#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৪)
________________________
হঠাৎ ডোরে নক পড়লো। ডোর খুলতেই দেখলো মিঠির বড় মামী আর মেজো মামী দাঁড়িয়ে রয়েছে। সরে দাঁড়ালো শেহজাদ। উনারা শেহজাদের দিকে একপলক তাকাতেই মাথা নুয়ে ফেললো। উনারা দেখলেন শেহজাদের অবস্থা ভীষণ খারাপ! কাল রাতেও শেহজাদকে সুস্থ-সবল দেখেছিলেন উনারা। বুঝতে বাকি নেই এটা মিঠির কাজ। ভেতরে প্রবেশ করতে করতেই জিজ্ঞেস করলেন,”মিঠি কই?”
“ওই রুমে।”
উনারা মিঠির কাছে আসতেই দেখলেন ফণা তোলা সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে মিঠি। দেখলেন ঘরের অবস্থা খারাপ। ভেঙ্গেচুরে কি হাল করে রেখেছে! শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,”এইসব কী মিঠি?”
“দেখতে পাচ্ছো না?”
“বেয়াদবি শুরু করেছো তুমি?”
ফুঁসতে লাগলো মিঠি।
“সাইকো মেয়ে একটা। শান্ত হও। মেয়ে মানুষের এতো রাগ,তেজ,জেদ ভালো না। এখনও সময় আছে,ভালো হয়ে যাও।”
“শান্ত হবো মানে কি! একটা বুইড়া,কালো,ডিভোর্সি,ক্ষ্যাতমার্কা,ভুড়িওয়ালা লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছো তোমরা।”
“যা হবার হয়েছে। মেনে নাও। এটা ভাগ্যে ছিলো। আর এতে আমাদের কোনো হাত নেই। তোমার মা-মামাদের কারসাজি এইসব। তোমার মা-মামাদের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞেস করো। আর ছেলেটার শরীরের এই হাল করেছো কেনো?”
“ঠিকমতো করেছি।”
“একদম চুপ! অসভ্য মেয়ে একটা। ছেলেটার ভারী শরীর; আদেও এইসব ক্ষত শুকাবে বলে মনে হয় তোমার?”
“তাতে আমার কি!”
“মেয়ে,একদম চুপ করো। ডায়বেটিস থাকলে তো আরো সমস্যা! পঁচে ক্যান্সারের দিকে চলে যেতে পারে! ছেলেটাকে এখন যত্ন করার মানুষও নেই। আগে তো শবনম ছিলো। সে-ই যত্নআত্তি করতো।”
“বেশ করেছি! লোকটা কথায় কথায় প্রাক্তন স্ত্রীকে টেনে নিয়ে আসে। এতো দরদ হলে আমাকে বিয়ে করলো কেনো? যখন ভুলতেই পারবে না কেন অন্যকে বিয়ে করে তার জীবন,অধিকার,চাওয়া-পাওয়া নষ্ট করে তার জীবনটা বিষিয়ে দিচ্ছে! একটা মেয়ের কাছে কত যে কষ্টকর ব্যাপার এই জিনিটা সেটা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এখন নিশ্চয়ই তোমরা বলবে মেনে নিতে। আসলে কি মেনে নেওয়া এতই সোজা? পরকীয়া করে ভেগে গেছে,আবার আমার সামনে পরনারীর সুনাম করতে আসে। মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত লোকটার।”
“একদম চুপ করো। বড্ড বাড় বেড়োছো!”
হেঁসে উঠে মেজো মামী বললেন,”বড় ভাবী একটা কথা শুনবে?”
