তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১৫)

0
121

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১৫)
________________________

ফণা তোলা সাপের মতো হিস হিস করতে লাগলো মিঠি। এই বুঝি এখুনি ছোবল মা’র’বে!

“তুমি নাকি কান্না করেছো?”

“কে বলেছে?”

“তোমার মুখ!”

“আমি ঘুমিয়েছিলাম; তাই এমন দেখাচ্ছে। কাঁন্না করার প্রশ্নই আসে না।”

“ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না! শুনলাম সেন্স ও হারিয়েছো!”

“কী বলতে চান?”

“তুমি জানতে আমিই ছিলাম?”

“না জানার কী আছে! আপনার আগে আপনার ভুঁড়িটা রুমে ঢুকেছে আগে।”

ঠোঁটকাটা মেয়ে,মুখ দিয়ে কিছুই আঁটকায় না।

“ভাবতেছি,ভুঁড়িটা কমিয়ে ফেলবো।”

“আপনার ইচ্ছে।”

“শবনম পছন্দ করতো তাই কমাইনি।”

শেহজাদ জানে এখন সে শেষ।

“ও! বেশ ভালো তো।”

রাগে কাঁপতে লাগলো মিঠি। আল্লাহই জানে এখন কী করে বসবে! ভারী হিংসুটে মেয়ে একটা! তার জীবন বরবাদ করার জন্য এই মেয়েটাই যথেষ্ট। ইমম্যাচিউরড মেয়ে বিয়ে করলে যা হয় আর কি!

“লেডি ডায়না ইজ মোস্ট বিউটিফুল ওম্যান ইন অ্যা ওয়ার্ল্ড। বাট হার হ্যাজবান্ড চিটড হার। ফর অ্যানাদার ওম্যান বিউটি ক্যান’ট কন্ট্রোল অ্যা ম্যান।”

“হঠাৎ?”

“আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আপনার এতো মিশামিশি কিসের? নারীসঙ্গ ছাড়া থাকতে পারেন না?”

“মানে!?”

“এজন্যই বোধকরি,“মেঘ বলেছে যাব যাব” উপন্যাসে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন,“পুরুষ মানুষ আর ছাগল এই দুই জিনিসকে চোখে চোখে রাখতে হয়। কখন কিসে মুখ দেয় বলা যায় না।” কথাটা একদম ঠিক। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও কথাটা খারাপ বলেনি। শুধু তাই নয়,সমরেশ মজুমদার ও বলেছিলেন,“পুরুষ মানুষ চিতায় উঠেও যদি একবার চোখ মেলার সুযোগ পায় তবুও সেটা মেলবে মেয়েদের দিকে।”এজন্যই এদেরকে বেঁধে গরু-ছাগলের মতোই পাহারা দিয়ে রাখতে হয়।”

“ধূৎ! আন্দাজি কথাবার্তা!”

“একদম না।”

“কোথায় মিশামিশি করলাম?”

“মিশামিশি না করলে ওরা এইসব সাহস কোথায় থেকে পায়?”

“কোন সব?”

“একদিনেই এতো ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক কিভাবে হলো? আবার ফুচকা,চাইনিজ এইসব খেতে যান? মতলব কী?”

“আর ইউ জেলাশ?”

“আপনার দাদা জেলাশ,আপনার দাদী জেলাশ।”

“তাহলে তো হয়েছিলোই।”

মিঠিকে বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,”এজন্যই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি উপন্যাসের বিনোদনী বলেছিলো,“সোহাগের সঙ্গে রাগ না মিশিলে ভালোবাসার স্বাদ থাকে না তরকারিতে লঙ্কা-মরিচের মতো।”তোমার রাগ-জিদ ভালোই লাগছে সুনেত্রা! মন্দ না। আদর সোহাগের সাথে একটু রাগ,অভিমান না থাকলে কেমন পানসে পানসে লাগে।”

“ন্যাকামি! ছাড়ুন।”

“তুমি আমার অভিমানের রঙ দেখোনি,তাই কথায় কথায় আঘাত হানো সুনেত্রা।”

