#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১০)
_________________________
শেহজাদকে হতভম্ব করে আচমকা গলা চেপে ধরলো মিঠি। প্রতিক্রিয়া করলো না শেহজাদ। কারণ পূর্ব থেকেই মিঠি এগ্রেসিভ আচরণ করছে।
“অনেক মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে হয় এবং অনেক ছেলেকে তার প্রিয় মানুষ হারাতে হয় শুধুমাত্র ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে; আর এটাই এই জগৎ সংসারের নিয়ম। মানিয়ে নাও ভালোবাসবো তোমায়। অনেক মায়া করবো,অনেক অনেক ভালোবাসবো। শবনমের চাইতেও বেশি ভালোবাসবো,মায়া করবো। আর যদি না থাকো তাহলে এখনই বিদেয় নাও আমার জীবন থেকে। মায়া বাড়িয়ে আমাকে কষ্ট দিও না। ভেঙ্গেচুরে ভঙ্গুর এই আমাকে আর এলোমেলো করে দিওনা। এমনিতেই আমি এলোমেলো হয়ে আছি। আর করো না প্লিজ। আমি ক্লান্ত! এই নাটক দেখতে দেখতে আমি সত্যিই ক্লান্ত। একটু স্বস্তি দাও,আর না হয় এখনই মুক্তি দাও। এখন জোর করতে ইচ্ছে করে না,জোর করতে করতে আমি বড্ড ক্লান্ত। ভাগ্যে যদি থাকো তবে আমারই হবে,কপালে যদি না থাকো চলে যাবে।”
“যাবো তো! আপনাকে মুক্তি দিয়ে যাবো। যাবার কথাই ছিলো।”
“আফসোস নেই ; থাকবেও না। তুমি হারিয়ে যাবে সেটা আমি জানতাম! দিন শেষে সূর্যটাও বুঝিয়ে দেয় যে,সময় ফুরালে সবাইকে হারিয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয়,আমি আমার জন্য কান্না করা মানুষকে ও হারিয়ে যেতে দেখেছি। সেখানে দুইদিনের তুমি তো কিছুই না।”
“আফসোস করবেন! খুব আফসোস করবেন! শবনমের জন্য একসপ্তাহ শোক পালন করেছেন। আমার জন্য আজীবন করবেন আর সেই ব্যবস্থাই করবো। অনেক মায়া লাগাবো,ক্ষত-বিক্ষত করো দেবো আপনাকে। একদম!”
টুপ করে শেহজাদের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। কেমন এক দমবন্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। মায়া হলো না মিঠির। এবার বুকের উপর উঠে আরো জোরে গলা চেপে ধরলো।
“এমন আফসোস করবেন যে ভুলতে পারবেন না আমাকে! একদম না! আমি ভুলতে দেবো না আপনাকে! তবুও ভুলতে দেবো না! একদমই না! আমি মিঠি! শবনম নই!”
শ্বাস আঁটকে রইলো শেহজাদ।
“প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছো কেনো?”
“ঘৃণা করি আপনাকে।”
“এবার আমার বুকে উঠে?”
নেমে গেলো মিঠি। তাচ্ছিল্য হাসলো শেহজাদ। তার বুকে মাথা রেখে,তার বুকে উঠে তাকেই ঘৃণা করার কথা বলছে কি অবলীলায়! হাহ জীবন! হ্যাঁ! কথায় আছে না আপনজনরাই আগে পিঠে ছু’রি ঢুকায় তেমনি! কথাটা ভাবতেই আচমকা দৌঁড়ে গিয়ে টেবিল থেকে একটা ফল কাটার ছু’রি এনে শেহজাদের বুকে ঢুকিয়ে দিতেই আর্তনাদ করে উঠে ওমনি ধরে ফেললো শেহজাদ। ছু’রির আগা চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গেলো খানিকটা। মুহূর্তেই রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো সাদা রঙের সেন্ডো গেঞ্জিটা।
“এ তুমি কী করলে মিঠি?”
