তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(২০)

0
119

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(২০)
________________________

শাওয়ার নিয়ে কোমড় অব্ধি টাওয়াল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো শেহজাদ। রুমে মিঠিকে না দেখে আচমকা বলে উঠলো,”আজ শাড়ি পরতে পারতে সুনেত্রা!”

চমকে উঠলো শবনম! হেসে উঠলো মিঠি। বাসায় বেশিরভাগ সুনেত্রা বলেই ডাকে শেহজাদ। বলা যায় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে নামটা। মিঠিও নির্লিপ্তে সায় দেয়। আর যাইহোক মানুষটার দেওয়া নামটা তার খুবই পছন্দের!

“পরে পরবো। দেখে যান কে এসেছে!”

চেঁচিয়ে বললো মিঠি। এই অসময়ে আবার কে এলো বোধগম্য হলো না শেহজাদের। এখন তো অনন্যাও তেমন একটা আসে না। ব্যস্ততা দেখায়। কৌতুহলবশত এগিয়ে এলো শেহজাদ। পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিতেই চক্ষু চড়কগাছ! মানে শবনম এসেছে! কিন্তু কেন? ঘাবড়ে গেলো শেহজাদ। কথায় আছে না,মানুষ অধিক কষ্ট পাওয়ার পর যখন সুখের দিশা খুঁজে বেড়ায়,ঠিক তখনই মানসিক যন্ত্রণা সামনে এসে দাঁড়ায়! ঠিক এখন কাহিনী তেমন! এই শবনম আবার কেন এলো?ভেবে পেলো না শেহজাদ। আচমকা তার কেমন যেনো লেগে উঠলো! দমবন্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো! এতোদিন তো সব ভালোই চলছিলো! সব ভুলে তারা দু’জন নতুন করে সব শুরু করেছিলো! দু’জনেই বলা যায় সংসার জীবনে খুব সুখী! ইতিমধ্যে এর পর আর কোনো ঝামেলাও হয়নি তাদের মধ্যে। কিন্তু এই সুখে বোধহয় গ্রহণ লাগবে এবার! এই শবনম আবার কোন কুমতলব নিয়ে এসেছে কে জানে! আর কেনই বা এসেছে! তাও আবার এতোদিন পরে! নিশ্চয়ই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে! ভালো কিছু এর দ্বারা অসম্ভব! মাথার মধ্যে ঝট পাকাতে লাগলো চিন্তা-ভাবনাগুলো! অস্থির হয়ে উঠলো শেহজাদের মন। দেখে ফেললো শবনম। তাকিয়ে রইলো শেহজাদের দিকে। মিঠি হেসে উঠলো।

“নিউ গেস্ট এসেছে শেহজাদ। জামা-কাপড় পরে আসো। জমিয়ে গল্প করবো তিনজনে।”

সারা শরীরে তীব্রগতিতে কম্পন ছড়িয়ে পড়লো শেহজাদের। মিঠি খুব স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছে,এখন পরীক্ষাও চলছে। শবনমের জন্য না জানি কি হয়?এখন শবনমের সামনে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে,পরে কি হবে! ভেবে কুল-কিনারা পেলো না শেহজাদ। এছাড়াও খারাপ রেজাল্ট করলে মিঠির চাইতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে সে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত এই পড়াশোনা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে মিঠি। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে রুমে ফিরে যায় শেহজাদ। দ্রুত জামা-কাপড় পরায় মনোযোগ দিলেও কান এদিকে। দু’জনের কথা শোনায় মন দিলো। বুকের ভেতর থাকা আড়াই ইঞ্চির হৃদপিণ্ডটা ধড়ফড় করে সমানে লাফাচ্ছে! যেনো এখুনি লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে বুকের ভেতর থেকে। উৎসুক হলো শবনম।

“সুনেত্রা কে? যতদূর জানি তোমার নাম মিঠি। সুনেত্রা বলে কাকে ডাকলো শেহজাদ?”

কৌতুহলী হয়ে একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো শবনম। লাজুক হাসলো মিঠি।

“কাকে আর; আমাকে।”

“মানে!?”

“শেহজাদ ভালোবেসে সুনেত্রা ডাকে।”

“সুনেত্রা!”