চুপ হয়ে গেলো মিঠি। নিজেকে ছাড়িয়ে বেড থেকে নামতে নেয়,শেহজাদ ও নামলো। মিঠিকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করালো। আয়নায় নিজেকে দেখতেই অবাক হয়ে গেলো মিঠি। কি সুন্দর করে বউ সাজিয়েছে তাকে। ছোটবেলা থেকেই মিঠির অনেক শখ ছিলো,সে বিয়ের সময় অনেক সুন্দর করে বউ সাজবে,বেনারসি পড়বে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। কি রকম বিশ্রী একটা কাহিনীর মধ্যে তাদের বিয়েটা হয়েছে। কিন্তু এখন নিজেকে বধুসাজে দেখতেই ভীষণ খুশি হলো। কি সুন্দর করে কুম কুম দিয়ে তার কপালে আর্ট করেছে। ছোটবেলা থেকেই মিঠির কুম কুমের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ ছিলো। বিয়েতে কুম কুম দিয়ে সাজবে। ছোটবেলায় জি বাংলা সিরিয়ালে দেখতো ইন্ডিয়ান নায়িকারা কি সুন্দর করে বউ সাজতো কুম কুম দিয়ে,তেমনি আজ ওকেও ওমন করে সাজিয়েছে। আজ মনের বাসনা পূর্ণ হয়েছে। মিঠির অনেক ইচ্ছে ছিলো তার যদি মেয়ে হয় তাহলে একটার নাম রাখবে কুম কুম,আরেকটার নাম ঝুম ঝুম। কিন্তু তাতো আর হবে না। সব স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে গেছে। মলিন মুখে নিজের দিকে তাকাতেই দেখলো কি সুন্দর লাল টুকটুকে শাড়ি তার পরনে। মিঠি শাড়ির নাম তেমন একটা জানে না। সম্ভবত এটা মনে হচ্ছে,খাদি জামদানী শাড়ি। তবে বাংলাদেশের চাইতে ইন্ডিয়ার শাড়িগুলো কোয়ালিটিতে একটু বেশিই দারুণ হয়। শপিংমলে দেখেছিলো একবার।

“বাহ কি সুন্দর!”

মনে মনে বললো।

“হঠাৎ এইসব করার মানে কী?”

“আমরা তো বর-বধু সাজিনি তাই। তাছাড়া তোমার ইচ্ছেটা অপূর্ণ রাখতে মন চাইলো না।”

“আপনি কিভাবে জানেন?”

“প্রতিটি মেয়েই তো বিয়ের সময় বউ সাজতে চায়,তুমিও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি ছিলো অন্যরকম।”

“শপিং কে করেছে?”

“তোমার বান্ধবীরা পছন্দ করে দিয়েছে,আমি কিনেছি।”

“শাড়িটাও কী ওদের পছন্দে?”

“নাহ! এই লাল টুকটুকে শাড়িটা একদম আমার পছন্দ কিনেছি।”

হঠাৎ ওরা সবাই রুমের ভেতর ঢুকে গেলো। হকচকিয়ে সরে গেলো দু’জন। টুম্পা বলল,”আয়নার সামনে কী দেখা হচ্ছে?”

“শাড়ি।”

“পছন্দ হয়েছে তোর?”

মৌন রইলো মিঠি। ওরা শাড়ির ডালাগুলো নিয়ে ভেতরে ঢুকে সব মিঠির সামনে রাখলো। মিঠি দেখলো ডালার মধ্যে সব কাঁচের বাক্সে করে সাজিয়ে রাখা।

“এতো শাড়ি!”

“হুম। দুলাভাই কিনেছে। তোর জন্য নাকি শাড়ি কেনা হয়নি। আয় দেখ।”

এগিয়ে এলো মিঠি।

“তোর জন্য,বিয়ের বেনারসি,কাতান নিয়েছি; সাথে একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা। কিন্তু ভাইয়া বললো জামদানী শাড়িটা একটু ব্যতিক্রম লাগবে তাই সেটাই তোকে পড়ালাম।”

সবগুলো শাড়ি খুলে মিঠিকে দেখালো। একেকটা একেক কালার।

“এতো শাড়ির প্রয়োজন ছিল না। কে পড়বে?”

