#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৮)
________________________
২৫.
শপিং থেকে বের হয়ে শেহজাদ কাঁচা বাজারের দিকে গেলো। মিঠি আছে এখন। অবশ্যই বাসায় কাঁচাবাজার লাগবে। আবার অফিসেও যেতে হবে। তখন তো বাজার করতে পারবে না তাই একসাথে এক সপ্তাহের বাজার করে নিলো। শপিং ছেড়ে শবনম ফলো করতে লাগলো শেহজাদকে। শেহজাদ অবশ্য খেয়াল করলো না। যা ইচ্ছে তাই করুক তাতে তার কি! ভালো থাকার জন্য ছেড়ে চলে গেছে এখন আবার তার কাছে কি! কথায় আছে না,প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না,ধূলোবালি দিয়ে হলেও পূরণ করে। কিছু না কিছু,কেউ না কেউ শূন্যস্থান পূর্ণ করে দেয় কিংবা দখল করে নেয়। তবে একজনের শূন্যস্থান হয়তো অন্যজন পূরণ করতে পারে না। তবুও কোন একভাবে পূরণ হয়ে যায়। আল্লাহও হয়তো তার শূন্য থাকাটা পছন্দ করেনি। কোনো এক উছিলা করে মিঠিকে পাঠিয়েছে। নিজের জন্য কষ্ট না হলেও মিঠির জন্য কষ্ট হয় শেহজাদের। সবদিক দিয়ে মেয়েটা খুব বাজেভাবে ঠকে গেলো। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শেহজাদের। তবে মিঠি যদি তার কাছে আজীবনের জন্য থেকে যায় তাহলে সে তার ভালোবাসা দিয়ে সেটা পূর্ণ করার চেষ্টা করবে। বাজারের ব্যাগগুলো একটা রিকশায় তুলে দিলো। বাসায় পৌঁছালে কেয়ারটেকার আঙ্কেল নামিয়ে রেখে দিবেন। তাই চিন্তা করলো না। আগেও এমনটা করতো। দ্রুত ফার্মেসীতে ঢুকলো। মিঠির জন্য মেডিসিন নিয়ে সবে বেরুতে নিবে দেখলো শবনম দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মানে সে কী কী মেডিসিন নিয়েছে সব দেখেছে। বেরুতে নেয় শেহজাদ।
“কার জন্য মেডিসিন নিয়েছো?”
“নজরদারি করা বন্ধ করোনি?”
“বলছি কার জন্য বার্থ কন্ট্রোল পিল কিনেছো?এই পাঁচ বছরে তুমি তো কখনো আমার জন্য কিনোনি?”
শবনমকে এড়িয়ে হাঁটা ধরলো। শবনম সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
“বলো কার জন্য কিনেছো এটা?”
“সামনে থেকে সরো বলছি।”
“আগে বলো আমার থেকে কী কী সত্য লুকিয়েছো?”
“মাথা গরম করো না শবনম। তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো। ধৈর্য্যের লিমিটেশন ক্রস করো না। তোমার বেহায়াপনার কারণে আমি কিন্তু রেগে আছি।”
“মাত্র এক সপ্তাহ না যেতেই আমাকে সহ্য করতে পারছো না?”
“জাস্ট ইগনোর করছি তোমায়। বিরক্ত করো না।”
শবনমের কেমন লাগছে শেহজাদ তাকে এড়িয়ে চলায়। একটা রিকশা ডেকে শেহজাদ উঠে পড়লো। মিঠিকে দেখলে এখন ঝামেলা শুরু করবে। এরপর মিঠি তো তার জীবন আরো লণ্ডভণ্ড করে দিবে,ভুল বুঝবে,মারপিট করতে আসবে। এমনিতেই শবনমের নামটাও শুনতে পারে না। শেহজাদকে ফলো করলো শবনম। শেহজাদ রিকশা থেকে নেমে অন্যদিকে চলে গেলো। শবনম আর খুঁজে পেলো না। ফোন করলো শেহজাদের বন্ধু প্লাস কলিগ আকাশকে। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো শেহজাদের কোনো এফেয়ার কিংবা বিয়ে করেছে কি-না? কিন্তু আকাশ কোনো ইনফরমেশন দিতে পারলো না। হতাশ হলো শবনম।
২৬.