“হ্যাঁ! শেহজাদের ভালোবেসে দেওয়া নাম সুনেত্রা! অর্থাৎ শেহজাদের সুনেত্রা!”

ভীষণ হিংসে হলো শবনমের। বাহ! খুব ভালো তো! ভালোবাসার নামও দিয়ে দিয়েছে; তাও আবার এতো তাড়াতাড়ি! সহ্য হলো না শবনমের। হিংসার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলেপুড়ে ছারখার হতে লাগলো অন্তরটা। কিছুতেই সহ্য হচ্ছে শেহজাদের সুখ! মানতে পারছে না নামটা! তাকে ছাড়া আরেকজনকে কেন দিবে ভালোবাসার নাম?শেহজাদ তো শুধু তাকেই ভালোবাসে! তারপরে অন্য কাউকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ভালোবাসাটা অসম্ভব! কিন্তু এতো দ্রুত শেহজাদের এই পরিবর্তনটা মেনে নিতে পারছে না শবনম। মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কবে দিয়েছে এই নাম?”

“বিয়ের রাতে।”

দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো শবনম। নিজেকে ধাতস্থ করে হেসে উঠলো।

“ওর কাজই এটা বুঝেছো! আমাকেও ভালোবেসে শর্বরী বলে ডাকতো! শেহজাদের শর্বরী! বিভাবরী!”

“বাহ! খুব সুন্দর নাম তো!”

“হ্যাঁ।”

শবনম ভেবেছিলো তার মতো মিঠির ও মন খারাপ হবে কিংবা জেলাশফিল করবে; কিন্তু মিঠি স্বাভাবিক,ঠোঁটে মিষ্টির হাসির ছোঁয়া! এই মেয়ে বয়সে ছোট ঠিক,কিন্তু আস্ত একটা শয়তানের হাড্ডি! চোখে-মুখে কেমন বুদ্ধিদীপ্ত একটা রেখা ফুটে উঠেছে। ঠিক তা নয়,পুরো চেহারাটাই বুদ্ধিদীপ্ত!

“এখন যার কাছে আছো সে কী নামে ডাকে?”

থতমত খেলো শবনম। হেসে উঠে বলল,”ওটা টপ সিক্রেট মিঠি! বলা যাবে না।”

“কেন?”

“সব কথা সবাইকে বলতে নেই; নজর লাগে! সুখে গ্রহণ লাগে!”

নিশ্চয়ই মিঠিকে খোঁচা মে’রে বলেছে কথাটা। মিঠি হাসলো। বিড়বিড়িয়ে বলল,”তুই নিজেই তো আস্ত একটা বদ-নজরের গোডাউন! তোর সুখে কোন প্রেত্নী আবার গ্রহণ লাগাতে যাবে?খেয়ে-দেয়ে মানুষের আর কাজ নেই তো! তুই নিজেই তো এসেছিস গ্রহণ লাগাতে! তোকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে তুই নিজেও জানিস না ডাইনী,প্রেত্নী,শাঁকচুন্নি,পিশাচিনী কোথাকার! বিশ্বাস কর,তোকে চুল ধরে পিটাতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া তো পিটাতে পারি না! ওই একটা জায়গায়ই আঁটকে গেছি! নয়তো তোর চুলগুলো ছিঁড়ে ন্যাঁড়া করে বের করে দিতাম আমার বাসা থেকে।”

“কিছু বললে?”

“নাহ! ও কিছু না।”

