#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৯)
_________________________
সামনে ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা। তাই মিঠি পড়তে বসেছে। হঠাৎ ফোন ভাইব্রেট করতেই দেখলো তার সৎ বড় মামা কল করেছেন। শেহজাদের সামনেই মিঠিকে ফোন করে মতিউর রহমান বললেন,”মিঠি,শেহজাদ আসবে।”
“কোথায়?”
“তোমার বাসায়।”
“কেনো?”
“কেনো মানে! তোমার সাথে থাকবে। স্বামী স্ত্রীর সাথে কেনো থাকে?”
“সামনে আমার পরীক্ষা। আপাতত আমি একা থাকতে চাই। পড়াশোনায় ফোকাস করতে চাই।”
“ফাইজলামি করো মেয়ে?”
রেগে গেলেন মতিউর রহমান। নীরব রইলো মিঠি।
“বিয়ে-শাদি হইছে,এখন কিসের এতো পড়াশোনা?মেয়ে মানুষের এতো পড়াশোনা করা ঠিক না। তোমার মতো বেয়াদব হয়ে যায়।”
আচমকা কল কেটে দিলো মিঠি। মিঠি জানে তার সৎ মা এবং মামারা চায় সে যেনো পড়াশোনা না করে। আর তাই তো তার আপন মামা তাকে এখানে রাখে। নয়তো এতোদিন তার পড়াশোনা চান্দে উঠতো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিঠি। হঠাৎ মিঠির অস্বস্তি হতে শুরু করলো। শেহজাদ তার সাথে থাকবে ভাবতে পারেনি! মিঠি কেমন থমকালো!
“তুমি দাঁড়াইয়া আছো ক্যান? যাও। বউকে ছেড়ে দূরে থাকা ঠিক না। আর বিয়ের পর বউকে একা রাখাও ঠিক না। পরে শবনমের মতো করবে। আর মিঠি ছোটো মেয়ে। পরে মন অন্যদিকে চলে যাবে। এই বয়সটাই এখন খারাপ,যুগটাও খারাপ। এখন থেকে মিঠিকে তোমার কন্ট্রোলে রাখবা। মেয়েটা অনেক ঘাড়ত্যাঁড়া,ফাজিল,বেয়াদব। ফাজলামি করলে শাসন কইরা সোজা বানাইয়া ফেলবা।”
কিছু বললো না শেহজাদ। মৌন রইলো। মতিউর রহমান সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো এবং হয়েছেও। তবে মিঠিকে এইভাবে বলায় খারাপ লাগলো। যতই হোক মিঠি এখন তার স্ত্রী। স্ত্রীকে বলা আর তাকে বলা একই সমান। এছাড়াও বিব্রতবোধ করছে শেহজাদ। এই ভেবে যে মিঠি কি ভাববে! মিঠির আচরণ কেমন হবে?একটা সিএনজি ডাক দিলেন মতিউর রহমান।
“যাও উঠে পড়ো।”
শেহজাদ উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো।
৩২.
