানে। আব্বু সপ্তাহের ৩-৪ দিন এসে থাকেন। আমার নানা-নানু নেই,খালাও নেই। শুধু আপন একটা মামা আছেন। তিনি আমেরিকা থাকেন স্বপরিবার নিয়ে। দেশে তেমন-একটা আসেন না। আমার পড়াশোনার খরচ এবং ভরণপোষণ মামাই সব দেন। এজন্যই বলছি,আলাদা বাসার প্রয়োজন নেই। আর আমার বাসা মানে আপনার। আপনার মানে আমার। স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরের পরিপূরক আর অর্ধাঙ্গিনী কেনো বলা হয়েছে বুঝতে পারেন না!”
মিঠির শেষোক্ত কথাগুলো বিশ্বাস হলো না শেহজাদের। হঠাৎ এতো পরিবর্তন? মানে মিঠিকে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। কাল রাতের আচরণ আর এখানকার আচরণে কতো ডিফরেন্ট।
“জানেন,সেই ছোট থেকেই বাবা এবং মামার থেকে শুনে আসছি আমাকে অনেক দূর পড়াশোনা করতে হবে। হ্যাঁ করছি,আজ আর আমি সেই ছোট মেয়েটা নেই,দেখতে দেখতে প্রায় সতের বছর অতিক্রম করে আঠারোতে পা দেবো। জানেন,একদিন আড়াল থেকে আমি শুনলাম,আমার বাবা এবং সৎ মায়ের কথা। মা বাবাকে বলল,”কিছুই হবে না ওতো পড়াশোনা করিয়ে,কোনও লাভ নেই! মেয়ে মানুষের এতো পড়াশোনা করে কি লাভ?সেই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে হাড়িপাতিলই মাজতে হবে। এখনি ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিন।”
তা শোনামাত্রই বাবা বলেছিলো,”আমার মেয়ের চেষ্টা মনিরা। ওকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”
কিন্তু কোথায় আর সুযোগ? বাড়ি ছাড়াই হতে হলো।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিঠি।
“জানেন,অনেক সময় আমাদের আশেপাশে এরকম হাজারও মিঠির ছোট-বড় স্বপ্নগুলো পরিবারের টানেই অসম্পূর্ণই রয়ে যায়।”
মিঠির কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো শেহজাদের। মিঠির শেষোক্ত কথাগুলো মন্দ নয়। মলিন হাসলো মিঠি। শেহজাদকে নিশ্চুপ দেখে বলল,”যান বাজার করে নিয়ে আসুন। স্বামী হিসেবে আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য-অধিকার রয়েছে বউয়ের প্রতি।”
মিঠি না বললেও সে বাজার করে দিয়ে যেতো। কিন্তু মিঠির স্বাভাবিকতা কেমন যেনো! আবার বলছে ফ্রেন্ডরা আসবে। হঠাৎ ভাবলো তাকে ইনসাল্ট করবে না তো তাদের সামনে?এই মেয়েকে তো চেনা যায় না। একেক বার একেক রূপ। ভয় পেলো শেহজাদ,চিন্তিতও হলো। মিঠি বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিলো। বেরুতে নেয় শেহজাদ।
“এই শুনুন।”
“হ্যাঁ।”
একটা খাম ধরিয়ে দিলো হাতে।
“এটা কী?”
“বাজার করবেন তো। টাকা দিলাম।”
“লাগবে না। আমার কাছে আছে।”
“বাড়াবাড়ি করবেন না। আজ কিন্তু অনেক বাজার। এতো টাকা আপনার কাছে নেই হয়তো।”
“আছে।”
“আচ্ছা থাকলে পরে খরচ করা যাবে তো। এখন এটা নিন।”
“লাগবে না।”
খামটা রেখে বেরিয়ে গেলো শেহজাদ। মিঠি খুশি হয়,তবে খামটা রেখে যাওয়ায় নয় শেহজাদের পারসোনালিটি দেখে।
৪৩.
একটা রিকশা নিয়ে শেহজাদ চলে গেলো বাজার করতে। মিঠি বিছানায় শুয়ে শেহজাদের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। আসলেই কী সে মানুষটার প্রেমে পড়েছে? প্রশ্ন করলো নিজেকে! টের পেলো তার বুকটা ধুকপুক করছে! প্রেমে পড়লে বুঝি এমন অনুভূতি হয়? হেসে উঠে মুখ ঢেকে ফেললো মিঠি। অনন্যা এসে পাশে বসলো।
“কীরে তুই দেখি ভীষণ খুশি!”
“কই না তো! আচ্ছা খালা কী করে?”
“মশলাপাতি বেল্ড করছে। তুই তো আবার তাজা মশলাবাটা ছাড়া কোনো রান্নাই খাস না।”
“হুম।”
“মাটন দিয়ে কী রান্না করবে?”
