তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১৭)

0
108

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১৭)
________________________

ফুল পেতেই মিঠির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। এতক্ষণে শেহজাদ লক্ষ্য করলো এতো দামী জিনিস দেওয়ার পরেও এমন হাসি দেখলো না। যতটা দেখলো ফুলগুলো পাওয়ায়। মেয়েরা বোধহয় ফুল পাগলী আর ফুল একটু বেশিই পছন্দ করে! দামী জিনিসেও মেয়েদের খুশি করা যায় না যতটা খুশি হয় সাধারণ একটা দশটাকার লাল টুকটুকে গোলাপে। ফুলই বোধহয় একমাত্র জিনিস যার প্রতি কারোর কোনো অভিযোগ নেই! কাছে টেনে নিলো মিঠিকে। কপালে চুমু খেয়ে বলল,”সুনেত্রা,তুমি আমার যেনো আহত কোনো যোদ্ধার বুকে বেঁচে থাকা এক মেঘফুল! জানো,আমার বুকের মধ্যে একটা গাছ আছে,তুমি ছুঁয়ে দিলেই ফুল ফুটবে!”

“আপনি আমার ডাকবাক্স হোন,আমার চুল হবে আমার ব্যক্তিগত ফুলদানি। আর সেখানে প্রতিদিন সেই ফোঁটা ফুলগুলো গুঁজে দিবেন।”

“হ্যাঁ,আমি তোমার ডাকবাক্স সুনেত্রা। আর সেখানে প্রতিদিন তোমার জন্য ভালোবাসার ফুলের চিঠি ফেলবো! তুমি কুড়িয়ে নিও।”

মৃদু হাসলো মিঠি। নিজের প্রশস্ত বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,”তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসবো! অনেক!”

চোখ বুজে রইলো মিঠি।

“সুনেত্রা তোমায় একটা কবিতা উপহার দিই?”

মাথা নাড়ালো মিঠি।

“নাক ডুবাবো চুলে,
ওগো তোমার বেলিফুলে!
ছুঁয়ে দেব তোমার দু-ঠোঁট,
ইচ্ছে করে ভুলে।
তোমার কাজল চোখে চেয়ে,
পাগল হবো রাতে,
চোখে চোখে কথা হবে,
রাগ হবে না তো তাতে।
মুখটা যদি বন্ধ থাকে,
হৃদয় কথা কয়,
গড়ে তুলি প্রেমের সিন্ধু,
তাতে মন্দ নয়।”

লাজুক হাসলো মিঠি। তার কাছে শেহজাদের দেওয়া আজকের সেরা উপহারের মধ্যে ছিলো এই কবিতাটি। সোনা-দানার প্রতি মিঠির আকর্ষণ কম। হুট করে বলে বসলো,”শবনমকেও কবিতা উপহার দিয়েছিলেন?”

থতমত খেলো শেহজাদ। সে ভাবতে পারেনি মিঠি এমন কিছু জিজ্ঞেস করবে। শবনমকে একটা নয় অসংখ্য কবিতা উপহার দিয়েছিলো এই পাঁচ বছরে। কিন্তু এটা শুনলে মিঠি খুব দুঃখ পাবে। আজকের এবং এই মধুময়ী মুহূর্তে তার চোখে-মুখে যেই হাসি,আনন্দ,উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছে সেটা বিলীন হয়ে যাবে। নরম মনে ভীষণ আঘাত পাবে মিঠি। নিজেকে ধাতস্থ করলো শেহজাদ। তাই মিথ্যার আশ্রয় নিলো। জানে মিথ্যা বলা ঠিক নয়,তবুও নিলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,”আরে না! আমি কবিতা পারি নাকি! ওই তোমার মাথায় বেলিফুলের মালা,চোখে গাঢ় কাজল দেখতেই হঠাৎ মনে যা এলো তাই এলোমেলো গলায় বলে দিলাম। এটা কোনো কবিতার মাথা হলো নাকি!”

মিঠি বিশ্বাস করলো কি-না কে জানে! তবে গম্ভীর মুখে বলল,”আপনি ভীষণ রোমান্টিক শেহজাদ।”

স্নিগ্ধ হাসলো শেহজাদ।

“তাই?”