অবিশ্বাস্য কণ্ঠে জিজ্ঞেস বললো শেহজাদ।
“আপনাকে মে’রে জেলে যাবো।”
শেহজাদ বিশ্বাস করতে পারছে না মিঠি এমনটা করতে পারে! ব্যথাতুুর মুখে কাতর নয়নে তাকিয়ে রইলো মিঠির দিকে। ছু’রি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই শেহজাদের হাত কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগলো। ছেড়ে দিতেই গলার মধ্যে পোঁচ দিতেই চামড়া কেটে গেলো। আর একটুর জন্য হয়তো শ্বাসনালী কাটা যায়নি! স্তব্ধ হয়ে গেলো শেহজাদ। মিঠি এমনটা করতে পারে শেহজাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না। গলা থেকে রক্ত বেরুতেই শেহজাদের কি হলো কে জানে! নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আচমকা কষিয়ে পর পর তিনটা থাপ্পড় মা’র’লো মিঠিকে। এতো জোরে মা’র’লো যে মিঠি ফ্লোরে আঁচড়ে পড়ে কপালে ব্যথা পেলো। রিয়েক্ট করতে ভুলে গেলো মিঠি। চোখ বন্ধ করে মিঠি ফ্লোরে ওইভাবে পড়ে রইলো। রক্তে মাখো-মাখো হয়ে গেলো শেহজাদের শরীর। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ে এতো দুঃসাহস করতে পারে। শবনমের সাথে পাঁচ বছরের সংসার ছিলো,কখনো এমন হাতাহাতি কিংবা মা’রা’মা’রি’র পর্যায়ে যায়নি। শবনম গোপনে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলো শেহজাদ বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু তবুও শবনমের মধ্যে কোনো পরিবর্তন ছিলো না। পাঁচ বছর যেমন স্বাভাবিক ছিলো তেমনই ছিলো। যাওয়ার সময় শুধু ডিভোর্স লেটার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে এটাই। কিন্তু মিঠি তার জীবনটা ওষ্ঠাগত করে ফেলেছে একসপ্তাহ না পেরুতেই। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো কিন্তু সে ভুল ছিলো। অনর্গল রক্ত পড়তেই আছে। শেহজাদ উঠে ড্রেসিং টেবিলের মধ্যে স্যাভলন,কটন আর গজ দেখতে পেলো,সেটা দিয়েই রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। হুশ ফিরতেই মিঠির দিকে তাকালো। মিঠিকে একই রকম পড়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে গেলো। মিঠির পাশে বসলো। গাল চাপড়ে বলল,”মিঠি! এই মিঠি! উঠো দেখি!”
রেসপন্স করলো না মিঠি। ভড়কে গেলো শেহজাদ। তার ভারী হাতের থাপ্পড় খেয়ে সেন্স হারিয়েছে। খারাপ লাগলো শেহজাদের। জীবনে ফাস্ট কোনো নারীর গায়ে হাত তুলেছে সে। কিন্তু মেয়েটাও যা ইচ্ছে তাই! সাইকোর মতো আচরণ করেছিলো। এতো মায়া-মমতা,আদর,স্নেহ,ভালোবাসার পরেও এইভাবে এর প্রতিদান মেয়েটা দিবে ভাবতে পারেনি কিংবা মেয়েটার মধ্যে পরিবর্তন ও হয়নি একটু। এমন তো নয় ছোট! যেই মেয়ে স্বামীর আদর,সোহাগ,ভালোবাসা সব বুঝে সে কিভাবে ছোটো হয়?একটা সাবালিকা মেয়ে কিভাবে ছোটো হয়? দ্রুত ওয়াশরুম থেকে পানি এসে চোখে-মুখে ছিটালো। কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে তাকালো। শেহজাদকে দেখতেই আবারও এগ্রেসিভ হয়ে উঠলো। সামলানোর চেষ্টা করলো। কিছুতেই মিঠি শান্ত হলো না। শেহজাদ বুঝতে পারে যখন নারীদের ভালোবাসার প্রয়োজন হয় আর যখন বলতে পারে না তখন নারীরা এমন এগ্রেসিভ হয়ে উঠে। তাই যেকোনো ধরনের ভুলভাল কাজ করে ফেলে। আচমকা উঁচু হয়ে ফের গলা চেপে ধরে ধরলো। শেহজাদ শান্ত ভঙ্গিতে বলল,”মিঠি,প্লিজ শান্ত হও। মাথা ঠাণ্ডা করো।”
“আপনি আমার গায়ে হাত তুলেছেন!”
