তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(২১)

0
42

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(২১)
_________________________

অন্যদিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো শেহজাদ। এই ব্যপারে মিঠি চাইলে শবনমের পক্ষ হয়ে তাকে কথা শোনাতে পারতো! কিন্তু তা না করে উল্টো তার সাপোর্ট করে শবনমকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে! একের পর এক প্রশ্নের পিঠে তীক্ষ্ম বান ছুঁড়ে দিচ্ছে! দীর্ঘশ্বাস ফেললো শেহজাদ। আসলেই জীবনসঙ্গী হলে বোধহয় এমনই হওয়া উচিত! ভেতরে সাপে-নেউলে সম্পর্ক হলেও কিন্তু সবার সামনে সাপোর্ট করবে,প্রশংসা করবে,কারো সামনে হেয় করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না! বরং হাজারও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার পরেও সবার সামনে তাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে। তার আর মিঠির দাম্পত্য সম্পর্কটা খুব একটা বেশি না হলেও মিঠি তাকে অনেক বুঝে। মনটা ভার হয়ে গেলো শেহজাদের। মিঠির জন্য এখনও কিছু করতে পারেনি সে। হাতে-গোনা কয়েকটা শাড়ি আর সামান্য গয়না ছাড়া। একভরি গয়না মিঠিকে এখনও দিতে পারেনি শেহজাদ। মাঝেমধ্যে টুকটাক বাজার-সদাই করে। আর সব মিঠির মামা আগের মতোই পাঠায়। শেহজাদের তেমন-একটা খরচা করতে হয় না। মিঠি নিজেই বকাবকি করে। টাকা-পয়সা সঞ্চয় করতে বলে। তাদের দু’জনের ফিউচারের কথা ভাবে। গ্রামে বাবা-মাকে পাঠাতে বলে। উল্টো মিঠি নিজেই তার পরিবারের জন্য শপিং করে পাঠায়। আরো কত কি! তবুও শেহজাদ জোর করে টুকটাক করার চেষ্টা করে। মিঠি না পারতেই নেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেললো শেহজাদ। অথচ একসঙ্গে পাঁচ বছর থেকেও শবনম বুঝলো না তাকে। কখনো বুঝার চেষ্টাটুকুও করলো না। ফের মলিন হয়ে গেলো মনটা। আনমনা হয়ে ভাবলো,কখনো কখনো কিছু সত্য লুকিয়ে রাখা ভালো। এতে কাছের মানুষগুলোর আসল রূপ চেনা যায়। কেউ ছেড়ে যায় তো কেউ অসম্ভবনার মাঝেও সম্ভবনা খুঁজে থেকে যায়। শবনমের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো।

“আমার ব্যপারটা বাদ দাও,তোমরা কী করবে?”

“ওই তো গত দু-দিন আগে উনাকে বলেছিলাম,ওগো আমার একটা বাবু লাগবে! উনি বললেন,আচ্ছা। এরপর একটা বিড়ালের ছানা নিয়ে এসে বললেন,এটা ঠিকঠাক সাতদিন যত্ন করে দেখাও সুনেত্রা! তারপর বাবু এনে দিবো। আজ দু-দিন হলো আমি বিড়াল ছানাটা খুঁজে পাচ্ছি না!”

মন খারাপ করে বললো শেষোক্ত কথাটা।

“এবার বুঝো,কিসের আর সন্তান পালবো! আমার দ্বারা এইসব সন্তান লালন-পালন করা সম্ভব না। আমি নিজেই তো একটা বাচ্চা! আমাকে পালতেই তো কতজন লাগে!”

বাচ্চাদের মতো ভান করে বললো মিঠি। আনমনে হেসে উঠলো শেহজাদ। যদিও গম্ভীর রইলো। আর সেই হাসি কেউই দেখলো না। তাকে জেতানোর জন্য ইমম্যাচিউর মিঠি অর্থাৎ তার ছোট্ট বউটার কতো প্রচেষ্টা! কেন যেন চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। লুকিয়ে ফেললো জল। শেহজাদের কেন যেন মনে হয়,মিঠি তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে! কিন্তু কখনো বলে না! তবে শেহজাদ ফীল করে! সত্যি বলতে,একজন মানুষের জীবনে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার মত একটা মানুষ খুব কমই আসে! মিঠিও হয়তো তার জন্য তেমনই একজন।