শ্রুতি বলল,”ভাইয়া কিনেছে,নিষেধ করেছিলাম। বললো বিয়ে তো একবারই।”

অনন্যা বলল,”একেকদিন একেকটা শাড়ি পড়ে দুলাভাইকে দেখাবি। ব্যস হয়ে গেলো।”

মিঠিকে কোনো গয়না দেয়নি শেহজাদ। তাই নিজের পছন্দে সোনার গয়নাও কিনে দিলো। এক এক করে ওরা ঢালা ভর্তি কসমেটিক সহ সব এনে রুমে ঢুকাতে লাগলো। মিঠি ভাবতে পারেনি শেহজাদ কিংবা তার বান্ধবীরা এমনকিছু করবে তার জন্য। নাহ! কেনো যেনো মিঠির চোখজোড়া ভরে গেলো জলে। এতোকিছু পেয়ে নয়। প্রসাধনীর মধ্যে মিঠির বাংলাদেশের জিনিস তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। তার মামাই সব পাঠিয়ে দেয় ওখান থেকে। তার নিত্যদিনকার ড্রেস থেকে শুরু করে ক্রিম-লোশন হতে যাবতীয় জিনিস থেকে শুরু করে তার বাসার ভাত খাওয়ার প্লেট,চামচ,হতে ম্যাট,পাপোষ,পর্দা হতে শতরঞ্জিটা এবং কি তার কিচেনের লুশনি,খুন্তিটা পর্যন্ত তার মামা ওইদেশ থেকে পাঠিয়ে দেয়। তার যত মশলাপাতি আছে,ওটস,সিরিয়াল,পাস্তা,সস,কেচাপ,চীজ থেকে তার কফির মগটা পর্যন্ত সবকিছু তিনি কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শেহজাদের থেকে এতো কিছু পেতেই আবেগপ্রবণ হলো। নিশ্চয়ই সবকিছুই যত্ন করে কেনা কেবলমাত্র তার জন্য।

“এতো শপিং করার প্রয়োজন ছিলো না। আমার সব তো আছেই। মামা তো প্রতিমাসে পাঠায়।”

শ্রেয়াশা বলল,”মামারটা আলাদা,স্বামীরটাও আলাদা। মামার জিনিসে দায়িত্ব,কর্তব্য আর স্বামীর জিনিসে সব যত্ন,মায়া আর ভালোবাসার ছাপ মিশে থাকে।”

গোপিকা বলল,”এতো টেনশন করিস না।”

“তখন সবাই মিলে এইসব প্ল্যান করেছিস?”

টুম্পা বলল,”না। ভাবলাম তোর স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে যাবো। কিন্তু ভাগে বনছিলো না।”

“মানে?”

“তোদের ধর্মে তো একসাথে চার বউ রাখা যায়।”

গোপিকা বলল,”কিন্তু আমরা তো অনেকগুলা বান্ধবী। তাই ভাগে বনছিলো না।”

শ্রেয়াশা বলল,”দুলাভাই,অনেক কষ্ট দিয়েছেন। এখন আমাদের বখশিশ দিন। নয়তো আজ বাসর করতে দিবো না।”

“বাসর তো আরো আগে হয়ে গেছে শ্যালিকারা।”

শ্রুতি বলল,”হলে হয়েছে,সেটা আমরা দেখিনি। কিন্তু আজ টেক্স ছাড়া কোনো বাসর হবে না। তাড়াতাড়ি টেক্স দিন। নয়তো আপনার বউকে ঝালমুড়িওয়ালার কাছে বিয়ে দিয়ে দেবো।”

বিড়বিড়ালো শেহজাদ,”এক কালসাপ এতোক্ষণ ফণা তুলে হিস হিস করেছিলো কামড় দেওয়ার জন্য,এখন আরো সাত-আটটা কাল নাগিনী এসেছে টেক্স চাইতে!”

অনন্যা বলল,”জাতীর দুলাভাই কী আমাদেরকে বকছেন?”