“বল।”
“ছ্যাঁত করে রেগে যাওয়া মেয়েদের কপালে খোঁচা মে’রে রাগ তুলে দেওয়া জামাই জুটে! আর বলে আমি কী করেছি।”
“ঠিক বলেছিস।”
“এখন শেহজাদ-মিঠিও তেমন।”
“কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে,তাদের ডিভোর্স হয়েছে সপ্তাহ পেরোয়নি। বললেই তো আর আস্ত একটা মানুষকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না।”
“হ্যাঁ।”
“মিঠি শোনো,তোমার মা মা’রা গেছে যখন তোমার বয়স সাত বছর তখন। আজ অব্ধি তোমার বাবা পেরেছে তোমার মাকে ভুলতে?তোমার বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করো তো! এজন্যই মূলত,তোমার সৎ মায়ের সাথে তোমার বাবার সম্পর্কটা ভালো না। তুমি যেমনটা চাও শেহজাদ তার প্রাক্তন স্ত্রীর কথা তোমার সামনে না বলুক,তেমনি মনিরাও এমনটা চায়। তুমি দেখো না মনিরা তোমাকেও সহ্য করতে পারে না। আর এখানে শেহজাদের বিষয়টা হচ্ছে অন্যরকম। তার জীবন থেকে আস্ত একটা জলজ্যান্ত মানুষ চলে গেছে এখনও সপ্তাহ’র গণ্ডি পেরোয়নি। তাকে ভোলা কি এতো সহজ? আর তারা একসাথে পাঁচ বছর একই বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো। তোমার সাথে তার সম্পর্কের এখনও চব্বিশ ঘন্টা হয়নি। তাতেই তুমি এমন করছো?এটা একদম ঠিক হচ্ছে না মিঠি। সাইকোর মতো কাজ করছো তুমি। তোমাকে সাইকোই বলা যায় এখন। এতে সন্দেহ নেই। আর শুনো,পুরুষ মানুষের ভালোবাসা মারাত্মক সুন্দর! যদি তুমি সেটা পাওয়ার যোগ্য হও! কাউকে নিয়ে সমালোচনা করাটা যতোটা সহজ কাজ তার জায়গায় দাঁড়িয়ে তার পরিস্থিতি বুঝা ততোটাই কঠিন। তুমি তোমারটা ভাবছো। তারটা একবারও ভাবছো না। তুমি তার সাথে সাইকোর মতো আচরণ করলে তার তো প্রাক্তন স্ত্রীর কথা,তার আচার-আচরণ আর তার স্মৃতির কথা মনে পড়বেই,মিস করবেই। তাহলে সে কিভাবে ভুলবে? তুমি ভালো বিহেভিয়ার করো,দেখবে সে সব ভুলে তোমাকে নিয়ে ভালো আছে। আর একটা কথাই বলবো শুধু,তুমি একবার মনিরার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করো,আর না হয় নিজের জায়গায় মনিরাকে কল্পনা করো তাহলে সবকিছুর উত্তর পেয়ে যাবে।”
“ওই ক্ষ্যাত,বুইড়া লোকটার বউ কয় বছর ছিলো?”
“কেনো পাঁচ বছর!”
আচমকা শেহজাদের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় জোরে একটা পেপারওয়েট ছুঁড়ে মা’র’তে’ই ভেঙে গেলো।
“এইসব কী হচ্ছে মিঠি?”
“পাঁচ বছর!”
“তো কী হয়েছে?এতক্ষণ কী বুঝিয়েছি তোমাকে?”
“নিশ্চয়ই ওই বুইড়া,ক্ষ্যাতমার্কা লোকটার অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চাও আছে তাই না। লোকটার মতোই কালো কুচকুচে। এখন ওদের সেবাযত্ন করতে হবে আমায়।”
পাশের রুম থেকে সব শুনছে শেহজাদ। মিঠির প্রতিটি কথা তীক্ষ্ম ধারালো ছু’রি মতো আঘাতে জর্জরিত করে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে তার হৃদপিণ্ডটা। মানুষ কাঁটার আঘাতে যতটা না ফোঁড়ে,তারচেয়ে বেশি ফোঁড়ে মানুষের কথার আঘাতে। লোহার থেকেও কথার ওজন বেশি। লোহা খেয়েও হজম করা যায় কিন্তু কথায় আঘাত এলার্জির মতো রক্তে মিশে যায়। মিঠির কথাগুলো শুনছে ঠিক,তার বুকে এসেও লাগছে ঠিক,কিন্তু নিজেকে স্থির করে বসে রইলো শেহজাদ। তার কান দিয়ে উত্তপ্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবুও নিজেকে স্থির করে দু-চোখ বুজে রইলো সে। সত্যিই আর টলারেট করা যাচ্ছে না মিঠিকে। এই মেয়ে চব্বিশ ঘন্টা পার না হতেই তার জীবনটা ব্যবহৃত তেজপাতার মতো করে মূল্যহীন বানিয়ে দিলো। পৃথিবীতে নিজেকে এখন সবচেয়ে অসহায় বলে মনে হচ্ছে,সে নিজের রাগ,অভিমান,কষ্ট কাউকে দেখাতে পারে না মিঠির মতো করে। একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারে না শুধু চোখের জল লুকিয়ে স্থির থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো শেহজাদ। সে খুবই নম্র-ভদ্র,সহজ-সরল,শালীন,বিনয়ী আর শান্ত মেজাজের মানুষ। তবে রাগ উঠলে আর কেউ থামাতে পারে না। মিঠিকে ছাড় দিচ্ছে নেহাৎই মেয়েটা বয়সে তার খুবই ছোটো। মিনিমাম বিশ-একুশ বছরের ছোট তো হবেই। হুট করে মেজো মামী বলে দিলেন,”বাচ্চা-কাচ্চা নেই।”
“পাঁচ বছরের সংসার বাচ্চা নেই মানে? নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছো তোমরা। এই তিন-চার বাচ্চার বাবার সাথে কেনো বিয়ে দিলো আমায়?”