জামা-কাপড় পরে দম আঁটকে এগিয়ে এলো শেহজাদ। তার অস্থির লাগছে শবনমের উপস্থিতিতে। মিঠির মতিগতি তেমন একটা বুঝা যাচ্ছে না। কি যে হবে আজ! আবার কোন অশনিসংকেত ঘনিয়ে এলো। কোন কুরুক্ষেত্র বাঁধে আল্লাহই জানে! রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো শেহজাদের মনের ভেতর। ভয়ে ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত গম্ভীর মুখে মিঠির পাশে এসে বসলো। ভণিতা ছাড়াই পূর্ণদৃষ্টিতে শেহজাদের দিকে তাকালো শবনম। গম্ভীর থাকলেও চোখে-মুখে প্রশান্তি ছোঁয়া! আগের থেকে বেশ কিছুটা গায়ের রঙ সুন্দর হয়েছে,স্বাস্থ্য ও ভালো হয়েছে। চোখে-মুখে চেহারায় কেমন একটা সুখী সুখী ভাব! ভীষণ ঈর্ষান্বিত হলো শবনম। কই তার সাথে থাকাকালীন তো এমন দেখায়নি! নাকি সে লক্ষ্য করেনি! হবে হয়তো একটা। শেহজাদকে সুখী দেখতে সহ্য হচ্ছে না তার। সে-তো আজীবন শেহজাদকে একা এবং চিরদুঃখী দেখতে চেয়েছিলো। তবে মানুষটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে নতুন বউয়ের সাথে খুব সুখে রয়েছে! তদ্রূপ মিঠিকে দেখেও বুঝা যাচ্ছে মানুষটার সাথে খুব সুখে রয়েছে! নয়তো কোনো মেয়ে এতো স্বাভাবিক হয়ে সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলতে পারে না; আর না চোখে-মুখে এমন প্রশান্তির হাসি থাকতো। চিন চিন করতে লাগলো শবনমের বুকের ভেতর। শেহজাদ-মিঠিকে একসাথে দেখতেই কেন জানি বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হলো! দাম্ভিকতার সাথে মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখলো শবনম। রহিমা খালা বেশ কয়েক রকমের ফল,বিস্কুট,কেক,মিষ্টি,ছানা,সন্দেশ,লাড্ডু এবং কফি দিয়ে গেলেন।

“এতো পদের মিষ্টি কেন!? বিশেষ কিছু ছিলো?”

একটু অবাক হয়েই বললো শবনম। মৃদু হাসলো মিঠি।

“ভাত খাওয়ার পর মিষ্টি জাতীয় কোন আইটেম কিংবা ডেজার্ট না হলে আমার ভাতই হজম হয় না! আর মিষ্টি খাবারের প্রতি দূর্বলতা থেকেই বাসায় সবসময়ই এতো পদের মিষ্টি রাখি!”

“ওহ!”

“আর আমার নাম তো মিঠি! তাই নামের মতো মিষ্টিও পছন্দ করি বেশি! আর শেহজাদ তো স্যালারি পেলেই আগে মিষ্টি দোকানে চলে যাবে। তারপর বেছে বেছে আমার জন্য পছন্দের মিষ্টি কিনবে। পছন্দের মিষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম তালিকায় থাকবে ওয়েল ফুডের শুকনো রসমালাই। এত্তো দারুণ একটা রসমালাই। একটু খেয়ে দেখো শবনম। তোমার মুখে লেগে থাকবে আজীবনের জন্য।”

চামচ দিয়ে একটা শুকনো রসমালাই ভেঙ্গে মুখে দেয় শবনম। সত্যি এতো দারুণ!

“ঠিক বলেছো,সত্যিই দারুণ!”

“শেহজাদ,আপনি নাকি উনাকে শর্বরী বলে ডাকতেন?”

বলেই আগ্রহী হয়ে শেহজাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো মিঠি। বাঁকা হাসলো শবনম। কনফিউজড চোখ-মুখ করলো শেহজাদ। এখন এইসব বলে নিশ্চয়ই তাদের মধ্যকার সম্পর্কে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে মজা লুপে নিতে এসেছে শবনম। আমতা আমতা করলো শেহজাদ। সত্যিটা বললে তো মিঠির মন খারাপ হবে! আবার তার সাথে কুরুযুদ্ধ বাঁধাবে! তবে কনফিউজড হয়ে বলল,”মানে!?”

“ওর বোধহয় মনে নেই মিঠি। ও একটু ভুলোমনা।”

“ভালোবেসে দেওয়া নাম কেউ কখনো ভুলে না শবনম।”

ফের অপ্রস্তুতবোধ করলো শবনম। স্বাভাবিক হয়ে বলল,”তা ঠিক! কিন্তু ও ভুলে গেছে। আমার প্রতি উদাসীন ছিলো; তাই ছেড়ে চলে গেছি। জানোই তো,সময় না দিলে পৃথিবীর গাঢ় ভালোবাসাও ফিকে হয়ে যায়। এছাড়াও আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে।”

“খুব ভালো কাজ করেছো। তুমি চলে যাওয়াতেই তো আমি উনাকে পেলাম। তুমি আমার থেকে একটা থাঙ্কিউ ডিজার্ভ করো শবনম এন্ড আই অও টু ইউ। তুমি ছেড়ে না গেলে এমন একজন লাভিং কেয়ারিং পারসনকে জীবনেও পেতাম না। আমার খুব সৌভাগ্য করে দিলে।”

ফিকে হাসলো শবনম। তবে অন্তরটা জ্বালাপোড়া করছে! বুঝতে পারলো মিঠি। মনে মনে বলল,”তোর অন্তরটা জ্বালিয়ে দেবো আজকে দাঁড়া!”