হসপিটালে ফিরলো শেহজাদ। দেখলো মিঠি তাকিয়ে রয়েছে। স্যালাইন শেষ পর্যায়ে প্রায়। মুখ সরিয়ে নিলো মিঠি। শেহজাদ বুঝতে পারলো না মিঠি কি রাগ করেছে!
“কোনো কারণে তুমি কী রেগে আছো মিঠি?”
“এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?”
“একটু কাজ ছিলো।”
স্যালাইন শেষ হতেই উঠিয়ে বসালো। কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়ার পর বলল,”চলো ফিরে যাই।”
মৌন রইলো মিঠি। হসপিটালের পাশে একটা ক্যাফে দেখতে পেলো।
“চলো কিছু খাবে। নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে।”
“পার্সেল করে নিন। এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।”
কথা বাড়ালো না শেহজাদ। অসতর্কতাবশত শবনমের চোখে পড়লেই আগুন লাগবে দু-দিক থেকে। আগে মিঠিকে হ্যান্ডেল করা প্রয়োজন। মিঠি ঠিক থাকলে আর কোনো ভয় নেই। দ্রুত বেশকিছু স্ন্যাকস পার্সেল করে একটা সিএনজি ডাকতেই মিঠি বলল,”রিকশায় করে যাবো।”
“এখন না। এখন তুমি দূর্বল। ঝাঁকি খেয়ে পড়ে যেতে পারো।”
নীরব রইলো মিঠি। দু’জনে সিএনজিতে উঠে পড়লো।
২৭.
বাসায় পৌঁছুতেই শেহজাদ মেডিসিন বের করে মিঠির হাতে দিলো।
“এটা খেয়ে নাও।”
“কিসের মেডিসিন এটা?”
“সে তুমি বুঝবে না।”
“না বললে আমিও খাবো না।”
ধমকে উঠলো শেহজাদ। ভয় পেয়ে মিঠি খেয়ে নিলো। দেখলো শেহজাদ কিছু মেডিসিন গুছিয়ে রাখছে। হঠাৎ একটা মেডিসিন দেখতেই হাতে তুলে নিলো।
“এটা দিয়েছেন আমাকে?”
“হ্যাঁ।”
“আপনি তো নাকি সন্তান জন্মদানে অক্ষম। তো আমাকে পিল খাওয়াচ্ছেন কেন?”
প্রতিত্তোর করলো না শেহজাদ।
২৮.
এর দু-দিন পর ব্রেকফাস্ট করে রেডি হলো মিঠি। তাকে রেডি হতে দেখে শেহজাদ জিজ্ঞেস করলো,”রেডি হচ্ছো যে?”
“আমার ফ্ল্যাটে ফিরবো।”
“তোমার আব্বুর বাসায়?”
“না। আমি উত্তরা থাকি। ওখানে ফিরে যাবো। কলেজ খুলেছে।”
আচমকা শেহজাদের সারা শরীর অসাড় হয়ে এলো। মিঠি ফিরে যাবে কিন্তু তার খারাপ লাগছে কেনো?এখান থেকেই কি তবে তাদের জীবনের মোড় ঘুরে যাবে? মিঠি কি আর আসবে তার কাছে? মিঠিকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না। আচমকা বলে ফেললো,”আজ না গেলে হয় না? না মানে বলছি আরো কিছুদিন থেকে যেতে।”
“কাল থেকে কলেজ খুলেছে। সম্ভব নয়।”
শেহজাদের বুকটা ধুকপুক করছে কেমন! মিঠি সম্পূর্ণ রেডি হয়ে বলল,”আসছি।”
“একা যেতে পারবে?”
“হ্যাঁ। আমার গাড়ি আছে। ড্রাইভার গাড়ি বের করেছে।”
“বলছি তুমি সেদিন রিকশায় চড়তে চেয়েছো। আমি না হয় তোমায় পৌঁছে দিই। ড্রাইভারকে নিষেধ করে দাও।”
“আপনার অফিসের দেরী হয়ে যাবে না?”