মিঠির সাথে কথায় না পেরে তপ্তশ্বাস ফেললো শবনম। মেয়েটা যে পাঁজি শবনম বুঝতে পারলো। কোনমতেই একে কোনো কথা দিয়ে পরাস্ত করা সম্ভব নয়! হার মানলো শবনম। যেটার জন্য এসেছে লাভ হয়নি। উল্টো তাকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে ওই মানুষটার সাপোর্ট করছে! এখানে আসাটাই তার বৃথা! এদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা গেলো না। তবুও শবনম পণ করেছে,কিছুতেই এই মানুষটাকে সুখে থাকতে দেবে না।

“তবে জানো,আমি এটা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ নসীবে অনেক কিছু রেখেছেন,প্রাপ্তির সময় হলে ঠিক পেয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!”

মাথায় পেঁচিয়ে রাখা টাওয়ালটা খুলতেই আচমকা চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে হোঁচট খেলো শেহজাদের নাকে-মুখে। মুহূর্তেই চোখ বন্ধ করে ভেজা চুলের ঘ্রাণ টেনে নিলো শেহজাদ। গোসল করার পর মিঠির ভেজা চুল থেকে খুব সুন্দর সুঘ্রাণ ছড়ায়! মিঠি আমেরিকান ট্রেসেমি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ইউজ করে। শ্যাম্পুর চাইতে কন্ডিশনারটায় এতো দারুণ স্মেল যে মিঠি যখন মাথায় মাখে পুরো ওয়াশরুম সুঘ্রাণে ভরে যায়। তারপর যখন গোসল সেরে রুমে ঢুকে তখন সারা রুমে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। একসপ্তাহ চুলে শ্যাম্পু না করলেও এই সুবাস থেকে যায়। খুব দারুণ একটা স্মেল। গোসল করার পর মিঠির ভেজা চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে এই ঘ্রাণ নিতে ভুলে না শেহজাদ। এখনো ইচ্ছে করছে কিন্তু শবনম সামনে বসে আছে। প্রাক্তনের সামনে এই কাজ অবশ্যই করা যায় না।

“অসাধারণ কেউকে খুঁজতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে,সাধারণ কারো যত্নে আজীবন থেকে যাওয়ায় ভালো শবনম।”

আচমকা শবনমের কানে কানে কথাটি বলে উঠে গেলো মিঠি। পা বাড়ালো ব্যালকনির দিকে ভেজা টাওয়ালটি দঁড়িতে মেলে দিতে। স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো শবনম। আচমকা কেঁপে উঠলো। কিছু একটা ছিলো ওই কথায়! দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিঠি। শবনমের সাথে কোনো সিনক্রিয়েট করার ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু সেধে সেধে সিনক্রিয়েট করতে আসলে সে ছেড়ে দিবে নাকি! একদম না! তার নাম মিঠি! সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী কোনকালেই ছিলো না। যে যেমন তার সাথে তেমনই করে এবং করা উচিত বলে মনে করে সে। শবনমের কুমতলব বুঝতে পারলো মিঠি। শেহজাদের দূর্বলতা প্রকাশ করে শবনম যে তাদের মধ্যে ঝামেলা পাকাতে এসেছে এটা সে ঢের বুঝতে পেরেছে। মিঠির যাওয়ার পানে অনিমিষনেত্রে তাকিয়ে রইলো শেহজাদ। শেহজাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে শবনমও তাকালো। দেখলো মিঠির পায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শেহজাদ। এতক্ষণে চোখ পড়লো মিঠির পায়ে একজোড়া নুপুর। গর্জিয়াস নয় একদম সিম্পল। সবসময় ক্যারি করার জন্য ঠিক আছে। সম্ভবত ডায়মন্ডের! অবাক হলো শবনম।

“ও এখন নতুন বউকে ডায়মন্ডের নুপুর ও কিনে দিয়েছে! বসে বসে মুগ্ধ নয়নে দেখার জন্য।”