“তুমি খুব এগ্রেসিভ হয়ে উঠেছো। মাথা ঠিক ছিলো না।” আ’ম সো স্যরি।”
“কিসের স্যরি?”
“তুমি যা করেছো,তা জল্লাদ ও করতে ভয় পাবে। তোমাকে জল্লাদ বললেও জল্লাদের অসম্মান হবে। কি করেছো আমাকে দেখো!”
আরো জোরে গলা চেপে ধরলো। আচমকা পাঁজাকোলে তুলে বেডে শোয়ালো। ততক্ষণে চারদিকে ভোরের আলো ফুটে গেছে। কিছুতেই মিঠি শান্ত হচ্ছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে শেহজাদ বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। কানের পাশে মুখ নিয়ে বলল,”স্যরি। এবার শান্ত হও মিঠি। ভেরী স্যরি!”
কিন্তু কে শোনো কার কথা!
“এবার কথা না শুনলে সত্যিই আরো দশটা থাপ্পড় মে’রে পটল তুলিয়ে পাঠিয়ে দেবো উপরে। চেনো আমাকে ফাজিল মেয়ে! সবসময় চুপ করে থাকি বলে ভেবো না সারাজীবন চুপ করে থাকবো। আমি ভালোর ভালো খারাপের খারাপ! অনেক সহ্য করেছি তোমাকে। নেহাৎই ছোটো বলে বলে। আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না তোমার? ডিজগাস্টিং! আমার একটাই সমস্যা,আমাকে কেউ আঘাত করলে,উল্টো আঘাত আমি করতে পারি না। কারণ নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ আমি। আমার বিবেক আমার কাছে অনেক দামি। আর বার-বার তুমি সেই দূর্বলতাটাই নিচ্ছো! কতো সহ্য করা যায়? সব কিছুর একটা লিমিট আছে। লেবু বেশি চটকালে যেমন তেঁতো হয়,তেমনি ধৈর্য্যের ক্রস করলেও মানুষ অমানুষে রূপান্তরিত হয়। আর সেখানে৷ তো আমি সাধারণ এক মানুষ।”
ফণা তোলা সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে মিঠি। মেয়েটা সাংঘাতিক একটা সাইকো। অদ্ভুত আচার-আচরণ! নিজেকে সামলে নিলো শেহজাদ। মাথা ঠাণ্ডা করলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কপালে চুমু খেলো। আস্তে করে বলল,”মিঠি,কাছে আসবে? আদর নিবে?”
৩৭.