“সমস্যা নেই। আমি ম্যানেজ করে নিবো।”
“আচ্ছা চলুন।”
শেহজাদ রেডি হয়ে মিঠিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মিঠির ফ্ল্যাটের সামনে রিকশা থামলো। বিদায় নিয়ে মিঠি চলে গেলো। কিন্তু শেহজাদকে ভেতরে যেতে বললো না। খারাপ লাগলেও শেহজাদ প্রকাশ করলো না। উপর থেকে শেহজাদ মিঠিকে একসঙ্গে দেখলো তার বান্ধবী অনন্যা। মিঠি ব্যালকনিতে এসে দেখলো শেহজাদ এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। মৃদু হেসে ভেতরে চলে গেলো।
“লোকটা কে মিঠি?”
“তোর দুলাভাই।”
“মানে!?”
“দুলাভাই বুঝিস না?”
“তোর স্বামী?”
“হুম।”
“কী বলিস! মাথা ঠিক আছে তোর?”
“বাসায় বেড়াতে গিয়ে একসাথে বিয়ে করে এসেছি অনন্যা।”
অনন্যার বিশ্বাস হলো না।
“তোর কী হয়েছে বলতো মিঠি?”
“কী হবে?”
“তোকে কেমন যেনো লাগছে! চিনতে পারছি না।”
“আমার আবার কী হয়েছে?”
“মানে আমাদের পুরো কলেজে তুই ক্রাশগার্ল এন্ড বেস্টগার্ল। আর সেই তুই কি-না..”
“কালো,ভুঁড়িওয়ালা একজন মানুষকে বিয়ে করেছি তাই না?”
“মানে..ওইটাই।”
“তিনি কালো বলে কী মানুষ না?”
“তা কেনো বলবো?”
“তো ডাউট করছিস কেনো?”
“বলতে চাইছি,তোর পেছনে এতো এতো ছেলে ঘুরে তুই পাত্তা দেস না। আর সেই কি-না ওমন মানুষকে বিয়ে করলি! এটা কিভাবে সম্ভব!?”
অনন্যার ভাবভঙ্গিমা দেখে হা হা করে হেসে উঠলো মিঠি।
“একটা কথা শুনলে তুই চমকে যাবি অনন্যা।”
“কী সেটা তাড়াতাড়ি বল।”
“আমরা লাভ ম্যারিজ করেছি।”
“অসম্ভব!”
“আরে সত্যি বলছি! বিশ্বাস না হলে তোর দুলাভাইকে জিজ্ঞেস কর।”
“মিঠি তুই একদম ফাইজলামি করবি না কিন্তু। আমি শিউর যে তোর কোনো বয়ফ্রেন্ড কিংবা পছন্দ অথবা কোনো প্রেম ছিলো না।”
“এতোদিন তোর থেকে লুকিয়ে রেখেছি। আজ সারপ্রাইজ দিয়েছি এজন্যই।”
“এটা কিভাবে সম্ভব মিঠি! তুই তো কোনো ছেলেকেই পাত্তা দিতি না।”
“উনি কালো! চাঁদের মতো সুন্দর নয়! কিন্তু তাঁরার আলোর মতো সুন্দর!”
অনন্যাকে হতভম্ব করে মিঠি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর হাত-মুখ ধুয়ে মিঠি বেরিয়ে এলো। অনন্যা খেয়াল করলো মিঠির চোখগুলো লাল এবং চোখ-মুখ ফুলে গেছে। মিঠি বেডের উপর বসলো। অনন্যা পাশে বসে কাঁধে হাত রাখলো। মলিন গলায় ডাকলো,”মিঠি!”
“হুম!”
“কেঁদেছিস?”
“না।”
“তোকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে ওই মানুষটার সাথে?”
“না।”
“সত্যিটা বল।”
“বললাম তো কিছু হয়নি।”
“মিঠি!”
“হ্যাঁ।”
“তুই আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস!”