প্রায় ঘন্টাখানেক পর মিঠির বাসার সামনে এসে থামলো। সিএনজি থেকে বেরুলো শেহজাদ। দেখলো মিঠি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশে একটা মেয়ে সম্ভবত। মিঠি নিচে নেমে গেলো। মলিন মুখে শেহজাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মিঠির দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে ফেললো শেহজাদ। গম্ভীর হয়ে রইলো সে।
“চলুন।”
পিছু পিছু গেলো শেহজাদ। সোজা নিজের বেডরুমে নিয়ে গেলো।
“অফিস থেকে ফিরেছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
“শার্ট খুলে ফ্রেশ হয়ে নিন।”
হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো শেহজাদ। টাওয়াল এগিয়ে দিলো মিঠি। মুখ মুছতেই খুব সুন্দর মেয়েলি স্মেল এসে নাকে লাগলো। নিশ্চয়ই মিঠির শরীরের! কি মিষ্টি ঘ্রাণ! কেনো যেনো শেহজাদের নাক ডুবাতে মন চাইলো। মিঠির আড়ালে মুখ মোছার ভান করে টাওয়ালের মধ্যে নাক-মুখ ডুবিয়ে থেকে ঘ্রাণ টেনে নিলো। হঠাৎ চোখ পড়লো মিঠির দিকে। মিঠি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। থতমত খেলো শেহজাদ। মিঠি বোধহয় টের পেয়েছে। তবে মুখটা কেমন মলিন আর শুকনো,চিন্তিতও দেখাচ্ছে। সে আসায় মিঠি কি খুশি হয়নি? জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেলো। শেহজাদের নিজেরও অস্বস্তি হচ্ছে। ভাবেইনি যে এসে পড়বে।
“আসলেই,তোমার মামাই পাঠিয়েছে। ফ্রেশ হতেও পারিনি।”
“সমস্যা নেই।”
ব্যালকনিতে টাওয়াল মেলে দিয়ে এলো।
“ডিনার করবেন চলুন।”
“আমি করে এসেছি।”
“সেটা আপনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।”
অস্বস্তি লাগছে শেহজাদের।
“কই আসুন।”
ডাইনিংয়ে নিয়ে গেলো শেহজাদকে। মৃদু হেসে অনন্যা সালাম দিলো। সালাম নিলো শেহজাদ। চেয়ার টেনে দিয়ে বলল,”বসুন দুলাভাই। আমরা একসাথে ডিনার করবো।”
মৃদু হাসলো শেহজাদ।
“আমি মিঠির বেস্টফ্রেন্ড অনন্যা।”
“ওহ।”
“আমি মিঠির পাশের ফ্ল্যাটে থাকি,ওটা আমাদের। আর রাতে মিঠির সাথে একসাথে থাকি।”
“ওহ।”
“তবে বেশির ভাগ একসঙ্গেই থাকা হয় আমাদের। এখন তো আপনি এসে গেছেন আমাকে আর লাগবে না। আজ থেকে আমার ছুটি!”
মুচকি হাসলো শেহজাদ। ভারী মিষ্টি মেয়ে অনন্যা। মিঠি সার্ভ করতে লাগলো।
“আমি চিংড়ি খাই না মিঠি। এলার্জি আছে।”
“বেগুন-ইলিশে এলার্জি নেই,চিংড়িতে আছে?”
“হ্যাঁ। ওই একটু।”
“আজ একটু খেলে কিছু হবে না।”
শেহজাদের পাতে বড় বড় দুটো গলদা চিংড়ি ফ্রাই তুলে দিলো। শেহজাদ আর কিছু বললো না। মিঠির মন রাখার জন্য খাওয়ার চেষ্টা করলো।
“মিঠি তুমি চিংড়ি পছন্দ করতে?”
“খুবউ।”
“বলোনি যে?”
“আপনি সেদিন বাজার করার সময় কিনেছেন তো! যা ফ্রাই করলেন,নিজে না খেয়ে সব আমাকেই খাওয়ালেন।”
মৃদু হাসলো শেহজাদ। অনন্যা তাকিয়ে রইলো শেহজাদের মুখে দিকে। পরক্ষণেই অবাক হয়ে ভাবলো,এরা তো তলে তলে সংসারও করছে দেখছি! পছন্দের চিংড়িও খাইয়েছে! বাপরে কি প্রেম! নিজেকে সামলে বলল,”আপনাদের নাকি লাভ ম্যারিজ দুলাভাই?”
ঠোঁট চেপে ধরলো মিঠি।
“কে বলেছে?”
“আর কে আপনার সুন্দরী বউটা।”
লাজুক হাসলো মিঠি।
“হ্যাঁ।”
“মিঠি বলেছিলো কিন্তু বিশ্বাস করিনি। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।”
“ভালো করেছো।”
“মিঠি আজ কী বলেছে জানেন দুলাভাই?”
“কী বলেছে?”