শেহজাদকে জিজ্ঞেস করলো,”তোমাকে খুব সুখী মনে হচ্ছে!”

“আল্লাহ রেখেছেন।”

“মানুষ ঠকিয়ে?”

“স্টেইট বলো।”

“নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একটা ছোট্ট মেয়েকেও ছাড় দাওনি! বড্ড চতুর তুমি,নিজের স্বার্থ বুঝে নেওয়ার বেলায়! উপর দিয়ে তোমাকে যতোটা হাবাগোবা টাইপের দেখা যায়,বাস্তবে তুমি এতোটাও নয়। তা না হলে কিভাবে একটা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের ব্রেইনওয়াশ করে ফাঁদে ফেলো! আমি তো এই ভেবেই অবাক হই!”

“নিজেকে অন্যের মতো ভেবে অন্যকে বিচার করো না। তোমার লো মেন্টালিটিতে প্রবলেম আছে,দ্রুত একজন সাইকোলজিস্টের দারস্থ হও। ইমার্জেন্সি ট্রিটমেন্ট নাও।”

“কতদিন থাকবে তোমার এই সুখ?”

“আল্লাহ যতদিন রাখে।”

“সত্যিটা প্রকাশ করছো না কেনো?”

“ইচ্ছে হয়নি।”

“ভেবেছো সবাই আমার মতো বোকা!”

“মোটেও না।”

“তুমি যে বাবা হতে পারবে না তা কেনো লুকিয়েছো?”

“আমার মন চেয়েছে।”

“মিঠি,তুমি কি জানতে না ও বাবা হতে পারবে না?”

“জানতাম।”

বিস্মিত হলো শবনম। চোখগুলো কপালে তুললো।

“তাহলে জেনেশুনে বিয়ে করলে কেনো!?”

শেহজাদ বলল,”তুমি কি এইসব বলার জন্য এসেছো?”

“হ্যাঁ।”

“ভালো করেছো।”

বিড়বিড়িয়ে বলল,”কখন না মিঠি তোমার চুল ধরে পিটায়; এমনিতেই সুযোগ খুঁজছে!”

“কিছু বললে?”

“না।”

“তা কীভাবে ওর সাথে তোমার সাক্ষাৎ হলো?”

মিঠিকে জিজ্ঞেস করলো শবনম।

“হয়েছে কোন একভাবে।”

“ঠিক বুঝতে পারলাম না,কী বুঝে ওকে বিয়ে করতে আগ্রহী হলে?তোমার স্বামীর হওয়ার কোনো এবিলিটি কিংবা মেরিট তো ওর মধ্যে নেই।”

“কেনো উনি কী মানুষ না?”

“ঠিক বুঝতে পারলাম না,কী বুঝে ওকে বিয়ে করতে আগ্রহী হলে?তোমার স্বামীর হওয়ার কোনো এবিলিটি কিংবা মেরিট তো ওর মধ্যে নেই।”

“কেন উনি কী মানুষ না?”

“ঠিক তা নয়!”

“সো?”

“বলতে চাইছি,তুমি খুব সুন্দরী! অল্পবয়সী এবং পড়াশোনাও করছো! তুমি ওর চাইতে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো। ও তোমার যোগ্য নয়।”

“হ্যাঁ,পেতাম তো!”

“তাহলে?”

“যোগ্য-অযোগ্য দিয়ে কী হবে?”

“মানে!?”