“আরেহ না না! এই তো তোমাদের বখশিশ।”

ওরা নিলো না। প্রিয়া বলল,”দশহাজার টাকার এক টাকাও কম হবে না। সোজা দশহাজার টাকা দিয়ে দিন। আমরা চলে যাই।”

হেসে উঠলো শেহজাদ। ওদের হাতে দশহাজার টাকা দিতেই ওরা চেঁচিয়ে উঠলো। এবার ওরা জুস,দুধ,মিষ্টি নিয়ে এলো দু’জনের জন্য। ওদের ছেলেমানুষী দেখে না হেসে পারলো না শেহজাদ। তবে কেনো জানি হুট করে শবনমের কথা মনে পড়লো। তাদের বাসররাতেও এমন হয়েছিলো। মন খারাপ হয়ে গেলো শেহজাদের। আজ শাড়ি কিনতে গিয়েও বার-বার শবনমের কথা মনে পড়ছিলো,শবনম শাড়ি খুব পছন্দ করে। যতবার শপিং করতো,ততবারই শবনমের জন্য একটা শাড়ি নিয়ে নিতো। সেই কি খুশি হতো। শবনমের হাসি-হাসি মুখটা মনে পড়লো হঠাৎ। পরক্ষণেই সামলে নিলো। কিছু মানুষ আছে না,একজন আরেকজনের থেকে সীমাহীন দূরে থাকে,তারপরেও একজন আরেকজনকে সীমাহীন মায়ায় জড়িয়ে রাখে বুকের গহীনে। শেহজাদও ঠিক তেমনই। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। নিজের দোষে নিজে ঠকলো শবনম। তার কোনো হাত নেই এতে। এখন মিঠি তার জীবনে এসেছে,সে সব ভুলে ভালো থাকতে চায়। কষ্ট হবে আরকি! তবে মিঠিকে কোনকিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না। এতে মিঠি আরো কষ্ট পাবে। মেয়েরা মৃত্যুর পরেও তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না,দেয় না। এই একটা জায়গায় এসে মেয়েরা খুব হিংসুটে! মায়ের পেটের বোনের সাথেও তারা সমঝোতা করতে চায় না। স্বামীর ভাগ দেওয়া কি এতোই সহজ?মোটেও না! কিন্তু মিঠির ভাগ তো আরো আগে আরেকজন নিয়ে গেলো। সত্যি বলতে,কোনো মেয়েই বেঁচে থাকা অবস্থায় স্বামীর ভাগ অন্যকে দিতে পারে না। আর এটা ভয়ংকর রকমের কষ্ট! এই কষ্ট সত্যিই ভয়ংকর! কোনো মেয়ে এটা মেনে নিতে পারে না।

ওরা একটা কেক নিয়ে এলো। ওদের দু’জনকে দিয়ে কেক কাটালো এবং নানানরকম পোজ দিয়ে ওদের অনেকগুলো কাপল পিকচার তুলে নিলো। এরপর টাইমিং সেট করে গ্রুপ ফটো তুললো। সেলফি নিলো। তারপর বিদেয় জানিয়ে ওরা চলে গেলো। ওরা যেতেই শেহজাদের সাথে নিজের ফোন দিয়ে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো মিঠি।

“এতো পিকচার নিচ্ছো যে ঘুমাবে না? অনেক রাত হয়েছে,অসুস্থ হয়ে পড়তে পারো।”

“ঘুমাবো,কিন্তু পিকচার তোলাটাও জরুরি।”

“কেনো?”

“কারণ আয়না ফেলে আসা দিনগুলো দেখায় না! তাই সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো বন্দী করছি ক্যামেরায়।”

“নিজেকে আমার মায়ায় বন্দী না করে মুহূর্ত বন্দী করছো সুনেত্রা?”

“হুম।”

চট করে শেহজাদের দিকে তাকালো মিঠি। আচমকা জিজ্ঞেস করে বসলো,”আমায় ভালোবাসেন?”

“একটু একটু!”

“কী চান?”

“দুঃখ?”

“কেনো?”

“দুঃখ গ্রহণ করার মতো আন্তরিক না হলে,ভালোবাসার মতো দুঃসাহস করা যায় না সুনেত্রা।”

“আচ্ছা,একটা ফুলের নাম বলতে পারবেন?”

“হ্যাঁ,দুঃখ।”

“একটা নদীর নাম জানতে চাই?”

“বেদনা।”

“একটা গাছের নাম বলতে পারবেন?”

“কষ্ট।”

শেহজাদের চোখের মণিতে চোখ রাখলো মিঠি। আচমকা জিজ্ঞেস করলো,”আমি আপনার সুনেত্রা?”

“হ্যাঁ।”

“কেনো?”