শেহজাদের বুকের উপর শুয়ে রইলো মিঠি। দু-চোখ বন্ধ,তবে চোখের কোণ বেয়ে তপ্তজল গড়িয়ে পড়ছে! রক্তাক্ত বুকটা চোখের জলে ভেসে নোনা পানির ছোঁয়ায় জ্বলছে! তা পরোয়া না করে বরং মিঠির সিল্কি ঝরঝরে চুলগুলোর ভাঁজে আঙ্গুল ডুবিয়ে চালনা করতে লাগলো শেহজাদ। মলিন গলায় বলল,”জানো মিঠি,স্বামী হচ্ছে এমন একজন মানুষ,যার সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও,তার প্রাধান্য ইসলামে জন্মদাতা বাবার ও আগে। একমাত্র তিনিই এমন একজন মানুষ,যার কাছে সবকিছুই শেয়ার করা যায়। যার কাছে কোনো গোপনীয়তার প্রয়োজন নেই। সর্বপ্রথম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এসেছে তারপর বাকিসব। স্বামী যতোটা আপন,আবার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক ততোটাই নাজুক,ঠুনকো! রাগে হোক কিংবা হাসিঠাট্টায়,তিন তালাকেই সম্পর্কের শেষ। মুহূর্তেই হালাল থেকে হারামে পরিণত হয়ে যায়। অথচ রক্তের সম্পর্কে যতো যাই হোক কখনো সম্পর্ক হারাম হয় না। সম্পর্কের আগে এক্স শব্দটা যোগ হয় না। বাবা খারাপ হোক কিংবা মা,তারা সারাজীবন বাবা-মা-ই থাকে। পর হয়ে যায় না। পর হয় শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। এই মহৎ সম্পর্কের যত্ন নিতে হয় সবচেয়ে বেশি। একটু ভুলে রাগের মাথায় যেন সম্পর্ক শেষ না হয়ে যায়। সম্পর্কের যত্ন নিতে হয়। যাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারা যায় না,তাকে রাগের মাথায় পর করে দিতে নেই। রাগ চলে গেলেও স্বামী কিংবা স্ত্রী একবার হারাম হয়ে গেলে সহজেই তাকে হালাল করা সম্ভব নয়। এই একটা সম্পর্কেই,যদি সম্পর্কটা টিকে যায় তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দু-জন দু-জনকে ছেড়ে যায় না। পাশে থেকে যায় সারাজীবন। সন্তান যতই আদরের হোক তারা ঠিকই একসময় নিজেদের সংসারে ব্যস্ত হয়ে যায়,সব সন্তান বাবা-মায়ের পাশে তাদের বৃদ্ধ বয়সে থাকতে পারে না। থেকে যায় স্বামী-স্ত্রী ওই দুইজন মানুষই,একে অপরের পাশাপাশি। একটা বিষয় খেয়াল করো,যাকে বেশি ভালোবাসবে তার অল্প আঘাতে কষ্টও পাবে বেশি। তেমনই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা। যতটা আপন,ততটাই ঠুনকো! পার্থক্যটা হচ্ছে,দুজনার মধ্যকার বোঝাপড়ার,আর ধৈর্য,সহ্যের। এগুলো যাদের বেশি তাদের সম্পর্ক ততটাই মজবুত। কম হলেই ভেঙে যায়,আফসোস! আরো একটা কিছু কথা কী জানো? আকাশের চাঁদ তো কেবল একটাই হয়। যে রাতের অমানিশার অন্ধকারকে দূর করার জন্যই যথেষ্ট। তেমনিভাবে একটি পুরুষের জীবনে একটি চক্ষু শীতলকারী নারী অর্থাৎ একজন স্ত্রী যথেষ্ট। একটি অগোছালো পুরুষের জীবনকে গোছানোর জন্য সে নারীর অবদানই যথেষ্ট। নারী একটি পুরুষের জীবনকে গোছাতে শিখায়,সাজাতে শিখায়,গড়তে শিখায় আবার ধ্বংস করতেও শিখায়। নারী চাইলে সব সম্ভব। আরো শিখায় কিভাবে জীবনের সফলতা ও গন্তব্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো যায়। নারী পুরুষকে জান্নাতের দিকে অগ্রগামী করতে শিখায়। জানো,এজন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন,“পুরো দুনিয়াটাই সম্পদ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো পরহেজগার স্ত্রী।”(সহিহ মুসলিম-৩৭১৬)
মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে,জীবনসঙ্গী হিসেবে একজন আল্লাহভীরু বিশ্বস্ত পুরুষের স্ত্রী হওয়া! ছেলেদের ক্ষেত্রেও নেককার,চক্ষু শীতলকারী,আল্লাহভীরু স্ত্রী পাওয়াটা সফলতা। মিঠি,তোমাকে আঁকড়ে ধরে আমি অতীতের সব ভুলে যেতে চাই! দয়া করে তুমিও ভুলে যাও না প্লিজ! রোজ নিয়ম করে আমাকে একটুখানি দুঃখ দিও! দুঃখের উপকরণ হিসেবে তোমার হৃদয় দিও। তোমার হৃদয় পেয়ে আমি সেই দুঃখগুলো ভুলে যাবো! জানো মিঠি,ভাঙ্গা মন ছোঁয়ার ক্ষমতা সবার থাকে না। তুমি বরং জিদ করে আমাকে ভালোবাসো! আমার ভাঙ্গা মনটা ছুঁয়ে দাও! আমার একটা লক্ষ্মী বউ হও! তোমাকে ভালোবেসে এবং তুমি আমায় ভালোবেসে আমরা দু’জন দু’জনাতে খুব সুখী হতে চাই,তোমাকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই! তোমাকে আমার স্বপ্নসারথি বানাতে চাই! তোমাকে নিয়ে খুব বড় নয়,ছোট্ট একটা সুন্দর,শান্তিপূর্ণ টোনাটুনির সংসার সাজাতে চাই! হয়তো বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবো না তবে সুখে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। একসাথে আজীবন ভালোবেসে ভালো থাকতে চাই! একসাথে বৃদ্ধ হতে চাই! আমি চাই তুমি আমার ভালো স্ত্রী হও! আমার চক্ষুশীতলকারিণী হও! আমার ভাঙ্গা হৃদয়ের জোড়া লাগিয়ে সেই হৃদয়ের হৃদয়হরণী হও! আমার হৃদয়েশ্বরী হও। আর আমি দোয়া করি তুমি খুব ভালো মেয়ে হয়ে যাও! বউ হও! ভালো এবং উত্তম জীবনসঙ্গী হও!”
“আপনার প্রতি ঘৃণা আসে শুধু। কিভাবে এতোকিছুর আশা করছেন?”
ঘৃণামিশ্রিত এবং ক্রোধিতপূর্ণ হয়ে বললো মিঠি।
“তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো মিঠি! ছোট না। তোমাকে আদর করে ছোটো বলি ঠিক কিন্তু ওতোটাও ছোটো তুমি এখন আর নও। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”
“আপনি বলছেন,আমি বুঝার চেষ্টা করতাম! আচ্ছা বেশ! আপনার মতো এতো খুঁতওয়ালা একজন মানুষকে কিভাবে চাপিয়ে দিলো?”
“শোনো,পৃথিবীর নিয়মটাই হলো চাপিয়ে দেওয়া। প্রতিটি মানুষের উপর সেই জন্ম থেকেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে,পড়ালেখা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। অন্যের ইচ্ছে,আকাঙ্ক্ষাগুলোকেও চাপিয়ে দেওয়া হয়। লক্ষ্যকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। অপছন্দের একজন মানুষকে সারাজীবনের জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়। তো কি হয়েছে মানুষ কি মেনে নিয়ে মানিয়ে নিচ্ছে না?”
“সব মানলাম,সব বুঝলাম! কিন্তু দুইটা জিনিস আমি মানতে পারছি না। আমাকে ঠকানো হলো।”
বুকভারী হয়ে এলো শেহজাদের।
“আমি সবসময় চাইতাম,প্রিয় মানুষটা আমার জীবনে দেরিতে আসুক,এতে আমার কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু যেনো সঠিক সময়ে সঠিক মানুষটাই আসে। কিন্তু এ কি চাইলাম! আর এ কি হলো! যেখানে আমি নিজের পছন্দের সামান্য একটা ড্রেস,লিপিষ্টিক,শাড়ি,জামা,জুতা কিংবা কসমেটিক অথবা বেড পর্যন্ত কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না,কারণ আমার খুব খারাপ লাগে বলে। আমার একান্ত নিজস্ব বলে। সেখানে নিজের স্বামীকে কিভাবে অন্যের সাথে শেয়ার করবো আমি?”