“ভাগ্যিস! মা বাবা একটু ভালো শিক্ষা দিয়েছিলো তাই এখনও অব্ধি কোনো পুরুষের ব্যাংক ব্যালেন্স,তার বাবার সম্পত্তি,তার ইনকাম অথবা কোনো বাহারী চাকচিক্য দেখে বন্ধুত্ব করিনি,ভালোবাসিনি কিংবা বিয়ে করিনি।”

কথাটা খুব বাজেভাবে গায়ে লাগলো শবনমের। এইসব নিশ্চয়ই তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। ছোট্ট মেয়ে হলে কি হবে কথায় ভালোই পাকনা। কথার পিঠে কথার তীক্ষ্ম বান ছুঁড়ে দিচ্ছে! যেনো ট্রেনিংপ্রাপ্ত।

“তেমনি শেহজাদের চাকচিক্য রুপ,গুণ,টাকা-পয়সা,ধনসম্পত্তি দেখেও বিয়ে করিনি। উনাকে ভালো লেগেছে তাই বিয়েটা করেছি। আর আমি শুধু সুখে থাকতে চেয়েছি! মানুষটা কেমন বেটার না ননবেটার তা জানার আগ্রহ হয়নি। জানো,আমি সবসময়ই একজন লয়্যাল এন্ড লাভিং কেয়ারিং পারসন চেয়েছি নিজের জন্য। যে আমাকে সবসময়ই লাভ এন্ড কেয়ার করে সবসময়ই আগলে রাখবে বাবা-মায়ের মতো। আমার সুখে-দুঃখে সবসময়ই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট করবে,ভরসা দিবে,বিশ্বাস জুগিয়ে আশ্বাস দেবে। ভুল করলে বাবা-মায়ের মতো আদর-যত্ন কিংবা প্রয়োজনে শাসন করে বুঝিয়ে দিবে। সবসময়ই আমার বেস্ট উইনার্স হিসেবে আমার পাশে থাকবে। কখনো কোনো অজুহাত দেখিয়ে চলে যাবে না। আর শেহজাদ ঠিক তেমনই একজন। যেমনটা আমি চেয়েছি! এছাড়াও আমি মনে করি,একজন নারী-পুরুষের প্রেম কিংবা বিয়ে যেটাই হোক না কেনো এটা করা উচিত একজন ম্যাচিউর পুরুষের সাথে কিংবা পুরুষের ক্ষেত্রে নারীর সাথে। তার কারণ যে ভবিষ্যত নিয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। নীরবতা বুঝবে,পারিবারিক সমস্যা না বললেই বুঝে নিতে পারবে,ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস বুঝবে। যার সাথে সকল অসুবিধার কথা মন খুলে বলা যাবে। শুধু,“আমি তোমাকে ভালোবাসি” আর “তুমি আমাকে ভালোবাসো” তিনবেলা নিয়ম করে শোনবার জন্য আর বলবার জন্য প্রেম কিংবা বিয়ে করা মানে সময়ের অপচয়। পৃথিবীতে ভালোবাসবার জন্য বহু মানুষ থাকে; মন দিয়ে মনের কথা বলার আর শুনবার মানুষ একজনও থাকে না! আর শেহজাদ তেমনই যেমনটা এতক্ষণ আমি এক্সাপলের মাধ্যমে তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। জানো আমার মতে,জীবনে সত্যিকারের মানুষ অর্থাৎ নিতান্তই ভালো মনের মানুষ পাওয়া অনেক দুষ্কর আর কঠিন বর্তমানে। মানুষ এখন সত্যিকারের মানুষের চাইতে টাকা-পয়সা,ক্যারিয়ার,স্বার্থকতা,মাসিক স্যালারি কত,ব্যাৎসিক ইনকাম কত,বেটার অপশন,জীবনের ভালো চলার কিংবা থাকার নিরাপত্তা বেশি খুঁজে। পৃথিবীতে অর্থ,সৌন্দর্য,ফিটনেস,সেক্স এইসব সীমিত সময়ের জন্য। এগুলো জীবনে সবকিছুই না কিংবা সকল সুখের না। বিশ্বাস,ভালোবাসা,যত্ন,মায়া,মানুষ হিসেবে কতোটা সৎ,ভালো,মানবিক মানুষের ওইটা বেশি খোঁজা দরকার। যার কাছে মানসিক শান্তি মেলে তার কাছে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। জীবনে অপজিট ব্যক্তির প্রতি সম্মান,শ্রদ্ধা,নিবেদন,ভালবাসা,মায়া,সৌজন্যবোধ,যত্নশীলতা এমন মানুষ বেশি দরকার। টাকা আর রূপ বর্তমানে সুখের চাইতে অসুখ বেশি করে। জীবনে এমনি অনেক যান্ত্রিকময় আর ডিজিটাইজেশনের ছোঁয়ায় ন্যাচারাল ভালোবাসা হারিয়ে গেছে। আর এ জন্যই আজকে এতো এতো প্রতারণা,বিশ্বাসঘাতকতা,ব্রেকাপ,অশ্রদ্ধা,অমূল্যায়ন আর দিনশেষে অশান্তি,হাহাকার,মানসিক অসন্তুষ্টি।”