“আরেহ বোকা মেয়ে,বাচ্চা হয় না দেখেই তো শবনম ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।”
“মানে!?”
বড় মামী মেজো মামীকে চোখ পাকালেন। নিষেধ করলেন না বলতে। তবুও পরোয়া না করে বলে দিলেন। ফের বললেন,”মানে আরকি শেহজাদ সন্তান জন্ম দিতে পারবে না শবনম তো এমনটাই বলে গেলো।”
আকস্মিক মিঠির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। চোয়াল শক্ত করে মাথা নুয়ে রাখলো শেহজাদ। আচমকা ছুটে গেলো মিঠি। শেহজাদের টি-শার্টের কলার চেপে ধরলো।
“প্রতারক! ঠকবাজ! সব জায়গা দিয়ে আমাকে ঠকিয়েছে! কেনো ঠকালেন? তখন কেনো বলেননি আপনার এতো সমস্যা? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ভোগ করার জন্য জ্বীভটা লকলকায়? নারীর দেহ লোভী পুরুষ!”
মিঠির মামীরা ছাড়িয়ে নিলো মিঠিকে। শেহজাদের সু’ই’সা’ই’ড করতে ইচ্ছে করছে। আর ভালো লাগছে না মিঠিকে আর না এই জীবন। একটা নারী চাইলে একটা সংসারকে স্বর্গ বানাতে পারে,আবার নরকেও পরিণত করতে পারে। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর মতো সুন্দর আর হালাল সম্পর্ক পৃথিবীতে আর একটিও নেই। এ যেন পৃথিবীতেই জান্নাতের অনুভব। তেমনি সেই স্ত্রী যদি খারাপ হয় তাহলে পৃথিবীটা জাহান্নামের অনুভব। তবে এই মুহূর্তে এই নরকে শেহজাদের আর সহ্য হচ্ছে না। অপমান-অপদস্ত,অসম্মান-অবহেলা সব মেনে নেওয়া যায়,কিন্তু নারীর হাতে একজন পুরুষ যখন অত্যাচারিত হয় তখন নিজেকে কাপুরুষ,মেরুদন্ডহীন এবং আত্মমর্যাদাহীন বলে মনে হয়,ইভেন হচ্ছেও এবং জীবনটাকে অর্থহীন বলেও মনে হচ্ছে। তবুও শেহজাদ ধৈর্য্য ধরে রয়েছে। তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে মেয়েটা। আর কতো ধৈর্য্য ধরা যায়। এককালে পুরুষেরা নির্যাতন করতো নারীদেরকে এখন নারীরা নির্যাতন করছে পুরুষদেরকে। বাহ! এমন যুগ ও এসে গেলো! এমন দিনও দেখতে হলো। মিঠির সব এখন সহ্য করছে,তার মানে এই নয় যে আজীবন সহ্য করবে! সে রক্ত-মাংসে গড়া এক মানুষ,পাথর নয় যে সব আঘাত সয়ে নেওয়ার মন-মানসিকতা রয়েছে।
“ডিভোর্সের ব্যবস্থা করো এখুনি। আমি থাকবো না এই ঠকবাজ প্রতারক লোকটার সাথে। এই লোকটা আমায় ঠকিয়েছে! সব জায়গা দিয়ে ঠকিয়েছে! সব!”