“মাটন বিরিয়ানি করলে হিন্দু-মুসলিম সবাই খেতে পারবে। আর রাতের জন্য গরুর মাংস আনতে বলেছি। চিকেন বিরিয়ানি ভালো লাগে না।”
“টুম্পা,পারসা আর প্রিয়াও আসবে। ওরা কী মাটন খাবে?”
“না খাওয়ার কী আছে?”
“ওরা তো আবার খ্রিস্টান।”
“খাবে।”
“আর কী করবি?”
“গলদা চিংড়ি,ইলিশ,ডিম,চিকেন কাবাব। আর ক্যাসুনাট সালাদ,বাঁধাকপির সালাদ করে নিবি। আর দধি এবং কোক। আর বেশি কিছু করতে পারবো না এইসব করতেও অনেক সময় লেগে যাবে।”
“আমি ও সেটাই ভাবছি।”
“ওয়েলফুড থেকে একটা চকলেট ভ্যানিলা স্পঞ্জকেক আনতে বলেছি,সেইসাথে ওয়েল ফুডের শুকনো রসমালাই,কালোজাম আর মতিচুর লাড্ডু ও আনতে বলেছি।”
“ভালো হয়েছে। ওরা আবার মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেতে খুব পছন্দ করে।”
“হ্যাঁ এজন্যই। ও শোন,খালাকে বল বিরিয়ানির সাথে খাওয়ার জন্য জর্দা করতে। আমি বাসমতী চাল আনতে বলেছি।”
“ওয়াও! বাসমতী চালের জর্দা হবে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে যাই কাজে লেগে পড়ি।”
“মোরব্বাগুলো কেটে রাখ অনন্যা।”
“এই শোন,বাসায় কাজুবাদাম,পেস্তা বাদাম আর চিনা বাদাম আছে। কিন্তু টকদই,পোস্তদানা,কিশমিশ আর কাজু বাদাম নাই মিঠি।”
“লিস্টে লিখে দিয়েছি।”
“তাজা আদা আনতে বলেছিস?”
“হ্যাঁ।”
“একটা আইসক্রিম আনতে বলে দে।”
“তখন বলিসনি কেনো?”
“তখন তো খেতে ইচ্ছে করেনি।”
“আচ্ছা আসুক। পরে বলবো।”
মিঠির বাসার সবকিছু অনন্যার নখদর্পনে। কোথায় কি আছে না আছে সব অনন্যার মুখস্থ। বলা যায় অনন্যাও মিঠির পরিবারের একজন সদস্য। অতঃপর রহিমা খালার সাথে দু’জনেই কাজে লেগে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ওদের বান্ধবীরা সবাই চলে এসেছে। সবার সামনে কুশলাদি বিনিময় করলো দু’জনে। মিঠির বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করে ওকে পাগল বানিয়ে ফেললো ওরা। সব এন্সার এখন বসে বসে অনন্যা দিচ্ছে। মিঠি চুপ করে বসে আছে।
৪৪.
সব বাজার-সদাই করে রিকশা থেকে নামলো শেহজাদ। উপর থেকে লক্ষ্য রাখছিলো মিঠি-অনন্যা। শেহজাদ নামতেই মিঠির হাত ধরে নিচে নেমে পড়লো দু’জনে। এতো এতো বাজার-সদাই করেছে সে দুজনেই অবাক। লিস্টের বাইরে গিয়ে বাজার করেছে। বাসার কেয়ারটেকার আঙ্কেল সব উপরে নিয়ে আসছেন এক এক করে। অনন্যার হাতেও কিছু,মিঠিও কিছু নিলো হাতে। শেহজাদ ঘেমে-নেয়ে একাকার। ঘর্মাক্ত মুখটা দেখতেই ভীষণ মায়া হলো মিঠির। তবে মিঠিকে নিচে আসতে দেখেই শেহজাদের ভীষণ রাগ হলো। কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর করলো না। মিঠি ঠিক বুঝতে পারলো না কিছু। অতঃপর বাসায় আসতেই অনন্যার বান্ধবীরা শেহজাদকে দেখতেই স্তব্ধ হয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। বিব্রতবোধ করলেও শেহজাদ স্থির রইলো। ওরা এসে শেহজাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। ভদ্রতার সহিত শেহজাদও কুশলাদি বিনিময় করলো। তবে কলেজের ক্রাশ গার্ল এবং ভয়ংকর পুরুষবিদ্বেষী মেয়ে অর্থাৎ মিঠির স্বামী এমন হবে ভাবতে পারেনি কেউ। শেহজাদ ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে ফিরতেই সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো। মানে এটা ঠিক কিসের প্রেমে পড়লো মিঠির মতো এতো সুন্দরী মেয়ে। অনন্যা তো বলেই দিলো লাভ ম্যারিজ। মিঠি স্বাভাবিক। শেহজাদ কালো,এই নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। সাদা-কালো আল্লাহই বানিয়েছে। শেহজাদের গায়ের রঙ কিংবা বয়স নিয়ে মিঠির কোনো আক্ষেপ নেই। শেহজাদ ধনী নাকি বড়লোক কিংবা কত টাকার মাইনে পায় সেটাও মিঠি জানতে চায় না। তবে একটা জিনিস মিঠি মানতে পারে না শেহজাদের প্রথম বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা।
৪৫.
হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো শেহজাদ। বর্ষাকাল হলেও আজ মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়েছে। কলের পানিও টাটকা গরম হয়ে আছে। বেডের উপর বসতেই মিঠি এলো। তাকালো না শেহজাদ। মিঠি বুঝতে পারলো না শেহজাদ কেনো রেগে আছে।
“আপনি কী রেগে আছেন?”
“হ্যাঁ।”
“কেনো?”
“নিচে কেন গিয়েছো?”
“তো কী হয়েছে?”
“কী হয়েছে মানে!”
“না বললে কীভাবে বুঝবো?”
মিঠিকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করালো।
“একবার নিজের দিকে দেখো।”
নিজেকে দেখলো মিঠি।
“কই কিছুই তো হয়নি।”
আরো রাগ হলো শেহজাদের।
“এইসব কী পড়েছো?”
“আমি সবসময়ই এইসব পড়ি।”
“বাসার মধ্যে পরো ভালো কথা,বাইরেও এইসব পরে কেন গেলে?”
“সবসময়ই তো যাই।”
“কেয়ারটেকার,রিকশাওয়ালা তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে রয়েছিলো খেয়াল করেছিলে?”
কিছু বললো না মিঠি।
“তোমাকে এইভাবে দেখলে যেকোনো পুরুষের কামনা জাগবে,শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য।”
চুপ রইলো মিঠি।
“যাও দ্রুত সালোয়ার আর শরীরে উড়না জড়াও। আমার সামনে ব্যতীত কারো সামনে তুমি এইসব ড্রেস পড়তে পারবে না। স্টেইট বলে দিলাম। সেদিন রাতেও তুমি এইভাবে বের হয়েছো,রাগ হলেও কিছু বলিনি।”
কথা বাড়ালো না মিঠি। বিরক্তকর চোখে তাকালো শেহজাদ। আসার পর থেকে লক্ষ্য করছে মিঠি মিনি মিনি ফ্রক পড়ছে,স্কার্ট পরছে। ফকফকা সাদা,ধবল উরু দুটো বেরিয়ে থাকে। কতোটা আবেদনময়ী দেখায় সেটা জানে মেয়েটা? নতুন বিয়ে হয়েছে বিধায় অনাধিকার চর্চা হবে বলে কিছু বলেনি এই দু-দিন। আজ তো সোজা নিচে নেমে গেলো। কোনদিন খালি বাসায় পেয়ে কে কি করে বসে। মিঠিকে নিয়ে শেহজাদের ভয় হচ্ছে এখন। এই কেয়ারটেকারকেও সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। একটা একরঙা সালোয়ার আর উড়না জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মিঠি। কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস দইয়ের শরবত করে আনলো।
“নিন,ভালো লাগবে। লেবু দিয়েছি।”
রাগ হলেও নিজেকে দমালো,নির্লিপ্তে হাত থেকে নিয়ে পান করতেই হঠাৎ অনন্যা এলো।
“দুলাভাই প্লিজ একটু হেল্প করুন না!”
“বলো।”
“বাসায় স্টার এনিস,আখরোট আর কেওড়া জল শেষ হয়ে গিয়েছে। প্লিজ একটু এনে দিন। বিরিয়ানিতে স্টার এনিস না দিলে ঘ্রাণটা আসবে না।”
“দিচ্ছি।”
“তখন বলিসনি কেন লাগবে?”
“মনেই ছিলো না।”
তপ্তশ্বাস ফেললো মিঠি।
“দুলাভাই,আসার সময় একটা ভ্যানিলা আইসক্রিম নিয়ে আসবেন।”
“আচ্ছা,আর কিছু লাগবে?”
