তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(০২)

0
147

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০২)
[প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত]
____________________________________

মিঠির সামনে এসে দাঁড়ালো শেহজাদ। মেয়েটা এখনো তার দিকে তাকালো না। শকড হয়ে আছে বোধহয়। একটাবারও তাকায়নি তার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে ইত্যাদি। সেই যে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এখনও তাকিয়েই রয়েছে। গলা পরিষ্কার করে নিলো শেহজাদ।

“স্যরি!”

প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না মিঠির মধ্যে।

“বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে। তুমি চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো।”

কথাটা শুনতেই চোখ তুলে তাকালো মিঠি। পূর্ব থেকে শেহজাদ তাকিয়ে রইলো। শেহজাদকে দেখতেই চমকে উঠে কয়েক হাত পিছিয়ে গেলো মিঠি।

“আ..আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে আমার!?”

কম্পিত গলায় জিজ্ঞেস করলো মিঠি। স্বাভাবিক রইলো শেহজাদ। জানতো এমনটাই হবে। তপ্তশ্বাস ফেলে বলল,”হ্যাঁ।”

অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে রইলো মিঠি। মানুষটা লম্বায় কত হবে? পাঁচ ফুট নয়-দশ ইঞ্চির মতো হবে মেইবি। কিন্তু কুচকুচে কালো। মুক্তোর মতো সাদা দাঁতগুলো দেখা যায় সবার আগে। স্বাস্থ্য বলতে ইয়া বড় ভুঁড়িও বের হয়েছে একটা। আনুমানিক কত হবে স্বাস্থ্য? হয়তো ৮০/৮৫ কেজি। মিঠির বিশ্বাস হচ্ছে না এইরকম কুচকুচে কালো একটা মানুষের সাথে তার বিয়ে দিয়েছে তার মামারা এবং সৎমা! রিয়েক্ট করতে ভুলে গেলো মিঠি।

“আ..আপনি ডিভোর্সড?”

মাথা নোয়ালো শেহজাদ।

“হ্যাঁ।”

অস্বীকার করার তো কিছুই নেই,সে ডিভোর্সড। এই মুহূর্তে মিঠির নিজেকে পাগল পাগল লাগছে! আচমকা নিজের চুলগুলো খামছে ধরে চিৎকার করে উঠলো। ঘাবড়ে গেলো শেহজাদ। দাঁত-মুখ খিঁচে পাশের সেন্টার টেবিল থেকে একটা ফুলদানি ছুঁড়ে মা’র’লো শেহজাদের দিকে। সাথে সাথেই কপাল কেটে গড়গড় করে রক্ত বেরুতে লাগলো। এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না শেহজাদ। একটার পর একটা বিপদ-আপদ,অপমান-অপদস্ত আর অসম্মান তার পিছু লেগেই আছে! এখানে তার দোষ কি?সে কালো,মোটা,স্বাস্থ্যবান,পেটে ভুঁড়িও বের হয়েছে,ডিভোর্সি আর প্রাক্তন স্ত্রীকে স্মরণ করে এই রাতের বেলা বাড়িওয়ালার ছাঁদে বৃষ্টিবিলাস করতে গিয়েছিলো এটাই। এগুলোই তার দোষ। আরো একটা দোষ রয়েছে। একদম বড় দোষ। যার জন্য শবনম তাকে ছেড়ে চলে গেছে। হঠাৎ শেহজাদের মোবাইলটা নিয়ে সেটাও ছুঁড়েও মা’র’লো গায়ে। রণচণ্ডী রুপ ধারণ করেছে মিঠি। পূর্ব থেকেই মিঠি ভীষণ রাগী,তেজী আর বদমেজাজী। আজ যেনো সব নিংড়ে দিচ্ছে শেহজাদকে। আচমকা দৌঁড়ে এসে টি-শার্টের কলার চেপে ধরলো,”প্রতারক,চিটার! আমার সাথে চিট করতে বুক কাঁপলো না একটু? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বিয়ে করতে ইচ্ছে করে?”