“হ্যাঁ।”

“আমার মাঝেমধ্যে কেমন বিশ্বাস হয় না,এমন একটা রোমান্টিক,লাভিং কেয়ারিং মানুষকে কী করে মানুষ ছেড়ে যেতে পারে? গায়ের রঙই কী সব? ভালোবাসা,কেয়ার এইসব কিছুই না?”

নীরব রইলো শেহজাদ। কিছু বলতে পারলো না।

“মিঠি,চলো ঘুমাই।”

“একটা আবদার করি?”

“করো।”

“আপনি ভুঁড়িটা কমাবেন না।”

“কেনো?”

“আপনার ভুঁড়িতে মুখ গুঁজতে আরাম।”

আচমকা ভুঁড়িতে মুখ গুঁজলো মিঠি। আচমকা শবনমের কথা মনে পড়লো। প্রথম প্রথম তার ভুঁড়ি বের হওয়ায় অনেক ঠাট্টা মশকরা করলেও শবনম পরে ঠিক মিঠির মতো মুখ গুঁজতো ভুঁড়িতে। আর বলতো,ভুঁড়িটা অনেক নরম,তুলতুলে,আরাম। আজ কেনো জানি শবনমের কথা খুব মনে পড়ছে! মুখ তুললো মিঠি।

“শবনম আপনার ভুঁড়ি পছন্দ করতো? মুখ গুঁজতো ওখানে?”

“আরেহ! না না! ও ভুঁড়ি পছন্দ করতোই না। খুব বকাবকি করতো কেন কমাচ্ছি না। চাইলেই কি কমানো সম্ভব নাকি!”

“তাই তো! কমানোর প্রয়োজন নেই। ভুঁড়িটার কারণে আপনাকে সাহেব সাহেব লাগে।”

ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো শেহজাদ।

“চলো ঘুমাই।”

ফুলগুলো রেখে শুয়ে পড়লো।

“আজ আরো একবার স্বইচ্ছায় কাছে আসবে সুনেত্রা? অন্যায় আবদার করছি জানি!”

স্বইচ্ছায় এগিয়ে এলো মিঠি। শেহজাদ মিঠিকে বুকে নেয়। হুট করে শবনমের কথা মনে পড়ে আবারও। তপ্তশ্বাস ফেলে। হুট করে বাজেভাবে মানুষের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠা এক তীব্র যন্ত্রণার অনুভব হয়। মনে পড়ার অনুভূতিটা,স্বচ্ছ আকাশে হঠাৎ করে কাল বৈশাখি ঝড়ের মতো এসে মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়। শেহজাদকেও তেমনভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিলো। আচমকা দু-ফোঁটা তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো মিঠির গালে। মিঠি চমকায়! থমকায়! ঘাবড়ায় এবং ভড়কায়! কিছু জিজ্ঞেস করতে নেয়!

“হুশ! সুনেত্রা।”

চুপ করিয়ে দেয় শেহজাদ। হকচকিয়ে উঠে মিঠি। বুকের তলায় মিঠিকে রেখে দু-চোখ বুজলো শেহজাদ। ঘৃণামিশ্রিত গলায় মনে মনে বলল,”মানুষ জন্ম থেকেই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ভুলে যাওয়া তাদের ব্যক্তিগত অধিকার। ভুলে গিয়ে ভুল করলে,সে ভুল অপরাধ হিসেবে গ্ৰাহ্য হয় না। তাই মানুষ ভুলে যায়। তারপরও তোমাকে ভুলতে পারছি না! কেন? বলো তো শবনম! কেন? আমি তোমায় আগলে রাখতে চেয়েছিলাম ভালোবেসে,বাহুডোরে নয়। জোর করে কিছু হয় না। আমি জোর করতে পছন্দও করি না। তাই! তুমি যাওয়ার কথা বললে,ভালোবেসে অনুরোধ করতে পারলেও; জোর করে অধিকার দেখিয়ে আঁটকে রাখতে পারিনি! সাইকোলজির মতে নাকি,মেয়েদের যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছেলেদের থেকেও প্রায় ৪৭ শতাংশ বেশি। আর এই কারণে বিচ্ছেদের পর ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা নাকি খুব তাড়াতাড়ি মুভ অন করতে পারে। আচ্ছা তুমিও কী মুভ অন করতে পেরেছো শবনম? আমাকে যখন ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে,তখন তোমার বুক কাঁপে নাই? মন কাঁদে নাই? অভ্যাসগুলো ভুলে যেতে মায়া হয় নাই? আমার অশ্রুসিক্ত মলিন চেহারা দেখার পরেও তোমার বুক ফেটে কান্না আসে নাই? আহ! মানুষ নাকি খুব সহজেই মানুষকে ভুলতে পারে,শুধু আমিই পারলাম না! তবে কি আমি মানুষ নই? ভালোবেসে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম তোমাকে,আঁটকে রাখতে নয়। আমি তোমাকে ঘৃণা করি শবনম! অনেক ঘৃণা করি! প্রচুর ঘৃণা করি! তুমি একটা বেইমান! স্বার্থপর! তুমি ভালোবাসা চিনলে না! তুমি স্বার্থ চিনলে! স্বার্থটাই তোমার কাছে বড় ছিলো! অথচ বোকা আমি আজও স্বার্থ চিনলাম না! চিনলে আজ ধোঁকা,প্রতারিত এবং এলোমেলো হওয়া লাগতো না! আর কোনো নিষ্পাপ,নিরপরাধ মেয়েকে ও ঠকানো লাগতো না,ঠকতে হতো না। তোমার জন্য,কেবল তোমার জন্য একটা নিষ্পাপ মেয়ে প্রতিটি মুহূর্তে আমার মিথ্যা কথার দ্বারা ঠকছে! তাকে ঠকাচ্ছি! আই হেট ইউ শবনম! আই হেট ইউ!”