“না।”
বেরিয়ে গেলো শেহজাদ। ওরা হলরুমে এলো। টুম্পা বলল,”বাইরে কী গরম পড়েছে! এই গরমে উনাকে আবার পাঠানোর কী দরকার ছিলো অনন্যা? আরো স্বাস্থ্যবান মানুষ,কোনসময় হিটস্ট্রোক করে বসে।”
“কিছু হবে না।”
অনন্যার চিন্তা না হলেও হিটস্ট্রোকের কথা শুনতেই মিঠির চিন্তা হলো এবার। সত্যিই এবার খারাপ লাগছে! আজ ঢাকায় মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়ছে। অনন্যাকে কিছু বলাও যাবে না। মনে কষ্ট পাবে। মিঠিকে আনমনা দেখে শ্রুতি বলল,”তোর হ্যাজবান্ড এত্তো কালো! মানে কিভাবে মনে ধরলো তোর?”
“কালো বলে কী মানুষ না?”
“তা বলিনি। কিন্তু তুই তো একটু অহংকারী ছিলি এই ব্যপারে। কোনো ছেলেকেই পাত্তা দিতি না। বলা যায় ভয়ংকর রকমের পুরুষবিদ্বেষী।”
“যাকে পাত্তা দিয়েছি তাকে জামাই বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।”
অনন্যা বলল,”কয়দিন পর বাপ বানিয়ে ছেড়ে দিবে।”
মুখটা মলিন হয়ে গেলো মিঠির। সে ভাগ্য কী তার আছে?একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। পৃথিবীতে সবাই কী সব পায়?একদম না! আবার পেলেও হয়তো পায়।শ্রেয়াশা বলল,”তবে তোর হ্যাজবান্ড একটু বেশিই কালো; আরো বয়স্ক বলে মনে হলো। ভুঁড়ি একটাও কেমন বের হয়েছে।”
অনন্যা বলল,”ভুঁড়িতে মাথা রাখতে,মুখ গুঁজতে অনেক আরাম। আমি ও ভুঁড়িওয়ালা ছেলে দেখে বিয়ে করবো।”
চট করে অনন্যার দিকে তাকালো মিঠি।
“তুই কিভাবে জানিস ভুঁড়িতে মাথা রাখতে আর মুখ গুঁজতে আরাম?”
“আরে একটু ইম্যাজিন করেছি?”
“কাকে নিয়ে?”
“তোকে আর তোর স্বামীকে।”
অসন্তুষ্ট হলো মিঠি। নাকি অনন্যা নিজেকে শেহজাদের সাথে ইম্যাজিন করেছে! বুক কাঁপতে লাগলো মিঠির। অনন্যা শেহজাদকে কেঁড়ে নিবে না-তো?শেহজাদ নিজেও থাকতে চায় না অনন্যার জন্য। মহাচিন্তায় পড়লো মিঠি। গোপিকা বলল,”বাহ! অনন্যা দারুন। এগিয়ে যা। তোরা সবাই ভুঁড়িওয়ালা ধরে বিয়ে করছিস,কেউ প্রেমে পড়ে বিয়ে করছে! আমরা বাকি থাকবো কেনো? আমরাও আজ থেকে ভুঁড়িওয়ালা বর খুঁজতে রোডে নামবো।”
টুম্পা বলল,”মাইকে এনাউন্সমেন্ট কর যা।”
“তুই কর।”
“তুই কর।”
“তুই কর।”
গায়ত্রী বলল,”থাম তোরা।”
শ্রেয়াশার পূর্ব কথায় মিঠি বলল,”তুই মুসলিম হয়েও জানিস না আমাদের সাহাবী বেলাল (রা.) ও কিন্তু কালো ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ পাক উনাকে অনেক পছন্দ করতেন। উনার রূপ দেখে নয় উনার আখলাক চরিত্র ত্যাগ দেখে।”
“জানতাম না মাত্র জানলাম,তবে তোর হ্যাজবান্ডের মাঝে যদি এসব গুণ থাকে অবশ্যই উনাকে উঁচু মাকাম দান করবে আল্লাহ।”
“হ্যাঁ। ঠিক।”
অনন্যা বলল,”কালো হয়েছে কী হয়েছে আল্লাহর কাবাঘরের গিলাফ ও কালো রঙের। আর উনি মানুষটা কালো হলেও নীরহংকার! অমায়িক। উনার মাঝে কোনো অহংকার নেই,দেখিনিও। তিনি খুব ফ্রেন্ডলি। আর দেখলে বুঝাই যায় উনি খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন।”
পারসা বলল,”কালো বলে তোর মন খারাপ হয় না?”
“কালো বলে কোন কথা না,আমার মন খারাপ হয় না এতে। উনি আমার মন ভালো রাখতে পারেন,নামাজ পড়েন,উনার চরিত্র ভালো এবং সৎ পথে চলেন। এটাই আমার কাছে অনেক। উনাকে আমার সাদিওমানের মতো ভালো লাগে।”
গোপিকা বলল,”মিঠি তুই সাদিওমানের খেলা দেখিস?”
“হুম।”
“আমারও খুব পছন্দের।”
____________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।