বিড়বিড় করে বললেও শুনতে পেলো শেহজাদ। কিন্তু প্রতিত্তোর করলো না। কিন্তু শবনমের কাছে সিম্পলের মধ্যেও কেন জানি গর্জিয়াস মনে হচ্ছে নুপুরজোড়া। আসলেই এতোটাও গর্জিয়াস নয়। তবে কি সুন্দর করে স্টোনগুলো ঝুলে রয়েছে! সুন্দর মসৃণ পদ্মফুলের মতো দেখতে পা-জোড়ায় কি সুন্দর মানিয়েছে! নগ্ন পায়ে আলাদা একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে! শেহজাদ তাকিয়ে সেটাই দেখছে! সবসময়ই বোধহয় এমন করে দেখে। ভীষণ কষ্ট হলো শবনমের! এমন করে শেহজাদ তাকে দেখতো,আর এখন মিঠিকে দেখে! সহ্য করতে পারলো না প্রাক্তন স্ত্রীর সামনে নতুন বউয়ের প্রতি শেহজাদের এই মুগ্ধতা!

“এতো মুগ্ধতা?”

“হ্যাঁ।”

দাঁত চাপলো শবনম।

“অনেক ভালোবাসো দেখছি!”

“হুম! একজন আদর্শ লাভিং কেয়ারিং স্বামী হিসেবে তার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাই! যাতে আমাকে পেয়ে সে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করে!”

“এই তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা তাই না?”

তাচ্ছিল্য করলো শেহজাদ।

“কীসের ভালোবাসার কথা বলছো!”

“ডিভোর্সের সপ্তাহ না পেরুতেই সুন্দরী মেয়ে পেয়ে বিয়ে করে নিলে। আর ওই মেয়েটাকে পাওয়া মাত্রই আমাকে ভুলে গেলে! আগে তো বলতে,আমার পর আর কাউকে ভালোবাসতে পারবে না! আমিই নাকি তোমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা! আমি ছেড়ে গেলে নাকি কখনো বিয়ের নামও মুখে আনবে না! আমি নাকি তোমার শখের নারী! এখন কোথায় গেলো তোমার সেইসব আবেগ,অনুভূতি আর ভালোবাসা? মিথ্যাবাদী একটা! আসলেই,পুরুষদের কোনো শখের নারী হয় না। ওদের সব নারীই শখের!”

“তুমি ও তো সেইম এইভাবে আমাকে বলেছো। এখন তো সব দেখতে পেলাম।”

“যা হয়েছে সব তোমার জন্য হয়েছে। তোমাকে ছেড়ে গিয়েছি এমনি না,কারণ দেখিয়ে গিয়েছি।”

“হ্যাঁ,বেশ করেছো! সব আমার জন্য হয়েছে,তা অস্বীকার করছি না। তবে আমি তোমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছিলাম,তা সুগন্ধে ভরা পুরো বাগান রোপণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তোমার হৃদয়ের জমি ছিল অনুর্বর! আর তুমি কোন অধিকারে কিসের ভালোবাসার কথা বলছো এখন? তুমি আমার কে?”

“কেউ ছিলাম না?”

“যখন ছিলে,তখন ছিলে। এখন নেই,তাই নেই। কোনো বেইমান আমার ভালোবাসার যোগ্য না। আমি তাকে ঘৃণা করি! আর শোনো,খারাপ দিনগুলোই আগামীদিনের ভালো সময়ের গল্প হয়। যারা থাকার তারা হাজার কারণ থাকলেও ছেড়ে যায় না! আর যারা যাওয়ার তারা হাজারটা কারণ থাকলেও থেকে যায় না। এটাই অধুনা বাস্তব। যে সময় প্রচণ্ড হতাশা কষ্টে থাকাটাকে দূর্বিষহ করে তোলে,সে সময়টাই পৃথিবীতে হাজার বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছে এনে দেয়। আজ যে মানুষগুলো ছাড়া জীবনকে অপূর্ণ মনে হয়,একসময় সেই মানুষগুলো ছাড়াই জীবন দিব্যি চলে যায়।”

দাঁতে দাঁত চাপলো শবনম।

“বড়াই করছো?”