আরো কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়ায়। আধো-অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো মিঠি। পৃথিবীতে সবচাইতে ভয়ংকর স্পর্শ কাতর শব্দ হচ্ছে নাকি ম্যাচিওর মানুষের কান্না। শেহজাদের মতো একটা ম্যাচিওর মানুষ কান্না করছে! কেমন যেনো লেগে উঠলো মিঠির। নিজেকে সামলে নেয় শেহজাদ। চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রার্থনা করে,”ইয়া রব! আমাকে এমন হৃদয় দান করুন,যে হৃদয় কখনো আপনার ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হবে না।”

আচমকা দমকা হাওয়া বয়! মুষলধারে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। রুমের লাইট নিভে যায়! মিঠিকে খুব কাছে টেনে নেয়। সারা মুখে উষ্ণ চুম্বন খায়। আস্তে আস্তে স্পর্শগুলো গাঢ় হয়। শবনমকে ভোলার চেষ্টা করে শেহজাদ। একসময় মিঠিকে নিয়ে হারিয়ে যায় সুখ সমুদ্রে। ঝড় তোলা মাঝ সমুদ্রে,সুখের ভেলায় ভাসতে থাকে যুগল দম্পতি।
_____

মিঠির বান্ধবীরা সবাই আজ তার বাবার রুমে একসঙ্গে ঘুমাবে। শুয়ে-বসে একেকজন একেক রকম কথা বলছে। হঠাৎ টুম্পা বলে উঠলো,”অনন্যা তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”

“বল।”

“আসার পর থেকে একটা ব্যপার লক্ষ্য করলাম,তুই মিঠির হ্যাজবান্ডের প্রতি উইক।”

“মানে!?”

“তা তু-ই ভালো জানিস।”

“কী বলতে চাইছিস?”

শ্রুতি বলল,”ব্যপারটা আমিও লক্ষ্য করেছিলাম টুম্পা। ভাবছিলাম তোদের বলবো। তার আগেই বলে দিলি।”

শ্রেয়াশা বলল,”আমিও খেয়াল করেছি ব্যপারটা।”

অনন্যা বলল,”তোরা ভুল ভাবছিস। আমার মধ্যে এমন কিছুই নেই। হয়তো একটু বেশিই মিশে গেছি। তার মানে এই নয় যে উইক। আমি উনাকে সম্মান করি।”

টুম্পা বলল,”ওরা নিউ কাপল,যখন তখন ওদের রুমে উঁকি দেওয়া কিংবা নক না করে ঢুকে যাওয়া এটা কোন কমনসেন্সের পর্যায়ে পড়ে বোন তুই একটু বল?”