চোখ পাকালো মিঠি। শেহজাদের দৃষ্টি এড়ায়নি তা।
“আরে বলতে দেনা।”
“কী বলেছে মিঠি?”
“বলেছে আপনি নাকি মিটিমিটি তাঁরার আলোর মতো সুন্দর! তবে মানুষ একটু কালো আরকি।”
খাবার অসমাপ্ত করে উঠে গেলো মিঠি। দ্রুত রুমে চলে গেলো।
“আহ! এখন না বললেই তো হতো। মেয়েটাকে বিব্রতবোধ করালে। ছোটো মানুষ,না বুঝেই হয়তো বলেছে!”
“আপনার কাছে মিঠিকে ছোট লাগে?”
“সবার কাছে বড় হলেও আমার কাছে ছোট।”
মুগ্ধ হলো অনন্যা। কি একটা আবেশ এই মানুষটার মধ্যে ভেবে পায় না অনন্যা। তবে সাংঘাতিক একটা চুম্বকীয় আকর্ষণ রয়েছে। পিছন থেকে মিঠিকে বারকয়েক ডাকলো শেহজাদ। মিঠি এলো না। ফাজিল মেয়ে অনন্যার খবর পরে করবে। এইসব বলার কি ছিলো? মনে মনে বকতে লাগলো।
“মিঠি বললো আপনারা নাকি একজন আরেকজনকে দেখে প্রেমে পড়ে গেলেন। তারপর নাকি সোজা বিয়ে করে ফেললেন?”
“মিঠি বলেছে!?”
“আরেহ হ্যাঁ।”
অবিশ্বাস্য নয়নে তাকালো শেহজাদ।
“মিথ্যা বলছি নাকি! এটা কী সত্যি দুলাভাই?”
“মিঠি যখন বলেছে তখন মিথ্যে হলেও সত্যি।”
খাওয়া শেষ করলো দু’জনে। মিঠির জন্য খাবার বেড়ে নিলো শেহজাদ।
“মিঠির জন্য দুলাভাই?”
“খায়নি তো মেয়েটা। রাতে উপোস করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। এমনিতেই অসুস্থ।”
মুগ্ধ হলো অনন্যা। বিয়ের সপ্তাহ না পেরুতেই বউয়ের জন্য কত চিন্তা! কতো আদর! কতো ভাবনা! বিচক্ষণ অনন্যা এইটুকু বুঝতে পারলো মানুষটা আর যাইহোক খুবই লাভিং কেয়ারিং এবং এই মানুষটার মধ্যে বিশেষ কোন একটা বিশেষত্ব রয়েছে। যার ফলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। আনমনেই মিষ্টি হাসলো। এমন একটা মানুষ তো সবাই ডিজার্ভ করে। সেও। শেহজাদের শীতল আচরণে কেনো যেনো অনন্যার ভালো লেগে গেলো। অনন্যা বুঝতে পারলো এজন্যই বোধহয় মিঠি প্রেমে পড়েছে মানুষটার। নয়তো এই মেয়ে যে অহংকারী,দাম্ভিক! কারো সাথেই মিশে না! আর ছেলেদের তো পাত্তাই দেয় না। যে মেজাজ! ছেলেরা নিজেরাই দূরে থাকে ওর থেকে। কখন না ইট মে’রে এট্যাক করে দেয় সেই ভয়ে। মেয়েটার আবার দৌঁড়ানোর,ছোড়াছুড়ির যা অভ্যাস।
“মিঠি খুব লাকি দুলাভাই।”
“কিভাবে বুঝলে?”
“দেখেই বুঝা যাচ্ছে মিঠিকে খুব আদর,স্নেহ আর মায়া করেন। এজন্যই বোধকরি মিঠি আপনার প্রেমে পড়েছে।”
শেহজাদ কিছু বললো না। খাবার নিয়ে রুমে চলে এলো। মিঠি পড়তে বসেছে। একটা চেয়ার টেনে শেহজাদ বসলো। মিঠির লজ্জা এবং অস্বস্তি দুটোই লাগছে!