“একদম না।”

“সময় সবসময় একরকম থাকে না।”

“ভুল বলোনি। সময় সর্বদা একরকম থাকে না,এইজন্যই মানুষ সবসময়ই খুশি থাকে না,আবার সবসময় দুঃখেও থাকে না।”

“কী বলতে চাও? ক্লিয়ার করো।”

“কি আর বলবো! তোমাকে বলার মতো কিছু নেই। তবে হ্যাঁ না চাইতেই কিছু কথা বলার আছে,না বলে পারলাম না।”

“মানে?”

“শোনো,আমি তোমায় ভালোবেসে ছিলাম,কিন্তু তুমি একটা কারণ দেখিয়ে বিচ্ছেদের অজুহাত খুঁজলে! আজীবন আমি তোমার সুখে-দুঃখে পাশে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলাম,কিন্তু তুমি স্বপ্ন ভাঙতে ব্যস্ত ছিলে! আমি সম্মান এবং ভরসা করে ছিলাম,তুমি দূর্বল ভেবে অবহেলা করলে! এখন আবার কেনো এলে? কী চাই তোমার? আমার সুখে থাকা সহ্য হয় না তোমার?এখন কেনো আবার আগের কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছো? স্মরণ করিয়ে যেহেতু দিয়েছো তাহলে তুমিও একটা বেইমান! মিথ্যাবাদী! প্রতারক!”

“মুখ সামলে কথা বলো শেহজাদ।

তাচ্ছিল্য হাসলো শেহজাদ।

“গায়ে লাগলো কথাগুলো?”

“আমি দেখে পাঁচ বছর তোমার সংসার করেছি,অন্যকেউ হলে আরো আগেই চলে যেতো। কী আছে তোমার?”

“কিছুই নেই! আমি শূন্য! শুধু ভালোবাসা আছে! ভালোবাসতে পারবো!”

“কথায় আছে না,“অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায়,তখন প্রেম-ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়।”তোমার এই ভালোবাসায় না পেট ভরবে না,তাও আবার মিঠির মতো বিত্তশালীর মেয়ের।”

“কথাটা তোমার বেলায়ও যায়। তোমার মতো মেয়ের পেট ভরাতে পারিনি,সেখানে মিঠির বিষয়টা আলাদা। আর আমাকে ছেড়ে যাকে ভালোবেসে যার হাত ধরে গেলে তোমাদেরও না আবার কখন এই মাখো মাখো প্রেম-ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়! বি কেয়ারফুল!”

রাগ হলো শবনমের। মানুষটার মুখে তো বুলি ফুটেছে! আগে তো একদম চুপ হয়ে থাকতো! তখন তো যেন এক বোবা প্রাণী ছিলো!

“থ্রেট দিচ্ছো?”

“মোটেও না।”

“শোনো,এই মেয়েটাও তোমাকে রেখে একদিন ঠিকই চলে যাবে দেখে নিও। এখন আবেগের বশে হয়তো থাকছে। বুঝতে পারছে না জীবনের মানে কী!”

“তুমি ও তো গেলে।”

শান্ত গলায় বললো শেহজাদ। তার মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই। তবে শবনমকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে! অর্থাৎ তার সাথে কথায় না উঠতে পেরে। থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হলো দু’জনের মধ্যে,তবে সেটা নীরবে।

“একদম ঠিক করেছি! আরো আগে করার দরকার ছিলো। তোমার মতো অকর্মা,অপদার্থ,আমড়ার কাঠের ঢেঁকির সাথে কোন মেয়ে থাকবে! কেন থাকবে! কোন দুঃখে থাকবে! কি আছে তোমার?কেনো থাকবো আমি? বয়েই গেছে আমার!”

“খুব ভালো কাজ করেছো! আফসোস নেই। তার কারণ যেখানে জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতায়! বিল গেটসের টাকায়! ফুটবলার হাকিমির জনপ্রিয়তায়! হুমায়ুন ফরিদীর ভালোবাসায়! তাহসানের কন্ঠে কিংবা হৃতিক রোশানের স্মার্টনেসে! কোন কিছুই নারীকে আঁটকাতে পারেনি সেখানে তো আমিই কিছুই না! তবে গিয়েছো ভালো কথা! তো আবার আত্মসম্মানহীনের মতো আমাদের পিছনে কেন পড়ে আছো?”