“আসলেই আমি এতোকিছু ভাবিনি।”

“শোন বোন,তুই এতো কিছু ভাবিসনি তা ঠিক! বাট ভালো-লাগার থেকেই কিন্তু ভালোবাসার শুরু। আর এটা তীব্র হতে পারে যেকোনো সময়েই! এজন্যই তোকে সতর্ক করছি! যা হয়েছে এটাই এনাফ! আর তোর ভালোর জন্য বলছি,তুই ও খুব সুন্দরী মেয়ে। তুই ক্যারিয়ার গড়লে আরো ভালো বর পাবি।”

নীরব রইলো অনন্যা। সে অবশ্য এইসব ভাবেনি। গেস্ট হিসেবে আপ্যায়ন করেছে এটাই।

“দুঃখিত,আমি নিজেকে শোধরাবো।”

“শোন,পায়েল-কৃত্বিকার মতো হওয়ার চেষ্টা করিস না বোন। তুই মিঠির সবচেয়ে কাছের এবং আপন আমাদের চেয়েও। আমরা চাই না তোর জন্য আমাদের এতো বছরের এতো সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক! আর আমরা এই রকম বন্ধুত্ব কখনো চাই না,যা আমাদের আরেক বন্ধুর জীবনসঙ্গীকে কেঁড়ে নেয়।”

লজ্জায় অনন্যার চোখে জল চলে এলো। সত্যি সে এতোকিছু ভাবেনি। গোপিকা বলল,”কাঁদিস না বোন,খারাপ কিছু বলেনি। একদিন তুই নিজে ঠিকই বুঝতে পারবি কেনো তোকে এইসব বলেছে।”

টুম্পা বলল,”আমি তোকে একদম বিশ্লেষণ করে বলবো না অনন্যা। তোর যখন বুদ্ধি হবে সেদিন তুই ঠিক বুঝবি কেনো টুম্পা,শ্রুতি,শ্রেয়াশা,গোপিকা অথবা আমরা সবাই এইসব বলেছি। আর মিঠি আমাদের বন্ধু কম বোন বেশি। ওর ক্ষতি হোক এটা আমরা কখনোই চাই না। ভুল বুঝিস না। কথাগুলো একটু ভেবে দেখিস।”
_______

গভীর রাত। জুবায়ের ওয়াশরুম গেছে। শবনম শুয়ে আছে। কী মনে করে শেহজাদকে ভিডিও কল দিলো। রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো মিঠির। নিজেকে শেহজাদের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে ফোনটা তুলতেই দেখলো শবনম কল করেছে। কিছু না ভেবে রিসিভ করলো। দু’প্রান্ত থেকে দু’জন দু’জনকে দেখতেই মিঠি না চমকালেও শবনম চমকে গেলো।

“এ্যাই মেয়ে! কে তুমি?শেহজাদের ফোন তোমার কাছে কেনো?”

“কেন,শেহজাদ তোমায় বলেনি আমি কে?”

“কী বলবে?”

“তোমার কমনসেন্স দেখে আমি বড্ড অবাক শবনম।”

অবাক হলো শবনম।

“কী বলতে চাও তুমি?”

“এতোরাতে কেউ কোনো নিউ কাপলকে কল দেয়?”

“শেহজাদ কোথায়?”

“ওই যে কালো মানিক ঘুমাচ্ছে। দেখবে?”

ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে দেখালো। দু’জনের কথায় জেগে গেলো শেহজাদ। ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো।

“কার সাথে কথা বলছো?”

“আমার এক্স সতীনের সাথে।”

ভড়কে গেলো শেহজাদ। দেখলো সত্যিই কলে শবনম রয়েছে। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে জুবায়ের বের হতেই কল কেটে দিলো শবনম। আমতা আমতা করতে লাগলো শেহজাদ।

“ফোনটা দাও,ওকে ব্লক দিচ্ছি।”

“যেটা প্রথমেই করার প্রয়োজন ছিলো,কিন্তু করেননি। তাই করার প্রয়োজন নেই।”

“স্যরি! ভুলে গিয়েছিলাম। দাও ব্লক করি।”

“বললাম তো প্রয়োজন নেই।”

শবনমের নাম্বারটা মুখস্থ করে নিলো মিঠি। শেহজাদ ফোন নিয়ে ব্লক করে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। মিঠি নিজের ফোন নিয়ে নাম্বার সেভ করলো। শবনমের হোয়াটসঅ্যাপে এড হলো। ওইসময়ের তোলা সবগুলো পিকচার পাঠিয়ে দিলো শবনমকে। মেসেজ টোন বেজে উঠতেই শবনম চেক করলো। দেখলো শেহজাদ-মিঠির কতো রকমের পিকচার। ভীষণ জেলাশফিল হলো শবনম। বুকটা জ্বলাপোড়া শুরু করলো। শবনমকে সিন করতে দেখে বাঁকা হাসলো মিঠি। বিড়বিড় করে বলল,”তোকে সুখে থাকবে দেবো না শবনম। তোর জন্য আমার জীবনের আজ এমন পরিণতি!”