“তোমার চোখগুলো জীবন্ত! কথা বলে আমার সাথে। তুমি আয়না দেখো কিভাবে?তোমার চোখের প্রেমে তুমি পড়ো না?”

“আপনি পড়েছেন?”

“না।”

“তাহলে?”

“মায়ায় পড়েছি।”

“চোখের মায়ায় তো অনেকেই পড়ে,শেহজাদ। কিন্তু চোখের ভাষা বোঝে কজন!”

“প্রথম দেখায় তোমার চোখগুলো দেখতেই আমার সর্বনাশ হয়েছে সুনেত্রা। আমিও বোধহয় ভাষা বুঝতে পারিনি!”

“আচ্ছা,প্রেম কী?”

“আমার মতে প্রেম হচ্ছে ফিকে,ভণিতা,অভিনয়,মোহ আর কামনা!”

“মোহ আর কামনা কী?”

“যে ভালোবাসা দু’জনকে দু’দিক থেকে আকর্ষণ করে মিলিয়ে দেয়,সেটা ভালোবাসা নয় সেটা অন্য কিছু বা মোহ আর কামনা। আর নিজেকে ভালোবাসার মতো প্রেম যে দ্বিতীয়টি আর নেই! প্রেম শুধু নিজের জন্যই।”

শেহজাদকে প্রশ্ন করতে মিঠির বেশ ভালোই লাগছে! তাই ফের জিজ্ঞেস করে বসলো,”আচ্ছা! বলুন তো কোন ভালোবাসায় ব্যথা নেই?”

“ভালোবাসায় তো ব্যথা সবচেয়ে বেশি!”

“কিভাবে জানেন?”

“হৃদয় না ভাঙ্গলে কবিতার জন্মই হতো না! “ন হন্যতে”লেখাই হতো না। শরৎচন্দ্র “শ্রীকান্ত” লিখতেন কিভাবে? বিরহের জঠর থেকে তো জন্ম হয় সাহিত্যের। আর ব্যথাগুলোই তো শব্দ হয়ে ঝরে পড়ে।”

“ভীষণ দারুণ! আপনার ভাবনা এবং ভালোবাসার ধরণ ভীষণ গভীর শেহজাদ।”

“সেই গভীর তল অনেকেই খুঁজে পায় না সুনেত্রা।”

“সেটা তার ভাগ্যের দোষ। আর ভালোবাসার তল খুঁজে পেতে হলে পুরোদস্তুর প্রেমিকা হতে হয়।”

“হয়তো?”

“আচ্ছা মানুষের জীবন কয় প্রকার?”

“তিনপ্রকার মিলিয়েই মানুষের জীবন সুনেত্রা। রয়ে যায়,সয়ে যায়,বয়ে যায়।”

“ওহ! আচ্ছা,ভালোবাসা কাকে বলে?”

“কেউ হাতের রেখায় নেই জেনেও তবুও তীব্রভাবে তাকে চাওয়ার নামই ভালোবাসা।”

“আর?”

“শরীর নয়,চোখের দিকে তাকিয়ে মন স্পর্শ করাকে ও ভালোবাসা বলে।”

“আর?”

“বললে তো সে অনেক! শেষ হবে না সুনেত্রা! অসংখ্য,অগুনিত! এর হিসেব নেই।”

“বেশ। ভালোবাসার শেষ কোথায়?”

“প্রেমের শেষ আছে,তবে ভালোবাসার কোনো শেষ নেই।”

“কেনো?”

“যার প্রতি মন থেকে একবার ভালোবাসার সৃষ্টি হয়,তার জন্যই অনন্তকাল ভালোবাসা থেকে যায়। হোক না সেটা একটা অবিবাহিত মেয়ে কিংবা একটা বিবাহিত মেয়ের ভালোবাসা!”

“ভালোবাসার কী লাগে?”

“ভালোবাসার জন্য কোন কারণ লাগে না,কিন্তু বিচ্ছেদ করার জন্য অজুহাত লাগে।”

“ভালোবাসি বললেই কী ভালোবাসা হয়ে যায়?”

“একদম না।”

“কেনো?”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি! শুধু এই তিনটা শব্দ বলে দিলেই ভালোবাসা হয়ে যায় না সুনেত্রা। সারাজীবন পাশে থেকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয়,আর সেটাই ভালোবাসা।”

“আচ্ছা ভালোবাসা কেনা যায়?”