“আমি চিট করিনি। তোমার মা,মামা-মামীরাই জোর করে এই বিয়েটা দিয়েছে। আর আমি ডিভোর্সড। সেটাও তোমার বাবা-মা থেকে শুরু করে এই এলাকার সবাই জানে। হয়তো তুমি ছাড়া।”

জানবে কিভাবে? মিঠি থাকে হোস্টেলে। আর সে শেহজাদের খবর রাখে নাকি! শেহজাদ হচ্ছে তাদের বাসার ভাড়াটিয়া। ভাড়াটিয়ার খবর রাখা এখনো তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। সেটার জন্য তার বাবা-মা আর মামা-মামী রয়েছে। কলার ছাড়িয়ে নিলো শেহজাদ। রক্তে সারা শরীর ভেসে যাচ্ছে। মায়া হলো না মিঠির। মন চাইছে লোকটাকে মে’রে ফেলতে! মিঠি ডোর খুলে বেরিয়ে যেতে নেয়। পেছন থেকে হাত ধরে ফেললো শেহজাদ। রাগের মাথায় মিঠিকে একা ছাড়া মানে বিপদ। তাছাড়া মিঠি এখন রাগের বশবর্তী হয়ে সু’ই’সা’ই’ড ও করে ফেলতে পারে! আরেকটা কথা মিঠি তাদের বাসায় গেলে আরো ঝামেলা বাঁধবে। ভুলক্রমে কোন একটা ডিসিশন নিলে পুলিশ কেইসে তাকে ফাঁসতে হবে। আর মিঠির সৎ মামারা খুবই ডেঞ্জারাস প্রকৃতির লোক। এদের পাল্লায় পড়া মানে স্বইচ্ছায় নিজের জীবনকে বলি দেওয়া। মিঠিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। কোমল গলায় বলল,”শান্ত হও মিঠি! মাথা ঠাণ্ডা করো। একটু বুঝতে চেষ্টা করো প্লিজ। যাও সব দোষ আমার।”

“আপনারা সবাই আমার সাথে চিট করলেন।”

“আমি মানুষটা কালো,কিন্তু ইচ্ছে করে তো কালো হয়ে জন্ম নিইনি। আর ডিভোর্সি কেউ ইচ্ছে করে হয় না।”

“পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করলেন?”

“এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট আর ভাগ্যে এমনটাই লেখা ছিলো।”

“তাই বলে আপনার মতো কালো,ক্ষ্যাত মার্কা,ডিভোর্সি,বয়স্ক,ভুড়িওয়ালা একটা লোকের সাথে?”

“মানুষ হিসেবে আমি কী খুব খারাপ?”

“খারাপ না হলে ডিভোর্স কেনো হলো?”

“সব ভাগ্য। তুমি চাইলে ডিভোর্স নিতে পারো। আমার কোনো কিছুতেই বাঁধা নেই।”

“তাহলে আপনার মধ্যে আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?”

“তাহলে থেকে যাও।”

“থাকবো না আপনার সাথে।”

“আমার আসল সত্যি জানলে এমনিতেই তুমিও ডিভোর্স নিবে। তাই আজ হোক কাল,ডিভোর্স তো হবেই শিউর। আমি প্রস্তুত।”

গুরুত্ব দিলো না মিঠি।

“হাত ছাড়ুন। নয়তো আপনাকে মে’রে ফেলবো।”

“মিঠি এখন পাগলামো করো না প্লিজ। সকাল হোক। মাথা ঠাণ্ডা করো। আর সবকিছুর জন্য স্যরি।”

“আমি কিছুতেই আপনার সাথে থাকবো না।”

এবার কড়া একটা ধমক দিলো মিঠিকে। চুপসে গেলো মিঠি। রাগে ফুঁসতে লাগলো। কপাল চেপে ধরে মিঠির বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বেডরুমে নিয়ে গেলো।

“ঘুমাও। একটা কথাও না। কী হাল করেছো আমার,একবার দেখেছো! তুমি কী সত্যিই মানুষ? ডাউট হচ্ছে।”

সারা মুখ রক্তে ভেসে গেলো শেহজাদের। কটন আর লিকুইড স্যাভলন দিয়ে জায়গাটা দ্রুত পরিষ্কার করে নিলো। একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিলো।

“চুপচাপ শুয়ে পড়ো। আমি ড্রয়িংরুমে যাচ্ছি। চিন্তার কিছু নেই।”

রাত আড়াইটার বেশি। মাথা ঘুরছে শেহজাদের। একে-তো মিঠির এট্যাক করা। দ্বিতীয়ত,টেনশনে এবং তৃতীয়ত,বৃষ্টিতে ভেজার দরুন তার মাথা ব্যথা করছে। ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় শুয়ে পড়লো। তার বাসায় একটা মাত্র বেড। দু’জনের টোনাটুনির সংসার তো তাই বাড়তি বেডের প্রয়োজন ছিলো না। আর তার বাবা-মাও গ্রাম থেকে শহরে আসে না। শবনম এইসব পছন্দ করে না। তাই ডাবল বেডের প্রয়োজন ছিলো না কখনো। মিঠি ওইভাবেই বসে রইলো। বসা অবস্থায় কখন মিঠির চোখ লেগে এলো জানে না।