“আমাদের লাভ ম্যারিজ অনন্যা। উনাকে পছন্দ হয়ে গেছে তাই বিয়ে করে নিয়েছি। আর বিয়ে তো একদিন করতেই হতো।”
“একটাবারও জানাসনি যে? তুই তো এমন মেয়ে না। তোর পেটের সব কথা আমি জানি।”
“মনে ছিলো না।”
“আচ্ছা থাক। সেটা তোর পারসোনাল ব্যাপার। তবে এটাই বলবো,মনের বিরুদ্ধে এই সম্পর্কে থাকার প্রয়োজন নেই। নিজের ক্যারিয়ার গড়লে অনেক কিছু করতে পারবি। ভালো পাত্রের কাছে বিয়ে বসতে পারবি। বিদেশে গিয়ে সেটেল্ড হয়ে একটা বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারবি।”
“বিলাসবহুল জীবন লাগবে না! একটু শান্তিতে থাকা যাবে এমন জীবন হলেই চলবে! আমি তো ছোটো থেকেই বিলাসবহুল জীবন পেয়েছি অনন্যা! আর প্রয়োজন নেই।”
“মিঠি,নিজের ঝুলিতে কিছু না থাক শুধু আত্মসম্মানটুকু বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি। সব জায়গায় নিজেকে বটবৃক্ষের মতো বিস্তার করা উচিত নয়,কারণ তীব্র যন্ত্রণায় ডাল ভেঙে যেতে পারে। দেখা গেলো শেকড় এতোদূর বিস্তৃত যে না পারছিস সয়ে থেকে যেতে না পারছিস চলে আসতে! যা করবি ভেবেচিন্তে কর। তোর কিন্তু লক্ষ্য অনেক দূর। আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বোকার মতো এই সম্পর্কে আঁটকে থাকাটা ঠিক হবে না। পরে কিন্তু পস্তাবি।”
২৯.
শেহজাদ অফিসে ফিরে যায়। লাঞ্চ আওয়ারে খেতে বসে আকাশ ওকে জিজ্ঞেস করলো,”এই কয়দিন আসিসনি যে?”
“একটু অসুস্থ ছিলাম।”
“ও। শবনম ফোন করেছিলো।”
“কেনো?”
“তোর কোনো এফেয়ার আছে কি-না! বিয়ে করেছিস কি-না ইত্যাদি।”
“ওহ।”
“হঠাৎ এইসব জিজ্ঞেস করার মানে কী?”
“আমি কি জানি!”
“সত্যি তোর এফেয়ার আছে?”
“না বিয়ে করেছি।”
“কি!”
“হ্যাঁ।”
“কাকে?”
“আছে একজন।”
“জানালি না কেনো?”
“মনে ছিলো না।”
“তাহলে শবনমের সন্দেহ ঠিক! বলে দিবো?”
“হ্যাঁ বলিস। এটাও বলে দিস আমাকে যেনো নজরদারি না করে। আমি বিরক্ত তার উপর।”
“দোস্ত! এটা কিভাবে সম্ভব বলতো?”
“কোনটা?”
“ডিভোর্সের এখনও দশদিন হয়নি। আর তুই বিয়েই করে ফেললি। আমি তো ভাবলাম সারাজীবন শবনমের শোকে দেবদাস হয়ে থাকবি। বিয়ের নাম মুখেও তুলবি না।”
“শোক করার কি আছে! সে ভালো থাকার জন্য পরকীয়া করে চলে গেলো এখানে আমার দোষ কোথায়? আমি তো যেতে বলিনি। আর আমি শোক করেছিলাম তারজন্য একসপ্তাহ। আর করবো না। বিয়ে করেছি। এবার মুভ অন করবো। সে যেমন ভালো থাকতে চায়,আমিও ভালো থাকতে চাই। তার যেমন ভালো থাকার অধিকার আছে তেমনি আমার ও। আমি ওর কোনো বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করি না। ও কেনো করছে! ওর তো কোনো রাইট নেই আমার উপর।”
“তোকে ছেড়ে যাবে না কি করবে! স্বার্থপরের মতো কথা বলছিস কেনো শেহজাদ?”