শেহজাদ বের হতেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো মিঠি। টেনশনে শেহজাদের বুকের ভেতর মোচড় দিচ্ছে। মিঠি আবার কি যে শুরু করবে আল্লাহ জানে! কেনো যে সে ব্লক করলো না! আর শবনম ও বা কেনো ছ্যাঁচড়ামি করছে! চুপচাপ শুয়ে রইলো মিঠি। কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও শেহজাদ হাত গুটিয়ে নিলো। শেহজাদের কেমন লাগছে! সব তো ঠিক করে নিলো দু’জন,মিঠিও সব জেনেশুনে মেনে নিয়েছে। এই শবনমের জন্য এখন সকালে আবার কী করে বসে! মিঠির পাশে শুয়ে পড়লো। একবার তাকালো। চোখ বন্ধ করে আছে মিঠি। শেহজাদ জানে মিঠি ঘুমায়নি,নিশ্চয়ই মাথার মধ্যে শবনমকে নিয়ে চিন্তা করছে! এই শবনম তার জীবন থেকে স্বইচ্ছায় চলে গেলো ভালো কথা,কিন্তু এখন আবার এমন করছে কেনো? সত্যিই শেহজাদ এবার বিরক্ত হলো। প্রতিটি মানুষের কম-বেশ আত্মসম্মান এবং কমনসেন্স থাকা উচিত! তপ্তশ্বাস ফেলে চোখ বুজলো।
______

আমেরিকা সন্ধ্যা বরাবর সাড়ে আটটা বাজে। মাত্রই সূর্য ডুবলো। দিন এখন অনেক বড় হয়েছে। অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলেন আহসান সাহেব। এই তিন-চারদিন অফিসের এতো চাপ। কাল অফিস পিকনিক ছিলো। আজ আবারও নাকে-মুখে কাজ শুরু হয়েছে। সিটে হেলান দিয়ে মিঠিকে ফোন করলেন। মেয়েটা এই অব্ধি একটাবারও ফোন করলো না। কিন্তু রিং হলেও পিক করলো না মিঠি। সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এখন তো কলেজে থাকার কথা। মেয়েটার সামনে এইচএসসি এক্সাম। কলেজ ফাঁকি দেওয়ার মেয়ে মিঠি নয়। যথেষ্ট বেস্ট স্টুডেন্ট সে। চিন্তিত হলেন। মোশাররফ সাহেবকে কল করলেন। বার তিনেক ফোন করতেই পিক করলেন। সালাম দিলেন।

“মিঠি কোথায় মোশাররফ?”

“বাসায়।”

“ফোন তুলছে না কেন?”

“সেটা তো বলতে পারবো না।”

“হোয়াট! বলতে পারবে না মানে?”

“ইয়ে মানে আমি আজ আমাদের বাসায়।”

“মিঠির কাছে কে?”

চুপ করে রইলেন।

“কী হলো?”

“ভাইজান,একটা ঘটনা ঘটে গেছে আমার মেয়ের সাথে।”

“হোয়াট!”

“জি ভাইজান।”

“কী হয়েছে?”

কিছু বলতে পারলেন না মোশাররফ সাহেব।

“মিঠির যদি কিছু হয় তোমাকে আমি দেখে নিবো মোশাররফ।”

কল কেটে দিলেন। আর কাউকে ফোন করলেন না। রাগে মাথা দপদপ করছে! বাসায় ফিরে রাত বারোটার ফ্লাইটে প্লেনে উঠলেন।
______