০৯.
ফজরের আযানের শব্দ কানে আসতেই ঘুম গেলো মিঠির। হঠাৎ পাশের রুম থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পেলো। ভয় পেলো মিঠি। আধো আলোয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতেই দেখলো সোফায় শুয়ে গোঙাচ্ছে শেহজাদ। এগিয়ে গেলো মিঠি। শীতে কাঁপছে মানুষটা। কপাল বেয়ে এখনও টুপটুপ করে রক্ত বেরুচ্ছে! ইশ! কী জঘন্য অবস্থা! শেহজাদের শুকনো মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো আধো আলোয়। মানুষটা কালো,কিন্তু মুখটা মায়াবী। মায়ায় মায়ায় ভরা। দেখতে মন্দ না। মিঠির মায়া হলো কেনো জানি! কাঁপা কাঁপা হাতটা শেহজাদের কপালে রাখতেই চমকে উঠলো। ইশ! জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আহারে! সব তার জন্য হয়েছে। মিঠি বেডরুম থেকে একটা কাঁথা নিয়ে শেহজাদের শরীরে জড়িয়ে দিলো। তবুও শেহজাদ কাঁপছে। খুব সাংঘাতিক জ্বর উঠেছে। শেহজাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মিঠি। চোখ তুলে একবার সারা ঘরে চোখ বুলালো। মিঠি যতটুকু বুঝতে পারলো শেহজাদের প্রাক্তন স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে আর মানুষটা এই পুরো বাসায় একা থাকে। আনমনা হলো মিঠি। হঠাৎ মনে পড়লো তার বাবার কথা। তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়নি। তার বয়স যখন সাত বছর তাখন তার মা মা’রা যায়। এরপর থেকে তার মায়ের শূন্যতায় তার বাবার চোখে-মুখে তার মাকে হারানোর যে কষ্ট মিঠি দেখতো এখন সেই কষ্ট কেনো জানি শেহজাদের চোখে-মুখে দেখতে পাচ্ছে! শেহজাদ কালো,তার মা ছিলো শ্যামলা গড়নের আর তার বাবা কিন্তু সুন্দর! মিঠি বাবার মতো হয়েছে। তার বাবার গায়ের রঙ পেয়েছে। কেনো যেনো শেহজাদের মধ্যে গায়ের রঙ দিয়ে তার মায়ের প্রতিচ্ছবি আর একাকিত্ব দিয়ে তার বাবার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলো মিঠি। কেনো যেনো মিঠির মনে হচ্ছে তার বাবা-মা দু’জন এই মানুষটার মধ্যে এক হয়ে কষ্ট পাচ্ছে! এই নিস্তব্ধতা রাতে শেহজাদকে দেখতে দেখতে হুট করে বাবা-মায়ের কথা মনে পড়লো মিঠির। খুব মিস করছে মাকে।

১০.
শেহজাদের কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে! কাঁপা কাঁপা তর্জনী ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজের উপর স্পর্শ করলো। মানুষটা কেঁপে উঠলো। ইশ! নিশ্চয়ই খুব বেশি আঘাত পেয়েছে! ব্যথা করছে! অনুতপ্ত হলো মিঠি। তার থেকে বয়সে বড় মানুষটার সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি তার। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে লাগলো শেহজাদ। জ্বর তার তেমন একটা হয় না। যদি হয় তাহলে মারাত্মক আকার ধারণ করে। জ্বরের ঘোরে কী কী করে ফেলে শেহজাদ নিজেও বুঝে উঠতে পারে না। তার জ্বরটা খুবই অদ্ভুতুড়ে! মানুষটার শুকনো ব্যথাতুর মলিন মুখ দেখে মিঠির ভীষণ মায়া হলো। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে এলো। শেহজাদের টাওয়ালের এক অংশ ভিজিয়ে,পানি নিংড়ে আনাড়ি হাতে জলপট্টি দিতে লাগলো কপালে এবং বাকি অংশটুকু ভিজিয়ে হাতে মুখের,গলার রক্ত মুছে দিলো। সব মুছে দিয়ে আবারও কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো। মাথায় জলপট্টি দিয়ে শেহজাদের পাশে বসলো। তাকিয়ে রইলো মুখের দিকে। শেহজাদ আরো কাঁপছে! মিঠি কি করবে ভেবে পেলো না! বেডের উপর পাতলা এই কাঁথাটাই পেয়েছে তাই নিয়ে এসেছে।