“কী বললাম স্বার্থপরের মতো কথা?”
“তুই ওকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারিসনি। তাই বাধ্য হয়ে শবনম তোকে ছেড়ে গেছে। তুই বলছিস মুভ অন করবি।”
“দেখা যাক কে স্বার্থপর! কে কোন স্বার্থের জন্য কাকে ছেড়ে চলে গেছে।”
তপ্তশ্বাস ফেলে আকাশ শবনমকে ফোন করে বিয়ের কথা বলে দিলো। সাথে সাথেই শেহজাদকে অনবরত ফোন করতে লাগলো শবনম। পিক করলো না শেহজাদ।
৩০.
রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরতেই গেট দিয়ে ঢোকার সময় মুখোমুখি হলো মোশাররফ সাহেবের সাথে। সালাম দিলো শেহজাদ।
“মিঠি কোথায়?”
“ফিরে গেছে।”
“মানে! কখন?”
“আজ সকালে।”
“আমাকে জানাওনি যে?”
“মিঠি আপনাকে জানায়নি?”
“না।”
“আমি তো এতকিছু জানতাম না।”
“ও বলেনি রাগের কারণে। কিন্তু তুমি তো একটাবার বলতে পারতে।”
মাথা নুয়ে ফেললো শেহজাদ।
“স্যরি আঙ্কেল। আসলেই তখন এতোকিছু মাথায় ছিলো না। ও হুট করে রেডি হয়ে চলে যাচ্ছিলো। সেই বলে কয়ে আমিই দিয়ে এসেছি।”
তপ্তশ্বাস ফেললেন মোশাররফ সাহেব।
“মিঠি ভীষণ রাগী মেয়ে। ঠাণ্ডা মাথায় উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে! ওকে তুমি যেতে দিলে কেনো? আমার তো ভয় হচ্ছে!”
শেহজাদের বুকটা ধক করে উঠলো। আসলেই তো এতকিছু ভাবেনি সে।
“এ দু-দিন তো স্বাভাবিক ছিলো।”
“ঝড় আসার আগে পরিবেশ নীরব থাকে। আর শোনো,মিঠির আঠারো বছর হয়নি তাই তোমাদের রেজিষ্ট্রেশন এখনও হয়নি। তাই তোমাদের ডিভোর্স করিয়ে দিতে চাই। মৌখিক তালাক দিলেই হবে। আর দেনমোহর লাগবে না। তোমাকে খারাপ ছেলে বলছি না। কিন্তু মিঠি তোমাকে মানবে বলে মনে হয় না। তাই ঝামেলার কি দরকার! ডিভোর্স হয়ে গেলে তোমরা মুক্ত! তুমি দেখেশুনে বিয়ে করে সংসার করে সংসারী হও। মিঠি এখনোও ছোটো। বয়স হয়নি। ওর ফিউচার আছে,ক্যারিয়ার আছে। একটা স্বপ্ন আছে। আমি চাই না আমার মা ম’রা মেয়েটার কিছু একটা হয়ে যাক! মা ম’রা মেয়ে ভাই ও নেই। তাই ওর নিজের ক্যারিয়ার গড়া প্রয়োজন। আমি কখন বাঁচি-ম’রি!”
৩১.
শেহজাদকে কিছু বলতে না দিয়ে মোশাররফ সাহেব বেরিয়ে গেলেন। মেয়ের কাছে যাবেন এখন। হঠাৎ মতিউর রহমানের মুখোমুখি হলেন।
“এতোরাতে তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
“মেয়ের কাছে।”
“মিঠি কই?”
“ফিরে গেছে।”
“মানে কি?”
“কানে শোনো না?”
“বিয়ে-শাদি হয়েছে এখন এতো পড়াশোনা কিসের? আর মিঠিকে যেতে দিয়েছো কেনো?”
“পড়াশোনা করবে না তো কি করবে?”
“মেয়ে মানুষ বেশি শিক্ষিত হইলে স্বামীরে ভক্তি শ্রদ্ধা করে না।”
“আমার মেয়ে পড়াশোনা করবে। আর ডিভোর্স করিয়ে দিবো শিঘ্রই।”
“মগেরমুলুক?”