একনাগাড়ে সব বলে শ্বাস ফেললো মিঠি। ফের বলতে লাগলো,”আরো কিছু কথা না বললেই নয়!”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালো শবনম।

“আমার মতে কাউকে তার যোগ্যতার বেশি মূল্যায়ন করতে নেই। বরং যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হয়। যোগ্যতা কম সম্পন্ন মানুষকে বেশি দিলে সে এটার কদর করতে জানবে না। উল্টো এটা নিয়ে মানুষকে অপমান করবে। যার যতটুকু দৃষ্টি,তার জন্য ততটুকুই শ্রেয়। যার দাম যতটুকু,তার জন্য ততটুকু ব্যয়। না হলে উল্টো নিজের ব্যক্তিত্ব ক্ষুন্ন হবে। নিজেকে ছোটলোক বলে প্রমাণিত হবে। আর সেটা যেকোনো ক্ষেত্রেই। কিছু মানুষ বড়লোক হয়,কিন্তু তবুও তাদের ছোটলোকির অভ্যাস পরিবর্তন হয় না। ছোটলোক বিষয়টি আসলে অর্থ দিয়ে বিবেচনা করা হয় না। বরং তা মানসিকতার মাধ্যমে প্রমাণ হয়।”

দাঁতে দাঁত চাপলো শবনম। শেষোক্ত কথাগুলো নিশ্চয়ই তাকেই খোঁচা দিয়ে অন্যভাবে বলেছে। বুঝাতে চেয়েছে তার যোগ্যতার চেয়েও বেশি শেহজাদ তাকে মূল্যায়ন করেছে! নিজেকে ধাতস্থ করলো শবনম। পূর্বের কথাগুলোর প্রতিত্তোরে বলল,”খুব সুন্দর বলেছো! অনেক বুঝো তুমি। বাট যতো যা-ই বলো ওর তো বাবার হওয়ার ক্ষমতা নেই। একজন নারীকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে না পারলে এটা কোনো জীবন হলো?”

“তুমি কি তবে ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা বলতে এসেছো?”

“হ্যাঁ।”

“ওর পিতার হওয়ার ক্ষমতা নেই; বাট তোমার আছে তো?”

“থাকবে না কেনো?”

“তো বেবি ক্যারি করছো না যে?”

“সময় হলে করবো।”

“আর কিসের সময় চাও তুমি? তুমি তো এইজন্যই ওকে ছেড়ে গেলে।”

শবনম বুঝতে পারলো মিঠির সাথে কোনো চালাকি করে লাভ নেই,সব জেনেশুনেই প্রস্তুত মেয়েটা।

“শোনো,শেহজাদকে দোষ না দিয়ে একবার নিজেকে পরীক্ষা করে দেখো। সবসময়ই যে পুরুষের সমস্যা থাকবে এমনটা নাও হতে পারে,আবার সবসময়ই যে নারীর সমস্যা থাকবে এমনটা নাও হতে পারে। তোমার উচিত কাউকে অপবাদ দেওয়ার পূর্বে নিজেকে পরীক্ষা করে নেওয়া।”

“কী বলতে চাও তুমি?”

“এতোক্ষণ যা বলেছি তাই। এমন ও তো হতে পারে তোমার মধ্যে প্রবলেম উনার না।”

“আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি ফিট আছি। প্রবলেমটা ওর। আর এটা ও নিজ মুখেই স্বীকার করেছে।”

“তাহলে তো ভালোই! দ্রুত বেবি ক্যারি করো,খুশির খবর শুনতে চাই! তোমার স্বামীর থেকে মিষ্টি খেতে চাই! কন্সিভ করলে আমার জন্য গোটা দুই মণ মিষ্টি পাঠিয়ে দিয়ো কেমন! তুমি তো জানো আমার নাম মিঠি! আর আমি মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি পছন্দ করি!”
____________

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here