ঠোঁট চেপে চোখ বুজে রইলো শেহজাদ। মিঠির দুঃখ ঠিক কোন জায়গায় শেহজাদ বুঝতে পারে! হতাশ শ্বাস ফেললো। কিন্তু কিছু করার নেই।
“কিভাবে আর কারো সাথে তাকে মেনে নেবো?যেখানে পুরো মানুষটাকে নিজের মানুষ বলে সেই বুঝ-জ্ঞান হওয়ার পর থেকে স্বপ্ন দেখতাম একান্ত আমার মনে করে! নিজের মানুষটাকে সবার মাঝে ভাগ করবো,এতোটা উদার তো আমি কখনোই হতে পারবো না আর না ছিলাম,আর না হবো। সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছিলাম,যে আমার,সে একান্তই আমার। নিজের ব্যক্তিগত প্রিয় মানুষকে অন্য কারো সাথে সহ্য হয় না শেয়ার তো অনেক দূরের কথা! কিন্তু আমার সেই ব্যক্তিগত মানুষ আমার কাছে আসার পূর্বেই শেয়ার হয়ে গেছে! ইউজ হয়ে গেছে। আমি বিনা অন্য কাউকে ভালোবেসেছে,আদর-সোহাগ সব করেছে,বার-বার গোপন অভিসারে লিপ্ত হয়েছে,ভালোবাসি বলেছে,ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে চুমু খেয়েছে! এ আমি কিভাবে মানি?”
গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো শেহজাদ।
“তোমার কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি মিঠি। প্লিজ কষ্ট না পেয়ে একটু মানিয়ে নাও। আমি তো বলেছি আমি তোমায় দ্বিগুন ভালোবাসবো। মায়া করবো। সুযোগ দাও প্লিজ। ছেড়ে যেও না। একবার এলোমেলো হতে গিয়েও আমি তোমায় পেয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি,এবার ছেড়ে গেলে সত্যিই আমি এলোমেলো হয়ে যাবো। তোমার সাথে আজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।”
“আপনি যখন আমাকে স্পর্শ করেন তখন আমার ঘৃণা হয়। কারণ সেইম আমার পূর্বেও আপনি কাউকে এমন স্পর্শ করেছেন,আদর,যত্ন সব করেছেন এইসব আমার চোখের কোনো ভেসে উঠলে নিজেকে সামলে রাখতে পারি না। আমি খুব সুন্দর কিংবা রাজপুত্রের মতো জীবনসঙ্গী চাইনি,চেয়েছি আমি তার প্রথম এবং শেষ প্রিয়জন হতে। আপনার প্রথম স্ত্রীকে আমি মানতে পারছি না। আমার খুব হিংসা হয় তাকে। সে আমার ব্যক্তিগত মানুষটাকে ইউজ করেছে আমার কাছে আসার পূর্বেই।”
“সে এখন আমার লাইফে নেই। আর এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ছিলো মিঠি।”
“সে আমার সব কেঁড়ে নিয়েছে। আমার সব কিছুতেই ভাগ বসিয়েছে। আমি তাকে ঘৃণা করি!”
“মিঠি,তুমি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। একটা কথা বলি শোনো। আমাদের নবী ও কিন্তু বহুবিবাহ করেছেন। ওনার স্ত্রীরা কিন্তু মিলেমিশেই থাকতো। এতোগুলো বিয়ের পরও কারো কোনো অভিযোগ ছিলো না। সেখানে আমরা তো সাধারণ ইনসান।”
___________
চলবে~
কপি করা নিষেধ।