মিঠিকে টেনে নিয়ে এলো ওর মামীরা। বেডের উপর বসালেন।
“শান্ত হও মিঠি।”
মামীকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো মিঠি। তার ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে। লোকটার মধ্যে একটা গুণও নেই। কি দেখে লোকটার কাছে থাকবে সে? প্রতিবাদ করার সাহসটুকু যেই লোকের মধ্যে নেই,তার সাথে সারাজীবন কিভাবে পার করবে সে? পাগল পাগল লাগছে মিঠির। লোকটা একদিকে কুচকুচে কালো,আবার ডিভোর্সি,বয়স্ক,ক্ষ্যাতমার্কা আরো পেটে একটা ভুঁড়িও রয়েছে। এখন নাকি সন্তানও জন্ম দিতে পারবে না। সব মানলেও এই সন্তান জন্মদানের ব্যপারটা কি মানা যায়?একদম না। তাই তো শবনম পরকীয়া করে চলে গেছে। বেশ করেছে! সেও চলে যাবে একদম থাকবে না।
“মিঠি শান্ত হও। গায়ে জ্বর এসেছে।”
মেজো মামী বললেন,”এজন্যই এমন পাগলামি করছে।”
“মেজো,যা তো তোয়ালেটা ভিজিয়ে আন। হাত-মুখ মুছিয়ে দিই।”
মেজো মামী তোয়ালে ভিজিয়ে এনে হাত-মুখ মুছে দিলেন।
“এই দেখ,সকাল সকাল ভূনা খিচুরি আর গরুর মাংস কষা করে এনেছি। সাথে মেজো আর সেজো অনেক আইটেমের ভর্তা করেছে। তুই তো ঝাল খেতে পারিস না,তাই ঝাল ছাড়া বানিয়েছে,তোর পছন্দের আলু বোখারার আচারও এনেছি দেখ। আর এইসব কিছু করতেই অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাসায় গ্যাসও ছিলো না আজ। এখন খাবি হা কর। পরে কান্নাকাটি করতে পারবি। অনেক সময় আছে।”
“খিদে নেই।”
“হাঁ কর।”
বড় মামী নিজেই খাইয়ে দিলো। হেঁচকির জন্য মিঠি খেতে পারছিলো না। বার-বার নাক-মুখে উঠে যাচ্ছিলো। পানি পান করিয়ে দিলেন।
“মিঠি!”
“হুম!”
“তোর গায়ের জামাটা তো খুব সুন্দর! কে দিয়েছে?”
“আর কে দিবে!”
“শেহজাদ?”
“হুম।”
“এতো সকালে তোর জন্য শপিং করেছে?”
“হুম।”
“কিন্তু তুই তো থ্রি পিস পড়িস না। আজ যে পড়লি?”
কিছু বললো না মিঠি। মেজো মামী বললেন,”দেখেছো বড় ভাবী,এক রাতেই বউয়ের জন্য কি মায়া হয়ে গেছে। শবনমের জামা-কাপড় না দিয়ে সকাল সকাল নতুন জামা-কাপড় শপিং করে নিয়ে এসেছে।”
“দেখলাম তো।”
“আর মিঠি তো থ্রি পিস দেখতেই পারে না। আজ দেখো পড়েছে।”
বড় মামী হেঁসে উঠলেন।
“আমার কী মনে হচ্ছে জানো বড় ভাবী?”
“কী?”
“দু’জন দু’জনের মায়ায় পড়ে গেছে। বিশেষ করে মিঠি! দেখো না শবনমের কথা শুনলেই ছ্যাঁত করে উঠছে! বলাই যাচ্ছে না।”
“আমিও এমনটাই ভাবছি!”
“আর স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন পবিত্র। এখানে আল্লাহর রহমত থাকে। তাই হয়তো অপরিচিত মানুষটাকেও আপন লাগে। তাই দু’জন দু’জনের মায়ায় পড়ে গেছে।”
“হ্যাঁ,ঠিক বলেছিস। আস্তে আস্তে আরো মায়ায় পড়ে যাবে।”
বড় মামী মেজ মামীকে বললেন,”জানিস মেজ,পুরুষ মানুষ বড় বউয়ের চাইতে ছোটো বউকে বেশি আদর করে,যত্ন করে,ভালোবাসে আর মায়া করে। সে মনে করে,বড় বউটার মতো ছোটো বউটাও তাকে ছেড়ে চলে যাবে সেই ভয়ে। আর কালো ছেলেরা কিন্তু সুন্দরী বউকে খুব আদর করে। মনে করে নিজে তো অসুন্দর,বউটা সুন্দর,যদি বউ সুন্দর ছেলে পেয়ে চলে যায় তাই আরো বেশি ভালোবাসে,আতঙ্কে থাকে। তদ্রূপ বয়স্ক ছেলেরা বউকে আরো বেশি ভালোবাসে,মনে করে তার চাইতেও আরো কম বয়সের ছেলেকে পেলে তাকে ছেড়ে চলে যাবে,তাই আদর করে,ধৈর্য্য ধরে,বউ যতোই অন্যায় করুক মেনে নেয়,মাফ করে দেয়,মানিয়ে নেয়। আর সে মনে করে,তার তো বয়স হয়েছে,কিন্তু তার বউটা ছোট,তার মতো ওতো বুঝে না এজন্যই মায়া করে,যত্ন করে,সব অপরাধ মেনে নেয়। অনেক বিষয়ে ছাড় দেয়,অপরাধ করলে নীরবে ক্ষমা করে দেয়। মিঠির ভাগ্য খুব ভালো। শেহজাদ অনেক লাভিং কেয়ারিং। আর শবনমকেও অনেক আদর করতো। নামী-দামী জামা-কাপড় কিনে দিতো। কতো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতো। কোনো ইচ্ছায়ই অপূর্ণ রাখেনি। তবুও কপাল মন্দ হলে যা হয় আরকি! তবে শবনম ঠকেছে! জীবনে বড়লোক স্বামীর চাইতে লাভিং কেয়ারিং একজন স্বামী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যপার।”
“ঠিক বলেছো।”
সবটা সময় মৌন রইলো মিঠি। তবে শবনমের বিষয়ে কথাগুলো শুনতে কষ্ট হচ্ছিলো! আজব সে-তো লোকটাকে সহ্যই করতে পারে না! তাহলে শবনমের কথা বললে তার এতো কষ্ট হয় কেনো? শবনমকে মেনে নিতে পারে না কেনো?কেনো শবনমকে জেলাশফিল করছে? তিন কবুল বলাতেই কি লোকটার জন্য টান অনুভব করছে? কিন্তু কেনো?একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বড় মামী। হঠাৎ মলিন মুখে বলে উঠলেন,”একটা সত্যি কথা শুনবি মেজো।”
“কী ভাবী?”