“মিঠি হাঁ করো।”
“আমার খিদে নেই।”
“হাঁ করো।”
হাঁ করতেই খাবারের লোকমা মুখে পুরে দিলো। বাম হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলল,”লজ্জা পাওয়ার কী হলো মিঠি! আমি বুঝতে পেরেছি,তুমি আমাদের বিষয়টা হ্যান্ডেল করার জন্য এমনটা বলেছো। আসলেই যে পরিস্থিতিতে বিয়েটা হয়েছে এটা কখনো কাউকে বলার মতো অবকাশ রাখে না। লজ্জাজনক একটা ঘটনা। তাই আমি কিছু মনে করিনি। আমি তোমায় বুঝতে পেরেছি মিঠি। সো বি নরমাল।”
স্বাভাবিক হলো মিঠি। মৃদু হাসলো শেহজাদ।
“মিঠি তুমি খুব ভালো মেয়ে। তবে একটু রাগী! বউরা একটু রাগী-জেদী না হলে আমার ভালো লাগে না।”
চট করে শেহজাদের চোখে চোখ রাখলো মিঠি। চোখে হাসলো শেহজাদ।
“শবনম ও রাগী ছিলো?”
“ওর কথা কেনো আসলো?”
“বলুন না!”
“না ও মিক্সড।”
“ওহ।”
“একটা কথা বলি?”
“হুম।”
“কোনো ব্যপার নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করো না মিঠি। তোমার ডিস্টার্ব হবে না। আমি আশেপাশে একটা বাসা দেখে শ্রীঘ্রই উঠে পড়বো। তোমার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না। আর তোমার মামারা কেউ জানবে না। মন দিয়ে পড়াশোনা করো। আমি সবসময়ই তোমার সাথে আছি। টেনশন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর সবটা সময় স্বাভাবিক থেকো। সমস্যা হলে সংকোচফিল না করে আমাকে বলবে কেমন! আর ডোন্ট ওয়্যারি।”
নীরব রইলো মিঠি। দূর থেকে অনন্যা দেখলো শেহজাদ খুব সুন্দর করে ভাত মাখিয়ে,শান্ত এবং স্নেহময়ী কণ্ঠে কথা বলতে বলতে মিঠিকে খাওয়াচ্ছে। মিঠিও কেমন বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছে। কোনো জোরজবরদস্তি কিংবা ধমক দেওয়া লাগছে না। দু-জনকে দেখলেই যেই কারো মনে হবে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা বহুদিন,বহুবছরের আর ভীষণ দারুন। হঠাৎ মিঠির এতো পরিবর্তন দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না অনন্যা। একটা কালো,ভুড়িওয়ালা,কেমন গোবেচারা টাইপের মানুষের কাছে মিঠিকে এইভাবে নীরবে স্বইচ্ছায় আত্মসমর্পণ করায়। কী জাদু করেছে ওই কৃষ্ণ বর্ণের মানুষটা? ভাবতে লাগলো অনন্যা। তবে দৃশ্যটা দেখতেই অনন্যার কেনো যেনো খুব ভালো,মধুময় এবং প্রেমময়ী লাগলো। সাথে মুগ্ধ ও হলো। কালো বলে মানুষটাকে মনের মধ্যে হীনমন্যতা দেখালেও অনন্যার ধারণা বদলে গেলো এক নিমিষেই। বুঝতে পারলো,গায়ের রঙ দিয়ে কখনো কারো সৌন্দর্য বিবেচনা করতে নেই! আসল সৌন্দর্য তো মনে,চরিত্রে আর ব্যবহারে,আখলাকে। মিঠি ঠিক বলেছে,মানুষটা চাঁদের মতো নয়,মিটিমিটি-ঝিকিমিকি তাঁরার আলোর মতো সুন্দর! উজ্জ্বল! কারণ মানুষটা কখনো তার আচরণে,কখনো ব্যবহারে,কখনো যত্নে কখনো বা মায়ায়-মমতায়,আদর,স্নেহ আর ভালোবাসায় বুঝিয়ে দেয় সে কতোটা সুন্দর! অমায়িক,সাবলীল আর পরিচ্ছন্ন! তাঁরা যেমন ঝিকিমিকি আলো ছড়ায়,মানুষটাও তার নিজস্ব আচার-আচরণে মুগ্ধতা ছড়ায়!