হঠাৎ শুনতে পেলো শেহজাদ বিড়বিড়িয়ে কিছু বলছে। কান এগিয়ে নিলো মিঠি। বুঝার চেষ্টা করলো। আচমকা চোখ মেলে তাকালো শেহজাদ। চোখে চোখ পড়তেই ঘাবড়ে গেলো মিঠি। মানুষটার চোখগুলো টকটকে লাল। নেশা করলে যেমন হয় তেমনই। ভীষণ ভয় পেয়ে সরে আসতে নিতেই আচমকা শেহজাদ মিঠির হাত ধরে টেনে তার সাথে জড়িয়ে নিলো। ছাড়ানোর চেষ্টা করলো মিঠি। কিন্তু শেহজাদ ছাড়লো না। কাতর গলায় শেহজাদ বলতে লাগলো,”শবনম! তুমি আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গেলে বলো? বলো কেনো চলে গেলে? আই লাভ ইউ শবনম! আই মিস ইউ! তোমাকে ভুলতে পারছি না আমি! খুব কষ্ট হয় আমার! ফিরে এসো শবনম! আমাকে রেখে আর কোথাও যেও না প্লিজ।”

সমানে এইসব বলতে লাগলো। মিঠি বুঝতে পারলো জ্বরের ঘোরে শেহজাদ তাকে নিজের প্রাক্তন স্ত্রী ভাবছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে মিঠি বলল,”আমি মিঠি! ছাড়ুন বলছি।”

শেহজাদ ছাড়লো না। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো। শ্বাস আঁটকে রইলো মিঠি! জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের গভীর ছোঁয়া পেলো। টুপ করে দু-ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

“কেনো মিথ্যা বলছো শবনম? আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাই আবারও ফিরে এসেছো। আই মিস ইউ শবনম!আই মিস ইউ!”

মিঠি বুঝাতেই পারলো না যে সে শবনম নয়। আচমকা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো শেহজাদ। মিঠিকে কিছু বলতে না দিয়ে পাঁজাকোলে তুলে বেডরুমের দিকে হাঁটা ধরলো। বেডে শুইয়ে দিলো মিঠিকে। মিঠি বুঝতে পারলো সে সচেতন অবস্থায় থাকলেও মানুষটা অসচেতন। মিঠিকে কিছু বলতে দিলো না শেহজাদ। শবনম মনে করে মিঠির সাথে জড়িয়ে গেলো এক পবিত্র গভীর সম্পর্কে। বাঁধা দিতে গিয়েও মিঠি কিছু করতে পারলো না। পুরুষালী শক্তির কাছে তার শক্তি নগন্য! বৃথা! হার মেনে নিলো। নিজের ভাগ্যের উপর অভিমান হলো! পরিহাস করলো! কটাক্ষ করলো! নিজেকে নিজে দোষ দিয়ে জর্জরিত করতে লাগলো! শেহজাদের সব মেনে নিলো দু-চোখ বুজে। সবকিছু সহ্য করতে পারলেও এমন একটা মুহূর্তে শেহজাদের মুখ থেকে বার-বার শবনম ডাকটা সহ্য হলো না মিঠির। শেহজাদ তাকে মিঠি ভেবে নয়,বরং শবনম ভেবে উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়েছে। কার্য শেষে ক্লান্ত হয়ে মিঠিকে বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো শেহজাদ। শরীরের ব্যথা এবং মানুষটার শরীর থেকে আসা মাত্রাতিরিক্ত তাপে চোখ বুজতে পারলো না মিঠি। সারারাত চোখের জলের বন্যা বইয়ে দিলো।