“জানিস,সত্যি বলতে যারা পায়,তারা সব দিয়ে দিকে পায়,আর যারা পায় না তারা কোনো দিকেই পায় না!”
“এটা ঠিক বলেছো।”
“জানিস আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় মেয়ে মানুষের একটু লোভ-লালসা থাকা ভালো। তার কারণ খুব বেশি চাহিদা সম্পন্ন মেয়েরা জীবনে সব পায়। যা না চায় তাও পায়। তার থেকেও বেশি পায়। আর যে-সব মেয়েরা অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে,সে অল্পটুকু দিতে পৃথিবীর কি যে কষ্ট! যারা অল্পতেই খুশি হয়ে যায়,তাদের কপালে সেই অল্পটুকুও জুটে না! অল্প চাহিদার মানুষগুলো ওই অল্পটুকুও পায় না।”
“কথাটা একশো পার্সেন্ট সত্যি! যে চুপচাপ সব মেনে নেয় তাকে সবাই অবহেলা করে। এই ভেবে যে সে অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। সব ক্ষেত্রেই এটা হয় আর শুধু মেয়ে বলতে না,যে ছেলেরা আত্মত্যাগী হয় তাদের ক্ষেত্রেও সেইম অবস্থা!”
“আসলেই।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন বড় মামী। ফের মেজো মামী বললেন,”তবে প্রিয় মানুষটার ক্ষেত্রে একটু বলি। প্রিয় মানুষটা যদি লয়াল হয়,আর ভালোবাসার কমতি না থাকে,যদি লাভিং কেয়ারিং হয়; তার সাথে থেকে সম্মানের সাথে থাকতে পারে তাহলে অন্য দিকগুলো ছাড় দেয়া যায়। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ যদি বিশ্বাসঘাতক হয় তবে কোটিপতি পার্টনার হলে ও শান্তি নেই।”
“ঠিক বলেছিস। আমাদের ভাগ্যটাও তো এমন মেজো।”
মলিন মুখে বললেন,”হুম।”
ফের আনমনেই বড় মামী মিঠিকে বললেন,”মিঠি!”
“হুম।”
“কিছু কথা বলবো শুনবি?”
মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো মিঠি।
“বেশ! তাহলে আমার কথাগুলো কিন্তু অনেক লম্বা হবে,তাই ধৈর্য্য ধরে শুনো। শুনো,জীবন সঙ্গী কখনো নিখুঁত কিংবা পারফেক্ট খুঁজতে যেও না। ভালোবাসাটা নিখুঁত খুঁজো! দেখবে জীবনে কোনোকিছুর শূন্যতা থাকলেও,ভালোবাসার হাহাকার থাকবে না। যে ভালোবাসে সে ছেড়ে যাওয়ার জন্য আসে না,যার ভালোবাসা নিখুঁত তার ভালোবাসা কখনো সামান্য আঁচে নড়বড়ে হয় না। ভালোবাসাকে জিইয়ে রাখতে জানতে হয়,যে ভালোবাসা মৃত্যুর পরেও কখনো ক্ষয় হয় না। নিখুঁত ভালোবাসার কখনো বিচ্ছেদ হয় না। বিচ্ছেদ হয় মিথ্যে মিথ্যে গড়া সম্পর্কগুলোর!”
______________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।