বাংলাদেশ তখন সকাল সাড়ে দশটা। মামার ফোনে ঘুম ভেঙেছিলো মিঠির,কিন্তু ভয়ে পিক করেনি। তার মামা জানতে পারলেই হয়েছে। মিঠি আতঙ্কিত হয়ে আছে ভেতরে ভেতরে। শেহজাদ উঠে নামাজ-কালাম আদায় করেছে। মিঠি এখনও শুয়ে আসে। ডাকতে গিয়েও কেমন ভয় পাচ্ছে। শেহজাদ ভাবলো হয়তো শবনমের জন্য মন খারাপ মিঠির। মিঠির পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”মিঠি,উঠো। তোমার ফ্রেন্ডরা ডেকে গেছে।”

মিঠি উঠে বসলো। শরীরে কাপড় জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে এলো। টুপটুপ করে পানি পরে জামাটা ভিজে যেতে লাগলো। শেহজাদ পানি মুছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিলো। কিছু বললো না মিঠি। নিশ্চয়ই শবনমকেও এমন করতো,অভিজ্ঞতা আছে কালা মানিকের। ডোর নক করে টুম্পা ঢুকলো।

“মিঠি,ব্রেকফাস্ট করবি না?”

“হ্যাঁ।”

“দেখ পৌঁনে এগোরাটা বাজে। এখনও কিছু খায়নি কেউ।”

“স্যরি! চল।”

“মিঠি একটা শাড়ি পর না প্লিজ।”

“আমি পরতে পারি না।”

“এতোগুলা শাড়ি দিয়েছে,অথচ তুই পরছিস না। না পড়লে আমাদেরকে একটা একটা করে দান কর বোন।”

“সব দিলেও শাড়ি দিবো না। শাড়িগুলো আমার।”

“কী হিংসুটে!”

“ঠিক করেছি।”

“দে শাড়ি বের কর,পরিয়ে দিই।”

মিঠি কমলা রঙের একটা জামদানী শাড়ি বের করলো।

“এটা পরিয়ে দে।”

টুম্পা শাড়ি পরতে জানে,মিঠিকেও খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলো। আঁড়চোখে তাকালো শেহজাদ। মিঠিকে বেশ লাগছে শাড়িতে। নতুন বউ বউ লাগছে! শেহজাদকে ব্রেকফাস্ট করতে ডাকলো টুম্পা। মিঠি কিছু বললো না। শেহজাদ ভাবলো শবনমের জন্যই এমন করছে। আগে তো জিনিস ছোড়াছুঁড়ি করতো,তবুও চিৎকার চেঁচামেচি করে কথা বলতো,কিন্তু এখন তো মিঠি চুপ থাকে। মিঠির এই রূপ ভালো লাগলো না শেহজাদের। মারুক! বকুক! চিৎকার চেঁচামেচি সব করুক! তবুও কথা বলা বন্ধ না করুক! শেহজাদ গম্ভীর,চিন্তিত! টুকটাক সবাই কথা বললেও মিঠি চুপ রইলো। অনন্যাও আছে,তবে আজ একদম চুপচাপ। পরিবর্তনটা মিঠির চোখে পড়লো।

“অনন্যা।”

চোখ তুলে তাকালো।

“মন খারাপ?”

“না তো।”

মলিন হাসলো।

“কেউ তোকে কিছু বলেছে?”

“আরে না! কে কী বলবে?”

“আজ চুপেচাপ যে?”

“এমনিই।”

“কফি দিবি না?”

“খালা দিচ্ছে তো।”

“তুই জানিস খালার কফি ভালো হয় না।”

অনন্যা জানে এটা মিঠি মিথ্যে বলেছে। কিচেন থেকে শুনতে পেয়ে খালা হাসলো। দু’জনকেই তিনি চেনেন। দুই শরীর এক আত্মা।

“মাথা ব্যথা করছে অনন্যা।”

অনন্যা উঠে গেলো।

“টুম্পা অনন্যাকে কিছু বলেছিস?”

“কী বলবো?”

“ও গম্ভীর হয়ে আছে। ও এমন না।”

“শোন মিঠি,যা হয়েছে ইট’স এনাফ। এখানেই কথা ক্লোজ কর।”

কিছু বললো না মিঠি। তবে বুঝতে পারলো কিছু তো হয়েছেই। ঘন্টাখানেক পর আচমকা বাসায় ঢুকলেন মোশাররফ সাহেব। উনার চোখ-মুখ অস্বাভাবিক দেখালো। ঘাবড়ে গেলো মিঠি।
___________

চলবে~
কপি নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here