৩৩.
খাওয়া শেষে মিঠি কিছুক্ষণ পড়াশোনা করলো। শেহজাদ বসে রইলো। খুব ক্লান্ত লাগছে তার। একটু রেস্ট করার প্রয়োজন কিন্তু বলতে পারছে না। হঠাৎ চোখ পড়তেই বলল,”আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“কোথায় ঘুমাবো?”
“ভণিতা করার কী আছে। এখানেই ঘুমাবেন। আমরা তো আর সিনেমার নায়ক-নায়িকা নয় যে কেউ সোফায়,কেউ ফ্লোরে কিংবা কেউ বেডে ঘুমাবো।”
“তোমার সমস্যা..”
“হবে না। আপনি ঘুমান। আমি একটু পরে ঘুমাবো। অনেক পড়া জমেছে।”
বিছানা ঝেড়ে গুছিয়ে বালিশ ঠিক করে দিলো।
“ঘুমান।”
“থাঙ্কিউ।”
শেহজাদ শুয়ে পড়লো। মিঠি আরো কিছুক্ষণ পড়াশোনা করলো। শেহজাদ ঘুমিয়ে পড়েছে। নাক ডাকছে কেমন। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বোধহয়। নিজের বালিশটা আস্তে করে শেহজাদের মাথার নিচে দিলো। নড়েচড়ে ঘুমিয়ে গেলো শেহজাদ। মিঠি উঠে দাঁড়ালো। পাশের রুম থেকে একটা বালিশ নিয়ে এলো। সপ্তাহের চারদিন তার বাবা এখানে এসে থাকে। তাই এই বাসায় দুটো খাট আছে। অনন্যা খেয়ে-দেয়ে তাদের ফ্ল্যাটে চলে গেছে। শেহজাদের পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে। অজান্তেই চোখ দুটো টইটম্বুর হয়ে উঠলো। মনের গভীরে জমে থাকা দুঃখ,চুপিসারে কেঁদে উঠলো রাতের নির্জনে। শেহজাদকে মানতে পারছে না সে,কিছুতেই না! এমন জীবন সত্যিই চায়নি। বিলাসবহুল না হলেও শান্তিতে থাকা যায় ওমন একটা সাধারণ লাইফ চেয়েছিলো। তবুও কাকতালীয় কিংবা ঐশ্বরিকভাবে হোক এই মানুষটার সাথে জড়িয়ে গেলো। তার মামীরা তাকে অনেক বুঝিয়েছে,ফোন করেও বুঝিয়েছে। কিন্তু মিঠি এখনও মানুষটাকে মানতে পারছে না। হাসিখুশি দেখায় ঠিক,কিন্তু তার ভেতরটা ছাঁই হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে। হয়তো কেউ সেটা টের পায় না। টের পায় তার হাসি হাসি মুখ। চোখের জল মুছে শুয়ে পড়লো। বালিশটা ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেলো চোখের জলে। অনেক রাত হলেও মিঠির ঘুম এলো না। ভীষণ মাথা ব্যথা উঠলো। চোখে ঝাপসা দেখলো। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে শুয়ে রইলো।
৩৪.
আযান হতেই ঘুম ভেঙে গেলো শেহজাদের। হঠাৎ শুনতে পেলো মিঠি কাঁদছে! তড়াক করে উঠলো শেহজাদের বুকটা। আচমকা মিঠিকে টেনে আনলো। প্রতিক্রিয়া করলো না মিঠি।
“মিঠি,তুমি কাঁদছো?”
অস্থির হলো শেহজাদ। প্রতিত্তোর করলো না মিঠি।
“কেনো কাঁদছো?”