“সাট-আপ।”

মৃদু হাসলো শেহজাদ। রাগে লাল হয়ে কাঁপছে শবনম। শবনম এমনিতেই সুন্দরী! রাগলে লাল টুকটুকে হয়ে যায়। তাকিয়ে রইলো শেহজাদ। এই মেয়েটাকে সে একসময় খুব খুব ভালোবাসতো! আজও ভালোবাসে! হৃদয়ের এক কোণে এই মেয়েটা এখনো বসবাস করছে! দীর্ঘশ্বাস ফেললো! শবনম আগের থেকেও কেমন শুকিয়ে গেছে! চিন্তা করে বোধহয়! নাকি নতুন স্বামী যত্ন করে না! কখনো কখনো দুশ্চিন্তায় মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তেমনি শবনমের ও। ভাবলো থাক সেটা তাদের ব্যপার! সুখে থাকলেই ভালো! শবনমের ক্ষতি হোক সেটা কখনো চায়নি! কিন্তু শবনমই উল্টো তাদের পিছনে পড়ে আছে! দাঁতে দাঁত চাপলো শবনম। আত্মঅহমিকা ফুটিয়ে বলল,”ভেবো না এই মেয়ে তোমার সাথে থাকবে। এতো আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই।”

“হ্যাঁ,তদ্রুপ যার ইচ্ছে হয় সে থাকবে। না থাকলে কিছু করার নেই। আমার ভালোবাসার প্রয়োজন আছে,আমি ভালোবেসে যাবো। আমার যা দায়িত্ব-কর্তব্য আমি তা পালন করবো এবং সর্বদা অনেস্ট থাকবো। নিজের কাছে নিজে সৎ থাকার ব্যপারটা প্রশান্তিদায়ক। সো,যে থাকার সে থাকলে থাকবে না থাকলেও তার ইচ্ছে। কাউকে জোর করে আঁটকে রাখা যায় না। জোর করে রেখে অনেক দেখেছি; কোনো সুখ নেই। পশুপাখি পুষে পোষ মানানো যায়,কিন্তু মানুষ নয়। আর আমি আবারও বলছি,সুখে থাকার অধিকার সবার আছে। যেভাবে এবার তার সুখ কুড়িয়ে নিয়ে সুখে থাকতে পারে। শোনো,তোমাকে আমি এখনো সম্মান এবং শ্রদ্ধা দুটোই করি। একসময় আমাদের একটা গভীর আত্মার সম্পর্ক ছিলো,কিন্তু এখন নেই। সেখান থেকেই বলছি,আমি চাই আমাদের যোগাযোগ নিভে যাক; তবুও আমাদের উভয়ের মাঝে সম্মান এবং শ্রদ্ধাটুকু থাকুক! দয়া করে বিরক্ত করতে এসো না। তোমার উপস্থিতিতে আমি বিরক্ত!”

দাঁতে দাঁত চাপলো শবনম।

“তোমাকে আমি সুখে থাকতে দেবো না! কোনো মেয়ের সাথেই না। তোমার অসুখে থাকার জন্য সবধরনের ক্ষতি করবো!”

“এখনো ভালোবাসো?”

“একদম না।”

“তো কাঁপছো কেন?”

আগুন চোখে তাকালো শবনম। অকারণে শেহজাদের হাসি পেলো। কি একটা অবস্থা! চলে গেছে,আবারও ফিরে এসে ঝামেলা করছে! এইসবের কোনো মানে হয়! এইসব বোধহয় শবনমের দ্বারাই সম্ভব! তাকে দুঃখে ভাসাতে গিয়ে শবনম নিজেই উল্টো তাকে দেখে দুঃখের সাগরে ভাসছে! আজব মেয়ে! নারীরা সত্যি এমন! মৃত্যুর পরেও স্বামীর পাশে কোন কঙ্কালের ছায়াকেও সহ্য করতে পারে না! তার জীবনে এই অব্ধি আল্লাহ দু’জন নারী দিয়েছেন। দু’জনের মধ্যেই হিংসেয় ভরা! একজনও একজনকে সহ্য করতে পারে না! শেহজাদ ভাবে,সে যদি সিনেমার হিরোর মতো সুন্দর সুদর্শন হতো,তাহলে কি যে হতো! এইজন্যই বলে,আল্লাহ যা করেন বান্দার তকবীর অনুযায়ী ভালোর জন্যই করেন। সে সুদর্শন নয়,কৃষ্ণাঙ্গী এটাই ভালো!