“পয়সা থাকলে তো,মানুষের জীবনও কিনে নেয় লোকে; ভালোবাসা আর কি জিনিস!”

“আচ্ছা,ভালোবাসা কোথায় আছে?”

“ভালোবাসা নারীকে আগলে রাখার মাঝেই আছে। ভালোবাসা নারীকে বিপদ থেকে রক্ষা করার মাঝেই আছে। ভালোবাসা নারীকে আপন করে কাছে নেয়ার মধ্যেই আছে। ভালোবাসা নারীর মর্যাদা দিয়ে কাছে টানার মাঝেই আছে।”

“দারুণ! আচ্ছা,তাহলে মানুষ কেনো ভালোবাসাকে দোষারোপ করে?”

“ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে আমরা ভালো লাগার পেছনে দৌঁড় দিই। তবে ক্লান্তিটা যখন এক পক্ষ থেকে হয়ে যায়,তখন আমরা ভালোবাসাকে দোষারোপ করি।”

“গ্রেট। ভালোবাসার স্বাদ কেমন?”

“ভালোবাসা থাকলে পেঁয়াজ মরিচ কামড়ে ভাত খাওয়াতেও অমৃত লাগবে। আর যেখানে সুখ কিংবা ভালোবাসা নেই সেখানে মাছ,মাংস,কোরমা,পোলাও থাকলেও সবকিছুই বিষাক্ত মনে হবে। এমনটাই স্বাদ।”

“আচ্ছা,ভালোবাসার মানুষটার জন্য কী কী করা যায়?”

“যাকে ভালোবাসা যায়,তার দিকে চেয়ে এক জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।”

“শুনেছি,ছেলেদের হাসি ও মেয়েদের কান্না কখনো বিশ্বাস করতে নেই! এটা কী সত্য?”

“ছেলেদের হাসির ভেতরে লুকিয়ে থাকে হাজারো চাপা দুঃখ কষ্ট! আর মেয়েদের কান্নার ভেতরেও থাকে ছলনা।”

“তবে পার্থক্য?”

“পার্থক্য নেই। আনন্দের গভীরে বেদনা থাকে।”

“আচ্ছা,মানুষ ভালোবাসে কেন?”

“কিছু স্মৃতি জমাতে।”

“দুঃখ পায় কেন?”

“মানুষের জন্য নয়,তার স্মৃতির জন্য।”

“আচ্ছা জীবন কী?”

“লাইফ ইজ অ্যা ফুল অফ মেমোরিজ ক্যারিয়ার।”

“জীবনের আনন্দ কীসে?”

“প্রেম,ভালোবাসা,যত্ন,মায়া,মহব্বত।”

“বেদনা?”

“প্রেম,ভালোবাসা,যত্ন,মায়া,মহব্বত।”

“একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?”

“বলো।”

“আচ্ছা,একাধিক পুরুষে চুম্বন করা নারীর ঠোঁটে কিংবা মদের গ্লাসে,কোনটায় ঠোঁট রাখা যায়?”

“মদের গ্লাস আর নারীর ঠোঁট,দুটোই কখনো এঁটো হয় না সুনেত্রা।”

“কেনো?”

“দুটোই এক্সপেন্সিভ।”

“আচ্ছা,আপনার কাছে সুন্দর মানুষ কে?”

“সে সবকিছুরই মাঝে সৌন্দর্য খুঁজে পায়।”

শেহজাদের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইলো মিঠি।

“জানেন,আপনার সকল প্রতিত্তোর শুনে আপনাকে আমার পুরোদস্তুর একটা প্রেমিক মনে হলো। অর্থাৎ আপনি একজন পুরোদস্তুর প্রেমিক।”

“পুরুষের ভালোবাসা বুঝতে গেলে নারীকে আরো কয়েকবার জন্ম নিতে হবে।”

“হয়তো। প্রেম করেছেন কখনো?”

“না।”

“বিয়ের আগে কারো প্রেমে পড়েছেন?”

“হ্যাঁ।”

কৌতুহলী হলো মিঠি।

“কে সে?”

“আছে একজন।”

“জানা যাবে?”

“ছোট্ট একটা পিচ্চি মেয়ে।”
_____________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here