১১.
ফোঁপানোর শব্দে এবং খালি বুকে গরম তরল টাইপের কিছুর টের পেতেই ঘুম হালকা হয়ে এলো শেহজাদের। নিভু নিভু চোখে তাকাতেই দেখলো তার বুকে কেউ শুয়ে আছে। মূলত,তার বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে রেখেছে সে। একহাত দিয়ে চোখ কচলে নিলো। মুখ তুলতেই মিঠির অশ্রুসিক্ত মুখখানি দেখতেই আচমকা আঁতকে উঠলো শেহজাদ। তড়াক করে বুকটাও কেঁপে উঠলো। দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো। ব্যপারটা ঠিক কি বোধগম্য হলো না কিছুই। সে বেডে এলো কখন? আর মিঠির সাথে কেনো? তাদের এমন অবস্থাও বা কেনো? লক্ষ্য করলো দু’জনের গায়ে কোনো বস্ত্র নেই। নিজের শরীরে চাদর পেঁচিয়ে রেখেছে মিঠি। তদ্রূপ তার কোমড় অব্ধিও চাদর পেঁচানো। রুমের দিকে দৃষ্টি বুলাতেই দেখলো তার আর মিঠির জামাকাপড় পড়ে আছে ফ্লোরে। বুঝতে বাকি রইলো না যে কঠিন সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে! মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে! ঘামতে লাগলো শেহজাদ। হঠাৎ তার জ্বর কোথায় উধাও হয়ে গেলো। কি জবাব দেবে এখন মিঠিকে? আর মিঠি তাকে কি ভাববে? বলবে পৃথিবীর সকল পুরুষ এক! নারীর দেহ লোভী! তার দ্বারা এতো বড় ভুল কি করে হলো শেহজাদ বুঝতে পারছে না। রাতের কিছুই মনে পড়ছে না তার। গোলুমুলু সুন্দর মিষ্টিমুখী মেয়েটা কেঁদেকেটে বন্যা বানিয়ে ফেলেছে। ফর্সা গালজোড়া এবং নাকটা টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। সুন্দর চোখজোড়া ফুলে ঢোল। অনুশোচনায় শেহজাদের অস্থির লাগছে! ক্রমাগত থর থর করে সারা শরীর কাঁপছে! কি জবাব দেবে মেয়েটাকে? কম্পিত গলায় ডাকলো,”মি..মিঠি!”

বাহুতে হাত রাখতেই ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দিলো। মিঠির রাগ হওয়াটা তো স্বাভাবিক। নিজেকে ধাতস্থ করলো শেহজাদ। শক্ত করে বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরালো।

“মিঠি,আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে?”

কিছু বললো না মিঠি। ঘৃণামিশ্রিত চাহনি নিক্ষেপ করলো। তার মতে ভণিতা করছে মানুষটা! কিন্তু শেহজাদের বিশ্বাস হয়েও যেনো হচ্ছে না। যেনো কোনো স্বপ্ন কিংবা ঘোরে রয়েছে। শিউর হলেও শেহজাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না কিছু। শেহজাদের মন বলছে মিঠি শুধু একবার বলুক,কিছু হয়নি। সব বিভ্রম! সব মিথ্যা! সব স্বপ্ন! কিন্তু রেসপন্স করলো না। কোমল হলো শেহজাদ।

“আ’ম ভেরী স্যরি মিঠি! বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে। আমার খুব খারাপ লাগছে! কথা দিয়েও কথার খেয়ানত করে ফেললাম। আমি সত্যি খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি! অন্যায় করে ফেলেছি! আমার দ্বারা এতো বড়ো ভুল কিভাবে হলো আমি সত্যি বুঝতে পারছি না! তোমার মতো কনফিউজড আমিও। আমি ক্ষমার অযোগ্য। হয় পানিশমেন্ট দাও আর না হয় ক্ষমা করে দাও এই পাপী বান্দাটাকে।”

দাঁত-মুখ চেপে নিজেকে ছাড়িয়ে আচমকা শেহজাদের ঘাড়ে,গলায়,বুকে,কানে যেখানে পারলো খামছে চামড়া ছিলে ফেললো। চামড়া ছিলে রক্ত বেরুতে লাগলো। ব্যথাতুর মুখে অসহায় নেত্রে মিঠির দিকে তাকিয়ে রইলো শেহজাদ। কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করলো না। এতেও যদিও মেয়েটার রাগ কমে একটু! আর তার নিজের প্রতি নিজেরই জিদ হচ্ছে! ইচ্ছে করছে নিজেই নিজের মাথামুণ্ডু ফাটিয়ে ফেলতে। এতো বড় ভুল তার দ্বারা কিভাবে হলো? শুয়ে পড়লো মিঠি। শাওয়ার নিতে গেলো শেহজাদ। শরীরে পানি পড়তেই সারা শরীর জ্বলে উঠলো। দাঁত-মুখ খিঁচে সহ্য করে নিলো। দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। টেনশনে তার শরীর থেকে জ্বর পালিয়ে গেলো। যদিও এখনো শরীর গরম রয়েছে। মিঠির কাছে এলো। কোমল গলায় বলল,”মিঠি,উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। অনেক বেলা হয়ে গেছে।”

শরীরে হাত দিতেই বুঝতে পারলো মিঠির জ্বর এসেছে। ধক করে উঠলো শেহজাদের বুকটা। মাত্র একরাতেই এতো সুন্দর মিষ্টি একটা মেয়েকে অসুস্থ বানিয়ে ফেললো সে! কি উত্তর দিবে মেয়েটার বাবা-মায়ের কাছে?
_____________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here