“শোনো,তুমি আমার আর কি ক্ষতি করবে,আমি নিজেই তো নিজের সবধরনের ক্ষতি করে বসে আছি! আর সুখ-দুঃখ দেওয়ার মালিক আল্লাহ। আমাকে অসুখী দেখতে গিয়ে তুমি নিজেও সুখে থাকতে পারবে না,লাভ কী তাতে!”

“লাভ-লোকসান বুঝি না।”

“মনটা ফ্রেশ করো।”

“নিশ্চয়ই তোমাকে জিজ্ঞেস করবো না।”

“আর ইউ জেলাশ?”

ক্রোধে কাঁপতে লাগলো শবনম। মৃদু হাসলো শেহজাদ।

“সমস্যা নেই,আমি বুঝতে পারি এক নারী আরেক নারীর সুখ সহ্য করতে পারে না। শোনো,লাভ নেই। সুখে রাখার মালিক আল্লাহ। তুমি কিছু করতে পারবে না। যেটা করতে এসেছো কোনো লাভ হয়নি। তার কারণ মিঠি আমার সব জেনেই মেনে নিয়েছে। এবার সে যদি চলে যায় আমি জোর করে আঁটকে রাখবো না। আমি তাকে স্বাধীনতা দিয়েছি! আরেকটা কথা না বললেই নয়,সে আমার অসম্ভবেও,সম্ভবনা খুঁজে! আমার থেকেও আমায় একটু বেশি বুঝে!”

শেষোক্ত কথায় শ্বাস আঁটকে রইলো শবনম।

“কতদিন চলবে এইভাবে?”

“যে মানুষ সহ্য করে সে দু-দিনের জন্য থাকে। আজীবন সেই থেকে যায় যে সামলাতে পারে। আমার বিশ্বাস সে আমাকে সামলিয়ে নিতে পারবে,তদ্রূপ আমিও তাকে।”

“এতো আত্মবিশ্বাস?”

“হ্যাঁ।”

“এইসব বলে তুমি আমাকে বুঝ দিচ্ছ?”

“মোটেও না। তবে নিজেকে বোঝার মতো একজন মানুষ থাকলেই জীবন সুন্দর! মিঠি আমাকে বুঝে। সেটাই বোঝাতে চাইছি।”

“তোমাকে আমি দেখে নিবো।”

“এখন আর কীসের অধিকার দেখাও তুমি?”

“কোনো অধিকার না।”

“শোনো,স্পষ্ট বলে দিচ্ছি! আমার উপর তোমার কোনো অধিকার নেই সেটা ডিভোর্স হওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেছে। সো বলতে চাই,অধিকার নষ্ট হয়ে গেলে সেখানে নিজের আশ্রয় খুঁজে বেড়ানো বোকামি। আর আমি মনে করি,নিজেকে তখন বিরক্তিকর এক অতিথি বলে মনে হয়। তুমি আর কোনো অধিকার নিয়ে আমার সামনে এসো না। আমরা ভালো আছি,ভালো থাকতে দাও। তুমি নিজের সংসারে ফোকাস করো। তোমার জন্য শুভকামনা। মানুষের ভালো থাকাটাকে ভালোবাসো,এপ্রিশিয়েট করো। দেখবে অনেক স্ট্রেস কমে গেছে এবং ভালো আছো।”

“তুমি জানতে,তোমার শূন্যতা আমাকে কখনোই স্বস্তিতে বাঁচতে দিবে না। তবুও তোমার মনে এতটুকু মায়া জন্ম নেয়নি। তুমি চাইলেই পারতে আমার সুখ হতে এবং আমার হয়ে এক জীবন বাঁচতে। জানো,জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন,“হয়তো জীবনে আমি কোনও দিন প্রেম জানি নাই। তবু আমি বিয়োগের ব্যথা বুঝি!”প্রেম না জানা সত্ত্বেও যেই মানুষটা বিয়োগের ব্যথা-বেদনা বুঝে,আর তুমি বুঝোনি! দ্যাট’স ওকে। তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা নেই।”
____________

চলবে~
কপি নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here