“আমার প্রতি একবার অন্যায় করেছো,মেনে নিয়েছি। সেইম আমার মেয়ের সাথেও তোমরা অন্যায় করেছো। সেটাও মুখ বুজে মেনে নিয়েছি। জেলের ঘানি এখনো টানাচ্ছি না শোকর করো।”
আচমকা মোশাররফ সাহেবের কলার চেপে ধরলেন মতিউর রহমান।
“শা’লা! একদম মুখ সামলে। মাটির তলে পুঁতে দিবো। আর শোন,কারো বাবার সাধ্য নাই আমাদের জেলের ঘানি টানানোর। আর আমরা যা ঠিক করবো তাই। এই বাড়িতে আমাদের কথাই সব।”
একপর্যায়ে একজন আরেকজনের কলার চেপে ধরলেন। শেহজাদ ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,”এইসব কী করছেন আপনারা?”
“এই ছেলে বেশি প্যাক প্যাক করবি না। মিঠিরে আনার ব্যবস্থা কর। ও এখানেই থাকবে।”
“আমি নতুন বাসা নিয়েছি। আপনাকে আগেও জানিয়েছি।”
“নতুন বাসার মাইরে বাপ! মিঠি এখানেই থাকবে। তিন তলার এপার্টমেন্টটা ওর। আর মিঠির সম্পূর্ণ ঘর ওর বাপে সাজাইয়া দিবো। এটাই লাস্ট কথা।”
শেহজাদ কিছু বলতে নিবে থামিয়ে দিয়ে বলল,”একদম চুপ! মিঠি ফকিন্নির মাইয়া না। বিলাসবহুল জীবন পেয়েছে ছোট থেকে। ওর আদর-যত্নের কমতি করিনাই। তাই এখন থেকে মিঠি আমার চোখের সামনেই থাকবে যতদিন না আঠারো বছর হয়েছে ততদিন।”
আঠারো বছরের ব্যপারটা মোশাররফ সাহেব বুঝতে পারলেও শেহজাদ বুঝতে পারলো না।
“আঠারো বছর কেনো! মিঠি চাইলে সবসময়ই থাকতে পারে।”
“সে তুমি বুঝবে না।”
মোশাররফ সাহেব বললেন,”স্বপ্ন দেখো মতিউর রহমান। স্বপ্নই দেখো। পূর্ণ হবে না।”
“তাহলে বাপ-বেটি একজনের ও বাঁচার দরকার নেই। দুই জনরেই মাটির তলে পাঠিয়ে দেবো।”
“থ্রেট দিচ্ছো আমায়?”
“সোজা আঙ্গুল ঘি না উঠলে বাঁকাতে হয়। আমি থ্রেট ছাড়া আর কিছু দিতে পারি না।”
চোয়াল শক্ত রাখলেন মোশাররফ সাহেব। মতিউর রহমানের অত্যাচার সহ্য হচ্ছে না। কিছুতেই এই বাড়ি দেওয়া যাবে না। বেরিয়ে যেতে নেয়।
“এই তুমি আবার কই যাচ্ছ?”
“যেখানে ইচ্ছা সেখানে।”
“মিঠির কাছে ওর স্বামী থাকবে। তুমি না। বাসায় যাও মোশাররফ নয়তো খারাপ হবে।”
“কী করবে তুমি?”
শেহজাদের ভালো লাগছে না এইসব। কিছু বললেও মূল্যায়ন করছে না।
“শেহজাদ তুমি মিঠির বাসায় যাও।”
“ও কেনো যাবে?”
“ও মিঠির স্বামী।”
“কি হলো শেহজাদ যাও দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
দোটানায় পড়লো শেহজাদ।
“মোশাররফ বাসায় যাও। নয়তো সত্যি আজ খারাপ হবে।”
শেহজাদ উনাকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।
“যাও মিঠির বাসায়। আমি ওকে ফোন করে বলে দিবো তুমি আসছো এবং থাকবে।”
_____________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।