নীরব রইলো।
“মিঠি কথা বলো।”
কিছুই বললো না। নিজের বুকের উপর মিঠির মাথা রাখলো। সিল্কি চুলগুলোর মধ্যে হাতের আঙ্গুল ডুবিয়ে মাথা বুলাতে লাগলো।
“মাথা ব্যথা করছে?”
এবারও নীরব রইলো।
“বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে?”
কোন প্রতিক্রিয়াই করলো না। বরং হিঁচকি উঠলো একপর্যায়ে। নরম গলায় বলল,”আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করছো না! এটা স্বাভাবিক। আমি মন খারাপ করি না। আমি কালো,বয়স্ক,ডিভোর্সি অনেক সমস্যা আমার মধ্যে। আমি জানি তুমি বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো বলতে দ্বিধা নেই।”
“এতো কাহিনী,এতো নাটকীয়তা করে আমার জীবনে কেনো এলেন? অন্য কারো জীবনে যেতে পারলেন না?”
কেনো যেনো খুব খারাপ লাগলো শেহজাদের। আচ্ছা সে যদি সুন্দর হতো তাহলে মিঠি কি কখনো এমন কথা বলতে পারতো! গায়ের রঙই আসল? তার মানে মন কিছুই না? আর সে-তো ইচ্ছে করে ডিভোর্সি হয়নি। সে-তো ইচ্ছে করে কালো হয়ে জন্ম নেয়নি। প্রিয় মানুষটার সমস্যা জানার পরেও লুকিয়ে রেখেছিলো তার সাথে আজীবন সংসার করবে বলে। অথচ সেই লুকানো কথাই আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। শবনমকে সে সত্যিই ভালোবাসে এবং ভালোবেসেছিল মনপ্রাণ উজার করে। এখন তাকে ভোলার চেষ্টা করছে মিঠিকে আঁকড়ে ধরে। কিন্তু মিঠি ও তাকে এলোমেলো করে দিবে বোধহয়! টুপ করে দু-ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।
“তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে মিঠি। প্লিজ ফরগিভ মি।”
“আমার জীবন থেকে চলে যান। আপনার জন্য আমার সুন্দর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে! আমার সব আনন্দ,হাসিখুশি আপনি কেঁড়ে নিলেন। আমার সব স্বপ্ন আপনি তচনচ করে দিয়েছেন।”
শ্বাস আঁটকে এলো শেহজাদের। টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো চোখের কোন বেয়ে। সত্যিই বলেছে মিঠি।
“এতো দেরী করে কেন এলেন শেহজাদ?”
“জানি না।”
“কেন?”
“তুমি কেন দেরী করে এলে?”
“জানি না।”
“তো আমি কীভাবে জানবো?”
“জীবনের ছোট্ট একটা ভুল সমস্ত কিছু ওলট-পালট করে দিলো। কেন আমি বাবার বাসায় বেড়াতে গেলাম আর কেন মায়ের সাথে জিদ করে ছাঁদে গেলাম?”
“আমিও,কেন ওই বেইমান মানুষটাকে স্মরণ করে বৃষ্টিবিলাস করতে গেলাম? তাহলে তোমার সাথে না হতো দেখা আর না নিতো জীবন বদলে যাওয়ার নতুন বিষাক্ত মোড়ের সূচনা।”
“আমি আপনাকে ঘৃণা করি শেহজাদ। চরম ঘৃণা।”
“আমার বুকে মাথা রেখে?”
চট করে উঠে বসলো মিঠি। তাচ্ছিল্য হাসলো শেহজাদ।
“হ্যাঁ। সৎ সাহস থাকতে হয়।”
“তাহলে মাথা তুলে ফেললে কেনো? আবার রাখো।”
“রাখবো না।”
“আচ্ছা,তাহলে কম্প্রোমাইজ করে আজীবন থেকে গিয়ে সৎ সাহসের পরিচয় দাও।”
_________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।